সাত রং,5 END PART
Write : Sabbir Ahmed
-আপনার কথার আমি কিছুই বুঝতেছি না (জাহিদ)
-আমার কথা বোঝার মতো মাথা আল্লাহ আপনাকে দেননি (সপ্তর্ষী)
-আচ্ছা দেয়নি ভালো করেছে। আসামীর ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলেন
-আপনাকে বিয়ে করতে হবে
-সেটা আমি দেখবো আপনাকে বলতে হবে না
-জ্বি না দুদিন পরে বিয়ে করতে হবে তাও আবার আমাকে..
-মজা নেন তাই না? দুদিন পর আপনার বিয়ে আর
-ওই দেখি তো, আমার দিকে তাকান।
-বলেন
-আমি ফিরতে চাই
-নাহহ কি বলেন এগুলা! দুদিন পর আপনার বিয়ে আর এখন এসব বলছেন
-এত কথা বলার তো দরকার নেই, আমি বলেছি আমি ফিরতে চাই
-আমার সোজা কথা “না”
-রাগ নাকি অভিমান জমে আছে?
-কোনটাই না
-আমি যদি জোর করে কিছু করি
-সেটা ভালো হবে না
-আমি জানি আপনি মানা করবেন। এটাই স্বাভাবিক
-একটা কথা বলি?
-বলেন
-আপনার তো অনেক আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা, আপনি তো ভালো দেখে একটা রিলেশন করতেন
-হুহহ কে বলেছে??
-শুনেছি
-কে কি বলেছে জানি না তবে শোনেন একটা রিলেশনেও যাইনি
-ভালো
,,
দুজন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।
-বাসায় চলে যান (জাহিদ)
-যাবো না (সপ্তর্ষী)
-এটা তো আপনার থাকার জায়গা না
-এটাই আমার থাকার জায়গা
-জোর করলেই সবকিছু পাওয়া যায় না
-জোর করার জায়গা টা আমার আছে, তাই আমি জোর করি
-মিছে
-উহুমম একদম নাহহ। আমি নিশ্চিত হয়েই জোর করছি
-কোন বিষয়ে নিশ্চিত??
-আপনি আমাকে এখনো ভালো বাসেন
-হুমম তা ঠিক এখনো ভালবাসি
-হুমম এটা বুঝতে পেরেই ফিরতে চেয়েছি
-আবারও যে দুঃখ দিবেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে
-এইতো এইতো মেইন পয়েন্টে আসছেন। এর মানে ভয় পাচ্ছেন।
-নাহহ আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারছি না
-ওহহহ
-হুমম রাত হচ্ছে বাসায় যান
-আরেকটু কথা বলি
-বাসায় কি মনে করবে?
,,
সপ্তর্ষী কিছু বলতে যাবে তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তার হবু বর কল করেছে।
-ওয়েট আমি একটু কথা বলে নেই (সপ্তর্ষী)
-হুমমম (জাহিদ)
-হ্যা বলো (সপ্তর্ষী ফোন রিসিভ করে বলল)
-কোথায় তুমি?
-এইতো একটা ফ্রেন্ড এর বাসায়
-এত রাতে! বাসায় যাও নি কেনো? দুদিন পর তোমার বিয়ে আর তুমি এত রাতে এখনো বাইরে!
-একটা দরকারে আসছি
-কি দরকার??
-বাসায় গিয়ে বলব ফোন রাখছি
,,
জাহিদ কথা শুনে একটু হাসছিলো।
-হবু বর কল করেছে?? (জাহিদ)
-হুমমম (সপ্তর্ষী)
-বাহহ ভালই তো খুব কেয়ারিং করে
-হুমম ছেলেটা ভালই
-ভালো হলেই ভালো
-আপনি চলে গেলে আবার রান্না শুরু করবো। কিছু বলার থাকলে বলেন
-নাহহ সরাসরি এ্যাটাকে না গেলে আপনার অভিমান ভাঙবে না
,,
সপ্তর্ষী তার জায়গা থেকে দ্রুত সরে আসলো জাহিদ এর দিকে আর জাহিদ কিছু বুঝে উঠার আগেই জড়িয়ে ধরলো।
,,
জড়িয়ে ধরার পর দুজনের কণ্ঠস্বর আটকে গেছে কারও মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছে না। জাহিদ তে তাকে ছাড়িয়ে নিবে সেই শক্তি টাও পাচ্ছিলো না।
-এতক্ষণ যত কড়া করা কথা বলেছো শুনেছি। তোমার মনের যত রাগ আছে সব আমার উপর ঝেড়েছো। আর না এখন আমার কথা শুনো (সপ্তর্ষী কান্না ভেজা কণ্ঠে বলল)
-….(জাহিদ চুপ)
-প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও..
-…..(জাহিদ চুপ)
-তোমার সাথে সেদিন দেখা হওয়ার পর আমার হুশ ফিরেছে তারপর থেকেই আমার রাতে আর ঘুম হচ্ছে না। আগের কথা গুলো মনে পড়ার পর থেকে অপরাধ বোধ কাজ করছে।
,,
এবার জাহিদ এর মন একটু নরম হলো। হাজার হলেও আর শক্ত হয়ে থাকা যায় না। প্রিয় মানুষটি কান্না করছে, সেটা দেখে কি আর সহ্য করে থাকা যায়? জাহিদ বলল..
-কান্না করো না, যা হবার হয়েছে আগের কথা গুলো ভুলে গেছি আমি। এখন শোনো দুদিন পর বিয়ে এটা সবাই জানে। এটা ক্যান্সেল করতে পারবে না, আর করাটাও ঠিক হবে না (জাহিদ)
-আমি চলে আসবো তোমার কাছে (সপ্তর্ষী)
-ধুরর কি যে বলো না ওভাবে আসতে নেই। ওভাবে আসলে বাবা-মা কতটা কষ্ট পাবে বোঝো??
-আর তুমি??
-আমার কষ্টের কথা বাদ দাও। এখন যেমন আছি তেমন ভাবেই থাকবো
-উহুমম অনেক কষ্ট দিয়েছি, আর কষ্ট দিতে পারবো না
-তুমি করতে চাও হ্যাঁ
-আমি আর বাসায়ই ফিরবো না। এই যে এখন যেভাবে আছি সেভাবেই থাকবো
-মাথার তার গুলো কি এলোমেলো হয়ে গেছে
-জানি না আমি তোমাকে চাই
-….(জাহিদ চুপ)
-দেখো কতটা কাছে এসেছি। আমি দূরে চলে গিয়েছিলাম আমিই আমার আবার আসছি। প্লিজ আর মানা করো না
-তুমি যানো বাসা থেকে চলে আসলে তোমার পরিবারের কি হবে?
-তাহলে কি করবো বলো?
-সবকিছু হয়ে গেছে আর কিছু করেও এটা আটকানো যাবে না৷ আর তোমার হবু বর ও তো খুব ভালো। এই ছেলেটা শুধু শুধু কষ্ট পাবে
-ধুররওও ওকে কি আমি ভালবাসি নাকি? আমার সাথে বিয়ে না হলে আরেকটা পাত্রি দেখবে। কিন্তু তুমি তো সেটা করবে না। আমার সাথে বিয়ে না হলে তুমি বিয়েই করবে না আমি জানি
-তো কি হয়েছে??
-কি হয়েছে মানে? আমার ভালবাসা যে কষ্টে থাকবে
-এতদিন তো কষ্ট দিয়েছো
-না বুঝে, বাচ্চা ছিলাম তো
-হা হা তাই?
-হুমমম
,,
সময় যাচ্ছে আর সপ্তর্ষী জাহিদ কে আরও শক্ত জড়িয়ে ধরছে। ভালবাসার মানুষটি ভুল করলে সেটা ছাড় দিয়ে কাছে টেনে নেওয়া টাই উত্তম। কিন্তু সপ্তর্ষীর বিয়েটা খুব নিকটে। জাহিদ চাচ্ছে না একটা কষ্টের অধ্যায় শুরু হোক তাদের পরিবারের মধ্যে৷
,,
এদিকে সপ্তর্ষী জাহিদের বুকে নাক ঘষা শুরু করেছে।
-বেমানান (জাহিদ)
-কোনটা? (সপ্তর্ষী)
-এই যে আরেক জনের বউ আমার বুকে নাক ঘষছে
-কে বলেছে আরেক জনের বউ? আমি বিয়ে করছি না এটাই ফাইনাল। যদি আমার বিয়ে হয় সেটা তোমার সাথে হবে
-হুমম কথা বলো তবে নাক ঘষা বাদ দাও সুড়সুড়ি লাগছে
-তাহলে তো আরও দেওয়া দরকার
-এই এই অনেক হয়েছে এবার একটু দূরে যাও (জাহিদ সপ্তর্ষী কে দূরে সড়িয়ে দিলো)
-এই তুমি ছাড়িয়ে নিলে কেনো?
-অনেক হয়েছে বাসায় যাও
-না যাবো না আমি
,,
জাহিদ সপ্তর্ষীর হাত ধরলো তারপর টানতে টানতে দরজার বাইরে নিয়ে গেলো।
-বাসায় যাও, দেখে যেয়ো, আর নতুন মানুষদের নিয়ে ভালো থেকো (জাহিদ দরজা বন্ধ করে দিলো)
,,
সপ্তর্ষী কিছু বলবে সেই সুযোগ টা দিলো না জাহিদ। “জাহিদ কে রাজি করাতেই হবে” এইটা ভেবে সপ্তর্ষী আর বাসায় গেলো না। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলো। সে মনে মনে স্থির করলো সুযোগ পেলেই ভেতরে ঢুকবে।
,,
কিছুক্ষণ পর,
একটা লোক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলো তার নিক রুমে যাওয়ার জন্য। সে সপ্তর্ষী কে দেখে থেমে যায়।
আর বলে….
-ভেতর থেকে কি দরজা খুলছে না? (লোকটি)
-না (সপ্তর্ষী)
-আচ্ছা আমি দেখছি
-কাজ হবে না আংকেল ও জানে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে
-ওহহ স্বামী স্ত্রীর মধ্য ঝগড়া! ব্যাপার না এতে ভালবাসা বাড়ে। (লোকটি হাসতে হাসতে চলে গেলো)
-মাথা খারাপ নাকি?? (সপ্তর্ষী লোকটির উদ্দেশ্যে বলল)
,,
আরও অনেকটা সময় পার করলো। কলিং বেল বাজাতে থাকলো কিন্তু ভেতর থেকে জাহিদ কোনো সাড়া দিলো না। অনেক রাত হয়ে গেছে সপ্তর্ষী উপায় না পেয়ে বাসায় চলে যায়।
,,
সপ্তর্ষী বাসায় গিয়ে জাহিদ কে একটা টেক্সট করে..
-কাল দিন পর গায়ে হলুদ, তুমি শুধু সন্ধ্যার আগে একবার কল দিয়ো আমি তোমার বাসায় চলে যাবো। আর হ্যাঁ আমি অপেক্ষা করবো আমার ভালোবাসার জন্য.. (সপ্তর্ষী)
,,
জাহিদ টেক্সট টা দেখার পর খুব কান্না করলো। কারন সে কল করতে পারবে না। নিজের সিদ্ধান্তের উপর সে অটল। কিন্তু এদিকে তার ভালবাসার মানুষটিও হাড়িয়ে যাচ্ছে চিরদিন এর জন্য। সেটাও সহ্য করতে পারছে না।
,,
দেখতে দেখতে বিয়ের আগের দিনটা চলে এলো। সকাল সকাল জাহিদ অফিসে চলে গেলো। আর সপ্তর্ষী ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলো কখন তার প্রিয় কল করবে। আর সে সব কিছু ফেলে তার কাছে ছুটে যাবে।
,,
কিন্তু নাহহ দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়ে গেলো এখনো ওপাশ থেকে কোনো কল আসলো না। এদিকে সন্ধ্যা যত সন্নিকটে জাহিদ এর টেনশন ততই বাড়ছিলো। অফিসে থাকতে না পেরে বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে কান্না করতে লাগলো।
,,
সন্ধ্যা পেড়িয়ে গেলো৷ জাহিদ তখনও কান্না করছে আর ভাবছে..”ওপাশে সে হয়তো তার ফোনের অপেক্ষায় আর নেই। সময় তো পেড়িয়ে গেছে। আর ভালবাসার মানুষটিও চিরদিন এর জন্য দূরে সরে গিয়েছে”
,,
জাহিদ পুরোনো কথা মনে করে বালিশ এর নিচে মুখ লুকিয়ে কান্না শুরু করলো। প্রায় ঘন্টা খানেক পার হবার পর হঠাৎ করেই তার রুমের কলিং বেল টা বেজে উঠলো তাও একসাথে কয়েকবার।
,,
জাহিদ বালিশ এর নিচ থেকে মুখ বের করে চোখের পানি মুছে নিলো। আর এদিকে একের পর এক কলিং বেল দিয়েই যাচ্ছে কেউ। থামার নাম নিচ্ছে না।
,,
জাহিদ এগিয়ে দরজা টা খুলতেই দেখলো, একটা কালো বোরখা পরা মেয়ে মুখোশ টাও লাগানো আর হাতে একটা ব্যাগ। জাহিদ বলল..
-কাকে চাই? (জাহিদ)
-তোকে চাই (জাহিদ কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলো এটা সপ্তর্ষী)
,,
এরপর কি আর হার্টবিট ঠিক থাকে? ধুকধুকানি এতটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে মনে হচ্ছে এখনো বেড়িয়ে আসবে। জাহিদ দরজা লাগিয়ে দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
,,
সপ্তর্ষী ব্যাগ টা নিচে রেখে জাহিদের কাছে এসে আবার জড়িয়ে ধরলো। আর বলল..
-তুই কল দিলি না কি জন্য?(সপ্তর্ষী কান্না করে)
-এমনি (জাহিদ ও কান্না করছে)
-তুই বাসায় এসে তো আমার জন্য ঠিকিই কান্না করতেছিস
-তো কি করবো?
-তুই তো কিছুই করতে পারিস না যা করার আমি করলাম
-চলে আসছো কেনো এভাবে?
-তুই এখানে কান্না করে শরীর খারাও করবি আর আমি বসে থাকবো তাই না??
,,
কথা বলতে বলতে সপ্তর্ষী তার নেকাব টা খুল নিলো। তারপর জাহিদ এর গালে ঠোঁটে কপালে দুচোখের পাতায় তার ইচ্ছে মতো চুমু খেলো। তাকে থামানোর উপায় নেই। জাহিদ ও তেমন কিছু বলল না।
-অনেক হয়েছে এখন আর দূরে থেকো না (সপ্তর্ষী)
-…(জাহিদ ও সপ্তর্ষী কে দুহাতে জড়িয়ে নিলো)
-চলো আমরা চলে যাই
-কোথায়?
-তোমার ইচ্ছে তুমি যেখানে বলবে। আর প্লিজ কান্না করো না
-তুমি তো কান্না করতেছো
-তোর জন্যই তো, আগে ফোন করলে তো এত কান্না করতে হতো না
-হুমমম
-হুমম হুমম করলে চলবে না ইয়ে দাও
-ইয়ে মানে কি??
-এই যে আমি তোমাকে দিলাম কয়েকটা সেগুলো
-এখন না
-এখন না কখন? বাকির নাম ফাকি, এখন চেয়েছি এখন দিতে হবে
-হুমম দিচ্ছি
,,
জাহিদ সপ্তর্ষীর গালে একটা চুমু খেলো..
-ঐ ঐ এটা কি করলা? (সপ্তর্ষী)
-তুমি তো করতে বললা(জাহিদ)
-আমি কি বাচ্চা? যে ঐটা গালে দিচ্ছো
-তো কোথায় দিবো?
-হায়রে এখন মনে হচ্ছে চলে এসে ভুল ই করলাম। এই ছেলেটা বলে কি হ্যাঁ! ঠোঁটে ইয়ে দিতে হয়
-এ এ এখন না পড়ে
-মনটা চাচ্ছে বাসায় চলে গিয়ে..দিতে বলছি দাও
,,
জাহিদ উপায় না পেয়ে কোনোরকম সপ্তর্ষীর ঠোঁটে তার ঠোঁট স্পর্শ করালো।
-হয়েছে অনেক হয়েছে। আপনি নিজের হবু বউকে ইয়ে দিতে যে এত ভয় পান, কি বলব আর। চলেন এখন যাওয়া যাক (সপ্তর্ষী)
-কোথায়? (জাহিদ)
-শ্বশুর বাড়ি সিরাজগঞ্জ
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,