সন্ধ্যামালতী (২২)

0
1039

#সন্ধ্যামালতী (২২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________

সন্ধ্যা আর আয়াশ আজ গ্রামে এসেছে। এতগুলো দিন পর নিজের গ্রামকে দেখে আবেগী হয়ে পড়ে সন্ধ্যা। সাথে ভেসে ওঠে অনেক তিক্ত স্মৃতি। মা আর দাদার নিথর দেহ গুলো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে। চোখ দুটো মুহুর্তেই ছলছল করে। আয়াশ হয়তো সন্ধ্যার অনুভূতি গুলো বোঝে তাই তো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সন্ধ্যার হাত। সন্ধ্যা নিজেকে সামলে নেয়। আয়াশ আর সন্ধ্যা প্রথমে সন্ধ্যার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। গ্রামের কম বেশি মানুষ আয়াশ সন্ধ্যাকে একসাথে দেখে খানিকটা অবাকই হয়। অনেকে কানাকানি করে আবার অনেকে এসে কুশল বিনিময় করে। সন্ধ্যাদের বাড়িতে এসে সন্ধ্যা ঘরের তালা দেখে খানিকটা মাথা চুলকায়। আয়াশ বলে,

‘তোমার কাছে তো মনে হয় চাবি নাই!’

সন্ধ্যা দুদিকে মাথা নাড়ায়। সে সময় দৌড়ে আসে বকুল আর বাদল। বকুল এসেই কাঁদতে কাঁদতে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে। বাদল অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। সন্ধ্যা কি বলবে বুঝতে পারে না। এক হাত দিয়ে বকুলকে আঁকড়ে ধরে। বকুল কাদতে কাঁদতে বলে, ‘তুই কোথায় চলে গেছিলি সন্ধ্যা? তোকে আমরা কত খুঁজেছি কোথাও পাইনি। মা তো কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেছিলো।’

সন্ধ্যা কিছু বলতে গিয়েও বলে না। বকুল সন্ধ্যাকে ছেড়ে দেয়। বাদল আর বকুল তখনো আয়াশকে খেয়াল করেনি৷ তারা আছে সন্ধ্যাকে নিয়ে। বাদল বলে, ‘কোথায় চলে গেছিলি? আর আমাদের একবার জানাসনি কেন?’

সন্ধ্যা মাথা নিচু করে নেয়। পেছন থেকে আয়াশ বলে, ‘সন্ধ্যা আমাদের বাড়িতে ছিলো।’

কথাটা কানে আসতেই বাদল আর বকুল একবার আয়াশের দিকে আরেকবার সন্ধ্যার দিকে তাকায়। অবাক কন্ঠে বাদল বলে, ‘আপনি এখানে?’

আয়াশ হেঁসে এগিয়ে আসে। বলে, ‘অনেক দুর জার্নি করে আসছি আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নেই? তারপর না হয় বলি পুরোটা!’

বাদল বোকার মতো তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায়। তারপর গম্ভীর স্বরে বলে, ‘সন্ধ্যা উনাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি চল। এবাড়িতে এমনিও থাকতে পারবি না অনেক ধুলোবালি জমে গেছে।’

সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। আয়াশ আর বাদল সামনে হাঁটতে থাকে পেছন পেছন বকুল আর সন্ধ্যা আসে। বকুল নিজের অবাকতা কাটিয়েই উঠতে পারেনি। তখনো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা বকুলের পেটে গু’তো দিয়ে বলে, ‘মুখ বন্ধ কর। পরে তো সব শুনতেই পারবি।’

বকুল অভিমানে গাল ফুলায়। সন্ধ্যা নিঃশব্দে হাসে। বকুলদের বাড়ি পা রাখার সাথে সাথেই ছুটে আসে বকুলের মা। সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে সেও কাঁদতে থাকে। সাথে তো এতো এতো অভিযোগ রয়েছেই। সন্ধ্যার হঠাৎ ই ভীষণ অপরাধবোধ হয়। এতো গুলো মানুষকে সে কষ্ট দিয়েছে অথচ মানুষ গুলো তাকে কত ভালোবাসে! আয়াশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে বকুলের মায়ের যত্ন। সন্ধ্যা মেয়েটাই এমন না ভালোবেসে থাকা যায় না অথচ এই মেয়েটাই পৃথিবীতে কত দুঃখ পেয়েছে! বাদল নিজের ঘরে আয়াশকে নিয়ে যায়। আয়াশ ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে করতে বাদলকে বলে,

‘গোসল কোথায় করবো! আগের বার তো চেয়ারম্যান আঙ্কেলের বাড়িতে ছিলাম ওখানে ওয়াশরুম ছিলো। এখন?’

বাদল বেশ ভদ্রতার সাথে বলে, ‘আমাদের বাড়িতে তো শহরের ওয়াশরুম নেই তবে কলপাড় আছে। চারদিক দিয়ে ঘেড়া আছে আপনি নিশ্চিন্তে গোসল করতে পারেন। আসুন!’

আয়াশ মাথা নাড়িয়ে বাদলের সাথেই কলপাড় যায়। বাদল নিজেই পানি তুলে দেয় বালতিতে। মগ দিয়ে সে কলপাড়ের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। আয়াশ কিছুক্ষণ ভাবে তারপর নিজের মতো গোসল করে নেয়। আয়াশের গোসল শেষে সন্ধ্যাও গোসল করে। গোসল শেষে বের হতেই বকুলের মা আয়াশ আর সন্ধ্যাকে খেতে ডাকে। আয়াশ এদের এতো আতিথিয়তা দেখে ফিসফিস করে সন্ধ্যাকে বলে,

‘মনে হচ্ছে প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে আসছি আর তারা জামাই আদর করতে ব্যস্ত।’

সন্ধ্যা লজ্জায় গুটিয়ে যায়। গাল দুটো রক্তিম আভা ধারণ করে। আয়াশ ঠোঁট চেপে হাসে। দুজনের খাওয়া শেষে আয়াশ বাদলদের সন্ধ্যাকে কিভাবে পেয়েছে তার বিষয়ে পুরোটাই বলে। বাদলের চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। বকুল আর তার মাও অজানা অভিমানে মাথা নিচু করে থাকে। সন্ধ্যা তো অপরাধবোধে সেই কখন থেকেই মাথা নিচু করে আছে। বাদল গম্ভীর স্বরেই বলে,

‘যদি এ’ক্সিডেন্টে বড় কিছু হতো কি করতি শুনি? ডাক্তার সাহেবের কাছে না পড়ে যদি খারাপ কোথাও পড়তি কি হতো? তোর শহরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো একবার কি আমাদের বলতে পারতি না?’

বাদলের কন্ঠে গাম্ভীরতা, অভিমান, স্নেহ, শাষণ সবটাই টের পায় আয়াশ। কিন্তু এ অভিমানের কারণ খুঁজে পায় না। তবে কি বাদল সত্যিই সন্ধ্যাকে ভালোবাসে! আয়াশের ভাবনায় ছেদ পড়ে সন্ধ্যার কথায়। সন্ধ্যা মিনমিনে স্বরে বলে,

‘আমার ভুল হয়ে গেছে বাদল ভাই। আমার আসলেই এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করতাম বলেন! এখানে আমার মা আর দাদার জন্য শ্বাস আটকে আসতো। আর দুদিনও এখানে থাকলে শ্বাস আটকে মা’রা যেতাম।’

‘সেইটা একবার আমাদের বলে দেখতি!’

বকুলের মা অভিমানী কন্ঠে বলে, ‘আমাগো কেন কইবো বাদল! আমরা হের কে লাগি ক?’

সন্ধ্যার চোখ ছলছল করে উঠে। পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বাদলের মা’কে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, ‘এভাবে বলো না চাঁচি। মা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তো তুমিই মায়ের মতো ভালোবাসা দিচ্ছো। এখন তো আমার তোমরা ছাড়া কেউ নাই।’

বকুলের মাও জড়িয়ে ধরে। অভিমান কান্না হয়ে গলে পড়ে। কিন্তু বকুলের অভিমান তখনো ভাঙেনি। শেষে সন্ধ্যা বকুলের সামনে কান ধরে অনেকবার সরি বলেছে তখন গিয়ে মেনে নিয়েছে মেয়েটা। পাশ থেকে আয়াশ বলে,

‘সব রাগ, অভিমানের ছুটি এবার সন্ধ্যা চলো ঘুরে আসি।’

বাদল, বকুল, সন্ধ্যা আর আয়াশ মিলে গ্রামের পথে বের হয়। সন্ধ্যা মাথায় কাপড় টেনে কবরস্থানের দিকে নেমে যায়। পেছন পেছন বাকি ৩ জনও যায়। সন্ধ্যা ভেতরে না ঢুকলেও বাহির থেকে মন ভরে প্রিয় মানুষগুলোর কবর দেখে। চোখ দুটো কান্নায় ভেঙে আসে। তবুও নিজেকে সামলে নেয়।

সন্ধ্যার খানিক আগে বকুলকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আয়াশ, সন্ধ্যা আর বাদল এসে বসেছে চেয়ারম্যানের বাড়ির সেই পুকুর ঘাটে। শান বাঁধানো পাথরে বসে কিছুক্ষণ কাটে নিরবে। এই নিরবতায় এক ভয়ংকর কথা বলে বসে আয়াশ,

‘চেয়ারম্যানের ছেলে, মেম্বারের ছেলে, পুরোনো মেম্বার, চেয়ারম্যানের ভাই সবাইকে আপনিই ওমন নৃ’শং’স ভাবে মে’রেছেন তাই না!’

চমকে উঠে বাদল আর সন্ধ্যা। আয়াশ স্বাভাবিক। সন্ধ্যা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘আপনি কি বলছেন এসব? মাথা খা’রাপ হয়ে গেছে নাকি!’

আয়াশ মৃদু হাসে। বলে, ‘আমি না জেনে কিছু বলি না সন্ধ্যা। যথেষ্ট খোঁজখবর, খোজাখুজির পর সবটা জানতে পেরেছি। প্রমাণ ছাড়া কিন্তু আসিনি বাদল ভাই৷’

বাদল চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। সন্ধ্যা ঢোক গিলে। কিছু বলতে নিলে বাদল আটকায়। বলে, ‘লুকোচুরি তো অনেক হলো এবার তাহলে সত্যিটাই না হয় শুনুন! তা সব প্রমাণ থাকার পরেও আমাকে পুলিশে না দিয়ে এভাবে শান্ত গলায় আমারই গ্রামে বসে প্রশ্ন করছেন!’

আয়াশ বাঁকা হাসে। বলে, ‘যারা মা’রা গেছে তারা একটাও মানুষ ছিলো না তাই আপনাকে পুলিশে দেওয়ার অতো তাড়া নেই আমার। আমি শুধু কারণগুলো জানতে চাই। তারপর না হয় ভেবে দেখবো আপনাকে পুলিশে দেওয়া যায় কি না!’

বাদল তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে। সন্ধ্যা আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকে বাদলের মুখের দিকে। বাদল বলতে শুরু করে,

‘নয়না ছিলো সন্ধ্যার ফুফাতো বোন। আমার কিশোর, যৌবন পুরোটাই কাটে ওই মেয়ের মুগ্ধতায়। তার সন্ধ্যার মতো এতো বেশি সৌন্দর্য ছিলো না তবুও সে ছিলো অসম্ভব মায়াবতী এক মেয়ে। নয়নাকে আমি ভালোবাসি বলার পর সেও সায় দেয়। বেশি না হবে ৬ মাস আগের কথা। সেদিন সন্ধ্যা আর মুন্নি প্রাইভেট পড়তে যায়নি। সোনিয়া আর নয়না গেছিলো। ভাগ্যবশত ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আর সেদিন জা’নো’য়া’র গুলো আমার প্রণয়িনী আর আমার বোনের মতো মেয়েটাকে….’

গলায় এসে কথা আটকে যায়। সন্ধ্যার চোখ ততক্ষণে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপতেছে। আয়াশ লক্ষ্য করে সে কাপুনি৷ শক্ত করে ধরে সন্ধ্যার হাত। বাদল আবার বলতে শুরু করে,

‘সোনিয়া আর নয়নার বাবা মা যখন এ গ্রামের কাছে বিচার চাই তখন তারা আশাহত হয়। গ্রামের কু’ত্তা গুলা তখন টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়ে ওদেরকে যা তা ভাষায় গা’লি দেয়। পুলিশের কাছেও গেছিলো কোনো লাভ হয়নি। সেখান থেকেও গায়ে খা’রাপ মেয়ের ত’কমা লাগিয়ে বাড়ি ফেরে দুজন৷ কপাল এতোটাই খারাপ ছিলো যে সে সময় ছিলাম আমি শহরে। এসব কিছুই আমি জানতাম না। ভালোবাসার মানুষটাকে যে বুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলবো, ‘তুমি একটুও ভেঙে পড়ো না। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। আমি তোমাকে ভীষণ রকম ভালোবাসি।’ এটুকুও বলার সুযোগ পায়নি। তার আগেই নয়নার সাথে সাথে সোনিয়াও একটা গাছের ডালের সাথে নিজেদের ঝু’লিয়ে দেয়। বকুল সেদিন মোড়ের ফোন থেকে আমাকে ফোন করে জানায় এসব। এসব শোনার পর এতোটাই শকড হয়ে গেছিলাম যে আমি সাথে সাথে সেন্স হারায়। রুমমেট হসপিটালে নেয়। শহর থেকে ফিরতে ফিরতে ততক্ষণে নয়নার লা’শ কবরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানেও ওই শ’য়’তা’ন গুলো ব্যাগড়া দিয়েছিলো। ওদের কবর দিতে দেবে না বলেছিলো কিন্তু নয়নার বাবা মা আর সোনিয়ার বাবা মা ওদের পায়ে ধরে কবর দিতে নিয়ে যায়। আমি শেষ বারের মতো আমার নয়নাকে দেখতেও পারিনি। সোনিয়া সারাদিন ভাইয়া ভাইয়া করতো সেই বোনের মতো মেয়েটাকেও দেখতে পায়নি। শুনেছিলাম সন্ধ্যা দুদিন সেন্সলেস ছিলো সোনিয়া আর নয়নার মৃ’ত্যুর পর। আমিও চুপচাপ ছিলাম। ২ দিন পর সন্ধ্যা আর রিনি এসে ডেকে নিয়ে যায় আমাকে। নয়নার ঘরে ব্যাগের ভেতর আমার জন্য একটা চিঠি রেখে গিয়েছিলো। সেটাই পেয়েছিলো সন্ধ্যা আর রিনি।’

অবাকের সপ্তম পর্যায়ে আয়াশ। সে ধারণা করেছিলো বাদলের বিষয়ে সন্ধ্যা জানে কিন্তু এভাবে যে সেও যুক্ত আছে কল্পনাও করেনি। আবার বাদলের জন্য ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করছে। বাদল চুপ থেকে আবার বলা শুরু করে,

‘চিঠিতে নয়না তার সাথে ঘটা ঘটনা গুলো লিখে গেছিলো। মেয়েটার চোখের পানির ছোপ ছোপ দাগ চিঠিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। জানেন ওই জা’নো’য়া’র গুলো শুধু ওদের চরি’ত্রহী’না নাম দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি। সবার অলক্ষ্যে এসে নয়না আর সোনিয়াকে বাজে বাজে কথা, বাজে বাজে প্রস্তাব দিয়ে গেছে। এমনকি ওই পুরোনো মেম্বার শা’লা কু’ত্তার বা’চ্চাও আমার নয়নার দিকে হাত বাড়িয়েছিলো। এতসব সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ এমন পদক্ষেপ নেয়। এমন হাজার হাজার মেয়ে আছে যারা প্রতিদিন ধ’র্ষ’ণে’র শিকার হয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যার পথ বেছে নেয়। সেদিন মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ওদের বাঁচার কোনো অধিকার নেই। মাথায় শুধু এটাই চলছিলো। ব্যাস সেদিন রাতেই ওদের দেহ থেকে গলা আ’লাদা করে দিলাম। টু’করো টু’করো করে ফে’লে রাখলাম সেই গাছ তলায় যেখানে সোনিয়া আর নয়না আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছিলো। মনে মনে প্রচুর শান্তি পেয়েছিলাম সেদিন। শুধু এমন ২ জন সোনিয়া নয়না না অনেক মেয়ের সাথে এরা খারাপ করেছে। মে’রে ফেলেছে। সে হিসেবে অনেকগুলো মেয়ের জীবন বাঁচিয়ে দিলাম।’

প্রশান্তির হাসি হাসে বাদল। গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে বাদলের একেকটা বাক্য। আয়াশ কি বলবে বুঝতে পারে না। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফের শুধায়, ‘মুন্নিকে কেন মে’রে’ছেন?’

বাদলের চোখ মুখ রাগে পরিণত হয়। দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠ করে বসে থাকে। পাশ থেকে সন্ধ্যা বলে, ‘বি’শ্বা’স’ঘা’ত’কদের বেঁ’চে থাকার অধিকার নেই শহুরে ডাক্তার।’

আয়াশ সন্ধ্যার কন্ঠে কেঁপে ওঠে। সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে, কান্নায় চোখে রক্ত জমে গেছে। নাকের ডগা লাল টুকটুকে হয়ে আছে। বাদল কোনো উত্তর দেয় না। আয়াশ অবাক কন্ঠে বলে, ‘মুন্নি কি করেছিলো?’

সন্ধ্যা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘কি করেনি? বন্ধু নামের কলংক ‘ও’। নারী নামের কলংক। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের স’র্বনা’শ করতে ওস্তাদ একদম। আজকে ওই মেয়ের জন্য আমাদের নয়না আর সোনিয়া আমাদের মাঝে নেই। বি’শ্বাস’ঘা’ত’ক একটা!’

সন্ধ্যার কথা শেষ হতেই বাদল বলে, ‘যেদিন মেম্বারের ছেলে আর চেয়ারম্যানের ছেলেকে মে’রে’ছি সেদিন ওরা স্বীকার করে যে ওদের সোনিয়া আর নয়নার সাথে এসব করতে উৎসাহ দিয়েছিলো মুন্নি। কথাটা শুনে মাথায় বাজ পড়ার মতো হয়েছিলো। মুন্নি আমাকে পছন্দ করতো, সে নয়নার সাথে আমার সম্পর্কটা মানতে পারেনি৷ তাই এসব করেছে। রাগে ঠিক করলাম পরেরদিনই ওর মা’থা কে’টে নিবো কিন্তু আফসোস ‘ও’ সেদিনই গ্রাম ছেড়ে চলে গেলো। আমি সামলে নিলাম নিজেকে। যেদিন ‘ও’ গ্রামে আসছে সেদিন রাতেই ওকে পু’তে রেখে দিয়েছি। এতে আমার এতটুকু আফসোসও নেই। যা করেছি তা কোনোদিক দিয়েই আমার কাছে ভুল নয়। ওরা বেঁচে থাকলে এমন হাজারটা মেয়ের জীবন ন’ষ্ট করতো। অকালে মৃ’ত্যুর মুখে ঠেলে দিতো।’

আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে সন্ধ্যার মা আর বাবাকে কেন মা’র’লেন?’

চমকে ওঠে সন্ধ্যা। ভয়ে হাত পা কেঁপে ওঠে। এবার যে আরো একটা সত্যি জানবে শহুরে ডাক্তার! এরপর কি হবে?

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here