সিনিয়র ডক্টর #পার্ট:১১ (লাস্ট)

0
1380

#নাম: সিনিয়র ডক্টর
#পার্ট:১১ (লাস্ট)
#লেখক: Osman

_আনিকা আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো তার রুমে। আমি আনিকার রুম দেখে অবাক হয়ে যাই। রুম কি সুন্দর করে সাজানো? যেনো এখানে কোনো রানি থাকে। তুমি তো আমার রানিওই। কিন্তু না! শারমিন এসে সব ফাঁস করে দিলো।

শারমিন: ভাই অবাক হবেন না। আপনি আসবেন দেখে আপু রুম পরিস্কার করেছে। আপু যেভাবে থাকে আপনি দেখলে বমি করে দিবেন ‌।

_ওয়াক থু বলে দিলো এক দৌড়। আমি আনিকার দিকে তাকালাম। আনিকা আমার দিকে তাকালো। আনিকা বলল.

আনিকা: সারাদিনতো কাজে ব্যস্ত থাকি। তাই এতো পরিস্কার করতে পারিনা।

আমি: তুমি যে আমার জন্য এতো কষ্ট করে। রুম ঠিক করছো । এতেই আমি খুশি ।

আনিকা: থ্যাংকস।

আমি: ওকে। তাহলে আমি যাই।

_আমি আনিকার মার সাথে দেখা করে বাসায় আসলাম। এসে বাড়িতে কল দিলাম।

আমি: আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছো মা?

মা: ভালো তুই কেমন?

আমি: ভালো। আগামী শুক্রবার তোমরা ঢাকায় আসো।

মা: তুই ঐ মেয়েকেই বিয়ে করবি।

আমি: হ্যাঁ।

মা: আচ্ছা আমরা আসবো।

আমি: ওকে শুক্রবার দুপুরের দিকে আসবা।

মা: আচ্ছা।

_আমি ফোন কেটে দিলাম। এভাবে একটা সপ্তাহ চলে যায়। এক সপ্তাহে আমার তিন বছরের ইনকাম হাতে আসলো। দেখি মাত্র ২.৫ লাখ। একেবারে হতাশ হলাম। সব আমি আমার ফ্যামিলিকে দিলাম। যাইহোক ফ্যামিলি মানে আমি। তাদের সুখ মানে আমার সুখ। এখন নিজের জন্য কিছুই নেই। হায়রে কপাল। ফ্যামিলিকে না দিয়ে যদি সব আমার হাতে থাকতো তাহলে হয়তো ১০–১৫ লাখ টাকা থাকতো। কেননা আমি গাঁদার মতো খাটছি আমার পরিবারের জন্য। যাইহোক তারা আমার মা–বাবা। সেদিন ছিলো শুক্রবার দুপুরের দিকে তারা আসে। আসছে মা–বাবা ছোট বোন যেটার এখনো বিয়ে হয় নাই। আর এক চাচা–চাচী আসছে। আমি তাদের আনিকার বাড়িতে নিয়ে গেলাম। এতক্ষন মা আর বাবা আমাকে অনেক কথা বলে তাদের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
আনিকার‌ বাবা–মা এসে তাদের ভিতরে নিয়ে যায়। আমি আমার ছোট বোন সুবর্ণাকে নিয়ে আনিকার রুমে যাই। গিয়ে দেখি আনিকা আর শারমিন বসে আছে। আমি সুবর্ণার সাথে শারমিনকে আর আনিকাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম ‌। শারমিন আর সুবর্ণা সেম বয়সের। আমি বললাম

আমি: শারমিন তুমি সুবর্ণাকে বাড়িটা একটু দেখাও।

শারমিন: ওকে । সুবর্ণা চলো। তারা দুজন বাইরে ।

_আমি বললাম আনিকাকে

আমি: আনিকা তোমাকে কিছু কথা বলি মন দিয়ে শোনো।

আনিকা: বলো। আমার কেমন জানি ভয় করছে?

আমি: দেখো । এক আমি আমার মা–বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করছি না। তাই তারা তোমার অনেক দোষ ধরবে বিশেষ করে তোমার বয়স বেশি সেই জন্য। কিন্তু তুমি ঘাবড়ে যাবে না । সব সময় আমি তোমার পাশে আছি।

_আমি আনিকার হাত ধরে বললাম।

আমি: এই দুই হাত কোনো ভাবেই ছিন্ন হবে না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

আনিকা: আমি জানি। কিন্তু এখন আমার ভয় করছে। যদি তোমার মা–বাবা আমাকে পছন্দ না করে।

আমি: পছন্দ করবে। (মিথ্যা কথা বললাম জানি আনিকাকে কেউ পছন্দ করবে না কারণ তার বয়স বেশি। মিথ্যা কথা বলে তাকে সাহস দিলাম। )

আনিকা: তাই যেনো হয়। তুমি কিন্তু আমার পাশে থাকবা।

আমি: ওকে। তুমি রেডি হয়ে আসো । আমি যাই।

_আমি আমার ডিসিশন নিয়ে রাখছি।

_আমি নিচে এসে এক‌ সোফায় বসলাম বাবার সাথে। একটু পর আনিকা আসলো। আনিকা এসে সবাইকে শরবত দিলো। আমাকেও দিলো।

মা: বাহ মেয়েতো দারুন সুন্দরী? নাম কি তোমার মা।

আনিকা: আন্টি আনিকা।

বাবা: তুমি কি করো মা?

আনিকা: আংকেল আমি ডাক্তারী করি।

বাবা: ভালো। আচ্ছা মা তোমার বয়স কতো।

_আমি মনে মনে এই খাইছে।

আনিকার বাবা: ২৬ বছর । মেয়ের বয়স ২৬।

_মা বাবার দুজনের মুখের হাসি উবে গেলো। তাদের মুখে ঘৃণার মতো ছড়িয়ে পড়লো। আমার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকালো । মা–বাবা দুজনেই।
মা বলল

মা: ভালো কিন্তু ইশানের বয়স তো মাত্র ২৩!

আনিকার বাবা: এখনতো এরকম হয়েই থাকে।

বাবা: না এরকম বয়স্ক মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো না।

আনিকার‌ মা: ঈশানেরতো মেয়েকে পছন্দ।

বাবা: তো কি‌ হইছে। এই বিয়ে হবে না ।ঈশানের মা চলো।

মা: ঈশানের সাথে আমার কথা আছে।
ঈশান দেখে যা‌।

_আমি মার সাথে একটু দুরে আসি।
আসলে মা বলল

মা: তুই কি পাগল হয়ে গেছত?

আমি: পাগল হবো কেনো? আমার তাকে পছন্দ হয়েছে।

মা: এরকম বয়স্ক মেয়েকে কেউ পছন্দ করে?

আমি: কেউ না করলেও আমি করছি। এখন বিয়ের তারিখ ঠিক করো।

মা: আমি তর বাপের উপর দিয়ে যেতে পারবো না।
দেখ তর বাপে কি বলে। তর জন্য আমরা কি সুন্দরী মেয়ে পছন্দ করছি‌। আর তুই কিনা বয়স্ক বুইড়া মেয়েকে পছন্দ করছত ছি! ছি!।

আমি: হ্যাঁ আমি করছি। এখন বাপ কে বলো বিয়ের তারিখ ঠিক করতে।

মা: দেখ তর বাপে কি কয়? আমি কিছু জানিনা।

_এসে দেখি বাবা উঠে চলে গেছে। আমি বুঝতে পারলাম আনিকা কান্না করছে। আমি আর মা বাইরে গিয়ে দেখি বাবা রেগে বসে আছে। আমি আর কিছু বললাম না। সুবর্ণা এতক্ষনে আসলো শারমিনের কাছে থেকে। বুঝলাম তাদের দুজনের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সুবর্ণা বাবার মুখ দেখে আর কিছু বলে নাই।
চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসে। কোনো কথা না বলে তারা চলে যায়। আমি ও বাসায় চলে আসি। কি করবো বুঝতে পারছি না? কোনো মতে রাতরা কাটালাম। সকালে মার কাছে ফোন দিলাম।

আমি: বাবা কিছু বলছে।

মা: না তর সাথে কোনো ভাবেই এই মেয়ের দিবেনা সমাজের লোকেরা কি বলবে?

আমি: মা আমি এখন বাচ্চানা। সমাজের মানুষ কি বলবে না বলবে সেটা দিয়ে আমি কি করবো। বাবা কি পাশে আছে।

মা: হ আছে।

আমি: লাউড‌ স্পিকার দেউ।

মা: দিছি বল।

আমি: বাবার যদি মন চায় ছেলের বউকে বরন করে‌ ঘরে তুলতে তাহলে‌ আমি এখন নাম্বার দিচ্ছি। এখনি ফোন করে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। আর যদি না করে তাহলে বিয়ে করে বাড়িতে আসলে কিছু যেনো না বলতে পারে?

_আমি আবার আধ ঘন্টা পরে ফোন দিলাম মার কাছে।

আমি: বাবা বলছে?

মা: না । তুই যদি এই মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসিস তাহলে তকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবে।

আমি: ওকে দেখা যাবে।

_এই বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। আমি আমার সিন্ধান্ত নিয়ে নিলাম। আগামী সপ্তাহ আমরা বিয়ে করবো । ভাবলাম আনিকাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে কেউ দেখতে পারবেনা । মা–বাবা দেখতে পারবে না পাড়া প্রতিবেশীরা ত্যারা কথা বলবে। আনিকাকে সেখানে নিয়ে গেলে শুধু কাঁদবে। তাই আমি ঠিক করলাম যে বাসায় থাকি সে বাসার উপরতলা‌ ভাড়া নিবো। যে টাকা আছে‌ সেখান থেকে ফার্নিচার কিনবো। কোনো আয়োজন না করে বিয়ে করে ফেলবো। এটায় আমার পরিকল্পনা। আমি চলে গেলাম আনিকার বাড়িতে। আমি আনিকার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি বেচারী কেঁদে কেঁদে শেষ।
আমি আসলে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে।

আনিকা: তুমি আসছো। আমি তো ভাবছিলাম তুমিও চলে গেছো।

আমি: তোমাকে ছাড়া আমি যেতে পারি।

আনিকা: এখন কি করবা?

আমি: আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা আছে।

আনিকা: কি?

_আমি আনিকাকে আমার পরিকল্পনার‌ কথা বললাম। আনিকার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়‌ ।

আমি: চলো বাসা দেখবে।

_আনিকা রেডি হয়ে আমার সাথে বাসায় এসে। এসে বাসা দেখে। আনিকার পছন্দ হয়েছে। এখন আমি আস্তে আস্তে ফার্নিচার ওঠাতে থাকি। মোটামুটি একটা সংসারে যা লাগে সব ওঠালাম। এমনি ভাবে এক সপ্তাহ চলে গেলো। দিনটি ছিলো শুক্রবার।
আমি রুম আগে থেকেই সাজিয়ে রাখি। আমি আর ফাহিম দুপুরের পরে তাদের বাড়ি যাই। গিয়ে ভালোভাবেই আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। আনিকার মা বাবা দুজনেরই কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে পড়ে আমার প্রতি । তারা বলে তারা জীবনে আমার মতো ছেলে দেখে নাই‌ । ফাহিমকে সাক্ষী রেখেছি। আনিকাকে শাড়ি অবস্থায় আরো বেশি অপূরুপ দেখায় । আমি আজ রাতে তার সেই রুপের ভিতর হারিয়ে যাবো। আমি আনিকাকে নিয়ে বাসায় আসি। ফাহিম সুন্দর করে আমার বাসর ঘর সাজায়। যেহেতু আমার শরীরের উপর দিয়ে আজ অনেক ধকল গেছে তাই আমার পুরনো রোগ মাথা ব্যথা করতাছে। আনিকা বাসর ঘরে গিয়ে বসে আছে। ফাহিম আমাকে ঠেলা দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। আমি ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আনিকা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে‌ । আমি গিয়ে ঘোমটা ওঠালাম। আমি বালিশটা মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে রইলাম। আনিকাকে বললাম।

আমি: আনিকা মাথাটা একটু হাতিয়ে দেও তো।

আনিকা: মাথা ব্যথা করছে?

আমি: হুম।

_আনিকা আমার মাথা হাতিয়ে দিচ্ছে। আমারযে কি ভালো লাগছে। আমি ভাবছি সাড়াটা জীবন আমি ব্যার্থ যেই ফ্যামিলির জন্য আমার সবটুকু দিলাম। সেই ফ্যামিলি কিনা নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করছে বলে । ফ্যামিলি থেকে আলাদা করে দিলো।
হায়রে কপাল কিন্তু আনিকার মতো একটা বউ পেয়ে নিজেকে সার্থক মনে হচ্ছে। আনিকা মাথা হাতিয়ে দেওয়া আমার অনেক ভালো লাগছে । এভাবে মাথা হাতিয়ে দিলে না ঘুমিয়ে পাড়া যায় । ঘুমিয়ে গেলাম একেবারে সকালে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ঘুম থেকে ওঠলাম। আনিকা রুম ঝাড়ো দিচ্ছে। মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম মুখে তার অতৃপ্তির হাসি।
আমি আনিকাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে কিস করতে থাকি । আনিকা উপভোগ করতে থাকে।
আমি ঘাড়ে কিস করতে করতে ঠোঁটে গেলাম এবার দুজন দুজনকে লিপ কিস করতে করতে আনিকা আমাকে বিছানায় ফেলে দিলো …….। (পরে কি করলো বুঝতেই পারছেন ) । এভাবে ভালই চলছিলো আমাদের সংসার। মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো কিন্তু দিনশেষে আমরা দুজন একিসাথে একি বিছানায়। আমাদের টাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নাই এক মাসের ভিতর আনিকা ফ্ল্যাট পুরোটা ফার্নিচার দিয়ে ভড়ে ফেলে। কারন সংসারটা তার। আনিকা ডাক্তারী করে সংসার চালাইতো।
আমি প্রাইভেট কোচিং করিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাই। যাইহোক তাঁরা আমার মা–বাবা। ঠিকি আর দুই বছর আগে আমার একটা চাকরি হয়। তখন আনিকা প্রেগন্যান্ট। আমাদের একটা মেয়ে হয় । তখন বাড়ি থেকে সবাই দেখতে আসে এবং আনিকার কাছে ক্ষমা চায়‌ । আমি বুঝতে পারছি দেখতাছে তারা আমাকে ছাড়া অচল । তাই তাড়া গ্রহণ করে নিলো। পরে ফাহিম আর শারমিনের বিয়ে হয়নাই কোনো এক ভুলের কারনে।
ধন্যবাদ….

সমাপ্ত

(আমিই দোয়া করি আনিকার মতো মিস্টি সুইট একটা বউ পেতে। আসলে গল্পে যে মাথাব্যথার কথা বলা হয়েছে। সে মাথা ব্যথাটা আমার ওঠে। তাই আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। গল্পের মধ্যে সামাজিক কিছু কথা আছে অনেকের ভালো না লাগতে পারে।)

গল্পটা কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here