সিক্রিট_গ্যাংস্টার♥পর্ব_০৬
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
–কি করব আমি ঋতু?
–তুই ওনার সাথে কথা বল।
–কি বলব?
–বল যে তোর বিয়ে,
–বাবা আমাকে যেভাবে বলেছে তার উপর দিয়ে আমি কিছু করার ক্ষমতা রাখছি না।
–তাহলে বিয়েটা করতে হবে।
–আমার ভাগ্য টা খুব আজব খেলা খেলল তাই না।
–কাদিস না পাগল এক কাজ কর তুই আমান স্যারের সঙ্গে কথা বল
–কি বলব ওনাকে।
–ওনাকে বল তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস ওনাকে বিয়ে করতে পারবি না।
–কিন্তু উনি যদি বাবাকে বলে দয়।
–বুঝিয়ে বলিস একটু।
–বুঝবে না রে।
–আচ্ছা তুই ওনার সাথে কথা বল।
ঋতুর কথাটা বলার মাঝে ফোনটা আবার বেজে উঠলো,
আমি ওর দিকে তাকালাম,
তার পর ফোনটা কেটে সেই নাম্বার টাও ব্লক করে দিলাম।
সে দিন রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো ঋতু সন্ধ্যার দিকে বাসায় গেলো।
মা বাবার আড়ালে খুব কান্নাকাটি করলাম
এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম।
এভাবে চলতে থাকলো দিন সে অনেক গুলা নাম্বার দিয়ে আমার ফোনে ফোন করেছিল কিন্তু আমি সব গুলাই ব্লক করে দিয়েছি।
বাবার এ অনুরোধ আমার পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
দিন পার হতে লাগলো।
আমি ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করেছি আজ ৩ দিন।
প্রতিদিন ঘরের মধ্যে বসে কাদি।
আজ আমান স্যার আর তার বাবা আসবে আমাদের বাসায়।
অনেক সুন্দর করে ঘর ঘুছিয়েছে মা
আমাকে কোন কাজ করতে দিচ্ছে না।
মা খুব খুশি বাবাও।
এটা দেখে মনের মাঝে যাও বলার আসা ছিল তাও চলে গেছে।
আমাকে একটা লাল ঢাকাই শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো মা।
ঋতুও আসছে বাসায়
ও মেকাপ করিয়ে দিলো
আমার মুখে হাসির কোন ছাপ নেই।
তার কথা মনে পরলে বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে
।
মাত্র কিছু দিনে মায়ায় পরে গেছি আমি।
,
কিছু সময় পর আমান স্যার আর তার বাবা চলে এলো।
মা বসতে দিয়ে অনেক খাতির আপ্যায়ন করলো
কিছু সময় পর মা আমাকে আসতে বলল,
ঋতুর সাথে বসার রুমে গেলাম।
মা ঋতুকে ইসারা দিয়ে আমাকে আমান স্যারের পাশে বসাতে বলল।
ঋতু সেই কাজ করল।
কিন্তু আমান স্যারের পাশে বসে কেন জানি না আমি সেই অদ্ভুত সুগন্ধি টা পাচ্ছি যেটা আমি ওই লোকটার কাছে আসা থেকে পেতাম।
হটাৎ করে এমন কিছু হওয়াতে বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।
আমার পাশে ফিরে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই।
এই যোমকে আমি যোমের মতো ভয় পাই।
মাথা নিচু করেই বসে রইলাম আমি।
হটাৎ আরিফ কাকু বলে উঠলেন,
–কি গো মা মন খারাপ?
আরিফ কাকুর কথায় মাথা তুলে তাকালম,
–জি না (মলিন হেসে)
–তাহলে এতো চুপচাপ কেন রে মা?
–জি কি বলব (মাথা নিচু করে)
–কেমন আছিস এটা আগে বল
–জি আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
–হুম আমার ছেলের এতো মিষ্টি একটা বৌ হবে সেটা ভেবে তো খুশি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
–(মাথা নিচু করে রইলাম)
–আমারও তো অনেক খুশি ভাইজান (মা বলল)
–হ্যাঁ তবে আমান আর মেঘকে একটু একা কথা বলতে দেও ততক্ষণে আমরা বিয়ের দিন নিয়ে আলোচনা করি।
–হ্যাঁ ভাইজান এটা ঠিক বলেছেন।
–ঋতু ওদের একটু,
–হ্যাঁ আন্টি।
–স্যার আসুন।
আমান স্যার আর আমাকে ঋতু আমার ঘরে দিয়ে আমাকে আস্তে করে বলল,
–সময় কিন্তু এখনি,
কথাটা বলে ও বেরিয়ে এলো,
–(তুই তো বলে গেলি সময় কিন্তু এখনি কিন্তু আমি যে বাবার কথা ফেলতে পারবো না ভরতে ভেতরেই মরে যাবো মনে, মনে,)
–কি ব্যাপার পড়ালেখার কি খবর? (গম্ভীর শুরে)
আমি মাথা তুলে তাকালাম,
–জি ভালো।
–দেখে তো মনে হচ্ছে খুব বেশি ভয়ে আছো আমি কি বাঘ নাকি?
–(বাঘের থেকে কম না মনে মনে,)
–এমনি সময় তো কথার বন্যা বইয়ে দেও এখন এতো চুপচাপ কেন?.
–কি বলব?
–কথা বলো,
–কথা।
আমার কথা শুনে তিনি ফিক করে হেসে দিলেন,
ওনার মুখের দিকে তাকালাম,
তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলাম,
–বুঝলে তোমার মতো একটা বৌ হলে মন্দ হয় না।
–(আমি আপনার বৌ হতে চাই না মনে মনে,)
–মনে মনে কি আমার ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছো নাকি?
–কেন?
–না তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে।
–(কথাটা বলব নাকি বলব না মনে মনে,)
–কিছু বলবা?
–জি না (ভয়ে)
–ভয় পাচ্ছো তুমি?
–জি না (আরও ভয়ে)
–সমস্যা নাই তুমি কম্ফোর্ট ফিল করছো না আমি বুঝতেছি।
ভালো থাকো দেখা হবে জলদি আর খুব জলদি নিয়ে যাবো সাথে করে।
কথাটা বলে তিনি রুম থেকে চলে গেলেন।
আমি সেখানে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম,
৩০ মিনিট পরে,
সবাই চলে গেছে শুধু ঋতু পাশে বসে আছে,
–কাঁদিস না সোনা।
–কবে ঠিক হয়েছে বিয়ে?
–শুক্রবার ২৬ তারিখ।
–এতো জলদি।
–হুম।
–ঋতু মা খেয়ে আয় সোনা সারা দিন দৌড়াদৌড়ি করছিস কতো বার বললাম খেয়ে নে খেলি না এখনো দেরি করছিস। (মা)
–খেয়ে আয় যা মা ডাকছে।
–হুম তুই কাঁদিস না শাড়ি পাল্টে নে।
–হুম।
ঋতু বাইরে চলে গেল
আমি ওয়াসরুমে গিয়ে কিছু সময় নিরবে কান্না করে গোসল করে বের হলাম
,
,
বিকলে,
ঋতু বাসায় চলে গেল,
আমার বাসায় পরলো বিয়ের ধুম।
কি করে কি হবে কার কি করতে হবে।
সব কিছুতে মেতে উঠলো আমার মা বাবা।
এদিকে সবাই অভিনন্দন দিচ্ছে
বিয়েটা তার মানে আর না হবার চান্স নাই হয়েই ছাড়বে,
রাতটা খুব কষ্টে কাটালাম নির্ঘুম।।
সে কি দেশে আসছে?
নাকি আমার কথা তার মনে হয় নি এক বারও?
অবশ্য কতোগুলো সিম তার ব্লক করেছি আমি তার খোজ নাই।
আচ্ছা সে কি আমাকে প্রতারক ভেবেছে?
কিন্তু আমি কি করব।
কিছুইতো আর আমার হাতে নেই।
ধিরে ধিরে সময় অবহিত হতে লাগলো।
প্রতিটি সেকেন্ড আমি ওনার কাথা ভাবছি।
এমন একটা সেকেন্ড আমার কাটে নি যখন আমি ওনাকে না ভেবেছি।
মা বাবা আমাকে সব সময় হাসি খুশি দেখতো।
নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে রাখতে চাই মা বাবা কে দেখাতে চাই না।
কাল আমার হলুদ আজ আমার হাতের অনেকটা অংশে মেহেদীর ডিজাইন করে দেওয়া হইছে।
মাঝে লেখা হয়েছে আমান এর নাম।
মেহেদী লাগিয়ে রুমের মাঝে বসে আছি।
প্রায় শুখিয়ে গেছে।
আর একটু হলে গোসল করব।
কিছু সময় পর গোসল করে বের হলাম
রুমে এসে দেখি ফোনটা ক্রমাগত বেজে চলেছে,
ফোনটার কাছে গিয়ে ফোনটা উঠাই,
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,
–আলাইকুম মসললাম।
কেমন আছো?
–জি আলহামদুলিল্লাহ,
–তোমায় কাল প্রথম হলুদ টুকু আমি লাগাবো।
–আমান স্যার?
–আজ বাদে কাল আমদের বিয়ে আর তুমি এখন আমাকে চিনতেই পারছো না।
–না মানে তা নয়।
–তো কি?
–সেটা কি করে?
–কোনটা কি করে?
–হলুদ লাগাবেন,
–সেটা কাল দেখা যাবে কি করে কিন্তু প্রথম এটা আমি করবো দেখো।
–দেখা যাবে।
আল্লাহ হাফেজ।
ফোনটা আমি কেটে দিলাম ওনার কথা না শুনে।
দিনটা আমি ঘুমিয়ে কাটালাম
বিয়ের জন্য বাড়ি ভর্তি মেহমান। কাউকে তোয়াক্কা না করে আমি চুপচাপ ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম দিন আর রাত।
পরের দিন,
সকাল থেকে হলুদ এর কাজ শুরু হইছে,
এটা সেটা কতো কি।
আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে সাজিয়ে দিয়ে গেছে কিছু মহিলা।
একটু পর আমার রুমে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরে আসলো ঋতু।
ওকে দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ।
ভাইয়াও আসছে বোধহয় কিন্তু আমার কিছুতেই কোন আগ্রহ নাই,
মনের মাঝে যতদুর দেখা যায় শুকনো মরুভূমির মতো হয়ে আছে।
–দোস্ত তোকে সুন্দর দেখাচ্ছে।
ঋতুকে হেসে কথাটা বললাম
কিন্তু আমার হাসির মাঝে মলিনতা তার চোখকে ফাকি দিতে পারে নি।
ও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে,
–কষ্ট পাস না।
–কষ্ট কি না বলে পায় বল। যদি কষ্ট পাস না বললে কষ্ট না পাওয়া হতো তাহলে কতোই না ভালো হতো,
চলবে,