সিনেমাটিক #পর্ব–১৩

0
444

#সিনেমাটিক
#পর্ব–১৩
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

জায়ান ও রুমে আসছে না, উনাকে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো আমি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো,,,,,,

তাই মেজ ভাইয়ার ছেলে জোবায়ের কে বললাম,বাবা তোমার চাচ্চু কে গিয়ে বল যে কাকিমা তোমাকে ডাকছে।
বলার সাথে সাথে জোবায়ের দৌড়ে গেল হিটলার কে বলার জন্য।

আর আমি রুমে এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

অপেক্ষা করছি প্রায় ত্রিশ মিনিট হয়ে গেল,তাও হিটলার আসছে না তাই ভাবলাম আমি নিজেই নিচে গিয়ে ডেকে নিব।

নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দরজার দিকে অগ্রসর হতেই বড় ভাবির ডাক পরে গেল।

বড় ভাবি:-নাজিফা কোথায় যাচ্ছ ? চলো নাস্তা করবে। আজকে অনেক লেইট হয়ে গেছে, আসলে জানো‌ই তো বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনায় গরিব দুঃখীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।তাই কিছু মনে করো না, নাস্তা করতে লেইট হয়ে গেছে বলে।

আমি:-আরে ভাবি আপনি কি বলছেন আমি রাগ করবো কেন?আর আমার না একদম খিদে নেই।আপনারা সবাই খেয়ে নিন, আমি একটু নিচে যাই।

বড় ভাবি:-বুঝতে পেরেছি, জায়ান খেয়েছে কিনা তার জন্য নিচে যেতে চাইছো? আসলে ওরা তিন ভাই এখনো খায়নি,বলেছে নিচের কাজ শেষে একবারে খাবে।তাই তুমি চলে আসো।

ভাবি কে আর কিছু বলতে পারলাম না। উনি একদম টেনে নিয়ে গেলেন আমাকে খাবার খেতে।

খাবার খাওয়া শেষ করে, নিচে চলে আসলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও হিটলার কে দেখতে পাচ্ছি না।তাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। তখন মেজ ভাইয়া এসে বললেন,আরে নাজিফা তুমি এখানে?

আমি মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললাম, ভাইয়া আপনার ভাই কোথায়? উনার সাথে একটু কথা ছিল।

মেজ ভাইয়া:-আচ্ছা, আমি জায়ান কে বলছি ধারাও ।ও হয়তো ঐ দিকটায় আছে যেখানে সবাই কে খাওয়ানো হচ্ছে।

বাসার পূর্ব পাশ দেখিয়ে বললেন।
হয়তো আর একটু আগালে দেখা যাবে, না থাক এখানেই থাকি ভাইয়া তো বলবেন ই।

একটু পর হিটলার আসেন।
উনি আসার পর আমি বললাম, জোবায়ের আপনাকে বলে নি, আমি ডেকেছি?
তখন হিটলার বললেন, আমি বিজি আছি।এই বলে উনি চলে যেতে নিলে আমি বললাম, জায়ান??

আমার মুখে উনার নিজের নাম শুনে উনি থমকে গেলেন। তখন আমি বললাম, জায়ান আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে,আর সেটা এক্ষুনি বলতে চাই।

জায়ান:-কি বলবে বলো?

তখন আমি জায়ানের হাত ধরে একটা নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে আসলাম।জায়ান শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

আমি:-আপনি কি আপনার কলিগ মিস নীলিমা নিলা কে বিয়ে করেছেন?

জায়ান আমার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পরলেন।

জায়ান:-হোয়াট???
তুমি কি বলছো তোমার কোন ধারণা আছে? আমি কেন উনাকে বিয়ে করবো? আমার কি মনে হচ্ছে জানো তোমার মাথায় কোন প্রবলেম আছে!!

আমি:-তাহলে গতকাল আপনার ফোন উনি কেন রিসিভ করলেন?আর রিসিভ করে কেন বললেন?আমি জায়ানের স্ত্রী মিসেস নীলিমা নিলা।

জায়ান:-কি বলছো এসব? শুধু শুধু উনি এসব কথা কেন বলবেন?

আমি:-আমার ও একিই প্রশ্ন শুধু শুধু উনি এসব কথা কেন বলবেন? একটা মানুষ তো শুধু শুধু এতো বড় কথা বলতে পারেন না। নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।আর শুধু তাই নয়,,,,
ঐ দিন জায়ানের ফ্লাটের ঘটনা গুলো বললাম।

জায়ান:-এতো কিছু হয়ে গিয়েছে অথচ আমি কিছুই জানি না। আমি এক্ষুনি মিস নীলিমা নিলা কে এখানে আসতে বলছি, ওয়েট।

তারপর জায়ান কল করে ঘসেটি বেগম কে আসতে বলেন।

তারপর জায়ান উনার কাজে চলে যান আর আমি উপরে আমার রুমে চলে আসি।
এখন নিজেকে একটু হালকা লাগছে। রুম থেকে কারো উচ্চ স্বরে কথা শুনতে পাচ্ছি,তাই রুম থেকে বের হয়ে দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার একমাত্র ননস আর উনার বর এসেছেন।যারা আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন।

আমাকে দেখে আমার ননস এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আর বললেন, কেমন আছো?

আমি:-জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?

ননস:-আল্লাহ রাখছে ভালো।

তারপর উনি আমাকে ছাড়লে, দুলাভাই কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাইয়া ভালো আছেন?

দুলাভাই:-এইতো আল্লাহ রাখছে ভালোই।তো শেষ মেষ এ বাড়ির ব‌উ ই হতে হলো। আসলে কি বলোতো যার রিজিক যেখানে আল্লাহ রেখেছেন সেখানে তাকে যেতেই হবে।

আমি:-জ্বি, ভাইয়া।আপনারা বসুন।
তারপর কিচেনে গিয়ে ভাবির সাথে মিলে উনাদের নাস্তা দিলাম খেতে।

_________

বারোটার সময়,,,,
ঘসেটি বেগম আসেন বাসায়।
উনি আসতেই জায়ান জিজ্ঞাসা করেন,
মিস নীলিমা নিলা আমি নাকি আপনাকে বিয়ে করেছি?

নীলিমা নিলা:-স্যার এসব কি বলছেন!!কে বলেছে এসব কথা?? আমি তো এসব কথা ভাবতেও পারিনা।স্যার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আমাকে বলুন তো কে আপনাকে এসব কথা বলেছে? আমি তাকে থাপরাইয়া জিজ্ঞাসা করবো সে এরকম কথা কোথায় পেয়েছে।

ঘসেটি বেগমের কথা শুনে আমার রাগ মাথায় উঠে গেল। উনার কথা শেষ হতেই আমি বললাম, আপনি আমাকে সেদিন বলেন নি যে এক সপ্তাহ আগে জায়ান আপনাকে বিয়ে করেছে।ইনফেক্ট গতকাল ও কলে বলেছেন আপনি নাকি জায়ানের স্ত্রী মিসেস নীলিমা নিলা।

নীলিমা নিলা:-ম্যাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কখনোই এসব কথা আপনাকে বলিনি।

আমি:-আপনি কি অস্বিকার করতে পারবেন সেদিন আপনি জায়ানের ফ্লাটে যাননি?

নীলিমা নিলা:-ম্যাম আমি এটা অস্বীকার করছি না যে আমি ঐ দিন স্যারের ফ্লাটে যাইনি।তাই বলে এই নয় যে আমি আপনাকে এসব কথা বলেছি।

ঘসেটি বেগমের কথা শুনে আমার খুব রাগ উঠে গেল।তাই খুব রেগে গিয়ে বললাম, আপনি একটা মিথ্যাবাদী মহিলা। এতো কিছু বলে এখন আপনি অস্বীকার করছেন। ইচ্ছে করছে আপনাকে থাপ্পড় দিয়ে গাল দুটো লাল করে দেই,যেন ভবিষ্যতে এরকম মিথ্যা কথা বলার আগে থাপ্পড় গুলার কথা মনে পড়ে।

ঘসেটি বেগম:-স্যার আপনাকে সিনিয়র হিসেবে রেসপেক্ট করি বলে এই অপমানের জবাব দিলাম না।অন্য কেউ হলে এর যোগ্য জবাব দিয়ে দিতাম।

জায়ান কে কথা গুলো বলে হনহন করে হেঁটে বেড়িয়ে চলে গেলেন ঘসেটি বেগম।

এদিকে বাসার সবাই এতক্ষণ সব শুনছিল, ঘসেটি বেগম চলে যেতেই মা বললেন, জায়ান এসব কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
তারপর জায়ান মাকে সবকিছু খুলে বললো।

আর আমি রাগে নিজের রুমে চলে আসলাম। একটু পর জায়ান এসে নাজিফা বলে ডাক দিলেন।

আমি:-আপনার কি মনে হয় আমি সব গুলো কথা মিথ্যা বলেছি?যদি তাই মনে হয়, তাহলে,,,,

জায়ান:-আমি কি একবারও বলেছি তুমি মিথ্যা বলেছো? আমার মাথায় এটাই ডুকছে না মিস নীলিমা নিলা এরকম কথা বানিয়ে কেন বললেন?

আমার মনে হচ্ছে ঘসেটি বেগম কোন ভাবে আমাদের আলাদা করতে চাইছেন, কিন্তু কেন?? আপনার সাথে কি উনার কোন এফে,,,,

পিছনে ঘুরে দেখি জায়ান রুমে নেই। ওয়াশ রুমে গিয়েছেন কারণ পানির শব্দ ভেসে আসছে।

__________

আরো কিছু দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু জায়ানের সাথে আমার সম্পর্ক টা আগের মতোই রয়ে গেছে।

সকাল বেলা আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই উনি অফিসে চলে যান আবার অনেক রাত করে বাসায় ফিরেন।ঐ দিন রাতের ঘটনার জন্য হয়তো আমার সাথে অভিমান করে আছেন। কিন্তু উনার এই অভিমান আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।মুখ ফুটে বলতেও পারি না আমি ও যে উনাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।

জায়ানের বোন আর দুলাভাই যেদিন আমাকে দেখতে যান, তার পর যখন জায়ানের ছবি দেখি সেদিন ই জায়ান কে আমার ভালো লাগে কিন্তু তখন অতো পাত্তা দেই নি ব্যাপার টা তারপর ধীরে ধীরে কখন যেন উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজের কাছেই অজানা। মাঝখানে ঐ ঘসেটি বেগমের জন্য আমাদের দূরত্ব টা বেড়ে গেলো।

এখন সময় রাত সাড়ে এগারোটা, বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। আজকে ঠিক করেছি জায়ান না আসা অব্দি ঘুমাবো না।তাই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ যাবত আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মনে হয় বৃষ্টি আসবে। বলতে বলতেই জুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বাহিরে হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি গুলো স্পর্শ করছি। কিন্তু এতে যেন বৃষ্টি আমাকে আর টানছে,,,,

তাই এক মূহুর্ত দেরি না করে, রুমের সাথে এটাচ ছোট ছাদে চলে এলাম। এসে মনের আনন্দে ভিজতে শুরু করলাম।

কিছুক্ষণ পর ঘাড়ির হর্ন শুনতে পেয়ে নিচে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম জায়ান এসেছেন।
আমি আমার মতোই ভিজছি।

এদিকে জায়ান বাসায় এসে নাজিফা কে রুমে না পেয়ে, বেলকনি ওয়াশ রুমে চ্যাক করে ছোট ছাদের কাছে এসে দেখে নাজিফা কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে।

জায়ান:-নাজিফা এভাবে ভিজতেছো কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে, রুমে চলে আসো বলছি।

আমি জায়ানের কথা শুনছি ঠিকই কিন্তু কোন রেসপন্স করছি না। তারপর জায়ান আর দাঁড়িয়ে না থেকে আমার কাছে এসে কাঁদে হাত রাখে।

আর আমি ঘুরে জায়ান কে জাপটে ধরে কেঁদে দেই, আমার কান্না গুলো বৃষ্টির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

জায়ান:-নাজিফা তুমি ঠিক আছো?

ভালোবাসি জায়ান,,,,,
খুব ভালোবাসি আপনাকে।
আমি যে খুব করে চাইছি আপনার ভালোবাসা। দেবেন কি আমাকে আপনার ভালোবাসা??

জায়ান আমার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে বললেন, আমি যে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম মাই কারেজ।কবে তুমি আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসবে, দিন গুনতে গুনতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম জানো? তবুও বিশ্বাস রেখেছি একদিন ঠিক তুমি আমায় বুঝতে পারবে, আমাকে ভালোবাসবে।এই বলে অজস্র চুমু এঁকে দিতে শুরু করলেন উনি।

“অবশেষে এতো রাতে বৃষ্টির মাঝে দুটি মানুষ সব দুঃখ কষ্ট গুলো কে এক সাইডে রেখে দিলো।দুজন দুজনকে আবদ্ধ করে নিলো দুজনের মাঝে। ভালোবাসা গুলো ধরা দিল তাদের কাছে”।

জায়ান নাজিফা কে কোলে তুলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়, এতোক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে এবং কান্না করায় সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে নাজিফা তাই জায়ান কোলে তুলে নেয় নাজিফা কে।

নামান পুরো শরীল ভেজা, বিছানা ভিজে যাবে।জায়ান:-ভিজার সময় মনে ছিল না?
নাজিফা:-না ছিল না, এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
জায়ান:-তুমি যাও। আমি রুমে চেঞ্জ করে নিতে পারবো।

তারপর নাজিফা বাথরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে চুল গুলো মুছতে থাকে।

জায়ান দেখে গোল্ডেন কালারের সুতি থ্রিপিস পরেছে নাজিফা।ওরনাটা বিছানার উপর রাখা, পিছনের দিকে ভিজে আছে।

জায়ান হাতের তাওয়েল টা সাইডে রেখে ধীরে ধীরে নাজিফার কাছে যায়।আর পিছন থেকে নাজিফা কে জড়িয়ে ধরে,,,,,

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here