সিক্রেট_গ্যাংস্টার♥পর্ব_০৭(হলুদ স্পেশাল ?)
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
ঋতু বুঝতে পারে কিছু বলে কিছু হবে না তাই কথাকে ঘুরাতে চেষ্টা করে,
–আরে বেব তোর বিয়ে তাও সবার ক্রাশ আমান স্যারের সাথে ভাবতে পারতেছিস উফ আমার তো ভেবেই মজা লাগছে।
কতোনা অপেক্ষা করেছি এই বিয়ের জন্য ফাইনালি সেই বিয়ে হতে চলেছে
তাও সবার ক্রাশ দ্যা গ্রেট আমান স্যারের সাথে,
আমি তো মহা খুশি স্যার এখন দুলাভাই হয়ে যাবে।
ঋতুর কথার ভঙ্গি দেখে হাজার কষ্টের মাঝে ফিক করে হেসে দিলাম।
আমি হাসতে ও আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমি এই মায়ার টানটা বুঝতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরি,
,
,
,
হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি আর উপরে কটি পরে হাতে একটা ঘড়ি নিতেই আমান কে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে নজর কাড়া সুন্দর যাকে বলে,
সবাই অনুষ্ঠানে ব্যাস্ত,
একটা ফাকা সময় পেয়ে আমান মেঘকে ফোন করে,
কিন্তু তখন তার ছবি তোলা হচ্ছিল বলে মেঘ ফোন ধরতে পারে না।
,
,
,
অনেক গুলা ছবি তোলা হলো আমার না চাইতেও মলিন হাসি হাসতে হলো আমায়।
মা বাবার মুখের হাসি আমার কলিজা জুড়িয়ে
যাচ্ছে।
এতো খুশি তাদের আগে দেখি নি।
মেয়ে বিদায় হবার খুশি নাকি ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেবার খুশি!
–ঋতু অনেক ছবি তোলা হইছে আমি একটু রুমে যাচ্ছি হলুদ এর অনুষ্ঠানের আগে নিয়ে যাস।
–আচ্ছা যা,
,
মেঘ রুমে চলে এলো,
এদিকে এতো সুন্দর ঋতুর সাজ দেখে কিরন এর হার্টবিট তো সেই জোরে লাফালাফি করছে,
মেঘের ভার্সিটির বড়ো ভাই হিসাবে কিরন ভাইয়া কেও আসতে হয়েছে নিমন্ত্রিণ এ,
–মেঘের কি অবস্থা ঋতু।
–ভালো না আমি বুঝতেছি না কি করব।
–তুমি শুধু ওর পাশে থাকো আর ওকে স্যারের সম্পর্কে ভালো ধারনা দেও।
–ভালো আর অভালোর কিছু নাই
ওর মনের অবস্থা বোঝার ক্ষমতা তোমার আমার আছে।
আমাদের সাথে এমন হলে,
কথাটা পুরো বলার আগে করিন ঋতুর মুখে হাত দিয়ে দেয়,
–এমন বলো না আমি মরেই যাবো।
ঋতু মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে কিরনের দিকে।
,
,
রুমে এসে দরজা লাগিয়ে সামনে তাকাতে চমকে উঠি,
–আল্লাহ! আপনি এখানে কেন?
–কি হলো চমকে উঠার কি আছে,আমি তো বলেছিম তোমায় প্রথম হলুদ আমি লাগাবো।
–কিন্তু আপনি আসলেন কেথা দিয়ে বাইরে এতো মানুষ কেউ আপনাকে দেখে নি কেমনে কি?
–তোমার বোঝার প্রয়জন নাই কি করে এসেছি,
আমান আমার দিকে একপা একপা করে এগোতে থাকে আর আমি ক্রমশ দেয়ালের দিকে পেছতে থাকি।
এক পর্যায়ে ঠেকে যায় দেয়ালে,
–হলুদ রঙের ঢাকাই শাড়ি মেয়েটার ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক,
কিন্তু এগুলার কিছুই আকর্ষণীয় না,
আকর্ষণীয় তো ঠোঁটের উপরে সবার চোখ এড়ানো ওই ছোট্ট একটা তিল,
আর মায়াবী এই চোখ দুটো।
স্যারের কথা শুনে রীতিমতো আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এই উগান্ডা টাইপ মানুষ টা এতো রোমান্টিক। আল্লাহ!
উনি আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেঁসে তার হাতে থাকা হলুূ টুকু আমি মুখে লাগিয়ে দেয়।
আর নিজে আমার মুখ থেকে হলুদ মেখে নেয়।
এই কাজ হবার সময় সে আমার অতিরিক্ত কাছে ছিল যার ফলে তার নিশ্বাস তার হৃৎস্পন্দনের গতি মনে হচ্ছিল আমার সব বুঝা।
কিন্তু তার কাছে আসা তার ছোয়া আমার কাছে খুব চেনা লাগে।
কিন্তু কেন এমন ফিল হয় তা আমি জানি না।
হলুদ লাগানো শেষ হলে আমার থেকে সরে আসে,
–প্রথম হলুদ টুকু আমি লাগালাম মিসেস.খান।
কথাটা বলে বিশ্ব উজার করা হাসি দিয়ে আমার রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল
আমি এখনো তাকিয়ে আছি তার যাবার দিকে,
অবাকের সপ্তম আকাশে আমি এখন।। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও আমি যার সাথে আমার জীবন কল্পনা করেছি সেই নেই,
সব কিছু ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসতে যাবো
তখনি ঋতু এলো ঘরে,
–কিরে তোর হলো রেস্ট নেওয়া?
–হুম হলে,
–তাহলে আয় অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে।
ঋতু আমাকে নিয়ে বাইরে স্টেজ এ বসিয়ে দিলো,
একটা সুন্দর গানে ও আর কিরন ভাইয়া ডান্স করলো।
সত্যি দু জন কে দেখলে কলিজা জুড়িয়ে যায়
অসাধারণ তারা।
তার পর আমাদের ভার্সিটির আরও কিছু বন্ধু বান্ধবী আসছে সবাই মিলে ডান্স করলো।
সবার সাথে ছবি তোলা হলো,
এবার হলুদ লাগানোর পালা,
প্রথম মা এলেন হলুদ লাগাতে।
তার পর একে একে সবাই,
অনেক ছবি তোলা হলো,
সত্যি ভিশন টায়ার্ড হয়ে আছি আমি,
মাথা ঝিম ঝিম করছে।
বিকালে খাবার খেয়ে যে যার বাসায় চলে গেল।
এখন ঋতুর যাবার পালা।
কিন্তু কাল যেহেতু বিয়ে তাই মা ঋতুকে আর যেতে দেয় নি।
ও বিয়ের দিন আমার বিদায়ের পর যাবে,।
গোসল করে সুতি কাপড় পরে ঘরে এসে আয়নাতে তাকালাম,
সত্যি আমার ঠোঁটের উপর ছোট্ট করে একটা তিল আছে যা এই পর্যন্ত আমার চোখে পরে নি তা ওই লোক টার চোখে পরে গেল।
আল্লাহ কেমনে সম্ভব,
–কিরে কি দেখিস?
–দোস্ত আমার ঠোঁটের উপর যে এই তিল তা তুই দেখেছিস কখনো?
–না তো কোথায় তের মুখে কোন তিল নাই।
–নারে আছে এই দেখ।
–তুই হটাৎ তিল নিয়ে পরলি কেন?.
–না মানপ এমনি হুট করে চোখে পরলে তাই,
–আমাকে ইতিহাস পড়িয়ে লাভ নাই আমান স্যার আসছিল বল।
–কি করে জানলি?
–তোর মুখে প্রথম হলুদের দাগ দেখে কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেছি।।
–ওহ আচ্ছা।
–হুম।
–দোস্ত,
–হ্যাঁ,
–সত্যি বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে তাই না।
ঋতু আমার কথা শুনে আমার দিকে এগিয়ে আসে,
–হুম হয়ে যাচ্ছে তাই অতিত ভুলে এখন বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।
যা কপালে নেই তা ভেবে লাভ নাই আল্লাহ যা লিখছে তাই হবে তুই কষ্ট পাস না সোনা।
আমি ঋতুর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে গিয়ে বিছনায় শুয়ে পরলাম।
আর ঋতু কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকলো,
,
,
,
আমান এর বাসায় হলুদের অনুষ্ঠান শেষ,
আমান কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে,
তখনি তার রুমে তার বাবা আসে,
–বাবা আমান,
–হ্যা বাবা।
–তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
–হ্যাঁ বাবা বলো।
–তোমার বিয়ে কাল তুমি তো জানো ঠিক এই দিনে আমিও তোমার মাকে বিয়ে করেছিলাম।
–হ্যাঁ বাবা কাল তোমাদের ম্যারেজ এনিভার্সিটি।
–হুম কাল আমাদের বিবাহ বার্ষিক।
তুমি জানো প্রথম যখন তোমার মাকে আমি আমার বাসায় নিয়ে এলাম তখনও অদ্ভুত ভাবে এমন সিচুয়েশন ছিল তোমার দাদি মারা গেছিল আমি আর তোমার দাদা থাকতাম।
আমার বিয়ের দুই বছর পর যখন তুমি তোমার মায়ের পেটে তখন তোমার দাদজান মারা যায় আর তুমি হবার সময় আমার কোলে তোমায় দিয়ে গিয়ে আমাকে একা রেখে চলে জান তোমার মা।
কাল আমার বাড়ি ঘর আলো করে আবার তোমার বৌ আসবে।
আজ প্রায় ২৭ বছর পর আমার ঘরে আবার কোন মেয়ে আসবে বৌ হয়ে।
আমি চাইনা আমার বৌমা লোন কষ্ট পাক।
আমি চাই তুমি যা তুমি তা হয়েই থাকো।
তুমি তোমার সিক্রেট কে সিক্রেট রেখো ওটাকে ধামাচাপা দিয়ে মেরে দেও।
মেঘ আর তুমি তোমাদের সংসারে কোন খারাপ কিছু ছায়া আমি দেখতে চাই না।
আমি আসা করব আমি যা বলছি তুমি তা বুঝতে পারছো।
–জি বাবা আমি আপনার কথার মানে বুঝেছি।
–যদি বুঝে থাকো তাহলে আমাদের উপরে মৃত্যুর ছায়াটা আর থাকবে না
চলবে,