সিনেমাটিক #পর্ব-০৩

0
514

#সিনেমাটিক
#পর্ব-০৩
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

বিয়ে,,,,
হোয়াট! বিয়ে মানে?
আমাকে তোমায় বিয়ে করতে হবে।
কখনোই না।আজ বা কাল তোমায় আমাকেই বিয়ে করতে হবে।,,,,,,,

আমার আব্বু আম্মুর অমতে কখনোই বিয়ে করবো না আমি। কিন্তু আমি যে তোমাকেই বিয়ে করবো,আর যতোদিন না বিয়ে তে রাজি না হ‌ও ততোদিন তুমি এখানে বন্ধি হয়ে থাকবে।

আপনি আমার সাথে এরকম করতে পারেন না। আমি তোমার সাথে সব করতে পারি,,,
দেখুন আমার আব্বু আম্মু নিশ্চ‌ই অনেক টেনশান করছে আমার জন্য। আমার কথা শুনে হিটলার বললেন,আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও। তাহলেই তো হয়, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি কিছু দিনের জন্য হলেও তোমাকে তোমার বাসায় যেতে দিব, তবে সেটা বিয়ের পর।

আপনি সব কিছু যতোটা সহজ ভাবে নিচ্ছেন, এতোটা কিন্তু সহজ নয়। সহজ করে নিলেই সহজ হয়। আমার মেজাজ গরম করবেন না বলে দিচ্ছি।

রাগ আসে জাহান্নাম থেকে, সেটা জানো?
আমি এতো কিছু জানতে চাইছি না, আমি বাসায় যেতে চাই।আসর নামাজ পড়েছিলে?
না।পড়নি কেন? আমার সাথে রাগ করে, নিজের কাজে নিজেই অবহেলা করলে। আমি আপনাকে জবাবদিহি করতে পারবোনা।আজ আমাকে না দিলেও,পরকালে মহান আল্লাহ তা’আলা কে তো জবাব দিতেই হবে, তখন কি জবাব দিবে?

উনার এরকম কথা শুনে আমি চুপ করে রইলাম, আমার কোন কিছু বলার ভাষা নেই।

উনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি যেন তোমাকে আর কখনো নামাজ কাজা করতে না দেখি। এই বলে চলে গেলেন।

এসব তো সিনেমা তে দেখে এসেছি আর এখন কিনা আমার সাথেই ঘটছে। জীবন টা সিনেমাটিক হয়ে গেলো। কি হবে এর পরিনতি?

মাগরিবের আজান হতে নামাজ পড়ে নিলাম।

হিটলার হিটলার হলেও ধর্মিক সেটা আগে কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ আপুর কাছে যখন আমার সম্পর্কে জানতে চায় তখন আপুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি নিয়মিত নামাজ আদায় করি কিনা? কোরআন তেলাওয়াত করি কিনা।

কিন্তু উনি এটা কেন বুঝতে পারছেন না, আমার অমতে আমাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য উনার তো গুনাহ হবে। ধার্মিক হলে তো ধর্মের ছোট বড় সব কিছু সম্পর্কে জানতে হবে এবং মানতে হবে। নামাজ পড়ে অন্যায় কাজ করলে তো হবে না।

জানিনা কবে মুক্তি পাবো আমি এই পাগলের হাত থেকে। এতো করে বুঝিয়ে বললাম তাও শুনলো না।তবে আমাকে বসে থাকলে চলবে না,যে করেই হোক পালাতে হবে। কিন্তু কিভাবে??

ডিনার হিটলারের সাথে বসে খেতে হলো। না হয় কথায় কথায় উনার ব্ল্যাকমেইল করলার ঝোল খাওয়াবে। বুঝতে পারছি না এই হিটলার আমার সম্পর্কে এতো কিছু কিভাবে জানলো। আমি যে এসব খাবার পছন্দ করিনা তা তো উনার জানার কথা নয়।এগুলো তো আমার পরিবারের লোকজন ছাড়া অন্য কেউ জানে না, তাহলে?

দু’দিন পর,
ভাবছি,হিটলারের ফোন টা যে করেই হোক পেতে হবে,পেলেই আমি বাসায় কল করতে পারবো।পা টিপে টিপে হিটলারের রুমে ঢুকলাম, চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখি কোথাও হিটলার নেই। কিছুক্ষণ পরেই অফিসে যাবে,নিশ্চ‌ই শাওয়ার নিচ্ছে।এই সুযোগে ফোন টা খুঁজে বের করতে হবে।

বেডের উপর দেখলাম নেই। কোথায় রাখতে পারে? তারপর একে একে পুরো রুমে খুঁজে ফেললাম কোথাও পেলাম না। আচ্ছা উনি কি বাথরুমে ফোন নিয়ে গিয়েছেন নাকি? কি পরিমান চতুর লোক হলে এরকম টা করে!!
যাই একটু আসার আলো দেখতে পেলাম, এতেও ব্যার্থ আমি।এসব ভাবছি তখনি একটা টোন বেজে উঠল, বেলকনি থেকে শব্দ টা এলো। এটা মেসেজ টোন হবে হয়তো, আমার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল। একপ্রকার দৌড়ে গেলাম বেলকনিতে, গিয়ে দেখি ছোট একটা ট্রি টেবিলের উপর ফোন রাখা আর পাশে দুইটা চেয়ার। তারাতাড়ি করে ফোন টা হাতে নিলাম। রুমে একটু উঁকি মেরে দেখে নিলাম হিটলার আসছে কিনা, দেখলাম এখনো আসেনি। তারপর ফোন চালু করে দেখি পাসওয়ার্ড দেওয়া।কতো সতো নাম দিলাম কিন্তু খুলছেই না, আমার নাম ও দিলাম তাও খুললো না। হঠাৎ মনে পড়লো উনি তো আমাকে কারেজ বলে ডাকেন, এটা দিয়ে দেখি। কিন্তু এবারেও আমি ব্যার্থ হলাম। এখন খুব রাগ হচ্ছে,, সিনেমা, নাটক এবং গল্পের উপর। সবসময় দেখে এসেছি নায়ক রা তাদের নায়িকার নাম মোবাইল পাসওয়ার্ড দেয়।তো হিটলার তো সবসময় বলে আমাকে নাকি অনেক পছন্দ করে, তাহলে কেন পাসওয়ার্ড অন্য কিছু দিয়েছে।

বাথরুমের দরজা খুলার শব্দ শুনে, ফোন টা আগের স্থানে রেখে, চলে যেতে পা বাড়াতেই হিটলারের মুখোমুখি হতে হলো।

সদ্য শাওয়ার নিয়ে এসেছেন,
ট্রাউজার পরেছেন আর গায়ে তাওয়েল জড়ানো। চুল গুলো হাত দিয়ে নেড়ে দিলেন, উনার হাতের স্পর্শে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে, যেন দাঁড়িয়ে পরলো।

আমার তাকানো দেখে উনি বললেন,
আমি জানি আমি দেখতে অনেক সুন্দর,তাই বলে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি? আমার বুঝি লজ্জা পায় না।

উনার এরকম কথায়, আমি হাসতে হাসতে শেষ।আর উনি অপলোক তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। উনার এরকম তাকানো দেখে হাসি থামিয়ে বললাম, সিরিয়াসলি? আপনার লজ্জা পায়। ছেলেরা এতো অল্পতেই লজ্জা পায় জানতাম না তো?

উনি কথা ঘুরিয়ে বললেন, আচ্ছা বাদ দাও।তো ম্যাম আজকে সূর্য কোন দিকে উঠেছে যার ফলে তুমি আমার রুমে?আ, আমি,আমি এমনিতেই আসছি।একটু দেখতে এলাম আর কি আপনার রুমটা কিরকম।
আচ্ছা তাই না??
উনি একটু ভাবনার ভঙ্গি করে বললেন,তা ম্যাম পাসওয়ার্ড ঠিক ঠাক দিতে পেরেছেন? আমি আমতা আমতা করে বললাম কিসের পাস‌ওয়ার্ড? জানো না বুঝি কিসের পাস‌ওয়ার্ড। এটা বলতে বলতে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি, পিছোতে পিছোতে বেডের সাথে লেগে বসে পড়লাম।
আর উনি আমার দিকে ঝুঁকে বললেন, চিন্তা করো না, বিয়ের পর তোমার নাম আমার ফোনের পাসওয়ার্ড দিব। উনার কথা শুনে বড় বড় চোখে তাকালাম উনার দিকে।আর উনি বললেন এভাবে তাকিয়ো না প্লিজ, আমি যে ঘায়েল হয়ে যাবো।

কিছু না পেয়ে বললাম আপনার অফিসের কিন্তু লেইট হয়ে যাচ্ছে। উনি সরে গিয়ে বললেন, আমি তো এখন ড্রেস চেঞ্জ করবো। উনার কথার মানে বুঝতে পেরে বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। সাথে মুখ দিয়ে না চাইতেই বেড়িয়ে আসলো, আপনি নাস্তা করবেন না? আমার কথা শুনে উনি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন, খুব উৎসাহ নিয়ে বললেন ভেবেছিলাম আজকে বাহিরে খেয়ে নিব। কিন্তু ডিসিশান চেঞ্জ,,, আজকে তোমার সাথে নাস্তা করবো।

উনার কথা শুনে চলে এলাম আমি, কিচেনে গিয়ে দেখি চাচা নাস্তা তৈরি করছেন।প্রায় শেষ পর্যায়ে এখন পরিবেশনের অপেক্ষা। আমি বললাম চাচা আজকে নাস্তা তে কি মেনু? আজকে আলুর দম আর লুচি ভাজা করেছি মনিমা। ওয়াও খুব সুস্বাদু খাবার।

চাচা আপনি কিভাবে এতো মজা করে খাবার তৈরি করেন? চাচা বললেন,আমি আগে একটা রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির কাজ করতাম সেখান থেকেই শিখেছি। ওহ্ আচ্ছা সেই জন্যই পুরো রেস্তোরাঁর মত হয় খাবার গুলো।

চাচা একটা প্রশ্ন করবো? এটা জিজ্ঞাসা করতে হবে, কি জানতে চাও বলো? চাচা আপনার বাসায় কেউ নেই? না মনিমা আমার আপন বলতে কেউ নেই,আর এখন আপন বলতে জায়ান বাবাই সব। কেন নেই চাচা?সে অনেক কথা পরে একদিন তোমাকে বলবো নে। এখন খেতে চলো। আমি আর কোন প্রশ্ন করলাম না।
হিটলারের সাথে বসে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা করে হিটলার অফিসে চলে যান।

হিটলার অফিসে যাওয়ার পর, চাচা কে বললাম আমাকে পালাতে সাহায্য করতে কিন্তু উনি কিছুতেই রাজি হলেন না। চাচা বললেন, জায়ান বাবা কে আমি আমার ছেলের মতো দেখি তাই ওনার সাথে কিছুতেই বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারবো না।

____________

বেশ কিছুদিন হয়ে যায় আমার এই বন্ধি জীবন।
খুব হাঁপিয়ে উঠি আমি, হিটলার ব্যাপার টা বুঝতে পেরে, ঠিক করে আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবেন।

যেহেতু এটা কক্সবাজার,তাই আর দূরে কোথাও যেতে হয়নি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতেই ঘুরতে নিয়ে আসলেন। সারাক্ষণ আমাকে চোখে চোখে রাখছেন পালাবো যে তার কোন উপায় নেই।তার উপর পুলিশ বলে কথা।

কোন উপায় না পেয়ে, অপরিচিত একটা লোককে পটানোর জন্য দিলাম চোখ মেরে। প্রথম বার লোক টা পাত্তা দিলো না। দ্বিতীয় বারেও সফল হলাম না।তাই আবার দিলাম, এবার হয়তো দেখতে পেয়েছে তাই আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। এই লোক টাকে যে করেই হোক হাত করতে হবে। তবেই আমি পালাতে পারবো।

আমি হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইলাম,
লোকটি আমাদের কাছে আসার পর আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই লোকটা হিটলার কে উদ্দেশ্য করে বললেন,ভাই আপনার ওয়াইফ কে সময় থাকতে সামলান। না হয় কখন পাখি উড়াল দিবে টের ও পাবেন না।

লোকটার কথা শুনে, হিটলার বললেন ওয়েট ওয়েট কি সব বলছেন আপনি? পাখি উড়াল দিবে মানে। আপনার ওয়াইফ যেভাবে মানুষ কে চোখ টিপ মারছে, তাতে উড়াল দিবেই। মিলিয়ে নিয়েন আমার কথা।

আমি এবার বললাম,এই আপনার সাহস তো কম না আপনি নাজিফা শেখ কে এসব উল্টা পাল্টা কথা বলছেন। লোকটি বললেন কেন চোখ টিপ মারার সময় মনে ছিলনা আপনি নাজিমা না কি নাদিয়া?? আপনার এতো বড় সাহস আপনি আমার নামকে ব্যাঙ্গ করছেন। আরো কিছু বলতে যাবো, তার আগেই হিটলার আমাকে টেনে বাসায় নিয়ে আসলেন।

বাসায় এনে হিটলার বললেন, তোমার চোখ মারার খুব সখ তাইনা? এবার যতো খুশি চোখ মারো। আমি বললাম পারবো না। তোমাকে তো চোখ মারতেই হবে,তাই দেরি না করে শুরু করো।

পারবো না আমি, আজকে ডিনারে তোমার খাবার হবে লাউয়ের জোস। কি!! লাউয়ের জোস?জীবনেও এরকম নাম শুনিনি। এখন শুধু শুনবে না,খাবে ও। আমি এসব আজেবাজে খাবার খাইনা।তা আমি খুব ভালো করেই জানি,আর সে জন্যই তোমার জন্য আজকে স্পেশাল জোস তৈরি করা হবে।তাই বলছি ভালো চাও তো চোখ মারো।

হিটলারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বজ্জাত টা মিটি মিটি হাসছে। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি,ঐ সময়ের সোধ তুলতে উনি এরকম করছেন……

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here