সর্বনাশিনী,০৯,১০

0
1119

#সর্বনাশিনী,০৯,১০
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

দিলশাদ ছাড়লো না আরো কাছে টেনে নিলো। এতটা কাছে যে একটা সুতো পরিমাণ জায়গায় দু’জনের ঠোঁটের মাঝে…. যে একটা চিত্র। ভালোবাসায় মগ্ন দুটি নর-নারী। ঠিক সেই সময় বড়সর আওয়াজ করে দরজা খুলে গেলো। আর দেখলো…. মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ছল ছল করছে তার মেকাপে ঢাকা চোখ জোড়া।

” এখানে কি হচ্ছে দিলশাদ?”

ধরা গলায় বলল মারিয়া। কিন্তু দিলশাদের কোনো ভাবাবেগ পরিবর্তন হলো না। তা দেখে মারিয়া আরো ভরকে গেলো। এদিকে স্নেহা দিলশাদের মুষ্টিবদ্ধ হালকা হতেই দূরে সরে গেলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

” আমি আসচ্ছি!”

দিলশাদ প্রতি উত্তরে কিছু বলল না। স্নেহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু। ভাবতে লাগলো,

“মেয়েটির সব কিছু কেন তার সাথে মিলে যায়?”

তার ভাবনার ফোঁড়ন পড়লো শরীরের মৃদু কম্পনে,

” দিলশাদ এই মেয়েটি আবার কে? তুমি আবার নতুন করে ডেটিং করছো? আমার কি হবে দিলশাদ?”

দিলশাদ ভ্রু কুচকে বলল,

” গো টু হেল!”

মারিয়ে ফুপিয়ে উঠলো,

” দিলশাদ? আমার ভালোবাসা তোমার চোখে পরে না? কখন সেহের কখনো স্নেহা আর এখন অন্য কেউ?”

দিলশাদ উত্তর দিলো না। মারিয়া আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে চেচিয়ে বলল,

” আমাকে কেনো ভালোবাসো না তুমি?”

দিলশাদ আমরিন তার ডীপ ব্লু চোখ জোড়ায় তাকালো। মারিয়া ভয়ে দু কদম পিছিয়ে পড়লো। দিলশাদ আমরিন তার ঝংকার তোলা গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” কারণ তুমি স্নেহা না!”

তারপর ধমকে উঠে বলল,

” গেট আউট! ”

মারিয়ার অপমানিত হলো। মনের দুঃখে পা মারিয়ে স্থান ত্যাগ করলো কাঁদতে কাঁদতে। এক দৌঁড়ে নিচে নেমে এলো সে। ঠিক তখনি দরজার কাছে আকৃতাকে জুতো পরতে দেখে তেলে বেগুনে ভাজা ভাজা হয়ে আকৃতার কাছে গেলো। বলল,

” তোমার মোটিভ আমি ঠিক বুঝতে পারছি মিস।”

মারিয়ার গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকালো স্নেহা,

” এক্সকিউজ মি? ”

মারিয়া দু হাত বুকের উপর আড়াআড়ি ভাবে বেঁধে দাঁড়ালো। একজন সেলেব্রিটি হিসেবে সবসময় নিজেকে মেকাপের আড়ালে লুকিয়ে রাখে। ওয়েস্টার্ন ড্রেস আর হাই হিলের জন্য মেয়েটিকে আরো দু তিন ইঞ্চি লম্বা করে তুলেছে। এই মেয়েটি তার বাচ্চার হত্যাকারী। শত্রুর মধ্যে দ্বিতীয় নাম্বারে আছে সে। স্নেহার ভাবনার মাঝেই মারিয়া বলল,

” এমন ইনোসেন্ট মার্কা লুকে ধনী ব্যক্তিদের পটলাতে সক্ষম তাই না?”

স্নেহা বিরক্তি কন্ঠে বলল,

” কি আজেবাজে বকছেন?”

মারিয়া বলল,

” তোদের মতো দু টাকার এমপ্লয়ের জীবন নরক বানাতে আমার দু’ মিনিট সময় লাগবে না! রঙ ঢং করতে হলে অন্য কোথাও গিয়ে কর। আমার দিলশাদ থেকে দূরে থাক।”

স্নেহা হাসলো। বলল,

” আমি যতটুকু জানি, দিলশাদ স্যার তো সেহেরের। আপনার কিভাবে হলো মিস মারিয়া? আর রইলো আমার কথা? আমি আপনার মতো এত কুরুচিপূর্ণ মানুষ নই, যে এক বিবাহিত লোকের পিছনে লাগবো। ও টা আমার স্টেটাস নয় বরং আপনার মতো বি ক্লাস অ্যাক্টর দ্বারাই সম্ভব। ”

মারিয়া দাঁত কিড়মিড় করে থাপড় মারার জন্য হাত তুললো,

” তোকেতো আমি….!”

হাওয়ার মাঝেই হাতটি থেমে গেলো মারিয়ার। মারিয়া আর স্নেহা দুজনেই খানিক চমকালো। পিছন থেকে ভেসে এলো দিলশাদের কন্ঠ। বলল,

” তুমি কি মরতে চাইছো?”

মারিয়া, স্নেহা দুজনেই বুঝলো না কথাটি কাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো। দুজনেই প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকালো। দিলশাদ মারিয়ার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে বলল,

” মারিয়া সে সরি!”

মারিয়া অবাক হয়ে বলল,

” আমি সরি কেন বলবো? বলবো না সরি, দু টাকার মেয়েকে তো মোটেও না!”

দিলশাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

” আমার আর কিছু বলার নেই।”

মারিয়া আবার কিছু বলবে তার আগেই স্নেহা বলে উঠলো,

” মিস মারিয়া… আশা করছি খুব দ্রুত আপনার অ্যাটিটিউড চেঞ্জ হবে।আসচ্ছি!”

বলেই বাঁকা হেসে চলে গেলো সে। দিলশাদ স্নেহা যেতেই বলল,

” তুমি জানো না কার সাথে এবার পাঙ্গা নিয়েছো! এর পর যা হবে, তার জন্য তুমিই দায়ী থাকবে!”

বলে দিলশাদ উপরের দিকে পা বাড়ালো। মারিয়া শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। মনে মনে ভাবলো,

“, কে এই মেয়ে?”

————–

হসপিটালের করিডোরে তেমন কেউ নেই বললেই চলে। রাতের সাথে সাথে ভীড় কমে আসে, শূন্য হয়। আধার আলোয় ভয়ংকর গা ছমছম ভাব। তবে মাঝে মাঝে নার্স কিংবা ডাক্তারদের একটি দল আনা গোনা করে এই ১০ তলায়। এখানে শুধু ভি আই পি ভাগ রোগীদের
জন্য কেবিন করা হয়েছে। আপাতত দু’টো কেবিনে দুটো রোগী। আর এই দুটি কেবিনের বাহিরে দু’জন বডিগার্ড মাথা উঁচু করে পাহাড়া দিতে ব্যস্ত। একটি ভর্তি আছে দিলশাদের মা বিন্দু আমরিন। আরেকটিতে একদিন আগেই ভর্তি করানো হয়েছে সেহেরকে৷ সেহেরের সাথে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি এখনো ভুলতে পারেনি সেহের অর্ধনগ্ন বিচ্ছিরি দেখতে লোকটি হলদে দাঁতের ভয়ানক হাসি এখনো তারা করে সেহেরকে। এই যে এখনো ঘুমের মাঝে সেহের স্বপ্ন দেখছে, লোকটি আপত্তিকর ভাবে তার বুকে, পেটে, ঠোঁটে স্পর্ষ করছে। এক পর্যায় সে প্যান্ট খুলতে নিচ্ছে, ঠিক তখনি সেহের চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যায়। তখন রাত গভীর হু হু করে বইছে শীতল ঠান্ডা বাতাস। কেবিনের মাঝে মৃদু আলো জ্বলছে। বেলকনির দরজাটা খোলা সাদা পর্দা ফর ফর করে উড়ছে। এক মুহূর্ত মনে হলো বেলকনিতে সাদা শাড়ি পড়ে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। বড় বড় লম্বা চুল গুলো বাতাসের তালে তালে উড়ে যাচ্ছে। সেহের তালুকদার ছোট থেকেই ছিলো ভিরু প্রকৃতির। ভুতের ভয় তার ছিল বহুত। ঠুস ঠাস বেহুশ হওয়ার মতো। আর এই গভীর রাতে ভুতুরে হসপিটালে একা একটি রুমে তার উপর এমন একটি ছায়া মুর্তি? সেহেরের হাড়কাঁপানো ভয়ে ধর ধর করে কাঁপতে শুরু করলো। কিছু মুহূর্তে থমথমে হয়ে উঠলো পরিবেশ। সেহের গলা ছাড়লো,

” ককক কে? কে ওখানে?”

অবয়বটি এবার যেন নড়ে উঠলো। হেঁটে এসে দাঁড়ালো বেলকনির দরজার সামনে। পর্দা উড়া আর মৃদু আলোতে সেহের একটি চেহেরা দেখতে পেলো। চেহারার মাঝে চাকুর দাগ। চাকু দিয়ে চামড়া উঠিয়ে ফেলেছে যেন কেউ। সেহের ভয়ে গুটিয়ে গেলো।

” ক ক কে তুমি?”

ঘর কাঁপালো একটি আওয়াজ ভেসে এলো তখন,

” দিদিভাই তোমার ছোট বোনকে ভুলে গেলে?”

সেহেরের ভয়ে এবার চিৎকারে উঠলো,

” মা মা মা, ভুত ভুত ভুত। ”

স্নেহা হেসে বলল,

“দিদি ভাই আমি ভুত না। আমি তোমার বোন স্নেহা!”

” নাহ্ নাহ্। স্নেহা মরে গেছে, মরে গেছে।”

” হে দিদিভাই তুইতো আমাকে মেরেছো, এই দেখো? আমার সুন্দর চেহারা-ও তুমি নষ্ট করে দিছো। কেন দিদি ভাই?”

সেহের বলল,
” আমি আমি কিছু করি নি। করি নি কিছু! প্লীজ চলে যাও। প্লীজ!’

স্নেহা বলল,
” আমার একা ভালো লাগে না দিদিভাই তুমি চলো আমার সাথে, এসো এসো, দিদি ভাই।”

বলেই হাত দুটি মেলে কাছে যেতে লাগলো স্নেহা। সেহের আর সইতে না পেরে ঘেমে নেয়ে একাকার হয় চোখ উল্টে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তার পরেই স্নেহা তার মুখোশ খুলে ফেললো। হেসে হেসে বলল,

” আমার চেহারা তো তুমিই নষ্ট করেছিলে, আর এই চেহারা দেখে এখন এত ভয়?”

ঠিক সেই মুহূর্তে কতগুলো পায়ের শব্দ ভেসে আসচ্ছে। স্নেহা সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলো অন্য সাইট দিয়ে। স্নেহা যেতেই উপস্থিত হলো কয়েক জন। একজন বলল,

” স্যার মেম হঠাৎ চিৎকার করে উঠছে আবারো।”

দিলশাদ মাথা নাড়লো। তার পিছন থেকে একটি সুদর্শন যুবক এসে দাঁড়ালো । বলল,

” আমার মনে হচ্ছে সেহেরের সেই ঘটনাটি খুব খাবে মস্তিষ্কে আঘাত করেছে। তাই এমন করছে।”

দিলশাদ একবার সেহের দিকে তাকিয়ে বরাবারের মতোই বলল,

” আরিয়ানা ওর চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন। তাই কর!”

আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে বলল,

” সেহেরকে তুই একটু-ও পছন্দ করিস না, তবে এত কেয়ার কেন করছিস?”

দিলশাদ হালকা শ্বাস ছেড়ে বলল,

” ও আমার মাকে বাঁচিয়ে ছিলো, তাই আমি চাই না এর কোনো ক্ষতি হোক। ”

আরিয়ান দিলশাদের কাঁধে হাত রেখে বলল,

” স্নেহাকে ভুলতে পারিস নি এখনো?”

দিলশাদ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না।

———-

রাজা-রানি সিরিয়ালের সুট চলছে। একটা ১৬ বছর বয়সের হারিয়ে যাওয়া রানির লিড রোলের ক্যারেক্টারে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছে মারিয়া। মেয়েটি সত্যি অনেক সুন্দর। ঠিক তেমনি সুন্দর তার অভিনয়। বোঝায় যায় না সে কখন অভিনয় আর কখন বাস্তবে কাজ করে চলে। আশেপাশে অনেক মানুষ ভীড় করে আছে। মারিয়ার ফ্যান ফলোয়ারের অভাব নেই। স্টুডিওতে প্রতিদিন ভীর করে মিডিয়া।

মারিয়া সুট শেষ করে এসে বসতেই। ডিরেক্টর হুড়মুড় করে এসে দাঁড়ালো। ডিরেক্টরের চোখে মুখে ভয়। কঁপাল জুরে ঘাম। এসেই বলল,

” সরি মিস মারিয়া। আপনি আর এই সিরিয়ালে থাকছেন না।”

মারিয়া এমন একটি কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো যেন। কিছু দূর থাকা রিপোর্টার-ও এমন একটি সংবাদ লুফে নিলো। এদিকে মারিয়ার চোখ মুখ শুকিয়ে গেল। ফিকে হেসে বললো,

” স্যার এসব কি বলছেন? মজা করছেন বুঝি?”

ডিরেক্টর বললেন,

” আ’ম সরি মিস আপনি আসতে পারেন…”

মারিয়ার চোখের কোনে জল টলমল করে উঠলো,

” স্যার এমন করবেন না? আমার এই রোল হারিয়ে গেলে আমার যে কোনো জায়গায় কাজ পেতে সমস্যা হবে।”

ডিরেক্টর বলল,

” আমি এ বিষয়ে কিছু করতে পারছি না। সরি। তবে হ্যাঁ তুমি খুব বড় কারো সাথেই হয়তো শত্রুতা করে বসেছো যার জন্যই তোমার এই সিরিয়ালে জায়গা নেই।”

মারিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। কে তার পিছনে লেগেছে? কেই বা তার এত বড় শত্রু? অনেক ভাবার পরেই মারিয়ার কিছু মনে পড়লো। বিড়বিড় করে বলল,

” আকৃতা শেখ?”

চলবে,
#সর্বনাশিনী
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
পর্ব-১০
কর্মের ফল সবাইকে ভোগ করতেই হবে। সেটা এই কালেই হোক বা পরকালে। একেই বলে কার্মা। যেমন বপন করবে? তেমনিতো পাবে? তাই নয় কি?? দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মারিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট মারিয়ার ধরি কি মরি অবস্থা দেখে এসব ভেবে যাচ্ছে। আজ এই নিয়ে ১০ বারের মতো মারিয়াকে মানা করে দিলো ডাইরেক্টর। গত এক সপ্তাহে মারিয়ার অবস্থা রাস্তার কুকুরের মতো হয়ে গেছে। এলোমেলো চুল আর কুঁচকানো কাপড়ে লো ক্লাসের মনে হচ্ছে। মারিয়া ডিরেক্টরের এবার পা চেপে ধরে বসলো,

” স্যার প্লিজ স্যার এমনটি করবেন না। এমনটি করবেন না স্যার। আমার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ হয়ে যাবে তাহলে।”

ডাইরেক্টরের মাথায় চুল নেই। যতটুকু আছে, পেঁকে গেছে। লোকটির ইয়া বড় পেট। চোখ দু’টি ভয়ানক লাল। এক দম কোনো হিংস্র পশুর মতো। ঠিক তেমন যেন এখনি গিলে ফেলবে মারিয়াকে। মারিয়ার বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। এমন তো নয়, অভিনয়ের এর চকমকে জগতে কারো সাথে বিছানায় যায় নি। তবে এই লোকটি বেশিই কুৎসিত। মারিয়ার ভাবার মাঝেই লোকটি ডিরেক্টর বলল,

” এই অভিনয় , ফভিনয় ছাড়ো, তোমার ধারা এসব আর হবে না। ”

তারপর খানিকটা ঝুঁকে এলো সে। মারিয়ার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,

” তার থেকে বরং আমার রক্ষিতা হয়ে থাকো। যখন ডাকবো, যেখানে ডাকবো চলে এসে। আমাকে তুমি খুশি করো আর আমি তোমাকে। টাকা পয়সার অভাব থাকবে না।”

এই বলেই লোকটি আরাম করে চেয়ারে হেলে বসে পড়লো। মারিয়ার চোখে পানি চলে এলো রাগে, দুঃখে।মারিয়ার অভিনয়ের জগতে পদার্পন হয় দিলশাদের মাধ্যমে। সেই দিলশাদের কাছে সাহায্য চেয়েও মারিয়া পায় নি। বিন্দুকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেও কোনো কাজ হয় নি। তাহলে কি তার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ? মারিয়া চোখের জল মুছে সুপ্তপর্ণে শ্বাস লুকিয়ে ফেললো। চোখের সামনে সব রাস্তাই যে বন্ধ। তাহলে কি এবার মারিয়া কারো রক্ষিতা হতে বাধ্য? মারিয়া রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। তারপর জবাব দিলো,

” জি স্যার আমি রাজি!”

দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখে বড্ড আফসোস করলো মারিয়ার এসিস্ট্যান্ট। আহ ভরতে লাগলো মনে মনে।

————-

সকালের মিষ্টি রোদ গুন গুন করে গান গাইছে। দোল খাচ্ছে এদিক ওদিক। ঠান্ডা দিনের মিষ্টি রোদের সুর মাতিয়ে তুলেছে রাস্তার ধারের পথচারীদের উপর। মেতে উঠেছে বড় বড় দালান আর যানবাহন। গাড়ি দুলছে গতির সাথে। দুলছে গাড়ির ভিতরে থাকা দুটো নরনারীর। বাহিরের প্রকৃতির অপরূপ সাজসজ্জা দেখতে ব্যস্ত একজন তো আরেকজন ব্যস্ত ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটির সাথে কথা কথোপকথন। স্নেহা আজ বসে আছে দিলশাদের পাশেই। লোকটির শরীরের ব্র্যান্ডেড পারফিউমের সুবাস গাড়ির ভেতরটি মাতিয়ে তুলেছে। স্নেহে কটাক্ষ চোখে তাকালো দিলশাদের দিকে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদিপ্ত দুটি গাড়ো নীল রঙ্গের চোখ, টিকালো নাক আর পাতলা ঠোঁট, চওড়া বুক। লম্বা এতটুকু যে দীর্ককায় শরীরে স্নেহা হারিয়ে যাবে। স্নেহা মনে মনে ভাবলো,

” এত টা সুদর্শন না হলেও পারতেন দিলশাদ।”

স্নেহার ভাবার মাঝেই দিলশাদ সশব্দে আঘাত করে বসলো গাড়ির জানালার কাচে। স্নেহা শিউরে উঠলো স্নেহা ধড়পড় করে উঠলো বুক। ভয় ভয় তাকালো দিলশাদের দিকে। লোকটি রাগে ফেঁটে যাচ্ছে। হাত থেকে পড়ছে টপটপ লাল রক্ত। চলতি গাড়ির ভিতরে বাহিরে কাচের ছড়াছড়ি। ড্রাইভার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক কসেছিলো। এদিকে দিলশাদের হঠাৎ রিয়াকশনে কেনো জানি স্নেহার বুকে ভিতর তীব্র ব্যথা অনুভব করলো। যদিও সে জানতো এম কিছুই হবার কথা। তবে রক্তাক্ত অবস্থায় দিলশাদকে দেখতে চায়নি সে। স্নেহার বিচলিত হয়ে দিলশাদকে বলল,

” মি. আমরিন এই কি করলেন? রক্ত পড়ছে তো।”

বলেই স্নেহা হাত ধরতে গেলে দিলশাদ থামিয়ে দেয়। এবং ঠান্ডা গলায় বলে,

” আমি ঠিক আছি মিস শেখ। চাচা গাড়ি ইউট্রাণ নিয়েন!”

ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে কথাটুকু বলেই দিলশাদ বাহিরে তাকালো। ফোনটি আবার বাম হাতে নিয়ে আবারো কাউকে ফোন দিলো। ওপাশ থেকেই কেউ ফোন তুলতেই দিলশাদ শক্ত কন্ঠে বলল,

” ফাহাদ খোঁজ লাগাও আমাদের প্রেজেন্টেশনকে মিশ্র গ্রুপের কাছে কিভাবে পৌঁছেছে। ১০০ কোটি টাকার ডিল এভাবে হাত ছাড়া কিভাবে হলো। এই ডিল আমাদের কোম্পানির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানোই তো?”

ওপাশ থেকে কি বলল , শোনা গেলো না। দিলশাদ ফোন রেখে দিলো। রাগে গজরাতে লাগলো শুধু। স্নেহা ডিল হাত ছাড়া হওয়াতে মনে মনে খুশি হলেও চুপসে গেলো ভয়ে। অজানা ভয়ে। দিলশাদের কাছে এত জলদি ধরা পড়তে চায় না সে। আগে বদলা নিতে চায়। বদলা। কিন্তু তাই বলে দিলশাদকে রক্তাক্ত করে প্রতিশোধ নিতে চায় না। এতে যে নিজের-ই মনের রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। স্নেহা বলল,

” মি. আমরিন আপনার হাত থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। হসপিটালে যেতে। ড্রাইভার চাচা আপনি সামনেই কোনো হসপিটালে নিয়ে যান। ”

দিলশাদ বলল,

” তার প্রয়োজন নেই মিস শেখ। আমি ঠিক আছি। অফিসে গিয়ে ফাস্টেড করিয়ে নিব। ডোন্ট ভরি।”

স্নেহার রাগ লাগলো বলল,

” আশ্চর্য লোক তো আপনি, দেখেছে এখনো হাতে কাচ লেগে আছে, হসপিটালে কি ড্রেসিং না করালে ইনফেকশন হতে পারে। এত হেলামি ঠিক না। আগে হসপিটালে চলুন!”

” মি. শেখ আমি ঠিক আছি আপনি অযথাই….! ”

কথাটুকু শেষ করতে পারলো না দিলশাদ। স্নেহা এক ধমক মেরে বলল,

” চুপ করুন তো সব সময় বেশি বুঝেন কেন? কিভাবেন নিজেকে হ্যাঁ? ২১ শতকের ভাঙ্গা চোরা রোবট? যে হাজার বাড়ি দিলেও প্যাচ প্যাচ শব্দ করেও কাজ করবে? একদম কথা বলবেন না। খবরদার না হয় খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম!”

দিলশাদ আকৃতা শেখের হঠাৎ ধমকে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। কোনো অজানা কারণেই চুপ করে গেলো। কিছু বলল না। শুধু এক দৃষ্টিতে চোখ দুটি ঘুর ঘুর করতে লাগলো স্নেহারমুখের আদল খানাতে। স্নেহা সেদিকে পাত্তা দিলো না। কঠোর কন্ঠে বলল,

” রুমাল আছে?”

দিলশাদ বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়লো হ্যাঁ বোধক। বলল,

” আছে!”

স্নেহা হাত বাড়িয়ে বলল,

” তো দিন!”

দিলশাদ বলল,,

” বের করতে হবে যে!”

স্নেহা হতাশার শ্বাস ছেড়ে বলল,

” তো কার অপেক্ষা করছেন? জলদি বের করুন।”

দিলশাদের মাথায় দুষ্টুমি খেলছে তখন। সে এক হাত দিয়ে অন্য হাত ধরে আছে। সে হাত উঠিয়ে অসহায় মুখ করলো,

” কিভাবে বের করি?”

স্নেহা উপরের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আল্লাহ! কোথা রেখেন বলেন বের করে দিচ্ছি। ”

দিলশাদ ডান পাশের পকেটে ইশারা করলো। স্নেহা কোনো কিছু না ভেবেই দিলাশাদের দিকে ঝুঁকে পড়লো। দিলশাদের শ্বাস প্রশ্বাস তখন পড়ছে স্নেহার মুখে। স্নেহার পূব পরিচিত একটা অনুভূতি শরীরের মাঝে দোলা দিয়ে গেলো। এদিকে স্নেহা কাছে আস্তেই দিলশাদে বুকের ভিতর বুডুম বুডুম শব্দ হতে শুরু করেছে। দিলশাদে নাকে এসে লাগছে পরিচিত মানুষের সেই সুবাস। দিলশা তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিকে। স্নেহার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে তার গলা শুকিয়ে গেছে, সাত দরিয়ার পানি এক ঢুকে পান করলেও কি এই পিপাসা মিটবে?? স্নেহা চোখ বুঝে নিজেকে ইচ্ছা মতো ধমকালো। তারপর হাতে পকেট থেকে রুমাল বের করে নিয়ে সরে এলো। দিলশাদের শক্ত পোক্ত হাতটি টেনে নিলো নিজের হাতে। ধীরে কাচের টুকরো গুলো সরিয়ে নিতে লাগলো।দিলশাদের হাতের কাঁচ গুলো উঠানোর সময় স্নেহের মুখের ভঙ্গিমা ব্যথিত দেখা যেত। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে আসা মৃদুমন্দ বাতাস এসে উড়িয়ে দিচ্ছে স্নেহার খোলা চুল। দিলশাদ এমন একটি দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে অনুভব করছে। স্নেহা যখন বুঝতে পারলো দুটি চোখ তার উপর ঘুর ঘুর করছে। স্নেহা একটু বিব্রতবোধ করলো। এবং সরে এলো তৎক্ষনাৎ। শুরু হলো গাড়ির ভিতরে পিনপতন নীরবতা। কিন্তু এর মাঝে বন্ধ্য হলো না দিলশাদের ঘুর ঘুর দৃষ্টি। কি যেন আবারো গভীর ভাবে খুঁজে যাচ্ছে সে। স্নেহা? স্নেহা? স্নেহা? সত্যি কি মিলানো যায়। কে এই নারী? যার সাথে মিলে গিয়েও বড্ড অমিল স্নেহার??

চলবে,

বিঃদ্রঃ খুব কষ্ট লাগচ্ছে ফোনটি নেই বলে। মানুষ মরে গেলে যেমন কষ্ট লাগে, কান্না পায়, খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে শোক পালন করে। আমার টিক সেই অবস্থা। তার উপর গল্প???? ভাইয়ের সাথে ঝগড়াঝাটি মারামারি করে তার ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য হাতিয়ে নিয়েছি । এবং সুযোগ মতো যতটুকু লিখা যায়। লিখে ফটাফট আপলোড দিলাম। জানি না কেমন লাগছে গল্প আপনাদের। এত কষ্টের পর যদি আপনাদের মন জয় করতে নাই পারলাম? তাহলে আমি ব্যর্থ লেখিকা…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here