#সাহেব_বাবুর_বউ – [০৮ শেষ]
নিকটস্থ এক স্বাস্থ্য কম্পেক্স এ ভর্তি করানো হয় নূরিকে। আহনাফ নিজে নূরিকে এখানে নিয়ে এসেছে। নূরিকে ভর্তি করানোর পর নূরির বাবা মাকে খবর দেয় আহনাফ। রবিন আর নিতু আসলে আহনাফ নিতুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ঠিক যেমনটা করতো সাহেব। আহনাফ কাঁদছে আর বলছে, ” আমার নূর ভালো হয়ে যাবে, বলোনা মামি। নূর ভালো হয়ে যাবে।” নিতু আহনাফের মুখটা তুলে ওর দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলে, “সাহেব,” নিতুর গলা কাপছে। আহনাফ মাথা নেড়ে বলে, “হ্যাঁ মামি। তারপর আহনাফ নিতু আর রবিন তিনজনে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভিতরে একটা বেডের উপর শুয়ে আছে নূরি। মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ করা। সেলাইন চলছে। আহনাফের চোখের জল আজ বাধ মানছে না। মনে মনে প্রার্থনা করছে, ” ইয়া আল্লাহ, এবারের মতো আমার নূরিকে সুস্থ করে। জানি আমি ওকে কষ্ট দিয়েছি। অনেক অপমান করেছি তবুও এসবের পিছনে একটা কারন ছিলো। তুমি তো অন্তর্যামী তুমি সব জানো। নূরি আমার প্রান আমার সবকিছু। যা করেছি শুধু মাত্র ওকে পাবার জন্যে করেছি। স্মৃতিহীন আহনাফের এছাড়া আর কোন রাস্তা ছিলো না। বারবার কেন আমি ভাগ্যের হাতে মার খাচ্চি। তুমি শুধু আমার নূরকে সুস্থ করে দাও আমার আর কিছু চাওয়ার নাই। আমার স্মৃতিও না। আজ যদি আমার স্মৃতি ফিরতো তাহলে আমার মন আর মাথার সাথে যুদ্ধ করতে হতো। নূরির জন্যে আহনাফের প্রয়োজন কোন সাহেবের নয়।”
আহনাফ স্বাস্থ্য কম্পেক্স এর বাহিরে চলে আসে। ততক্ষণে রানীমা নূরির বন্ধুরা আর আহনাফের গ্যাংয়ের সকলে চলে আসছে। গ্যাংয়ের সবাইকে দেখেও আহনাফ চুপ ওদের সাথে কোন কথা বলে নি। মুনমুন রেগে কিছু বলতে যাবে কিন্তু হাসি ওকে থামিয়ে বলে, ” আগে ভিতরে চল দেখি নূরির কি অবস্থা।”
বিকালের দিকে জ্ঞান ফিরে নূরির। সবাই একে একে দেখা করে চলে যাওয়ার পর আহনাফ ভিতরে যায়। আহনাফকে দেখে নূরি চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু আহনাফ, সে গিয়ে নূরির মুখে চোখে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। ঘটনার আকস্মিক চোখ মেলে তাকায় নূরি। শান্ত স্থির দৃঢ় দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করছে নূরি। আহনাফ নূরির চোখের দিকে একপলক তাকিয়ে মৃদু হেসে নূরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, ” এভাবে কি দেখছিস নূর?তুই খুশি হস নি!” নূরির চোখের কোটর বেয়ে জল গড়িয়ে পরে। মিনমিনে বলে, “সাহেব, আমার সাহেব বাবু।” নূরির একটা হাত আহনাফের মুখে রেখে হাত বুলিয়ে দেয়। আহনাফ নূরির হাতটা নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে তাতে চুমু খায়। নূরির মুখে হাসি। সে ফিরে পেয়েছে তার সাহেবকে। এমন পাগলামো শুধু মাত্র সাহেই করতে পারে। আহনাফ নূরিকে জড়িয়ে ধরে। অনেক হয়েছে ঝগড়াঝাঁটি, এবার থেকে শুধু মাত্র প্রেম করবে। এদিকে একটা রুমে রানীমা নিতু রবিন আর আহনাফের গ্যাংয়ের সদস্য সবাই বসে আছে। রানীমা ওদের এই রুমটায় ডেকে এনেছে।কিছুক্ষণ পর কোটসুট পরে একটা লোক প্রবেশ করলো সেই রুমে। হাতে থাকা ব্যাগটা পাশে টেবিলে রেখে রানীমাকে সালাম করলো। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল, হ্যাঁ গাইস আমি ডঃ ইমরুল হাসান। ডক্টর, সাইক্রিটিয়াস ও বলতে পারো। তোমরা কি জানো আহনাফ চৌধুরী কে? হ্যাঁ, আহনাফ জমিদার মহলের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী। শুধু এটুকুই। না আহনাফ একজন ইংরেজ, ও ইংরেজদের বংশধর কিন্তু স্বভাতগত দিক থেকে ও পুরো বাঙালি। আচ্ছা তোমরা কি জানো আহনাফ একজন স্মৃতিভ্রষ্ট ছেলে।” কারো মুখে কোন কথা নাই। এই সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেটা একটা রোগী। তার স্মৃতি নাই। ডঃ ইমরুল আবার বলেন, আমি আহনাফের ডক্টর। ইংল্যান্ডে থাকা কালীন একটা এক্সিডেন্টে আহনাফের স্মৃতি চলে যায়। আর ও হয়ে যা অন্যমানুষ। পুরো ওর স্বভাবের বিপরীত। আর এই যে নূরি, এই নূরি কিন্তু আহনাফের বাগদত্তা। ওর প্রেমিকা। ওরা দুজন দুজনকে ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসে।” এই কথা শুনা মাত্র মেঘনা সেখান থেকে চলে যায়। না আর কিছু সে শুনতে পারবে না। সে এতদিন যাকে ভালোবেসে এসেছি সে একজন রোগী, আগে থেকে অন্যকাউকে ভালোবাসে। দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
পরেরদিন নূরিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। নূরি এখন কয়েকদিন রেস্টে থাকবে। নো কলেজ, নো লাফালাফি কঠিন নির্দেশ সাহেবের। আর নূরি তার সাহেব বাবুর নির্দেশ অমান্য করবে এমন সাহস তার আছে নাকি। সারাদিন রুমে বসে দিন কাটে তার। এইভাবে চলে যায় পুরো একটা সপ্তাহ। নূরির সাহেব বাবু রোজ এসে তাকে দেখে যায়। আদরে আদরে মুখরিত করে দেয় নূরিকে। নূরিও সাদরে গ্রহন করে তার সাহেব বাবুর আদর। আহনাফ এখন পুরো পাল্টে গেছে। আগের সেই উচ্ছল বেপরোয়া ভাবটা এখন তার মাঝে নেই। সাহেবের মতো গম্ভীর শান্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন একটা মানুষে পরিনিত হয়েছে। আহনাফ বড় সাহেবকে জানিয়ে দিয়েছে সে কোম্পানির দায়িত্ব নিতে চায়। কথাটা শুনে বড় সাহেব রানীমা সকলে খুশি। তবে রানীমা বলে দিয়েছে, ” এখন কোম্পানির দায়িত্ব আহনাফের উপর চাপিয়ে দিবে না।” কেননা তারা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার আহনাফ আর নূরির বিয়েটা দিয়ে দিবে। কথাটা শুনে আনন্দে আত্নহারা নূরি। কত স্বপ্ন দেখেছে সে তার সাহেব বাবুর বউ হবে বলে। ফাইনালি তার স্বপ্ন এবার পূরণ হবে। সে সত্যি হবে #সাহেব_বাবুর_বউ।
এখন মধ্যরাত। মুশলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। বারান্দায় বসে বৃষ্টির পানি ধরার চেষ্টা করছে নূরি। মুখে তার প্রানউচ্ছল হাসি। আজ বাদে কাল সে সাহেবের বউ হতে চলেছে। নূরির খুশি ধরে কে? এর মাঝেই দেখতে পেলো বৃষ্টিতে ভিজে কেউ আসছে। নূরি উঠে দাঁড়ায়। এতরাতে কে আসছে বৃষ্টিতে ভিজে? লোকটা যতটা কাছে আসছে নূরি ততটাই লোকটার অবয়ব দেখতে পাচ্ছে। তারপরেই নূরির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। লোকটা নূরির কাছে এসে ওকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর নূরির কপালে গালে চুমু খেয়ে বলল, ” বৃষ্টি দেখলেই লাফালাফি করতে মন চায়। একদিন ঘর বন্ধি করে রেখেছিলাম ভুলে গেছিস।” গম্ভীর গলা আহনাফের। এই কথাটা জেনেছে সে সাহেবের ডাইরি থেকে। সাহেবের ডাইরিতে নূরির সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত খুব যত্ন করে লেখা আছে। নূরি হেসে জবাব দেয়, সে আর মনে থাকবে না। আগে যা জ্বালিয়েছ না আমাকে। ঠিক তোমার পূর্বপুরুষদের মতো। তারা যা অত্যাচার করতো বাঙালির উপর। সে সময় আসামের একজন একটা গানে সেই অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে গেছে।” আহনাফের ভ্রু কুচকে যায়। শান্ত গম্ভীর গলায় বলে, “আমি তোর উপর অত্যাচার করি নূর।” নূরি জবাব দেয়, “সেটা তুমি পারবেই না।” আহনাফ নূরির হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলে, শুভ জন্মদিন নূর। নূরি হাসি মুখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে, “এই তোমার মনে আছে আমার জন্মদিনের কথা।
” তোর জন্মদিন আর আমার মনে থাকবে না এটা হয় না নূর।”
” আগের বার যা কান্ড করেছিলে আমার জন্মদিনে। অবশ্য সেটা তুমি নও আহনাফ করেছিলো।” নূরির কথায় হাসে আহনাফ। তারপর বলে, আহনাফকে খুব ঘৃনা করিস তাইনা নূর। নূরের মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়। তারপর বলে, ” না সাহেব, আমি কখনোই তোমাকে ঘৃনা করতে পারিনা। হও তুমি সাহেব বা আহনাফ, মানুষতো একটাই। আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমার স্মৃতিটা ফিরুক।
আহনাফ মৃদু হাসে। অধোর চেপে প্রশ্ন করে,
” আহনাফের ভালোবাসা গ্রহন করতে সমস্য কোথায়?”
” আমি শুধু সাহেবকে চেয়েছি আহনাফকে নয়। সাহেবের মতো করে কেউ আমাকে ভালোবাসতেই পারবে না। আহনাফ ও নয়।” নূরির কথা শুনে হাসে আহনাফ। কিছু বলে না। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে, ” তোর সাহেবের ভালোবাসা আহনাফের ভালোবাসার ধারে কাছেও ঘেষতে পারবে না নূর। নাই বা পেলে আহনাফ তোর ভালোবাসা। সাহেবকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি এতেই আমি ধন্য। আমি না হয় সারাজীবন স্মৃতিভ্রষ্ট সাহেব হয়ে থাকবো তোর কাছে।”
আহনাফকে চুপ করে থাকতে দেখে নূরি বলে, ” কি ভাবছো সাহেব?”
” এতদিন আমাকে এসব কথা কেন বলিস নি। তোকে কত কষ্ট দিয়েছি আমি।”
” আমি কি জানতাম নাকি এভাবে তোমার স্মৃতি ফিরবে না। যদি জানতাম এক্সিডেন্টে তোমার স্মৃতি ফিরে আসবে তাহলে অনেক আগেই গাড়ির সামনে ঝাপ দিতাম।” নূরির কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আহনাফ নূরিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। দুজনেই চুপ। কিছুক্ষণ পর আহনাফ, ” এরকম পাগলামি আর করবি না। তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচবো বলতো সোনা। তুই যে আমার প্রান।” নূরি জবাব দেয় না। দু-হাতে আহনাফের টি-শার্ট খামচে ধরে।
সেদিনের পর থেকে আহনাফ তার বাবার কল ধরে না। স্যামুয়েলের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ সে বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাটা কারো অজানা নয়। রানীমা এই নিয়ে আহনাফকে প্রশ্ন করলে আহনাফ সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়। রানীমা তাই নূরির স্বরনাপ্ন হয়। নূরি আহনাফকে ছেড়ে দিয়ে প্রশ্ন করে, ” খালুজানের সাথে কথা বলা বন্ধ কেন করেছো সাহেব। তুমি জানো সে কতটা কষ্ট পাচ্ছে।” নূরির প্রশ্ন শুনে আহনাফের মুখে থাকা এতক্ষণের হাসিটা মিলিয়ে যায়। মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠে গম্ভীর ভাব।নূরি বুঝে যায় গুরুত্বর কিছু হয়েছে তাই সে আহনাফ হাত নিজের হাতের মুঠিতে আবদ্ধ করে নিয়ে বলে, ” সাহেব, তুমি ঠিক আছো! আর এতটা রেগে কেন যাচ্ছো। দেখ সাহেব খালুজান তোমাকে অনেক বার কল করেছে তুমি তার সাথে কথা বলে নাও। সামনে আমাদের বিয়ে, আর আমাদের বিয়েতে বাবা থাকবে না সেটা কখনো হয় নাকি! ” নূরির কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আহনাফ নূরির থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ” না থাকবে না। ” তারপর আর কোন কথা না বলে, সে আবার বৃষ্টিতে ভিজে চলে যায়। পিছন থেকে নূরি ডাকলেও সে একবারের জন্যেও পিছনে ফিরে তাকায় না। আহনাফ যেতে যেতে বলে, ” আই এম সরি নূর। আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু ওই লোকটা আসবে না আমার বিয়েতে। যার জন্যে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে আমি স্মৃতি হাড়িয়েছি তাকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাইনা। তুমি জানো না নূরি, সেদিন তোমার সাহেব বাংলাদেশে ফিরে আসবে বলে তার বাবার সাথে দেখা করতে যায় আর সেখানে গিয়ে সে দেখতে তার বান্ধুবির সাথে তার বাবার ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক। লজ্জা অপমান ঘৃনা ঝেকে ধরে সাহেবকে। ছেলের বয়সী একটা মেয়ের সাথে সে কি করে বিবাহ বহির্গত সম্পর্ক রাখতে পারে। সেখান থেকে চলে আসার সময় জোড়ে ড্রাইভ করে সাহেব যার ফলে তার এক্সিডেন্ট। আর সে পুরোপুরি অন্যমানুষ হয়ে যায়। আমি এখন এখন সাহেব, তাই পারবো না আমার বাবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে। আর আহনাফ হলে কোন বাধা দিতাম না মেনে নিতাম আমার বান্ধুবি আর বাবার সম্পর্ক। কারন আহনাফ জানে ভালোবাসার সাথে কোন কিছুর আপোস করা যায় না। কিন্তু সাহেব, সে তো বড় সাহেবেরে অনুশাসনের নিয়মে বড় হয়েছে। এই নগড়পাড়ার কুমার সাহেব। জমিদার বাড়ির ছোট জমিদার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধি, ভিষণভাবে শুদ্ধাচারী প্রাচিনপন্থি সকলের সম্মানের ছোট জমিদার। আমাকে ওসবে শোভা পায়না।
তারপর অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হয় আহনাফ আর নূরির। বিয়ের সকল নিয়ম আচার অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। মেঘনা এসে নূরির হাতে মেহেদি দিয়ে আহনাফের নাম লিখে দেয়। আর বলে, ” আমি জানতাম না আহনাফ তোর সাহেব। জানলে কোনদিনও আহনাফের কাছে ঘেঁষতাম না। আহনাফ শুধু তোর।” বিয়ের পর কেটে যায় একটা মাস। আহনাফ ততদিনে কোম্পানির দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে আর নূরি পুরো জমিদার মহল সামাল দেয়। নূরির মাঝে এখন চঞ্চল ভাবটা ফুটে উঠেছে। সারাক্ষণ দিবার সাথে গল্পে মত্ত থাকে সে। দিবা পড়ায় ফাঁকিবাজি করে তাই সে নূরির সাথে থাকে সর্বক্ষণ যাতে আহনাফ তাকে কিছু বলতে না পারে। আহনাফ বিষয়টা খেয়াল করে বেশ কয়েকদিন তারপর সে নূরিকে বকে দেয়। নূরি এরপর একদম শান্ত হয়ে যায়। আহনাফ যা বলে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।এতেও বিরক্ত হয় আহনাফ। মেয়েটা এমন কেন সে কি জানে না তার চঞ্চলতা না দেখলে আহনাফের কেমন অস্বস্তি হয়। আহনাফ মনে মনে বলে, ” রাগ হয়েছে আমার উপর মহারানীর। কি করবো বলো, আমি কঠোর – কঠিন কুমারসাহেব। আহনাফ নই। তুমি তো আহনাফকে চাওনা। তুমি চাও কুমারসাহেবকে। তুমি তো চাওনা কুমারসাহেব আহনাফের মতো করে ভাবুক। আহনাফ কিন্তু সাহেবের মতো ভাবুক ব্যতিগ্রস্থ নয়। আহনাফ কিছুতেই তার প্রিয়াকে এত কষ্ট দিতে পারতো না।সাহেবের বউ হয়েছো একটু কষ্ট তো তোমাকে পেতেই হবে। তোমার বেহিসাবিপনা, বেনিয়ম সাহেবের অসয্য লাগে সোনা। সে তো কলেজের গ্যাংলিডার আহনাফ চৌধুরী নয়। জমিদার বাড়ির বিশুদ্ধতা নিয়ম নিষ্ঠার মূর্ত প্রতিক সে।” মনে মনে কথাগুলো বলে বৈঠক খানায় চলে যায় আহনাফ।
রাতে নূরি ঘরে এসে বিছানা পরিষ্কার করে। বিছানা থেকে পুরনো চাদর উঠিয়ে নেয়। নতুন চাদর আনার জন্যে কাবার্ড খুলে। ভিতর থেকে চাদর বের করতে গিয়ে অনেকগুলা জামাকাপড় পড়ে যায়। নূরি সবগুলো আবার গুছিয়ে রাখে আর তখনি ওর হাতে পরে একটা ডাইরি। ডাইরিটা এপাশ ওপাশ করে দেখে নেয়। মনের মধ্যে বেশ কৌতুহল জাগে ডাইরীটা কার জানার জন্যে। ডাইরি নিয়ে বিছানায় বসে কয়েক পেজ উল্টিয়ে হতবাগ হয়ে যায় নূরি। পুরো ডাইরিটা পড়ে ফেলে নূরি। কিছুক্ষণ চুপকরে বসে থেকে বিছানায় শুয়ে পরে নূরি। শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে, ” কাজটা তুমিই করেছো সাহেব। তুমি বলেই পেরেছো। তোমার মনের আলো তোমাকে স্মৃতিহীনতার অন্ধকার থেকে বের করেছে। তুমি প্রমান করে দিয়েছে হৃদয়ই আসল। তোমার মনের গভীরতার কারেছে, মনের দৃঢ়তার কাছে ভাগ্যও হাড় মেনেছে।।” অভীমান হয় নূরির, এতটা যখন ভালোবেসেছে তখন আগে কেন বলেনি। চুপচাপ শুয়ে থাকে নূরি। কিছুক্ষণ পর আহনাফ আসে রুমে। নূরিকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে দেখে আহনাফ মৃূদু হেসে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে নূরির পেটে হাত গুজে দেয়, ঘাড়ে ঠোর বুলাতে থাকে। নূরি বলে, ” শহরে চলে যাব। ছাড় আমাকে সাহেব। থাকবো না তোমার সাথে। চাকরি করবো নিজের পায়ে দাঁড়াবো।” আহনাফের বুঝতে বাকি নেই তার প্রিয়ার অভিমান। আহনাফ বলে, “তুমি চাকরি আমার কাছে করবে। আমার ছেলেমেয়ে মানু করার চাকরি।” নূরিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই আহনাফ দেখতে পেয় নূরি তার বুকে মুখ গুজে শুয়ে আছে। চোখেমুখে কি প্রশান্তি নির্ভলতা, ভারহীন নির্মল একটা মুখ। আহনাফ নূরির মাথায় হাত গুজে দিয়ে বলে, ” আমি সত্যি তোমার সাহেব বাবু। বিস্মৃতিও আমাদের আলাদা করতে পারেনি। কারন স্মৃতি নয় বিস্মৃতির মাঝে তোমায় আমি পেয়েছি। আমি যেমন তোমার স্মৃতিভ্রষ্ট সাহেব বাবু। আর তুমি তোমার #সাহেব_বাবুর_বউ।
সমাপ্তি
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।