সিনিয়র ডক্টর #পার্ট:৫

0
560

#নাম: সিনিয়র ডক্টর
#পার্ট:৫
#লেখক:Osman

_এই গলিতে তেমন মানুষ থাকেনা সন্ধ্যার পর । আমি মাত্র গলিতে ঢুকলাম। দেখি আমার পিছনে আরো দুজন গলিতে ঢুকছে । তাদের দিকে চোখ যায় আমার চিনতে কষ্ট হলো না‌ গাছতলায় বসা তিনজনের মধ্যে দুজন । তারা আমার থেকে অনেক খানি দূরে। আমি ভাবলাম কোনো একটা ঝামেলা হতে পারে। আমি আমার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম।
আর একটু সামনে এগিয়ে দেখি বাকি আরেক জন।
আমি বুঝতে কষ্ট হলোনা এটা একটা ফাঁদ। আমি হাঁটার মধ্যে মোবাইল বের করে ফাহিম কে মেসেজ করলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসার পিছনের গলিটায় আস সমস্যায় পড়েছি। মেসেজটা করে সুবোধ বালকের মতো আমি হেঁটে চলে যাচ্ছি। এমন ভাব ধরলাম যেনো আমি তাদের দেখেইনি। ভাব ধরাটা বেশিক্ষণ টিকেনি। পিছন থেকে ডাক আসলো।

১ম ছেলে: ঐ দাঁড়া তর সাথে কথা আছে।

_আমি না শুনার ভান করে হেঁটে চলে যাচ্ছি।

২য় ছেলে: ঐ তরে বলছিনা দাড়ায়তে।

_আমি এবারো না শুনার ভান করে হেঁটে চলেছি।
এবার সামনের জন আমার পথ আটকালো বলল।

৩য় ছেলে: তরে ডাকছে শুনসনা।

আমি: কি বলবি বল?

১ম ছেলে: ডাক দিছি‌ শুনস নাই কেনো?

আমি: প্রয়োজন মনে করেনি। কি বলবি বল আমি চলে যাচ্ছি।

২য় ছেলে: তর যাইতে দেরী আছে। তর সাথে আমাদের অনেক বুঝা পড়া আছে।

আমি: আমি তদের কোনো সমস্যা করছি।

১ম ছেলে: ক্যাম্পাসের সব সুন্দরী মেয়েরা তর পিছনে ছুটে। আজ তর এমন অবস্থা করবো ।যাতে কোনো মেয়ে তর দিকে তাকাতেই লজ্জা পায়।

৩য় ছেলে: তর শারমিনের সাথে কি? সকালে তার সাথে হাসা হাসি করে কি কথা বলছত?

আমি: একটা কথা ভুলে যাসনা‌। আমি কিন্তু তদের বড় । এখন চুপচাপ চলে যা । কোনো সমস্যা হবে না। পরে কিন্তু তদের খবর আছে।

১ম ছেলে: তকে এমন মার মারবো যাতে তুই কোনো কথায় বলতে না পারিস।

৩য় ছেলে: তুই কি শারমিনকে পটিয়ে ফেলছত ।নাকি তর সাথে রুম ডেটের অফার দিছত। তুইতো রুম ডেট করতে পারবি না। আমাদের ঠিকানাটা বল আমরা চলে যাবোনে।

_এই বলে তারা‌ হাসতে লাগলো । আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে। তিনজনের সাথে একা পারবো না। ফাহিম এখনো দেরি করছে কেনো? মেসেজ দেখলে তাড়াতাড়ি আসার কথা। দেখি তারা তিন জন থেকে একজন প্যান্টের বেল্ট খুলছে। আর একজন একটা ছুরি বের করছে। তারা আমাকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে ধরছে ।তাই দৌড় দেওয়ার কোনো চান্স পাওয়া যাচ্ছে না। আমি ভাবলাম দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নাই মাইর শুরু করে দেই। আমাকে টিকে থাকতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত ফাহিম না আসে। আমি ছুরি ওলা ছেলেটাকে কানের নিচে নরম যায়গায় শরীরের যত শক্তি আছে তত শক্তি নিয়ে আঘাত করলাম ।
তারা হয়তো আমার কাছ থেকে এমন আঘাত আসবে কল্পনাও করিনি। তাই প্রতিরক্ষা করার কোনো সুযোগই পাইনি । যে যায়গায় আঘাত করছি ঠিক সে যায়গায় গিয়ে লাগলো । ছেলেটা অমাগো এক চিৎকার‌ দিয়ে নিচে পরে গেলো। বাকি দুজন ততক্ষনে নিজেকে সতর্ক করে ফেলেছে। আর তাদের চোখে মুখে জলে ওঠেছে প্রতিশোধের আগুন। হাতে বেল্ট ওলা ছেলেটা আমাকে বেল্ট দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলো । আমি ও যেহেতু সতর্ক ছিলাম তাই সাথে সাথে মাথা নুইয়ে ফেলি। আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যায় বেল্ট। সে আবার নতুন করে আঘাত হানতে কিছুটা সময় লেগেছিলো । এই ফাঁকে আমি তার ঘাড়ে সজোরে
আঘাত হানলাম সব শক্তি দিয়ে। মাইরের টাল সামলাতে না পেরে সেও চিৎকার করে নিচে বসে পড়ে।এই ফাঁকে তৃতীয় জন‌ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলো। তৃতীয় জন আমার কোমরে দিলো এক লাথি । আমি টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে গেলাম। এই ফাঁকে বাকি দুজন ওঠে আমার উপর চড়াও হলো। তিনজন আমাকে এলোপাথাড়ি লাথি মারছে আর বলছে।

১ম ছেলে: মার সালারে মার। সালায় কি ঘুষি দিলো ।গাড়ই লড়াইতে পারছিনা।

_কথা বলছে আর মারছে।আমি হাত দিয়ে প্রতিরক্ষা করছি। আমার নাক দিয়ে ব্লেডিং হচ্ছে। মুখের কয়েক যায়গায় কেটে গেছে। অনবরত রক্ত পরছে। এমন সময় ফাহিমের কন্ঠ কানে আসলো এই মাদা** এই খান***পুলারা দাড়া । সাহস থাকলে দাঁড়া। ফাহিমের হাতে একটা লাঠি। এই লাঠে দেখে ওরা তিনজন দৌড় আর ফাহিমের দৌড় দেখে । ফাহিম যেভাবে দৌড়ে আসছে যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে। আমার কাছে এসে বলল

ফাহিম: সরি দোস্ত দেরি হয়ে গেছে।

আমি: ওকে ওকে।

ফাহিম: আমি ওয়াশরুমে ছিলাম। বের হয়ে দেখি তর মেসেজ। মেসেজ দেখার সাথে সাথে আমি চলে আসি।

আমি: আমি তরে কিছু বলছি । দেখ আমার অনেক ব্লেডিং হচ্ছে। আমাকে কোনো ডক্টরের কাছে নিয়ে যা।

ফাহিম: আমি তরে ধরছি।

_ফাহিম আমাকে ধরে গলি থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে আসে। একটা গাড়ি ডাক দেয়। আমি গাড়িতে ওঠি । আমার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। মুখের কয়েক যায়গায় কেটে গেছে। পিঠে একটু বেশি ব্যাথা করছে । হাত দিয়ে দেখি অনেক রক্ত। বুজলাম ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। অনেক ব্লেডিং হচ্ছে তাই আমি জ্ঞান হারাই।

_আনিকা আশিকের সাথে ব্রেকআপ করার পর। একা হয়ে গেছে। প্রতি রাতে কেনো জানি ঈশানের কথা মনে পড়ে। চেম্বারে ঈশান আর আসে না। কারন হয়তো ঈশানের রোগ ভালো হয়ে গেছে। আনিকা
কোনো ভাবেই ঈশানকে ভুলতে পারছেনা । আনিকার খালি ঈশানের কান্নার কথাটা মনে পড়ে ।
আর ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সব সময় আনিকা নিজেকে এই বলে সান্তনা দেয়। ঈশান তুইতো আমারে ভালোবাসত। আমি জানি তুই একদিন আসবি। আসলে যে ঈশানকে কি করবে আনিকা ।সেটা আনিকায় জানে। এভাবে আনিকার দুই মাস চলে যায় ঈশানের কোনো দেখা‌ নাই। বাড়ি থেকে বিয়ের কথা বলছে ভালো এক সম্মন্ধ আসছে । বলছে বিয়ে করার জন্য। আনিকা এই বাহানা সেই বাহানা দিয়ে দেরি‌‌ করছে। শেষ মেষ আনিকা নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো নিজেই ঈশানের সাথে দেখা করবে । আর নিজের ভালোবাসার কথা বলবে। ঐ দিন রাতে আনিকার রুমে শারমিন এসে নাচতে থাকে খুশিতে।
এদিকে আনিকা টেনশনে বাঁচে না আর নিজের বোন কিনা‌ নাচে। দিলো এক ধমক । শারমিনের মূখটা কালো হয়ে যায়। ধমকের কারণে শারমিন কেঁদে দেয়। কাঁদতে চলে যাচ্ছে আর বলতে লাগলো।

শারমিন: আপু তুই না অনেক খারাপ।

আনিকা: আমি টেনশনে বাঁচি না। আব্বা আম্মা বিয়ের চাপ দিচ্ছে। আর তুই কিনা খুশিতে নাচস।

শারমিন: যা তর সাথে আমি আর কথায় বলবো না।
ব্যাপারটা ছিলো ঈশানকে নিয়ে।

_এই বলে শারমিন সেখান থেকে চলে আসলো।
আনিকা ঈশানের নাম শুনে আটকে যায়। ঈশানের ব্যাপারে কি বলবে শারমিন?পরক্ষনেই মনে পড়লো। আরে ঈশান আর শারমিনতো একই কলেজে পড়ে।
নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। শারমিন যেহেতু খুশিতে নেচেছে তাহলে নিশ্চয়ই ভালো খবর। এসব চিন্তা করে শারমিন কে ডাক দিলো ৫-৬টা ডাক দিলো শুনেনি। তারমানে অনেক রাগ করছে। আনিকা জানে শারমিনের রাগ ভাঙানো এতো সহজ না। আনিকা ভাবতে লাগলো কি করে রাগ ভাঙানো যায়? এখন একটায় উপায় তার পছন্দের খাবার বানানো। আনিকার যতটুকু মনে পড়ে শারমিনের পছন্দের খাবার হলো পিৎজা। কিছু করার নেই পিৎজার অর্ডার দিয়ে দিলো। পিৎজা আসলে পিৎজা নিয়ে আনিকা শারমিনের রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে শারমিন শুয়ে আছে।আনিকা গিয়ে শারমিনের সাথে মজা শুরু করলো।

আনিকা: ওলে আমার গুলু গুলু আপুটা রাগ করছে। কোথায় রাগ করছে গালে‌ নাকি মুখে? দেখ তর জন্য কি আনছি?

শারমিন: যা তর সাথে কোনো কথা নাই।

আনিকা: ওকে তাহলে পিৎজাটা আমি একাই খাই।

শারমিন: কি তুই পিৎজা আনছত। শুয়া থেকে ওঠে বসলো।

আনিকা: হুম।

শারমিন: দে আপু দে।

আনিকা: তর রাগ ভাঙছে?

শারমিন: হুম।

_তারপর দুই বোন মিলে পিৎজা খেতে লাগলো। আনিকা জিজ্ঞেস করলো।

আনিকা: ঈশানের ব্যাপারে কি যেনো বলছিলি?

শারমিন: আমি জানি তুই এই প্রশ্নটা করবি। কারণ তুই আরো আগেই ঈশানের উপর ক্রাশ খাইছত।

আনিকা: হুম খাইছি এখন বল।

_শারমিন ঈশানের কাছে প্রাইভেট পড়া । সকালের সব কথা আনিকাকে বলল শারমিন। এক পর্যায়ে আনিকার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়। কারন ঈশান কারো প্রেমে পড়ে নাই। আর শারমিনের বোনের সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করায় বুঝতে পারলো এখনো আনিকাকে ভালোবাসে। তারমানে ঈশানের কাছে গেলে হতাশ হবেনা। খুশিতে আনিকা শারমিনকে নিয়ে নাচতে থাকে। আনিকা ফাহিমের কথা শুনে বলল।

আনিকা: আগে পড়াশুনায় মনোযোগদে। প্রেম ভালোবাসা পরেও করতে পারবি।

শারমিন: ধুর আপু তুই আর ঈশান ভাই সম্পুর্ন এক।

আনিকা: এক হলে ভালো।

_এই বলে নাচতে আনিকা নিজের রুমে চলে গেলো।
গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। শারমিন ভাবছে আমি প্রেম করলে তুই জানবি কোথা থেকে। শারমিন ও ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here