সিক্রেট_গ্যাংস্টার♥
পর্ব_০৩
#লামিয়া_রহমান_মেঘাল
–মেঘ খেতে আয় মা।
আমি মায়ের কথা শুনে ডাইনিং টেবিলে এলাম,
–কি ব্যাপার মামনি তুমি রাতে ঘুমাও নি?
–কেন আব্বু হটাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন?
–তোমার চোখ দেখে মনে হয় রাতে ঘুম হয় নি।
–না আব্বু তেমন কিছু না।
–হুম ঠিক আছে।
খাবার শেষ করে রওনা হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে,
রাস্তা থেকে ঋতু উঠলো,
আমাকে কিছুটা উদাস দেখে ঋতু বলল,
–কিরে বেব তোর কি হইছে?
–বেব তোর সাথে না কথা আছে?
–কি কথা?
–ভার্সিটি চল বলছি।
–ওকে।
দেখতে দেখতে রাস্তা শেষ হলো আমরা ভার্সিটি পৌঁছে গেলাম
এবার ভেতরে প্রবেশ করে ঋতুকে নিয়ে একটা গাছের ছায়াতে বসলাম,
–বল কি বলবি,
আমি ওকে গত কিছু দিনের ঘটনা সব খুলে বললাম।
–কি বলিস এতো কিছু কি করে কি।
–হুম এতো কিছু কি করব বলতো বুঝতে পারছি না।
এই দেখ সেই লকেট
আমি ওকে লকেট টা দেখালাম।
ও দেখে বলল,
–আমারো না একটা কথা ছিল।
–কি কথা?
–বেব তোকে সে দিন বাসায় পৌঁছে দেবার পর কি হলো,
–কি হলো,
–স্যার ফোন দিয়েছিল।
–আমান স্যার?
–হ্যাঁ আমান স্যার।
–কি বলল,
–বলল তুই ঠিক আছিস কি না?
–কেন বলতো।
–আমার মনে হচ্ছে ওই লোকটা আমান স্যার।
–নারে ঋতু এটা হয় কেমনে আমান স্যার আর ওই লোকটা সম্পূর্ণ আলাদা দুটো মানুষ।
–তাও ঠিক আমান স্যার একটা খুব নিতির মানুষ।
–হুম।
–একটা বুদ্ধি পাইছি।
–কি বুদ্ধি?
–তুই এই লকেট টা খুলে ব্যাগে রাখ।
–তার পর?
–যদি ভার্সিটি থাকা কালিন ওই মুখোশ পরা লোকটা আসে তবে ভাব্বি ওটা আমান স্যার আর যদি না আসে তবে ওটা অন্য কেউ।
–কিভাবে কি ্
–আরে কিভাবে কিছু না তুই শুধু আমার কথা মতো কাজ কর।
–হুম।
ওর কথায় আমি লকেট টা খুললাম।
খুলে ব্যাগে রেখে আমরা ক্লাসে চলে এলাম।
ক্লাসে গিয়ে দেখি স্যার এখনো আসেন নি।
তাই দু’জন বসে গল্প করছিলাম।
প্রায় অনেকটা সময় পর ক্লাসে আসলেন স্যার আমান স্যার।
ওনার ক্লাসে আমি ভেবেছিলাম আজ অপমানিত হবো কিন্তু দেখি না লোকটা আজ খুব সুন্দর করে ক্লাস করিয়ে বেরিয়ে গেল
আমি আর ঋতু দু’জন দু’জনের দিকে তাকালম।
–মনে হচ্ছে না সেই লোকটা আমান স্যার। (ঋতু)
–হুম সেম হেয়ার বেব।
–হুম
–আচ্ছা চল আমরা গিয়ে একটু ফার্স্ট ফুড খাই।
–হুম চল।
আমি আর ঋতু চলে এলাম এক ফুচকা দোকানের সামনে।
দু’জন বেশ মজা করে ফুচকা খেলাম
আমরা টাকা দিয়ে আসতে যাবো তখন পেছন থেকে কিরন ভাইয়া ডাক দিলো,
–এই ঋতু মেঘ,
আমরা পেছনে ফিরে দেখি ভাইয়া
আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন,
–কি ব্যাপার তোমরা আজ জলদি জলদি,
–ভাইয়া আজ তো একটা ক্লাস ছিল
–ওহ তাই তো
–হুম তোমার কি অবস্থা এমন শুকনা লাগে কেন মুখ (ঋতু)
–হায় হায় কি প্রেম উফ(হেসে বললাম)
–মার খাবি মেঘ।
–আসলে আজ সকালে খেয়ে আসতে পারি নি খাবার পছন্দ হয় নি তাই।
–ও মা তা নিজে রান্না করতে (ঋতু)
–নাহ ভাবছি এক বারে তোমার হাতে রান্না খাবো।
–কি আজব কথা আমার হাতের রান্না কি করে।
–এই মুখে মুখে।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের প্রেম দেখছি আর হাসছি,
–কিরে হাসিস কেন.
–সিঙ্গেল মানুষের কাছে এগুলা হাস্যকর।
–হ্যা তা ঠিক বলেছো আপু। তা করব নাকি ব্যাবস্থা তোমার?
কিরন ভাইয়ার কথায় সবাই হেসে দিলাম।
–আচ্ছা ঋতু তুই ভাইয়ার সাথে যা ঘুরে আয় আমি বাসায় যাই।
–আচ্ছা একা পারবি।
–তোর আমাকে বাচ্চা মনে হয়?
–,না ঠিক তা না কিন্তু তোর তো শরীর ভালো না।
–আরে না সমস্যা নাই তুই যা এমন সময় আর পাবি না।
–আচ্ছা ঠিক আছে,
তুমি ওকে রিকশায় তুলে দেও।
–হ্যা আপু আসো আমার সাথে,
ভাইয়া আমাকে রিকশায় তুলে দিলো আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
বাসায় এসে কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে বিছনায় শুয়ে পরলাম।
খুব টায়ার্ড লাগছে।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি, দেখি ঘুম আসে নাকি।
,
এদিকে মেঘের বাসয় এসে চুপচাপ মেঘের মাকে ফাকি দিয়ে মেঘের রুমে ঢুকেছে সেই অচেনা লোকটা।
মেঘের রুমে এসে মেঘকে এভাবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে আস্তে আস্তে তার কাছে গিয়ে বসে,
–আমার দেওয়া লকেট টা তুমি খুলে ফেললে মেঘ আচ্ছা থাক সমস্যা নাই এবার পরিয়ে দিবো পরের বার খুললে দেখো কি করি।
(মনে মনে,)
★★,
আলো থেকে হটাৎ ছায়া হয়ে গেছে আমার সামনে কিছুটা অস্বাভাবিক ফিল হতে চোখ খুলে সামনে থাক লোকটাকে দেখে যেই না চিৎকার দিবো তখনি আমার মুখটা চেপে ধরে লোকটা,
–ওরে আল্লাহ তুমি কি করতে যাচ্ছিলা।
–উম,
–চুপ থাকো আমার লকেট খুলছো কেন পাজি মেয়ে।
আজ আবার পরিয়ে দিয়ে গেলাম এর পর যদি খুলছো মনে করো খবর আছে তোমার।
–উম(রেগে)
–আমার আকাশের মেঘের রাগ হচ্ছে নাকি।
–রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছি আমি।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটা আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়,
,–সমস্যা কি আপনার? কে আপনি? এভাবে আমার বাসায় কি করে আসছেন আমি আজি মাকে বলব।
–আমি কেন আসছি জানো?
–কেন?
–ভালোবাসি তাই।
–মানে কি!
–মানে টা সোজা, খুব বেশি ভালোবাসি।
লোকটা আমার এতোটা কাছে যে তার নিশ্বাস ঠিক আমার মুখের উপর পরছে হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
তার চোখে এক অদ্ভুত মায়া আছে যে মায়ার আলোতে তলিয়ে যাচ্ছি আমি।
এই লোকটার চোখ দুটোকে দেখে বড্ড চেনা চেনা মনে হয়।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটা মুচকি হেসে আমাকে চেইন টা দিয়ে আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল।
বুকের ভেতর ধকধক ভুমিকম্প চলছে
ভূপৃষ্ঠ মনে হয় এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় এক দম ডুম ডুম খেল খেলাচ্ছ।
লোকটার পারফিউম টা unique। কি সমস্যা আমি ও কি তাকে না দেখে ভালোবেসে ফেলতেছি নাকি। তার কাছে আসা আমার ভেতরে ভালো লাগা সৃষ্টি করে কেন।
ধুর কি সব ভাবছি আমি।
এভাবে আর চলে না আমাকে এর একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।
,
,
,
সন্ধ্যা বেলা,
আমান তার বাবার সাথে বসে চা খাচ্ছে,
–বুঝলি বাবা তের জন্য মেয়ে দেখেছি।
–বাবা তুমি সব সময় এই কথা কেন বলো,
–এই তুই চুপ কর তো আমার কথাটা শোন,
আজিজ রায়হান আছে না আমার অফিসের কলিক। ওর একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা তোর ভার্সিটি তে ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট এ পড়ে। বেশ ভালো দেখতে।
–হুম মেয়েটার নাম জান্নাতুল মেঘে।
–কিরে তুই ওকে চিনলি কি করে?
–আমার স্টুডেন্ট,
–হ্যাঁ তো আজিজ রায়হান শুধু আমার কলিক না আমার বন্ধু ও বটে আমি ওর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাই।
কথাটা শুনে আমান কিছু সময় চুপ রইলো,
–কেন বাবা হাজার টা মেয়ে থাকতে ও কেন?
–কারন আমি জানি তুমি ওকে ছাড়া কারোর জন্য সৃষ্টি হও নি।
–ওর যদি পছন্দ থাকে?
–সে সব পরের কথা,
–বাবা
আমান মলিন চোখে তার বাবার দিকে তাকায় যার অর্থ তার বাবা ঠিকি বুঝতে পারে।
–চিন্তা করো না সব ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ
–ইনশাআল্লাহ
,
এদিকে মন থেকে কি আর ব্রেন থেকে কি দুটোর কোনটা থেকেই যেন মুখোশ পরা সেই বাদামি রঙা চোখ দুটো সরতেই চাইছে না মেয়ের।
সারাটা দিন শুধু এই এক কথা ভাবতে আছে,
চলবে,
(মেঘ ভাবছে এক জনের কথা বিয়ে ঠিক হচ্ছে অন্য জনের সাথে আসলে হচ্ছে টা কি ভাবার বিষয় ?)