সাঁঝক বাতি,১৪,১৫

0
529

সাঁঝক বাতি,১৪,১৫
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[১৪]

‘সাঁঝক বাতি’ গল্পের নামকরণের গভীরতা বেশ অদ্ভুত। গভীরভাবে ভাবলে এর মর্মার্থ বোঝাটা
সম্ভব। রৌদ্রজ্জ্বল এক দিনের শেষে ঘনিয়ে আসে
, সন্ধ্যা! সন্ধ্যার আঁধারে ধীরে ধীরে ডুবে যায় এ ধরণী। দিন ছুটি নেয়। বুঝিয়েও দেয়, তার আয়ূ শেষ। আর সাঁঝ থেকে শুরু হয় ;রাতের রাজত্ব। সাঁঝক অর্থাৎ সন্ধ্যা। আর বাতি মানে প্রদীপ, লাইট অথবা আলো। এই শব্দার্থও নিদারুণ।
সন্ধ্যায় ঘনিয়ে আসা আঁধার কাটাতে একমাত্র অবলম্বন; বাতি। বাতিই পারে অাঁধার কাটাতে।
মিটিমিটি আলো ছড়াতে নিজেকে পুড়াতে থাকে, তাও অন্যের স্বার্থে। যাতে অন্যকে আলোকিত করতে পারে। যতক্ষণ পুড়ে সে নিংশেষ না হবে, ততক্ষণ নিস্তারও নেই। নিঃস্বার্থভাবে বাতি তার আলো বিলাতে থাকে। যেন আঁধার সবটা ঘ্রাস করতে না পারে। এর কারণ বেঁচে থাকার অর্থ; লড়াই, যুদ্ধ। হোক সেটা বাতির কিংবা মানুষের ক্ষেত্রে। আলো ও আঁধারি সৃষ্টির এক অন্যবদ্য খেলা। রাতের জন্য দিনের তাৎপর্য’টা সু-স্পষ্ট। প্রকৃতিও বুঝিয়ে দেয়, সবকিছুর সীমা, মূল্য এবং মর্ম আছে। তেমনি এর সূচনা এবং সমাপ্ত পার্ট আছে। দিন যেমন অফুরন্ত নয়; তেমনি রাতও।
মানুষ ও কষ্ট একে অন্যের সঙ্গে নিবিড় জড়িত।
বাঁচতে হলে জীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, এবং
রাগ- জেদ, আদর-অনাদর সবকিছুই আসে।
না আসলে এসবের মর্ম বোঝাও সম্ভব হতো না।

আর শিফার জীবন ঠিক সাঁঝক বাতিরই মতো।
যতক্ষণ বাঁচবে নিজেকে পুড়িয়ে লড়াইও করবে।
শুধুমাত্র সুমিষ্ট এক সমাপ্তের আশায়। যাতে সে রাত পেরিয়ে নতুন দিনের সন্ধান পায়। অন্যয়ের
পাহাড়কে চূর্ণ করে সত্যের সূর্যকে উদিত করতে পারে। ঠিক এই কারণেই ওর জীবনীর নামকরণ করা হয়েছে; সাঁঝক বাতি।
_________________________________

শিহাব হসপিটালে এসেছে সাফার আম্মুর খোঁজ নিতে। কিন্তু এসে মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। সাফার আম্মু নেই! উনাকে কেউ নিয়ে গেছে। নার্সের বক্তব্যে অনুযায়ী, সুদর্শন একটা ছেলে এসেছিল নিতে। পেশেন্টকে নার্স একবার জিজ্ঞাসা করেছিল,

-‘উনি কি আপনি পূর্ব পরিচিত?’

সাফার আম্মু ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বোধক
মাথা নাড়িয়েছেন। অর্থাৎ চিনে। এজন্য নার্সও আর বাঁধা দেয় নি। ওইদিকে স্বপ্নীল আর শিফা নিঁখোজ। এদিকে সাফার আম্মুও! কি হচ্ছে সব? শিহাব আর উপায়ান্তর না পেয়ে দিগন্তকে ফোন দিলো। তবে দিগন্ত রিসিভ করল না। খুব ব্যস্ত বোধহয়! শিহাব দ্রুত বাসায় ব্যাপারটা জানাল।
সবার হতবাক। পুলিশও বাহাত্তর ঘন্টার আগে নিঁখোজের কেস নিবে না। কি করবে কেউ বুঝতে পারছে না। চিন্তাতে শিফার মায়ের প্রেসার বেড়ে গেছে। উনি হাই প্রেসারের রোগী। উনাকে নিয়ে
বাসাতে হুলস্থুল কান্ড। বিপদে বিপদ এসে হানা দিচ্ছে। চিন্তাতে কারো মস্তিষ্কও কাজ করছে না। তমা হাসিবকে ফোন করেও কিছু জানতে পারল না। শিফা কই? আর সাফার আম্মু? দিগন্তকেও ফোনে পাচ্ছে না। সবাই গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছে। না পারছে বের হতে; আর না সমাধান করতে।

দিগন্তের বাবা-মায়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে।
দিগন্ত এত টাকার ডিল সাইন করেও ভাগ দিচ্ছে নি। অথচ শর্ত এমন ছিল না। এজন্য দিগন্তের মা খুবই ক্ষিপ্ত। এমন বেয়াদব ছেলে পূর্বে দেখেন নি। কিছু জিজ্ঞাসা করলেও বলে না। এমন ভাব যেন শুনতে পায় না। দিগন্তের বাবাও ছেলেটাকে কিছু বলেন না। বেহায়া একটা। গতরাতেই উনি বলেছিলেন,

-‘দিগন্ত শিফাকে মেরে দাও।’
-‘কেন?’
-‘ওকে বাঁচিয়ে নিজের বিপদ ডেকো না।’
-‘জ্ঞান দেওয়া শেষ? এবার যেতে পারেন।’
-‘মায়ের সঙ্গে এভাবে কেউ কথা বলে?’
-‘মা নয়,সৎ মা। আমারই হসপিটালের সামান্য একজন নার্স।’
-‘আমার ভাগটা দাও।’
-‘ দিবো না। ফারদার বকলে আপনার পার্টসও সাপ্লাই করে দিবো।’

দিগন্তের কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে পারেন নি।
লোকসম্মুখে মা মা করে মুখে ফেনা তোলে আর আড়ালে বাঁশ দেয়। কথার সোজাসাপ্টা জবাবও
দেয় না। কথায় কথায় নার্স বলে অপমান করে।
উনি দিগন্তের বাবার সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ধরা পড়েছিলেন। তখন আশেপাশের মানুষজন বিয়ে পড়িয়ে দেয়।যদিও এটা ছিল উনার পরিকল্পনা।
উনি আগেই অন্য নার্সদের হইচই করার টাকাও দিয়েছিলেন। পূর্বপরিকল্পনা নিখুঁতভাবে সফলও
হয়েছিল। আর দিগন্তের মা মারা গেছেন, ব্লাড ক্যান্সারে। প্রশান্ত যখন ওর পড়াশোনা শেষ করে অবসরে ছিল। আর দিগন্ত তখন ভার্সিটি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। মায়ের অবর্মানে মানিয়ে নিয়ে দিন
কাল ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন দিগন্তের বাবার ডায়বেটিস বেড়ে গিয়েছিল। উনাকে দ্রুত রয়েল হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল। দিগন্তের সৎ মা রেবেকা উনার সেবার দায়িত্বেই ছিলেন।
তারপর গল্পের ছল আর সেই সময়ের প্রেক্ষিতে উনারা সম্পর্কে লিপ্ত হোন।মূলত, উনি দিগন্তের
বাবাকে ফাঁসিয়েছিলেন। বড়লোক মানুষ আর কি লাগে! এই ঘটনাটা একরাতের মধ্যেই চাপাও পড়ে গিয়েছিল। হয়তো টাকার জোরে। প্রশান্তও তখন হসপিটালের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিল। এজন্য তেমন ঝামেলা হয় নি। দিগন্তরাও বাবাকে কিছু বলেছিল না। বলার, প্রয়োজনও মনে করে নি।
প্রত্যেক পুরুষের নারীর সঙ্গের প্রয়োজন। হোক, শারীরিক তৃপ্তি বা মানসিক! তাছাড়া ওরা যুবক!
ব্যাপারটা ওদেরও অজানা নয়। তবে রেবেকাকে দিগন্ত সহ্য’ই করতে পারে না। কথায় কথায় খুব অপমান করে। গালমন্দও করে। বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে কথা বলে। বাবার জন্য কিছু বলতে পারে না। রেবেকার কষ্ট লাগলেও কিছু বলতে পারেন না। কারণ দিগন্তের মতো পাষাণ হৃদয়ের মানব উনি দু’টো দেখেন নি। যে ছেলে আপন মামার চোখ তুলতে দু’বার ভাবে না। প্রাক্তন প্রেমিকা, বাসার কাজের মেয়ে, অফিসের পার্টনার, নার্স,
এবং বন্ধুকেও ছাড়ে নি। ওদেরও প্রয়োজনীয় সব পার্টসগুলোই নিয়েছে। টাকার বিনিময়ে বিক্রিও
করেছে। এজন্য তাকে ভুলেও স্বাভাবিক মানুষ বলা যাবে না।

দিগন্ত আর শিফা দু’জনে মুখোমুখি বসে আছে। শিফার মুখভর্তি হাসি আর দিগন্তের চোখে মুখে ক্রোধ। শিফা কফির মগে চুমুক দিয়ে আশেপাশে তাকাল। রেস্টুরেন্টটা খুবই সুন্দর। এটা ভাসমান রেস্টুরেন্ট। শিফা মুখ বের করে বাইরেটা দেখছে।
নদীর ছোট ছোট ঢেউ ভেসে আসছে।তবে ঘোলা পানি। প্রাণজুড়ানো বাতাস। অদূরে নৌকা দেখা যাচ্ছে। দিগন্ত ক্রোধ নিয়ে বলল,

-‘শিফা কাজটা ঠিক করলে না। এর মূল্য দিতে; প্রস্তুত হও।’

-‘আপনি আসলেই কাপুরুষ। পুরুষত্বের জোর থাকলেই তাকে পুরুষ বলে না। বুকে পাটা থাকা লাগে। যেটা আপনার নেই।’

শিফা কথাটা বলে পুনরায় কফিতে চুমুক দিলো।
আজ ওর মনটা বেশ ফুরফুরে। দিগন্তের কাজে বাঁধা দিয়েছে! ওর আটকোটি টাকার ডিলে পানি ঢেলে দিয়েছে। দিগন্তের পার্টনারকে আজ জেলে পাঠিয়েছে। সুখু এক্সিডেন্ট করেছে। এই না, না, করানো হয়েছে। শিফা নিজে করিয়েছে। সর্বশেষ
নিহাকে অপহরণ করেছে। আচ্ছা, তনয়ের মতো করলে কেমন হয়? ভালো হয়! এজন্য প্রশান্ত কি
কষ্ট পাবে? হয়তো কাঁদবেও! কিন্ত কি আর করা।
পাল্টা আঘাত না করলে হচ্ছেও না। তা নয়তো
দিগন্তও বুঝবে না। এবার এক ভাইয়ের পাপকর্মে অন্য ভাই কাঁদবে। আহা, চমৎকার সমীকরণ।
সে হসপিটালে লোক লাগিয়ে হাঙ্গামা করিয়েছে। ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়েছে। সঙ্গে, মাখোমাখো ক্যাপশন দিয়েছে। যাকে বলে সোনায় সোহাগা।
এখন লাইক কমেন্টের বন্যা বইছে। এবার মনটা শান্ত হয়েছে। একটু সুখ সুখও লাগছে। এতদিনে
কাজের কাজ হয়েছে। দিগন্ত রাগটা সামলানোর যথেষ্ট চেষ্টা করছে।আজকে সারাদিন সে দৌড়ের উপর ছিল। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকঠাক করে নি।
এখন বাজে রাত নয়টা বিশ। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা থাকলেও খেতে পারছে না। সে চিন্তাতে অস্থির।
একটা ঝামেলা সামলাতে গিয়ে আরেক ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। সব হয়েছে, এই বেয়াদব মেয়েটার জন্য। দিগন্ত কিছু বলার আগেই শিফা পেপার
এগিয়ে দিয়ে বলল,

-‘সাইন করুন।’
-‘তুমি কী আমার কিডনী নিবে?’
-‘না, মুক্তি।’
-‘মানে?’
-‘ডিভোর্স।’
-‘পাবে না, আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।’
-‘না দিলেও, আপনার বুকে আমার ছুরি বসাতে আমার হৃদয় কাঁপবে না।’

দিগন্ত হাসল। চুলে হাত বুলিয়ে চেয়ারে আরাম করে বসল। দৃষ্টি উপরের ঘূর্নায়মান সিলিংয়ের দিকে। মেয়েটা পাষাণ। তিতা সত্যিগুলো সহজে বলে ফেলে। যদিও এতে ওর আসবে যাবেও না।
শিফা তখস সময়টা দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,

-‘করবেন কি না?’
-‘না।’
-‘আপনার লজ্জাবোধও কি নেই?’
-‘ছাড়ব না, পারলে ছাড়িয়ে নাও।’
-‘ওকে।’

কথাটা বলে শিফা উঠে চলে গেল। দিগন্ত ঠোঁট উল্টিয়ে হাসল। তারপর দু’জন দু’জনের পথে চলল। দু’জনের মুখে হাসি। তবে তাদের হাসির কারণ ভিন্ন। রাত এখন দুইটা ঊত্রিশ। সুনসান পরিবেশ। শিফা হতবাক হয়ে লেপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর পুরো পৃথিবীটা যেন ঘুরছে।
সাফার সঙ্গে দিগন্ত যে আইডি দিয়ে কথা বলত, সেটা দিগন্তের নয়। এখানে আরেকজন ব্যাক্তি যুক্ত আছে। আর সেই ব্যাক্তির নাম দেখে শিফা আরেকদফা অবাক।

To be continue………!!

-‘সাঁঝক বাতি-‘
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[১৫]

শিফা বিস্মিত! অবাক দৃষ্টিতে সে স্কিণের দিকেই তাকিয়ে আছে। যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
এই সেই ব্যাক্তি! কীভাবে সম্ভব? উনি এমন কিছু করবে; শিফার কল্পনাও অতীত। শিফা হতবাক হয়ে পুনরায় দেখল। না, ওর দেখার ভুলে নেই।
তাহলে এটাই সত্যি! উনি সেই বেইমান! সাফার
খুনী! শিফা তাৎক্ষণিক হাসিবকে ফোন দিলো। হাসিব তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়েছে। শিফার কল পেয়ে হাসিব দ্রুত রিসিভ করল। শিফা যা যা বলল মন দিয়ে শুনল।আর
প্রয়োজনে হুম, হ্যাঁ, না, এসবে উত্তর দিচ্ছে।সেও শুনে হতভম্ব! শিফা প্রয়োজনীয় কথা বলে কল কাটল। রাগে ওর শরীরটা কাঁপছে। যেন এখনই উনাকে জীবন্ত কবর দিলে শান্তি মিলবে। তবে এ ভুলটা করা যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। নয়তো সব হিসাব গড়বড় হয়ে যাবে। আর এই
পরিস্থিতিতে হিসাব গড়বড় করা যাবে না। কারণ এটাই হিসাব চুকানোর মোক্ষম সময়।শিফা উঠে পাশের রুমে গিয়ে সাফার আম্মুকে দেখল। উনি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। এমনি ঘুমান নি। কড়া ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। নয়তো না ঘুমিয়ে সারা দিন-রাত কাঁদতেন। শিফা উনার শরীরের চাদর ঠিক করে বেরিয়ে গেল। ওর অশ্রু ঝরছে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। উনাকে দেখলেই মরে যেতে ইচ্ছে করে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। অথচ ওর হাতেও কিছু করার নেই।সেও এই পরিস্থিতির
শিকার!

শিফা তোয়ালে নিয়ে ওর ওয়াশরুমে চলে গেল। গোসল দেওয়া দরকার। এতে মন ও মস্তিষ্ক যদি
শান্ত হয়। যদি কিঞ্চিৎ প্রশান্তি মিলে। প্রশান্তিটা এখন খুব দরকার। নয়তো খুব অস্থির লাগছে।এই মূহুর্তেই সব চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে ইচ্ছে করছে।
শিফা পানির সুইচ চেপে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। তাৎক্ষণিক উপর থেকে ঝরঝরিয়ে ঠান্ডা পানি পড়তে লাগল। কয়েকসেকেন্ডে পুরো শরীর ভিজেও গেছে। পানি একটু বেশিই ঠান্ডা! যদিও সে ইচ্ছে করে ঠান্ডা পানি নিয়েছে। পাশের সুইচে লিখা, জেনারেল, হট, কোল্ড। সে কোল্ড সুইচটা চেপেছে। তখন গভীর রাত। নিশাচর পাখি বাদে সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। তবে মানুষরুপী নিশাচর পাখিও আছে। যাদের নিজের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নির্ঘুম রাত কাটে। দিনের আলোতে তারা কৃত্রিম হাসি মুখে ফুটিয়ে তোলে। আর বোঝায়; তারা সর্বসুখী। পুনরায় সেই রাতের উপস্থিতিতে একাকীত্বে ডুব দেয়। আঁধারে ডুবে সুখ-দুঃখের হিসাব কষতে থাকে। এর ফলও আসে শূন্যতা!
শিফাও তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত। সেও এক যুদ্ধে নেমেছে। অঘোষিত যুদ্ধ।এই যুদ্ধে মৃত্যু নিশ্চিত।
তবে ভয় নেই! আছে প্রবল মনোবল। সব পাপ এবং পাপীকে নিঃশেষ করার আত্মবিশ্বাস। তবে
পূর্বে নিশানা ঠিক থাকলেও ওর পথ ভুল ছিল। সে ভুল পথে হাঁটছিল। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছিলও। এবং তাতে কখনো সফল হতো না।
তাই ভুলটা শুধরে বর্তমানে সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছে। তাই ওর খেলা পরিবর্তন করার সময়ও এসেছে।

আর দিগন্ত কিডনি ব্যবসায়ী এটা সত্য।মানুষের প্রাণ তার কাছে অতীবও তুচ্ছ। সেই সাথে এটাও সত্য ; সাফার মৃত্যুতে ওর হাত নেই। সাফাকে সে ফাঁসায়ও নি।সাফার রক্তে একধরনের মেডিসিন পাওয়া গেছে। যেটার প্রভাবে, চোখে কম দেখত, মাথা ঘুরাত, সব ভুলেও যেতো। ওই মেডিসিনটা
নিয়মমাফিক ওর শরীরে প্রবেশ করত। প্রত্যেকটা দিন! এজন্য দিন দিন সাফার অবস্থাও বেগতিক হচ্ছিল। কিছুদিন আগে দিগন্ত বলেছিল,

-‘পাপকর্ম স্বীকার করার সাহস আমি রাখি। ওই সাফার মৃত্যুতে আমার হাত নেই। তবে আগে যদি জানতাম, ওই শালী মরেও এই প্যারা দিবে। সত্যি বলছি, আমি নিজে ওকে খুন করতাম।’

শিফা চুপ করে শুনেছিল। তাছাড়া কথাতে কথা বাড়ে। অন্যদিন সাফার ছবি দেখে দিগন্ত মুখটা
বিকৃত করে বলেছিল,

-‘সাফাকে পছন্দ করব? তাও আমি! বাহ,দারুন জোক্স। তাছাড়া আকৃষ্ট হওয়ার কিচ্ছু ছিল না। যা ছিল খালি, ওই তেল চুপচুপে লম্বা বেনুনি।’

দিগন্ত আবসিক হোটেল রাত কাটালেও ওর রুচি হাই লেভেলের। আর শর্ত জারি তো থাকেই। সে
যা বলেছিল; এতদিন ভাবলে এই সমস্যা হতো না। আর সাফা ছিল খুব সাধারণ। চুল তেল না দিলে শান্তি পেতো না। রোজ তেল দিবেই দিবে।
সাজগোজ ও স্টাইলিশ ব্যাপারগুলো সত্যিই ওর
মধ্যে ছিল না। তবে মার্জিত পোশাকে নিজেকে
ফুটিয়ে তুলতো। আর ওর মন ছিল খুব পবিত্র।
অল্প কষ্টে ভেঙে পড়তো। সাফা সাধারণের মধ্যে অসাধারণ একটা মেয়ে। যার ভেতরে কলুষতা বলে কিছু ছিল না। হয়তো সেটা দিগন্তের চোখে পড়ে নি। আর পড়বেও না। কারণ সব ভালোর মর্ম সবাই বুঝে না।

শিফা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সময়টা দেখল। ভোর চারটা বাজে। শরীর থরথর করে কাঁপছে। শিফা কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়ল। চোখে পাতাও বুজে আসছে। ঘুম দরকার। শরীরটা আর সাঁই দিচ্ছে না। একটু বিশ্রাম চাচ্ছে। গতকাল সাফার আম্মুকে দিগন্ত নিয়ে গিয়েছিল। কেন, অজানা!
নার্সের ভাষ্যমতে, দিগন্ত’ই ছিল সুদর্শন পুরুষ। উনাকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কেবল দিগন্তেরই জানা। শিফা গা ঢাকা দিলেও খবরটা ওর কাছে পৌঁছাতে সময় লাগে নি। শুনে সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ
নিয়েছিল। আর দিগন্ত সাফার আম্মুর মাধ্যমেই শিফাকে খুঁজে বের করল। ওর চতুরতা ধরা বেশ মুশকিল। ধূর্ত ব্যাক্তির ধূর্ত বুদ্ধি। সেও জানত, শিফা এবার নিজেই যোগাযোগ করতে আসবে। কারণ সাফার আম্মু ওর দায়িত্বে। উনার ক্ষতি সে হতে দিবে না। রেস্টুরেন্টে দেখা করে, সাফার আম্মুকে দিগন্ত ফিরিয়ে দিয়েছিল। ওর শর্ত ছিল শিফাকে ফেসবুকের পোষ্ট ডিলিট দিতে হবে। ওর কথা অনুযায়ী শিফা তাই করেছে। তবে ততক্ষণে অনেক শেয়ার এবং কপি হয়ে গেছে। অনলাইনে কেউ সত্য মিথ্যার তফাত খুঁজে না। একটা বিষয় পেলেই হয়। কপি আর শেয়ার হতে দেখেই শিফা
ডিলিট করেছে। নয়তো এত বোকা সে নয়।আর
সাফার আম্মুকে ছাড়ার পরপর’ই শিফা নিহাকে অপহরণ করেছে। নিহা এখনো বন্দি। ওর মুক্তি
এত সহজে মিলবে না। নিহার কথা দিগন্ত পরে জেনেছে। তবে জেনেও ওর হেলদোল দেখা যায় নি। হাবভাব এমন, যেন এতে ওর আসবে যাবে না। হাসিবও নিহার ভালোই আদর-যত্ন করছে। শিফার কথাতে কয়েক ডোজ নাকি বাড়িয়েছেও।

যার বোধ নেই। বিবেক ও বুদ্ধি অচল। যে মেয়ে অন্য পুরুষের কাছে শুতে দু’বার ভাবে না।তাকে মেয়ে বলাও যায় না। এরা হচ্ছে; টাকার পোকা।
টাকার জন্য এরা বিবেক বিসর্জন দিতেও ভাবে না। বোকা সেজে কার্যসিদ্ধি করা, নিহার মূখ্য কাজ। সে আবার আরেকটা কীট। দেখতে মেয়ে হলেও মনটা নোংরায় পূর্ণ। কুরুচিপূর্ণও বটে। বিবেক, মনুষ্যত্ব, লজ্জাবোধ বলতে কিছু নেইও। তবে শিফার কাছে ধরা পড়ে গেছে। জারিজুরিও শেষ। এমনকি প্রশান্তের সঙ্গে ওর বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারও মিথ্যা। ওদের ইসলাম ধর্ম মোতাবেক বিয়েও হয় নি। ওদের রেজিস্ট্রিটা হয়েছিল, নিহার আনার উকিলের কাছে। উকিলও ওর কথামতো মিথ্যা রেজিস্ট্রি পেপার দিয়েছিল। প্রশান্ত সাইনও করেছিল তাও না দেখে। তাছাড়া শিফারই এক
গুপ্তচরের মাধ্যমে জানা গেছে, নিহার এটা চতুর্থ বিয়ে। পূর্বের তিনজন স্বামীই মারা গেছে। এতেও
যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মারা গেছে নাকি মেরেছে?
দিগন্তের পরিবারের কেউ’ই সাধু নয়। অভ্যন্তরে
সবার একটা করে জঘন্য রুপ আছে। সময়ের প্রেক্ষিতে তাদের রুপটাও বেরিয়ে আসছে। তবে নিহা এখন তুরুপের তাশ। ওর থেকেই অজানা তথ্য জানা যাবে। দেখার পালা, আগামীতে কি হয়!

সকাল সাড়ে দশটা! রিংটোনে শব্দে শিফার ঘুম হালকা হলো। কলটা রিসিভ করে হাসিবের কথা শুনল। তারপর ঝটপট উঠে সাফার আম্মুকে একবার দেখে বেরিয়ে গেল। উনাকে দেখার জন্য নার্স আসবে। অনেক বিশ্বস্ত নার্স। ওদিকে নিহা কালকে থেকে বাসায় নেই। প্রশান্ত রাতে ফিরেও পায় নি। ফোন বন্ধ। এই চিন্তায় সারারাত ঘুমও হয়নি। নিহার কাছের মানুষদের ফোন করেছে। তারা সন্ধান দিতে পারে নি। বাংলাদেশে নিহার আত্মীয় নেই। তাই আত্মীয়দের বাসাতে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিহা আমেরিকার মেয়ে। ওখানেই তার জন্ম। বাবা- মা নেই। প্রশান্ত ওকে খোঁজার চেষ্টা করছে। বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করেও কিছু জানতে পারল না। দিগন্তের কথা মনে হতেই সে সেদিকে ছুটল। দিগন্ত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কালকে খুব চিন্তাতে ছিল। অতিরিক্ত চিন্তাতে স্কিণ নষ্ট হওয়ার সম্ভবণা থাকে।মুখে ব্রণ বের হয়। চোখের নিচে বিশ্রীভাবে কালি জমে। তখন নিজেকে দেখতে নিজেরই ঘৃণা লাগে। তাই গতরাতে চিন্তা ঝেড়ে সে নিশ্চিন্তে ঘুমের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সফলও হয়েছে। ঘুমালে মস্তিষ্কও ঠান্ডা থাকবে ও দুঃচিন্তা কম হবে। এতে স্কিণের সমস্যাও হবে না।
যেসব কাজ করে ঝামেলা তো আসবেই। গর্বের কাজ করলে নাহয় সবাই বাহবা দিতো। প্রশান্ত দিগন্তের দরজাতে জোরে জোরে নক করল। কিন্তু সাড়াশব্দ নেই। নামধরে ডেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে। একটুপরে ঢুলুঢুল চোখে আর ঊদাম গায়ে দিগন্ত দরজা খুলে দিলো। ওর মুখটা বিরক্তিতে কুঁচকে আছে। তখন প্রশান্ত বলল,

-‘ভাই, নিহার খোঁজ জানিস?’
-‘উফ, ওই বালের জন্য ঘুমটা ভাঙালে?’
-‘সরি ভাই। বল না নিহা কোথায়?’
-‘শিফার কাছে। হয়তো আর বেঁচে ফিরবে না।’
-‘শিফাকেও আমি ছেড়ে কথা বলব না, দিগন্ত। অনেক হয়েছে আর না।’
-‘আচ্ছা।’

প্রশান্ত রেগে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
শিফাকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। মেয়েটা বড্ড বার বেড়েছে। তখন দিগন্ত আড়মোড়া ভেঙ্গে খুব শান্ত কন্ঠে বলল,

-‘তনয়ের হাতটা তুমি কেটেছিল, তাই না? আর রাফিকে এক্সিডেন্ট করানোর পরিকল্পনাও ডান? নিহা তোমার জারিজুরি ফাঁস করলে কী করবে? যাই হোক; শিফা তোমাকেও ছাড়বে কি না ভেবে নিও। আর হ্যাঁ,আমি কিন্তু কিচ্ছু জানিনা।আমি নিষ্পাপ। তুমি বেঁচে ফিরলে কথা হবে, বেস্ট অফ লাক। এখন যাও, আমি ঘুমাব।’

কথাটা বলে দিগন্ত কম্বল টেনে শুয়ে পড়ল। ওর ঘুম পুরো হয় নি। আরো ঘুমের দরকার। নয়তো স্কিণ চকচক করবে না। জেনে শুনে স্কিণের ক্ষতি করার মানেই হয় না। তাছাড়া বউ আর ভাইয়ের যুদ্ধ দেখা বাকি। যুদ্ধ না ঠিক; মহাযুদ্ধ। সে হবে দর্শক। দু’চোখ ভরে এদের যুদ্ধ উপভোগ করবে। আহা, ভিন্ন এক সাদৃশ্য। এটা নিশ্চয়ই ভালো কাজ হবে? ওর জীবনে সৎকর্মের সংখ্যাটা খুবই কম। তাই সৎকর্ম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে এমন পূর্ণের কাজে কোটি কোটি টাকার ডিল ওর হাতে আসে!

(থ্রিলার গল্প প্রচুর ভেবে চিন্তে লিখতে হয়।আমি
সময় নিয়ে লিখি তাই আপনাদের পড়ার আগ্রহ জাগে। কারণ আমি অন্যরকম কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করি।আর সারাদিন গল্প নিয়ে বসে থাকার সময়ও আমার নেই। আমার ব্যাক্তিগত জীবনে ব্যস্ততা আছে। সামনে পরীক্ষা। রাতজেগে গল্প লিখলে পড়ব কখন? দিনের বেলাতেও লিখার
সময় নেই। এজন্য একদিন পর পর গল্প দিচ্ছি।
আর যারা গল্প বাদেও আমাকে নিয়ে কটু কথা বলেন, তারা একটাবার ম্মরণ করবেন, আমি আপনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নই। বা আমি আপনার টাকায় খাইও না পড়িও না। তাই ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। আর গল্প ভালো না লাগলে ভুলগুলো ধরিয়ে দেন, শুধরে নিবো। তবে আমার শিক্ষা নিয়ে কথা বললে আমিও ছেড়ে কথা বলব না।
ভুলে যাবো আপনি কে? যারা গল্প পড়ে গল্পের লেখিকাকে জাজ করে তাদের মন- মানসিকতা কেমন বলার অপেক্ষা রাখে না, ধন্যবাদ। )

শিফা ফুটন্ত গরম পানি ছুঁড়তেই নিহা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। ওর শরীর লালবর্ণ হয়ে জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, প্রাণটা বুঝি বেরিয়েই যাবে।
তবুও মুখ খুলছে না। শিফা নিহার হাতে ছুরির আঘাত করে মরিচের গুঁড়ো ডলে দিলো। নিহা এবার দাপড়াতে লাগল। চেয়ারে বাঁধা অবস্থায়
কেঁদে ছেড়ে দেওয়ার আঁকুতিও করছে। শিফাকে কোটি টাকার অফারও করেছে। আমেরিকায় ওর বাড়ি, গাড়ি যা আছে সবকিছুর ভাগ সে দিবে।
শিফা নিশ্চুপ হয়ে ওর ডান হাতের বাহুও কেটে মরিচের গুঁড়ো লাগিয়ে দিলো। প্রচন্ড জ্বলছে।
নিহা কাঁটা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগল। শিফার মুখে হাসি ফুটল। এতক্ষণে ওর মনে সুখ
সুখ অনুভব হচ্ছে। শিফা নিহাকে বলল,

-‘প্রশান্ত সাফাকে কেন মেরেছে?’
-‘জানি না। তবে আমি ওদের ইন্টিমেট হতে সাহায্য করেছি।’

To be continue………..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here