সায়র #পর্ব_১১

0
183

#সায়র
#পর্ব_১১
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

কক্সবাজারে আসার এক সপ্তাহ হলেও তাদের ঘোরাঘুরি খুব কমই হয়েছে। ইনানি বীচ, হিমছড়ি, আর সেন্ট মার্টিন এই তিন জায়গাতেই মাত্র ঘোরা হয়েছে। জাওভানের জ্বর সেরে গেছে। সে নিজে কিরণ আর আয়াতকে ঘুরিয়ে এনেছে। আয়াত কেন যাবে তার আর কিরণের সাথে এ নিয়েও ঝগড়াঝাঁটি কম হয়নি তাদের। পরক্ষণে অবশ্য উজানই বলেছে ঘুরিয়ে আনতে যেহেতু সে আর আহযান বিজি থাকবে, আর এছাড়া কেউই নেই। উজান আর আহযানের স্কাল্পচার নিয়ে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। আহযান কাজে নতুন হলেও খুবই দক্ষতার সাথে কাজ করেছে। উজান শুধুমাত্র মেন্টর ছিল। আহযানের এই কাজ চার লক্ষ টাকার। উজানের কাছে টাকার পরিমাণ কম মনে হলেও সদ্য কাজে যোগ দেওয়া আহযানের কাছে এটাই ছিল অনেক বেশি। মেইন হলরুমের ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং শুধু করেছে সে। ভিজিটরদের জন্য আই-সুদিং দৃশ্য, আর কম্ফোর্টজোন তৈরি করা কম কষ্টের নয়। এই কাজ কখনোই এক সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা না। তারা এখানে আসার আরো চার পাঁচ মাস আগেই স্কাল্পচার সহ ভারী ভারী জিনিস বানিয়েই নিয়ে এসেছে। এখানে খালি জায়গামতো বসানোর জন্যই আসা।

উজান আর আহযানের কাজের জন্য ঘুরতে না পারলেও বাকি তিনজন ঠিকই ঘুরেছে। তবে জাওভান কিরণের সাথে ঘুরাঘুরি একদমই এনজয় করতে পারেনি আয়াত মেয়েটার জন্য। যদিও আয়াত সারাটাক্ষণ জাওভানের ভয়ে খুব কম কথা বলেছে আর কিরণের সাথে ভয়ে ভয়ে কথা বলেছে। একবার ইনানি বীচে হাঁটার সময় সে কিরণের হাত পেঁচিয়ে ধরে হেঁটেছিল। এতে কিরণের কোনো সমস্যা না হলেও জাওভানের বুকে আগুন জ্বলছিল ভেতর ভেতর। যখন রিসোর্টে ফিরে আয়াত কিরণকে ছাড়াই পুলের সামনে দাঁড়িয়েছে, তখন জাওভান আয়াতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। আশেপাশের সব মানুষ এটাকে মজা ভাবলেও সে এত অপমানিত হয়েছিল বলার বাইরে। আবার তাকে ধাক্কা মারার পর জাওভান পানি আর হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে এতবার হাত ধুয়েছিল যে বোতল শেষ হয়ে গিয়েছিল। যেন সে হাত দিয়ে খুব নোংরা কিছু ছুঁয়েছে। আয়াতকে শাসিয়েছেও, যদি সে কিরণকে কিছু বলে তাহলে আরো খারাপ অবস্থা করবে তার। সেই ভয়েই পুরো জার্নিতে আয়াত কিরণের কাছে যেতেও দু’বার ভাবে।

আজ তাদের ফেরার পালা। বাসের শেষের আগের সিটগুলোয় তারা বসেছে। আহযান আর আয়াত এক সারিতে সিটে, জাওভান আর কিরণ আরেক সারিতে, আর তার সামনের সিটে উজান বসে আছে। রাতের কুয়াশা বাসের ভেতর আসছে বিধায় জাওভান জানালাটা অফ করে দিলো। কিরণ জানালার পাশে বসে ছিল। সে ইচ্ছে করে জানালা খোলা রেখেছে। ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস নাকমুখ দিয়ে ভেতরটা শীতল করে তুলছিল জাওভানের জানালা বন্ধ করায় সে বিরক্ত চোখে তাকায়। আবার খুলতে নিলে জাওভান কিরণের দুহাত ধরে তার কোলে নেয়।

‘ঠান্ডা লাগবে তোমার।’ কোমল স্বরে শুধায় জাওভান। কিরণ কিছু না বলে হাত সরিয়ে নিজের পকেটে পুরে। জাওভান ব্যাগ থেকে আরো একটা সোয়েটার বের করে কিরণের গায়ে দেয়। কিরণের কাছে খুব গরম লাগছিল। কিন্তু জাওভান তার তোয়াক্কাই করছে না। একটু পরপর ফ্ল্যাক্স থেকে গরম কফি দেয়, আবার এটা খাও ওটা খাও, এভাবে বসো, ওভাবে হাত নেও, এসব বলে বলে মাথা খাচ্ছিল কিরণের। কিরণ ভাবে, জাওভান যদি সত্যিকারের তার ভালোবাসার মানুষ হতো তাহলে সে এই কেয়ারে কখনোই বিরক্ত হতো না বরং এসব না করলেই বিরক্ত হতো। আফসোস, জাওভানের জন্য সেই ভালোবাসা কিরণের মনে জন্মায়নি।

বাস থামে বিরতির জন্য। উজানরা ছাড়া বাসের মানুষ নেমে যায় সব। জাওভানও নেমে যায় কিরণের জন্য কিছু কিনে আনতে। কিরণ বারণ করেছিল, তার কাছে অলরেডি অনেক খাবার আছে, কিন্তু জাওভান আরো নিয়ে আসতে গেছে। এই ফাঁকে কিরণ জানালা খুলে রাতের আকাশ দেখে নিলো। আকাশে বড় চাঁদ, তাকে সঙ্গ দিতে যোগ দিয়েছে হাজারো তারা। মিটিমিটি জ্বলছে।

কিরণের মনোযোগ ছোটায় জাওভানের ভাইব্রেট করা ফোন। কিরণের হাতেই দিয়ে গিয়েছিল মোবাইলটা। কিরণ দেখে এমনিই নোটিফিকেশন। সে মোবাইল রাখতে গিয়েও রাখে না, আকাশের ছবি তুলবে বলে। জাওভানের ফোনের ক্যামেরা ভালো। কিরণ মোবাইলের লক জানে। কিরণের নাম দিয়েই সেভ করা। তার ছবি জাওভানের লকস্ক্রিন, হোমস্ক্রিন জুড়ে। সবগুলাই ক্যান্ডিড ছবি। এই যেমন হোম স্ক্রিনে কিরণের সদ্য ঘুম থেকে ওঠার ছবি।

আহযান আর আয়াত গল্প করছিল। তারা দুজনে খুব ফ্রি হয়ে গেছে এই কয়দিনে। নাম্বার আদান প্রদান করাও শেষ। আয়াত বুঝে ফেলেছে আহযান তার প্রতি দুর্বল। এই একটা জিনিস সে খুব ভালো বুঝতে পারে। ভেবেছিল ক্রাশ খাওয়া অবধিই সীমাবদ্ধ রাখবে কিংবা আহযানকে তার পেছনে ঘোরা চ্যাংড়া ছেলেদের কাতারে ফেলে রেখে দিবে। কিন্তু সুদর্শন হওয়ার পাশাপাশি আহযানে চমৎকার আচরণ সেই সুযোগ দেয়নি। আয়াত নিজ মনে ভেবে দেখেছে, এমন ছেলেকে সুযোগ দেওয়াই যায়।

উজান হাতের উপর ভর দিয়ে তাতে গাল ঠেকিয়ে বসেছিল। তার কিছুদিন বিশ্রামের প্রয়োজন। সবার থেকে। সে ভেবেছে কয়েকদিনের জন্য বাংলোতে একা কাটিয়ে দিবে।

তাদের নিজ নিজ চিন্তা কর্মে হঠাৎ করে ব্যাঘাত ঘটায় এক নারী কন্ঠের লাস্যময়ী শীৎকার। আওয়াজ এত লাউডে ছিল যে আয়াত, আহযান দ্রুত ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের সারিতে তাকায়। এমনকি উজান পর্যন্তও তার পেছনের সীটে ঘাড় ঘুরাল।

‘আমি না আমি না, আমার না এটা, আমার দোষ নেই…’ কিরণ প্যানিক হয়ে এলোমেলো বকতে থাকে। তার হাত কাঁপছে লজ্জায়। সে দ্রুত মোবাইলের এক্সিট বাটনে ক্লিক করছে কিন্তু ব্যাক যেন হচ্ছেই না। উল্টো চাপ লেগে সাউন্ড আরো বেড়ে গেল। তখন বাসে শুধু তারা চারজনই ছিল।

প্রয়োজনের সময় টিভির রিমোট যেমন কাজ করছিল না ঠিক তেমন এখন মোবাইলটাও কাজ করছে না, এমনটাই মনে হচ্ছিল কিরণের। মোবাইলের স্ক্রিনে অশ্রাব্য কিছু শব্দ পালাক্রমে বেড়ে যাচ্ছিল। কিরণ শেষমেষ না পেরে মোবাইল অফ করে দ্রুত হাত থেকে ছিটকে সীটে ফেলে দেয়। তখনো সবাই অবাক দৃষ্টিতে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিরণের কান লাল হয়ে গিয়েছিল। আয়াতের ফর্সা মুখটাও লাল। সে তড়িঘড়ি করে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইলে মনোযোগ দেয়। আহযান হালকা কেশে দ্রুত বাস থেকে নেমে যায়।

উজান এমন দৃষ্টিতে তাকাল কিরণের দিকে যে মনে হয় কিরণ কাউকে খুন করে এসেছে। তার চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠছিল। সে মুখ ফিরিয়ে সামনের দিকে তাকালো।

‘এটা আ..আমার মোবাইল না।’ কিরণের কম্পিত ক্ষীণ কন্ঠস্বর। তার কন্ঠ এতটাই আস্তে শোনা যাচ্ছিল যে কিরণ নিজেও শুনতে পেল না সে কি বলল।

তখন জাওভানের ফোনে হাতের চাপ লেগে মোবাইলের নিচে তিন দাগের বাটনে গিয়ে কোনো একটা অ্যাপ অন হয়েই এসব শুরু। এটা জাওভানের মোবাইল। কিরণের হাত পা ঠোঁট কাঁপছিল লজ্জায়। সে এইমুহুর্তে এত বড় লজ্জার শিকার হলো যে পারলো না বাসের জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে দৌড়ে চলে যায় কোথাও। ছিঃ কী ভাবলো সবাই? উজান তাকে তো এমনেই খারাপ মেয়ে বলে, এখন এই কাহিনীর পর তো আরো খারাপ চোখে দেখবে। আহযান কি ভাবল? আর আয়াত? সে কি তাকে বাজে মেয়ে বলে আখ্যায়িত করবে না?

কীভাবে নিজেকে সে দোষী প্রমাণ করবে? সবাই তো ভাবছে এটা কিরণের মোবাইল। কিরণ মুখ গোল করে শ্বাস ছাড়ল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। জাওভানের মোবাইল হাতে নিয়ে আয়াতকে জোরে জোরে বলে,

‘আপু এটা আমার মোবাইল না বিশ্বাস করো। আমার মোবাইলে তো চার্জ নেই, তুমি তো জানো।’

আয়াতের কানে ইয়ারফোন থাকায় সে বোধহয় শুনলো না। কিরণ এবার সামনের সীটে বসা উজানের মুখের কাছে ধরে ফোন। কৈফিয়তের গলায় বলে,

‘এটা তোমার ভাইয়ের ফোন। এগুলা তোমার ভাই দেখে বুঝলে। আমি এত খারাপ মেয়ে না।’

একটু থেমে বলে,

‘ছিঃ! নিজের ভাই এসব দেখে বেড়ায় সে খেয়াল রাখো না, কেমন ভাই তুমি? ভাইয়ের খবর রাখো না। ভালো করে দেখে নেও তোমার ভাইয়ের ফোন। আর কি কি যে দেখে আল্লাহ জানে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিহ!!’ কিরণ এমনভাবে কথাটা বলল যেন দোষটা জাওভান আর উজানের।

উজান কিরণকে খেয়ালই করেনি এমনভাবে বাহিরে তাকিয়ে রইল। কিরণ নিজের সীটে বসল। বলে তো দিলো সে, তবে লজ্জাটা তার কাটছেই না। চোখ বন্ধ করে, মাথা নাড়িয়ে বারবার ব্যাপারটা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করল। পারল না।

এবার সবাই ফিরে এলো বাসে। আহযান এসে আয়াতের পাশে বসে নিজেও ফোন নিয়ে ব্যস্ত হলো। মূলত তাদের কারো লজ্জাই তখন কাটেনি এমন ঘটনার পর। জাওভান এসে কিরণের পাশে বসল। তার হাতে হরেক রকমের জাংক ফুড। মনে হয় দোকান কিনে নিয়ে আসছে।

বাস চলতে আরম্ভ করেছে। জাওভান খেয়াল করল কিরণের মুখ গোমড়া। সে কিরণের সাথে একদম ঘেঁষে বসল। কিরণের নাকে টোকা দিয়ে বলল,

‘কী হয়েছে সোনা? মুখ কালো হয়ে আছে কেন? খাবার কম হয়েছে?’

কিরণ জাওভানের দিকে ফিরে দাঁত খিচিয়ে বিড়বিড় করে অকথ্য একটা গালি দিলো। বিড়বিড় করে বললেও জুভ বুঝতে পারল কিরণ তাকে কি গালি দিয়েছে। সে কিরণের এক হাত ধরতে চাইল। কিরণ ঝটকা মেরে সরালো। জাওভান বুঝতে পারল না তার দোষটা কোথায়।

‘জান এমন করছো কেন আমার সাথে? বলবে তো কী করেছি আমি?’

জাওভান এমনভাবে বলল যে কিরণের মনে হলো তার থেকে নিষ্পাপ এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আহারে, ফিডার খাওয়া ল্যাদা বাচ্চা।

একটু আগে কিরণ জুভের মোবাইল খুলে হিস্ট্রি চেক করেছে। যা দেখল তাতে তার সারা শরীর ঘিনঘিন করে উঠল। বাজে বাজে ভিডিও দিয়ে জুভের হিস্ট্রি ভর্তি। শেষ সময় দেখাচ্ছে গতকাল রাতের। তারমানে জুভ প্রতিদিন এসব দেখে, আবার এমন ভান করে যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।

কিরণ মোবাইলটা নিয়ে জাওভানের মুখ বরাবর ছুঁড়ে মারল। জুভ ক্যাচ করে মোবাইলটা।

‘ছিঃ! আমার তো আপনার পাশে বসতেই ঘিন লাগছে, খাটাশ লোক।’ এই বলে কিরণ মুখ ফেরায়।

জাওভান ফোনটা খুলেও বুঝতে পারে না। সে নিজ মনে ভাবে সে আসলেই কী করেছে। তার মোবাইল কী দোষ করেছে?

‘কী হয়েছে মোবাইলে?’

‘বাজে লোক। জানেনা যেন কী দেখে মোবাইলে!’

দেখার কথা মাথায় আসতেই সে দ্রুত ফোন চেক করল। কিরণ দেখে নিয়েছে যে এসব এডাল্ট ভিডিও দেখে! জাওভান এবার বুঝতে পারল। সে গভীর শ্বাস ছেড়ে কিরণের মুখ জোর করে নিজের দিকে ফেরায়।

‘এই সামান্য ভিডিও দেখি দেখে তুমি এত রেগে আছো? তুমি কি ছোটো বাচ্চা?’

‘এগুলো সামান্য? আপনি আসলে কী বলেন তো? আপনি নিজে জানেন কী দেখছেন?’ কিরণ চোখ বড় করে বলল।

‘হ্যাঁ, প…’

জাওভানের কথা কেটে কিরণ ধমকে উঠে, ‘এই চুপ, লজ্জা নেই আবার বলে যে। খচ্চর লোক।’

‘জান, এখানে খারাপের কী আছে? আমি তো আর আন্ডারএইজ না যে এসব দেখতে পারব না! আ’ম আ গ্রোন অ্যাস ম্যান। অ্যান্ড ইটস আ নরমাল থিং।’

‘এগুলো নরমাল আপনার কাছে? বাহ! ভালোই! দূরে সরে বসেন, ঘিন লাগে আপনার সাথে বসতে। আপনার জন্য মান সম্মান গেছে আমার।’ কিরণ চেপে বসে, তার অসহ্য লাগছে।

তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাসের বয়স্ক একজন লোক বলে উঠল, ‘আহ! এত চিৎকার করো না তো, সমস্যা হয়।’

জাওভান কিরণের কাছে এসে বলল, ‘শুনো লাভ, এগুলো সবাই-ই দেখে, কেউ গোপনে দেখেও অস্বীকার করে। আমি তো আর অস্বীকার করি না। এসব সাধারণ বিষয়। ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগবে এসব।’

জুভের শেষ কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে কিরণ উঠে দাঁড়ায়। আর নাহ! তার মাথা ধরে যাচ্ছে। এত জঘন্য! এত নোংরা! এত লাগাম ছাড়া জুভ! রাগে রি রি করছে তার শরীর। জাওভান বেয়াদবের থেকেও যদি বড় কিছু থাকে তাহলে সেটা। কিরণ জুভকে ধাক্কা মেরে সরালো। একটুর জন্য জুভ পড়ে যায়নি। চলন্ত বাসে কিরণ সীট ধরে দাঁড়িয়ে দেখলো কোথাও খালি আছে কিনা। নেই, সব ভর্তি। জাওভান বারবার অনুরোধ করল কিরণকে, হাত টেনে ধরল। কিরণ তার পায়ের হিল খুলে জাওভানের কনুইতে বারি মারল। সে ধমকে উঠল যদি জাওভান আরেকবার ডিস্টার্ব করে তাহলে চিল্লিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তুলে জুতার বারি মারবে।

জাওভান বুঝল যে কিরণের সাথে একটু বেশিই অশোভন কথা বলে ফেলেছে। কিরণ আনকম্ফর্টেবল ফিল করেছে সেটাও বুঝে।

কিরণের নজর গেল উজানের পাশের সীটে। উজানের ব্যাগ সীট জুড়ে আরামে বসে আছে। কিরণ ব্যাগটা নিয়ে নিজের সীটে ছুঁড়ে মেরে উজানের পাশে বসল। উজান চোখ মেলে তাকাল। পাশে ফোঁস ফোঁস করতে থাকা কিরণের দিকে তাকিয়ে পেছনে কাতর জুভের দিকে তাকাল। জাওভান উজানের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল,”এসব তো নরমাল উজি। ও এত রিয়েক্ট করছে কেন?” উজান বুঝে নিলো যে তখনকার ঘটনার জন্য এমন অবস্থা।

জাওভান বারবার কিরণকে বিরক্ত করছে দেখে কিরণ জাওভানের দিকে ফিরে শান্ত গলায় বলল,

‘জুভ তুমি যদি আর একবার আমাকে ডিস্টার্ব করেছো তো গায়ের সবগুলা জ্যাকেট খুলে বসে থাকব। কিচ্ছু খাবোও না। তোমার ভালো লাগবে তা?’

জাওভান দু’পাশে মাথা নাড়ালো।

‘তাহলে চুপচাপ বসে থাকো। আমার ঘুম পাচ্ছে।’

জাওভান চায় না কিরণের কোনো কষ্ট হোক। তাই চুপচাপ বসে রইল। সামনের সীটে একহাত বাড়িয়ে কিরণের বাহু ধরে থাকল।

‘হাত ধরেছো কেন? হাত সরাও।’

‘তুমি ঘুমাও সোনা। যদি পড়ে যাও তাই ধরেছি। ডিস্টার্ব করছি না তো।’

কিরণ কিছু না বলে বিড়বিড় করে বলল,

‘এসব বাজে ছেলেই কেন আমার কপালে জুটে? সব ছেলেগুলাই এক, বাইরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট।’

উজান বোধহয় শুনে নিলো কথাটা। সে কিরণের দিকে চেয়ে চোখ ঘুরাল। কিরণ মনে মনে বলল, “আসছে আমার আরেক ভাবওয়ালা। যত্তসব ফালতু।”

.
.
চলবে…
[কোনো ভুলত্রুটি দেখলে ধরিয়ে দিবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here