সন্ধ্যায়_সন্ধি (সিজন-২),০৬,০৭

0
640

#সন্ধ্যায়_সন্ধি (সিজন-২),০৬,০৭
#মম_সাহা
পর্বঃ৬

দীর্ঘ দেড়বছর পর এককালীন ভালোবাসার মানুষটা যে আজ প্রাক্তন সে প্রাক্তনের মুখোমুখি হলে কে ঠিক থাকতে পারে? আবার প্রাক্তনের বর্তমান স্ত্রী হিসেবে যদি থাকে নিজের আপন খালাতো বোন তাহলে হয়তো দুনিয়ার মাটি শক্ত করে আকড়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাও কঠিন হয়ে উঠে।হ্যাঁ চাঁদেরও তাই হয়েছে।দরজার দিকে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রাক্তন তার বোন এমন কি তার পুরো পরিবারকে দেড়বছর পর দেখে থমকে গিয়েছে সে।

ওদিকে পাত্র পক্ষকে বেশ সমাদর করে ভিতরে আনছে তেজ ও তাদের পরিবার।তুহার সাথে আজ যার বাগদান সে আর কেউ না চাঁদেরই বড় ভাই আহান।আর আহানের সাথে এসেছে তার পুরো পরিবার এমনকি চাঁদের খালাতো বোন প্রহেলিকা আর প্রাক্তন আবির।তাদেরকে সোফায় বসিয়ে জল মিষ্টি দিতে ব্যস্ত সবাই আর এক কোনে এক শক্ত মানবী নির্মম ভাবে ভেঙে পড়ছে ঝড়ঝড় করে।

বেশখানিক ক্ষন সময় ব্যয় করে পাত্র পক্ষের আপ্যায়ন করা হলো।কুশলাদি বিনিময় করা হলো।পরিচয় পর্ব সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিল আজ শুধু চাঁদ বাকি আছে তাদের সাথে পরিচিত হতে। মিসেস জাহানারা বেগম পাত্রের মা মানে আহানের মাকে মিষ্টি সুরে বললেন,

–“বেয়ান বসুন আপনাদের সাথে তো একজনের পরিচয়ই করানো হলো না।আমার আদরের আরেকটা লক্ষী মেয়ে আছে সেদিন যে বললাম তাকে আনছি দাঁড়ান।সেদিন তো ও ছিল না তাই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি ”

পাত্রের মা নীলিমা বেগম হাসি খুশি মুখে বললেন,

–“ও হ্যাঁ হ্যাঁ সেদিন যে প্রশংসা করলেন এমন মেয়েকে না দেখলে চলে।কোন মায়ের গর্ভের সন্তান যে এত লক্ষী আমরাও দেখি মিষ্টি মেয়েটাকে।”

উপস্থিত সবাই সহমত পোষণ করলো।চাঁদের আরেক দফা সুনাম গাইলো সবাই।এত কিছুর মাঝে তেজ খেয়াল করলো চাঁদ আশেপাশে কোথাও নেই।মেয়েটা গেল কই।তেজ আস্তে করে ভীড় থেকে বের হয়ে চাঁদকে খোঁজা শুরু করলো।

পুষ্প চাঁদকে জড়িয়ে ধরে আছে।পুষ্পের চোখে জল।আর চাঁদ এক কোণে নিষ্প্রাণ ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। তার দেড়বছরের সাজানো দুনিয়াটা দেড়মিনিটে ঘুরে যাবে ভাবতে পারে নি।যাদের থেকে ছুটে পালিয়ে এত দূর এসেছে আজ তারাই তার পিছুপিছু চলে আসছে।না তার পিছুপিছু তো আসে নি।তারা তো এসেছে নিজেদের আনন্দ অনুষ্ঠান পালন করতে।এদিকে পুষ্পার চোখের পানি বাঁধ মানছে না।এতদিন পর চাঁদের ভয়ঙ্কর অতীত আবারও দর্শন হবে ভাবতেই পারে নি।বাবা মা হীন এতিম পুষ্পাই তো সেদিন রাতে বাবা মা থাকা স্বত্তেও এতিম হয়ে যাওয়া চাঁদকে নিয়ে খুলনা শহর ছেড়ে পালিয়ে ছিলো।মনে পড়ে কি ভয়ঙ্কর সময় কাটিয়ে ছিল তারা।

তেজ চাঁদকে খুঁজতে খুঁজতে উপরে চাঁদের রুমে চলে আসে।রুমের পরিস্থিতি দেখে সে অবাক।একটু আগে চাঁদের গায়ে যে শুভ্রা রঙের জড়ানো শাড়িটা চাঁদকে আরো উজ্জ্বল করে ছিলো সেটা এখন মাটিতে ভিজে জবেজবে হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।চাঁদের শরীরে একটা টিশার্ট জড়ানো।সে ফ্লোরে বসে খাটে বসে থাকা পুষ্পার পায়ে মাথা দিয়ে রেখেছে।

চাঁদের এ অবস্থা দেখে তেজের কপালে আপনা আপনি সন্দেহের ভাজ পড়ে যায়।একটু আগেও যে মেয়ে হাসি খুশি ছিলো তার হঠাৎ কি হলো? তেজ এগিয়ে গিয়ে হাত রাখে চাঁদের বাহুতে।

চাঁদ পুষ্পের হাঁটুতে মুখ ডুবিয়ে শুয়ে ছিলো।নিজের পিঠে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয়ে শিউরে উঠলো।

চাঁদকে ভয় পেতে দেখে তেজ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,

–“বি কুল চাঁদ,ইট’স মি, তেজ ভাইয়া।

চাঁদের স্বস্তি মিলল।যতই ঝগড়া করুক না কেনো।নিজের মনের অজান্তেই এ মানুষটার সান্নিধ্য পছন্দ করে চাঁদ।স্বস্তি মেলে।

চাঁদকে চুপ থাকতে দেখে তেজেই তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন ছুড়ে মারে,

–“আজ বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আর তুমি দেবদাসী হয়ে বসে আছো কেনো? ওদিকে মা তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে ওনাদের তাই খুঁজছে।”

–“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না তেজ ভাইয়া, আমি অনুষ্ঠানে এট্যান্ড করতে পারবো না মাম কে একটু বলে দিবেন প্লিজ।” চাঁদের বেশ নির্লিপ্ত গলায় উত্তর।

তেজ দ্রুত গিয়ে চাঁদের কপালে হাত রাখল।কপাল বেশ ঠান্ডা। তাহলে কি হলো এই ধানীলঙ্কার হঠাৎ করে চুপ মেরে গেলো।তেজের ভাবনার মাঝেই হাজির হলো তেজের মা জাহানারা বেগম।

তিনি চাঁদকে এভাবে বসে থাকতে দেখেই তাড়াতাড়ি এসে চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আর আদুরে সুরে বলল,

–“মা ও মা তোমার কি হইছে? এভাবে বসে আছিস কেনো? শাড়ি খুলেছিস কেনো? ওহ্ গরম লাগে? আচ্ছা থাক আর পড়তে হবে না শাড়ি।এভাবে নিচে বসেছিস কেনো উঠ।

চাঁদ আদুরে স্বর পেয়ে নিজেকে শক্ত রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।তবুও নিজেকে শক্ত করে বলল,

–“মাম আমার তো শরীরটা একটু অসুস্থ লাগছে আমি যাবো না।”

জাহানারা বেগম হাত বুলিয়ে বললেন,
–“ওমা একটু আগে তো সব ঠিকই ছিলো হঠাৎ করে কি হলো? জ্বরও তো নেই।ওহ বুজেছি লজ্জা পাচ্ছিস.?আরে আয় ওরা খুব ভালো মানুষ।

সবটাই দূর থেকে লক্ষ করছে তেজ।এবার তার রাগ উঠছে প্রচুর।মেয়েটা সবসময় এমন করে।মা এত কিছু বলছে তাও যেতে রাজি হচ্ছে না দেখে তেজ রেগে বেশ চিল্লিয়ে বলে উঠল,

–“এই মেয়ে এই তোমার কি কমন সেন্স নেই একটা মানুষ এত বার করে বলার পরও রাজি হচ্ছো না।বেশি ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছে তো সবাই তাই রক্ষা করতে পারছো না।রিয়া ঠিকই বলে পরগাছা পরগাছাই হয়।”

তেজ নিজে বলে নিজেই বেকুব হয়ে যায়। সে মুখ ফসকে কি বলে ফেলল।চাঁদও এমন সময় এ মানুষটার মুখ থেকে এমন কথা আশা করে নি।জাহানারা বেগম বেশ জোড়ে অবাক হয়ে বলল,
–“তেজ?”

তেজ বেশ নিচু স্বরেই বলল,
–“আসলে মা আমি এভাবে বলতে চাই নি।

–“না তেজ ভাইয়া ঠিকই বলেছেন। পরগাছা পরগাছাই হয়। আপন গাছেই যার ঠাঁই মিলে নি সে পরগাছা হয়ে ঠাঁই পাবে সেটাই তো ভাবনার বাহিরে ছিলো।” চাঁদ বেশ ব্যাতিথ সুরে বলল।

জাহানারা বেগম এমন কি তেজের ও বুক কেঁপে উঠলো চাঁদের কথা শুনে।আর পুষ্প দু ফোঁটা চোখের জল ফেলল।আর মনে মনে ভাবলো পরিবার না থেকেও সে এত কষ্ট পায় নি যতটা এই চাঁদ পরিবার থেকে পেয়েছে।মেয়েটার জীবন বোধহয় এভাবেই যাবে।

চাঁদ আস্তে করে উঠে চুল গুলো আঁচড়িয়ে নিলো।তারপর জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“চল মাম।আমি তোমার কথা ভঙ্গ হবে এমন কিছুই করবো না।যাই হোক।আমার নতুন জীবনে তোমার অবদানের ঋণ শোধ করা যাবে না।”

তেজ ড্যাবড্যাব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে।সে কি ভুল কথা বলে ফেলল মেয়ে টাকে।কিভাবে পারলো।

জাহানারা বেগম ছলছল নয়নে তাড়াতাড়িই রুম থেকে প্রস্থান নিলো।সে ভাবতে পরে নি
তার ছেলে মানুষকে এভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে পারবে।

ওদিকে আংটি পরানোর অনুষ্ঠান শেষ।

এদিকে চাঁদ হনহনিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার সময় পুষ্প কান্না মাখা স্বরে প্রশ্ন করলো,

–“তুই সত্যিই যাবি চাঁদ? ”

চাঁদ পিছু ঘুরে। নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকায়। উত্তর দেয়,
–“যে থালে খাই সে থালে ফুটো করার অধিকার আমার নেই।আজ এত গুলো দিন আমি ওদের সাথে থাকি আর ওদের কথার খেলাপ কিভাবে করি?তুই বরং ব্যাগটা গুছিয়ে নীলকে একটু খবর দে।”

হনহনিয়ে চলে গেলো চাঁদ।পুষ্পা ব্যাগ গুছানোর কাজে লেগে গেলো।আর তেজ? ওর কলিজাটা ছ্যাত করে উঠলো।সে তাড়াহুড়ো করে পুষ্পকে প্রশ্ন করলো,

–“এই ব্যাগ গুছাবে মানে কি? চাঁদ কোথায় যাবে? আর চাঁদ আজ এমনই বা করছে কেনো?”

পুষ্পা তাকায় মানুষটার দিকে।বড্ড সম্মান করে এ মানুষটাকে।কিন্তু আজ রাগ ও লাগছে।সেই রাগ থেকেই তাচ্ছিল্য ভরা উত্তর দেয়,

–“পরগাছা তো পরগাছাই হয় ভাইয়া।আর কত পরগাছা হয়ে থাকবে সে।এবার নাহয় তারও একটু আপন ঠিকানা হোক।সে এমন কেনো করেছে তা আমি জানি।একটা ভেঙে যাওয়া মেয়েকে জোড়া দিতে আমার দেড়বছর সময় লেগেছে।ভাঙ্গা মানুষটা ভালো করে জোড়া লাগার আগেই যখন আবার ভেঙে যাবে তখন জোড়া লাগানো যাবে তো।এবার বোধহয় আর বাঁচাতে পারবো না মেয়েটাকে।”

হাউমাউ করে কেঁদে উঠে পুষ্প।তেজ থমকে যায়। তাহলে কি আজ ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে?সে দৌড়ে যায় নিচে।পুষ্পও দৌড় লাগায়।

ওদিকে চাঁদকে জাহানারা বেগম নিচে নিয়ে যেতেই হৃদি চিল্লিয়ে বলে নতুন দুলাভাই দেখুন আমাদের মানুষ চাঁদ হাজির হয়েছে।

আহান ও তার পরিবার অন্য দিকে ব্যস্ত থাকলেও চাঁদ নামটা শুনে প্রত্যেকে নড়ে যায়।আজ দেড়বছর পর এ নামটা শুনে সবার বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।ওরা ফিরে তাকায়।দেড়বছর আগের পুরোনো মুখ নতুন খোলশ দেখে পিলে চমকে উঠে তাদের। হাসি বন্ধ হয়ে যায়। পাত্র পক্ষে থেকে আসা প্রত্যেকটা মানুষ দাঁড়িয়ে যায় আপনা আপনি।তাদের দাঁড়িয়ে যেতে দেখে পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে যায় রুম।তেজও ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। দেড়বছর পর মুখোমুখি অতীত। কি হবে এবার?

চলবে,,,

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা

পর্বঃ৭

ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। থমকে গেছে সময়। আহান উঠে আসলো বোনের কাছে।চাঁদ ততক্ষণও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। যেই আহান হাত বাড়িয়ে চাঁদকে ছুঁতে যাবে চাঁদ খপ করে হাতটা ধরে ছুড়ে মারে। আর উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

–“হু আর ইউ? হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস কীভাবে হয় আমাকে স্পর্শ করতে আসার? আই ডোন্ট নো ইউ।একটা আননোউন মেয়েকে ধরার সাহস কি করে হয় আপনার?ড্যাম ইট,আনসার মি।”

আহান তব্দা খেয়ে যায়। শুধু আহান না ড্রয়িং রুমের সবাই চুপ মেরে যায়।তেজ অবাক। মনে মনে ভাবে চাঁদ আত্মীয়র সাথে এমন ব্যবহার করছে কেনো।জাহানারা বেগম মূর্ছে যায় এমন ভয়ঙ্কর চাঁদকে দেখে।তুহার মায়ের পিলে চমকে উঠে ওনার হবু মেয়ে জামাইয়ের প্রতি চাঁদের ব্যবহার দেখে।ছুটে আসে চাঁদের দিকে।চড় লাগায় চাঁদের গালে।চিৎকার দিয়ে বলে,,

–“এই মেয়ে এই তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়ে জামাইয়ের সাথে বেয়াদবি করার।তোমাকে এত ভালোবেসে ছিলাম আমরা।আর তুমি কিনা কালসাপ হলে।”

চাঁদ তবুও রণমূর্তি ধারণ করে আছে।মনে হচ্ছে এই একটা কেনো এমন হাজারো থাপ্পড়েও চাঁদ আজ টলবে না।জাহানারা বেগম ছোটে এসে ঠান্ডা করে তুহার মাকে।চাঁদের দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয়।এই মেয়েটা যে এমন করবে ভাবতে পারে নি তিনিও।কেঁদে উঠে বলে,

–“কি ভুল করেছিলাম চাঁদ যে এমন কাজ করলি? তুই আসতে চাস নি জোড় করে আনাটাই কি ভুল ছিল আমাদের? ”

পরিবারের প্রত্যেক টা সদস্যের এমন আচারণে সুযোগ পেলো রিয়া।খোঁচা দিয়েই বলল,

–“বলেছিলাম আগেই এই মেয়ে ভালো না।রাস্তার মেয়ে জায়গা দিলে এমনটা তো হবেই।কোথা থেকে উঠে আসছে গড নোউস।”

আব্রাহামের ধমকে থেমে যায় রিয়া।নাবিলা খানম মানে আব্রাহামের মা চাঁদকে ধরতে আসলেই চাঁদ হাত ছাড়িয়ে নেই।লাল চোখ জোড়া দিয়ে তাকায় সবার পানে।ছোট্ট কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করে বলে,

–“বুজেছো তো কাকে নিয়ে লাফিয়েছো?আমার মতন মেয়ে কারো সুখের কারণ হতে পারে না।সবার জীবন ধ্বংস করে দেয়।অলক্ষী কি আর নিজের জন্মদাত্রী মা এমনেই বলেছে।না আমার মৃত্যু কামনাও শুধু শুধু করেছে।”

সবার কলিজা ছ্যাত করে উঠে।ঢুকরে কাঁদার আওয়াজ আসে।সবাই তাকিয়ে দেখে আহানের মা নিলীমা বেগম আঁচলে মুখ চেঁপে কেঁদে উঠেছে।এর মাঝেই হাজির হয় চাঁদের বন্ধু নীল।

নীল রুমে এসেই আহান আর ওর পরিবারকে দেখে বোকা বনে যায়। ভীত দৃষ্টিতে চোখের ইশারা করে পুষ্পের দিকে।পুষ্প পলক ফেলে ইশারার জবাব দেয়। নীল ভয় পেয়ে যায়।চাঁদ আবার কিছু করবে না তো।দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরে চাঁদকে।এখানে কোনো লালসা নেই।উপস্থিত সবাই বুজচ্ছে না কিছু।এর মাঝেই চাঁদ নীল আর পুষ্পের হাত ধরে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তেজের দম বন্ধ হয়ে আসছে।চাঁদকে কি তবে হারিয়ে ফেলবে সে।চাঁদ দরজা অব্দি গিয়ে দাঁড়ায়। পিছু ফিরে তাকায়। জাহানারা বেগম,নাবিলা খানম,তুহার মা,তুহা,হৃদির দিকে তাকিয়ে চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে বলে,

–“এবার তবে নিলাম বিদায়
ঠাঁই নাহি পেলাম কারো দারে,
আপন মানুষ সে যে নেহাৎ মরিচীকা
সুযোগ পেলে ছোবল মারে।

~মমসাহা

কেঁদে দিলো আহান।হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার দিলো
–“বোন আর হারিয়ে যাস না,তুইবিহীন তোর গম্ভীর ভাইয়ের প্রাণ যে ফুরায় যায়।”

তেজের পরিবারের সবার কান্না বন্ধ হয়ে যায় আহানের একটু কথাতেই। “বোন?”

তেজ চিল্লিয়ে উঠে বলে,

–“বোন? হোয়াট? চাঁদ আপনার বোন?

আহান কেঁদেই যাচ্ছে।প্রহেলিকার চোখেও জল,আবির মানে চাঁদের প্রাক্তন আর প্রহেলিকার বর্তমান স্বামীও কান্না করছে।নিলীমা বেগম ছুটে এসে চাঁদের হাত জড়িয়ে ধরলো।ডুকরে কেঁদে উঠলো। আর বলল,

–“মারে দেড়বছরও কি কম সময় আমাদের ক্ষমা করার জন্য? ”

–“শুধু দেড়বছর না পুরোটা জীবনও কম সময় আন্টি।” তাচ্ছিল্য স্বরে বলল নীল।

চাঁদ আলগোছে ছাড়িয়ে নিলো হাতটা।

এবার আব্রাহাম এগিয়ে এলো চাঁদের দিকে।চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

–“আমার যতটুকু মনে হচ্ছে এই পরিবারটা চাঁদের পরিবার।কিন্তু বিশাল কিছু হয়েছে যার কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে চাঁদকন্যা যা আমরা জানিনা।পুষ্প আর নীল তোমরা ওর অনেক আগে থেকে বন্ধু তোমরা নিশ্চয়ই সব জানো। প্লিজ এমন ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা না রেখে সব বল আমাদের। ”

পুষ্প কেঁদেই যাচ্ছে।নীল কিছু বলার প্রস্তুতি নিতেই তুহার মা ছুটে এসে চাঁদের সামনে দাঁড়ায়। দু হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙিতে চাঁদকে বলে,
–” আহান যে তোর ভাই আমি জানতাম না চাঁদ।আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম তোর এমন আচারণে যদি আমার মেয়ের বিয়েটা ভেঙে যায় তাই চড় লাগিয়ে দিয়েছি রে।ক্ষমা কর মা।জাস না তুই।”

চাঁদ তুহার মায়ের দুহাত আলগা করে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
–“এ জীবনে তোমাদের কাছে যতটুকু ভালোবাসা পেয়েছি সেটা আমি ভুলতে পারবো না।একটা রাস্তার মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছিলে সাথে ভালোবাসা আর কি চাই জীবনে।তবে আফসোস এ জীবনে নীল আর পুষ্প ছাড়া আমাকে বোঝার মানুষ হলো না।এ জীবনে আমার আর স্বার্থবিহীন আপন মানুষ হলো না।একটা ভালোবাসার মানুষ যে ছেড়ে যাবে না সেও হলো না।আমার হয়ে এ জীবনে কেউই আর হলো না।এই সন্ধি ভিলায় দেড়বছর থেকেও মনের সন্ধি কারো সাথেই হলো না।এ পাষাণ পৃথিবীতে আমার কিচ্ছু হলো না। কিচ্ছু না।”

চাঁদ ছুটে বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে।সবাই বেশ পিছু ডাকলো।চাঁদের পিছে তেজ আসতে নিলে নীল হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে
–“ওর যেহেতু জীবনে কাউকে পাওয়া হলো না তাহলে আর কেউ নাই আসুক।ওর জন্য পুরো পৃথিবীতে পুষ্প আর নীলই যথেষ্ট।”

বেরিয়ে গেলো নীল চাঁদের পিছু।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here