#নাম: সিনিয়র ডক্টর
#পার্ট:২
#লেখক:Osman
_আমি ওঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবছি কিজে করি। ৫ লাখ টাকা যৌতুক। সন্ধ্যা বেলা মার কাছে কি বলবো? আমার কাছে এতো টাকা নাই। তিন বছর আগে ঢাকায় আসছিলাম। এই তিন বছরে অনেক খেটে-খুটে ৪- ৫ লাখ টাকা জমাইছি। কিজে করি। বাসায় আসলাম এসে রেডি হয়ে গেলাম প্রাইভেট। নিয়ত প্রাইভেট শেষ করে যাবো ডক্টরের চেম্বারে।প্রাইভেট শেষ করে গেলাম ডক্টরের চেম্বারে। গিয়ে দেখি এমন ভিড়। সিরিয়াল নিতে গেলাম। চেম্বারে ঢুকলেই পাঁচশ। আমি গিয়ে পিএস কে বললাম। সিরিয়াল দিতে। পিএস বলল।
পিএস: সিরিয়াল শেষ।
আমি: সিরিয়াল শেষ মানে। (অবাক হয়ে)
পিএস: আর ২০জন রোগী আছে । তাদেরকে দেখে ম্যাডাম চলে যাবে।
আমি: তাহলে আমি।
পিএস: আগামীকাল।
আমি: আগামীকাল মানে ।আরে ভাই একটা সিরিয়াল দেন ম্যাডাম আমাকে চিনে।
পিএস: কিন্তু আমিতো চিনিনা।
আমি: ধুর ভাই আপনার ভিতর কোনো মানবতায় বলতে কিছুই নেই।
পিএস: ভাই দিলে পরের দিন আমার চাকরি শেষ।
আমি: আপনার চাকরি শেষ হবে কেনো?
পিএস: আমি একদিন এরকম দয়াময়া করে একজনকে ম্যাডামের কথার বাইরে সিরিয়াল দিয়েছিলাম।
আমি: তারপর।
পিএস: তারপর আর কি? ম্যাডাম প্রচন্ড রেগে যায়।
আর আমার চাকরি নট করে দেয়। পরে অনেক মিনতি করে চাকরি আবার ঠিক করি। শুনেন ম্যাডাম প্রচন্ড জেদি ।কোনো ভুল হলেই রেগে যায়।
তাই আমাদের সাবধানে থাকতে হয়। সে জন্য ভাই আমি এত বড় রিস্ক নিতে পারবো না।
আমি: ইটস ওকে। আগে বুঝিয়ে বলবেন না।
_এই বলে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম কি করা যায় । আগামীকাল আবার আসবো। আগামীকাল আসা সম্ভব নয়। কারন আগামীকাল কোচিং আছে। যা করার আজকেই করতে হবে। ফোন দিবো? নাহ! যদি রেগে যায়।
এখন একটায় উপায় সেটা হলো অপেক্ষা করা।
চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় ধরতে হবে। কেনো জানি মনে হচ্ছে ডক্টর আমাকে একটু বেশিই কেয়ার করে। কেয়ারের পিছনে কি অন্য কোনো কারণ আছে। থাকলে ভালো। কারন ডক্টরকে প্রথম দেখাতেই আমি ক্রাশ খেয়েছি। এক যায়গায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এক দুই জন এভাবে ১০- ১২ চলে গেছে আমার অসহ্য লাগতাছে । মনে হচ্ছে আরো দুইঘন্টা লাগবে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা। আসরের সময় হয়ে আসছে। ভাবলাম চলে যাবো । না! না! কোনো ভাবেই হার মানবো আমি। অপেক্ষা করতে লাগলাম। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে অপেক্ষা করা। এদিকে ঘুম পাচ্ছে। অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম। যদি সিরিয়াল পেতাম তাহলে এই বিশ জনের পরেই আমাকে ঢুকতে হতো। সুতরাং অপেক্ষা আমাকে করতেই হতো। অবশেষে এই বিশজন শেষ হলো। ভাবতাছি এখন ঢুকবো নাকি বের হলে ধরবো। বের হলেয় ধরবো। ঠিক 20 মিনিট পর ডক্টর বের হলো।
আমি সামনে গিয়ে বললাম।
আমি: ম্যাডাম আমি ঈশান মাহমুদ।
ডক্টর: এখন আর রোগী দেখা হবে না আগামীকাল।
আমি: আপনিই আমাকে আগামীকাল বলছিলেন চেম্বারে আসতে…..
ডক্টর: লিসেন । সরি শুনেন। আমি এখন আর কোনো রোগী দেখবো না। ক্লেয়ার।
_এই বলে ডক্টর চলে যাচ্ছে। আমি তো অবাক। এই ব্যাবহার ডক্টরের কাছ থেকে আশা করিনি। তার আবার মার্কা পিএস কানে কানে এসে বলল।
পিএস: বলেছিলাম না আগামীকাল আসতে । শুধুই ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করলেন।
_আমার শরীর টা জলে ওঠলো ঠিকই তো শুধু শুধু চার ঘণ্টা অপেক্ষা করলাম। ভাবছিলাম ম্যাডাম একটা ভালো মানুষ কিন্তু এখন দেখছি সে একজন
মানবতাহীন মানুষ। আর ভুলেও এই ডাক্তার নাম মুখে আনবো না। যত্তসব ফালতু ডাক্তার। টাকার জন্য তারা সব করতে পারে। এখন যে চেম্বারে ঢুকলে যে টাকা লাগবে না। অপেক্ষার কথা বাদ দিলাম। দেশে যেমন ডক্টর একটা । এসব ভাবতে ভাবতে হসপিটাল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসলাম। আসলে ফাহিম বলল।
ফাহিম: দোস্ত কোথায় ছিলি এতক্ষন।
আমি: আর বলিস না। যত্তসব ফালতু ডাক্তার। মানবতা বলতে কিছুই নেই। কেনো যে এসব ফালতু ডাক্তার দেশে জম্মায়?
ফাহিম: কি হইছে সেটা বল।
_আমি ফাহিম কে ডাক্তারের কাছে যাওয়া অপেক্ষা করা শেষে ডক্টরের হৃদয় বিদারক কথা গুলো বললাম। এসব শুনে ফাহিম কতক্ষণ ডক্টর কে বকলো।
আমি: আমি আর জীবনে এই ডাক্তারের নাম মুখে আনবো না।
ফাহিম: ঠিক আছে ।দেশে কি ডাক্তার একটা নাকি।
_আমি আর ফাহিম কতক্ষন বকে শরীরের জিদ মিটাইলাম। আসলে আমিই একটা বোকা। বোকা নাহলে ৪ ঘন্টা বইসা রইলাম। একটু পর বাবার কাছে ফোন দিলাম।
আমি: কেমন আছেন আব্বা।
বাবা: ভালো তুই কেমন আছত?
আমি: ভালো । সকাল বেলা মার সাথে কথা বলছি।
আপনি কি বলেন?
বাবা: আমি তর মার সাথে একমত। ছেলের বলে কোন কোম্পানির সাথে শেয়ার আছে। তর মা আর বোনের বাড়ি দেখেছে । তাদের পছন্দ হইছে।
আমি: আপনি জানেন এখানে খরচ একটু বেশি হয়। আর পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক আমাদের জন্য অনেক বেশি হয়ে যায় না।
বাবা: কি করুন যাইবো। এখন তুই কত দিতে পারবি।
আমি: আমি এক লাখ দিতে পারবো।
বাবা: বাকি গুলো।
আমি: আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। এত দিনে আমি গাধার মতো খেটে খুটে যেটুকু জমাইছি সেটুকু দিয়ে দিছি। না পারলে ক্ষেত বিক্রি করেন।আর যৌতুক তো পরে দিলেও চলবে।
বাবা: তর উপর চাপ দিবো না। যেটুকু পারস দে।
আমি: ওকে বিয়ের তারিখ ঠিক হইছে।
বাবা: না ঠিক করবো।
আমি: বিয়ের তারিখ ঠিক করে আমাকে জানায়েন।
বাবা: ওকে। রাখি
_কল রেখে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। যাক মনটা এখন হালকা লাগছে। একটা উপায় তো বের হলো ।
বেশি অসুবিধা হলে এক লাখের যায়গায় দেড় লাখ দিবোনে। এখন আমার প্রয়োজন একটা ঘুম। কিসের ঔষধ খাইতো। ডক্টরের কথা মনে হলেই ঘা জলে।
আমি দিলাম এক ঘুম। মাত্র চোখটা লাগলো কে জানি কল দিলো । রিসিভ করে বললাম।
আমি: আসসালামুয়ালাইকুম কে?
অচেনা: আগে বলে নেই সরি সরি। আমি ডক্টর আনিকা।
আমি: কোন ডক্টর আনিকা আমি কোনো আনিকা কে চিনি না।
ডক্টর: আমি আপনার ডক্টর।
আমি: শুনেন আমি কোনো ডাক্তার দেখায়নি । আর আপনাকে আমি চিনি না।
ডক্টর: বললাম তো সরি।
_আমি অবাক। ডক্টর আমাকে ফোন দিয়েছে। আবার আমাকে বলে সরি। ভাবতেই অবাক লাগছে।
আমি: আচ্ছা আপনি কি আমাকে চিনেন নাই।
ডক্টর: না ।
আমি: এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন। রাতেই না বললাম আমি ঈশান মাহমুদ মাথা ব্যথা।
ডক্টর: খেয়াল করিনি। বুঝেনই একটানা এতক্ষন রোগী দেখলে মাথা এমনিতেই ঠিক থাকে না । আবার সাড়া দিনের ক্লান্তি। পরে আমি আপনাকে চিনতে পারি। পরে আমার পিএসকে পাঠিয়ে দেখি আপনি চলে গেছেন।
আমি: হুম। এখন কেনো ফোন দিলেন?
ডক্টর: সরি বলতে। কারন আমি চাই না আমি কারো চোখে খারাপ হয়ে থাকতে। তাহলে চলে আসেন আগামীকাল আমার চেম্বারে।
আমি: আপনি যদি আজকে আমাকে কল না দিয়ে থাকতেন। তাহলে আমার চেহারা আর না দেখতেন।
এতক্ষন আপনি আমার কাছে একজন ব্যাড গার্ল এবং একজন ব্যাড ডক্টর ছিলেন।
ডক্টর: আর এখন।
আমি: একজন গুড ডক্টর এবং গুড গার্লফ্রেন্ড এবং এবং নাইস লেডি।
ডক্টর: থ্যাংকস অনেক অনেক থ্যাংকস।
আমি: ওয়েল কাম।
ডক্টর: আগামীকাল আসবেন তো।
আমি: দেখি। আগামীকাল কাজের চাপ অনেক বেশি।
ডক্টর: বলেন আসবেন। আমি ওয়েট করবো।
আমি: ওকে আসবো । কয়টায় আসবো।
ডক্টর: ৫টার দিকে।
আমি: সন্ধ্যা সময় আপনি না চলে যান।
ডক্টর: আগামীকাল একটা মিটিং আছে।
আমি: ওকে বায়।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম। আর দিলাম এক ঘুম।
সকালে ঘুম থেকে উঠি। কোচিং এ গেলাম। কোচিং শেষে গেলাম কলেজে এভাবে সারাদিন কাজের চাপে শেষ। ৫টার দিকে বাসায় এসে বিছানায় শরীরটা লাগালাম। কিজে ভালো লাগছে। মাথাটা ধরে আসছে। মন চাচ্ছে ঘুমায়তে। কিন্তু না ডক্টরের কাছে যেতে হবে। ওঠে গোসল করলাম। করে রেডি হয়ে চলে গেলাম ডক্টরের চেম্বারে। দরজার সামনে কোনো মানুষ নেই। আমি গিয়ে টোকা দিলাম। ভিতর থেকে বলল আসেন।
চলবে……