#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),১২,১৩
#মম_সাহা
পর্বঃ১২
“এই চাঁদ, চাঁদ ও জান চোখ বন্ধ করবে না।এই যে আমি, আমি তোমাকে বাঁচাবো।এত সোজা নাকি আমাকে ছেড়ে যাওয়া?আমি স্বপ্ন দেখেছি না তোমাকে ঘরণী বানানোর? পূরণ করবো আমি সেই স্বপ্ন। এত সোজা তেজকে ছেড়ে যাওয়া? ও জান তাকাও।”
রাস্তায় রক্তাক্ত প্রেমিকাকে নিয়ে বসে এক প্রেমিকের আত্ম চিৎকার। রাস্তায় কোনো জন মানব নেই।তেজ নিজেকে বড় নিরুপায় মনে করছে।তখনো চাঁদের জ্ঞান আছে।চাঁদ তাকিয়ে দেখছে এক নিরুপায় প্রেমিকের হাহাকার।
তেজের আশার আলো ফুটিয়ে এক সিএনজি সেইপথ দিয়ে যাওয়ার সময় থামে।তেজের আশার আলো দেখায়।
_________________
একটি নতুন প্রাণ সদ্য পৃথিবীতে এসেই কান্না শুরু করছে,আর একটা প্রাণ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে তাই তার প্রিয় মানুষেরা কান্না করছে।আর এই দুইকান্নার ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে জায়গা সেটা হলো হসপিটাল।
সেই হসপিটাল নামক ভয়ংকর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তেজ। শুধু তেজ না।পুষ্প, নীল,হৃদি,আর তেজের পুরো পরিবার।
তেজের মা তো কখন থেকেই কেঁদে যাচ্ছে।সাথে নাবিলা খানমও।মেয়েটাকে যে তারা বড্ড ভালোবাসতো।
তুহার মা তো রীতিমতো আহাজারি শুরু করেছে।সে সমস্ত টা নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে।তার জন্যই নাকি চাঁদের এ অবস্থা।
পুষ্প ও কেঁদে যাচ্ছে একধারে।আর তেজ নিশ্চুপ।আব্রাহাম তেজকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।
হৃদি কতক্ষণ তার পরিবারের কান্ড দেখে হঠাৎই আক্রোশে ফেটে পড়ে। চিল্লিয়ে পরিবারের উদ্দেশ্যে বলে,
–“এখন এখানে মায়া কান্না করছো কেনো?খুব তো সেদিন মেয়েটাকে কালসাপ বলেছিলে।এবার খুশি?মেয়েটা মরতে বসেছে এখন নাটক দেখাতে আসছো? আর তুই দাভাই,,তুই ও তো মেয়েটাকে কম অপমান করলি না এখন দেবদাস রূপ ধারণ করে কি বুঝাতে চাচ্ছিস তোরা অনেক মহান? আসলে আমার লজ্জা লাগছে তোদের কান্ড দেখে।ছিঃ
আব্রাহাম বেশ তেঁতে উঠলো।শক্ত স্বরে হৃদিকে বলল,
–“বাহ্ রে হৃদি তুই তো দেখছি খুব সুবিধাবাদী। কিসের ছিঃ বলছিস হ্যাঁ? কিসের লজ্জার কথা বলছিস?এই পরিবার চাঁদকে যেমন কালসাপ বলেছে তেমন ভালোও বেসেছিলো।
আচ্ছা বলতো কোন মানুষ একটা অপরিচিত, অজানা নামধাম হীন মেয়ে কে ঠাঁই দিবে? কেউ না।কিন্তু এ পরিবার ঠাঁই দিয়েছিলো।কোনো স্বার্থ ছাড়াই ঠাঁই দিয়েছিলো।
শুধু ঠাঁই না চাঁদকন্যাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসাও দিয়েছিল। কোন কারণ ছাড়াই ঐ মেয়েটাকে ভালোবেসে ছিলো।আজ একটা কারণের উপর ভিত্তি করে মানুষ গুলোকে খারাপ করে দিলি কিন্তু ভালো কারণ গুলোও তো ছিলো হৃদি।
চাঁদ দেঁড়ি করে আসলে সবাই বসে থাকতাম একসাথে ডিনার করবো বলে এটার মাঝে নিশ্চয়ই স্বার্থ ছিলো না?তবে এটাও ভুলে গেলি কেন?চাঁদ তো আমাদের রক্তের কেউ ছিলো না।কিন্তু তবুও ও আমাদের অনেক আপন ছিলো।
তোর মাকে তো তুই ভালো করেই চিনিস।যে মানুষটা কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলে না সে মানুষটা রিয়ার বাবার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেছে এমনকি বাড়ি থেকেও চলে যেতে বলেছিল চাঁদের কারণে।কই হৃদি সেটা তো দেখলি না।
আর ছোট মামি মানে তোর চাচীম্মা।যাকে ছোট বড় অনেক কথা বললি। বলার কারণ আছে।সে চাঁদকে সবার সামনে চড় দিয়েছে অপমান করেছে।হ্যাঁ সে অন্যায় করেছে।এমনকি সে তৎক্ষনাৎ অন্যায়ের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে।তুই একবার ভাব সব কিছুর উর্ধ্বে সে একজন মা।মা কখনো নিজের সন্তানের ক্ষতি হোক নিজ চোখে দেখতে পারবে না।তখন সে সঠিক কারণ না জেনেই ভয়ে চাঁদকে মেরে ফেলেছে সেটা অন্যায় মানলাম।কিন্তু এই মানুষটাই যখন চাঁদ খাবে না বলে বায়না ধরতো তখন ঐ চড় মারা হাতটা দিয়ে খাইয়ে দিতো।চাঁদের আচার পছন্দ বলে ঐ চড় মারা হাতটা দিয়ে আচার বানাতো।সেটাতে কি কোনো স্বার্থ ছিলো হৃদি?
সবার কথা বাদই দিলাম। এই তেজ, যাকে তুই সকল দোষের দোষী ভাবছিস জানিস এই তেজই চাঁদকে একবছর আটমাস মানে একদম শুরু থেকে পাগলের মতন ভালোবেসে আসছে।”
উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হলো আব্রাহামের মা আর তেজের মা জনতো তেজ যে ভালোবাসে কিন্তু একবারে শুরু থেকেই যে ভালোবাসে সেটা জানতো না।পুষ্প,নীল, হৃদিও বেশ ধাক্কা খেলো সাথে তুহার মাও।
হৃদি বেশ অবাক হয়ে বলল,
–“কি?দাভাই চাঁদুজানকে ভালোবাসে! ইম্পসিবল। ”
আব্রাহাম একটা তাচ্ছিল্য হাসি দেয় আর বলে,
–“কেনো? ইম্পসিবল কেনো?তেজের শক্ত খোলশ টা দেখে?
জানিস তোর বাবাকে মানে বড় মামুকে কে বলেছিলো চাঁদকে সন্ধি ভিলায় রাখতে?এই তেজ বলেছিলো।হ্যাঁ এই তেজ বলেছিলো।শুধু এটাই না আরো এমন হাজারো ঘটনা আছে।”
তেজ এবার মুখ খুললো। বিরক্তের সুরে বলল,
–“আহা আব্রাহাম থাম।এখন এসব বলার সময় না।”
“কেনো থামবে আব্রাহাম?এখনই এসব বলার সময়।আজ তোর ভালোবাসার দিকে আঙ্গুল তুলছে আর তুই বলছিস থামার কথা। হাউ ফানি তেজ।”
একটা মেয়েলি কন্ঠে সবাই ফিরে তাকালো।কন্ঠটার মালকিন হলো রিয়া।সবাই আরেক দফা অবাক হয়।
রিয়া তার হাই হিলে খুটখাট শব্দ করে ওদের দিকে এগিয়ে আসে।হৃদি ভ্রু কুঁচকে রিয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে বলল,
–“রিয়া আপু তুমি এখানে?”
রিয়া মুচকি হাসি দেয়।তেজের দিকে তাকায়। তেজের চোখেও বিষ্ময়।রিয়া হাসে,বলে,
–“অবাক হওয়ার কিছু নেই,তোমরা বোধহয় ভুলে গেছো আমি ডাক্তার আর এটা আমারই হসপিটাল।”
এবার সবার বোধগম্য হয় ব্যাপার টা।রিয়া বুকের মাঝে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ায় তারপর বলে,
–“ও হে তেজের সম্পর্কে কথা হচ্ছিলো।তেজ থামতে বলেছিলো।তো তেজ থামবে কোনো?সবাইকে জানা তোর ভালোবাসার কথা।কত পাগালামি করেছিস।
আমি বলি তোমরা শুনো।
তখন চাঁদ তোমাদের বাড়িতে সবে নতুন এসেছে। আমরা সবাই তোমাদের বাড়িতে গেইট টুগেদার করলাম না? সেদিন আমাদেরই এক ফ্রেন্ড চাঁদকে দেখে ফেলে তার ভালো লাগে।সেটা তেজকে জানানোর পর তেজ যে রুড ব্যবহার করলো।সেদিনই আমার ঘটকা লাগে।
তারপর আরেকবার হৃদির বার্থডে সেলিব্রেশনে এসেছিলাম। চাঁদের মুডি ভাবটা আমার বেশ রাগাতো।সো সেই রাগ থেকে সেদিন আমি চাঁদকে আশ্রিতা বলে ছিলাম। আব্রাহাম সবার সামনে প্রতিবাদ করেছিলো। তেজ চুপ করে ছিলো।
কিন্তু তারপর আমাকে বাড়ি দিতে যাওয়ায় নাম করে বাইরে এনে ঠাস করে এক চড় লাগিয়ে দিলো।আর সরাসরি আমাকে সন্ধি ভিলায় আসতে না করে দিলো।
এত টুকু করে ক্ষান্ত হয় নি সে।আমার সামনেই তোমাদের বাড়ির দারোয়ানকে বললো আমাকে জেনো তোমাদের বাড়িতে তেজের পার্মিশন ছাড়া ঢুকতে না দেয়।চরম অপমান আর চাঁদের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম আমি।তারপর থেকে আলাদা রাগ জন্ম নেয় চাঁদের প্রতি।
এরপর থেকে ঘনঘন তোমাদের বাড়ি যেতে পারতাম না।আর যতবারই চাঁদকে কিছু বলতাম ততবারই তোমাদের সামনে না হোক পেছনে একটা করে চড় খেতাম এতে আমার রাগ আরো বাড়তো।
আর বরাবরই সবাই জানো চাঁদ অনেক প্রতিবাদী।কখনো মনে হয় নি এমন প্রতিবাদী একটা মেয়ে স্বাভাবিক ভাবে টিকতে পারে কিভাবে?তার শত্রুর তো অভাব নেই।
কিন্তু এই তেজ চাঁদের অগোচরেই সব শত্রুকে ধ্বংস করেছে।
সব আপনাদের অগোচরেই হয়েছে বলে এই ছেলেটার ভালোবাসার মূল্য নেই।ছেলেটা খারাপ।হায়রে মানুষ।”
সবাই নিস্তব্ধ।তেজের এত লুকায়িত সত্যি হজম করতে কষ্ট হচ্ছে সবার।এর মাঝেই নীল তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
–“ওহ্ আচ্ছা।তো এত যখন ভালোবাসা ছিলো তো এত অপমান কেনো করতো চাঁদকে?”
আব্রাহাম হাসে।বলে,
–“হায়রে মানুষ,রঙিন ফানুস।আসলে তেজ বরাবরই চাইতো চাঁদ সব কিছুর মাঝখান থেকে বের হোক। তেজের সাথে মিশুক। কিন্তু বরাবরই চাঁদ পাত্তা দিতো না বলে ইগোস্টিক তেজের অভিমান হতো।তাই কথা শুনাতো।কিন্তু এই ছেলেটার ভালোবাসার কমতি ছিলো না।”
উপস্থিত সবাই অবাক।প্রেমিকের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ ও।পুষ্প প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলো।এবার মেয়েটার জীবনের শূণ্য স্থান পূর্ণ হবে ঠিক মানুষ দিয়ে।
এর মাঝেই ডাক্তার বের হলো।রিয়া এগিয়ে গেলো ডাক্তারের কাছে পিছে সবাই গেলো।রিয়া ডাক্তারকে চাঁদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার বলল,
–“আপনাদের রোগী মাথায় আঘাত পেয়েছে অনেক।সে,,,
চলবে
#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা
পর্বঃ১৩
“আসলে আপনাদের রোগী মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছ,সে প্রথমে কোনো রেসপন্স করছিলো না।কিন্তু এখন যথেষ্ট ঠিক আছে।তবে রিকোভার করতে সময় লাগবে।আর আপনারা ওনাকে কেবিনে সিফ্ট করানোর পর দেখতে পারবেন। ”
ডাক্তারের কথায় প্রাণ ফিরে পেলো সবাই।ডাক্তার জায়গা থেকে প্রস্থান নিলেই প্রেমিকের চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু ঝড়ে পরলো।এটা সুখের অশ্রু। তার প্রাণপ্রদীপ আবার জ্বলে উঠেছে সেই সুখে জল গড়িয়ে পড়লো।
প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের চোখ জল ঝড়া এক অসম্ভব সুন্দর বিষয়। সচারাচর ঘটে না।আর যদি ঘটে থাকে তবে সে প্রেমিকা খুবই ভাগ্যবতী।
সবাই খুশির হাসি দিয়ে উচ্চস্বরে “আলহামদুলিল্লাহ” উচ্চারণ করলো।
রিয়া ডাক্তারদের সাথে গেলো চাঁদের সব ডিটেইলস জানতে।
হৃদি নিজের ভুল বুজতে পেরে খুবই গিল্টি ফিল করছে।সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় নিজের ভাইয়ের দিকে।তেজ অন্য ভাবনায় ডুবে ছিলো।নিজের হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো।তেজকে ফিরে তাকাতে দেখেই হৃদি ঠোঁট ভেঙ্গে তেজকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
উপস্থিত সবাই বুঝতে পেরেছে হৃদি অনুশোচনায় কাঁদছে।হৃদির মন ছেলে মানুষী মন।এজন্যই এত বড় মেয়ে হয়েও ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।
তেজ পরম মমতায় বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।হেসে বলল,
–“বোকা মেয়ে, কাঁদছিস কেনো?পাগলি মেয়ে।”
হৃদি জড়িয়ে ধরেই নাক টেনে বলল,
–“আম স্যরি দাভাই।তুই তো আমার ভালো দাভাই।আমার তো বোঝা উচিত ছিলো তোকে কিন্তু দেখ আমি কেমন ভুল বুঝলাম।আসলে এই চাঁদুজানকে আমি এত ভালোবাসি যে ওরে নিয়ে কিছু বললে আমার রাগ উঠে যায়। আমি সরি দাভাই।”
তেজ হোহো করে হেসে বলল,
–“হয়েছে হয়েছে বুজেছি।এবার ছাড় আমার শার্ট নাকের জলে ভিজিয়ে দিলি। খাচ্চোর মেয়ে।”
হৃদি ছেড়ে দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে হেসে দিলো। সাথে সবাই হেসে দিলো।একমাত্র আব্রাহামই যত্তসব ঢং বলে হসপিটালের বারান্দায় চলে গেলো।
সবাই খেয়াল না করলেও হৃদি খেয়াল করেছে বিষয়টা। সবার আড়ালে সেও বারান্দায় গেলো।
আব্রাহাম পিছ ঘুরে বহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদি আব্রাহামের কাঁধে হাত রেখে মিনমিনে সুরে বলল,
“সরি”
আব্রাহাম ঝাড়া দিয়ে হাতটা ফেলে দিলো।আরো দ্বিগুণ রেগে তেড়ে এসে বলল,
–“সরি?কিসের সরি?তোমার সরি এর গুষ্টির ষষ্ঠী। যাও এখান থেকে। একদম ন্যাকামো দেখাতে আসবে না।এখন এসে সে সরি বলছে।আমি যখন বাড়ি ছাড়ার সময় বললাম ছাড়তে না শুনেছিলে আমার কথা? এখন সরি বলতে আসছো।”
হৃদি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
–“চড়ও তো মেরেছিলে কথা শুনি নি বলে।সে বেলা।আমরা রাগ হয় না বুঝি?”
আব্রাহাম এবার নরম হলো।আস্তে হৃদির দিকে এগিয়ে আসলো।আলতো করে হৃদির গালে হাত বুলিয়ে দিলো।আর বলল,
–“এমনই মার খেতে হবে আমার কথা না শুনলে।পাকামি করে সে বাড়ি ছেড়ে দিলো।আমি বলেছিলাম একটু ধৈর্য ধরতে। কে শুনে কার কথা। তখন আমার সাথে চিৎকার দিয়ে কথা বলাতেই চড়টা মেরেছি।আর ভালো কথা মনে করেছো তোমার সাহস অতিরিক্ত বেড়েছে।কোন সাহসে অত ভোরে একা বের হয়েছিলে হুম? দেই আরেকটা চড়?”
–“হ্যাঁ হ্যাঁ খালি চড়ই মেরে যাও।কোন কুলক্ষণে যে তোমায় ভালোবাসতে গেলাম।এবার সারাজীবন চড় খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করবো।”
আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে রাগী স্বরে বলল,
–“হোয়াট? হোয়াইট ডু ইউ মিন?একটা থাপ্পর খেয়ে ভালো লাগে নি আরো খাওয়ার ইচ্ছে জাগছে?এ জীবনে এই আব্রাহাম তোমাকে ছাড়ছে না।”
হৃদি মুখ ভেংচি দেয়।মিনমিন করে বলে
–“আমিও তো চাই ধরে রাখো।”
আব্রাহাম দুষ্টমির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
–“ধরে রাখবো?সিউর তুমি?ধরতে গেলেই তো বলো এই কেউ দেখে ফেলবে,এসে যাবে কেউ আরো যেনতেন। ”
হৃদি দুকদম পিছিয়ে গিয়ে নাক ছিটকে বলল,”অসভ্য মানুষ একটা।
আব্রাহাম হোহো করে হেসে উঠলো।
হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। হৃদি আর আব্রাহাম একে অপরকে ভালোবাসে। আজ চার বছর যাবত সে ভালোবাসা দুজন দুজনের কাছে ব্যাক্ত করেছে।অবশ্য আর কেউ জানেনা এ ব্যাপার।
________
চাঁদের জ্ঞান ফিরেছে ঘন্টা খানেক হবে।একে একে সবাই দেখা করেছে।চাঁদ সবার সাথেই স্বাভাবিক কথা বলেছে।
চাঁদ শুয়ে আছে বেডে।আর ভাবছে উপরওয়ালা তাকে নিবে বলেও নিলো না।তবে তার কানে তেজের সেই কথা গুলো বাজছে।মানুষটা তখন কি পাগলের প্রলাপই না বকলো।সত্যিই এতটা ভালোবাসে তাকে?তার ভাগ্যে আবারও ভালোবাসার সুখ সইবে তো?কই ঘন্টা খানেক হলো জ্ঞান ফিরেছে মানুষটার তো দেখা নাই। এই নমুনা ভালোবাসার।চাঁদ আজ তাচ্ছিল্য করে না তেজের ভালোবাসার। কারণ সে দেখেছে ঐ চোখে ভালোবাসা।
এতক্ষণ তেজ কেবিনের বাহিরেই ছিলো। ভিতরে আসার সাহস পাচ্ছিলো না।চাঁদ তাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করে সেই ভেবে।তবে সবার জোরাজুরিতে অবশেষে ভিতরে ঢুকলো সে।
চাঁদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো।পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে চোখ খুলে তাকালো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তেজ তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখাচোখি হওয়াতে চাঁদ চোখ নামিয়ে নিলো।
তেজ চাঁদকে সজাগ দেখে একটু বিব্রত হলো। তবে প্রকাশ করলো না।মুখে একটু রাগী ভাব ফুটিয়ে বলল,
–“আরও যাও খালি রাস্তার মাঝখানে। বেশি বেশি পেয়েছো তো তাই ভালো লাগছে না।সবাইকে কষ্ট দিতে মন চায় এজন্য না?”
চাঁদ ছোট ছোট চোখ করে নাক ফুলিয়ে বলে,
–“ইশ শাসন করতে এসেছে।কে আপনি যদি হ্যাঁ শাসন করার? একবারে না সুস্থ হই খবর আছে। আপনাকে কি আমি ভয় পাই নাকি হুম।”
তেজ মেয়েটার কান্ড দেখে মনে মনে হেসে দেয়। কিন্তু মুখে কাঠিন্য ভাব বজায় রেখে বলে,,
–“ভুল করলে আমি শাসন করবোই।তাতে কোনো সম্পর্কে থাকার প্রয়োজন নেই আমার।আর তুমি জানোনা আত্মহত্যা মহাপাপ? তবে কেনো এমন করতে গেলে?”
এতক্ষণে চাঁদের কণ্ঠ নিভে আসলো।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
–“বিশ্বাস করুন আমি নিজের মৃত্যু কামনা করেছি তখন ঠিকই কিন্তু আত্মহত্যা করতে যাই নি।আমি জানতাম নির্জন রাস্তা আপনি আর আমি ছাড়া কিছু নেই তাই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে তো সাইডে এসে পড়েছিলাম।কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।”
তেজ আর ঘাটালো না মেয়েটাকে চুপ করে বসে রইল।প্রচন্ড নিরবতা গ্রাস করলো কেবিনটাতে।তবে খারাপ লাগছে না আজ চাঁদের তেজের উপস্থিতি। কিছুক্ষণ এমন চুপ থাকার পর তেজের হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই তেজ বলে উঠল,
–“আচ্ছা চাঁদ তুমি কীভাবে জানলে আমি সেখানে ছিলাম?আমি তো আড়ালে ছিলাম।তবুও বুঝলে কি করে?”
চাঁদ হেসে দেয়।মুখে হাসি রেখেই বলে,
–“যতই আমি টম বয় হই জাতটা তো নারী জাত।আর নারী জাতের আলাদা একটা ক্ষমতা আছে।তাদের কখন, কোথায়, কে, কেমন ভাবে লক্ষ করছে সেটা সে বুঝতে পারে।এই ক্ষমতাটা সৃষ্টি কর্তা বিশেষ ভাবে তাদের দিয়েছে।কিন্তু এত কিছু বুজতে পারা নারীও বেইমানদের চিনতে পারে না।”
শেষের কথাটা বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ। তেজ কিছু বলে না।সে জানে সামনের রমনী ভগ্ন হৃদয়ের অধিকারীনি।তাকে এগুলো নিয়ে ঘাটানো মানে ভাঙা হৃদয় টাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করা।আর যতই হোক কোনো প্রেমিকই তার প্রেমিকার মুখে অন্য কোনো পুরুষের নাম শুনতে পছন্দ করে না।সেটা যেই পুরুষই হোক না কেনো।
আবার দুজন চুপ।চাঁদ উপরে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“আমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকেই খেয়াল করেছি কেউ আমার পিছু নিচ্ছে।কিন্তু ধরতে পারছি না ব্যাক্তিকে।তাই তো ফুটপাতে বসে পড়লাম।তার একটু পড়ই খেয়াল করলাম আপনি আড়ালে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার বুঝতে আর বাকি রইল না কিছু। ”
তেজ হাসে।তার রমনী বড্ড চালাক মানবী।তেজ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় চাঁদের দিকে। প্রশ্ন করে আকুতি মাখা,
–“চাঁদ একবার কি সুযোগ দেওয়া যায় না আমায়।”
চাঁদ নিরব রয় কিছুক্ষণ। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়,
–“যে একবার ফুল ধরতে গিয়ে কাটার আঘাত পায় তার ফুলের প্রতিই একটা ভয় ঢুকে যায়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দোষ ফুলের না।তেমনই একবার আমি সুযোগ দিয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছি।আর সহ্য করার সাধ্য আমার নেই।আর আমি চাই না আমার অভিশপ্ত জীবনে কাউকে জড়াতে।”
তেজ উত্তর দেয় না।নিরব রয়।সে জানে তার রমনীকে মানানো এত সোজা নয়।সে বিতর্ক করে না চুপ রয়।বেশ ক্ষানিকখন বসে থাকার পর।উঠে পরে কেবিন থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে আর যেতে যেতে বলে,,
–“প্রেমিকা তোমায় ফুলের স্বাদ তো পেতেই হবে।সামান্য কাটার জন্য ফুলের স্বাদ নিবে না সেটা তো এই অধম প্রমিক মানবে না।দরকার হয় সে কাটাকে উপরে ফেলে ফুলের সান্নিধ্যে তোমাকে পৌছাবে এই প্রেমিক।”
________
পেরিয়ে যায় সপ্তাহখানেক। চাঁদ নিজেদের ফ্লাটেই উঠে।সেখানেই নাবিলা খানম আর জাহানারা খানম এসে জুড়ে বসে।সন্ধি ভিলার প্রত্যেক টা মানুষ বিকেল নামলেই চাঁদের কাছে ছুটে আসে আড্ডা দেয়।চাঁদকে ও বাড়িতে ফিরে যাবার প্রস্তাব দিলে সে নাকোচ করে।কেউ আর জোড় করে না।তেজের মা, ফুপি রয়ে যায় চাঁদের যত্নে।আর তেজের কথা তো বাদই দিলাম। সব থেকে যত্ন ও বেশি করেছে।চাঁদ কৃতজ্ঞ।
পুষ্প আর নীলেরও শান্তি লাগে।এবার মেয়েটা যদি সুখ পায়।
__________
একদিন বিকেলে তেজ তখন অফিসে।পুষ্প কল দেয় তেজকে।তেজ পুষ্পের কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারে না।ছুটে যায় চাঁদের কাছে।ভয় হওয়া শুরু করে তেজের।কারণ চাঁদের,,,
চলবে,,,