#সিনেমাটিক
#পর্ব-১০(উল্টো বাসর)
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
কিন্তু আমি তো জানি,ফাবু তো শুধু গুটি ছিল এখানে,,,,,
অনিচ্ছা সত্ত্বেও হিটলারের পাশে বসে যাচ্ছি। গন্তব্য ঢাকা,, হিটলারের নাকি ঢাকায় পোস্টিং হয়েছে, এখন উনাদের বাসায় ই থাকেন।
তাই পরিবার কে ছেড়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। অবশ্য আমার পরিবার এখন আমাকে কখনোই মেনে নিবে না,তারা ধরেই নিবে আমার ইচ্ছেতেই বিয়ে টা হয়েছে।আর আব্বু কে আমি জানি, উনি কখনোই আমাকে মেনে নিবেন না।তাই সতিনের সংসার করা ছাড়া আমার আর কোন পথ খোলা নেই।
যেতে রাত নেমে এলো কিন্তু এখনো ঢাকায় পৌছাতে সারে পাঁচ ঘণ্টার মতো নাকি লাগবে। এদিকে এসির ঠাণ্ডা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না, ছোট থেকেই আমি এসির ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারি না। তবুও হিটলার কে আমি কিছুতেই কিছু বলবো না।
____________
“সকালের মিষ্টি রোদের সোনালী আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে চারিদিকে প্রকৃতির সুন্দর্যো ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে”।
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, কিছু সময় লাগলো বুঝতে কোথায় আমি।দেখি হিটলারের কোলে মাথা রেখে গুটিয়ে শুয়ে আছি, আর হিটলার সিটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
আমি কখন এভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে নেই। উঠে দেখি, আমার গায়ে একটা শাড়ি ঝরানো আর এসি টা ও অফ।শাড়ি টা পাশে সরিয়ে রাখলাম, এখন আর শীত লাগছে না তাই। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম ঢাকায় পৌছে গেছি আমরা।
কিন্তু বাসায় যেতে আর কতো সময় লাগবে জানা নেই আমার।তাই ড্রাইভার কে বললাম,মামা আর কতো সময় লাগবে? মামা বললেন,ভাবী সাব আমারে জায়ান সাহেব ভাই বলে ডাহে আন্নেও ভাই ডাইকেন।
ড্রাইভারের কথা শুনে বললাম ওহহ আচ্ছা আমি তো জানতাম না তাই বলে ফেলেছি। আচ্ছা আপনাকে ভাই বলেই ডাকবো।
আইচ্ছা।
আর আমরা এসে গেছি,এই বলে উনি গেইট খুলার জন্য হর্ন বাজাতে শুরু করলেন।
তখন হিটলারের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঠিক করে বসে বলে কামরুল ভাই আমরা কি চলে আসছি? উনার উওর দেওয়ার আগেই দারোয়ান গেইট খুলে দিলেন, তারপর গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করলো।
ড্রাইভার ভাই এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন।খুলে দিতেই আমি গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে তাকালাম।
চারিদিকে তাকিয়ে আমি যেন হা হয়ে গেলাম। বিরাট বড় বাড়িট, মনে হচ্ছে এই বাড়িটা আমাদের বাড়ির দ্বিগুণ হবে। বাড়ির সামনে অনেক টা জায়গা জুড়ে গাছপালা লাগানো। মাঝে মাঝে কিছু ফুল গাছ,পর্তুলিক ফুল আমার খুব পছন্দের,এই ফুল ও বিভিন্ন রঙের ফুটে আছে।
বাসায় চলো?
হিটলারের কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছেন, আমি তাকাতেই আবার বললেন, সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। তারপর হাটা শুরু করলাম, আর ভাবলাম তার মানে উনার বাসায় সবাই জানে বিয়ের ব্যাপারে।
দরজায় কলিং বেল দিতেই দরজা খুলে একজন মহিলা ভরনডালা নিয়ে আসলেন। হিটলার বললেন, আমার”মা” সালাম দাও। আমি সালাম দিলাম। সাথে সাথে একজন মহিলা বলে উঠলেন, জায়ান এডা কোন ধরনের কথা সালাম দাও? নতুন বউ পাও দইরা সালাম করবো,আর তুই কিনা সালাম দিতে বলিস?
তখন হিটলার বললেন,চাচি আমি আপনাকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি আগে ভিতরে প্রবেশ করি।
তারপর আমাদের ভরন করে ভিতরে প্রবেশ করানো হলো। একজন আমাকে নিয়ে সুফাতে বসালেন। সাথে হিটলার কে ও। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবার মুখে মলিন হাসি।
তখন হিটলার বলেন, নাজিফা তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। মাকে তো চিনলেই,আর উনারা হচ্ছে আমার চাচা আর চাচী। তাদের কে সালাম দিলাম।
যে আমাকে এনে বসালেন উনাকে দেখিয়ে বললেন উনি আমার বড় ভাবি আর উনি বড় ভাই, আমি তাকিয়ে সালাম দিলাম। তারা হাসি দিয়ে সালামের জবাব দিলেন।আর উনি আমার মেজ ভাবী, আমি উনাকে ও সালাম দিলাম।
তারপর এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।ভাবীদের ছেলে মেয়ে দের সাথে,
এবং ফুফির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর বললেন,মেজ ভাই মনে হয় অফিসে চলে গেছে।
বাসায় আসলে পরিচয় করিয়ে দিব।
তারপর হিটলার চাচী কে উদ্দেশ্য করে বললেন_চাচি পায়ে ছুঁয়ে সালাম করা,কদম্বুচি করা স্পষ্ট হারাম কারণ এই রীতি গুলো বিধর্মীদের রীতি এবং কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই এগুলো ত্যাগ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,”যে ব্যক্তি বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবে”।
__সুনানে আবু দাউদ (৪০৩১)
সব শুনে চাচী বললেন,এহন কত নতুন নতুন হাদীস বারোইছে, আমাগো সময় এতো হাদীস আছিল না। তখন হিটলার বললেন, এতো কিছু বলার পরেও যদি না বুঝে থাকো তাহলে আর কিছু করার নেই।
আরিফ চাচা এসে বললেন, সবাই খেতে আসুন নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,মনিমা কেমন আছো? আমি বললাম,জ্বি চাচা ভালো। আপনি কেমন আছেন? চাচা বললেন, আল্লাহ রাখছে ভালোই।
তারপর সবাই খাবার খেতে বসলাম,ডাইনিং টেবিল টা খুব বড় সবাই যেন এক সাথে বসে খেতে পারে তার জন্যই হয়তো করা।
খুব খিদে পেয়েছে তাই না করলাম না খেয়ে নিলাম। খাবার শেষে বড় ভাবি তার রুমে নিয়ে গেলেন আমাকে। আমি এ বাসায় আসার পর থেকে ঘসেটি বেগম কে খুঁজে চলেছি কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, কোথায় উনি? আচ্ছা উনাকে কি আলাদা বাসায় রেখেছেন নাকি হিটলার??তা না হলে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
কাউকে জিজ্ঞাসা ও করতে পাচ্ছি না।যাই হোক ঐ মহিলার খোজ নিয়ে তো আমার লাভ নেই,ঐ মহিলা যদি না থাকতো তাহলে আজকের দিনটা খুবই সুন্দর হতে পারতো আমার জীবনে।
কি ভাবছো?
ভাবীর কথায় ভাবনা থেকে বের হলাম।
জ্বি কিছু না।
আমাদের সবাইকে পছন্দ হয়েছে তো?
জ্বি,আপনারা সবাই অনেক ভালো।
তাই? আমাদের থেকেও কিন্তু তোমার উনি অনেক ভালো,আর সাথে ধার্মিক ও।
ভাবীর কথা শুনে মনে মনে বললাম, একজন বউ থাকতে আবার যে বিয়ে করে,সে কেমন ভালো তা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার।
ভাবী বললেন, আচ্ছা তুমি ড্রেস টা চেঞ্জ করে নাও। আমার হাতে একটা চুরিদার দিয়ে বললেন। আমি অবাক হয়ে বললাম,চুরিদার কোথা থেকে? উনি বললেন, জায়ান দেবরজি আমাকে দিয়ে বললো, তোমাকে যেন ড্রেস চেঞ্জ করতে বলি। তারপর বাথরুম দেখিয়ে দিলেন।
গতকাল বাসায় থেকে গায়ের ড্রেস টা পরে বের হয়েছিলাম তাই খুব খারাপ লাগছে।সে জন্য একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম।
খুব ঘুম পাচ্ছে বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে ভাবীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। ভাবী বললেন, দুপুরে তো খাওয়া হলো না তোমার। আমি ডাকতে চেয়েছিলাম জায়ান নিষেধ করায় আর থাকিনি। এখন উঠে ফ্রেস হয়ে এসে খাবার খেয়ে নাও তারাতাড়ি। কিন্তু আত্মিয় এসেছে তোমাকে দেখার জন্য।
ভাবীর কথা মতো ফ্রেস হয়ে আসলাম, তার পর ভাবী রুমেই খাবার টা নিয়ে আসলেন। আমি অল্প খেয়ে বললাম আর খাবো না,ভাবী বললেন, লজ্জা না পেয়ে খেয়ে নাও জানি তোমার অনেক খিদে পেয়েছে সেই সকাল বেলা একটু খেয়েছ।
খাবার খাওয়া শেষে,
ভাবী ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন আমাকে। সবাই কে সালাম দিলাম, একজন মহিলা আমাকে তার পাশে নিয়ে বসালেন।আর খুব প্রশংসা করলেন। আমার শ্বাশুড়ি মা কে বললেন,ভাবী বউ তো মা শা আল্লাহ খুব সুন্দর।
আরেক জন বলল,বউয়ের চোখের দিকে তাকালেই সবাই মায়ায় পরে যাবে।মা শা আল্লাহ যেই বড় বড় টানা টানা চোখ দুটো।
আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন, দোয়া করবেন সবাই আমার সংসার টা যেন সবসময় এরকম ই থাকে, ছোট বউমা সহ সবাই যেন সব সময় এভাবেই মিলে মিশে থাকে।
রাতে খাবার খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এভাবেই বসে থাকতে হয় আমাকে তারা নানা রকম প্রশ্ন করেন এবং এই পরিবারের সম্পর্কে বলেন। সবশেষে রাতের খাবার খেয়ে তারপর তাদের বাসায় ফিরে যান।
বড় ভাবী আর মেজ ভাবী মিলে আমাকে সাজাচ্ছেন। কিছু বলতে পারছি না কিন্তু খুব অসহ্য লাগছে।বড় ভাবি বললো তোমাদের বিয়ের পর তো গাড়িতেই কাটাতে হলো।তাই আজকে তোমাদের বাসর রাত হবে।
সাজ্জাচ্ছেন আর আমাকে বিভিন্ন রকম উপদেশ সাথে হাসি ঠাট্টা করছেন দুজন মিলে। আমি বুঝতে পারছি না এরা কি আমার অবস্থা টা জানেন না। আচ্ছা উনারা কি আদৌ জানেন হিটলার যে আরেক টা বিয়ে করেছেন? না হয় বুঝতে পারতেন আমি এই বিয়েতে খুশি নই।
তখন আমার শ্বাশুড়ি মা এসে ভাবীদের হাতে অনেক গয়না দিলেন আমাকে পরানোর জন্য। আর বললেন, তিন বউ মাকে সম পরিমাণে গহনা দিলাম, তিন জনকেই বলছি যত্নে রেখো এগুলো। এগুলো তোমাদের শ্বশুর কে দিয়ে গরিয়ে ছিলাম, ছেলের তিন বউ কে পরাবো বলে। আজকে সেই দায়িত্ব সম্পূর্ণ হলো।এই বলে উনি চলে গেলেন।
দেখ তো কেমন লাগছে?
সেজ ভাবী বললেন কথাটা, আয়নায় নিজেকে দেখলাম। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন তারা।সব কিছুই ঠিক কি আসল মানুষ টাই যে ঠিক নেই আমার কাকে বলবো আমার এই কষ্ট??
__________
ফুলে ফুলে সজ্জিত রুমে বসে আছি আমি। খুব বিরক্ত লাগছে, ইচ্ছে করছে শাড়ি গয়না সব খুলে ফেলি। অনেক ক্ষন বসে থেকে ঠিক করলাম এগুলা চেঞ্জ করে ফেলবো।তো উঠতে যাবো যখনি হিটলার রুমে আসলেন আর এসেই দরজা টা বিতর থেকে বন্ধ করে দিলেন।
উনাকে দেখে রাগে বিছানার চাদর খামচে ধরলাম।
উনি বেডের পাশে এসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, জোর করে বিয়ে করেছি বলে ভেবো না আজকেও জোর করবো তোমাকে।যেদিন তুমি মন থেকে আমায় মেনে নিবে সেদিন ই আমি আমার স্বামীর অধিকার খাটাবো তার আগে নয়।
উনার কথা শুনে মনে মনে বললাম, সেই দিন কখনোই আসবে না আপনার জীবনে মি.জায়ান মুস্তাফি।
হিটলার বললেন যাও এগুলো চেঞ্জ করে আসো, কাপবোর্ড এ ড্রেস রাখা আছে।
আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে আসলাম। হিটলার বললেন চলো দু রাকাত শুকরানের নামাজ আদায় করে নেই। নামাজ পড়ে নিলাম নামাজ নিয়ে তো আর না করা যায় না।
নামাজ শেষে আমি বললাম, আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো না। উনি বললেন, সিনেমার মতো রুমের বাহিরে বা ফ্লুলে আমিও ঘুমাতে পারবো না। তবে একটা কাজ করা যায়।
আমি বললাম, কি কাজ?
অন্যান্য দের মত আমাদের তো আর রোমান্টিক বাসর হবে না, তাই তুমি চাইলে আমাদের উল্টো বাসর হতে পারে।
হিটলারের কথা শুনে বিষ্ময় নিয়ে বললাম উল্টো বাসর মানে?
মানে তুমি যে দিকে পা দিয়ে শুবে, আমি সে দিকে মাথা দিয়ে শোব, আর আমি যেদিকে পা দিব তুমি সে দিকে মাথা দিয়ে শোবে।
হিটলারের কথা মন্দ লাগলো না তাই রাজি হয়ে গেলাম। এভাবেই উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম দুজনে।
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি হিটলার আমার পা দুটো কে কোলবালিশ বানিয়ে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। উঠে পা ছাড়াতে অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু হিটলার কিছুতেই পা ছাড়ছেন না।আর টেনে নিয়ে উনার বোকের সাথে মিশিয়ে নিলেন……
#চলবে…..