#সিনেমাটিক
#পর্ব–১২
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
পাশে তাকিয়ে দেখি হিটলার আমার আহত হাত টা ধরে পাশে বসে,বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন……
আমি শোয়া থেকে উঠতে নিলে, আমার হাত নারার কারণে হিটলারের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি জেগে গেছি দেখে দরফরিয়ে ঠিক হয়ে বসলেন।
হিটলার:-তোমার কি হাতে ব্যাথা করছে? খুব বেশি কি ব্যাথা করছে?ডক্টর ডাকবো?
উনার এরকম উত্তেজনা দেখে কিছু টা ভালো লাগলো।প্রত্যেটকটি মেয়ে চায় তার স্বামী যেন তার কেয়ার করে ভালোবাসে।তার পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখে। আমি ও সে দিক থেকে ব্যাতিক্রম নই। শুধুমাত্র একটা কারণে আমাদের মাঝে বিশাল দূরত্ব।
হিটলার:-কি হলো কিছু বলছো না কেন?বলো আমাকে কেমন ফিল হচ্ছে।
আমি বললাম, এখন ব্যাথা করছে না। আমি ওয়াশ রুমে যাবো,তাই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
হিটলার:-ওহহ আচ্ছা। তাহলে চলো।
আমি একাই যেতে পারবো, আমার তো পায়ে প্রবলেম নেই। তখন হিটলার বললেন, হুম আচ্ছা তুমি যাও। তারপর আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।
ওয়াশ রুম থেকে এসে দেখি হিটলার এখনও বসে আছেন।তাই বললাম আপনি এখনও বসে আছেন কেন? শুয়ে পরুন।
হিটলার:-তুমি ঘুমিয়ে পরো। আমি এমনিতেই ঠিক আছি।
আজব মানুষ তো আপনি! এভাবে বসে থেকে কি হবে? আপনি এভাবে বসে থাকলে আমার হাত ভালো হয়ে যাবে নাকি। শুয়ে পরুন বলছি।
হিটলার আবার কিছু বলতে নিলেই আমি চোখ রাঙানি দিলাম, তারপর আর কিছু না বলে চুপ চাপ শুয়ে পরলেন।
তারপর আমি ও শুয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা হিটলার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ডেকে চলেছেন ঘুম থেকে উঠার জন্য। আমি বললাম ঘুমাতে দিন প্লিজ।
হিটলার:-একদম নয়,উঠো তারাতাড়ি খাবার খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে।প্লিজ উঠো,,,
উনার এরকম গ্যাঙ্গ গ্যাঙ্গানিতে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। উঠে ফ্রেস হয়ে আসলাম।
তারপর হিটলার নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলেন।
প্রথমে খেতে চাইনি বললে হিটলার বলেন, আমি কিন্তু জানি নাজিফা তুমি অসুস্থ হলে নিজ হাতে খাওনা। তোমাকে আম্মু বা আপু খাইয়ে দিতো। এখন আমার হাতে খেয়ে নাও আর আমি না থাকলে বড় ভাবি খাইয়ে দিবে।
তাই আর কিছু না বলে খেতে শুরু করলাম।আর বললাম আপনি ভাবিকে কেন বলেছেন এসব।ভাবি কি মনে করেছেন কে জানে।
হিটলার:-বড় ভাবি সে রকম মানুষ ই না যে কিছু মনে করবেন,বড় ভাবি খুবই ভালো একজন মানুষ।তাই উনাকেই কথাটা বলতে পেরেছি।
হিটলার আমাকে খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে। অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
তখন আমি বললাম, আপনি খেয়েছেন?
বড় ভাবি:-তোমার উনি কাল রাতে তোমার কথা শুনে, রাতের খাবার টা পর্যন্ত খেলো না।তাই তুমি ঘুমিয়ে ছিলে বলে জোর করে নাস্তা করতে বসিয়েছি,তাও অল্প খেয়ে তোমাকে খাওয়াবে বলে তোমার খাবার নিয়ে চলে আসেন। নাজিফা তুমি খুব ভাগ্যবতী বুঝলে তাই তো এরকম স্বামী পেয়েছো।
ভাবির এরকম কথায় চুপ করে রইলাম,এর উত্তরে কি বলবো বুঝতে পারছি না। তখন হিটলার বলেন,ভাবি আপনি একটু বেশি বলছেন।কেউ হয়তো আমার প্রশংসা সহ্যই করতে পারছে না।
বড় ভাবি:-আরে না, নাজিফা মুখে কিছু বলছে না ঠিকই কিন্তু মনে মনে খুব খুশি হয়েছে। আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।
ভাবি চলে যেতে, হিটলার বললেন, আমি যাই কোন প্রবলেম হলে আমাকে কল করবে আর তা ছাড়া বাসায় সবাই তো আছেই। এই বলে উনি আমার ক্ষত স্থানে চুম্বন এঁকে দিলেন।
উনি হঠাৎ এরকম করায় আমি বোকা বনে গেলাম।আর এদিকে হিটলার এক মুহূর্তও দেরি না করে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
হিটলার যাওয়ার পর মা ভাইয়ারা সবাই এসে দেখে গেলেন আমাকে।আর বড় ভাইয়া বলল, হিটলার নাকি তদন্ত করবেন কে বা কারা এতে জড়িত।
আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না, আমার সাথে
ঐ লোকটার কিসের এতো শত্রুতা যার কারণে এরকম নির্মমভাবে খুন করতে আসতে দ্বিধাবোধ করলো না।হ্যা গতকাল লোকটা আমার পেটেই ছুড়িটা ডুকিয়ে দিত,যদি না আমি ভাবির চিৎকার শুনে আমার স্থান থেকে সরে না যেতাম।
আমার ভাবনার মাঝে ফোনে কল আসল, স্ক্রিনে ভেসে আসলো আপু লেখাটা। মুহুর্তের মধ্যে আমার মন টা ভালো হয়ে গেল। রিসিভ করে সালাম দিলাম।
আপু:- ওয়ালাইকুমুস সালাম। নাজিফা এগুলো কি শুনলাম? তুই নাকি জায়ান মুস্তাফি কে বিয়ে করেছিস?
আমি:-ঠিক শুনেছ আপু।
আপু:-ফাবিহার কাছ থেকে সবটা আমি শুনেছি, তুই উনার ফাঁদে কেন পা দিলি? আমাদের বিষয় টা একবার জানাতে পারতি।আর তুই ফোন টা সুইচ অফ করে রেখেছিলি কেন? তোকে কতবার কল করেছি, তোর কোন ধারণা আছে?
আমি;-যা হবার হয়ে গেছে আপু, এগুলো বলে এখন আর কোন লাভ নেই। তোমাদের কি জবাব দিতাম বলো?তাই ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিলাম।যাই হোক এখন বলো আব্বু আম্মু তাঁবু সবাই কেমন আছে?
আপু:-টেনশানে আব্বুর ডায়বেটিস বেড়ে গেছে আম্মু সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে তোর জন্য।তারা ভাবছে তুই পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস। জায়ান মুস্তাফির কথা তো আব্বু আম্মু জানে না আর সেদিন যে উনি তোকে কিডন্যাপ করেছিল এসব কিছুই তো তারা জানে না।তাই আমি ফাবিহা কে নিয়ে এসব ঘটনা এখন বলতে পারছি না, আর বললেও হয়তো বিশ্বাস করবে না। আব্বু বলেছে তোর মুখ ও কোন দিন দেখবে না নাজিফা।
আমি:- দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আমি জানি আপু এরকম টাই হবে। আব্বু আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না।
আপু:-তুই চলে আয় বোন। জেনে শুনে কেন সতিনের ঘর করবি?
আমি:-তা হয় না আপু, হিটলার যেমনি হোক এখন উনি আমার স্বামী। আর উনার পরিবারের সদস্যরা খুব ভালো আপু, সবাই আমাকে খুব আদর করে।
আপু:-তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর। আল্লাহ হাফেজ।
এই বলে আপু রাগ করে কল কেটে দিল।
_________
আরো কিছু দিন পার হয়ে যায়।
এখন আমার ক্ষত স্থান অনেকটা শুকিয়ে গেছে। হিটলার আমার অনেক কেয়ার নেন। প্রতিদিন নিয়মিত হাতের ড্রেসিন করা, সকালে আর রাতে খাবার খাইয়ে দেওয়া, মেডিসিন গুলো ঠিক মতো খাইয়ে দেওয়া।দুপুরে খাবার খেয়েছি কিনা, মেডিসিন গুলো ঠিক ঠাক মতো নিয়েছি কিনা অফিসে থেকে কল করে জিজ্ঞাসা করেন।
আরো কতো পাগলামো।
উনার এরকম পাগলামো দেখে আমি যেনো দিন কে দিন উনার প্রতি ওয়িক হয়ে পরছি।
আজকে খুব ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে তাই ভাবছি হিটলার কে কল করে বলবো আনার জন্য। আমার গ্যাস্টিকের প্রবলেম আছে বলে হিটলার আমাকে ফুসকা খেতে দেয় না, কিন্তু আজকে আমি ফুসকা খাবই।কিছু সময় ভেবে দ্বিধা দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে কল করলাম, রিং হচ্ছে।
তারপর রিসিভ হওয়াতে সালাম দিলাম।
ওপাশ থেকে মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসলো, ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কে বলছেন?
আমি:-আপনি কে বলছেন?জায়ান মুস্তাফি কোথায়?
ওপাশ থেকে:-আমি জায়ানের স্ত্রী নীলিমা নিলা বলছি। জায়ান কে কি প্রয়োজন আমাকে বলতে পারেন?
কথা গুলো শুনে সাথে সাথে কল কেটে দিলাম।
আর ফোন টা দূরে দেয়ালে ছুড়ে মারলাম। আজকে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। অনেক সহ্য করেছি।আর নয়, উনি সমান তালে চলছেন,এক দিকে আমি তো অন্য দিকে ঘসেটি বেগম উনার প্রথম স্ত্রী। নিজের পোস্টিং এর সাথে সাথে প্রথম স্ত্রী কে ও পোস্টিং করিয়ে ঢাকা নিয়ে এসেছেন অথচ আমার সাথে কি নাটক ই না করে চলেছেন।
কিছুতেই নিজের কান্না সংবরণ করতে পারছি না। উনি কেন আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করলেন কেন? কি এমন ক্ষতি করেছিলাম আমি উনার। উনার প্রথম স্ত্রী কে নিয়েই ভালো থাকতেন, আমাকে কেন জড়ালেন,,,,
“অপরদিকে কেউ বিজয়ের হাসি হেসে চলেছে।তার হাসি যেন থামছেই না, আজকে খুব বড় কিছু ঘটতে চলেছে এই ভেবে”,,,,,
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে চলেছি,ভাবিরা কয়েক বার ডেকে গিয়েছেন তাদের সাথে নাস্তা করার জন্য। কিন্তু আমি যাইনি।
তখন হিটলার অফিস থেকে আসে। উনি এসে বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে যান।আর আমি আগের ন্যায় দারিয়েই থাকি।
হিটলার ফ্রেশ হয়ে এসে নাজিফা বলে ডাকে কিন্তু আমি কোন সাড়া শব্দ করি না। তখন বেলকনিতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমার কাঁধে নিজের থুতনি রেখে বলেন এই কারেজ তোমাকে সেই কখন থেকে ডেকে চলেছি আর তুমি কিছু,,,,,
উনার কথা আর শেষ করতে দিলাম না, উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গালে থাপ্পড় দিয়ে বললাম,,
কয়টা লাগে আপনার?? খুব ভালো খেলোয়াড় আপনি মানতে হবে। গাছের ও খাবেন আবার তলায় ও কুরাবেন। এটা আমি কিছুতেই হতে দিব না। বেড়িয়ে যান আমার চোখের সামনে থেকে।আর না হয় আমি চলে যাব।
তারপর হিটলার বেড়িয়ে চলে গেলেন। আর আমি ফ্লুরে বসে কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম। দেখলাম সবাই অনেক ব্যাস্ত কাজে। মনে হচ্ছে যেন বাসায় আজকে কোন আয়োজন করা হচ্ছে।তাই আরিফ চাচা কে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা আজকে কি বাসায় কিছু আছে?
চাচা:- সে কি মনিমা তুমি জানো না? আজকে জায়ান বাবাজির বাবার মৃত্যুর চল্লিশ দিন হলো, তাই সে জন্য গরিব দুঃখীদের খাবার খাওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে।
আমি:-অবাক হয়ে বললাম, তাহলে চাচা উনার বাবার মৃত্যু বেশি দিন হয়নি? আমি তো ভেবেছিলাম অনেক আগেই হয়তো মারা গিয়েছেন উনি।
চাচা:-না মনিমা, তোমার মনে আছে তুমি সেদিন জায়ান বাবাজির ফ্লাটে গিয়েছিলে?
আমি:- জ্বি, চাচা মনে থাকবে না কেন?
চাচা:-তুমি সেদিন চলে এলে তাই তোমাকে বলতে পারিনি, তুমি সেদিন যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে, ভাইজান মারা যান।আর সেদিন জায়ান বাবা এ বাসায় চলে আসেন, উনার বাবার মৃত্যুর কথা শুনে, খুব ভেঙে পড়েছিল ছেলেটা।
চাচার কথা শুনে আমার সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। তাহলে সেদিন ঘসেটি বেগম কেন বললেন,এক সপ্তাহ আগে জায়ান উনাকে বিয়ে করেছেন।জায়ান তো উনার বাবার মৃত্যুতে এখানে চলে আসেন। তাহলে???
আচ্ছা চাচা জায়ান কোথায়??
চাচা:-মনিমা জায়ান বাবা বাহিরে রান্না-বান্নার তদারকি করছে।
ওহহ আচ্ছা, আপনি আপনার কাজ করুন। এই বলে রুমে চলে এলাম। সেই কখন থেকে সব কিছু মিলানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই মিলছে না। আচ্ছা আমরা কোন স্বরযন্ত্রের স্বিকার নই তো??? জায়ান ও রুমে আসছে না, উনাকে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো আমি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো,,,,,,
#চলবে…..