সাত রং,Part : 2

0
1989

সাত রং,Part : 2
Write : Sabbir Ahmed

-তুই না বললি বন্ধু(জাহিদের মা হতাশ হয়ে)
-এটাই তো আমার বন্ধু(জাহিদ)
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি (সপ্তর্ষী)
,,
সপ্তর্ষীর সালাম জবাব হয়তো তিনি মনে মনে নিলেন। বেশ রাগি আর চিন্তিত লাগছিলো জাহিদের মা কে। সপ্তর্ষী সেটা বুঝে ফেলে। তাই জাহিদ কে বলে…
-আচ্ছা সমস্যা নেই চলে যাই (সপ্তর্ষী)
-আরে নাহহ কই যাও, (জাহিদ)
-আন্টি তো..
-ও মা শোনো না, আমার ছেলে বন্ধু আসলে কি তুমি মানা করতে? ও একটু বিপদে পড়েছে বলেই তো এনেছি
-আচ্ছা থাকতে দিবো কিন্তু শর্ত আছে(মা)
-কি শর্ত??(জাহিদ)
-ওকে ভেতরে ঢুকতে দিবো খাইতে দিবো, কিন্তু তুই বাইরে থাকবি
-এই ঠান্ডায়?
-হ্যাঁ
-মরে যাবো, মরে যাবো, মা আমি মরেই যাবো
-আমার আর কিছু বলার নেই
-দাঁড়াও দরজা লাগিয়ো না, এই তুমি যাও (জাহিদ সপ্তর্ষী কে ভেতরে যেতে বলল)
-আর তুমি
-আরে তুমি যাও তো আসছি আমি
-তোর আর আজ আসা হবে না, মা তুমি ভেতরে আসো তো (হঠাৎ করে মুচকি হাসি দিয়ে সপ্তর্ষী কে নিয়ে জাহিদের মা দরজা লাগিয়ে ভেতরে চলে গেলো)
,,
জাহিদ এই ঠান্ডায় বাইরে। পেট ও বেশ ডাকছে, সেই দুপুরে খেয়েছে। এখন রাত ভালই হয়েছে পেট ডাকাটাই স্বাভাবিক। পেটের ডাকাডাকি থামাতে জাহিদ তাদের বাসার সামনের রাস্তাটায় আসে। কিন্তু পোড়া কপাল একটু আগে বাসায় যাওয়ার সময় দোকান টা খোলা ছিলো আর এখন বন্ধ।
,,
এক বস্তা হতাশা নিয়ে আবার নিজের বাসার দিকে ফিরতে শুরু করলো। ওদিকে সপ্তর্ষী জাহিদের মায়ের সাথে গল্প শুরু করে দিয়েছে। বাসা কোথায়? বাসায় কে কে আছে? জাহিদের সাথে কিভাবে পরিচয় হলো?
,,
এইগুলো নিয়ে নানান প্রশ্ন। সপ্তর্ষী কথার মাঝে মাঝে জাহিদের মা কে বার বার বলছিলো জাহিদ কে ভেতরে নিয়ে আসার কথা। দুই একবার বলায় জাহিদের মা তেমন একটা মনে করেছিলো না। যখন সে বার বার একই কথা বলতে থাকলো তখন জাহিদের মায়ের টনক টা একটু নড়লো। মা মনে মনে ভাবছিলো যে “আমার ছেলে চিন্তা আমার বেশি থাকবে দরদ ও আমার বেশি থাকবে। মেয়েটা কেনো এতো টেনশন করছে? যেখানে আমি চুপ!”
,,
আরেকটু রাত হওয়ার পর জাহিদের মা সপ্তর্ষী কে একটা রুমে বসতে দেয় আর তাকে বলে আসে কিছুক্ষণ পর খেতে দিবে। সপ্তর্ষী কে বসিয়ে মা আসেন জাহিদের কাছে। দরজা খুলে দেখেন ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে আসামীর মতো।
-এইদিকে আয় (মা)
-হুমম বলো (জাহিদ)
-মেয়েটা কি হয় তোর?
-বন্ধু
-সত্যি বল
-আমি মিথ্যে বলতে যাবো কেনো?
-ও যে বলল তোদের মধ্য অন্য একটা সম্পর্ক আছে (জাহিদের পেট থেকে কথা বেড় করে আনার জন্য মিথ্যে বললেন)
-….(জাহিদ ও মনে মনে ভাবছে “সে কি তাহলে সব বলেই দিলো? এখন কি হবে?”)
-কিরে কথা বলিস না কেনো?
-মা আ আ আসলে..
-কি?
-ও যা বলেছে ঠিকই বলেছে
-তার মানে তুই ওকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসছিস?
-ছি ছি না না, ও তো রাজশাহী যাচ্ছিলো ওর খালা কে দেখতে। আর ধর্মঘট এর কারণে…
-ও বাসেই থাকতো বাসায় নিয়ে এলি কেনো?
-নাহহ বাসে থাকা নিরাপদ না। মেয়ে মানুষ বোঝো না তুমি?
-অনেক বোঝা হয়েছে এখন শোন তোদের মধ্যে কি বিয়ের ব্যাপারে কথা বার্তা হইছে
-না, আমরা এই বন্ধু হিসেবে কথা বলি
-ওহহ আচ্ছা, মেয়েটাকে আমার পছন্দ হইছে, দেখতে দারুণ। তবে জানিনা ব্যবহার টা কেমন
-মা ও খুব ভালো
-থাম থাম এত চিল্লিয়ে বলতে হবে না, তুই ওকে ভালবাসিস ওর সবকিছুই তোর কাছে ভালো লাগবে। এটা আমাকে বোঝাতে আসিস না এখন ভেতরে আয়
-…(জাহিদ ভাবছে ” রিলেশন আছে জানার পর এতক্ষণ তো লাঠি দিয়ে পেটানোর কথা। মা রাগছে না কেনো? বকা দিচ্ছে না কেনো?”)
-কিরে ভেতরে আয়
-জ জ্বি আসছি
-মেয়েটার সাথে অনেক কথা হয়েছে। ও বোধ হয় অনেক ভয় পেয়েছে। তুই গিয়ে কথা আমি তোদের জন্য খাবার গরম করি
-ঠিক আছে
,,
সপ্তর্ষী যে রুমে বসে আছে জাহিদ সে রুমে গিয়ে তো সেই খুশি। সপ্তর্ষীর কাছে এসে বসেই বলল..
-আমি ভাবিনি মা এতটা সহজে সব মেনে নেবে। মা কে বলে তুমি ভালই করেছো। মা তোমাকে পছন্দ করেছে (জাহিদ)
-এই ওয়েট, বাংলা মুভির মতো এক নাগাড়ে কি সব বলে যাচ্ছো? আমি আন্টিকে কি বলে দিয়েছি?? (সপ্তর্ষী)
-আহহ বলে দিয়ে ঢং করছো তাই না? থাক আমাকে বলতে হবে না
-ওই সিরিয়াসলি। আমি বুঝতেছি না তুমি কি বলছো
-হুহমম, মাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলে দিয়েছো এটাই। জানো আমি খুব খুশি হয়েছি
-এই ওয়েট ওয়েট আমি সম্পর্কের কথা বলে দিয়েছি মানে!
-মা তো বলল আমাদের সত্যি টা তুমি তাকে বলেছো
-আমি এগুলোর কিছুই বলিনি
,,
জাহিদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল..
-সব শেষ!মা আমার পেটের সব কথা শুনে নিয়েছে। উনি কথা দিয়ে কথা বের করে আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে নিয়েছে (জাহিদ)
-কিহহহ!! তার মানে তুমি সব বলে দিয়েছো? (সপ্তর্ষী)
-হুমমম
-না এগুলা কি করলা? (মুহুর্তেই সপ্তর্ষীর কন্ঠে পরিবর্তন)
-কি করলাম?
-তুমি বলে দিলা কেনো??
-তো কি করবো? ইচ্ছে করে তো বলিনি, শুনে নিয়েছে।
-না কাজ টা ঠিক করোনি৷ আমি তো তোমাকে ঐভাবে ভালোবাসি না
,,
সপ্তর্ষীর কথা শুনে জাহিদ যেন আকাশ থেকে পড়লো।
-ঐ ভাবে ভালোবাসো না মানে? (জাহিদ)
-দেখো আমাদের সম্পর্কের শুরু মাত্র আর এর মধ্যে তুমি সব জানিয়ে দিয়েছো যেখানে আমাদের আজ প্রথম দেখা (সপ্তর্ষী)
-তো কি হয়েছে? বাসায় তো একদিন না একদিন বলাই লাগতো
-আমি চলে যাবো
-মানে! তুমি চলে যাবে কেনো?
-না এখানে আমি আর থাকতে পারবো না
-কেনো?
-তুমি যা করলা!
-আমি কি করলাম
-শোনো শুধু এটুকু বলি, আমি তোমাকে অতটা গভীর ভাবে ভালোবাসি না যেটা তুমি এখনই বাসায় বলে দিবে
-তাহলে আবেগ মাখানো ম্যাসেজ গুলো কি মিথ্যে ছিলো?
-না ওগুলো সত্যি ছিলো তবে সেটা আলাদা ব্যাপার। আর আমি চলে যাচ্ছি
-না শোনো। এখন চলে গেলে মাকে আমি কি বলব? তার থেকে ভালো সকালে চলে যেয়ো
-তুমি যা করলা, এসব শোনার পর কি আর এখানে থাকা যায়??
-হুমম ঠিক। ভালবাসি সেটার কথাটা বলা ঠিক হয়নি। আসলেই থাকা যায় না (জাহিদ এবার কিছুটা রাগলো)
-…(সপ্তর্ষী চুপ)
-রাতটা কষ্ট করে পার করো। আর আমাকে কোনো ভাবেই ভালবাসতে হবে না
,,
জাহিদ তার রুমে চলে গেলো। সপ্তর্ষী এমন কেনো করলো সেটা বুঝতে পারেনি জাহিদ।
পরদিন সকাল বেলা..
সবাই মিলে হাসি খুশিতে সকালের নাস্তা শেষ করলো। এখন সপ্তর্ষীর যাওয়ার পালা।
বেশি দেড়ি না করে ঝটপট রেডি হয়ে নিলো। জাহিদের মা কে কোনো রকম “আসি আন্টি। আমাদের বাসায় যাবেন কিন্তু” এটা বলে বেড়িয়ে এলো।
সপ্তর্ষীকে বাস পর্যন্ত এগিয়ে দিতে হবে জাহিদের। রাস্তায় এসে জাহিদ বলল…
-বাস তো মনে হয় চলে গেছে(জাহিদ)
-ঐটা গেলে যাক, আরেকটাতে যাবো (সপ্তর্ষী)
-মাকে আরও কিছু কথা বলতে পারতে
-কি বলব? আমি তো আমাদের বাসায় যেতে বলেছি। আর তুমি যা বলেছো উনার সামনে আর চোখ তুলে তাকানো যায়
-ভালবাসার কথা বাসায় বললে তো সব মেয়ে খুশি হয় উল্টো তুমি রাগছো কেনো বুঝতেছি না
-তো যারা খুশি হয় তাদের সাথে গিয়ে তাদের সাথে গিয়ে সম্পর্ক করো আমার সাথে কি?
-আমি কিন্তু সেটা বলিনি
-দেখো তোমাকে সহ্য হচ্ছে চুপ করে থাকো
-আমি কি করলাম?
-না তুমি তো কিছু করোনি যা করার আমি করেছি
,,
ঝগড়া করতে করতে গতকালের সেই জায়গায় পৌঁছে যায় সপ্তর্ষী আর জাহিদ। আগের বাস টা চলে গেছে। এখন নতুন বাসে উঠতে হবে।
-আচ্ছা শোনো এভাবে রাগ করে যেয়ো না একটু হাসো আর ভালো ভাবে কথা বলো (জাহিদ)
-তুমি আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না (সপ্তর্ষী)
-কেনো?
-…(সপ্তর্ষী চুপ)
-আচ্ছা তোমার হয়তো অনেক রাগ হয়েছে। আমি প্রপোজ করে তোমার সব রাগ এখনি ঠিক করে দিচ্ছি
,,
কথাটা বলতেই সপ্তর্ষী জাহিদের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। জাহিদ গালে হাত দিয়ে সপ্তর্ষীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। জাহিদের চোখে পানি টলমল করছে।
-আচ্ছা রাগ কি এখন কমেছে?? (জাহিদ)
-আপনি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবেন না। এতেই আমার রাগ কমে যাবে (সপ্তর্ষী)
-ভালবাসার মানুষটি এমন হবে কে জানতো? মা তো তোমাকে এ সম্পর্কে কিছু বলেনি। তবুও আমার উপর রেগে ঝগড়া করছো। আমি তো ভাবছিলাম তুমি অনেক খুশি হবে
-এই বাসটা রাজশাহীর এটাতেই যাবো(জাহিদের কোনো কথাতেই কান দিলো না সপ্তর্ষী)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here