সিনিয়র ডক্টর,পার্ট:১

0
1373

সিনিয়র ডক্টর,পার্ট:১
লেখক:Osman

_অনেক ধাক্কাধাক্কি করে একটা সিরিয়াল পেলাম। টিকেট ৩০০ টাকা। সেজন্য মানুষ অনেক। শুনেছিলাম এই ডাক্তার বলে অনেক ভালো। আবার উনি বলে সপ্তাহে একদিন আসে এখানে। তাই সময় করে চলে আসলাম।

_অনেকক্ষন পরে আমার সিরিয়াল আসলো। আমি ‌ডক্টরের চেম্বারে‌‌ ঢুকলাম। ঢুকে দেখি মাঝবয়সী এক মেয়ে। বয়স ২৫-২৬ হবে। আর আমি ২৩ ।আমার থেকে দুই-তিন বছরের বড়। বিয়ের কথা বলতে পারি না। হলেও হতে পারে। ডক্টর একটা বেগুনি রঙের বোরকা পড়েছে আর সাথে গোলাপি রঙের স্কার্ট। নেকাব নেই। ডক্টর অসম্ভব সুন্দরী। আরেকটা জিনিস তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে সেটা হলো তার চোখে চশমা। বোরকার উপরে সাদা অ্যাপ্রোন।

আমি ঢুকে সালাম দিলাম। সালামের উত্তর নিয়ে বলনে।

ডক্টর: বসেন । বলেন কি সমস্যা?

আমি: আমার মাথা ব্যথা করে।

ডক্টর: কেমন মাথা ব্যথা?মাথা কি প্রচন্ড ব্যথা করে?বমি আসে?
আমি: না। শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। কিন্তু প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে।

ডক্টর: তাপমাত্রা ঠিক আপনি কি করে বুঝলেন?
আমি: আমি ঐ সামনে মেসে থাকি। সাথে আমার ফ্রেন্ড থাকে । মাথা ব্যথা উঠলে তার হাতে চেক করাই তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা।

ডক্টর: তার মানে আপনি আন মেরিজ?

আমি: হুম।

ডক্টর: কী থেকে আপনার মাথা ব্যথা উঠে?

আমি: সে অনেক লম্বা কাহিনী। I think আপনার সে টাইম নাই।

ডক্টর: ওকে । মাথা ব্যথা কি আপনার সপ্তাহে সাত দিন ওঠে?

আমি: না‌ । তিন দিন ওঠে । এই তিন দিন আমার শরীরের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। কাজের প্রচন্ড চাপ থাকে। আসরের পর থেকে মাথা ব্যথা শুরু হয়।
মাঝে মাঝে ব্যাথার কারনে চোখে কিছু দেখিনা। প্লিজ ডক্টর একটা সালিউসোন দেন। নাহলে কবে জানি মাথা বারি দিয়ে ফাটিয়ে ফেলি।

ডক্টর: ওকে।

_ডক্টর একটা প্রেসক্রিপশনে কতগুলো ঔষধের নাম লেখলো। লেখে নিজের মোবাইল দিয়ে ছবি তুলল।
তারপর আমাকে বলল।

ডক্টর: এই‌ ঔষধ গুলো খাবেন।

আমি: থ্যাংকস ডক্টর।

ডক্টর: আপনার নামটা বললেন না।

আমি: ঈশান মাহমুদ। অনার্স থার্ড ইয়ার।

_ডক্টর আমাকে তার কার্ড দিয়ে বলল।

ডক্টর: যদি কোনো প্রয়োজন পড়ে। তাহলে কল দিবেন।

আমি: নাম্বার।

ডক্টর: কার্ডে আছে।

_আমি কার্ড দেখলাম ডক্টরের নাম আনিকা।

আমি: আমার জন্য এই‌‌ সুবিধা কেনো?

ডক্টর: আমি আপনার ডক্টর আর‌ আপনি আমার পেসেন্ট।

আমি: অহহ বায়।

_বাইরে এক ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিলাম। রুমে আসলাম এসে শুয়ে রইলাম একটু পর একটা কোচিং আছে। সেখানে আমি পড়াই।

_আমি ঈশান মাহমুদ। বাড়ি নরসিংদী । মেস থাকি ঢাকায়‌। পরিবারের বড় ছেলে। সেটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার ছোট দুই বোন। দুই বোনের নাম সামিয়া, সুবর্ণা। তাদের বিয়ের বয়স চলে আসতাছে তাদের বিয়ে‌ দিতে হবে। যেহেতু বড় ছেলে তাই দায়িত্ব ও বেশি। বাবা ছোট একটা জুতার দোকান চালায়। আমরা ফ্যামিলিতে ৭ জন। আমার দাদা-দাদী। দুজনেই অচল। সুবিধা একটা বাড়িটা আমাদের নিজের। একটা জুতার দোকান থেকে ৭ জনের খরচ। আবার বোনদের তাদের পড়ালেখার খরচ। তাই আমি উপার্জনের পথ দেখছি। সেটা হলো আমার মেধা দিয়ে। দুইটা কোচিং করাই। আবার দুইটা প্রাইভেট পড়াই। আবার ভার্সিটি থেকে ক্লাস করি। কোচিং সপ্তাহে তিন দিন। এই তিন দিন আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। রাতেই শুরু হয় মাথা ব্যথা। কোথায় এক বাপের এক ছেলে সুখে থাকবো। সেখানে আমার উপর সব দায়িত্ব। দুইটা কোচিং আবার নিজের ক্লাস তারপর প্রাইভেট। এই তিন দিন আমার মাথা ব্যথা করে। আস্তে আস্তে ব্যথা শুধু বাড়তেই থাকে। তাই ডক্টরের শরোনাপন্ন হলাম।

_একটু পর কোচিং গেলাম। কোচিং করিয়ে আসতে রাত হলো। সেদিন আর মাথা ব্যথা উঠে নাই। খাওয়া দাওয়া করে ঔষধ নিলাম হাতে খাব বলে। এমন সময় মনে পড়লো। আনিকা ডক্টর কেনো আমার প্রেসক্রিপশন ছবি তুলল? সবার প্রেসক্রিপশন কি এভাবে ছবি তুলে কে জানে। আমি ঔষধ খেয়ে দিলাম এক ঘুম। পরের দিন কাজের এতো চাপ নাই।
তাই এভাবে এক সপ্তাহ চলে যায়। দুই দিন ঔষধ খেয়ে আর খাই নাই। যেহেতু আর মাথা ব্যথা ওঠে না। ঔষধ খাওয়া হয় না। আমার শনিবারে কাজের চাপ বেশী। শনিবার আবার মাথা ব্যথা ওঠছে।এমন মাথা বলার বাইরে ‌। তাড়াতাড়ি ঔষধ খেলাম।
খেয়ে শুয়ে রইলাম । নাহ! মাথা ব্যথা কমছেনা।
পাশে থাকা ফাহিম কে বললাম।

আমি: দোস্ত দেখতো আমার শরীর গরম কিনা।

ফাহিম: তর আবার মাথা ব্যথা উঠেছে। তুই না ডাক্তার দেখাইলি।।

আমি: হুম ।চেক কর।

_ফাহিম আমার হাত ধরে বলল

ফাহিম: তর শরীর একদম ঠান্ডা।

আমি: ওকে। ঔষধ খাইছি দেখি কাজ হয় কিনা।

_নিজে নিজে মাথা হাতাইয়া আরো এক ঘন্টা পার করলাম।

ফাহিম: দোস্ত মাথায় পানি দিবো।

আমি: আমার তো শরীর গরম না। পানি দিলে কি লাভ হবে?

ফাহিম: আচ্ছা তাহলে । ঘুমানোর চেষ্টা কর।

_আমার মাথা ব্যথা আর‌ সহ্য হচ্ছে না। আমি ডাক্তারের কার্ড বের করলাম। ফোন দিলাম। কতক্ষণ রিং হলো । একটু পর বলে ব্যাস্ত আছে। আমি আরো দুইবার দিলাম ব্যাস্ত আছে। আরেকবার দিলাম ওয়েটিং আছে। মেজাজটা গরম হয়েগেলো। ব্যথার কারণে ঘুম আসছেনা। আমি আরো বিশ মিনিট পর ফোন দিলাম। এবার ধরছে।

আমি: আসসালামুয়ালাইকুম।

ডক্টর: ওয়ালাইকুমুস সালাম। জী কে বলছেন?

আমি: ঈশান মাহমুদ। আপনার পেসেন্ট।

ডক্টর: কোন ঈশান মাহমুদ। আমি চিনতে পারলাম না।

আমি: আরে আপনাকে যে বলছিলাম আমি মেসে থাকি।

ডাক্তার: সরি চিনতে পারলাম না আপনার সমস্যা টা বলেন ।

আমি: ডক্টর আপনি আমার প্রেসক্রিপশন লেখে মোবাইল দিয়ে ছবি তুলেছেন।

ডক্টর : ohh মনে পড়েছে ।ঈশান মাহমুদ। প্রচন্ড মাথা ব্যথা।

আমি: হ্যাঁ। এখন প্রচন্ড মাথা ব্যথা করতাছে। ঔষধ খেয়েছি কমার কোনো নাম নাই।

ডক্টর: এক কাজ করেন আগামীকাল আমার চেম্বারে চলে আসেন।

আমি: আগামীকাল আসবোনে। এখন একটা ব্যবস্থা করেন।

ডক্টর: আমি একটা বড়ির নাম বলছি। এই বড়িটা এনে খান ।

আমি: ওকে।

ডক্টর: বায়।

_ফাহিমকে দিয়ে পাঠায়লাম বড়ি আনতে। বড়ি আনলে খাইলাম। খেয়ে বিছানায় শুইলাম। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বলতেও পারলাম না। সকালে ফাহিমের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গল। আমি তাকিয়ে দেখি ফাহিম রেডি হচ্ছে কলেজে যেতে। আমি বললাম।

আমি: এত সকাল সকাল কোথায় যাস?

ফাহিম: তুই ঘড়ির দিকে তাকা।

_আমি তাকিয়ে দেখি ১০টা ছুঁই ছুঁই।

আমি: এতক্ষণ ঘুমাইলাম আজকে।

ফাহিম: হুম। আমিতো তর ডাকের আশায় ঘুমায়।
তুইতো সকালে আমাকে ডাক দেস।

_আমি চিন্তা করতে লাগলাম। তাহলে কি গতকাল রাতে ডক্টর আমাকে ঘুমের বড়ি বলছে খাওয়ার জন্য। যাইহোক মাথাটা এখন অনেক ভালো লাগছে।
থ্যাংকস ডক্টর। আরেকটি কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ডক্টর আমার প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলল কেনো। ছবি তোলার কথা শুনে সাথে সাথে আমাকে চিনে ফেলে। এমনকি আমার রোগও বলে দিলো। বুজলাম একজন দায়িত্ববান ডক্টর।

আমি: আমিও কলেজে যাবো। একটু দাঁড়া ।

_একটু পর রেডি হয়ে কলেজে গেলাম। এক ক্লাস করে আমি আর ফাহিম ক্যাম্পাসের গাছ তলায় এসে বসলাম। বসে দুজনে কথা বলতাছি। এমন সময়‌ মোবাইলে কল আসলো। দেখি বাড়ি থেকে মা।

মা: কেমন আছো বাবা?

আমি: ভালো মা তুমি কেমন আছো?আব্বার শরীরটা কেমন আছে?
মা: ভালো। শুন না সামিয়কে দেখতে আসছিলো।
তাদের পছন্দ হইছে।

আমি: ছেলে কি করে?

মা: ছেলে ব্যাবসা করে।

আমি: তোমাদের ভালো লেগেছে।

মা: হুম। যৌতুক চায় ৫ লাখ।

আমি: কিহ!এতো টাকা যৌতুক। তাড়া কি সরাসরি বলছে?
মা: না। তাড়া এমন ভাবে বলছে যেটাকে যৌতুকই বলে।

আমি: এখন তোমারা কি চিন্তা করছো?
মা: আমরাতো তর দিকে তাকিয়ে আছি।

আমি: তুমি রাতের দিকে কল দিয়ো।

মা: আচ্ছা।

_আমি কল কেটে ‌দিয়ে। ফাহিমের কাছে এসে বসলাম।আমাকে চিন্তিত দেখে ফাহিম বলল।

ফাহিম: কিরে দোস্ত তকে এরকম চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?

আমি: সামিয়ার সম্বন্ধ আসছে। যৌতুক চায় ৫ লাখ।

ফাহিম: কস কি?

আমি: হুম।

ফাহিম: থাক দোস্ত টেনশন করিস‌ না। সব‌ঠিক হয়ে যাবে।

আমি: হুম। বাসায় যাবি আমার একটা প্রাইভেট আছে ।

ফাহিম: না আমি একটু লাইব্রেরীত যাবো।

আমি: ওকে আমি যাই।

_আমি ওঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবছি কিজে করি। ৫ লাখ টাকা যৌতুক। সন্ধ্যা বেলা মার কাছে কি বলবো। আমার কাছে এতো টাকা নাই। তিন বছর আগে ঢাকায় আসছিলাম। এই‌ তিন বছরে অনেক কেটে কুটে ৪- ৫ লাখ টাকা জমাইছি। কিজে করি। বাসায় আসলাম এসে রেডি হয়ে গেলাম প্রাইভেট। নিয়ত প্রাইভেট শেষ করে যাবো ডক্টরের চেম্বারে। প্রাইভেট শেষ করে গেলাম ডক্টরের চেম্বারে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here