সিনিয়র বস,পার্ট:১

0
1939

নাম: সিনিয়র বস,পার্ট:১
লেখক: Osman

__কিরে ঘুম থেকে উঠস না। ঐ দেখ মুফাজ্জল সাহেবের মেয়ে আসছে বাড়িতে শুনছি তার বলে অনেক বড় ব্যাবসা । যা গিয়ে দেখ কোনো চাকরি জুটাতে পারস কিনা । আর কতো ঘুমাবি বেহায়ার মতো। নামাজতো পরসই না । আর কয়দিন আর কয়দিন এভাবে শুয়ে শুয়ে খাবি। না ঘুমিয়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়াতো করতে পারিস। দিন যাচ্ছে আর অলস হচ্ছোস । জীবন বলতে যে কিছু একটা আছে তর সেটা খেয়াল আছে। তর আছে শুধু ঘুম আর মোবাইল টিপা । এভাবে শুয়ে থাকলে কি ঘরে ভাত আসবে । আর কয়দিন তুই আমাকে জ্বালাবি আর কবে তুই আমাকে শান্তি দিবি। আজ যদি তর আব্বা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো আমাকে এইদিন দেখতে হতো না। উঠবি নাকি ঝাড়ো দিয়ে দিবো বারি। সব জ্বালা হচ্ছে আমার ।

__প্রতিদিন এর মতোই মার এই একটাই ডাইলগ । শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে কিন্তু মুফাজ্জল সাহেবের মেয়ের কথা শুনে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম বললাম।

আমি: কোন মুফাজ্জল সাহেবের মেয়ে?

মা: ঐ যে এলাকার শেষ মাথার মুফাজ্জল সাহেব।

আমি: তার মেয়ে আবার কে?

মা: সুমাইয়া আক্তার (মনি ) সবাই মনি করে ডাকে।
তুইতো ছোট বেলা তার সাথে কতো খেলা ধুলা করছিস। ভুলে গেছত? শুনছি সে এখন বড কোম্পানির মালিক। যা গিয়ে দেখ তার কোম্পানিতে কোনো চাকরি জুটাতে পারস কিনা।

আমি: কোন মনির কথা বলো। আমি নাই।
আর কালকা ইন্টারভিউ দিলাম না । ঐ জবটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।

মা: তুই এই জীবনে চাকরি পাবি না। আমি সেটা ভালো করেই জানি । গত ছয়মাস ধরে তুই ইন্টারভিউ দিয়ে এসে আমাকে তুই এই একটা কথায় বলতাছত। যা ফ্রেস হয়ে খেতে আস।

আমি: আরে এই চাকরিটা হবে । আমি সিউর।

মা: হয়েছে জানি। এখন খেতে আয়।

__এই বলে মা চলে গেলো। মা কোন মনির কথা বলছে আমি সেটা ভালো করেই জানি । ছোট বেলা একবার আমি তার কোমড়ে ঘুসি মেরেছিলাম কারণ সে আমাকে প্রচুর অপমান করেছিলো। সে বলেছিলো আমি নাকি বলদ কিছু বুঝিনা আমি বলে পাগলের মতো থাকি সব সময় অপরিস্কার থাকি আমি বলে ছেচড়া লোভি এসব বলে আমাকে অপমান করেছিলো তখন আমার প্রচন্ড রাগ উঠেছিলো তাই আমি তার কোমড়ে ঘুসি দিয়েছিলাম আর তার গালে চড় দিয়ে । তার চশমা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম । এর পর থেকে তার সাথে আমার দেখা হয়নি । কারণ এর কিছুদিন পর সে ঢাকায় চলে গিয়েছিলো । অনেকের মুখ থেকে শুনেছিলাম সে যদি আমাকে পেতো তাহলে আমার খবর করে ছাড়তো। কিন্তু একটা মনি আপু অপমান করার পড়ে একটা বিষয় আমার পরিবর্তন হয়েছে। সেটা আমি অপরিস্কার থেকে পরিচ্ছন্ন হয়েছি। আমি পরিস্কার থাকতে ভালোবাসি। এখন মা বলে কিনা তার কাছে গিয়ে চাকরি চাইতে ‌। জীবনেও না। যাইহোক আমি ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। আমার ঘরে বসে
মোবাইল টিপতাছি। একটু পর মা এলো । বললো

মা: কিরে রেডি হো। মনির কাছে যাবি না?

আমি: না।

মা: কেনো?

আমি: মনে আছে ছোট বেলা একবার তাকে আমি কোমড়ে ঘুসি মেরেছিলাম। এখন যদি তিনি আমার ওপর বদলা নেয়।

মা: আরে ঐসবতো ছোট বেলা হয়েছে। এসব কি আর এখন মনে আছে।

আমি: যদি মনে থাকে।

মা: দেখ অজুহাত দিস না। আর কতো তুই এভাবে আমাকে জ্বালাবি। প্লিজ কিছু একটা কর । কিছু টাকা হাতে নিয়ে একটা বিয়ে করে আমাকে মুক্তি দে।

আমি: ওকে মা। আমি যাবো কিন্তু তুমিও আমার সাথে যাইবা।

মা: আচ্ছা । এখন তাড়াতাড়ি রেডি হো । ভালো নতুন পোশাক পড়িস।

আমি: আচ্ছা মা।

__এই বলে মা চলে গেলো। আমি গোসল করে নতুন একটা ড্রেস পড়লাম। সাথে আমার CV টা নিলাম।
হেঁটেয় মনি আপুদের বাসায় যাওয়া যায়। আমি আর মা মনি আপুদের বাসায় গেলাম। গেঁটে দেখি দারোয়ান চাচা অর্থাৎ আল আমিন কাকা উনার সাথে খুব মজা করি। আমাকে দেখে আল আমিন কাকা বললো।

আল আমিন: কি ভাতিজা কি মনে করে এদিকে?

মা: শুনলাম মুফাজ্জল সাহেবের মেয়ে আসছে বাড়িতে । তার সাথে একটু দেখা করবো।

আল আমিন: আফা উনিতো খুব ব্যাস্ত মানুষ । জানি না দেখা করতে দিবে কিনা।

মা: আপনিতো জানেনই আমার ছেলেটা অনেক দিন ধরে চাকরি খুঁজতেছে । তাই দেখি তার কোম্পানিতে কোনো চাকরি ব্যাবস্থা করতে পারি কিনা।

আল আমিন: ভালো । কিন্তু ম্যাডামের সাথে দেখা করাটাই মুস্কিল।

আমি: কাকা একটু দেখেন না। দেখেন দেখা করাতে পারেন কি-না।

আল আমিন: আপনারা দাঁড়ান আমি ভিতরে গিয়ে দেখি। কি পরিচয় দিবো?

মা: বলবেন বেলাল সাহেবের ছেলে আসছে দেখা করতে।

আল আমিন: ওকে ।

__এই বলে কাকা ভিতরে চলে গেলো । কিছুক্ষণ পর এসে বললো ।

আল আমিন: যান ম্যাডাম দেখা করতে রাজি হয়েছে।

__আমি আর মা ভিতরে আসলাম। বাড়ির কাজের মেয়ে আমাদের বাড়ান্দায় বসতে দিলো। আমি আর মা বসলাম। আসলে এ বাড়িতে আগে আমার খুব চলাচল ছিলো। মনি আপু কিছুদিন পর পর আমাদের নিয়ে পার্টির আয়োজন করতেন। আমরা খুব আনন্দ করতাম। এ বাড়িতে এখন মনি আপুর আব্বু আর আম্মু থাকে। আগে তাড়া ঢাকায় থাকতো। এই একবছর থেকে তাড়া এই বাড়িতে থাকে। মনি আপুর মা বাবার নাম মনে নেই। শুনছি তারা খুব বড়লোক সেটা এই বাড়ি দেখেই বুঝা যায়। বিশাল যায়গা জুড়ে এই বাড়ি। আগে মাঝে মাঝে এসে এ বাড়ি থেকে আম চুরি করে নিয়ে যেতাম। সেসব এখন অতিথ। কিছুক্ষণ পর মনি আপু আসলো। হাতে কফি নিয়ে। মনি আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি আমি অবাক। আগের থেকে পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে। আগে চোখে মুখে যেই লাবন্যতা ছিলো তার ষোল কনাও নেই কেমন অচেনা হয়ে গেছে। কেমন যেনো অন্যারকম। আগের মনি আপু আর এখন মনি আপুর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। চেহারা দেখলেই বুঝা যায় তার নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করে। আমার সন্দেহ হচ্ছে এটাকি আগের মনি আপু। নাহ আগের মনি আপুই। আসলে আমি সালাম দিলাম। মনি আপু সালাম এর জবাব দিলো। বললো

মনি আপু: কেমন আছেন আপনারা।

মা: ভালো তুমি কেমন আছো?

আমি: জী আপু ভালো?
__আপু বলাতে আমার দিকে তাকালো । মনে হয় কিছু খেয়াল করার চেষ্টা করছে।

মনি আপু: জী ভালো। আমাকে কি মনে করে স্মরণ করলেন।

মা: আসলে তোমাকে যে কি করে বলি। এটা হচ্ছে আমার ছেলে রাফিদ । আমার ছেলেটা গত ছয়মাস ধরে চাকরির জন্য ছুটছে । কিন্তু তার কোনো চাকরিই হচ্ছে না। এখন তার কি চাকরি পাবার যোগ্যাতা নেই নাকি কপালে নেই সেটা বলতে পারিনা। শুনছি তোমার বলে বিশাল কোম্পানি আছে । সেখানে যদি তাকে কোনো চাকরির ব্যাবস্থা করে দিতে পারো কিনা। অনেক উপকার হবে।

মনি আপু: ও আচ্ছা আপনি কোনো টেনশন কইরেন না। আপনি বাড়ি যান । আমি তার সাথে কথা বলে দেখি কিছু করতে পারি কিনা।

__এই বলে মনি আপু ওঠে চলে গেলো। মা বললো

মা: যা বলে মন দিয়ে শুনিস। আর কোনো প্রশ্ন করলে কোনো দ্বিধা ছাড়াই প্রশ্নের উত্তর দিবি।

আমি: ওকে।

__মা চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর মনি আপু আসলো। বললো

মনি আপু: তোমার নাম কি জানি বলছত?

আমি: আমি রাফিদ।

মনি আপু: কোন রাফিদ । চিনি না তোমার বায়ো দেও ।

__আমি আমার বায়োটা এগিয়ে দিলাম। বায়োর উপরে চোখ ভুলিয়ে বললো।

মনি: এটা কোনো সার্টিফিকেট হলো । এর চেয়ে কতো ভালো ভালো রেজাল্টেরদেরকে আমার কোম্পানীর বেয়ারার কাজও হয় না। আমার কোম্পানীতে কাজ করে তারা । যারা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসছে।

আমি: আপু সরি ম্যাডাম আমি মোটামুটি সকল কাজ পারি । এই ধরেন কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স , কারেন্টের যতো কাজ আছে সব পারি।

মনি আপু: ভালো তুমি যেহেতু এতো কাজ পারো তাইলে আমার কোম্পানিতে কেনো চাকরি খুজতাছো।

আমি: ম্যাডাম আমার মার সপ্ন আমি কোনো কোম্পানিতে চাকরি করবো।

মনি আপু: এই রেজাল্ট দিয়ে আমার কোম্পানিতে কোনো চাকরি হবে না। তুমি এখন আসতে পারো।‌

__এই বলে মনি আপু চলে যেতে উঠলো। আমি কোনো উপায় না পেয়ে । ভাবলাম আমার কথাটা একটু মনে করাই।

আমি: ম্যাডাম আপনার খেয়াল আছে ছোট বেলা একবার আপনাকে এক ছেলে আপনার কোমড়ে ঘুসি দিয়েছিলো আর চড় দিয়ে আপনার চশমা ভেঙ্গে ফেলেছিলো।

মনি আপু: কি আমাকে কোমড়ে ঘুসি দিবে চড় দিয়ে আমার চশমা ভেঙ্গে ফেলবে । এমন সাহস‌ কার আছে। তুমি জানো আমি কে? বড় বড় মন্ত্রিরা আমার কাছে হাত পেতে থাকে টাকার জন্য। আর আমাকে কিনা চড় দিবে। যত্তসব ফালতু কথা। তুমি এখন আসতে পারো।

আমি: ওকে ম্যাডাম। কিন্তু ম্যাডাম ধরেন আমার কোনো যোগ্যতাই নেই। আপনার কোম্পানীতে চাকরি করার। এর পরেও কি কোনো চাকরি পাবার অধিকার আছে আপনার প্রতিবেশী হিসেবে।

মনি আপু: প্রতিবেশিতো দুরের কথা। ঘুস দিয়েতো চাকরি পায় না। তোমার কপাল ভালো তোমার সাথে দেখা করছি। মাসের পর মাস সিরিয়াল দিয়েও আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পায় না।

__আমি মনে মনে এতো অহংকার। করলাম না আপনার কোম্পানিতে চাকরি । অনেকটা হতাশ কন্ঠে বললাম।

আমি: ধন্যবাদ ম্যাডাম‌ আমাকে সময় দেওয়ার জন্য তাহলে আমি যাই।

__আমি ওঠলাম চলে আসার জন্য । মনি আপু বললো।

মনি আপু: আচ্ছা শুনো।

আমি: জী‌ বলেন।

মনি আপু: তুমি বসো। আমি আসতাছি।

__এই বলে ওঠে চলে গেলো। কাকে ফোন দিলো। কিছুক্ষণ পর এসে বললো।

মনি আপু: আচ্ছা তুমি কি কম্পিউটার বুঝো?

আমি: জী ম্যাডাম।

মনি আপু: আমাকে দেখাতে পারবে?

আমি: কি দেখতে চাচ্ছেন ‌?

__মনি আপু তার লেপটপটা দিয়ে বললো।

মনি: লকটা খুলো। টাইম এক মিনিট।

আমি: একটা ওটিজি দেন।

__মনি আপু একটা ওটিজি দিলো। ওটিজি আমার মোবাইল এর সাথে লেপটপে যুক্ত করলাম। তারপর ৩০‌ সেকেন্ড এর ভিতরে লক খুলে ফেললাম।‌তার পর ম্যাডাম তার লেপটপ মাঝখান থেকে ভেঙে ফেললো বললো

মনি আপু: স্ক্রিনটা চালো করো । টাইম পাঁচ মিনিট।
আমি মেইন তার গুলো এক সাথে করে ৩ মিনিটের ভিতর স্ক্রিন অন করে দেখালাম।

মনি আপু: গুড । আসলে কোম্পানিতে একজন কম্পিউটার মেকার খুব প্রয়োজন। তোমার কাজ আমার পছন্দ হয়েছে। তাই তোমাকে কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া যায়।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here