সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),১০,১১

0
712

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),১০,১১
#মম_সাহা
পর্বঃ১০

ভোর ছয়টা।চাঁদদের ফ্লাটের দরজা কেউ অনবরত ধাক্কাচ্ছে।পুষ্প প্রথম ভয় পেয়ে গেছিলো। তাড়াতাড়ি উঠে ড্রয়িং রুমে মেইন দরজার সামনে যায় সাথে চাঁদও যায়। কারণ পুষ্প যা ভীতু।

এতক্ষণ পুষ্পের মনে ভয় থাকলেও এখন দরজার উপাশে কন্ঠ শুনে আশ্চর্যের সপ্তম পর্যায়ে উঠে গেলো অবাক চোখে চাঁদের চোখের দিকে চাইল।চাঁদ কিছুটা আন্দাজ আগেই করছিলো তবে অবাক হয়েছে একটু।

দরজা খুলে তাড়াতাড়ি। দরজা খুলেই হৃদির দর্শন পায়।একটা ইয়া বড় লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হৃদি।পুষ্পকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে পুষ্পকে দরজার সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে সোফায় এসে বলল।পুষ্পও কৌতূহল দমাতে না পেরে তাড়াতাড়ি হৃদির সামনের সোফায় এসে বসল।চাঁদ দরজা বন্ধ করে এসে হৃদির জন্য জল নিয়ে হৃদির সামনে ধরল।

পুষ্প কৌতূহল দমাতে না পেরে হৃদিকে জিজ্ঞেস করে বসল
–“কিরে পেত্নী সকাল না হতে হতে তুই হাজির কি ব্যাপার? পালিয়ে টালিয়ে যাবি নাকি? নাকি বাসা থেকে বের করে দিয়েছে? ”

হৃদি খুব আরামে পানিটা শেষ করলো। নিজের শরীর এলিয়ে দিলো সোফায়। জেনো তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই।পুষ্প ধৈর্য ধরতে না পেরে হৃদিকে ঝাঁকিয়ে বলল
–“কিরে মহিলা বলিস না কেনো এত সকালে এত বড় ব্যাগ নিয়ে এখানে কেনো?”

হৃদি পরম অবহেলায় একটা হামি দিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে বলল
–“আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।”

পুষ্প অবাকে হা করে রয়েছে।সাথে সাথেই প্রশ্ন করলো,
–“চলে এসেছিস মানে? কি চলে এসেছিস? আর কোথায় থাকবি?”

হৃদি বেশ সাধারণ ভাবে উত্তর দিলো
–“কেনো?যেখানে এসেছি সেখানে থাকব বলেই তো এসেছি।এতটুকু কমন সেন্স নেই তোর? এজন্যই বলি পুষ্প কম খা।খেতে খেত ব্রেণটাও অকাজের করে ফেলেছিস।”

পুষ্প বিরক্ত স্বরে “চ’ জাতীয় শব্দ করলো।হৃদির উত্তর তার পছন্দ হচ্ছে না।তাই সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের স্বরে বলল
–” দেখনা চাঁদ হৃদি কেমন খামখেয়ালি করছে।তুই ই জিজ্ঞেস কর কিছু।”

হৃদি এবার বেশ সিরিয়াস হলো।চাঁদ আর পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে বলর
–” অনেক হয়েছে মজা।এবার আসল কথায় আসি।আমি সন্ধি ভিলা ছেড়ে চলে এসেছি। স্বার্থপর মানুষের ভীড়ে আমি থাকতে চাই না আর।আমি এখানেই থাকবে। আশাকরি তোদের কেনো আপত্তি নেই।আর আমার একাউন্টে যা টাকা আছে তা দিয়ে তিনজন আরাম করে কাটাতে পারবো।সো চিল গাইস।”

চাঁদ বেশ গম্ভীর কন্ঠেই বলল,
–“চলে এসেছিস ঠিক আছে।কিন্তু তোকে ছাড়া মাম মানে তোর মা,বাবা,চাচা, চাচী, ফুপু ভাই,বোন কষ্ট পাবে না?আর টাকার কথা পরে।কি কারণে এসেছিস সেটা বল।নিশ্চয়ই ঝামেলা করেছিস?”

হৃদি আমতা আমতা করে উঠলো।মনে মনে চাঁদ বুজে ফেলায় বেশ বিপদে পড়লো।কিন্তু যেহেতু চাঁদ বুজে ফেলেছে তাই আর না লুকিয়ে বলে ফেলল কাল রাতের সব ঘটনা।

পুষ্প হা হয়ে সবটা শুনলো।হৃদিও যে এমন ভাবে কথা বলতে পারে ওরা ভাবে নি।চাঁদ দুজনকে বলে রেডি হতে চলে গেলো আজ তিনজনেরই ভার্সিটি আছে।

_______________

সময়টা তখন দুপুর একটা। কাঠ ফাটা রোদে কলেজ ক্যাম্পাসে একা দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ।হৃদি আর পুষ্প আজ ভার্সিটি আসে নি।সে একাই এসেছে।দুটো ক্লাশ শেষ। আর একটা কিছু ক্ষণ পর হবে। তাই নিজের টেবিলে অন্যান্য ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই এক জুনিয়র ছেলে এসে চাঁদকে জানাল তাকে কেউ নিচে ডাকছে।ছেলেটা নাম ঠিকানা কিছু বলে নি।চাঁদের সাথে নীল আসতে চাইলেও চাঁদ না করে দেয়।

আর বর্তমানে সে ঐ আগন্তুকের অপেক্ষায় আছে।হঠাৎ পিছন থেকে চির পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো।চাঁদ অবাক হয়ে পিছে তাকিয়ে দেখে সে ব্যাক্তি আর কেউ না স্বয়ং তেজ।কত দিন পর তেজের মুখোমুখি আজ পাঁচদিন পর তেজ তার সামনে।চাঁদ কেনো রূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চলে যেতে নিলেই তেজ খপ করে চাঁদের হাতটা ধরে ফেলল।চাঁদের শরীর জেনো জ্বলে উঠলে।ঘুরেই এক চড় লাগাল তেজের গালে।আর বেশ কঠিন ভাবে বলল,

–“সাহস কি করে হয় একটা অপরিচিত মেয়ের হাত ধরার?এতদিন আপনাদের বাড়িতে ছিলাম বলে সব সহ্য করেছি এখন আর নয়।কি ভেবেছেন চাঁদকে যেমন খুশি তেমন নাচাবেন আর চাঁদ নাচবে? চাঁদ আর নরম মাটি নেই যে এসে খাঁমচে যাবেন।”

তেজ অতি বিষ্ময়ে হতভম্ব।ভাবতেও পারেনি চাঁদ এমন করবে।তেজ নিজের গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে। সে এখনো চাঁদের আচারণটা নিতে পারে নি।

চাঁদ চলে যেতে নিলেই তেজ আবার পথ আটকায়।হাত জোড় করে বলে,
–“প্লিজ চাঁদ একটা না এমন হাজারও চড় দিলেও আমি যাবো না।আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবো না।”

–“কেনো যাবেন না?কি হই আপনার আমি? না যাওয়ার কারণ কি?”চাঁদ দ্বিগুণ উত্তেজিত হয়ে বলল।

–“কারণ,কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।হ্যাঁ চাঁদ আমি ভালোবাসি তোমায়।আই লাভ ইউ।আই ওয়ান্ট ইউ। আই নিড ইউ চাঁদ।আই বেডলি নিড ইউ।”

চাঁদ থমকে যায়। এ মানুষটা তাকে ভালোবাসে? কই দুচোখে যে সহ্য করতে পারে না বা পারতো না সে চাঁদকে ভালোবাসে।

তেজ চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। চাঁদ কতক্ষণ চুপ থেকে তারপর হোহো করে হেসে উঠলো। তেজ বোকা বনে গেল।

তেজ বেশ অবাক সুরে বলল,
–“চাঁদ হাঁসছো কেনো? আমি জানি আমি ভুল করেছি ক্ষমা কি করবে না?আমার অনুভূতি কি বুঝবে না?”

চাঁদ তখনও হেসে যাচ্ছিলো।তেজের শেষের কথাটা শুনে হাসি থামিয়ে তেজের দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।কেমন আকুতি মাখা, অভিমান মাখা নয়নে তাকিয়ে বলল,
–“আমার অনুভূতি? সেটা কেউ বুঝেছিলো তেজ ভাইয়া? ভেতরে আমার ভেঙ্গে যাওয়া অনুভূতি কেউ দেখেছিলো? এই আপনি, আপনিও তো বেশ ছোট করে দেখতেন আমাকে।তখন বুঝি ভুলে গিয়েছিলেন আমারও অনুভূতি আছে।এ মেয়েটা শক্ত কিন্তু মন নামক জিনিস টা তো শক্ত না।কেউ বুঝেন নি কেউ।তবে আজ কেনো আশা করছেন?।”

চাঁদের কন্ঠে কিছু একটা ছিলো যা তেজকে নাড়িয়ে দিয়েছে তবুও সে বলল,
–“প্রতিশোধ নিবে চাঁদ। তবে তাই হোক।আমি তোমায় ছাড়ছি না।”

চাঁদ একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলো আর বলল,
–“যেচে পায়ে কুড়াল মারতে এসেছেন?আগুনে হাত দিলে হাত কিন্তু পুড়বে তাই সাবধান।আর জানেন তো আমার অক্ষমতা তবুও কেনো? কেনো দয়া দেখাতে আসছেন?চাঁদের কারো প্রয়োজন নেই কারো না।”

চাঁদ ছুটে চলে গেলো।তেজ দাঁড়িয়েই রইল।সে তো চাঁদের অক্ষমতাকে বড় করে দেখছে না তবে চাঁদ কেনো? আর চাঁদের সাথে যা করেছে তার শাস্তি তো পেতেও হবে।চাঁদকে পাওয়ার জন্য সব করতে প্রস্তুত এ প্রেমিক।প্রেমিকার যাওয়ার পানে চেয়ে প্রেমিক কবিতা চয়ন করলো,

প্রেমিকতায় হারবে প্রেমিক থামবে না কভু ,
প্রেমিকার মন নরম ভীষণ
প্রেমিকই তার প্রভু।
~মমসাহা

চলবে,,,

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা
ধামাকা পর্বঃ১১

চাঁদ ক্লাশে গিয়ে চুপ করে বসে আছে।সবাই কি হয়েছে,কে ডেকেছে জিজ্ঞেস করলেও চাঁদ সত্যিটা বলে নি।

চাঁদ ভাবছে তার ভাগ্যের কথা। কত খেল দেখালো।আজ আবার নতুন দিকে মোড় নিলো।তবে বুকের বা’পাশটা কেমন জ্বলছে অজানা ব্যাথায়।অতিরিক্ত রাগে মানবটাকে চড় মারার আঘাতে কি রমনীর এ ব্যাথা? উত্তর খুঁজে পায় না মানবী।চোখ বন্ধ করে মাথা ঠেকায় টেবিলে। বন্ধু মহল আড্ডায় ব্যস্ত।রমনী ব্যস্ত তার জীবনের হিসেব কষতে।

সে জানে তার অতীত সবাই জেনে গিয়েছে কিন্তু না বলা কিছু কথা তো আড়ালেই রইল।থাক নাহয় সেগুলো আড়ালে।এ কথা গুলো আড়ালে থাকলে আপন মানুষ চেনা যাবে।

উফফ বেহায়া প্রেমিকের আকুতি আজ বড্ড অশান্ত করে দিলো।আবার ঝড় বইতে শুরু করালো।জীবনকে কি আবারও সুযোগ দেওয়া যায়? হয়তো দেওয়া উচিত। কিন্তু এই স্বার্থপর মানুষ গুলোকে কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত না।

এর মাঝেই চাঁদের কানে বাজল আজ এক নতুন টিচার এসেছে ভর্সিটিতে।এখনের ক্লাশটা সেই টিচারই নিবে।বহুত হ্যান্ডসাম নাকি।এমন আরো বৃশিঙ্খল কথা শুনছে চাঁদ।আজকাল কার মেয়েরাও না লজ্জা নামক ভূষণ টা ছিঁড়ে ফেলছে।

“হেলো স্টুডেন্ট। হি ইজ ইয়োরস নিউ টিচার দ্যা তেজস্ব আবরার। ”

প্রিন্সিপালের কথায় চমকে তাকালো চাঁদ।হ্যাঁ তার সামনে তেজ দাঁড়িয়ে আছে।তবে কি তেজই নতুন টিচার? কিভাবে সহ্য করবে সে তেজকে?

প্রিন্সিপাল স্যার তেজকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ক্লাশ থেকে চলে যান।চাঁদ আর নীল বেশ অবাক হয়েছে সাথে ওদের বাকি ফ্রেন্ড।

নীল চাঁদকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করে,
–“চাঁদ তেজ ভাইয়া এখানে কেনো?”

–“আমি কি তেজের ঘরের বউ যে আমি জানবো? আজব প্রশ্ন।”
চাঁদ বেশ রুঢ় স্বরে উত্তর দিলো।নীল চাঁদের উত্তরে আমতা আমতা করে বলল,
–“আসলে না আমি ভাবছি হয়তো তুই কিছু আন্দাজ করতে পারবি।”

এই বলে দাঁত কেলিয়ে বোকা মার্কা হাসি দেয় নীল। নীলের কান্ড দেখে চাঁদ হাসি চাঁপাতে না পেরে হোহো করে হেসে দেয়।

তেজ প্রত্যেক টা বিষয় দূর থেকে খেয়াল করেছে।কিন্তু কিছু না বলেই সবার উদ্দেশ্য গলা পরিষ্কার করে বলে উঠল,
–“উহুম স্টুডেন্টস আমি তেজ আবরার আপনাদের নিউ টিচার।তো আপনাদের সাথে পরিচিত হতে চাই।সবাই নিজের পরিচয় টা দেন।”

তেজের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে মেয়েরা নিজেদের পরিচয় দিলো।এক মেয়ে তো বলেই ফেলল,
–“স্যার আপনি আবরার ইন্ডাস্ট্রির মালিক তেজস্ব আবরার না?হায় আমি কবে থেকে ফিদা আপনার উপর।”

তেজ কেশে উঠলো।পুরো ক্লাশে হাসির রোল পড়ে গেলো।চাঁদ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইল মেয়েটার দিকে। ছি মেয়েদের লজ্জা শরম খেয়েছে বোধহয়। তেজ আড়চোখে তাকায় চাঁদের দিকে। রমনীর চেহারা দেখে মনের খবর বুঝা মুশকিল। তেজ মুচকি হাসে।যে করেই হোক এ রমনীকেই তার ঘরণী বানাবে।

একে একে সবার পরিচয় পর্ব শেষ হয় শুধু চাঁদ বাদে।তেজ এবার চাঁদের দিকে যায়।আর দুষ্টমির সুরে বলে,
–“কি মিস আপনি পরিচয় দিচ্ছেন না যে?আমি তো সবার পরিচয়ই জানতে চাইলাম আপনি কি সবার থেকে আলাদা নাকি?”

রাগ হয় রমনীর।ঠিক রাগ না অভিমান হয়।তেজ কি তাকে চেনে না?তারপর নিজেই আবার মনে মনে স্বান্তনা দেয় প্রেমিক জাত স্বার্থপর জাত বলে।একটু আগে যেই নারীকে প্রেম নিবেদনা করলো এখন সেই নারীরই পরিচয় জিজ্ঞেস করছে।প্রেমিক জাত বোধহয় এমনি হয়।

চাঁদের মুখে পরম তাচ্ছিল্য মাখা হাসিটা চোখ এড়াতে পারেনা অসহায় প্রেমিকের। প্রেমিক মনে মনে কষ্ট পায় রমনীর ভুল বুঝার কারণে।

চাঁদ বাঁকা হেসে তাচ্ছিল্য স্বরে উত্তর দেয়,
–“আমি চাঁদ। ঐ আকাশের চাঁদের মতন কলঙ্কিত না তবে তার মতন একা।”

তেজ আর কিছু বলে না।চলে যায় নিজ স্থানে।পড়ানো শুরু করে নতুন উদ্যমে। ক্লাশের প্রত্যেক টা মেয়ে তেজকে চোখ দিয়ে গিলে খেতে ব্যস্ত আর তেজ ব্যস্ত এক কঠিন হৃদয়ের মানবীকে দেখতে।

_______________
রাত নয়টা।চাঁদ সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরছে বাসার উদ্দেশ্যে।আজকাল অফিসের এমডি কেমন জেনো দৃষ্টি দিয়ে তাকায় তার দিকে।না সে দৃষ্টি লালসা নেই তবে একরাশ মুগ্ধতা আছে কিন্তু চাঁদ তো চায় না আর কারো মুগ্ধতার কারণ হতে।ভাবছে আরেকটা জব পেলে এটা ছেড়ে দিবে।

আবার পরক্ষণে নিজেই ভাবে কত পালিয়ে বেড়াবে এদের থেকে? সেও তো মানুষ।ক্লান্তি তো তারও আছে।রমনী ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবে।এ জীবনে তার ভাবনা আর ফুরালো না।রমনী ক্লান্ত হয়।বসে পড়ে ফুটপাতের কিনারায়। চেঁয়ে দেখে রঙিন মানুষ।হঠাৎ চোখ পরে রিক্সায় করে একজন কপোত-কপোতী হাতে হাত ধরে এই রাতের শহর ঘুরছে।চাঁদের মনে পরে অতীত। আবির একদিন খুব বায়না করছিলি চাঁদের সাথে রাতের শহর দেখবে।চাঁদের হাজারও বারণ শুনছিলো না।চাঁদের বাবার থেকে পার্মিশন নিয়ে বের হয়ে যায় অজানার উদ্দেশ্যে। সেবার চাঁদ একটা নীল শাড়ি পড়েছিলো,আর আবির পড়েছিলো হলুদ পাঞ্জাবি। একদম হিমু রূপা লাগছিলো।

চাঁদ আবার আনমনে হাসে। সে তখন কেনো বুঝলো না হিমু রূপা দের তো এক হওয়া বারণ।হিমু রূপা বলেছিলো নিজেদের সম্পর্ককে বিচ্ছেদ তো অনিবার্যই ছিলো।সেটা কিশোরী চাঁদ বুঝে নি।

রমনীর অতীত মনে পড়ে দাগ কাটে হৃদয়ে। কাঁদতে ইচ্ছে হয় খুব কিন্তু চোখে জল আসে না।তার কান্নার ইতি সে খুলনা শহরেই টেনে এসেছিলো। এ শহর তাকে শক্ত করেছে।এ শহরে একফোঁটা চোখের জল সে ফেলবে না।

পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে রমনী।এর মাঝেই মোবাইল নামক যন্ত্রটা উচ্চস্বরে বেজে উঠে।রমনীর নিরবতায় বাঁধা দেয়।পরম অবহেলায় কলটা রিসিভ করে।পুষ্পের কল।তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার তাগিদ দিচ্ছে।রাত হয়েছে অনেক খেয়াল করে নি সে।পুষ্প টা কেমন মা মা শাসন আদর করে।বান্ধবী ও বুঝি এত আপন হয়? কেমন রাতে না খেলে বকা দেয়।মাথার চুল গুলো যখন অবহেলায় পরে থাকে তখন কি সুন্দর করে তেল দিয়ে দেয়।মাঝে মাঝে মেখে খাইয়ে দেয়। মায়ের অভাব টা পূরণ করে দিয়েছে সে।

“মা” কি জঘন্য অতীত দিলো চাঁদকে তা ভেবে আরেকদফা দীর্ঘশ্বাস নেয় রমনী।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে।মানুষের কত ব্যস্ততা।শুধু ব্যস্ততা নেই চাঁদের।এ জীবন তাকে ঠান্ডা করে দিয়েছে।

খুব করে মনে পড়ছে চঞ্চল চাঁদকে।কতটা দুষ্টুমি করতো মেয়েটা। সারা বাড়ি মাথায় করে রাখতো।মা তখন কত ভালো ছিলো। বাবা তাকে আদর করতো।

বাবা” কত দিন হলো বাবাকে দেখা হয় না। সত্যিই দেখা হয় না? সে তো প্রতি মাসে সবার অগোচরে গিয়ে বাবাকে দেখে আসে।একথা কেউ জানেনা কিছু কথা না হয় আড়ালে থাকুক।

চাঁদ দেখছে একটা ছোট্ট মেয়ে আইসক্রিম খেয়ে মুখ ভরিয়ে ফেলেছে।একটা লোক পরম মমতায় মেয়েটার মুখ মুছিয়ে দিয়েছে।হয়তো লোকটা বাবা হয়।বাবারা তো এমনই হয়।

আজ বড্ড বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে চাঁদের।সে ফুটপাত থেকে উঠে দাঁড়ায়। আবার হাঁটা ধরে। মানবী জানেনা তার পিছেই এক তেজ নামক মানব হেঁটে আসছে।সবটাই দেখেছে তেজ তবে আড়ালে।সামনে আসে নি।মেয়েটাকে একটু একা থাকতে দিলো।

চাঁদ হাঁটছে নিরুদ্দেশ। হাঁটতে হাঁটতে একটা নিবিড় রাস্তার মাঝামাঝি চলে এসেছে।কেউ নেই এখানে।একদম চাঁদের মতন নিশ্চুপ রাস্তাটা। চাঁদ দুহাত মেলে দাঁড়ায় আশপাশ তাকায় চিৎকার দিয়ে বলে,
–“হে আল্লাহ আজ কত বছর পর তোমার বান্দার মৃত্যুর ক্ষুধা জেগেছে তুমি নিবে না আমায়।আর যে সয় না খোঁদা।”

তেজের পিলে চমকে উঠে ছুটে যায় চাঁদের দিকে।মেয়েটা কি পাগল হলো।রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে কি প্রলাপ বকছে আর হাসছে।

চাঁদ চোখ বন্ধ করে মুক্ত বাতাস টেনে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে আর সুযোগ পাবে না।সাথে মিষ্টি করে হাসি ফুটে উঠছে মুখে।সে জানে তার আল্লাহু তাকে এত তাড়াতাড়ি নিবে না।সে রাস্তার মাঝ থেকে সড়ে ফুটপাতের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ততক্ষনে তেজ চাঁদের বেশ কাছাকাছি এসেছে।মেয়েটা রাস্তা থেকে সরেছে বলে কলিজায় প্রাণ ফিরে পেলো।হাঁটার গতি ধীর করলো।

কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।আজ চাঁদের আল্লাহ তার ডাক শুনেছে।এক বিশাল ট্রাক ফুটপাতের সাথে থাকা চাঁদকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলে।তেজ এই বলে চিৎকার দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে রইল।

মাতাল চালক ট্রাক নিয়ে পালালো।তেজ ছুটে রক্তাক্ত চাঁদের মাথাটা কোলে নিলো। আশ্চার্য মেয়েটা এখনো হাসছে।চাঁদ অনেক কষ্টে উচ্চারণ করলো
–“এতক্ষণ ফলো করে শেষ মেষ সামনে এলেন।আচ্ছা প্রেমিকার মৃত্যুর চেয়ে কঠিন কিছু নাকি একজন প্রেমিকের কাছে কিছু হতে পারে না।আপনার এখন কেমন লাগছে? আজ আল্লাহ বুজি বড্ড বুজেছে আমায় তাই ডাক শুনেছে।তবে,

“হে প্রেমিক লাল টুকটুকে বউ হোক তোমার,
বিদায় নিলাম আমি,হয়তো সুখ ভাগ্যে ছিলো না আমার।।”

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here