#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),০৪,০৫
#মম_সাহা
পর্বঃ৪
রাত তিনটে।এক বিষন্ন মানবী দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের এক কোণে। পরনে তার শর্ট টিশার্ট আর ডেনিম প্যান্ট। লম্বা চুল গুলো কাঠি দিয়ে খোপা করা।মেয়েটি চাঁদ দেখায় ব্যস্ত। মেয়েটি জানেও না জীবন্ত চাঁদ দেখায় ব্যস্ত এক প্রেমিক পুরুষ।
চাঁদ খেয়াল করলো তার পিছে কোনো মানুষের অস্তিত্ব। তার মানে তার পিছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদ ফট করে পিছে ঘুরলো। যা সন্দেহ করেছে তাই।তার পিছে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে।চাঁদ আব্রাহামকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দেয়। আব্রাহামও চাঁদের হাসির বিপরীতে একটা অমায়িক হাসি দেয়। চাঁদ আবার ঘুরে আকাশের দিকে তাকায়।আব্রাহাম চাঁদের সাথে এসে দাঁড়ায়। ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে তেজ। সেই তখন মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাঁদকে দেখছিলো।যখন তেজ দেখলো সিঁড়ি দিয়ে কারো আসার শব্দ হচ্ছে তখন আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল।
চারপাশ নিস্তব্ধ হওয়ায় চাঁদ আর আব্রাহামের কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে তেজ।
আব্রাহাম চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশপানে চেয়ে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো আব্রাহাম,
–“খাবার টেবিলে মা তোমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে তার জন্য দুঃখিত আমি চাঁদ।”
চাঁদ আনমনে উত্তর দিলো,
–“না না আমি কিছু মনে করি নি।আমি জানি ঠান্ডার মা এত কিছু ভেবে বলে নি।ঠান্ডার মা তো খুব ভালো তাই আমার মতন একটা মেয়েকেও এত ভালোবাসে।আমার এ জীবনে আমি আবারও এত গুলো মানুষের ভালোবাসা পাবো ভাবতেও পারি নি।”
চাঁদের উদাসীন কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আব্রাহামের। দূর থেকে তেজও সবটা শুনছে।আব্রাহাম আবার বললো,
–“মায়ের কথায় কিছু মনে করো নি মানলাম কিন্তু তেজ? ওর কথাতে তুমি বেশ হার্ট হয়েছো আমি জানি।”
চাঁদ এবার ও আনমনে উত্তর দিলো,
–“আরে না আব্রাহাম ভাইয়া আমি সত্যিই কারো কথায় কিছু মনে করি নি।তেজ ভাইয়া না জেনেই সত্যি কথা বলেছে।আমার মতন মেয়েদের কখনো সংসার হয় না ব্রো।”
বেশ তাচ্ছিল্য স্বরেই বলল চাঁদ। আব্রাহামের বেশ খটকা লাগলো চাঁদের কথাতে।এই মেয়েটা বেশ রহস্য ঘেরা।কিন্তু কখনোই কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে নি।আজ আব্রাহামের কৌতূহল জাগল বেশ।সে মনে মনে ভাবলো আজ চাঁদকে জিজ্ঞেস করে দেখবে কোনো আশারূপ ফল পায় কিনা।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তেজও এবার প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়ালো।সে বুঝতে পেরেছে আজ আব্রাহাম এই মেয়ের মুখ থেকে কিছু তো বের করবেই।তেজ তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম চাঁদের মাথায় হাত বুলাচ্ছে।তেজ প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে তাদেন কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না।
আব্রাহাম চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
–“চাঁদকন্যা তুমি আমাকে বন্ধু ভেবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবো?”
চাঁদ হুঁশে ফিরলো।প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইলো আব্রাহামের দিকে।আব্রাহাম ও বুঝলো আজ সুযোগ আছে এ রহস্যময়ীর রহস্য ভেদ করার। আব্রাহাম চাঁদকে জিজ্ঞেস করল,
–“আচ্ছা চাঁদ কন্যা আমি খেয়াল করেছি তোমাকে পরিবার,সংসার নিয়ে কিছু বললে তোমাকে কেমন বিষন্ন দেখায়।সেটার কারণ কী?”
চাঁদ বুঝতে পারে নি আব্রাহাম তার অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। আজ অনেক দিন পর অতীতের ক্ষত টা তাজা হলো।বেশ জ্বালাচ্ছে ভেতর টা।চাঁদের মনে পড়লো তার জীবনে ভয়ংকর অতীত।আজ দেড়বছর পর চাঁদ কারো সামনে এমন ভাবে ভেঙে পড়লো।এত এত কাছের মানুষ গুলোর বেইমানি মনে পড়লো।চাঁদ চিৎকার করে কাঁদছে। আব্রাহাম আহাম্মক হয়ে গেল।যে মেয়ে এত শক্ত সে এভাবে ভেঙে পড়লো কেনো? তবে কি আব্রাহাম ভুল প্রশ্ন করে বসলো।
তেজ দূর থেকে চাঁদকে কান্না করতে দেখে বেশ বিচলিত হয়ে গেল।কোনো কিছু না ভেবেই চাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।চাঁদের হিতাহিত জ্ঞান নেই।তেজ তার হাত ধরতেই সে তেজের বুকে হামলে পড়লো।আব্রাহাম তেজের কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দিয়ে নেমে গেলো।জানে সঠিক মানুষটার কাছেই চাঁদকে রেখে এসেছে।আর কেউ জানুক আর না জানুক সে তো জানে তেজের মনের খবর।
তেজ চাঁদকে চুপ হতে বললেও চাঁদের কোনো হেলদুল নেই। হঠাৎ চাঁদ জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো তেজের বুকে।তেজ বেশ অবাক হলো সামান্য একটা প্রশ্নে চাঁদের এমন হাল দেখে।তবে এখন এত কিছু ভাবার সময় নেই।তাই দ্রুত চাঁদকে পাঁজাকোলে করে চাঁদের ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিল।
চাঁদের ঘরের লাইট জ্বলতে দেখে আব্রাহাম নিজের ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখে চাঁদ নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। তেজ মাথা ধুয়ে দিচ্ছে।আব্রাহাম ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটে এসে তেজকে জিজ্ঞেস করল,
–“কি হয়েছে চাঁদকন্যার তেজ?জ্ঞান হারালো কেন?”
তেজ মাথায় জল দিতে দিতে বলল
–“অতিরিক্ত কান্না করে প্রেশার ফল করেছে মনে হয় তাই জ্ঞান হারিয়েছে।”
আব্রাহাম বেশ আফসোসের স্বরে বলল,
–“তখন আমার এমন প্রশ্ন করা উচিত হয় নি।আমি কি জানতাম সামান্য প্রশ্ন এমন শক্ত মেয়েটাকে ভেঙে গুরিয়ে ফেলবে।”
তেজ আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আশ্বাসের সুরে বলল,
–“ভেঙে যাবে দেখে কি আমরা অতীত জানবো না? এখন তো ডেম সিউর আমি এই মেয়ের কোনো অতীত আছে। খুব রহস্য এই মেয়ের মাঝে।”
আব্রাহাম ভ্রু কুচকে কৌতুকের সুরে বলল,
–“আচ্ছা তুই কীভাবে জানলি আমি ওরে অতীত সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করেছি? তুই তো তখন ছিলি না।”
তেজ বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লো।এখন সে কি বলবে।তবে আমতা আমতা করে বলল,
–“না ছিলাম ই না তো আসলে মানে,
আব্রাহাম চিন্তার মাঝেও হাহা করে হেসে উঠে।তেজ লজ্জা পেয়েছে বেশ।আব্রাহাম তেজের কাঁধে হাত রেখে আশ্বাসের সুরে বলল,
–” আমি তোর বন্ধু প্লাস ভাই আর তুই আমার কাছে লুকাতে এসেছিছ তোর ভালোবাসার কথা? আর কেউ জানুক না জানুক আমি তোর মনের খবর ভালো করেই জানি।এই যে এই মেয়েটাকে এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করিস কেনো আমি জানিনা ভেবেছিস? তুই যে মেয়েটাকে ভালোবাসিস সেটা মানতে চাস না কাউকে জানাতে চাস না তাই তো কত কষ্ট দিয়ে ফেলিস মেয়েটাকে। ”
তেজ উঠে গলা জড়িয়ে ধরে আব্রাহামের।এতদিন এই সত্যি গুলো লুকিয়ে রাখতে রাখতে হাঁপিয়ে উঠেছিলো সে। আজ কিছু না বলেও হালকা লাগছে।তাই তো এ ছেলেটাকে এত ভালোবাসে সে।আব্রাহাম মুচকি হেসে ভাইয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,
–“তা এত রুড শক্ত তেজ কীভাবে এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো? পড়েছে সেটা জানাচ্ছে না কেনো?”
তেজ আব্রাহামের পিঠে শক্ত একটা চড় বসিয়ে দিলো।এবং হেসে বলল,
–“এজন্যই আমি কাউকে জানাতে চাই নি।তোরা কেমন সেটা তো আমি জানি।এমন হাসি ঠাট্টা করলে খারাপ হবে কিন্তু।আর তুই কাকে জানাতে বলছিস? এই মেয়েকে জানালে আমাকে আস্ত রাখবে বলে তোর মনে হয়? এমনেতেই ভাবে মাটিতে পা পড়ে না তারপর তো হয়েছেই কাজ।”
আব্রাহাম হোহো করে হেসে উঠলো। তেজকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“বাহ্ রে হিরো তুমি ভালোবাসবে কিন্তু বলবে না তা কি করে হয়? আর চাঁদের শক্ত মনোভাবকে ভাব বলিস না।নিশ্চয়ই মেয়েটার অতীত খুবই জঘন্য কিছু।”
তেজও মাথা নাড়ায়।মনে মনে ভাবে এই রহস্যের সমাধান করতে হবে।তারপর হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসতেই তেজ আব্রাহামের দিকে তাকায় আর বলে,
–“ভাই কারোরে কিন্তু জানাবি না আমার কথাটা প্লিজ।”
–“কাকে জানাতে না করছিস তেজ আমাদের?”–জাহানারা বেগম আর নাবিলা খানম কথাটা বলেই দরাজার আড়াল থেকে আলোতে এসে দাঁড়ালো। এতক্ষণ তারা দরজার বাহিরে ছিলো।আব্রাহাম আর তেজ কথায় এতটা মগ্ন ছিলো যে তাদের খেয়াল করে নি।
নাবিলা আর জাহানারা বেগমকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেল তেজ আর আব্রাহাম। ভেবেছিল এখন কাউকে কিছু জানাবে না কিন্তু নিজের মা আর ফুফিকে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেল তারা।আব্রাহাম আমতা আমতা করে বলল,
–“এত রাতে তোমরা এখানে?”
নাবিলা খানম এমে আব্রাহাম আর তেজ দুজনের কান টেনে ধরলো।আর বলল,
–“ওরে দুষ্টের দল এত ভালো একটা খবর আমাদের না জানানোর প্ল্যান করেছিস দুজনে।”
তেজ আর আব্রাহাম নাবিলা খানমকে জড়িয়ে ধরলো।তেজ মিষ্টি সুরে বলল,
–“আমি ভেবেছিলাম চাঁদকে আগে সব বলবো তারপর সবাইকে। কিন্তু তোমরা যে বুঝে যাবে ভাবতে পারি নি।”
এবার তেজ, আব্রাহাম আর নাবিলা খানম হাসা শুরু করলো।কিন্তু তেজের মা বেশ গম্ভীর হয়ে রইলেন।জাহানারা বেগমকে গম্ভীর হতে দেখে ভয় ঢুকে গেলো তিনজনের মনে।তেজ ভাবছে তাহলে কি তার মা মানবে না?
তেজ বেশ মিনমিন সুরেই মাকে জিজ্ঞেস করল,
–“মা তুমি কি ব্যাপার টা পছন্দ করলে না? চাঁদকে তো তুমি বেশ পছন্দ করো। তবুও কি তুমি তাকে মানবে না?”
সবাই অপেক্ষায় আছে তেজের মায়ের উত্তরের।জাহানারা বেগম সবাইকে চিন্তিত দেখে ফিক করে হেসে উঠলো। চাঁদের কাছে গিয়ে।ঘুমন্ত চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে তেজের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠান্ডা স্বরে বললেন,
–“এই মেয়েটাকে দেড়বছর আগলে রেখেছি কি না ভালোবেসে? আমি তো মনে মনে চাইতাম ও আমার বাড়ির বউ হোক কিন্তু তোর জন্য বলতে পারতাম না।আমি যে কি খুশি হয়েছি সেটা আমি জানি।”
তেজ তৃপ্তির হাসি হাসে।সবাইকে তেজ বলে দেয় এ কথা জেনো আর কেউ না জানে। সবাইকে যার যার মতন রুমে পাঠিয়ে দেয় জাহানারা বেগম।সে চাঁদের সাথে থাকবে আজ রাত।মেয়েটার শরীর অসুস্থ।
________________________
মাঝে কেটে গেছে এক সপ্তাহ।আজ তুহাকে দেখতে আসবে।কিন্তু আজ চাঁদ বাড়িতে নেই।গতকাল অফিস ট্যুরে চট্টগ্রাম গিয়েছে সে।আসবে আরো দুইদিন পর শুক্রবার সকালে।তেজ অবশ্য বেশ রাগারাগি করেছে চাঁদের অফিস ট্যুরে যাওয়ার কারণে।চাঁদকে বারণ করেছে এ নিয়ে চাঁদ বেশ কথা শুনিয়েছে তাকে।তাই সাহেব বেশ ফুলে আছে।সেদিনের রাতের ঘটনা আব্রহাম,তেজ,জাহানারা আর নাবিলা ছাড়া কেউ জানেনা।চাঁদেরও পরেরদিন সকালে রাতের কথা মনে ছিলো না তাই সবাই বেঁচে গেছে।
এখন সন্ধ্যা সাতটা।তুহা বসে আছে পাত্র পক্ষের সামনে।তুহাকে দেখতে পাত্র,পাত্রের বড় ভাই,ভাবী,মা বাবা এসেছে। চাঁদকে অবশ্য জানানো হয়েছে আজ তুহাকে দেখতে আসার কথা। চাঁদ খুশি হয়েছে।তবে সে থাকতে পারে নি বলে দুঃখ প্রকাশও করেছে।
তুহাকে পাত্র পক্ষ দেখে গেছে তারা শুক্রবারেই এন্গেইজমেন্ট ঠিক করেছে।এটাও চাঁদকে জানানো হয়েছে।
[বি,দ্র, গল্পের মাঝে লিখছি বলে রাগ করবেন না।আপনারা তো গল্পের শেষে লিখলে খেয়াল করেন না তাই বাধ্য হয়েই এখানে লিখছি।আসলে আমি খুব অসুস্থ। কাল হসপিটালে এডমিট হবো।তাই এক সপ্তাহ গল্প দিতে পারবো না।আমার সুস্থতার দোয়া করবেন ]
_____________
আজ শুক্রবার পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে।মেহমানে ঘর রমরমা।কারণ দুদিন পর মানে রবিবার তুহার গায়ে হলুদ। ছেলের বাড়ির ওদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে আর মেয়েদের ও ছেলে পছন্দ হয়েছে তাই বিয়েটা তাড়াতাড়িই ফিক্সড করা হয়েছে।আর তাছাড়াও ছেলের বাড়ির মানুষ থাকে খুলনা।এত দূর থেকে ঢাকা আসবে যাবে বেশ ঝামেলার।তাই তারা রিসোর্ট ঠিক করেছে থাকার জন্য। বিয়ে বৌভাত ঢাকাতেই করে তারপর একবারে খুলনা যাবে তাই এত তোরজোর।
দুপুর ১২ টার আজান দিচ্ছে চারদিকে। চাঁদ মাত্র চট্টগ্রাম থেকে আসলো।জাহানারা বেগম তাড়াতাড়ি এসে আঁচল দিয়ে চাঁদের ঘাম মুছিয়ে দিচ্ছে নাবিলা বেগম শরবত নিয়ে এসেছে।হৃদি এসে চাঁদের সাথে বসে দুনিয়ার সব কথা বলা শুরু করছে।এতদিন পর প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে পেলো বলে কথা। তুহাও লজ্জা ভাব করে বসে আছে।শুধু একমাত্র কথা বলছে না তেজ।তার অভিমান হয়েছে বেশ।তবে এই চারদিনে কলে কথা বলেছে চাঁদের সাথে।
চাঁদ তুহার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
–“তুহা আপুর শ্বশুর বাড়ি কোথায় সেটাই তো জানা হলো না।”
তুহা লজ্জা রাঙা মুখ করে বলল,
–“খুলনা।”
তুহার ছোট্ট শব্দটাই চাঁদের মুখের হাসি গায়েব করতে যথেষ্ট ছিলো।এই খুলনাই তো চাঁদের শৈশব কাটিয়েছে।জীবনের বেশখানিক সময় তো এই খুলনা ঘিরে।
তেজ খেয়াল করল চাঁদ হঠাৎ ই চুপ হয়ে গিয়েছে।যতক্ষণ বসে ছিল একটা কথা ও বলে নি চাঁদ শুধু হু হা ছাড়া।
সময়টা ঠিক সন্ধ্যা। তুহার শ্বশুর বাড়ির লোক কাছাকাছি চলে এসেছে।পুরো ড্রয়িং রুম ভরা মেহমান।আজ রিয়ার পরিবারও এসেছে সাথে রায়হান।চাঁদের বন্ধু বান্ধবও এসেছে হৃদির নিমন্ত্রণে।চাঁদ এখনো নিচে নামে নি।দুপুরে খেয়ে রুমে গেছে আর আসে নি।সবাই ভেবেছে জার্নি করে এসেছে তাই রেস্ট নিচ্ছে কিন্তু চাঁদ যে অতীতের স্মৃতি খুলে বসেছে সেটা বুঝে নি কেউ।
তেজ আব্রাহাম কথা বলছে।এর মাঝেই সিঁড়ি দিয়ে এক নারীকে নামতে দেখে তেজের কথা থেমে যায়। প্রায় সবাই তাকিয়ে আছে সিঁড়ির রমনীর দিকে।রমনীর পড়নে সাদা আর আকাশি রঙের মিশ্রন শাড়ি,চুল খোঁপা করে ফুল দেওয়া, নাকে তার সবসময়ের মতন নোস রিং,কানে ঝুমকা।চাঁদকে আজ টম বয় থেকে পুরো মেয়ে রূপে দেখে থমকে যায় সবাই।তেজের তো হার্টবিট মিস হয়েছে কয়েকবার। উপস্থিত রায়হানও এমন চাঁদকে দেখে অবাক।
আব্রাহাম তেজকে হা করে থাকতে দেখে ঠাট্টা শুরু করে দেয়। তবে আব্রাহাম ও এ রমনীতে মুগ্ধ হয়েছে।
চাঁদ নামতেই হৃদি,নাবিলা,জাহানারা,তুহার মা, পুষ্প, হাফছা সবাই ওকে ঘিরে ধরলো।তেজের মা তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিজের হাতের স্বর্ণের বালাটা চাঁদের হাতে পরিয়ে দিলো চাঁদ হাজারো বারণ করা স্বত্তেও।হৃদি ওরা তো দুষ্টমি করে বলছে কার জন্য শাড়ি পরেছে চাঁদ কিছু বলছে না।আসলে চাঁদ তেজের কথা রাখতেই শাড়ি পড়েছে।সেদিন ফোনে কথা বলার সময় তেজ বলেছিল চাঁদকে শাড়ি পরলে কেমন লাগে দেখার অনেক ইচ্ছা তার।তাই তো আজ আসার সময় শপিং করে এসেছে।
সবাই যখন রমনীকে নিয়ে মাতামাতি করছে তখন তুহার শ্বশুর বাড়ির মানুষ হাজির হয়।সবাই দরজার সামনে গিয়ে দাড়ায়।দরজা দিয়ে আসা মানবকে দেখে চাঁদের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়।তবে কি অতীত দেড়বছর পর আবার তার মুখোমুখি হলো?
চলবে,,