সায়র #পর্ব_০৬

0
185

#সায়র
#পর্ব_০৬
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

কিরণ এক পা পিছু হটল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ল অজ্ঞাত মানবটির দিকে। খানিকটা রাগ রাগ গলায় বলল,

‘আমি আপনার নাম জানতে চাইনি। আপনাকে তো এর আগে কখনো দেখিনি, আর এখানেই বা কি করছেন?’

আহযান হালকা হাসল।

‘দেখেননি তো কি হয়েছে? এখন দেখে নিন। ভালো করে দেখে নিন। কোন পার্টটা দেখতে পছন্দ করবেন?’

বলেই পকেটে হাত পুরে সটান হয়ে দাঁড়াল। কিরণ রাগী চোখে তাকায়, ‘ফাইজলামি করার জায়গা পান না মিয়া? জুতার বারি চিনেন? খেয়েছেন কখনো? না খেলে আসেন, খাওয়ায় দেই। বেয়াদব, ফালতু, অসভ্য!’

আহযান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। চোখ বড় হয়ে গেল তার। অবাক করা কন্ঠেই বলল,

‘বাপরে, আপনি মারাত্মক জানি। কিন্তু এতটা মারাত্মক তা তো জানতাম না! বাই দ্যা ওয়ে, রাগবেন না মিস প্লিজ। আমি জাস্ট মজা করছিলাম।’

‘মজা করারও একটা লিমিট থাকে। আমি কিংবা আপনি কেউ কাউকে চিনি না তাহলে এই ধরনের লেইম মজা করার মানে টা কি?’

কিরণ উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। গলার স্বর বাড়ছিল। আহযান হাত দুটো সামনে এনে শান্ত করার ভঙ্গিতে বলল,

‘ওকে ওকে মিস। শান্ত হোন। এই দেখুন কানে ধরছি। তাও প্লিজ চিৎকার করবেন না। কেউ দেখতে পেলে খারাপ ভাববে।’

আহযান কানে ধরল। জাওভান শুনতে পেলে কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে দেবে তা মাথায় আসতেই কিরণ শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল। বড় বড় শ্বাস ফেলল। এই রাগই না জানি একদিন তার সর্বনাশের মূল হয়! কিছুতেই সে রাগ কমাতে পারে না।

কিরণ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,

‘ওয়েল। ভালোয় ভালোয় জবাব দিন এবার, হু আর ইউ?’

‘কানটা ছাড়ি?’

‘না।’ কিরণের কড়া জবাব।

হতাশ নিঃশ্বাস আড়াল করল আহযান, ‘আচ্ছা, সমস্যা নেই। আমার এভাবে থাকতেই ভালো লাগছে।’

‘মেইন টপিকে আসুন।’ কিরণ ধমকে উঠল।

আহযান ভীত দৃষ্টিতে তাকানোর ভান করে বলে,

‘আমি আসলে উজান ভাইয়ের জুনিয়র। উনিই এখানে আমাকে ইনভাইট করেছিলেন। উনি আমার কাউন্সিলর।’

‘তো পার্টিতে না থেকে এখানে কি করছেন?’

‘এইখানে…মানে.. এমনিই একটু হাঁটছিলাম আরকি। উজান ভাইয়ের পেইন্টিং দেখছিলাম।’

তারপর বাইরের দিকে তাকিয়ে সামান্য আঁতকে ওঠা গলায় বলল,

‘ও মাই গড। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আমাকে তো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।’

বাহিরের দিকে তাকিয়ে কিরণেরও যেন হুশ ফিরল। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ওপাশের ফেইরি লাইটের আলো হালকা ভাবে বোঝা যাচ্ছে। ক্ষীণ আওয়াজে মিউজিক শোনা যাচ্ছে।

‘মিস, আমি তাহলে গেলাম।’ বলেই আহযান পা বাড়াল।

‘শুনুন।’

আহযান দাঁড়িয়ে পড়ে। পিছু ফিরে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। কিরণ শীতল কন্ঠে বলে,

‘আমার সাথে একটু ওয়াশরুমে যাবেন প্লিজ?’

আহযান কিরণের চোখেমুখে ভয় দেখতে পায়। মনে হয় কোনো ব্যাপারে খুব ভয় পেয়েছে। তবুও সে দুষ্টু হেসে বলে,

‘ওয়াশরুমে? একসাথে?’

আহযানের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে কিরণ ধমকে তড়িঘড়ি করে বলে,

‘আমি বোঝাতে চেয়েছি আপনি একটু বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন।’

‘বাব্বাহ! এতক্ষণ যে আমাকে ভয় দেখাল সে কিনা ওয়াশরুমে একা যেতে ভয় পায়? আর কত কি দেখব দুনিয়ায়!’

কিরণ চোখ পাকালে আহযান বলে, ‘ভয় দেখানোর কি আছে? যাচ্ছি তো।’

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তারা পার্টির জায়গায় পৌঁছানোর আগে কিরণ দাঁড়িয়ে যায়।

‘দাঁড়ালেন কেন? আবার ওয়াশরুমে যাবেন?’

কিরণ কিছুটা কঠিন গলায় বলে, ‘আমি যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর আপনি আসবেন। দুজনকে একসাথে দেখলে সমস্যা।’

‘আমরা কাপল হিসেবেই নাহয় জয়েন করি।’

‘আমার পায়ে কিন্তু হিল আছে।’

‘জাস্ট কিডিং, জাস্ট কিডিং। প্লিজ, আপনি যান।’

আহযান কুর্ণিশ করার ভঙ্গিমা করল। কিরণ চলে গেলে আহযান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেল‌ল।

কিরণের ভালো লাগছে না একদম। কেমন যেন অস্থির লাগছে। তার কেন যেন মনে হলো তাকে তখন যে ফলো করছিল সে আহযান নামের ঐ ছেলেটা। কিন্তু আহযান কেন ফলো করবে? সে তো তাকে এই প্রথম দেখল। নাকি আহযান না? নাকি আহযানই? নাকি কেউই ফলো করছিল না? শুধুই ভ্রম ছিল? কিরণের মাথা ব্যথা করতে লাগল। তার ভালো লাগছে না কিছু। বাড়িতে গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দেওয়া দরকার। গলা থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। চুপ খোঁপা করল।

কিরণ এসে দেখল পুলের পাশে ছেলের দলেরা ওয়াইনের বোতল নিয়ে গানের তালে তালে নাচছে, কয়েকজন পুলে নেমে ফুর্তি করছে। আর মেয়ের দলেরা দোলনার কাছে কিংবা চেয়ারে বসে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে। আবার কিছু কাপল আলাদা বসে প্রেমালাপে মত্ত।

উজান কোণার টেবিলে বসা, সামনে হরেক রকমের কেক। তার একহাতে মোবাইল, আরেকহাতে চিজ কেক। ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে। উজান যখন ভ্রু কিঞ্চিৎ করে তখন সে আনমনে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। ধারালো চোয়াল উঁচু হয়ে থাকে। আর সেই মুখভঙ্গি করে যখন তাকায় মনে হয় যেন তীক্ষ্ণ সুচালো তীরের ফলা ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কিরণ এদিক ওদিক তাকিয়ে জাওভানকে খুঁজল। জাওভানের কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার। শুধু শুধু মারল তাকে, ইয়ানার রাগ জাওভানের উপর ঝাড়ার কারণে কিছুটা অনুতপ্ত হলো কিরণ। তাকে না পেয়ে উজানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,

‘জুভ কোথায়?’

উজানের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। সে মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে তাকায়। তাকানোর সাথে সাথে কিরণের বুক কেঁপে উঠল ঐ তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মুখে পড়ে। কিরণ চোখ সরিয়ে ফেলল দ্রুত। মনে হলো, উজান তার ভেতরটা পড়ে নিয়েছে এক নিমেষেই।

উজান কাঠ কাঠ গলায় বলল, ‘জানি না।’

‘নাকে মলম লাগিয়ে দিয়েছো?’

‘না।’

‘তোমাকে বলেছিলাম উজান।’

‘আমি তোমার চাকর নই।’

কিরণ আশ্চর্যান্বিত হলো। সামান্য মলম লাগানোর সাথে চাকরের কি সম্পর্ক? বলল,

‘চাকরের কথা উঠছে কেন? ভাই হিসেবেও তো মলমটা লাগিয়ে দিতে পারতে।’

‘আমার ভাই এতটাও উইক নয় যে সামান্য একটা মেয়ের হাতের আঘাতে আহত হবে।’

কিরণ একহাত কোমড়ে আরেক হাত কপালে রাখল। চোখ বন্ধ করে কপাল ম্যাসাজ করল, গভীর শ্বাস নিয়ে উঠতি রাগকে দমন করল। উজান তাকে ছোট করে কথা বলার সুযোগ কখনো মিস করে না। সবসময় তাকে ছোট করবেই। না করলে যেন উজানের পেটের ভাত হজম হয় না। এই যে, মাত্র এই কথাটায় সে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো যে কিরণ সামান্য একটা মেয়ে। কিরণ উজানের দিকে ঝুঁকল কিছুটা। দাঁতে দাঁত চেপে হেসে বলল,

‘এই সামান্য মেয়েটার জন্যই কিন্তু তোমার ভাই পাগল উজি। আর এই সামান্য মেয়েটাকেই তুমি অনুরোধ করেছিলে তোমার ভাইয়ের সাথে থেকে যাওয়ার জন্য। আমি যদি না করতাম তাহলে বোধহয় পায়েও পড়তে দ্বিধাবোধ করতে না, তাই না মি. উজান?’

উজান শান্ত অথচ ক্রুর চোখে তাকায় কিরণের দিকে। এক মিনিট দুজনেই দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর চকিতেই সে কিরণের একহাত টেনে চেয়ারে বসিয়ে নিজে কিরণের উপর ঝুঁকে আসে। কিরণের গলা চেপে ধরে চেয়ারের মাথার সাথে। একহাঁটু দিয়ে কিরণের হাঁটু চেপে ধরে। এক হাতে কিরণের হাত দুটো চেয়ারের পেছনে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। ফলে কিরণ সম্পূর্ণ বন্দী হয়ে পড়ে উজানের কাছে।

কিরণ চমকে গেল। এক সেকেন্ডে কি থেকে কি হয়ে গেল তার বুঝে উঠতে সময় লাগল। শান্ত উজান হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠবে তা সে কোনোদিন আশা করেনি। যেন অন্য এক উজানকে দেখছে সে। সামান্য একটা কথায় উজান এতটা রিয়েক্ট করবে কিরণ ভাবতেই পারেনি।

উজান কিরণের একদম মুখের কাছে এসে পড়েছে। কিরণের গলা চেপে ধরেছে শক্ত করে। ফেইরী লাইটের সোনালী বেগুনী আলো খেলা করছে উজানের সারা মুখে। চোয়াল শক্ত, চোখমুখ সেই আগের মতো স্বাভাবিক হলেও কিরণের কাছে মনে হলো, উজান তার দিকে ক্ষুব্ধ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। চোখেমুখে ক্রোধ। কিরণ চোখ বন্ধ করে ফেলল। উজানের এমন দৃষ্টির সাথে সে অপরিচিত। উজান এত রাগলো কেন? এই কথাটা কি তার আত্মসম্মানে বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছে?

কিরণ গলা নাড়িয়ে উজানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল, পারল না। উজানের নখ ডেবে গেছে তার গলায়। উজান কিরণের হাত মুচড়ে শান্ত গলায় বলল,

‘তোমার মতো দু’টাকার মেয়ের পায়ে পড়ার মতো দুর্ভাগ্য দিন এই উজানের কখনো আসেনি। তোমাকে তো আমি রাস্তার মেয়েও ভাবিনা। ক্লাসলেস বস্তির মেয়ে তুমি। আমার এতটাও ঠেকা পড়েনি যে তোমার কাছে অনুরোধ করবো। তোমাকে তো আমি আদেশ দিয়েছি আদেশ। আমার ভাইয়ের রুচি এতটা খারাপ তা তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়।’

একটু থেমে উজান কিরণের আরো কাছে গেল। কিরণের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘ভুলে গিয়েছ আমাদের ডিলের কথা? ডিল অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলে, অথচ দোষ দিলে আমার। এটা অন্যায় হয়ে গেল না কিরণ?’

কিরণের গলা চেপে ধরায় তার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাও ভাঙা গলায় কিরণ দাঁত কিরমির করে বলল, ‘আপনিই ফাঁসিয়েছেন আমায়, প্রতারক কোথাকার। বিট্রে করেছেন আমার সাথে, একমাসের ডিলে আমাকে সারাজীবন ফাঁসিয়ে দিলেন। আমার জীবন শেষ করেছেন। এর শোধ তো আমি নিবোই। খেলার শুরুটা আপনি করেছেন, শেষটা আমার হাতেই হবে।’ কিরণের চোখে জল, বুকের ভেতরটা হাহাকার আর্তনাদে কেঁপে কেঁপে উঠছে।

উজান কিরণের কানে তার ঠোঁট লাগিয়ে ধীরস্বরে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘বাহ! তুমি থেকে আপনিতে চলে গেলে দেখছি। আর কিসের খেলার কথা বলছো? খেলা খেলতে তো তখনই মজা যখন প্রতিদ্বন্দ্বী সমানে সমানে হয়। তুমি তো দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি তোমার জীবন শেষ করিনি, নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছি। তোমার তো আমার নিকট কৃতজ্ঞ থাকার কথা। তা না করে আমার ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছো? এখন তুমি নিজেই তো প্রতারক হয়ে গেলে কিরণ। প্রতারক, থার্ড ক্লাস, নির্লজ্জ, লোভী কিরণ।’

উজান মুখ সরিয়ে এবার কিরণের সামনে আনলো। তার অগ্নিদৃষ্টি সরাসরি কিরণের চোখে নিবদ্ধ। রাগে অপমানে কিরণের চোখ ভিজে গেল। এতটা অপমান তাকে কেউ কখনো করেনি। উজান তাকে প্রথম থেকেই দেখতে পারতো না। তার ধারণা কিরণ তার ভাইয়ের লাইফ নষ্ট করেছে। তাই সুযোগ পেলেই কিরণকে অপমান করে, এমনকি জাওভানের সামনেও। একমাত্র ভাই বলে জাওভান রাগ চেপে সহ্য করে যায়। নাহলে উজানের লাশ আজ নদীতে ভেসে উঠত।

‘তাহলে আপনার ভাইকে কেন বলছেন না আমাকে ছেড়ে দিতে? কেন এখনো আটকে রেখেছেন আপনার ভাইয়ের জন্য?’

কিরণের প্রশ্নে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল উজানের মুখে। তাচ্ছিল্য করে বলল,

‘কম তো চেষ্টা করিনি তোমাকে জুভের লাইফ থেকে সরাতে। জুভ তোমার জন্য কতটা উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল জানো? দিন নেই রাত নেই শুধু তোমার নাম জপত। নাওয়া খাওয়া সব ভুলে তোমাতে বিভোর ছিল। তুমি যেদিন পালিয়ে গিয়েছিলে সেদিন জুভ আমার কাছে কান্না করে তোমাকে ভিক্ষা চেয়েছিল। যেন তোমাকে এনে দেই। একমাত্র জুভ যাতে ভালো থাকে তাই জন্য তোমাকে রাখা। ঐখানে যত মেয়ে দেখছো না? এরাও তোমার থেকে হাই ক্লাসের। ইভেন ইয়ানাও। তুমি তো তাদের নখেরও যোগ্য নও। তোমাকে শুধু প্রয়োজনের জন্যই রেখেছি, জুভের প্রয়োজনে।’

‘উজান ভাই!’

উজান চোখ উঠিয়ে দেখে আহযান। আহযানের চোখে মুখে কৌতুহল। উজান কিরণের গলা আর হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে উঠে আসলো। ফলে কিরণ চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে গেল। আহযান এগিয়ে গিয়ে কিরণকে ধরতে নিলেই উজান বাঁধ সাধে।

‘আবর্জনা তোমার গায়ে লাগলে তুমিও নোংরা হয়ে যাবে আহযান। এদিকে এসো।’

উজানের কঠিন আদেশে আহযান দাঁড়িয়ে পড়ে। উজানকে না বলার সাহস তার নেই। তাই সে কিরণের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে উজানের কাছে চলে গে‌ল।

উজান আহযানকে নিয়ে পুলের সাইডে চলে গেল। উজান আর জাওভানের কিছু কিছু কথোপকথন আহযান শুনে নিয়েছে। তার ধারণা উজান কিরণ মেয়েটাকে একদম অপছন্দ করে। উজান যদি কাউকে অপছন্দ করে তবে উজান তার দিকে ফিরেও তাকায় না, রাগ করা তো দুরের কথা। তাহলে কিরণের সাথে এতো রাগ দেখালো কেন? উজানকে সে যত বছর ধরে চিনে, তাতে উজানকে কখনোই এতটা রাগতে দেখা যায়নি। সবসময় শান্তভাবে হ্যান্ডেল করে। আসলে, উজানকে হঠাৎ রেগে যেতে দেখে আহযান নিজেও কিছুটা ভড়কে গিয়েছিল।

অথচ আহযান জানলো না, তার ঠিক পিছনে আরেকজনও কিরণ আর উজানের ফিসফিসানো কথাগুলো ছাড়া সব কথা শুনে ফেলেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ আর ক্রোধান্বিত হলেও সে যে কিছুই করতে পারবে না!

আহযান কুন্ঠিত হয়ে বলল, ‘ভাই, একটা পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করি?’

উজানের দৃষ্টি আবদ্ধ ছিল পুলের নীল পানির দিকে। তার চোখমুখ এখনো শক্ত। গালের কাটা দাগ জ্বলজ্বল করছে আলোতে। সে কাষ্ঠ কণ্ঠে বলল,

‘আমার ভাইয়ের জীবনটা যে ধ্বংস করবে তাকে আমি ছেড়ে দেব না। সে যেই হোক না কেন। আর কিছু জানতে চাও?’

আহযান দুপাশে না বোধক মাথা নাড়াল। সে সবটুকু বুঝতে না পারলেও কিছুটা বুঝতে পারছে যে কিরণ জাওভানের লাইফে আসাতে উজান খুশি নয়।

উজান বলল, ‘চেঞ্জ দ্যা টপিক। তোমার খবর কি? সামনের সপ্তাহে তোমাকে তো কক্সবাজার যেতে হবে। সবকিছু অ্যারেঞ্জ করেছো?’

‘আপনাকেও যেতে হবে ভাই। আমি এখনো ফ্রেশার। আপনি আমার ইন্সট্রাক্টর হিসেবে থাকবেন। কোথায় কোন আর্ট মানাবে তা আপনি বলে দিবেন, আমি করব। যাবেন তো ভাই?’

‘সময় হলে অবশ্যই যাবো। তোমার প্রথম কাজ কেমন হয়…’

আর কিছু বলার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন জোরে ধাক্কা দিলো উজানকে। যার কারণে উজান পুলে পড়ে গেল। সকলে দ্বিতীয়বারের মতো হতভম্ব হলো। উজান ভিজে গেল সম্পূর্ণ। স্কাই ব্লু টিশার্ট গলিয়ে পুলের হালকা গরম পানিতে তার শরীরের গঠন বোঝা যাচ্ছে। কপালের চুল লেপ্টে চোখের সামনে এসে পড়েছে। উজান হাত দিয়ে মুখ থেকে পানি সরিয়ে তাকালো উপরের দিকে। দেখল কিরণ দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছে। তাকে ক্ষ্যাপা বাঘিনীর ন্যায় লাগছে। চোখে ক্রোধের আগুন। এই উজান মানুষটার জন্য তার জীবন নষ্ট।

উজানকে পুলে পড়তে দেখে সকলে হেসে উঠল, আহযান নিজেও ঠোঁট চেপে হাসল। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জাওভানের রাগী মুখেও একটু হাসির ছোঁয়া লাগল। উজানকে সে কিছু করতে না পারলেও কিরণ তো রাগ ঝেড়েছে। তার ভালোবাসাটা আসলেই মারাত্মক একটা বোম! উজানের সাথে কেউ কখনো বেয়াদবি করার সাহস পায়নি। যাক অবশেষে, একজন তো পেরেছে!

সকলের চোখেমুখে হাসির ফোয়ারা বইলেও দুটো মানব মানবী দুজনের দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে। দাউদাউ করে জ্বলা আগুনে পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়ার মতো সেই দৃষ্টি…

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here