#সর্বনাশিনী,১৩,১৪
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
পর্ব-১৩
জমকালো এক সন্ধ্যা…চারিদিকে রঙিন আলোয় আরো মনোরম পরিবেশ করে তুলেছে। লাভ ফ্যারি এই বিশাল বড় রেস্টুরেন্টে হাই ক্লাস সোসাইটির মানুষজনের আনাগোনা। সকলেই আসে তাদের যুগল নিয়ে। কেউ আসে একাকীত্ব দূর করার জন্যে । আবার কেউ আসে ভোজন উপভোগ করতে। এমনি একটি জায়গায় এ-সময় বসে আছে স্নেহা। হাতের ঘড়িটি বার বার দেখে যাচ্ছে। আকৃতার মা-বাবা এক প্রকার জোর করেই পাঠিয়েছে এখানে কি এক সারপ্রাইজের জন্য। এদিকে তারুন আউট ওফ টাউন…. হাজারটা কল করেও পায়নি তারুনকে । স্নেহা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ঘড়ির কাঁটাটি এবার আটটার ঘরে ছুঁই ছুঁই। স্নেহা বিরক্তিবোধ করছে খুব। কে এমন আসবে তাকে সারপ্রাইজ করার জন্য, কার জন্যই বা তার এত অপেক্ষা?? মনের কনে পরক্ষণেই প্রশ্ন উঠলো,
” আকৃতা শেখের কোনো বয়ফ্রেন্ড, টয়ফ্রেন্ড নেই তো? বা কোনো বাগদত্তা? এই জন্যই কি মা এখানে পাঠিয়েছে? তারুন ভাইয়াতো তেমন কিছু উল্লেখ্য করে নি? ”
কিছু মুহূর্তেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো স্নেহার। স্নেহে এই মুহুর্তে কি করতে পারে? কি করবে সে?? কোনো রকম ব্যাগ হাতে নিয়ে ছুটে বেড়িয়ে যাবার জন্য উঠতেই কেউ একজন হাত টেনে ধরলো পিছন থেকে।
” হেই বিউটিফুল, ইউ মিস মি?”
স্নেহা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। সামনের মানুষটিকে দেখে তার চোখ কৌটো থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। এখনকার যুগের পপ সিঙ্গার মাহাদ জেইন দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, সুদর্শন যুবক বাস্তবে যেন আরো সুন্দর। স্নেহা যেন হারিয়েই যাচ্ছিলো লোকটির রূপের মায়াজালে।
” হেই, কোথায় হারিয়ে গেলে?”
স্নেহার চোখের সামনে চুটকি বাজিয়ে,ঠোঁটের কোনে মুচকি হেসে বলল কথাটুকু মাহাদ। স্নেহার যেন এবার ধ্যান ফিরলো। বলল,
” আপনি? আপনি কে..!”
মাহাদ অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
” কামওন বেব্স! পাঁচ বছর আগে পাত্তা দেইনি বলে এখনো না চিনার ভান করছো? আই নো কতটা পাগল ছিলে তুমি, আমার পিছনে। আর এখন এমন ভাব করছো? আমাকে চিনোই না?”
মুখ গুমরো করে ফেললো এবার মাহাদ। স্নেহার হাত ছেড়ে চেয়ারে আরাম করে বসলো। এক দৃষ্টিতে স্নেহার শরীরের আগা গোড়া খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পরখ করে নিলো। স্নেহার অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মনে মনে কথা গুলো ঘুছিয়ে নিলো সুন্দর করে তারপর গড়গড় করে স্বগোক্তির মতো বলল,
” সরি মিস্টার মাহাদ আমি আপনাকে সত্যি চিনতে পারছি না, টিভির একজন সেলিব্রেটি বৈকি আমার মস্তিষ্ক আর কোনো ডাটা নেই, ঠিক যেমনটি আপনি বললেন।”
মাহাদ হো হো করে হেসে ফেললো। স্নেহার হাতটুকু টেনে পাশের চেয়ারটিতে বসালো অনেকটা জোর করে। তারপর বলল,
” আ’ম সরি। বাট তুমি সত্যি আমাকে ভুলে গেছো? নাকি মিথ্যা বলছো, বাহানা মারছো আমার সাথে রাইট? ”
এতটুকু বলেই আবার সাথে সাথে মুখে ভাব সিরিয়াস করে ফেললো। দু হাতের মুঠোয় ভরে নিলো স্নেহা মুখমন্ডল। বলল,
” আকৃতা, লুক.. আমি সত্যি পাগল ছিলাম, তোমার ভালোবাসাটা বুঝিনি, প্লিজ ফোরগিভ মি। জানো আমি এই পাঁচটি বছর তোমার অপেক্ষা করেছি, আন্টি যদি আমায় না জানাতো তুমি ফিরে এসেছো, আমি হয়তো জানতেই পারতাম। যা হয়েছে সব পিছে ফেলে, চলো এবার নতুন জীবন শুরু করি আমরা!”
বলেই মাহাদ জড়িয়ে ধরলো স্নেহাকে। স্নেহার সারা শরীর কেমন যেন করে উঠলো। মাহাদের স্পর্শে কেমন যেন অপবিত্র মনে হতে লাগলো। এমনটা তো কখনো হয়নি দিলশাদের স্পর্শে। তাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে বলেই কি? স্নেহা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো মাহাদকে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
” মি. মাহাদ। দূরে থাকুন আমার থেকে আমি আপনাকে চিনি না ব্যস! এর পরে কখনো আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না, আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না।”
বলেই গট গট করে বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে। লাভ ফ্যারির বাম পাশ দিয়ে হাটার পথেই বার এরিয়ার সামনে এসে থমকালো স্নেহা। দিলশাদ বসে আছে সেখানে। ড্রীংকস করছে। দিলশাদের চোখ মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। হয়তো কিছু হয়েছে। পরক্ষণেই ভাবলো, যা ইচ্ছে হোক, চুলোয় যাক, স্নেহার কি? আজ এই দিলশাদ আমরিনকে ভালোবেসে সে, ‘সর্বনাশিনী’
স্নেহা দাঁড়ালো না চলে গেলো সেখান থেকে। দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই আবারো পিছনে ফিরে চাইলো একবার। একি, লোকটি তো পরেই যাচ্ছে, যেনো কোনো হুঁশ নেই। স্নেহার আঁধার মনের ক্ষনিকের জন্য আলো নিভে, আবার জ্বলে উঠছে। কি করবে সে? কি করবে? মন বলছে ছুটে যা সাহায্য কর । কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে সাবধান। দিলশাদের বেহাল দেখে স্নেহা মনের কাছে হেরে গেলো। ছুটে গিয়ে ধরে ফেললো স্নেহা। দিলশাদ নেশায় ডুবে।বিড়বিড় করে বলছে,
” স্নেহা, প্লিজ কাম ব্যাক। প্লিজ ফিরে এসো। আমি জানি তুমি মরোনি। তুমি বেঁচে আছো। স্নেহা আই লাভ ইউ,ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি!”
স্নেহার বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আটকে গেলো কন্ঠনালীতেই। নিজেকে সামলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল স্নেহা,
” মি. আমরিন, সামলান নিজেকে।”
দিলশাদ ফিচেল হাসলো। বিড়বিড় করতেই লাগলো। হয়তো নিজের ভাগ্যের উপর ক্ষোভটা বেশিই তার। শুরু থেকে যাকে ভালোবাসলো তাকেই কত ভাবে কষ্ট দিলো কত লাঞ্ছিত করলো । দিলশাদ এবার আর হাটার উপযোগী রইলো না। না পেরে স্নেহা লাভ ফ্যারির একটি রুম বুক করলো। দিলশাদকে রুমটিতে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিলো। ফর্সা মুখের আদল খানা লাল টুকটুকে হয়ে আছে দিলশাদের, চোখ গুলোও যেন রক্তবর্ণ। নিজেকে এভাবে টর্চার করে দিলশাদ কি প্রুভ করতে চাইছে? সে দেবদাস হয়ে গেছে? পারুলের জন্য নাহ্ স্নেহার জন্য? এই ভালোবাসাটুকু কই ছিলো তখন? যখন স্নেহাকে কষ্ট দিতো দিলশাদ। স্নেহা দিলশাদের মায়াবী মুখ দেখে তার হু হু করে কান্না পেলো। মনের অজান্তেই চোখ জোরা পানি টলমল করিয়ে বড় বড় পানির ফোয়ারা ছিটকে পড়লো। স্নেহার কষ্ট হচ্ছে খুব, সে যে দিলশাদকে কষ্ট দিয়ে খুব খুশি? তা মোটেও না… স্নেহা হা করে দম ছাড়লো। দিলশাদের জুতা জোড়া খুলে ভালো করে চাদর টেনে দিলে। কিছু পলক তাকিয়ে থেকে দু কদম এগিয়ে যেতেই আবার থমকালো, এবার নিজে থেকে নয়। দিলশাদ আটকিয়েছে তাকে। স্নেহার মসৃণ হাত চেপে ধরে কাতর কন্ঠে বলছে,
” স্নেহা, আমি মারা যাচ্ছি, আমাকে একা ফেলে যেও না। আই নিড’স ইউ। ”
স্নেহা ফুপিয়ে উঠলো। এইটুকুন ভালোবাসাই তোর চাওয়ার ছিলো। কই তখন তো পায়নি স্নেহা। স্নেহা হাত ছাড়িয়ে নিয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু হলো না কোনো লাভ। হেঁচকা টানে দিলশাদ স্নেহাকে তার বুকের উপর ফেললো। শক্ত করে চেপে স্নেহার নরম ঠোঁট গুলো নিয়ে নিলো নিজের ঠোঁটের আয়েত্তে। স্নেহা ছুটোছুটি করলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিবার বৃথা চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। এদিকে দিলশাদ পাগলের মতো চুম্বন করে যাচ্ছে স্নেহা ঠোঁটে, গলায়, গালে। এমন কি দিলশাদের প্রতিটি ভালোবাসার ছাপ রেখে যাচ্ছে স্নেহার লতানো দেহে।
সময় পার হতে লাগলো। আজকের রাতটুকু স্নেহার জন্য ছিলো, অকল্পনীয়। লাভ ফ্যারির এই রুমটি আজ সাক্ষী স্নেহা আর দিলশাদের ভালোবাসার মুহুর্ত গুলোর। দিলশাদ ঘুমিয়ে আছে। খালি পিঠে স্নেহার নখের আচারের দাগ দৃশ্য মান। স্নেহা পাশেই বসে ঘুমন্ত রাজকুমারকে দেখলো। লোকটি হুঁশে ছিলো না, তবুও তার শক্তিতে স্নেহা পেরে উঠেনি। স্নেহা এবার নিজের কাপড় গুলো পড়ে নিলো। কেনো যেন আজকের এই সময়টুকু নিয়ে স্নেহার মনো কোনো অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে না। না সে পস্তাচ্ছে। তবে হে মুসাফির যখন অনেক দিনের তৃষ্ণার পর পানি পেয়ে যেমন সন্তুষ্ট লাভ করে? স্নেহা ঠিক তেমনি অনুভব করছে। লোকটি চাইলেও সে মন থেকে ঘৃণা করতে পারে না… আবার ক্ষমাও করতে পারে না….! স্নেহা ঘন কালো আকাশের দিকে চাইলো। হয়তো আজকের রাতটুকুর কথা দিলশাদের মনেও থাকবে না।
———
স্নেহা অনেক দিন পর আজ সেহেরের কাছে এসেছে। সেহেরের অবস্থা খুব বেশি একটা ভালো না। স্নেহা তার শর্ত আবারো রিপিট করতেই সেহের রাজি হয়ে যায়। ফট ফট করে সব বলতে থাকে শুরু থেকে করে চলা স্নেহার সাথে সকল অত্যচার সব কিছু, সব কিছু স্বীকার করে সে। এদিকে দিলশাদের মা বিন্দুর হোস ফিরেছে। দিলশাদের পরিবারের সকলেই ছুটে চলে এসেছে হসপিটালে। বিন্দুকে আগের মতো স্বাভাবিক দেখে তারা খুশি। ঠিক সেই মুহূর্তে বিন্দু প্রশ্ন করে উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে,
” দিলশাদ… স্নেহা .. স্নেহা কই?,, ঠিক আছে তো,?”
চলবে,
#সর্বনাশিনী
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৪।
দিলশাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো বিন্দুর অগোচরে।
” মা স্নেহা নেই।”
বিন্দু চোখে মুখে দুঃখজনক আর অনুশোচনার ভাব। চোখ টলমল করে বলল,
” কোথায়… কোথায় সে?”
দিলশাদ মায়ের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। কয়েক কদম হেটে এলো খোলা জানালাটার পাশে। স্ব স্ব মিষ্টি বাতাস শরীরের লোমকূপে স্পর্শ করে হারিয়ে যাচ্ছে আবারো শূন্যে। বাহিরের টিমটিম লাল হলদে আভা জলছে। হসপিটালের সামনেই বড় মাঠ আর তার পাশেই দুটি কয়েক দাঁড়িয়ে থাকা বড গাছ উঁকি দিচ্ছে। বডগাছে ডাল পালার মাঝে বসে আছে জোড়ায় জোড়ায় কিছু সংখ্যাক পাখি। দিলশাদ মনযোগ সহকারে দু’টি পাখির দিকে তাকিয়ে রইলো। নিরবচ্ছিন্ন রাতের আঁধারে দুটি পাখির ভালোবাসার অন্তরঙ্গ কিছু মুহূর্ত বুক কাঁপিয়ে তুললো দিলশাদের। হঠাৎ অনুভব করলো চোখ দুটি তার জ্বলছে। দিলশাদ চোখ বুঝে ফেললো। ঝড়ো হাওয়ার মতো আরো একবার গায়ে আছড়ে পড়লো হিমশীতল বাতাস। ভেসে উঠলো চোখের পাতায় ছোট একটি বাচ্চা মেয়ের অসহায়ত্ব মুখ। যার বড় বড় দুটি চোখ দিয়ে দিলশাদকে দেখেছিলো প্রথম। আপেলের মতো দুটো লাল গালে হাত রেখে বিদায় জানিয়েছিলো যেদিনে। মাঝে মাঝে হুট করে বয়ে আনা কিছু খেলনা, খাবার, চিপস, চকলেট। সব কিছু মনে পড়লো দিলশাদের। স্নেহার ছোট পুতুলটি? তা তো….. এখনো পড়ে আছে দিলশাদের পুরোনো আলমিরাতে। দিলশাদ চোখ খুললো। ঠান্ডা কন্ঠ হলেও, কেমন যেন হেরে যাওয়া মানুষ বা তার সব নিঃস্ব। এমন ভাবে বলল,
” মা, এমনটা কেনো হয়? আমরা যাকে চাই তাকে কখনো পাই না, আর যাকে পাই তাকে মূল্য দিতে জানি না!”
বিন্দু হয়তো ছেলের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পেরেছে,
” এইটাই নিয়ম বাবা। আমরা প্রতিটি মানুষ যদি, যা পেতাম তাতেই সন্তুষ্ট হতাম, তাহলে আর কোনো কিছুর চাহিদা আমাদের থাকতো না। ভেদাভেদ থাকতো না হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার থাকতো না। অনুসূচনা, অনুতাপ থাকতো না। ”
দিলশাদ এবার ঘুরে দাঁড়ালো বিন্দুর দিকে। চোখ দুটি অফুরন্ত লাল হয়ে গেছে, এই বুঝি টুপ করে রক্তের ফোঁটা ছলকে পড়বে। দিশাদের ফ্যাকাশে ঠান্ডা মুখ আর লাল চোখ দেখে বিন্দু ঘাবড়ে গেলো।আতঙ্কিত কন্ঠে বিচলিত হয়ে বলল,
” দিলশাদ কি হয়েছে? বাচ্চা! এদিকে আয়? দিলশাদ আমাকে খুলে বল সব, ভয় হচ্ছে খুব আমার!”
দিলশাদ কাছে গেলো না । নিস্প্রভ চাহনিতে চেয়ে রইলো মায়ের দিকে। বলল,
” মা, স্নেহা আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে, অনেক দূরে। সে আর এই দুনিয়ার মানুষ নই না।”
বিন্দু পরক্ষণেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। হয়তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে খুব। ঠিক কিছুক্ষণ পর যখন ঠাহর হলো। বিন্দু মুখে হাত গুঁজে কাঁদতে লাগলো। দগ্ধ হতে লাগলো ভিতরে ভিতরে। অপরাধবোধ টুকু ভিতরে ভিতরে কুঁকড় খেতে লাগলো। বুকে চেপে ঘন ঘন শ্বাস, আর নাক টেনে বলতে লাগলো,
“, এ-কি হয়ে গেলো, আমার স্নেহা?”
দিলশাদ আবারো জানালার দিকে ঘুরে গেলো। হয়তো নিজের চোখের জল লুকাতে, নয়তো মনের কষ্ট।
——————-
” আকৃতা মা, তোমার পায়ে পড়ি, আমার মেয়ে কোথায় আছে বলে দাও!”
আকৃতা চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুঁটে উঠলো। তালুকদার বংশের এই দুজনের নর-নারীর উপর। বলল,
” মিঃ এন্ড মিসেস তালুকদার, আমি কতবার বলবো? আপনার মেয়ের খবর আমি জানি না।”
সায়রা তালুকদার আচলে মুখ লুকালেন কাঁদতে কাঁদতে,
” আজ কতদিন দেখি না মেয়েটাকে কেমন আছে, কোথায় আছে, কি করছে!”
স্নেহার মনচাইলো জোড়ে জোড়ে হাসার জন্য। কিন্তু সামলে নিলো। বলল,
” শুনেছি, আপনার মেয়ে নাকি হুটহাট গায়েব হয়ে আবার ফিরে আসার রেকর্ড আছে? চিন্তা কেন করছেন? হয়তো নতুন কোনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটাচ্ছে? ”
মাথা হেড করে ফেললো তারা। স্নেহা পথ কাঁটিয়ে চলে যেতে নিয়ে পিছনে ফিরে চাইলো। তার নতুন জম্মের পর তারুনের পরিবার অফুরন্ত ভালোবাসা তাকে দিয়েছে। অথচ পুরোনো জীবনে এই ব্যক্তি দুটো ব্যবহার করেছে স্নেহাকে। স্নেহা আবারো জগিং শুরু করলো। পিছনে ফেলে গেলো পুরোনো অতীত।
————-
দিনের মধ্যে ভাগ। দিলশাদের সামনে আবারো চেনা পরিচিত দুটি মুখ বসে আছেন। দিলশাদ তার ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে আরেক পলক সামনে তাকালো। বলল,
” আঙ্কেল আন্টি, আমি এবার শুধু এই জন্য সাহায্য করছি, কারণ আপনি স্নেহাকে লালন-পালন করেছেন তাই। তা না হলে, এই অফিসে ঢোকার মতো সাহস পেতেন না।”
সায়রা তালুকদার দিলশাদকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় হলো। দিলশাদ কাউকে কল করলো,
” তোমাকে কিছুদিন আগে কাউকে খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলাম!”
অপাশ থেকে কথা আর শোনা গেলো না। দিলশাদ বলল,
” আমি কালকের খবরটা চাই!”
বলেই ফোন কেঁটে দিলো। এবং নিজের কাজে আবারো ব্যস্ত করে নিলো নিজেকে।
————–
স্নেহা আজ শপিং মলে এসে। ইচ্ছে করে নয়, অনেকটা জোড় করে মাহাদ তাকে নিয়ে এসেছে, একটা নামি দামি বড় একটি শপিংমলে। মাহাদ বলল,
” বিউটিফুল ট্রাই দিস!”
স্নেহা অবাক হয়ে তাকালো। পিঠ খোলো আর সাসনের সাইডে বড় গলা ইনফেক্ট যে কোনো মেয়ের বুকের খাঁজ এই ড্রেসে দৃশ্যমান হবে। স্নেহা নাক ছিটকে বললো,
” আমি এসব পড়বো না।”
মাহাদ চোখ রাঙ্গালো। স্নেহার কাঁধে শক্ত করে হাত রেখে বলল,
” বিউটিফুল, আমার না শোনা পছন্দ নয়। ভুলে যেও না তুমি আর আমি খুব শীঘ্রই একই বাঁধনে বাধতে যাচ্ছি। ”
স্নেহা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
” হবো, হইনি। এখনো অধিকারটা আপনাকে দি নি!”
স্নেহার কাঁধের উপর হাতটি মাহাদের শক্ত হলো,
” তুমি কি চাইছো, আন্টিকে আমি কল করি?”
রাঙ্গানিত কন্ঠে বললো মাহাদ। স্নেহা অসহায়ের মতো চাইলো। এই ছেলেটি তার জীবন হেল করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে ছেড়ে দে ভাই কাইন্দা বাঁচি। এদিকে বিয়ে বিয়ে করে মাথা নষ্ট করে ফেলছে তারুনের মা।কি করবে এমন অবস্থা? কবে যে তারুন আসবে তারুন? স্নেহা সুপ্তপর্ণে শ্বাস লুকালো। হাতের ড্রেসটি টেনে নিয়ে চলে গেলো ট্রায়াল রুমে।মাহাদের দেয়া সাদা রঙের খুব সুন্দর একটি গ্রাউন পড়ে নিলো স্নেহা। আয়নায় নিজেকে দেখে কিছুটা থমকে গেলো। ওয়েস্টার্ন গাউনে অনেক সুন্দর লাগচ্ছে তাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে দরজা খুলে গেলো। এক ঝটকায় পিছনে ফিরতেই ভেসে উঠলো একটি মুখ। যার আগমনে লোকটির পিছনে সব আলো লুকিয়ে পড়লো। শুধু জ্বলজ্বল করতে লাগলো স্নেহার মুখমন্ডল । ধীরে পায়ে এগিয়ে এলো সে। খুব কাছে, খুব কাছে, এতটাই কাছে যেন স্নেহার দ্রুত গতিতে চলা হার্টবিট সাসনের লোকটি অনায়াসে শুন্তে পারছে। স্নেহা কাঁচের আয়নার সাথে লেগে গেছে। লোকটা তার এতো কাছে? স্নেহার হুট করেই সেদিনের রাতের কথা গুলো মনে পড়তে লাগলো এক এক করে। শরীরে তখন নতুন এক অদ্ভুত অনুভূতির দোল খেলা। স্নেহা ঘেমে, নেয়ে একাকার। গলাটা শুকিয়ে কাঠ। লোকটি নিশ্বাস পড়ছে স্নেহার চোখে মুখে আর ঠোঁটে। স্নেহা বিড়বিড় করে বলল,
” দিল… দিলশাদ!”
চলবে,,