#সমর্পণ,ষষ্ঠ পর্ব
#মুক্তা_রায়
– জানি না কী অবস্থায় ওকে পাবি তুই।ও আমাদের মধ্যে আছে তো?
কেঁদে ফেলেন বসুধাদেবী।মাকে জড়িয়ে ধরে বাপ্পা।
– না মা, ওকথা বল না।আমার অপুর কিচ্ছু হবে না।
মরিয়া গলা বাপ্পার।একটা মেয়ে তার জীবনে এসে সেটাকে এক্কেবারে ওলোটপালোট করে দিয়ে গেছে।ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তার ভেতরের পুরুষকারের অহংকার।ওর একটা উষ্ণ চিঠি, অভিমানী কথা বাপ্পার বুকের ভেতরের ঔদাসীন্যের হিমশৈল্যকে ওর পায়ের ওপর এনে ফেলতে পারতো।হাসপাতাল থেকে ফিরে ওর ফোনের অপেক্ষা করত।ও তাদের বাড়ি আসার পর আরও আরও অপেক্ষা।মা কথা বলার পর যদি ও একটু ধরে।জানে ও মায়ের আশেপাশেই আছে।অথচ সে নিজে কোনদিন ‘ওকে দাও’ বলে মাকে বলতে পারেনি।তার এই দ্বিধা, দুর্বলতা, ঔদাসীন্যের শিকার মেয়েটা।কাঁদতে কাঁদতে দাদাকে বলেছিল বাপ্পা,’তুই কেন এত দুর্বল দাদা?’ অথচ বাপ্পা নিজে প্রমাণ করল সে দাদার চেয়েও অনেক অনেক বেশি দুর্বল।দাদা জীবনে পেয়েছিল নুড়িপাথর, আর সে পেয়েছে মুক্তো। © মুক্তা রায়
দুদিন ধরে সমানে অপুকে খুঁজছে বাপ্পা।ফিরছে হতাশ হয়ে।নিজের ঘর ছেড়ে থাকে সেই ছোট্ট ঘরখানায় যেখানে অপুকে নিয়ে দুরাত ছিল।যে ঘরে পরেও থাকতো অপু।অপুর জিনিসপত্র ছড়ানো ছেঁটানো ঘরটা জুড়ে।অপুর স্যুটকেসটা খুলে ওর জিনিসপত্রগুলো নাড়েচাড়ে।হাতে পায় একটা সিঁদুরের কৌটো।অপুর জামাকাপড়গুলো বুকে চেপে অপুকে পাবার চেষ্টা করে।অপু–অপু , দেখা দাও আমায়।দুটো বছর ধরে নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে পারছি না আমি আর।আমার প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞাকে হারিয়ে দিয়েছে আমার প্রেম।আমি যে পুরুষত্ব হারিয়ে ক্লীব হয়ে গেছি।ফুলের মতো একটা মেয়েকে আমি নষ্ট করেছি!ওকে মরার রাস্তা দেখিয়েছি!ঘৃণা-প্রতিহিংসা আমায় অন্ধ করেছিল।এই ঘর আমার বাসরঘর।অপুর চোখেমুখে কী পরিতৃপ্তিই না ছিল!অপুর শরীর তাকে কামনা করবে এই ধ্রুবসত্য টের পেয়ে ওকে চরম আঘাত দেয় ওর পরম আনন্দঘন মূহুর্তে।ফল কী হল?অপুর সাথে সাথে নিজেকেও ঠকালো বাপ্পা।প্রতি রাতে অপুকে পেতে চেয়েছে সে নিজে।
মাথার ঠিক ছিল না আসলে বাপ্পার।সব মেয়ের মধ্যে সঞ্চিতাকে দেখতো।দাদার হয়ে বোঝাতে গিয়েছিল সঞ্চিতাকে।বসার ঘরে বসেছিল বাপ্পা, একটু পরে এল সঞ্চিতা।চা সাধলো।বাপ্পা সবিনয়ে না করেছিল।আসছি বলে উঠে গেল।যাবার আগে বলল একটা শর্ত যদি পূরণ করে বাপ্পা তবে ও দাদার কথা চিন্তা করবে।কথা শুনে প্রাণে জল এল বাপ্পার।একটু পরে ফিরে এল সঞ্চিতা।শর্তের কথাটা বলল।শান্ত-ধীর গলায় বাপ্পা জবাব দিয়েছিল,’এ অসম্ভব।বৌদি আমার কাছে মায়ের মতো।’উত্তরে জামাটা টান মেরে খুলে ফেলল সঞ্চিতা,’ দেখো,আমাকে তোমার মা মনে হচ্ছে কিনা?তোমার দাদার সাথে রিলেশন করার সময় তোমার কথা ভাবতাম কেবল।’ স্থির-অবিচল গলায় বাপ্পা উত্তর দিয়েছিল,’ তোমাকে আমার মাই মনে হচ্ছে বৌদি।সন্তান জন্মের সময় মা থাকেন নগ্ন।আমার বৌদিকে আমি মা হিসেবেই দেখি।এখনো দেখছি।তোমার ওই গর্ভস্থ সন্তান আমি।বাকী রইল নগ্ন নারীদেহ?সে আমি ডিসেকশন টেবিলে প্রচুর নাড়াচাড়া করি।
তারপরই একের পর এক ঘটনা ঘটে গেল।দাদাকে রিল্যাক্সড্ থাকতে বলে কলকাতার থেকেই দিল্লি ফিরে গিয়েছিল বাপ্পা।এর দিন তিনেকের মধ্যে সঞ্চিতার ফোন পায়। © মুক্তা রায়
– আমি অভিকে বলেছি ওর সন্তানকে জন্মের আগেই আমি ওপরে পাঠিয়েছি।খুব বাপ হওয়ার ইচ্ছে ছিল না ওর?মেয়েলী পুরুষ আমি দুচক্ষে দেখতে পারি না-
কথাটা শুনে গুম মেরে যায় বাপ্পা।কেন তারা দুভাই দুরকমের হল?কেন দাদা আকর্ষণীয়, ড্যাশিং, পুরুষালী হল না?কেন ও এত নম্র-ভীরু?কেন কেন কেন?এর দিন দশেক পরেই ফোন পেয়ে ফ্লাইটে ছুটে গিয়েছিল বাগডোগরা।সেখান থেকে রায়গঞ্জের পথটুকু যেন ফুরোয় না।দাদাকে গিয়ে আর পায়নি।শুধু দাদার নিথর দেহটা জড়িয়ে ধরেছিল বুকের মধ্যে।পোস্টমর্টেম করা।অ্যানাটমির সেরা ছাত্র সুনন্দ চৌধুরী জানে কোথায় কোথায় দাদার ছুরি চালিয়েছে ডাক্তার।কিন্তু কোন ডাক্তার কী ধরতে পেরেছে দাদার বুকের কষ্টটা?
সেই সঞ্চিতাকে বাপ্পা দেখেছিল দিল্লির এক পার্টিতে মাস দেড়েক আগে।সাধারণত পার্টিতে কমই যায়।টানা মেন্টাল প্রেশার বা ভীষণ কাজের চাপ গেলে রিল্যাক্সেশনের জন্য আর্টগ্যালারি, সিনেমা বা থিয়েটারে যেমন যায় আবার ডিস্কো, নাইটক্লাবেও যায়।জিম তো কম্পালসারি।তবে অপু তার জীবনে আসার পর কোথাও গিয়ে শান্তি পায় না।হাসপাতাল ছাড়া বাকী সময়টা কাটায় নিজের ফ্ল্যাটে।সে যখন লাস্ট ইয়ারে দিম্মাও চোখ বুজলেন।নাতির মৃত্যুর পরই অসুস্থ হয়েছিলেন ভীষণ।ঘুমের মাঝেই চলে গেলেন।দাদুর পুরো প্রপার্টি মায়ের।মাই কিনে দিলেন দিল্লির ফ্ল্যাটটা তাকে।আগে পেয়িংগেস্ট থাকতো।ফ্ল্যাটটার বৈশিষ্ট্য সাথে লাগোয়া একটুকরো ছাদ।ইচ্ছে করলে বাগান করা যায়।মনে মনে অপুদের বাড়ির বাগানটা ওই ছাদে এনে লাগিয়েছে।সেখানে দাঁড়িয়ে অপু।দৌড়ে সামনে গিয়ে দেখে সব দৃষ্টিভ্রম।কিচ্ছু আর ভালো লাগে না।ফ্ল্যাট নিয়েছে, কিন্তু সাজায়নি।ঘরের যে কোন টানই নেই।সুব্রত তার কলিগ, গাইনিকলজিস্ট।ওর পাল্লায় পড়ে গিয়েছিল ডঃ শর্মার ম্যারেজ অ্যানিভার্সারিতে।ইচ্ছে ছিল সরি বলে কাটানোর।কিন্তু পারলো না।সুব্রতটা রাগ করে।
– সুনন্দ, তুই এত আনসোশ্যাল হয়ে যাচ্ছিস কেন?তুই ছিলি আমাদের পার্টির প্রাণ-মেয়েদের ঘায়েল করার প্রধান অস্ত্র।আজ যেতেই হবে।এক ডাঁটিয়ালকে ঘায়েল করতে হবে তোর।ভদ্রমহিলা স্যারকে বেশ ঘোল খাওয়াচ্ছেন। © মুক্তা রায়
স্যার হলেন ডঃ শর্মা।তাদের প্রফেসর।যাঁর ম্যারেজ অ্যানিভার্সারিতে তাদের নিমন্ত্রণ।
– ওসব ভালো লাগে না আমার।
মৃদু আপত্তি জানিয়েছিল বাপ্পা।
– এ যে দেখি ভূতের মুখে রামনাম!নাকি বেড়াল বলে মাছ খাবো না, কাশী যাব-
লঘু সুরে ঠাট্টা করেছিল সুব্রত আর ওর বউ টুম্পা।ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে থাকে বাপ্পা।তার বিয়ের খবরেও অপু চুপ!কী করবে বুঝতে পারছে না বাপ্পা।এদিকে মিথ্যের পর মিথ্যে বিয়ের গল্প জুড়তেও খারাপ লাগে।
যথারীতি তিনজনে সেজেগুঁজে গিয়েছিল ডঃ শর্মার বাড়ি।বিশাল বাংলো তাঁর।আলোয় হাসিতে ঝলমল করছিল।সুব্রত বলল-
– এত হাসি-আলোর নীচে চাপা পড়ে আছে ভাবীজীর দীর্ঘশ্বাস আর চোখের জল।ডঃ শর্মা এক সুন্দরী তরুণীর প্রেমে পড়েছেন।ভদ্রমহিলা ডঃ শর্মার পেশেন্ট।বেশিমাসে অ্যাবরশন করার জন্য মিসেস সেনগুপ্টার ইউট্রাসের ক্ষতি হয়েছে।কাজটাও তাড়াহুড়ো করে ঠিকমতো হয়নি।এদিকে ওনার স্বামীরও কিছু ডিফেক্ট আছে।নীট ফল শূন্য।ইস্যুলেস দম্পতি।প্রচুর পয়সার মালিক হয়েও অসুখী।ভদ্রমহিলা ক্ষেপেছেন বাচ্চা বাচ্চা করে।তার ওপর স্বামী ওনাকে স্যাটিসফাই করতে পারেন না ঠিকমতো।এখন নজর স্যারের ওপর।স্যারের তো বয়স বেশি নয়, চেহারাটাও বেশ।
– তার মানে ভদ্রমহিলার যে বাচ্চাটি এসেছিল সেটা ওনার স্বামীর নয়-
টুম্পা মন্তব্য করে।
– অফকোর্স।
– তুমি বাবা সাবধানে থেকো।তুমি যা ঢলবে সুন্দরী মেয়েমানুষ দেখে!ভয় লাগছে আমার-
– কত সুন্দরীকে আমার দেখতে হয় সারাদিন, জানো?
বউয়ের কথায় হেসে ফেলে সুব্রত।হাসছে বাপ্পাও।
– ওরা তোমার পেশেন্ট।মা-বোন তোমার-
– মিসেস সেনগুপ্টাও স্যারের পেশেন্টই ছিলেন।তোমার কপালে দুঃখ আছে টুম্পা।
হাসতে হাসতে মজা করে বাপ্পা।
– হুঁ , তোর কী?ব্যাচেলর মানুষ, দিব্যি আছিস-
সুব্রতর কথা শুনে মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছিল বাপ্পার।আমি ব্যাচেলর নই-আমি কারও স্বামী। © মুক্তা রায়
পার্টির বিশেষ অতিথির সাথে পরিচয় করালেন
ডঃ শর্মা।মিসেস সঞ্চিতা সেনগুপ্টা।দাদা যাবার পর সেই প্রথম সঞ্চিতাকে দেখলো বাপ্পা।দাদার বিষখাওয়া মুখটা মনে পড়ল।একটার পর একটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠে চলে যাচ্ছিল।অথচ দাদার মৃত্যুর জন্য যে দায়ী তার কোন শাস্তিই হল না!দু’পেগ পেটে পড়েছিল বাপ্পার।ঘাড়ে একটা নরম হাতের স্পর্শ পায়।ঘুরেই মিষ্টি হাসে।
– হাই হ্যান্ডসাম, স্লিম হয়ে আরও কমবয়স্ক,অ্যাট্রাক্টিভ হয়েছ!লুকিং লাইক দেবদাস।ডান্সে আমায় সঙ্গ দেবে?
– গর্জাস লেডির সঙ্গ সবাই চায়।তাই না?
আরও হাসে বাপ্পা।হাতের গ্লাসটা খালি করে।সুন্দরীর কোমর ধরে।অপুর কথা মনে পড়ছে।অপু ট্রেনিংয়ে গেছে।
– কী ভাবছো নটি বয়?কোন মেয়ের কথা?
– তোমার কথা।বাইরে গিয়ে আরও ধারালো হয়েছো-
– আর তুমি বাইরে না গিয়েও ধারালো!বিয়ে করেছ?
– ইয়েট টু ডু-
– স্টিল নাও ব্যাচেলর?
-গেস মী-
বাপ্পার মুখে রহস্য হাসি।
দিন সাতেক পর সঞ্চিতা বাপ্পাকে জানায় বাপ্পাই সঞ্চিতার প্রথম প্রেম।ইন ফ্যাক্ট বাপ্পার জন্যই বাপ্পার দাদার সাথে প্রেম করেছে সঞ্চিতা।বাপ্পা যদি চায়
মিঃ সেনগুপ্টাকে ডিভোর্স দিয়ে ও বাপ্পাকে বিয়ে করবে।বাপ্পা বলেছিল তবে ডঃ শর্মার কী হবে।শুনে সঞ্চিতার হাসি যেন থামে না।
এর দু’তিনদিন পর সুব্রতর কাছে শুনলো ডঃশর্মার সাথে মিসেস সেনগুপ্টার বলে কাট্টি হয়ে গেছে।মিসেস সেনগুপ্টা অন্য পুরুষে মজেছেন।দিন সাতেক পর অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে মিসেস সেনগুপ্টা
শয়নে-স্বপনে সাথে জাগরণেও ডঃ সুমন্ত চৌধুরীকেই শুধু দেখেন।
– তোমাকে আমার কতদিনের পাবার ইচ্ছে।কোনদিন পেলাম না।তুমি আমাকে সন্তান দিতে পারবে?
– পারবো।আজ নয়।দু’সপ্তাহ পরে।ফ্ল্যাটটা একটু গুছোই-
– ও কাজটা আমিও করতে পারি-
– জানি,তবুও-
ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর দিয়ে নিজের অগোছালো ফ্ল্যাটটা ছবির মতো করে গুছিয়েছিল বাপ্পা।কিচেন, ডাইনিং, বেডরুম দুটোয় লেগেছিল প্রেম-বিশ্বাস- জীবনের রং।শুধু একটা ঘর ছিল বন্ধ। © মুক্তা রায়
খুব সেজে এসেছিল সঞ্চিতা।আনন্দে ডগমগ।ওর এতদিনের ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে।নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়েছিল বাপ্পাও।সঞ্চিতা এসেই বাপ্পার কাছ ঘেঁষতে চাইল।বাপ্পা হেসে সঞ্চিতাকে কোল্ডড্রিংক দেয়।সঞ্চিতা বলে,’ রাতে ছাড়াছাড়ি নেই।হার্ড কিছু লাগবে।’ বাপ্পার মুখে মোহন হাসি।
রাত আটটা হবে।ছাদের ছাতার তলায় বসেছিল দুজনেই।বাপ্পার কাঁধে সঞ্চিতার মাথা।সঞ্চিতা দুই পেগ টেনেছে।বাপ্পাও এক পেগ টেনে ওকে সঙ্গ দিয়েছে।বাপ্পাকে জড়িয়ে ধরে আছে সঞ্চিতা।
– চল,যাওয়া যাক ঘরে-
– চল-
উচ্ছ্বল গলা সঞ্চিতার।
বাপ্পা বন্ধ দরজা খোলে।অন্ধকার একটা ঘর।একটা দেওয়াল জুড়ে জ্বলজ্বল করছে অভির ছবি, সাথে সঞ্চিতা।অভি আর সঞ্চিতার ছবি,অভির সুখের ও ভালোবাসার মূহুর্ত্তের ছবি যা ওর ভাই ক্যামেরাবন্দী
করেছিল পিকনিকে আর দুর্গাপূজোয়।তারপরই অভির সাদাকাপড়ে মোড়ানো মৃতদেহের ছবি।দাদার ক্রিয়াকাজ করছে বাপ্পা,সেই ছবিটা।বাপ্পাই তুলিয়ে রেখেছিল সুধাইকে দিয়ে, সুযোগ পেলে সঞ্চিতাকে দেখাবে বলে।একদম শেষে একটা চিতার ছবি,অভির চিতা।বাপ্পা নিজে তুলেছিল।প্রজেক্টর বন্ধ হল।ঘরে আলো জ্বলে উঠল।একদম সাদা একটা ঘর।নিরাভরণ বৈধব্যের প্রতিচ্ছবি যেন আসবাবহীন ওই ঘরটা।প্রজেক্টর চালাচ্ছিল সুব্রত।পাশে বসা ডঃ শর্মা আর
মিঃ সেনগুপ্ত।
কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সঞ্চিতা,’ আমি ভুল করেছি অভি।তুমি আমায় ক্ষমা কর।’ মিসেস সেনগুপ্টা নয়, অভির স্ত্রী যেন কাঁদছে।বাকীরা পাথরপ্রতিমা।বাপ্পা খালি দাদার ফটোতে পরানোর জন্য একটা রজনীগন্ধার মালা সঞ্চিতার হাতে দেয়।ওটা ফটোয় পরিয়ে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সঞ্চিতা।বাপ্পা সঞ্চিতার পিঠে হাত দিয়ে বলে-
– বৌদি,আর আমার কোন কষ্ট নেই।তোমার ফেলা চোখের জল বুঝিয়ে দিয়েছে দাদার জন্য তোমার সফ্ট কর্নার ছিলই।আর তুমি কাউকে ঠকিও না।মিঃ সেনগুপ্ত তোমায় ভালোবাসেন।উনি ভীষণ লোনলি।আর ভুল কর না তুমি।এ জীবনে সব পাওয়া যায়, শুধু সত্যিকারের ভালোবাসা-
কথাটা অসমাপ্ত রেখেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় বাপ্পা।সোজা নিজের বেডরুমে।সব ভুলে যায়-শুধু দুটি করুণ চোখ আর কাজের ফাঁকে তাকে দেখে মিষ্টি এক টুকরো হাসিই কেবল মনে পড়ছে।টিকিটটাও কেটে ক্যানসেল করেছে সঞ্চিতার সাথে শেষ বোঝাপড়ার জন্য।দাদার প্রতি কর্তব্য আজ তার শেষ।কিন্তু অপু?দিল্লিতে আর ভালো লাগছে না।বাপ্পার মনপ্রাণ কবেই ছুটে গেছে অপুর কাছে।ফোন করার চেষ্টা করেও পারেনি করতে।অপরিসীম কুণ্ঠা!দুহাতে বুকের মধ্যে চেপে ধরে অপুর ফোটটা।আবেগে কাঁপছে।আমি যত শিগগির সম্ভব তোমার কাছে আসবো অপু।সামনে কটা কাজ আছে-সেটা মিটিয়েই বড় ছুটি নিয়ে তোমায় নিতে আসবো। © মুক্তা রায়
অপুর ঘরে এসে ঢোকে সঞ্চিতা।সাথে সুব্রত আর টুম্পা।
– তুমি আমায় ক্ষমা কর বাপ্পা-
– যখন থেকে আমার অপুকে ভালোবেসেছি কারও ওপর বিদ্বেষ নেই আমার।যা করেছি দাদার প্রতি আমার শেষ শ্রদ্ধা-
রুদ্ধ গলা বাপ্পার।
– কে অপু?
কান্নাচাপা গলায় জিজ্ঞেস করে সঞ্চিতা।
– আমার স্ত্রী।মায়ের কাছে রয়েছে-
– তুই বিয়ে করেছিস সুমন্ত?
অবাক হয়ে গেছে সুব্রতরা।
– হ্যাঁ , দুবছর প্রায় হল-
মৃদুগলায় জবাব দেয় বাপ্পা।ফটোটা বাপ্পার হাত থেকে নেয় সঞ্চিতা।দেখছে।
– এমন মেয়ে তোমার পছন্দ?এত সজীব-সতেজ!কী কোমল সুন্দর মুখখানা!একদম আদর্শ বাঙালি বউ-
– ওকে কবে আনছিস?
প্রশ্ন করে সুব্রত।
– পূজোয় যাচ্ছি।তখন-
– অভির সন্তানকে মারার ফল পাচ্ছি আমি।আর কোনদিন মা হব না।তোমাদের বাচ্চাকে একটু আদর করতে দেবে?
– তোমায় বৌদি হিসেবে দেখে আসছি চিরকাল।বড়মা হিসেবে অবশ্যই আদর করবে-
অভির একটা ফটো নিয়ে চলে যায় সঞ্চিতা।
মিঃ সেনগুপ্ত বাপ্পার হাতটা ধরে কেঁদে ফেলেন যাবার সময়,’ তুমি আমাকে তোমার দাদা মনে কর ভাই-‘
ঘটনার চারদিন পর মায়ের ফোনটা পেয়েছিল বাপ্পা।চারটে দুঃসহ দিনের শেষে দুঃসহতম একটা খবর শ্বাসটুকু যেন কেড়ে নিতে চেয়েছিল।
চলবে