সাত রং,Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
-রেইনবো নামে একটা ভালবাসার মোহ থেকে আমি বের হতে পারিনি, তাই বিয়ের কথা মাথায়ও আসেনি (জাহিদ)
-…(জাহিদের কথায় সপ্তর্ষী বুঝতে পারলো যে তার কথাই বলছে)
-বাদ দেন এসব, আপনাদের জেলা টা খুব সুন্দর
-হুমম ধন্যবাদ। আমি একটা কথা বলব
-জ্বি বলুন
-বিয়ে করবেন না আপনি?
-সেটা আপনি শুনে কি করবেন?
-তাই বলে সারাজীবন একা একাই কাটিয়ে দিবেন
-একা একাই তো ভালো লাগছে। আর যখন একা থাকতে ভালো লাগবে না তখন….
-বিয়ে করে নিবেন তাই তো?
-না, তখন একা থাকার চেষ্টা করবো
-আচ্ছা আমি যাই তাহলে
-হুমমম ঠিক আছে
,,
সপ্তর্ষী তড়িঘড়ি করে সেই স্থান থেকে বিদায় হলো। জাহিদ বেঞ্চে বসে মুচকি হাসছে আর ভাবছে “ভয় পেয়েছে হয়তো। আমি তো তোমাকে কিছু বলতাম না। তোমার প্রতি একটু রাগ ও নেই। তবে অভিমান ছিলো তবে অভিমান গুলোতে দুষ্ট মিষ্টি আবদারে ভরা ছিলো। তবে যাই হোক তোমাকে তো দেখতে পেলাম সামনা সামনি। অসাধারণ দেখতে তুমি, যেমন টা আমি ভেবেছিলাম তার থেকেও বেশি। ”
,,
জাহিদ ও একসময় বেঞ্চ থেকে উঠে চলে যায় তার বাসায়। সেদিন থেকেই মন খারাপ আরও বেশি তার। কাজে থেকে এসে না খেয়ে শুয়ে থেকে তার কথা ভাবা। ফোন গ্যালারিতে গিয় তার ছবি দেখা, সব মিলিয়ে জাহিদ এক অনিয়মের মধ্যে চলতে লাগলো।
,,
একদিন রাতে জাহিদ কাজ থেকে ফিরে বিছানায় শুয়ে সপ্তর্ষীর ছবি দেখছিলো। হঠাৎ একটা ফোন আসলো। স্ক্রিনে লেখা রেইনবো। সপ্তর্ষী কল করেছে। জাহিদ রেইনবো নাম দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে।
,,
জাহিদ তার গলা টা ঝেড়ে নিয়ে, একটু স্বাভাবিক হয়ে কল টা রিসিভ করলো..
-হ্যালো (জাহিদ)
-জাহিদ??? (সপ্তর্ষী শিওর হওয়ার জন্য বলল)
-হুমমম
-ওহহহ কি করেন??
-এইতো অফিস থেকে ফিরলাম
-খেয়েছেন??
-হ্যাঁ (মিথ্যে বলল)
-আচ্ছা আমি ফোন করেছি যে আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন
-আরে না
-আসলে আমি…(কি বলতে নিয়ে থেমে গেলো)
-বলেন
-দেখা করবো। আপনার সাথে
-…(জাহিদ চুপ)
-কাল সময় হবে কি আপনার?
-না অফিস আছে, কি বলবেন ফোনেই বলেন
-…(কথা শোনা মাত্রই ওপাশ থেকে সপ্তর্ষী ফোন টা কেটে দিলো)
,,
জাহিদ কিছুই বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষণ পর সপ্তর্ষী আবার কল করলো।
-শোনেন অফিস ছুটি নেন, কথা আছে কিছু(সপ্তর্ষী)
-আচ্ছা (জাহিদ)
-হুমম গুড। আমরা কখন দেখা করছি?
-আপনিই বলেন
-সকালেই
-আচ্ছা
-আর ঐ বেঞ্চে বসে যে কথা বললাম, ঠিক ওখানেই যাবেন
-হুমমম
-বায়
,,
জাহিদ কিছুই বুঝতে পারলো না হঠাৎ এভাবে কেনো ডাকলো তাকে। পরদিন অফিসে না গিয়ে সেই জায়গায় সকাল সকাল পৌঁছে যায় জাহিদ। সপ্তর্ষী এখনো আসেনি। জাহিদ ভেতরে ভেতরে একটু অস্থির কারন সে জানে না কি জন্য সপ্তর্ষী তাকে ডেকেছে।
,,
কিছুসময় পর জাহিদ খেয়াল করলো সপ্তর্ষী একটা রিকশা করে আসতেছে। দেখতে দেখতে কাছে আসলো।
-এই যে তাকিয়ে কি দেখছেন? উঠে বসেন (সপ্তর্ষী)
-আপনি নামবেন না? (জাহিদ)
-আমি নামলে কি আপনাকে উঠতে বলতাম? উঠেন
,,
জাহিদ কথা বা বাড়িয়ে উঠে বসলো। রিকশায় ওঠার পর সপ্তর্ষীর শরীরের সাথে স্পর্শ লাগছিলো। জাহিদ বসেই কেমন কেমন যেন করছে। সপ্তর্ষী সেটা খেয়াল করলো..
-কি সমস্যা আপনার? একভাবে বসে থাকছেন না কেনো? পেট খারাপ হইছে??(সপ্তর্ষী)
-আরে না না সেরকম কিছু না। আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-শপিংমলে
-কেনো?
-কেনো আবার! আমার বিয়ের শপিং করতে
-এহহ কি বললেন! আপনার বিয়ের শপিং করবেন তাও আমাকে সাথে নিয়ে? এই জন্য আমাকে অফিস ছুটি নিতে বললেন?
-শুধু আপনি না শপিংমলে আমার পরিবারের সবাই আছে
-আবার কি বলেন! এসবের মধ্যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো?
-সত্যি বলব?
-হুমম
-আমি নিজেও জানি না
,,
জাহিদ তো টেনশনে শেষ। সপ্তর্ষীর পরিবারের সামনে তাকে নিয়ে যাচ্ছে না জানি তাক কি বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।
,,
রিকশা পৌঁছে গেলো শপিংমলে। দুজন রিকশা থেকে নামলো। ভাড়াটা স্বাভাবিক ভাবে ছেলেকেই দিতে হবে তাই জাহিদ ই ভাড়া দিলো। আর মনে মনে বলল “এই না হলে কপাল! কার না কার বিয়ে। আমার পাশে এটা কার না কার বউ তার বিয়ের শপিং করতে আসার গাড়ি ভাড়াটা আমাকে দিতে হচ্ছে। তাও আবার নিজের অফিস বাদ দিয়ে ”
,,
ভেতরে ঢুকেই সপ্তর্ষীর পরিবারের সাথে দেখা। জাহিদ সবার সাথে পরিচিত হলো। সপ্তর্ষী সবাইকে জানিয়ে দিলো “জাহিদ তার ভালো বন্ধু ” আরও সাথে ইনিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলল।
,,
শুরু হলো কেনাকাটা শাড়ি থেকে শুরু করে যত কিছু আছে সবকিছুতেই জাহিদ যেটা পছন্দ করছে সেটাই চোখ বন্ধ করে কিনছে সপ্তর্ষী। হোক সেটার নিজের অপছন্দ তবুও কিনছে।
,,
এই ব্যাপার টা সপ্তর্ষীর মা টের পেয়ে গেলো। সপ্তর্ষীকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বলল..
-তুই এগুলো কি করতেছিস?? (মা)
-কি করলাম? (সপ্তর্ষী)
-যা কিছু কিনতেছিস সব তো তার পছন্দের
-ও যেগুলো পছন্দ করছে সেগুলোই আমার পছন্দ হচ্ছে। তো এখন আমি কি করবো বলো
-তাহলে আমাদের নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো
-তোমরা নিজেদের টা কিনবা না?
-তাহলে তোরটা তুই আর তোর বন্ধুই কিনতে থাক আমরা ঐপাশ টায় গেলাম
-হুমম যাও
,,
সপ্তর্ষী জাহিদ এর কাছে আসলো..
-এই যে চলেন আমাদের হয়ে গেছে, আমরা যাই (সপ্তর্ষী)
-বাড়ির সবারই হইছে? (জাহিদ)
-না তাদের হয়নি
-আচ্ছা আমি আপনাকে কিছু কিনে দিবো, তো আমাকে একটু হেল্প করেন
-গাধা
-গাধা বললেন কেনো?
-কেনো আবার বোঝেন না? আপনাকে তো বিয়ের দাওয়াত দিবো তো তখন দিয়েন। শুধু শুধু ডাবল খরচ করে লাভ আছে
-ওহহ (জাহিদ মন খারাপ করলো।)
,,
দুজন শপিংমলের বাইরে এসে…
-আমি তাহলে বাসায় চলে যাই (জাহিদ)
-না (সপ্তর্ষী)
-কোথাও যাবেন?
-আমি একরা টাইম টেবিল বলি মাথায় ঢুকিয়ে নেন। এখন বাজে দুপুর একটার কাছাকাছি। তো আমরা এখন কোনো হোটেলে যাবো দুপুরের খাবার খাবো তারপর রিকশায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি। সন্ধ্যায় আপনার বাসায় যাবো সেখানে রাত এগারোটা পর্যন্ত থাকবো। তারপর আপনি আমাকে বাসায় গিয়ে দিয়ে আসবেন। পারিশ্রমিক হিসেবে আমি আপনাকে কিছু দিবো সেটা নিয়ে টেনশন করবেন না
-কি বললেন না বললেন সব তো মাথায় উপর দিয়ে গেলো
-নাহহ, মাথার উপর দিয়ে গেলে তো চলবে না। মাথার ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
-তাহলে কি রিকশা নিবো?
-অবশ্যই
,,
সপ্তর্ষী যা যা বলেছিলো সেগুলোই করা হলো।
দুপুরের খাওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশায় ঘোরা হলো। এরপর হলো সমস্যা..
-আমার বাসায় গিয়ে কি করবেন??(জাহিদ)
-এতক্ষণ তো কোনো প্রশ্ন ছিলো এখন প্রশ্ন আসতেছে কোথা থেকে? (সপ্তর্ষী)
-সরি! চলেন
,,
দুজন বাসায় পৌঁছে গেলো। তারপর জাহিদের রুমে..
-ওয়াও ভালোভাবেই তো সাজিয়েছেন (সপ্তর্ষী)
-হুমমম বসেন (জাহিদ)
-বসতে আসিনি
-…(জাহিদ বুঝলো না সপ্তর্ষী কি বোঝাতে চাচ্ছে)
-রেডি হয়ে নেন
-কিসের জন্য রেডি?
-কিছু প্রশ্ন করবো
-ওহহ হ্যাঁ করেন
-এইভাবে বসে উত্তর দিতে পারবেন না
-তাহলে?
-আমি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে প্রশ্ন করবো। আপনি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে উত্তর করবেন ওকে?
-এখন অনেক ঠান্ডা
-…(সপ্তর্ষী চোখ অনেক বড় বড় করলো)
,,
জাহিদ তো ভয়েই শেষ। সপ্তর্ষী তার পেছনে দুহাত মুষ্টি বদ্ধ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে। জাহিদ ও তাই করলো। অনেকটা অনুকরণীয় এর মতো।
-বলুন যাহা বলিবেন সত্য বলিবেন, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিবেন না (সপ্তর্ষী)
-আমি কি আসামী? (জাহিদ)
-নাহহ আসামী তো আমি, একজনের হৃদয় খুন করেছি। আর আপনি তো মিথ্যে আসামী খুন হয়ে মারা পরে আছেন। উদ্ধার করতে আসছি
-আপনার কথার আমি কিছুই বুঝতেছি না
-আমার কথা বোঝার মতো মাথা আল্লাহ আপনাকে দেননি
চলবে