#সিনেমাটিক
#পর্ব-০৪
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
হিটলারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বজ্জাত টা মিটি মিটি হাসছে। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি,ঐ সময়ের সোধ তুলতে উনি এরকম করছেন……
আর হ্যাঁ আজকে তুমি আইসক্রিম পাবে না। আইসক্রিম পছন্দ বলে হিটলার আমার জন্য প্রতিদিন একটি করে আইসক্রিম বরাদ্দ করে দিয়েছেন। সেই আইসক্রিম টাও আজকে খুয়াতে হলো ঐ বজ্জাত ব্যাটার জন্য।ঐ ব্যাটাকে যদি আরেক বার আমি হাতের কাছে পাই তো দেখিয়ে দেব এই নাজিফা শেখ কে ইগ্নোর করার মজা। কি এমন করেছিলাম আমি?চোখ ই মেরেছিলাম।তার জন্য এরকম করতে হবে নাকি?
তবে তোমাকে একটা সর্তে মাফ করতে পারি!!
হিটলারের কথা শুনে জিজ্ঞাসা করলাম কি সর্ত?
কাপবোর্ডে তোমার জন্য যে শাড়ি গুলো রাখা আছে, সেখান থেকে একটা শাড়ি আগামীকাল পড়তে হবে। পারতাম না। ওকে ফাইন তাহলে তোমার জন্য লাউয়ের জোস ই ঠিক আছে।
কি পরিমান হিটলার হলে এরকম করে,,,
উফফ,কবে পাবো মুক্তি এই হিটলার থেকে??
কি ভাবছো?
আমি শাড়ি পরতে পারিনা। এটা কোন ব্যাপার না, আমি পরিয়ে দিব। কি?? হুম, তুমি না পারলে আর কি করা, আমাকেই তো পরিয়ে দিতে হবে তাই না?
উনার কথা শুনে ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে বললাম না না তার দরকার হবে না, আমি যেরকম পারি সেরকমই পরবো।উনি এবার বিজয়ের হাসি হেসে বললেন তাহলে তো হয়েই গেল।
এরপরের দিন, সকাল বেলা।
আশেপাশে চাচা কে কোথাও দেখছি না, কিন্তু মেইন দরজার চাবিটা টেবিলের উপর। হিটলার নিশ্চই রুমেই আছেন। তাই তারাতাড়ি করে হিটলারের রুমের দরজা বাহির থেকে লাক করে দিলাম। পালানোর এই সূবর্ণ সুযোগ কিছু তেই হাত ছাড়া করবো না।
দরজা লক করে পিছনে ঘুরে দেখি,ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছেন হিটলার।
নাজিফা তোর বুদ্ধি তো দিন কে দিন ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে, তুই কি সেটা বুঝতে পারছিস? একটু দেখে নিলে কি হতো? হিটলার রুমে আছে কিনা?বিরবির করে এসব বলছি, তখন হিটলার বলেন, কি বলছো বিরবির করে?
কোথায় কিছু না তো? আমার তো মনে হলো তুমি কিছু বললে। আপনি তো এখন একটু বেশিই শুনতে পান।
কিছু বললে? না কিছু না।
তো আমার রুমের দরজা লক করলে কেন?
লক করেছি…কেন করেছি বলুন তো? হিটলার বললেন, তা তো তুমি ভালো বলতে পারবে।
ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, আসলে কি বলুন তো চারিদিকে চোরের যেই উপদ্রব শুরু হয়েছে। কি বলবো আপনাকে, আপনি যদি জানতেন।
হুম ঠিক বলছো পুলিশ হয়ে চুরের সম্পর্কে কিছুই জানি না আমি। আমি বললাম তাই তো আপনি তো কিছুই জানেন না, এখন কতো রকমের চোর বের হয়েছে।
মেইন দরজা লক করা অথচ আমার রুমে চুরি হবে। তুমি কতো কিছু জানো,এই জন্যই তোমাকে বিয়ে করতে হবে বুঝলে?
এবার আমার কথায় আমিই ফেঁসে গেলাম।এই হিটলার টা আসলেই একটা হিটলার।
__________
নাস্তা করছি, তখন হিটলার চাচা কে বললেন, চাচা এখন কিন্তু অনেক রকম চোরের উপদ্রব শুরু হয়েছে।এই দরুন, কোন কোন চোর আপনাকে রুমে বা ওয়াশ রুমে আটকে রাখার ফন্দি করতে পারে এবং,,,
হিটলারের কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল,ঐ সময়ের ব্যাপার টা নিয়ে কথা গুলো যে আমাকেই বলছে বেশ বুঝতে পারছি আমি। আমার কাশি দেখে পানি এগিয়ে দিলেন উনি।
হিটলার এবার আমাকে বললেন, আমি যেন অফিস থেকে ফিরে তোমাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখি।
আমি কিছু বলতে যাবো, তখন হিটলার বলে উঠেন আরিফ চাচা আপনি তো খুব ভালো করে,সিম আর পটলের সবজি রান্না করতে পারেন তাই না?
হিটলারের কথা শুনে চাচা বললেন,হ্যা বাবা পারি তো। তোমার জন্য কি আজকে সবজি রান্না করবো? তখন আমি বললাম না না চাচা তার কোন দরকার নেই, উনি এমনিতেই বলেছেন। চাচা বললেন ওহহ আচ্ছা।
তারপর হিটলার ভূবনভুলানো হাসি দিয়ে অফিসে চলে গেলেন।
নাস্তা শেষে রুমে গিয়ে কাপবোর্ড খুললাম। দেখলাম সাতটা শাড়ি আছে কোন টা পরি?? সবগুলোই সুন্দর লাগছে। বেগুনি কালারের শাড়ি টা নিয়ে মাথায় দিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছি, খারাপ লাগছে না।এটাই পরবো তাহলে। বাসায় আমি আর বেশ কয়েকবার শাড়ি পরেছিলাম, তবে শাড়ি পরে বাহিরে কোথাও যাইনি কখনো। বাসাতেই ছবি তুলার জন্য, শাড়ি পরতাম। ভালো করে পরতেও পারি না, বেশিরভাগ সময় আপু পরিয়ে দিত।আর আমি যখন পরতাম তখন তেমন ভালো হতো না, তবে ছবিতে বুঝা যেত না, ভালো হয়েছে নাকি হয়নি।
হিটলার বাসায় ফিরেন,রাত নয়টার দিকে।তাই আমি এশার নামাজ আদায় করে, শাড়ি পরে নিলাম। কোন প্রকার সাজগোজ ছাড়া। এখানে অনেক ড্রেস থাকলেও কোন রকম কসমেটিকস নেই, অবশ্য থাকলেও সাজতাম না। সাজগোজ খুব কমই পছন্দ আমার।
আমার বেস্টু ফাবিহা হলো বিশ্ব সাজুনি।যে কিনা কয়েক দিন পর পরই বউ সেজে বসে থাকে।
একদিন বউ সেজে আমাকে ছবি দিয়ে বলে, দোস্ত আমার বিয়ে হয়ে গেছে। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে বিশ্বাস করলাম ওর কথা। তারপর ভার্সিটিতে যখন ও আসলো, তখন ওর বর সম্পর্কে শ্বশুর বাড়ি সম্পর্কে নানা রকম প্রশ্ন শুরু করি। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ও হাঁপিয়ে উঠে, স্বীকার করে নেয় যে বিয়ে টিয়ে কিছু হয়নি, সবকিছু দুস্টুমি করে বলছে।
আমিও কম কিসে?? তখন বললাম তোকে দেখে কেন জানি আমার সন্দেহ হয়েছিল, আর তাই সন্দেহ দূর করতেই এতো কিছু জিজ্ঞাসা করছি। আমার কথা শুনে ফাবিহা বুকা বনে যায় আর অন্যান্য ফ্রেন্ড রা বলে, তোর প্রশংসা না করে পারছি না। আমি তখন ভাব নিয়ে বলি, নাজিফা শেখ আমি বুঝলি এই ছোট খাটো বিষয় আমার কাছে কোন ব্যাপার না।
তখন আমার হারামি ফ্রেন্ড রা বলে,তাই না?যেই একটু প্রশংসা করেছি অমনি তুই আকাশে-বাতাসে উড়তে শুরু করলি।
খুব মিস করছি ওদের সবাইকে। কতোদিন হয়ে গেল ভার্সিটিতে যেতে পারছি না।
আমার মনে আবার পালানোর ইচ্ছে জেগে উঠলো। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবছি।তো সামনের বাসার সেই দিনের আপুটা ওনাদের বেলকনিতে আসে। আপু কে দেখেই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।
দেরি না করে,আপু টাকে আপু বলে ডাক দিলাম।
আপুটা অবাক চোখে তাকায়, তখন আমি বললাম আপু আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ? আপু টা বললেন কি হেল্প? আমি খুব বিপদে আ,,,
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই,কেউ একজন আমাকে জড়িয়ে ঘারে মুখ গুঁজে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি।আর পাশের বাসার আপুটা এরকম সিচুয়েশন দেখে, হাসি দিয়ে চলে গেলেন।
আপু টা চলে যেতেই, মানুষ টা আমাকে ছেড়ে দিলো। ঘুরে তাকিয়ে দেখি হিটলার।
আমাকে এখানে আটকে রাখার কথা আপুটা কে যেন বলতে না পারি, সে জন্য হিটলার এরকম নাটক করলেন।আর এদিকে আপুটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক মূহুর্ত মনে করে চলে গেলেন।
পালানোর খুব ভালো ফন্দি আঁটছো তো। তোমার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না।
কথা গুলো বলে উনি এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যেন এক্ষুনি আমাকে গিলে খাবেন। আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।
ভাবছি এখন যদি আমাদের দুজনকে জনগন দেখতো, তাহলে ভাবতো পুলিশ আসামি কে জেড়া করছে। সাথে উল্টা পাল্টা ক্যাপশন লিখে নেটে ছেড়ে দিত।
হিটলার আবারও বলা শুরু করলেন,
জানো আজকে কতোটা হ্যাপি ছিলাম আমি। আমার কাজ গুলো যেন শেষ হচ্ছিল না।কখন বাসায় আসবো আর কখন তোমাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখবো, এই ভাবনাই সারাক্ষণ মাথায় ঘুরেছে।আর বাসায় আসার পর চাচা দরজা খুলতেই তোমাকেই খুঁজে বেড়িয়েছি।
তাই ইউনিফর্ম চেঞ্জ না করেই তোমার রুমে চলে এসেছিলাম। না আসলে কি হতো?তা আর ভাবতে পারছি না।তাই আজকের পর তুমি আর এই রুমে থাকতে পারবে না। তারপর চাচা কে ডাকলেন, চাচা এসে বললেন কিছু বলবে বাবা? হিটলার বললেন, চাচা ওর সমস্ত জিনিস পত্র পাশের রুমে নিয়ে যাবেন।আর এই রুমটা লক করে দিবেন। উনার কথা শুনে চাচা বললেন, ঠিক আছে বাবা তুমি যেমন বললে তেমনি হবে।
এরপরের দিন থেকে, আমার স্থান হলো পাশের রুমটা।যেটার বেলকনি এবং জানালার পাশে কোন বিল্ডিং নেই।
আর হিটলার ও আগের মতো তেমন কথা বলেন না আমার সাথে। কেমন যেন চুপচাপ থাকেন। বেশিরভাগ সময় টা অফিসেই কাটান।
রাতে ডিনারের পর হঠাৎ হিটলার এসে বললেন,
চলো ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
পিছনে না ফিরেই বুঝলাম হিটলার কথা টা বললেন। সারাদিন রুমে থাকতে থাকতে ভোর হয়ে যাচ্ছি তাই রাজি হয়ে গেলাম।
লিফ্ট দিয়ে আসার কারণে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম আমরা। হিটলার লিফ্টের বাটন ক্লিক করার সময় বুঝতে পারলাম হিটলারের বাসাটা চার তলায়,আর পুরো বিল্ডিং টা সাত তলা বিশিষ্ট।
ছাদে গিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলাম। দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজ করছে।
আমি আসে পাশের বাসা গুলো দেখতে ব্যাস্ত। রাতের বেলা যখন চারিদিকে অন্ধকারে ছেয়ে যায় তখন আকাশের তারা গুলো যেমন ভাবে ক্ষিন আলো ছড়ায়,ঠিক তেমনি যতদূর দেখা যায় বাসা গুলোর জানালা দিয়ে সল্প পরিসরে আলো বের হয়ে আসা,,,, দেখতে ভালো লাগে।
তবে যদি সেটা অমাবস্যার মধ্যরাতে হয় তাহলে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেমন জানি মনে হয়, উপরে নীল আকাশে জ্বলা মিটিমিটি তারা আর চার পাশের ছোট,বড় বাসা থেকে আসা আলো আর রাস্তায় জ্বলজ্বল করা নিয়ন বাতির চমৎকার আলো।
রাতের এই দৃশ্যটা আমার খুব ভালো লাগে। যখনি রাতের বেলা ছাদে আসি তখনি এই দৃশ্য টা উপভোগ করি,,,,
#চলবে….