সাত রং,সূচনা পর্ব

0
3264

সাত রং,সূচনা পর্ব
Write : Sabbir Ahmed

ঘড়ির কাটায় তখন রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। সপ্তর্ষী অপেক্ষা করছে তার প্রিয় মানুষটির জন্য। জাহিদ এখনো অনলাইনে আসছে না। গতদিন গুলোতে জাহিদ এর থেকে একটু আগেই অনলাইনে আসতো।
,,
এদুজনের অপেক্ষা যার যার জায়গা থেকেই করতে হয়। কখনো ফেস টু ফেস দেখা হয়নি তাদের। সম্পর্ক টা ফেসবুকে, প্রথম দুজনের বন্ধুত্ব তারপর সেটা ভালবাসায় পরিণত হওয়া।
,,
আরও কিছুসময় পর জাহিদ অনলাইন হলো। মেবাইলের ডাটা অন করতেই পকিং পকিং শব্দে অনেকগুলো ম্যাসেজ চলে আসলো। জাহিদ সিন করে দেখে, তার সপ্তর্ষী অনেক গুলো, এ্যাংরি আর স্যাড ইমোজি দিয়ে রাখছে।
,,
জাহিদ ও যানে আজ তার উপর দিয়ে ঝড় যাবে কারন আজ তার অনলাইনে আসতে লেট হয়েছে। জাহিদ ভয়ে ভয়ে সপ্তর্ষী কে ম্যাসেজ করলো..
-সরি! একটু লেট হয়ে গেলো (জাহিদ)
-অনলাইনে আসার কি দরকার ছিলো? ঘুমালেই পাড়তেন (সপ্তর্ষী)
-না মানে দোকান থেকে আসতে একটু লেট হইছে আর বাসায় এসে একটু..
-থাক থাক আর বাহান দেখাতে হবে না। আমার জন্য অনলাইনে আসছেন তো তাই না??
-হুমমম
-অফলাইন হবেন এখনি, যান ঘুমিয়ে পড়েন৷
-সরি! সরি! সত্যি আমি ফ্রি ছিলাম নাহ, আমি দোকান থেকে এসে খেয়ে তারপর অনলাইন হইছি
-হুমমম। দোকান +লেখাপড়া নিয়ে খুব চাপে আছো তাই না?
-অনেকটা সেইরকমই। তুমি খেয়েছো?
-হ্যাঁ খেয়েছি। শোনো
-বলো
-সারাদিন আমাকে মিস করোনি?
-একটু একটু
-ওই ওই একটু একটু মানে? আমাকে তোর মনে পড়েনি তাই না??
-না পড়েছে তবে এত বেশি মনে পড়েছো যে মনে হয়নি যে তোমাকে মিস করছি
-হইছে আমাকে পাম দিতে হবে না
-পাম দিলাম কোথায়?
-হুমমম। শোনো আসল কথায় আসি
-তুমি কি এতক্ষণ নকল কথা বলছিলা?
-উফফ দরকারি কথায় আসি
-হুমম সেইটা বলো।
-হুহহহ, আমি কাল রাজশাহী যাচ্ছি
-হঠাৎ?
-খালামণি অসুস্থ তাই একটু দেখতে যাবো
-ওহহ ফিরবা কবে?
-দুই একদিন থেকেই ফিরবো
-তো, ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী যাচ্ছো। রাজশাহী যেতে হলে তোমার শ্বশুর বাড়ির এলাকার উপর দিয়ে যেতে হবে..
-হ্যাঁ সিরাজগঞ্জ দিয়ে যেতে হয়
-আমাদের বাসায় আসবে??
-বিয়ের আগে গেলে তোমার ঠ্যাঙ আর আমার কোনোটাই আস্ত থাকবে না
-আচ্ছা একটু দেখা করি?
-ফেরার পথে
-সত্যি!!(জাহিদ খুশি হয়ে)
-দেখা যাক যদি সময় পাই
-সময় হবে তোমার। কিন্তু তুমি আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে আর দেখা করবে না
-বললাম তো দেখা যাক
-হুমম
-অনেক রাত হলো ঘুমাও এখন
-আর তুমি?
-আমিও ঘুমাবো, কাল তো আবার যেতে হবে
-হুমম খালা বাড়ি পৌঁছে ফোন করবে কিন্তু
-আচ্ছা করবো, যাই এখন?
-ওকে গুড নাইট
-হুমম গুড নাইট
,,
পরদিন সকাল বেলা..
সপ্তর্ষী একাই যাবে তারা খালাকে দেখতে। সকালের বাসে উঠে সপ্তর্ষী। কিছু পথ ভাল ভাবে আসার পর চরম একটা দূর্ভোগে পড়ে যায় সপ্তর্ষী। সিরাজগঞ্জের কড্ডায় এসে সব গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। বাসের মধ্যে বসে থাকা সপ্তর্ষী ভাবছে হয়তো জ্যামে পড়েছে। কিন্তু না,দীর্ঘ সময় একই জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার পর জানতে পারলো “বাস শ্রমিক ইউনিয়ন” এর ধর্মঘট, তাও হঠাৎ করে। কারণ টা সপ্তর্ষীর অজানা৷
,,
লোকে বলাবলি করছিলো সন্ধ্যায় হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই সপ্তর্ষী ধৈর্য ধরে বসে ছিলো। বিকেলের দিকে সপ্তর্ষী জাহিদ কে কল করলো।
-হ্যালো (জাহিদ)
-হ্যাঁ আমি তোমাদের জেলায় (সপ্তর্ষী)
-আমাদের এখানে মানে! রাজশাহী এখনো যাও নি?
-সেই সকালে রওনা দিয়েছি, এখানে হয়তো কোনো সমস্যা হইছে কোনো গাড়ি চলতে দিতেছে না
-ওহহহ তাহলে কি করবা এখন? ফিরেও তো যেতে পারবে না
-সবাই বলছে সন্ধ্যায় ঠিক হয়ে যাবে
-ওহহ তাহলে ওয়েট করো
-তোমাদের সিরাজগঞ্জের মানুষ এমন কেনো?
-আরেএএ এটা হয়েই থাকে যেকোনো জেলায়। আচ্ছা বাসায় তুমি ফোন করে জানিয়েছো?
-হুমম জানিয়েছি। তুমি দোকানে?
-হ্যাঁ
-এসে দেখা করে যাও
-এখন?
-হুমম এখন
-কোন জায়গায় আছো?
-কড্ডা না কি যেন নাম!
-হ্যাঁ বুঝেছি, আচ্ছা আমি কিছুক্ষণ পর কল করে তোমায় জানাচ্ছি
-হুমমমম
,,
জাহিদ সময় ম্যানেজ করে সপ্তর্ষী কে ফোন করে বলে সে দেখা করতে যাচ্ছে। জাহিদ এর খুশি আর মনে ধরছে না। সামনা সামনি কখনো দেখা হয়নি ভেতরে ভয় ও কাজ করছে৷
জাহিদ কড্ডা তে পৌঁছানোর পর সপ্তর্ষী কে ফোন করে বাসের নাম জেনে নেয়।
,,
সপ্তর্ষী আরও বলে সে বাসের গেটের সামনেই নিচে নেমো দাঁড়িয়ে আছে। জাহিদ তার কথা মতো সেই বাসটার কাছে যেতেই সপ্তর্ষী কে দেখতে পায়।
জাহিদ বাস থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। সপ্তর্ষীও তাকে দেখে ফেলে।
,,
দুজনই বেশ লজ্জা পাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। জাহিদ ধীর গতিতে সপ্তর্ষীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে..
-কে কে কেমন আছেন?? (জাহিদ)
-ভালো। ফোনে “তুমি” আর সামনা সমানি “আপনি” বলে সমন্ধ করছো কি ব্যাপার!(সপ্তর্ষী)
-একটু নার্ভাস, গলা টা ঠিক করে নেই। এহমম এহমম কেমন আছো??
-জ্বি ভালো আছি। এখন বলো কি করবো আমি? ফিরেও তো যেতে পারবো না
-হ্যাঁ তাও ঠিক এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই
-যদি বেশি রাত হয়ে যায় তো সমস্যায় পড়ে যাবো
-হুমম তাহলে কি করবা?
-সেটাই তো ভাবছি
-আচ্ছা সন্ধ্যায় ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে, আমরা অপেক্ষা করতে থাকি
-ওকে
-চলো একটু সামনে যাওয়া যাক
-হুমমম চলো
,,
দুজন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোতে থাকে।
-প্রথম দেখা তাও এইভাবে! ভাবতেও পারিনি (সপ্তর্ষী)
-আমিও না (জাহিদ)
-এই তুমি আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলছো না কেনো? ভয় পাচ্ছো নাকি?
-সত্যি বলব?
-তো! কি বলবা?
-তুমি এত সুন্দরী যে, তোমাকে সামনে থেকে দেখে মুখ দিয়ে আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না
-ম্যাসেজে তো খুব পটর পটর করতে পারো, আর যেই সামনে এসেছি তখনই সাইলেন্ট!
-আচ্ছা এখন থেকে বলব
-হুমম। আর আমি অতটা সুন্দরী নাহ। তুমি কিন্তু দারুণ দেখতে
-আরে না
-জ্বি। আর সত্যি বলতে আমারও কথা বলতে ভয় করছে। কি বলব কি বলব এমন করতে করতে সব গুলিয়ে যাচ্ছে
-এইতো ধীরে ধীরে আমরা কথা বলা শিখছি
,,
জাহিদ এর কথা শুনে সপ্তর্ষী হেসে উঠে। আসলে হাঠৎ করে এভাবে দেখে কথা বলা তাও আবার পছন্দের মানুষের সঙ্গে, সব কিছু গুলিয়ে যাওয়াই স্বভাবিক।
তারপর অনেক কথা হলো। দুজন তাদের রিলেশন নিয়ে অনেক কথাই বলল। এখন বেশ ফ্রি হয়ে গেছে তারা। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো নাম নেই।
দেখতে দেখতে এশার আজান ও দিয়ে দিলো।
-আজ মনে হয় এখানেই থাকতে হবে (সপ্তর্ষী)
-এই বাসে থাকতে পারবে না (জাহিদ)
-কিছু করার নেই
-আমাদের বাড়িতে যাবে??
-বিয়ের আগেই? শ্বাশুড়ি দেখলে ঝাটা মেরে বাহির করে দিবে
-আমি বাড়িতে ফোন করে বলে দেখি কি বলে
-নাহহ থাক আমি বাসেই ভালো আছি
-না বাসে তোমায় থাকতে হবে না এটা রিস্ক, আর এখনকার দিন ভালো না।
,,
জাহিদ তার কোনো কথাই শুনলো না সোজা তার মায়ের কাছে কল করলো..
-হ্যালো (জাহিদ এর মা)
-হ্যাঁ মা একটা সমস্যা পড়েছি (জাহিদ)
-কি সমস্যা??
-আমার একটা ফ্রেন্ড ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী যাচ্ছিলো তো আমাদের এখানে এসে হঠাৎ ধর্মঘটে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
-বুঝেছি, আমাদের বাসায় রাতটুকু থাকবে তো তাই না?
-হ্যাঁ মা
-তো নিয়ে আয় সমস্যা কি? এর জন্য আবার ফোন করতে হবে নাকি?
জাহিদ হেসে বলল
-আচ্ছা আচ্ছা আমি ওকে নিয়ে আসছি
,,
জাহিদ খুশি হয়ে সপ্তর্ষীর দিকে এগিয়ে যায়..
-চলো মা যেতে বলেছে (জাহিদ)
-আন্টি রাজি হয়েছেন!(সপ্তর্ষী)
-হ্যাঁ
-কি বলেছো তুমি??
-আমি বলেছি আমার একটা ফ্রেন্ড এর এই এই সমস্যা আজ রাতটুকু থাকবে
-ফ্রেন্ড টা ছেলে নাকি মেয়ে এটা জানিয়েছো?
-উমমমম মনে হয়ে জানিয়েছি
-আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে
-আরে মা কিচ্ছু বলবে না চলো তো
,,
দুজন বাসার সামনে চলে আসলো।
-এটাই তোমাদের বাড়ি??(সপ্তর্ষী)
-হ্যাঁ এটাই (জাহিদ)
,,
জাহিদ দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপলো। জাহিদের মা এসে দরজা খুলতেই দুখানা হাসিমুখ তার মুখের সামনে ভেসে উঠলো। একটা তার ছেলে অন্যটা কে সে জানে না। জাহিদের মা একবার জাহিদের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মেয়েটার দিকে..
-তুই না বললি বন্ধু (জাহিদের মা হতাশ হয়ে)
-এটাই তো আমার বন্ধু (জাহিদ)
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি (সপ্তর্ষী)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here