সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),১৮,১৯ শেষ

0
1268

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২),১৮,১৯ শেষ
#মম_সাহা
পর্বঃ১৮

জাহানারা বেগমের না শব্দটা শুনে থমকে যায় সবাই।তেজ এগিয়ে এসে তার মাকে অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল
-“মা তুমি তো চাঁদকে বেশ পছন্দ করো তবে না কেনো বলছো?”

চাঁদ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে
-“মাম আমাকে সত্যিই তুমি তোমার বাড়ির বউ বানাবে না?”

জাহানারা বেগম এবারও কঠিন স্বরে বলল
-” না তুই আমার বাড়ির বউ হয়ে যাবি না।কারণ তুই আমার মেয়ে হয়ে যাবি।”

চাঁদ হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো জাহানারা বেগমকে।আব্রাহাম তেজের সাথে ঠাট্টা শুরু করে দিলো।তেজের বাবা দ্রুতই বিয়ের আয়োজন করতে বলেছে।সবাই তো বেশ খুশি।

ঝিলের কাছ থেকে হেঁটে সবাই রাস্তার দিকে যাচ্ছে।গাড়ি রাস্তায় আছে।সবাই আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে হৃদি একটু পিছে কার সাথে জেনো ফোনো কথা বলছে।আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে হৃদির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

-“এত রাতে কে ফোন করেছে তোমায়?”

আব্রাহামের গুরুগম্ভীর কন্ঠে ফিরে তাকায় হৃদি।মোবাইলের বিপরীতে থাকা ব্যাক্তিটাকে পরে ফোন করবো বলে কলটা কেটে দেয়।

আব্রাহাম আবারও বেশ রাগী স্বরে জিজ্ঞেস করল
-“কে কল দিয়েছে হৃদি সেটা জানতে চেয়েছি কিন্তু।”

হৃদি প্রথমে বলতে গিয়েও তখন আব্রাহামের ফাইজলামির কথা মনে করে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
-“যে ই কল দেক তাতে তোমার কি ভাইয়া?”

আব্রাহাম তেঁতে গেলো।হৃদির হাতটা শক্ত করে ধরে বেশ ধমক দিয়ে বলল
-“এই আমি তোর কোন জন্মের ভাই লাগি? আর যে ই কল দেক তাতে আমার কি তাই না?দেখ আমার কী।”

এই বলে ঠাস করে হৃদির হাতের মোবাইলটা টান দিয়ে আছার মারে।বিকট শব্দে সবাই পিছ ফিরে তাকায়। হৃদি তো নির্বাক, স্তব্ধ। সে তো সামান্য মজা করছিলো।কিন্তু আব্রাহাম এতটা রুড বিহেব করবে ভাবতেও পারে নি।

তুহা এগিয়ে আসলো।হৃদিকে জিজ্ঞেস করে বলল
-“কিরে তোর ফোনটা ফেললি কীভাবে?একবারে ভেঙেই গেলো।”

হৃদি টলমলে চোখে নিজের ভাঙা ফোনটার দিকে চাইল।মুখ থেকে একটা শব্দও উচ্চারণ করলো না।

তেজ এগিয়ে এসে আব্রাহামকে বলল,
-“কিরে ওর ফোনটা পরলো কীভাবে? ”

আব্রাহাম অবস্থা বেগতিক দেখে কথা ঘুরিয়ে হাসি দিয়ে বলল
-“আরে আমি ফোনটা দেখার জন্য চাইছিলাম।ও দেই নি তা নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে হাত ফসকে পড়ে গেলো।”

তেজ হৃদির পাশে দাঁড়িয়ে হাত বুলিয়ে বলল
-“মন খারাপ করিস না আব্রাহাম ভুলে করে ফেলেছে এমন।আমি তোকে কাল নিয়ে গিয়ে আরেকটা ফোন কিনে দিবো কেমন?”

-“এ ফোনটা আমার কত প্রিয় ছিলো সেটা তো তুমি জানো ভাইয়া? আই হেইট ইউ আব্রাহাম ভাইয়া। আই জাস্ট হেইট ইউ।আপনি কাজটা ভালো করলেন না।”

হৃদি ছুটে চলে গেলো।সবাই পিছে পিছে গেলো।সবাই ভাবছে ফোন ভেঙে যাওয়ায় হৃদি কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু না হৃদি আব্রাহামের ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে।

হৃদির বলা শেষ কথাটা আব্রাহামের বেশ গভীরে লেগেছে তবে সবার সামনে নিজেকে সামলে নিয়েছে।সামান্য একটা ফোনের জন্য হৃদির বলা হেইট ইউ টা আব্রাহাম হজম করতে পারে নি।

__________
দেখতে দেখতে কেটে গেছে সপ্তাহ খানিক।আজ মঙ্গলবার। এই শুক্রবারে চাঁদ আর তেজের বিয়ে। আর এ কয়দিন হৃদি একটা কথাও বলে নি আব্রাহামের সাথে না আব্রাহাম কথা বলার চেষ্টা করেছে।

ড্রয়িং রুম জুড়ে সবাই বসে আছে।বিয়েটা তেজেদের বাড়ি থেকেই হবে।সব এখানেই বসে আড্ডা দিচ্ছে।এর মাঝেই তেজ চাঁদকে ডাক দিলো

-“চাঁদ”।

চাঁদ কথা থামিয়ে তেজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
-“কি?”

-“আসলে আমি একটা কথা ভাবছিলাম।”

-“কী কথা বলুন।”

তেজ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলল

-“আমি চাচ্ছিলাম আমাদের বিয়েতে তোমার বাবা আর ভাইয়াকে আসতে বলব।দেখো তোমার বাবা কোনো দোষ করে নি।সে আসতেই পারে আর তোমার ভাইয়া যতটুকু দোষ করেছে তার শাস্তি পেয়েছে সে।তুমি কি বলো?”

চাঁদের হাসি খুশি মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।

তেজ চাঁদের হাসি উবে যেতে দেখে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বলল
-“আরে চাঁদ তুমি না চাইলে আমরা কিছুই করবো না।প্লিজ মন খারাপ করো না।”

চাঁদ কতক্ষণ চুপ থেকে বলল

-“না ঠিক আছে।আমারও মনে হয় ভাইয়াকে আসতে বলা উচিৎ। আপনি বলে দিয়েন।”

চাঁদ দ্রুত জায়গা ত্যাগ করে। তেজ সবার দিকে তাকায়। নাবিলা খানম তেজকে কড়া শাসনে বলল

-“দিলি তো মেয়েটার মনটা খারাপ করে।কেন বলতে গেলি ওদের কথা।”

পুষ্প নাবিলা বেগমের কথা কেড়ে নিয়ে বিষন্ন স্বরে বলল
-“ওদের আসার কথায় চাঁদ কষ্ট পায় নি।চাঁদ আঙ্কেলের কথা মনে করে কষ্ট পেয়েছে।”

তেজ ভ্রু কুঁচকে বলল
-“আঙ্কেল মানে চাঁদের বাবা? কেনো ওনি তো ভালো ছিলেন।ওনার কথা মনে করে কষ্ট পাবে কেনো?”

পুষ্প মাথা নিচু করে বলল

-“আঙ্কেল এই পৃথিবীতে নেই আজ একবছর হলো।”

উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলো।আসলে এই কথাটা তারা নিতে পারে নি।তেজ চিল্লিয়ে বলল
.-“হোয়াট? আমাদের বলল না কেউ।”

পুষ্প কেঁদে দেয়। বলে
-“একবছর আগে আঙ্কেল মারা যায়। সেদিন চাঁদ লুকিয়ে আঙ্কেলের কবরের সামনে গিয়ে সে কি যে কান্না।প্রতিমাসে একবার করে হলেও চাঁদ ওখানে যায়। ”

সবাই বিষ্ময়ে হতবাক।এ মেয়ে পুরোটাই রহস্যময়। তেজ উঠে গেলো চাঁদের কাছে।মেয়েটার মন ভালো করা উচিত ভেবে।

এদিকে হৃদিও উঠে নিজের রুমে চলে আসলো।তার আব্রাহামের সামনে থাকতে বেশ অস্বস্তি হয়।ঘরে এসে নিজের বারান্দায় গিয়ে বসে হৃদি। এই এক সপ্তাহ সে বেশ গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে।সে ভেবেছিলো আব্রাহাম তার কাছে পরে ক্ষমা চাইবে কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আব্রাহাম একটা কথাও তার সাথে বলে নি।প্রেমিকার নরম মনে অভিমানের দাগটা গাঢ়ো হলো।দিন যেতে যেতে অভিমান গুলো ভোঁতা রাগে পরিণত হলো।

এদিকে এক সপ্তাহ যাবত আব্রাহাম শান্তি পাচ্ছে না।ভাবলো সব মিটিয়ে নিবে।যেমন ভাবনা তেমন কাজ।সে হৃদিকে নিজের ঘরে আসতে দেখে পিছে পিছে সেও আসে।

-“আসতে পারি?”

নিজের বারান্দায় গম্ভীর পুরুষ নালী কণ্ঠ শুনে ফিরে তাকালো হৃদি।বারান্দায় অপ্রত্যাশিত ব্যাক্তি কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখে থমকে যায় সে।কারণ বারান্দায় দরজায় আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে।

হৃদিকে উত্তর দিতে না দেখে আব্রাহাম হৃদির পাশের সোফায় এসে বসলো।আব্রাহামকে নিজের পাশে বসতে দেখে হুঁশ আসলো হৃদির। তৎক্ষণাৎ সে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আব্রাহাম খপ করে হাতটা চেপে ধরে।

-“হৃদি আমি তোমার সাথে কথা বলার জন্য আসছি সেটা বোধহয় বুঝতেই পেরেছো।তাই এখানে বসো।”

হৃদি আব্রাহামের দিকে না তাকিয়েই বলল

-“আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই।”

আব্রাহাম গম্ভীর গলায় বিষ্ময় নিয়ে বলল
-“আপনি? কাকে আপনি করে বলছো? তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কি আপনি অব্ধি চলে গেছে?”

হৃদি দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিলো
-“হ্যাঁ।”

আব্রাহাম এবার উঠে দাঁড়িয়ে হৃদিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
-“কাম অন হৃদি সামান্য একটা লেইম টপিক নিয়ে এসব ভালো লাগছে না।”

হৃদি টলমলে দৃষ্টিতে চাইলো আব্রাহামের দিকে। চোখের কোনো জল নিয়ে বলল

-“এটা লেইম টপিক? সিরিয়াসলি?তবে লেইম টপিকই হবে কারণ এটা তো হৃদি হার্ট হেয়েছে।হৃদির সাথে জড়ানো বিষয় গুলো তো লেইম টপিকেই হবে।”

এবার হৃদির কথায় আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারলো সেদিন সে বেশিই করে ফেলেছে।আব্রাহাম হৃদির হাতটা ধরে বলল

-“সরি হৃদি তখন রাগ উঠে গিয়েছিল।”

হৃদি এবার রেগে হাতটা ঝাড়ি দিয়ে বলল

-“কিসের সরি? কি কারনে সরি? সরি তো আমার বলা উচিৎ কারণ আমি আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম।আমি সরি।”

হৃদি দুহাতে মুখ চেপে কেঁদে উঠে।আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে।হৃদি প্রথমে ছোটার জন্য চেষ্টা করলেও না পেরে চুপ হয়ে যায়। অবশেষে বরফ গললো।

___________

আজ তেজও চাঁদের বিয়ে। চাঁদের ভাই আহান এসেছে গত পরশু।সেদিন চাঁদ আহানকে ধরে কি কান্না করলো।দু ভাই বোনের ভাব হলো।আহান একাই থাকে একটা আলাদা ফ্লাটে।

সকাল থেকে বাড়ি গরম। মানুষে গমগম করছে।চাঁদ ঘুম থেকে উঠে সোফায় গিয়ে বসলো।আজ যে তার বিয়ে হুঁশ নেই।সবাই যার যার মতন ব্যস্ত।

তীব্র কলিং বেলের আওয়াজে চাঁদের বাকু ঘুমটুকু কেটে গেলো।দরজা খুলে সে অবাক।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ।

চাঁদকে দেখেই পুলিশ প্রশ্ন করলো
-“আপনিই কি চাঁদ?”

চাঁদ বেশ অবাক হলো নিজের নামটা পুলিশের মুখে শুনে।তবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।

ততক্ষণে ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত হয়ে গেছে পুলিশ দেখে।তেজ ঘুমে ছিলো।কে জানি পুলিশের কথা বলেছে তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমেছে।তার ভয় হচ্ছে অনর্থ কিছু না ঘটে যায়।

এদিকে পুলিশ চাঁদকে বলল

-“কংগ্রেস মিস চাঁদ।আপনার খুনিকে ধরা হয়েছে।”

উপস্থিত সবাই সহ চাঁদ ভ্রু কুঁচকে ফেলে।চাঁদ তরিঘরি করে বলে

-“অফিসার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমার খুনি মানে?”

ততক্ষণে তেজ উপস্থিত হয়ে যায়। সে চাঁদকে বলে

-“চাঁদ কিছু না।তুমি ঘরে যাও।অফিসার আপনি আমার রুমে চলুন।”

চাঁদ বুঝতে পারলো কিছুতো ঘাপলা আছে।সে উত্তর দিলো

-“না অফিসার যা বলার এখানেই বলুন।

-“চাঁদ দেখো,,, হাত দিয়ে মাঝ পথে তেজকে থামিয়ে দেয় চাঁদ।

অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল

-“অফিসার বলুন আমার খুনি মানে?”

অফিসার বলল

-“আজ থেকে প্রায় তিনমাস আগে যে আপনার রোড এক্সিডেন্ট হয়েছিলো সেটা আসলে পরিকল্পনা মাফিক করানো হয়েছিলো।মিস্টার তেজ থানায় কমপ্লেইন্ট করে।আমরা ইনভেস্টিগেশন করে আপনার খুনিকে ধরতে সক্ষম হয়েছি।”

চাঁদ অবাক দৃষ্টিতে তাকাল তেজের দিকে।তেজ মাথা নিচু করে আছে।চাঁদ জিজ্ঞেস করল

-“আমার খুনিটা কে ছিলো অফিসার?”

-“আপনার খুবই কাছের মানুষ।আপনা,,,,

চলবে,,

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা

অন্তিম পর্ব

চাঁদ বেশ উত্কণ্ঠিত হয়ে আছে তার কোন আপন মানুষ তাকে মারার চেষ্টা করেছে সেটা জানার আশায়।

চাঁদ আবারও অফিসারকে তাড়া দিয়ে বলল
-“আরে অফিসার বলুন তো কে করেছে এমন পরিকল্পনা?”

অফিসার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন
-“নিলীমা বেগম মানে আপনার মা।”

চাঁদের নিশ্বাসের গতি হঠাৎ থমকে যায়। আহান দুকদম এগিয়ে এসে বেশ জোড়ে বলল

-“হোয়াট? আমাদের মা এটা করেছে? মা এতটা নিচ নামতেই পারে না।আপনি ভুল করছেন অফিসার।”

তেজ কালই জেনেছিলো।কিন্তু কেনো চাঁদের মা এমন করেছে সেটা জানায় নি।তাই সেটা জানাতেই আজ অফিসার এসেছিলো।তেজ ভেবেছিলো চাঁদের আড়ালে সবটা সামলে নিবে।

তেজ বাদে উপস্থিত সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চাঁদ তো মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল।

অফিসার শান্ত স্বরে বললেন
-“আপনার মা ই একাজ করেছে।আপনাকে যে ট্রাক ড্রাইভার ধাক্কা মেরে চলে গিয়েছিলো আমরা তাকে ধরেছি তারপর ওর থেকেই সবটা জেনে আমরা আপনার মাকে আইনের আওতায় আনি।”

চাঁদ থমকে যায়। বিশ্বাস করতে পারে না।সে অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল

-“সত্যি আমার মা ই খুনটা করেছে?”

অফিসারের বেশ মায়া লাগল।সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে স্নেহ মাখা কন্ঠে বলল

-“হ্যাঁ তোমার মা ই এটা করেছে।শুধু তোমাকে না তোমার মা আরও তিনজনকে খুন করেছে।”

এবার জেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না চাঁদ।এবার তেজও অবাক হয়েছে।আরও তিনজনের খুনের ব্যাপারটা সে জানতো না।

তেজ দুকদম এগিয়ে গিয়ে বলল

-“স্যার আরও তিনজন কে?আমাকে তো বললেন না।”

অফিসার তেজের কাছে এসে বলল
-“আমরাও তখন জানতাম না যে নিলীমা বেগম আরও খুন করেছে।কাল ওনাকে ধরে নিয়ে আসার পর জিঙ্গাসাবাদ করার পর সবটা জানি।”

চাঁদ অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“বাকি তিনজন কে ছিলো অফিসার? আমাদের পরিচিত কেউ?”

অফিসার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।

চাঁদ বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“কারা সেই তিনজন?”

অফিসার গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“আপনার খালা আর ওনার অন্তঃস্বত্তা মেয়ে প্রহেলিকা।”

চাদঁ এবার আর নিতে পারলো না।দু’কদম পিছিয়ে গেলো।

আহান বিচলিত, বিষ্মিত কন্ঠ বলল

-“কিহ্ প্রহেলিকা আর খালামনিকে? ওরা তো মাস তিন আগে কোথায় জেনো চলে গেছিলো। আবিরসহ।”

অফিসার মৃদু হাসলেন এবং বললেন

-“ওনারা কোথাও যায় নি আপনার মা প্ল্যান করে শহরের বাহিরে একটা বাড়িতে নিয়ে ওদের মেরে পুঁতে রেখেছে।”

আঁতকে উঠল সবাই।আহান ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।আব্রহাম অফিসারের দিকে এগিয়ে এসে বলল

-“ওদের তিনজনকেই মেরে ফেলেছে?”

অফিসার বললেন

-“না শুধু প্রহেলিকা আর ওর মাকে মেরেছে।আর আবিরকে ইচ্ছে মতন মেরে ড্রাগস দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিলো।”

বিষয়টা কেউ ই মানতে পারছে না।হ্যাঁ প্রহেলিকা আবির ওরা বেইমানি করেছে ঠিক আছে তাই বলে ওদের এমন পরিণতি মানতে কষ্ট হচ্ছে।

আব্রাহাম অবাক স্বরে বলল
-“অফিসার আপনি যে তিনজন বললেন তবে?”

অফিসার শক্ত কন্ঠে বলল
-“হ্যাঁ তিনজনই।কারণ ওনি ওনার হাসবেন্ড মানে মিস চাঁদের বাবাকেও খুন করেছে।চাঁদের বাবা স্ট্রোক করে মারা যায় নি তাকে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে। কাল সবটা ওনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন।চাঁদের বাবাকে মেরে ফেলেছেন সব সম্পত্তি দখল করার জন্য কিন্তু পরে জানতে পারে সব সম্পত্তি চাঁদের নামে।

ততদিনে ওনি জেনেছিলেন চাঁদ মৃত।তাই চিন্তা শেষ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু দেড়বছর পর চাঁদকে দেখে তার ভয় হতে শুরু করল।সম্পত্তি হারানোর ভয়।তাই আবারও চাঁদকে মারার ব্যবস্থা করলেন।আর এ ঘটনা জেনে গিয়েছিলো প্রহেলিকা ও আবির।তাই তাদের সবাইকে মেরে ফেলেন।”

চাঁদ এত বড় ধাক্কা সহ্য করতে পারে নি।লুটে পড়ে মাটিতে।আহানেরও শরীরটা অবশ হয়ে আসে।সামান্য সম্পত্তির লোভে তাদের মা এমন করেছে সেটা জেনো মানতে পারছে না।

চাঁদকে ধরাধরি করে সোফায় শুইয়ে দেয়।ডাক্তারকে কল করে।

অফিসার সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলল

-“আমি জানতাম এই মেয়েটা এতকিছু সহ্য করতে পারবে না।তাই ওর থেকে আরেকটা বড় সত্য লুকিয়ে গেছি।”

তেজ অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল

-“কি সত্য? ”

অফিসার গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“চাঁদের মা পরকীয়াতে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন।তিনি চাঁদের বাবার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু তখনই চাঁদ পেটে আসে।আর চাঁদের বাবা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে বেঁকে বসে।তাদের আর ডিভোর্স হয় না।এর পর থেকেই ধীরে ধীরে রাগ পোষণ করে সেটা ঘৃণার আকার ধারন করে।”

সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আহানও বেশ থমকে যায়। কিন্তু সবাই সিদ্ধান্ত নেয় এই কথাটা চাঁদকে জানতে দিবে না।

চার দিকে সন্ধ্যার আজন দিয়েছে।একটু আগেও চাঁদ আর তেজের বিয়েটা সম্পন্ন হয় চাঁদের জোড়াজুড়িতে।চাঁদ আর থামতে চায় না।কোনো কিছুর বিনিময়েই না।আর এখানে তেজের কোনো দোষ নেই না তেজের পরিবারের আছে তবে এ বিয়েটা আজ না হওয়ার কোনো মানে হয় না।

হ্যাঁ প্রহেলিকা, খালামনি,আবির,ওদের অনাগত সন্তান,বাবার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু মেনে নিতে হবে নিয়ম।

_______________

কেটে গেছে বছর পাঁচ।

আব্রহাম আর হৃদির বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে।নীল আর পুষ্পও বিয়ে করেছে তিনবছর হলো।ওদের এক বছরের একটা মেয়েও আছে।

চাঁদ আহান আর তুহার বিয়ে দেয় নিজের হাতে।ওরা বর্তমানে বিদেশ আছে।বছরে একবার আসে।

সবাই সবার মতন খুশি।চাঁদ আর তেজ একটা বাচ্চা দত্তক নিয়েছে যার বর্তমান বয়স দুই।সবার চোখের মনি এই পিচ্চি টা।চাঁদকে সবাই খুব ভালোবাসে।চাঁদের অতীতের ছায়া নেই বর্তমানে।

পরিশেষেঃ সব সন্ধি বেঁচে থাকুক পৃথিবীতে।

[সমাপ্ত]

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা

অন্তিম পর্ব

চাঁদ বেশ উত্কণ্ঠিত হয়ে আছে তার কোন আপন মানুষ তাকে মারার চেষ্টা করেছে সেটা জানার আশায়।

চাঁদ আবারও অফিসারকে তাড়া দিয়ে বলল
-“আরে অফিসার বলুন তো কে করেছে এমন পরিকল্পনা?”

অফিসার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন
-“নিলীমা বেগম মানে আপনার মা।”

চাঁদের নিশ্বাসের গতি হঠাৎ থমকে যায়। আহান দুকদম এগিয়ে এসে বেশ জোড়ে বলল

-“হোয়াট? আমাদের মা এটা করেছে? মা এতটা নিচ নামতেই পারে না।আপনি ভুল করছেন অফিসার।”

তেজ কালই জেনেছিলো।কিন্তু কেনো চাঁদের মা এমন করেছে সেটা জানায় নি।তাই সেটা জানাতেই আজ অফিসার এসেছিলো।তেজ ভেবেছিলো চাঁদের আড়ালে সবটা সামলে নিবে।

তেজ বাদে উপস্থিত সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চাঁদ তো মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল।

অফিসার শান্ত স্বরে বললেন
-“আপনার মা ই একাজ করেছে।আপনাকে যে ট্রাক ড্রাইভার ধাক্কা মেরে চলে গিয়েছিলো আমরা তাকে ধরেছি তারপর ওর থেকেই সবটা জেনে আমরা আপনার মাকে আইনের আওতায় আনি।”

চাঁদ থমকে যায়। বিশ্বাস করতে পারে না।সে অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল

-“সত্যি আমার মা ই খুনটা করেছে?”

অফিসারের বেশ মায়া লাগল।সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে স্নেহ মাখা কন্ঠে বলল

-“হ্যাঁ তোমার মা ই এটা করেছে।শুধু তোমাকে না তোমার মা আরও তিনজনকে খুন করেছে।”

এবার জেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না চাঁদ।এবার তেজও অবাক হয়েছে।আরও তিনজনের খুনের ব্যাপারটা সে জানতো না।

তেজ দুকদম এগিয়ে গিয়ে বলল

-“স্যার আরও তিনজন কে?আমাকে তো বললেন না।”

অফিসার তেজের কাছে এসে বলল
-“আমরাও তখন জানতাম না যে নিলীমা বেগম আরও খুন করেছে।কাল ওনাকে ধরে নিয়ে আসার পর জিঙ্গাসাবাদ করার পর সবটা জানি।”

চাঁদ অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“বাকি তিনজন কে ছিলো অফিসার? আমাদের পরিচিত কেউ?”

অফিসার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।

চাঁদ বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“কারা সেই তিনজন?”

অফিসার গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“আপনার খালা আর ওনার অন্তঃস্বত্তা মেয়ে প্রহেলিকা।”

চাদঁ এবার আর নিতে পারলো না।দু’কদম পিছিয়ে গেলো।

আহান বিচলিত, বিষ্মিত কন্ঠ বলল

-“কিহ্ প্রহেলিকা আর খালামনিকে? ওরা তো মাস তিন আগে কোথায় জেনো চলে গেছিলো। আবিরসহ।”

অফিসার মৃদু হাসলেন এবং বললেন

-“ওনারা কোথাও যায় নি আপনার মা প্ল্যান করে শহরের বাহিরে একটা বাড়িতে নিয়ে ওদের মেরে পুঁতে রেখেছে।”

আঁতকে উঠল সবাই।আহান ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।আব্রহাম অফিসারের দিকে এগিয়ে এসে বলল

-“ওদের তিনজনকেই মেরে ফেলেছে?”

অফিসার বললেন

-“না শুধু প্রহেলিকা আর ওর মাকে মেরেছে।আর আবিরকে ইচ্ছে মতন মেরে ড্রাগস দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিলো।”

বিষয়টা কেউ ই মানতে পারছে না।হ্যাঁ প্রহেলিকা আবির ওরা বেইমানি করেছে ঠিক আছে তাই বলে ওদের এমন পরিণতি মানতে কষ্ট হচ্ছে।

আব্রাহাম অবাক স্বরে বলল
-“অফিসার আপনি যে তিনজন বললেন তবে?”

অফিসার শক্ত কন্ঠে বলল
-“হ্যাঁ তিনজনই।কারণ ওনি ওনার হাসবেন্ড মানে মিস চাঁদের বাবাকেও খুন করেছে।চাঁদের বাবা স্ট্রোক করে মারা যায় নি তাকে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে। কাল সবটা ওনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন।চাঁদের বাবাকে মেরে ফেলেছেন সব সম্পত্তি দখল করার জন্য কিন্তু পরে জানতে পারে সব সম্পত্তি চাঁদের নামে।

ততদিনে ওনি জেনেছিলেন চাঁদ মৃত।তাই চিন্তা শেষ হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু দেড়বছর পর চাঁদকে দেখে তার ভয় হতে শুরু করল।সম্পত্তি হারানোর ভয়।তাই আবারও চাঁদকে মারার ব্যবস্থা করলেন।আর এ ঘটনা জেনে গিয়েছিলো প্রহেলিকা ও আবির।তাই তাদের সবাইকে মেরে ফেলেন।”

চাঁদ এত বড় ধাক্কা সহ্য করতে পারে নি।লুটে পড়ে মাটিতে।আহানেরও শরীরটা অবশ হয়ে আসে।সামান্য সম্পত্তির লোভে তাদের মা এমন করেছে সেটা জেনো মানতে পারছে না।

চাঁদকে ধরাধরি করে সোফায় শুইয়ে দেয়।ডাক্তারকে কল করে।

অফিসার সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলল

-“আমি জানতাম এই মেয়েটা এতকিছু সহ্য করতে পারবে না।তাই ওর থেকে আরেকটা বড় সত্য লুকিয়ে গেছি।”

তেজ অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল

-“কি সত্য? ”

অফিসার গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“চাঁদের মা পরকীয়াতে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন।তিনি চাঁদের বাবার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু তখনই চাঁদ পেটে আসে।আর চাঁদের বাবা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে বেঁকে বসে।তাদের আর ডিভোর্স হয় না।এর পর থেকেই ধীরে ধীরে রাগ পোষণ করে সেটা ঘৃণার আকার ধারন করে।”

সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আহানও বেশ থমকে যায়। কিন্তু সবাই সিদ্ধান্ত নেয় এই কথাটা চাঁদকে জানতে দিবে না।

চার দিকে সন্ধ্যার আজন দিয়েছে।একটু আগেও চাঁদ আর তেজের বিয়েটা সম্পন্ন হয় চাঁদের জোড়াজুড়িতে।চাঁদ আর থামতে চায় না।কোনো কিছুর বিনিময়েই না।আর এখানে তেজের কোনো দোষ নেই না তেজের পরিবারের আছে তবে এ বিয়েটা আজ না হওয়ার কোনো মানে হয় না।

হ্যাঁ প্রহেলিকা, খালামনি,আবির,ওদের অনাগত সন্তান,বাবার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু মেনে নিতে হবে নিয়ম।

_______________

কেটে গেছে বছর পাঁচ।

আব্রহাম আর হৃদির বিয়ে হয়েছে এক বছর আগে।নীল আর পুষ্পও বিয়ে করেছে তিনবছর হলো।ওদের এক বছরের একটা মেয়েও আছে।

চাঁদ আহান আর তুহার বিয়ে দেয় নিজের হাতে।ওরা বর্তমানে বিদেশ আছে।বছরে একবার আসে।

সবাই সবার মতন খুশি।চাঁদ আর তেজ একটা বাচ্চা দত্তক নিয়েছে যার বর্তমান বয়স দুই।সবার চোখের মনি এই পিচ্চি টা।চাঁদকে সবাই খুব ভালোবাসে।চাঁদের অতীতের ছায়া নেই বর্তমানে।

পরিশেষেঃ সব সন্ধি বেঁচে থাকুক পৃথিবীতে।

[সমাপ্ত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here