ভার্সিটির সবার সামনে মাঠের মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
ঘেমে নেয়ে গেছি।
আমার পাশেই একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট এর প্রোফেসর, যার দেওয়া শাস্তি হিসাবে আমি গত ১ ঘন্টা যাবত কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
সবাই দেখে হাসছে।
এটা তো হাস্যকর ব্যাপার লজ্জায় আমার কান্না আসছে।
এদিকে আমার মুখ লাল হয়ে গেছে।
এতেও স্যার এর কোন দয়া হচ্ছে না । সে ছায়ার মধ্যে হাত খানা পকেটে পুরে দাঁড়িয়ে আছেন।
এভাবে বেশ কিছু সময় থাকার পর উনি আমার সামনে আসলেন,
–এই শাস্তি এর পর আমি আশা করবো না , তুমি আর জীবনে এমন কোন কাজ করবে না যা আমার পছন্দ না।
রাগে, দুঃখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি কোন কথা বলছি না।
–হাত নামাও আর সং সেজে থাকতে হবে না সবার মাঝে।
কথাটা বলে হনহনিয়ে তার গাড়ির মধ্যে উঠে ভার্সিটি থেকে চলে গেল লোকটা।
আমি কান থেকে হাত নামিয়ে হাঁটতে যাবো কি চোখের সামনে কালো হয়ে এলো।
তখনি পেছন থেকে ঋতু আমাকে ধরে বসল,
–দোস্ত ঠিক আছিস।
–হুম ঠিক আছি রে।
–না রে ঠিক নাই । সরি দোস্ত, দোষ টা আমার শাস্তি তুই পেলি।
–ধুর বাদ দে তো । একটা রিকশা দেখ আমি না আর পারছি না।
–হ্যাঁ দেখছি।
ঋতু গিয়ে রিকশা দেখলো।
একটা রিকশায় উঠলাম আমি আর ও।
বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
–দোস্ত তোর খুব খারাপ লাগছে ?
–শরীরের খারাপ লাগার থেকে মনের খারাপ লাগাটা বেশি রে।
–দোস্ত আমি সরি রে।
–ধুর আর সরি বলিস না । ওই লোকটা তো সব সময় ধান্দায় থাকে আমাকে নিচু দেখানোর জন্য।
–বুঝি না স্যার এমন কেন !
–সত্যি বলছিস ! যদি বুঝতে পারতাম রে তাহলে তো হয়ে গেছিল।
রিকশা তার আপন গতিতে চলছে।
আমি রিকশার উপরে বসে আছি, ঋতু আমাকে ধরে রেখেছে যাতে পরে না যাই । কারন ২ ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে থেকে অবস্থা আমার খুব খারাপ।
পরিচয় দেয়,
আমি জান্নাতুল মেঘ। এবার অনার্স ১ ম বর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
বাবা মা আর আমি মিলে ছোট্ট একটা সংসার আমাদের।
বাবা অতটা উচ্চবর্তী স্থান এর মানুষ নয়।
সল্প আয়ের সংসার আমাদের।
মা গৃহিণী।
যে আমাকে এতোটা সময় রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সে হলো ঢাকা ভার্সিটি এর ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট এর প্রোফেসর।
আমার ডিপার্টমেন্ট ও ইংরেজি।
ওনার নাম আমান খান।
শহরের নাম করা বিজনেসম্যান আরিফ খানের বড়ো ছেলে।
আমি বুঝি না তাঁর আমাকে নিয়ে সমস্যা টা কি ! সব সময় আমাকে এভাবে হেনস্তা করে লাভটা কি পায় উনি।
ক্লাসের সবার সাথে ভালো করে কথা বলে আমার বেলায় তুই তোকারি করেন সব সময়।
আজ শুধু শুধু আমাকে এতো বড়ো বাজে শাস্তি দিলেন উনি,
সকালে ভার্সিটি তে এসে ঋতুর সাথে ক্লাসে এলাম।
তখন ঋতু বলল,
–দোস্ত তোর ভাইয়া আমাকে একটা চিঠি দিতে এতে চেয়েছে।
–কিসের চিঠি?
–জানি না জীবনের প্রথম চিঠি দিচ্ছে ও আমাকে।
–ওহ তা ভালো।
–হুম কিন্তু সমস্যা হইছে,
–কি সমস্যা,
–দাদা না আমাদের পাশের বিল্ডিং এ আসছে আজকে।
–কেন তোর দাদা এখানে কেন?
–জানি না একটা দরকারে । তুই প্লিজ চিঠিটা এনে দে।
–এখন?
–হ্যাঁ এখন।
–ওকে সমস্যা নাই ক্লাস শুরু হতে এখনো ১০ মিনিট দেরি আছে আমি নিয়ে আসছি।
–ওকে।
ওকে কথাটা বলে আমি বাইরে বের হলাম।
বের হতে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে,
–আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম ।
কেমন আছো আপু?
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?
–আলহামদুলিল্লাহ এই যে চিঠি।
–দিন।
ওনার হাত থেকে চিঠিটা আমি নিবো এমন সময় চিঠিটা অন্য এক জন ছো মেরে নিয়ে গেল।
আমরা দু’জন ই তার দিকে তাকিয়ে পরলাম।
তার দিকে তাকাতে কলিজার পানি আমার অটোমেটিক শুকিয়ে যাচ্ছে।
এটা তো আমান স্যার।
চিঠিটা উনি খুলে পড়লেন।
আমি আর ভাইয়া পাথরের মতো তাকিয়ে আছি,
–কি ব্যাপার কিরন তোমার না ইতিহাস ডিপার্টমেন্ট?
–জ্বি স্যার।
–তাহলে এই ডিপার্টমেন্ট এ কি?
–স্যার আসলে,
–আসলে ফাসলে শুনতে চাচ্ছি না এক্ষুনি ৫ মিনিটের মধ্যে আমার চোখের সামনে থেকে সরো।
–জ্বি স্যার।
সবাই স্যারকে খুব ভয় পায় যার জন্য ভাইয়া কিছু না বলেই চলে গেল।
আর আমি দাঁড়িয়ে রইলাম ।
ভাইয়া যেতেই সবার সামনে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আমার গালে।
গালে হাত দিয়ে ছল ছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
–লজ্জা করে না হিন্দু একটা ছেলের সাথে এসব করতে?
–ওটা আমার,
–চুপ একটা কথা বলবি না তুই,
ওই মাঠ দেখছিস সবার সামনে ওখানে কান ধরে ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকবি ঠিক ২ ঘন্টা।
–কিন্তু স্যার,
–তুই আর একটা কথা বললে তোকে আমি এখান থেকে বার করে দিবো । তুই জানিস এ ক্ষমতা আমার আছে ।
স্যারের কথা শুনে আর কিছুই বলার শক্তি ভেতরে থাকলো না।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
কারন সে চাইলে সত্যি আমাকে বার করে দিতে পারে।
বর্তমান,
–দোস্ত বাসায় চলে আসছি।
–ওহ ধন্যবাদ ঋতু তোর বাসা ছেড়ে তুই আমাকে এগিয়ে দিলি,
–আরে ধন্যবাদ তো তোকে আমার দেওয়া উচিৎ আজ তো তুই আমার জন্য,
–থাক বাদ দে,
–হুম।
আমি নেমে বাসার মধ্যে চলে এলাম ।
এক দম ওয়াসরুমে গিয়ে লম্বা সাওয়ার নিয়ে বিছনায় শরীর এলিয়ে দিলাম।
গালটা ব্যাথা হচ্ছে।
দারুণ জোরপ চড়টা মেরেছে।
সত্যি এলটা আস্ত রাক্ষস।
সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
,
,
,
–হ্যালো ঋতু।
–জ্বি স্যার।
–তোমার বান্ধবির কি অবস্থা?
–বাসায় পৌঁছে দিয়েছি মনে হয় ঘুম…..
–ওহ আচ্ছা।
তুমি ওকে বলো না ওর খরব নিয়েছি তোমার থেকে।
–জ্বি স্যার।
–ওকে রাখি।
–জ্বি স্যার।
,
আমান ফোনটা কেটে দেয়।
হাতে থাকা চিঠিটা দিকে লক্ষ্য করে,
চিঠিতে লেখা ছিল,
–ভালোবাসা কি তা তুমি না জীবনে আসলে বুঝতাম না।
তুমি সে প্রথম নারী যে আমার জীবনে এসে পুরো জীবন টাকে আলোকিত করেছো।
এটা আমার লেখা প্রথম চিঠি প্রিয় আজ তবে এতটুকু লিখি ভালোবাসি।
আমায় প্রিয় ঋতু,
নিচে আমার প্রিয় ঋতু লেখাটুকু আমান এখন লক্ষ্য করে দেখছে।
আসলে ও চিঠির প্রথম দুই লাইন পড়ে এতোটাই রেগে গেছিল যে নিচের কিছু পড়েই নি।
–হায় আল্লাহ মেয়েটাকে এতো কঠিন শাস্তি দিলাম আমি।
ঠিক হয় নি এটা করা।
,
এদিকে,
সন্ধ্যা হয়ে গেছে । মেঘকে এভাবে ঘুমাতে দেখে মেঘের মা গিয়ে মেঘকে টেনে তুলে,
–মা শরীর খারাপ নাকি?
–না মা।
–তাহলে এভাবে ঘুমিয়ে আছিস কেন।
–এমনি মা ডাকো নি যে।
–ওহ আয় খেতে আয় । তুই তো খাস নি।
–হুম খাবো।
–আয়।
মায়ের সাথে খেয়ে নিলাম।
তার পর বই নিয়ে বসলাম।
কাল তো ওনার ক্লাস আছে। কিন্তু আজ যা হলো এর পর কিভাবে যাবো আমি ভার্সিটি তে।
লজ্জা আর লজ্জা ! এই স্যার টা ভীষন খারাপ।
বই টা বার করে কিছুই ভালো লাগছে না শুধু বার বার ওই কথা মনে হচ্ছে।
–ধুর ভালো লাগে না।
উঠে জানালার কাছে এসে জানালা খুলে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।
তখনি হটাৎ পেছন থেকে কিছু একটার শব্দ পেলাম।
চিরুনি টা হাত থেকে রেখে দেখতে গেলাম কিসের শব্দ।
তখনি হটাৎ পেছন থেকে কেউ,
চলবে,
সিক্রেট_গ্যাংস্টার♥
পর্ব_০১
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
(গল্প সম্পর্কে সবার মতামত আসা করছি সবার ভালো লাগলে ইনশাআল্লাহ লিখে যাবো)