সন্ধ্যায়_সন্ধি (সিজন-২),১৪,১৫

0
655

#সন্ধ্যায়_সন্ধি (সিজন-২),১৪,১৫
#মম_সাহা
পর্বঃ১৪

তেজ চাঁদের ফ্লাটের সামনে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে অনেক গলার স্বর পাচ্ছে।বুঝাই যচ্ছে তর্কবিতর্ক চলছে।

সে বাসার ভিতরে এসে দেখে পুরো রুম জুড়ে চাঁদের পরিবারের মানুষ।তেজ আশ্চর্য হলো।কতটা বেহায়া হলে মেয়েটার শান্তি নষ্ট করতে চলে আসছে আবার।

তেজ ঢুকেই জাহানারা বেগম মানে নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“মা ওদের বাসায় ঢুকতে কেনো দিয়েছো?কোন সাহসে ওরা এ বাসায় এসেছে?”

আবির তেতেঁ উঠলো। তেজকে রাগী স্বরে বলল,

–“হে ইউ,,এটা আপনার বাসা না।আর না আমরা আপনার কাছে এসেছি।তো কাকে কথা শুনাচ্ছেন? আর এটা আমাদের ম্যাটার আমাদেরকে সমাধান করতে দেন।”

পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে ঠাস করে একটা চড়ের শব্দ হলো।সবাই নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।আবির গালে হাত দিয়ে চড় দেওয়া মানুষটার দিকে চাইল।চড়টা আর কেও না চাঁদই মেরেছে।

চাঁদ আঙুল উঁচিয়ে বলে,,
–“হাউ ডেয়ার ইউ আবির? তোমার সাহস কীভাবে হলো এদের সাথে এভাবে কথা বলার? সেদিন চুপ ছিলাম বলে আজও চুপ থাকবো ভেবে নিয়েছো? নো নেভার। এই চাঁদকে চেনো না।যেচে পরে আগুনে হাত দিচ্ছো পুড়ে ছাই না হতে হয়।সো সাবধান।এন্ড গেইট লস্ট। ”

আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। চাঁদের এতটা বদল হজম হলো না তার।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে আরেক ধাপ এগিয়ে এসে চাঁদের হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলল,,

–“চন্দ্রিমা ক্ষমা করো আমাকে।তুমি ফিরে চলো। তুমি বললে আমি এখনই প্রহেলিকাকে ছেড়ে দিবো।প্লিজ ফিরে চলো।”

ঠাস করে আরেকটা চড় পড়লো আবিরের গালে।এবারের টা আরও শক্ত।আবিরের বুকে ধাক্কাতে ধাক্কতে বলল,

–“তুমি কখনও মানুষ হবে না আবির।তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারলে না।প্রথমে আমাকে ঠকালে এখন নিজের স্ত্রীকে ঠকানোর কথা বলছো।আর যার পেটে কিনা তোমার সাত মাসের একটা অংশ বড় হচ্ছে।আরে ভালো প্রেমিক না হয় নাই হলে ভালো স্বামী, ভালো বাবা তো হতে পারো অন্তত।ছিঃ তোমার মানসিকতা কতটা নিচু।

আর আজ মনে পড়ল আমার কথা? দেখার পর ভালোবাসা উতলে উঠছে?এতদিন কই ছিলা? মরে গেছি বলেই তো ধরে নিয়েছিল সেটাই রাখতে।

আবার নিজেদের স্মৃতিসভায় কেনো বাঁচালে আমায়?আর সেদিন যেমন অক্ষম ছিলাম।আমি আজও অক্ষম। তবে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আজ নিতে চাচ্ছেন কেনো?”

আবির মাথা নিচু করে উত্তর দেয়,,

–“বিশ্বাস করো চন্দ্রিমা সেদিন মা দিব্যি দিয়েছিলো আমার কিছু করার ছিলো না।”

চাঁদ দ্বিগুণ তেড়ে এসে বলল,,

–“বিশ্বাস মাই ফুট।আচ্ছা সব মেনে নিলাম। তবে একমাসে আমাকে ভুলে আমারই খালাতো বোনকে বিয়ে করার চিন্তা কিভাবে মাথায় এলো?এর উত্তর দিবেন?কোথায় ছিলো ভালোবাসা তখন?”

আবির এবার মাথা উঁচু করে। এতক্ষণ এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিলো।তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,,

–“চন্দ্রিমা তুমিতো কত গুলো বছর আমাকে ভালোবেসে ছিলে।তোমার বোনের সাথে মিশে ছিলে।আমাকে যেমন চিনতে ভুল করেছো তোমার বোনকেও তো ঠিক ভাবে চিনলে না।এই যে আমাকে দোষ দিচ্ছো তোমার বোন কি করেছে জানো? জানো তুমি? তোমার বোনের বেইমানীর কথা? ”

চাঁদ তাকিয়ে রয় অবাক দৃষ্টিতে। প্রহেলিকা তো বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে।তাহলে বেইমানী হলো কীভাবে? খালার জন্য ই তো বিয়ে করতে হয়েছে।হ্যাঁ তবে প্রহেলিকাও দোষী কিন্তু বেইমানী করেছে কিভাবে?

চাঁদ,পুষ্প ও নীলকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে তেজ আন্দাজ করতে পারলো আরো কিছু আছে তাদের জানার আড়ালে।

তেজ দুকদম এগিয়ে গেলো আবিরের দিকে।প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে বলল,

–“কি করেছে প্রহেলিকা বেঈমানী?বলেন।কথা অস্পষ্ট রাখা তো উচিত না।স্পষ্ট করে সবটা বলুন।”

আবির তবুও চুপ করে আছে।আহান এগিয়ে আসলো।এতক্ষণ সে সব চুপচাপ দেখেছে এবার এগিয়ে এসে বেশ শক্ত স্বরেই বলল,

–“আবির আর অন্তত হেয়ালি করো না।দুইটা বছর আমাকে অন্ধকারে রেখেছো তোমরা সবাই।তারপরও তোমার আর প্রহুর বিয়েটা মেনে নিয়েছিলাম ভেবেছিলাম আমার বোন যদি কারো সাথে পালিয়ে গিয়ে সুখী থাকতে পারে তবে তুমিও পারবে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।এবার অন্তত আর এসব হেয়ালি বরখাস্ত করবো না।আনসার মি প্রহু কি করেছিলো?”

এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহেলিকার হাত পা এবার কাঁপছে।এতদিন পর তার সত্যি টা সবাই জেনে যাবে।সবাই তো ছি ছি করবে।

প্রহেলিকা তড়িঘড়ি করে আবিরের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আমতাআমতা করে বলল,

–“আবির তুমি কো কোন সত্যির কথা বলছো? পাগল হয়েছো?চলো এখানে আর থাকা লাগবে না।চাঁদ যদি না ফিরতে চায় তবে আর জোড় করার কি দরকার। ও যেভাবে সুখে থাকতে চায় ওরে সেভাবে সুখে থাকতে দেও।”

আবির প্রহেলিকার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে হাহা করে হেসে দিলো।উপস্থিত সবাই এমনকি প্রহেলিকাও বেক্কল হয়ে তাকিয়ে আছে।

আবির হাসি থামিয়ে বলল,

–“সিরিয়াসলি প্রহেলিকা? চাঁদ যেভাবে সুখে থাকতে চায় সেভাবেই থাকতে দেওয়া উচিত? তবে দেড়বছর আগে নেমকহারামিটা করার বেলায় মনে ছিলো না সেটা?”

এবার আবির চাঁদের দিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে বলল,

–“চাঁদ প্রস্তুত হও তোমার জীবনে আরও একটা কঠিন সত্যি জানার জন্য। আমার চেয়েও বড় বেইমানের নাম শোনার জন্য। ”

চাঁদ নিস্তব্ধ। কি খেলা করছে ভাগ্য। তেজ চাঁদের পাশে এসে শক্ত হাতে চাঁদের হাতটা মুঠ করে নিলো।আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

–“চাঁদ যেহেতু এত ধাক্কা সহ্য করতে পেরেছে তবে এটাও পারবে আপনি বলেন।”

আবির চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করল,,

তোমার চোখে আমি বেইমান,তোমার মা বেইমান,তোমার ভাই বেঈমান। মানলাম আমরা খারাপ কাজ করেছি তাই বেইমান।

তোমার মা তোমার পাশে ছিলো না তাই বেইমান।তোমার ভাই তোমাকে ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমিয়ে ছিলো তাই তোমার ভাই বেইমান।

আর আমি,,আমি তোমাকে ভুলে তোমারই বড় বোনকে বিয়ে করে ছিলাম তাই আমি বেইমান। কিন্তু দোষ কি আমার একার ছিলো? তোমার বোন বিয়ে না করলে আমি পারতাম ওকে বিয়ে করতে?এক হাতে আদৌ তালি বাজে চাঁদ?

তোমার পিছে যে ছেলেটা ছয়মাস ঘুরেছে সে ছেলেটা একমাসেই তোমাকে ভুলে আরেকটা মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে গেলো সন্দেহ জাগে নি চাঁদ?

না জাগারই কথা। তখন তুমি এমনেই ভেঙে পড়েছিলে।তবে পরে তো একটু ভেবে দেখতে পারতে।

তোমার সাথে রিলেশন চলা কালীন তোমারই প্রাণপ্রিয় বোন আমাকে প্রপোজ করেছিলো।হ্যাঁ চাঁদ প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো।

হ্যাঁ চাঁদ তোমার এত ভালো বোন আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।সে কি জানতো না তুমি আমাকে কত ভালোবাসো?

আমি ওর প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই তখন তোমার বোন জানো কি বলেছিলো?সে তার দেহ অফার করেছিল আমাকে।বুঝেছো তুমি কতটা ভালো সে?”

চাঁদের পায়ের তলা থেকে মাটি সড়ে গেলো।তেজ হতবাক। তবুও সে চাঁদকে শক্ত করে ধরলো।

আবির তেজ আর চাঁদের শক্ত হাতটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি আবার বলা শুরু করলো,

–“সেদিন তোমাকে ঘটনা গুলো না বলাটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো।

তোমার বোনকে চড় দিয়ে বিদায় করলাম সেদিন।তোমাকে আর বলি নি কষ্ট পাবে বলে।

জানো যখন মা বলেছে তোমার সাথে আমার বিয়েটা হবে না সেদিন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যাই।তারপর একটা ডিস্কে গিয়ে ইচ্ছে মতন মদ গিলি।

ওখানে আমি যখন মাতাল প্রায় তোমার বোন প্রহেলিকাকে দেখি সেই ডিস্কে।প্রহেলিকা আমার কাছে আসতে আসতে আমি মাথা ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।

যখন চোখ খুলি তখন ভোর। তোমার বোন আর আমি এক বিছানায়। আমার মাথা ঘুরে উঠে।

তারপর তোমার বোন একটা ভিডিও অন করে যেখানে আসি আর সে বেশ কাছাকাছি। সে ব্লেকমেইল শুরু করে।বিয়ে না করলে ভিডিও ভাইরাল করে দিবে।

তারপর আর কি পরিবারের সম্মান বাঁচাতে বিয়েতে রাজি হলাম। আর ধিক্কার জানালাম নিজেকে।তোমাকে সেদিন ঐ কথা গুলো বলতে বাধ্য করিয়েছে তোমারই বোন।

তারপর ভেবেছিলাম তোমায় সব খুলে বলবো।ততদিনে বড্ড দেড়ি হয়ে গেলো। তুমি হারিয়ে গেলে।

এখানেই শেষ না।বিয়ের চারমাস আমি বাড়ি ছিলাম না। একদিন জানতে পারি আরও চাঞ্চল্যকর খবর। সেদিনের ভিডিওটা সত্যি ছিলো না।আমার মাতাল হওয়ার সামান্য সুযোগ নিয়ে ভিডিও টা করা।তেমন কিছুই হয় নি আমাদের মাঝে।প্রহেলিকা আর আমার মা মিলে এসব করেছিলো।”

চাঁদ নিস্তব্ধ। কি বলবে খুঁজে পায় না।শুধু অবাক দৃষ্টিতে প্রহেলিকার দিকে তাকিয়ে বলে,

–“আপু!”

প্রহেলিকা মাথা নিচু করে আছে।আহান গিয়ে ঠাস করে চড় লাগালো প্রহেলিকার গালে।আরেকটা চড় মারতে গেলেই চাঁদ আহানের হাত ধরে ফেলে।আহান রাগী স্বরে বলল,,

–“ছাড় চাঁদ এই বেইমানকে এখনই আমি মেরে ফেলবো।ছাড়।”

চাঁদ নিষ্পলক তাকালো আহানের দিকে।তার দৃষ্টি মৃত।চাঁদ করুণ স্বরে বলল,,

–“থাক মেরো না।ওর গর্ভের সন্তান তো দোষ করে নি।দোষ আমার ভাগ্যের। ”

সবাই অবাক হয়ে যায়। সাথে প্রহেলিকাও। অনুশোচনা নাকি নাটক জানা নেই তবে কেঁদে দিলো।আর অস্ফুটে স্বরে বলল,

–“ক্ষমা করিস চাঁদ।”

চাঁদ হেসে দেয়।অদ্ভুত দৃষ্টিতে বলল,

–“কার কাছে ক্ষমা চাচ্ছো?কাউকে খুন করে ক্ষমা চাইলে তার ভিতরে জান চলে আসে? আসে না।তবে ক্ষমা কিসের।”

চাঁদ তারপর প্রহেলিকার উঁচু পেটে হাত বুলিয়ে বলল,

–” আবির তবে সে তো পরে মেনে নিয়ে ছিলে।না হয় তোমার অংশ এখানে কিভাবে?”

আবির হেসে দেয়। হেসেই বলে,,

–“চাঁদ তোমার থেকে কম বেইমানীর স্বীকার হই নি আমি।সব জানার পর যখন তোমার বোনকে ডিভোর্স দিতে চাইলাম তখন তোমার বোন আমাকে আবারও নেশা জাতীয় কিছু খাওয়ালো আমার অগোচরে।তারপর,সে সুযোগের সৎ ব্যবহার করলো।”

চাঁদ হাসে।করুণ হাসি।তেজ চাঁদের পাশে এসে কাঁধে হাত রাখে।চাঁদ তেজের দিকে তাকায়।তারপর পেট টাই হাত বুলিয়ে বলে,,

–“জানেন এই ছোট্ট প্রাণটা আমার পেটে আসবে না বলে আজ জীবনের প্রত্যেক টা সন্ধি এভাবে বিচ্ছেদ হলো।”

তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,

–“তোমাদের থেকে পালাতে সেই খুলনা থেকে অচেনা ঢাকায় পাড়ি দিলাম।সেই অতীত আবার এখানে আরো দাগ ফেলে গেলো। প্রথমে শহর ছেড়েছি। এখন কি দেশটা ছাড়তে ও বাধ্য করবে?আমি শুনেছিলাম *দুঃখীনি যেখানে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়* আমার বেলাও বুঝি এমনটা হলো?

চলবে,,

#সন্ধ্যায়_সন্ধি(সিজন-২)
#মম_সাহা

পর্বঃ১৫

“আমি ঐ নরকে যাওয়ার আহ্বান তোকে করবো না,তবে নিজের কৃতকর্মের জন্য দু-হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি,ক্ষমা তুই এজীবনে করবি না জানি তবুও একটু পাপ যদি কমাতে পারি।মাফ করিস বোন তোর এই হতভাগা ভাইটাকে।যে তোকে রক্ষা করতে পারে নি মানুষ নামক জানোয়ারদের হাত থেকে।আর তোর দেশ ছাড়া লাগবে না।আমরা কখনোই অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবো না তোর জীবনে ভালো থাকিস অভাগীনি।”- আহান টলমল চোখে কথা গুলো শেষ করে ধীর পায়ে প্রস্থান নিলো চাঁদদের ড্রয়িং রুম থেকে।

চাঁদ চুপ করেই ছিলো একটা কথা ও বলে নি ওর ভাইকে।যতই সে শক্ত খোলশ পরে থাকুক না কেনো তারও তো একটা মন আছে।কষ্ট তো তারও হয়।মনে পড়ে গেলো সোনালী অতীত।যখন সে না খেয়ে থাকতো এই ভাই নিজের হাতে খাইয়ে দিতো।কেনো জিনিস পছন্দ হলে এ ভাই ই কিনে এনে দিতো।রাতে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না পূরণ করেছে।ভুলে যাওয়া কি এতই সোজা সব?

কিন্তু যখন তার মাথার ছাদ হয়ে ভাইয়ের দাঁড়ানো উচিত ছিলো তখনই তার ভাই খোলা আকাশ তার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো ভিনদেশে।তবে ভাইয়ের ও তো কোনো দোষ নেই।বেঁচে থাকতে হলে টাকার অনেক দরকার।ভাই না গেলে তাদের তো অনাহারেই কাটানো লাগতো।তবুও ভাইয়া দোষী।এ দেশে থেকেও তো সংসার চালানো যেতো।হয়তো রাজার সাম্রাজ্য হতো না তবে চাঁদের তো একটা বটবৃক্ষের মতন ছায়া দেওয়ার মানুষ থাকতো।

আবির চাঁদের সামনে দুকদম এগিয়ে আসলো।তারপর হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো নিচে।মাথা নিঁচু করে কেঁদে দিয়ে বলল,

–” জানো চন্দ্রিমা পাপ তার বাপ কেও ছাড়ে না।তেমন আমার মাকেও ছাড়ে নি।আজ সাত মাস হলো মা বিছানায়। তার মরণব্যাধি ক্যানসার হয়েছে।এখন লাস্ট স্টেজে আছে।মায়ের অহংকার এত সৌন্দর্য সব মিলিয়ে গেছে।তোমার চোখের জলের মূল্য দিতে হবে সবাইকে।হৃদয় ভাঙার অভিশাপ তো ভোগ করতেই হবে।এখন আমাদের শাস্তি পাওয়া বাকি।তবে চাঁদ ক্ষমা চাইছি।ক্ষমা চাইতে তো আর মানা নেই।”

চাঁদ এত ঘটনা এক সাথে নিতে পাড়ছে না।ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।ভালো হোক খারাপ হোক আবিরের মাকে সে সম্মান করতো।কখনোই সে কাউকে অভিশাপ দেয় নি।তবে রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার বলতে কথাটা সত্যিই আছে।

চাঁদকে সোফায় বসতে দেখে পুষ্প এগিয়ে আসে।কিন্তু ততক্ষণে তেজ চাঁদের পাশের জায়গা টা দখল করে নেয়।শক্ত হাতে জড়িয়ে নেয় চাঁদের হাত।পুষ্প থেমে যায়। এত কিছুর মাঝেও এক নিবিড় শান্তি পায় সে।

প্রহেলিকা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

–“আবিরকে ক্ষমা করে দে চাঁদ। আবির সত্যিই নির্দোষ। আমাদের পাতা ফাঁদে সে পা দিয়েছে। ওকে অভিশাপ দিস না।”

চাঁদ চোখ ঘুরিয়ে তাকায় প্রহেলিকার দিকে।বিদ্রুপ হাসি হেসে বলে,

–“আমি কাউকেই অভিশাপ দেই নি। আমি দোষ দিয়েছি আমার ভাগ্যকে।আমি চাই নি কারো ক্ষতি হোক।তবে উপরওয়ালার ইচ্ছা হয়তো অন্য কিছু ছিলো।শুনেছি মন ভাঙা আর মন্দির ভাঙা নাকি এক সমান।তাই উপরওয়ালা সে ক্ষতির বিচার করছে।আর হ্যাঁ আবির নিজেকে যত বেচারা প্রেজেন্ট করছে সে ততটাও বেচারা না।সম্পর্কে তখনই তৃতীয় ব্যাক্তি আসে যখন সম্পর্কে একটা ফাঁক থেকে যায়। সেই ফাঁকেই ঢুকে তৃতীয় ব্যাক্তি।আর মানছি আবিরও ভিক্টিম তবে আবিরও আমার কাছে কম দোষী না।

আবির যদি এতই ভালোবাসতো তবে সেদিন হসপিটালে আমার এত চরম মুহূর্তে আমাকে একা রেখে মায়ের বাধ্য সন্তান হয়ে চলে যেতো না।আবিরের মা আমার সাথে আবিরের বিয়ে নিয়ে প্রথম তো বেশ ঝামেলা করে ছিলো কিন্তু আবিরের জেদের কাছে হেরে বিয়েতে রাজি হয়।সেদিন আবির জেদ দেখাতে পারলো আর আমার কঠিন মুহূর্তে পারলো না?

আবির যদি এতই ভালো হতো তবে যোগাযোগ কেনো রাখলো না?

যাই হোক পাস্ট ইজ পাস্ট।তবে আপনাদের কাউকেই আমি ক্ষমা করবো না।নাও গেইট লস্ট।”

আবির আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না প্রহেলিকাকে না নিয়েই চলে গেলো।প্রহেলিকা ও পিছে পিছে গেলো।এত কিছুর মাঝে অবাক ব্যাপার হলো সবাই আসলেও চাঁদের মা আসেন নি।

চাঁদ মাথা দুহাত দিয়ে চেপে নিঁচু করে বসে আছে।জাহানারা বেগম চাঁদের পাশে গিয়ে বসে।আস্তে আস্তে সবাই সোফার সিট দখল করে বসে।

জাহানারা বেগম চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের চোখের জলটা মুছে বলে,

–“আমি কখনো ভাবতি পারি নি তুই চাঁদ শক্ত খোলশের পিছে এক ভাঙা মানুষ।আমি কেনো বলছি আমরা কেউ ই এমন ধারনা করতে পারি নি।একটা মানুষ এতটা কষ্ট পেতে পারে কখনোই ভাবি নি।এতটা কষ্ট তুই কীভাবে সহ্য করলি চাঁদ?আর যে কষ্ট পিছে ফেলে এত দূর আসলি সে কষ্টই আবার তোর উপর হানা দিলো।হায়রে ভাগ্য।

চাঁদ মাথা উঠিয়ে তার সামনে বসে থাকা প্রত্যেক টা মানুষের দিকে চাইলো।তারপর তার পাশে বসা তেজের দিকে তাকালও তেজ তার দিকেই তাকিয়ে আছে করুণ ভাবে।চাঁদ নিজের আর তেজের হাতের বাধঁন টার দিকে চাইল।নিশ্চুপে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু এটা কি আর আবিরের মতন প্রেমিক যে এত সহজে ছুটবে? তেজ দ্বিগুণ শক্ত করে চাঁদের হাতটা চেঁপে ধরলো।চাঁদ আর জোড় করলো না হাতটা ছাড়ানোর। তার যে এখন বড্ড শক্ত একটা হাতের প্রয়োজন।চাঁদ আর বৃথা চেষ্টা না করে জাহানারা বেগমের দিকে চাইল।বিষাদময় একটা হাসি দিয়ে বলল,

–“মাম আজ একটা গান মনে পড়ছে।গানের দু লাইন এমন ছিলো যে,

“বটবৃক্ষের তলে গেলাম ছায়া পাইবার আশে,,
ডাল ভাঙিয়া রৌদ্র উঠে আপন ভাগ্য দোষে।”

আমার দশা হলো এই।ছায়া মানে শান্তি পাবার জন্য ছুটে এলাম এতদূর কিন্তু ভাগ্য দোষে শান্তি তো পেলাম না বরং অশান্তি দ্বিগুণ করে ফিরে এলো।

আমি আজও মানতে পারলাম না আমার আপন মানুষের দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা গুলো।সেগুলো সামলে উঠার আগে আবারও নতুন শব্দে ভেঙে গেলাম।

কাকে বিশ্বাস করবো?এত বছর যাদের আপন ভেবেছি তারাই বিশ্বাসের মর্যাদা দিলো না।আর কাকে বিশ্বাস করবো আমি? বলবে আমায় কোথায় গেলে আমার শান্তি মিলবে?”

সবাই চুপ করে আছে কেউ কোনো কথা বলছে না।তারাও নির্বাক একটা মেয়ের এত কষ্ট দেখে।

জাহানারা বেগম পরম মমতায় চাঁদের মাথাটা বুকে চেপে ধরলেন।চাঁদও শক্ত করে জাপটে ধরলো জাহানারা বেগমকে।আজ এমন একটা আশ্রয়ের খুব দরকার তার।

তেজ এখনও চাঁদের হাতটা ধরে চাঁদের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। তার প্রেয়সীর ভাগ্য সে মানতে পারছে না।তবে তেজ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো চাঁদের জীবনে যতটা কষ্ট পেয়েছে তার দ্বিগুণ সুখ ফিরিয়ে দিবে।

____________

মাঝে কেটে গেল দুমাস।চাঁদ ঐ ঘটনার পর আবারও বেশ ভেঙে পড়েছিলো কিন্তু তেজ ভেঙে যেতে দেয় নি চাঁদকে।

প্রতিদিন রাতে চাঁদকে ঘুরতে নিয়ে যেতো।প্রথম প্রথম চাঁদ বেশ আপত্তি জানালেও সবার জোড়াজুড়িতে যেতে হতো।

এখন এটা তার অভ্যাস হয়ে গেছে। তেজের সাথে এখন নিজ ইচ্ছায় যায় ঘুরতে।একটা সজীবতা জেগে উঠেছে চাঁদের মাঝে।আবার চাঁদ নতুন একটা জবও নিয়েছে পুরোনো টা ছেড়ে।তাও ভালো মানের বেতন আর উচ্চপদে।অনার্সের পার্ট চুকিয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে সে।

শুনেছে রায়হান বিদেশ চলে গেছে। চাঁদের বদলে সবাই বেশ খুশি।এর মাঝে আরেকটা চাঞ্চল্যকর খবর উঠে আসে।নীল আর পুষ্প দুজন দুজনকে ভালোবাসে।

দিন গুলো বেশ কাটছে সবার।সবাই চাঁদকে সাপোর্ট করছে।প্রতিদিনের মতন আজও চাঁদ আর তেজ তৈরী হচ্ছে বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার সময়। এর মাঝেই হাজির হয়,,,,

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here