#সিনেমাটিক
#পর্ব-০২
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
এস.আই. জায়ান মুস্তাফি।
কোথায় যেন শুনেছি এই নামটা??…..
তোমার স্মৃতিশক্তি এতোটা দূর্বল? জানতাম না তো। অবশ্য বাস্তবে আমি এবং তুমি উভয় উভয়কে এই প্রথম দেখলাম।
আমি উনার কথা শুনে বললাম, সে যাই হোক আপনি কে বলবেন প্লিজ?আর আমাকে এখানে কেন এনেছেন? আমি তো কোন অন্যায় করিনি।
উনি বললেন, তোমাকে কেন এনেছি সেটা পরে বলছি। তবে এটা জান,আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে, তোমার জন্য একটা বিয়ের ঘর এসেছিল। ছেলে পুলিশ এর এস আই, ছোট পদ এবং বেতনও কম!সে জন্য তোমার বাবা বিয়েতে অমত করে, মনে আছে??
তার মানে আপনি সেই পুলিশ??
আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উনি, মুচকি হাসি দিয়ে রুমে চলে গেলেন। বুঝলাম উনি সেই পুলিশ,যার সাথে আমার বিয়ের কথা হয়েছিল। কিন্তু এটা বুঝতে পারলাম না আমাকে এখানে তুলে আনার মানে কি??
ফ্লাসব্যাক…..
সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম, আম্মু এসে বলে নাজিফা তারাতাড়ি তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আয়, পাত্র পক্ষ চলে এসেছে।
আম্মুর কথা শুনে একপ্রকার লাফিয়ে উঠলাম। ঘড়িতে সময় দেখি ছয় টা পঞ্চাশ বাজে, তার উপর শীতের সকাল। মেজাজ টা পুরো খারাপ হয়ে যায়। মানুষের কমন সেন্স বলতে কি কিছু নেই?এই সময় কি কোন পাত্রি দেখতে মানুষ আসে। চারিদিকে কোয়াশা আচ্ছন্নতা ঘিরে আছে।আর এরা কিনা পাত্রি দেখতে চলে এসেছে।
যদিও গতকাল রাতে জানিয়েছেন যে আসবেন তারা,তাই বলে এই সময়ে।
বাথরুমে ঢুকে খুব স্লো ভাবে দাঁত ব্রাশ করছি।আর বাহিরে একবার আম্মু তো একবার আপু এসে তারা দিচ্ছে বের হওয়ার জন্য।
আমি আমার মতোই কাজ করে যাচ্ছি।এতোই যদি তারা থাকে পাত্র পক্ষের, তাহলে এতো সকাল বেলা আসলো কেন? না আসলেই পারতো।আর এদিকে আম্মু কে নিয়ে আর পারিনা, আমাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
অবশেষে আম্মুর বকাঝকা শুনে, বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতে হলো।একটু শান্তি মত ফ্রেস হতে ও দিল না। কি একটা অবস্থা,,,সব দোষ এই পাত্র পক্ষের। আমার আরামের ঘুম টাকে হারাম করে দিল। আমি অভিশাপ দিচ্ছি এই পুলিশের যেন বিয়ে না হয়,তখন বুঝবে মজা।
পুলিশের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে তৈরি হয়ে নিলাম। কোন রকম সাজগোজ করলাম না, শুধু সুন্দর দেখে একটা ড্রেস পরে নিলাম।
আপু এসে নিয়ে গেল আমাকে, তাদের সামনে। গিয়ে দেখি পাত্র আসেনি, এসেছে পাত্রের বোন আর দুলাভাই। আমি সালাম দেওয়ার পর
আমাকে বসতে বললেন। বসার পর নাম জিজ্ঞাসা করলেন পাত্রের বোন। আমি বললাম নাজিফা শেখ। তারপর বললেন ভাই বোন কতোজন তোমরা? আমি বললাম আমরা দুই বোন। তারপর আর তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না।
তারা চলে যাওয়ার পর,
আপু কে বললাম আপু আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর তাঁদের আমাকে পছন্দ হয়নি। আপু বলল কিভাবে বুঝলি? আমি বললাম পাত্রের বোন যেভাবে বাংলার পাঁচ করে রেখেছিল, উনার চেহারা কে। তাই আমি সিউর পাত্রের বোনের আমাকে পছন্দ হয়নি।
আপু বলল হয়তো উনার চেহারাই এরকম,আর না হয় এভাবেই থাকে সবসময়। আমি বললাম আরে না তুমি আমার কথা মিলিয়ে নিও।
অতঃপর আমার সব ধারণা মিথ্যা করে, রাতে পাত্রের দুলাভাই কল করে বলেন,ইমু বা হোয়াটসঅ্যাপ এর নাম্বার দিতে।আমার ছবি দেওয়ার জন্য ।বুঝা গেল তাদের পছন্দ হয়েছে।
আপু ছেলের দুলাভাই কে আপুর হোয়াটসঅ্যাপ এর নাম্বার দেয়। তারপর ছেলে আপুকে তার হোয়াটসঅ্যাপ এ এড করে। ছেলের সাথে আপুর অনেক কথা হয়, আমার ছবি ছেলে কে দেওয়া হয় এবং ছেলে কে আপু বলতেই ছেলে ও তার ছবি দেয়।
“আমার বায়োডাটা নিল ছেলে এবং আপু ও ছেলের বায়োডাটা নিল”।
তারপর যখন আব্বু পাত্রের ডিটেইলস জানলো।
তখন আব্বুর পছন্দ হয়নি,তাই নিষেধ করে দেওয়া হয়।
এস আই জায়ান মুস্তাফি অনেক ধনী পরিবারের ছেলে। কিন্তু আব্বুর কথা হলো ছেলের চাকরির পোস্ট ততো ভালো নয়। আবার পড়াশোনা ও বেশি না, যদিও জায়ান মুস্তাফি চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা ও করছেন।সব কিছু বিবেচনা করে দেখে আব্বু বিয়ে আর আগায় না নিষেধ করে দেন।
আব্বুর কথা হলো, আমার বড় জামাই বি.সি.এস ক্যাডার সেখানে ছোট জামাই এরকম ছোট পোস্ট এর চাকরি। এটা ঠিক মিলে না।
আম্মু তখন বললো, ছেলেরা তো ধনী। তাহলে আর এতো উচ্চ পর্যায়ের পদ কি দরকার। তখন আব্বু বললো সাহারা তুমি ছেলের সম্পত্তি দেখলে? আমার কি কিছু কম আছে?যে সম্পত্তি দেখে মেয়ে বিয়ে দিব। আমার সম্পত্তি গুলো তো আমার দুই মেয়েই পাবে। তাহলে আমি কেন সম্পত্তি দেখে মেয়ে বিয়ে দিব? আম্মু তখন প্রতি উত্তরে কিছু বলতে পারে না।
এই ছিল এস.আই. এর সাথে আমার ছোট খাটো একটা পরিচয়,যদিও সামনাসামনি আজকে প্রথম দেখা।
কিন্তু আমাকে এভাবে আটকে রাখার মানে কি?? আচ্ছা আব্বু বিয়েতে অমত করেছে বলে, উনি আবার সিনেমার ভিলেনের মত প্রতিশোধ নিতে আমাকে আটকে রাখেন নি তো?? তাহলে তো খুব সাংঘাতিক লোক উনি!!
না আর বসে থাকলে চলবে না, আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে।এই পুলিশের একটা নিকনাম দিতে হবে,,, পরে ভাবনা চিন্তা করে দিব। এখন দেখি কি করা যায়। উনার রুমের দরজায় গিয়ে কয়েক বার নক করলাম কিন্তু কোন রেসপন্স পেলাম না।
ইচ্ছে করছে এই লোক টাকে বিশ তলা বিল্ডিং থেকে ফেলে দেই। আমাকে এভাবে আটকে রাখার মানে কি?? আমি বাসায় যাবো।
আমার ভাবনার মাঝে এস আই রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন হেই কারেজ,,,
আমি তাকিয়ে দেখলাম উনি এখন ফর্মাল ড্রেসে আছেন, সবুজ টি-শার্ট আর কালো টাউজার পরিহিত।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাত্রই শাওয়ার নিয়েছেন। আমি সব কিছু ভুলে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনাকে যেদিন প্রথম ছবিতে দেখেছিলাম কিছু টা ভালো লেগেছিল। বাস্তবে আরো ভালো লাগছে।
কি ভাবছো তুমি??
উনার কথা শুনে, বললাম না তেমন কিছু না, আমি বাসায় যাবো।
আমি খুব ক্লান্ত, শুধুমাত্র তোমার জন্য দুদিনের কাজ এক দিনে শেষ করে এসেছি। তাই আমাকে একটু রেস্ট করতে দাও। জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে,সব প্রশ্নের জবাব আমি দিব। এখন প্লিজ লক্ষী মেয়ের মতো রুমে যাও।আর হা আপাতত বাসায় যাওয়ার কথা ভুলে যাও।
কি বলছেন আপনি এসব??
উনি আর কিছু না বলে, দরজা টা বন্ধ করে দিলেন।
হিটলার কোথাকার…..
তোর চৌদ্দ গুষ্টি কে আমি আফ্রিকার জঙ্গলে পাঠাবো, সাথে তোকে ও,,,,
ওয়েট ওয়েট কি বললাম আমি? হিটলার!!
ওয়াও এই এস আই এর নিকনাম পেয়ে গেছি। আজ থেকে এর নাম হবে হিটলার।
একটু উঁচু গলায় বললাম, তোকে আমি দেখে নিব হিটলার,গন্ডার, বজ্জাত কোথাকার,,,,
রুমে এসে পায়চারী করতে লাগলাম। আমি কি করবো? উনি একজন পুলিশ হয়ে যদি এরকম কাজ করেন তাহলে বাকিরা কি করবে।
কিছু সময় পর মাগরিবের আজান হবে।
হিটলারের সাথে জিদ করে আসর নামাজ টাও পড়িনি।
বসে আছি,চাচা অনেকক্ষণ আগে নাস্তা দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
কি হলো নাস্তা করছো না কেন?
তাকিয়ে দেখি হিটলার এসেছে।
উনি আবার বললেন আমার জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?ভয়েই গেছে আমার, আপনার জন্য অপেক্ষা করতে। তুমি মুখে না বললেও আমি ঠিক বুঝতে পারছি। আপনি কচু বুঝতে পেরেছেন।
কচু কিন্তু খুব পুষ্টিকর খাবার, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,আইরন,অক্সালিক আছে। যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী।
এসব বলতে বলতে উনি একটা চেয়ার টেনে আমার সামনে বসলেন।
জানো সেই সকাল বেলা নাস্তা করেছিলাম।আর কিছু খাওয়া হয়নি, চলো খেয়ে নেই?
আপনার খিদে পেয়েছে তো আপনি খেয়ে নিন আমাকে বলছেন কেন? তুমি না খেলে আমি ও খাবো না।তো খাবেন না,,তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার কথা শুনে উনি চুপ হয়ে গেলেন। কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন,
তুমি যদি এখন আমার সাথে খাবার গুলো না খাও তাহলে ডিনারে তোমাকে,করলার ঝোল খাওয়ানো হবে।
ওয়াক,,,
না খেয়ে থাকবো, কিন্তু জীবনেও আমি ওসব খাবো না। উনি বললেন তোমাকে কিভাবে খাওয়াতে হয় তা আমি ভালো করে জানি।কি.কি করবেন আপনি? এখন তো বলব না, তখন ই দেখবে আমি কি করি।
মনে মনে ভাবছি, খেয়ে নিব যদি আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে তাহলে? খেয়ে নেওয়াই মনে হয় বেটার হবে।
হুম ঠিক ভাবছো, খেয়ে নেওয়াই ভালো হবে। আমি অবাক চোখে তাকালাম উনার দিকে। উনি কি করে জানলেন আমি এসব ভাবছি??
আর কিছু না বলে চুপ চাপ খেয়ে নিলাম।
খাওয়া শেষ করে বললাম, এবার বলুন আমাকে কেন এভাবে আটকে রেখেছেন?
উনি বলতে শুরু করলেন,,,,
তোমাকে যেদিন প্রথম বার ছবিতে দেখেছিলাম, তখন থেকেই খুব ভালো লাগে আমার।ঐ দিন বেশ কিছু ছবি তোমার আপুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলাম। ঠিক করি তোমাকেই বিয়ে করবো, কিন্তু তোমার বাবা নাকোজ করে দেন।
এতে খুব রাগ হয় আমার, সেদিন ঠিক করি জোর করে হলেও তোমাকে আমি বিয়ে করবো। অফিসের কাজের প্রেসারে এতো দিন কিছু করতে পারিনি। তবে তোমার আপু কে বেশ কয়েকবার রিকোয়েস্ট করেছিলাম। তোমার আপু বলে যেখানে আব্বু অমত করেছেন সেখানে আমরা কিছু করতে পারবো না,স্যরি ভাইয়া।
অবশেষে গতকাল আমার কলিগদের সাথে প্লান করে তোমাকে কিডন্যাপ করি।
উনার কথা শুনে খুব আশ্চর্য হয়ে গেলাম আর বললাম কি বললেন কিডন্যাপ?আপনারা আমাকে কিডন্যাপ করেছেন? ইয়েস ম্যাম কিডন্যাপ করেছি। কিন্তু কেন?আর এদিকে আমি ভেবে চলেছি আপনারা আমাকে আসামি হিসেবে তুলে এনেছেন, কি বোকা আমি!
জ্বি না ম্যাম আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে, আমি আপনার সম্পর্কে এতো দিন একটু একটু করে অনেক কিছুই জেনেছি। আপনার বুদ্ধি এবং চঞ্চলতা সম্পর্কে আপনার পছন্দ অপছন্দ কেমন, অনেক কিছুই জেনেছি।আর পুলিশ ছাড়া অন্য কেউ যে আপনাকে কখনোই কিডন্যাপ করতে পারবে না তাও জানি।আর তা ছাড়া পুলিশ কে কেউ সন্দেহ ও করবে না,তাই এই প্লান করা।
উনার কথা শুনে বললাম, তো আমাকে এভাবে কিডন্যাপ করার কারণ কি?
বিয়ে,,,,
হোয়াট! বিয়ে মানে?
আমাকে তোমায় বিয়ে করতে হবে।
কখনোই না।আজ বা কাল তোমায় আমাকেই বিয়ে করতে হবে।,,,,,,,
#চলবে….