সিনেমাটিক #পর্ব–১৪

0
366

#সিনেমাটিক
#পর্ব–১৪
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

জায়ান হাতের তাওয়েল টা সাইডে রেখে ধীরে ধীরে নাজিফার কাছে যায়।আর পিছন থেকে নাজিফা কে জড়িয়ে ধরে,,,,,

নাজিফা:-এসব কি?
জায়ান:-কিছুই না।
নাজিফা:-তাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? ছাড়ুন চুলের পানি গুলো ভালো করে মুছতে হবে।
জায়ান:-এভাবেই থাকো সুন্দর লাগছে।
নাজিফা:-মাথা ব্যাথা করবে, ঠান্ডা লাগবে,জ্বর আসবে তখন??
জায়ান:-তাই???
নাজিফা:-না তা কেন হবে? আমি রাত একটা বাজে মজা করছি আপনার সাথে।
জায়ান:-হুসসসসস

জায়ান নাজিফার হাত থেকে তাওয়েল টা নিয়ে নিজ হাতে খুব যত্ন করে চুলের পানি গুলো মুছে দেয়। তারপর নিজেই নাজিফা কে বেডে শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজেও এসে শুয়ে পড়লো নাজিফার পাশে।

কিন্তু ঘুম নেই তার চোখের পাতায়, থাকবেই বা কি করে চোখে যে তার নেশা লেগেছে।তার কারেজ নাজিফার নেশা।যে নেশা সহজে কাটে না,তাই জায়ান নাজিফার একদম কাছাকাছি চলে আসে। তারপর নাজিফা এবং জায়ান দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ড্রিম লাইটের সূক্ষ্ম আলোয় নাজিফা কে বেশ সুন্দরী লাগছে।জায়ান নাজিফার মুখে আলতো ভাবে ছোঁয়ে দিচ্ছে। কখনো চোখে কখনো গালে শেষ মেষ ঠোঁটে।

ঠোঁটে হাত পরতেই নাজিফা কেঁপে উঠে, সাথে সাথে জায়ানের সাথে মিশে যায় আর জায়ানের বুকে মুখ লুকায়।

“বাহিরে বৃষ্টি গুলো পাল্লা দিয়ে ঝড়ে পড়ছে”।
আর ঘরে দুটি মানুষের মধ্যে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর হয়ে, দুটি মনের এবং দুটি আত্মার মিলন ঘটে।

পরের দিন সকাল বেলা,,,,,
নাজিফা নিজেকে জায়ানের বুকে পায়,যেখান থেকে আর কেউ চাইলেও কখনো আলাদা করতে পারবে না।

“যে মিল বন্ধন আল্লাহ তা’আলা নিজ হাতে লিখে রেখেছেন,তা ছিন্ন করার সাধ্য কার আছে”?

নাজিফার কিছু চুল জায়ানের মুখ আর গলায় পেঁচিয়ে আছে। নাজিফা দেখছে আর হাসছে, জায়ান কে একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে।জায়ান বরাব‌র‌ই সুন্দর আর হ্যান্ডসাম আর আজকে যেন আরো বেশি সুন্দর লাগছে নাজিফার কাছে।

আস্তে আস্তে নিজেকে জায়ানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয় নাজিফা।ফ্লুরে পা দেবে দেখে,,,,,

ইসসসস ব্ল্যাংকেট এর ভিতর থেকে বের হবে কি করে?? নিজের কাছে নিজেকেই লজ্জা লাগছে খুব। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একপাশে ওরনা টা পরে আছে। তারপর ওরনাটা কোন রকম কাজে লাগিয়ে ওয়াশ রুমে দৌড়,,,,

প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসে নাজিফা। এসে দেখে জায়ান এখনো ঘুমিয়ে আছে।এক নজরে তাকিয়ে থাকে জায়ানের দিকে,এক অদ্ভুত রকম ভালো লাগা কাজ করছে জায়ানের মাঝে।

তারপর,,
নিজেকে ড্রেসিন টেবিলের আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল নাজিফা। আজকে যেন তাকে অন্য রকম লাগছে, স্বামীর স্পর্শে বুঝি সব মেয়েদের অন্য রকম লাগে?? সেই অন্য রকম টাই লাগছে নাজিফা কে।।

এক রাত,,,,
এক রাত তাকে অন্য রকম করে দিয়েছে।আজ খুব ইচ্ছে করছে নিজেকে সাজাতে।

লিপস্টিক টা হাতে নিতেই,,,

জায়ান:-একদম নয়,,,

আমি চমকে যাই জায়ানের হঠাৎ কথা বলায়।
নাজিফা:-তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন?সাজা কি নিষেধ??

জায়ান:-হুম,,,, তোমার জন্য নিষেধ। আমার কারেজ ন্যাচারাল বিউটি।আর আমি চাই তুমি সবসময় ন্যাচারাল বিউটি ই থাকো। এসব আলকার্তা মাইট্টার তেল মাখতে হবে না।

নাজিফা:-হোয়াট ইজ আলকার্তা মাইট্টার তেল??? কি বলছেন এসব!! এরকম শব্দ আমি জীবনেও শুনিনি।

জায়ান:-শুনোনি তো কি হয়েছে? এখন তো শুনেছ। এসব আর ব্যবহার করবে না ব্যাস।

নাজিফা:-আগে বলুন,আলকার্তা মাইট্টার তেল এগুলো কি?? তারপর ঠিক করবো ব্যবহার করবো কি করবো না। উনার পাশে বসে কথা টা বললাম।

জায়ান:-আরে এগুলো তুমি চিনবে না। এগুলো গ্রামের বাড়িতে মানুষ তাদের ঘরে দেয়। এগুলো দেখতে ব্ল্যাক কালার।

নাজিফা:-তো কালো এগুলো ঘরে দিলে কি হয়?অন্য কালার দিতে পারে না।

জায়ান:-উফফফ।
মহা বিপদে পরে গেলাম তো, এখন আমি কি করে বুঝবো তোমাকে? ওয়েট মনে পরেছে। তুমি তো নৌকা দেখেছো তাই না?

নাজিফা:-অবশ্য‌ই। কলেজ থেকে ট্যুরে গিয়েছিলাম তখন নৌকা ভ্রমণ ও করেছি।তো এখন কি হয়েছে?

জায়ান:-নৌকার কালার কিন্তু ব্ল্যাক,আর ঐ ব্ল্যাক কালারের এগুলোই আলকার্তা মাইট্টার তেল। এবার বুঝতে পারছো?

নাজিফা:-আচ্ছা বুঝলাম। এবার যান শাওয়ার নিয়ে আসুন। অফিসে যাবেন তো। আবার লেইট হয়ে যাবে।

জায়ান অলস ভঙ্গিতে আমার কাঁধে দূই হাত রেখে বলেন, আজকে একদম অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না, ইচ্ছে করছে সারাদিন তোমার পাশে বসে থাকি।

নাজিফা:-একদম নয়। উঠুন তারাতাড়ি, না হয় কিন্তু পানি ডেলে দিব ঐ দিনের মত।

জায়ান:-উঠতে পারি তবে আমাকে এখন গুড মর্নিং আদর দিতে হবে।

নাজিফা:-কি বলছেন এসব?গুড মর্নিং আদর আবার কি? কোথায় থেকে এরকম শব্দ আপনি আবিষ্কার করেন আল্লাহ জানেন। প্রথমে বললেন আলকার্তা মাইট্টার তেল এখন বলেন গুড মর্নিং আদর। উঠেন বলছি,,,,

জায়ান:-আগে গুড মর্নিং আদর তারপর শাওয়ার,,,,,

নাজিফা:-না,,,,,,,,
এর মধ্যে জায়ান তার নিজের কাজ করে ওয়াশ রুমে চলে গেলেন। বুঝতেই পারছেন কি কাজ করেছেন!!বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে তেজপাতা, আমি কিছু বলতে পারতাম না। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি?????

জায়ান ওয়াশ রুমে যাওয়ার পর ভাবছি আপু কে কল করবো।যেই ভাবা সেই কাজ আপুকে কল করছি কিন্তু আপু রিসিভ করছে না। হয়তো রেগে আছে আমার উপর।

অতঃপর সাত বারের সময় কল রিসিভ হলো।
আসসালামু আলাইকুম।
আপু কেমন আছো?

আপু:-এতোবার কেন কল করছিস? দেখতেই পাচ্ছিস রিসিভ করছি না।

এরকম করে কেন বলছো? তোমার সাথে কথা না বললে কার সাথে বলবো বলো?

আপু:-কি কথা আছে তোর?সতিনের ঘর কিভাবে করছিস এগুলো বলবি?

আপু আগে আমার কথা শুনে নাও তারপর মন্তব্য করো।

আপু:-আচ্ছা কি বলবি বল।

আপু জায়ান আগে কোন বিয়ে টিয়ে করেনি,জায়ানের একমাত্র স্ত্রী আমি।

আপু:-কি বলছিস!! তাহলে ঐ পুলিশ মহিলা সেদিন যে বললো, উনার সাথে জায়ান মুস্তাফি সাহেবের বিয়ে হয়েছে।

ঐ মহিলা একটা মিথ্যাবাদী বুঝছো। গতকাল সবার সামনে উনি অস্বীকার করেন যে উনি নাকি আমাকে এসব কথা বলেন ই নাই। তাহলে বুঝ মহিলা কতোটা খারাপ।

আপু:-হুম, বুঝতে পারলাম। আমার এখন মনে হচ্ছে ঐ মহিলার কোন মতলব আছে বুঝলি। সাবধানে থাকিস।আর আমি এখন নিশ্চিন্ত হলাম,আর খুব খুব ভালো লাগছে। তোদের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে শুনে। মাঝখানে ঐ মহিলা পেচ গুলো লাগালো।

হুম আপু দোয়া কইরো আমাদের জন্য।আর ঐ ঘসেটি বেগম কে ইচ্ছে করছিল গতকাল থাপ্পর দিয়ে গাল গুলো লাল করে দেই।

আপু:-আসলেই ঐ মহিলা একটা ঘসেটি বেগম। এইবার তুই একটা পারফেক্ট নাম দিয়েছিস বুঝলি।

আমি সবসময় ই সবার পারফেক্ট নাম দেই যেমন তোমার দিয়েছে পেতনি হা হা হা হা হা,,,

আপু:-শাকচুন্নি কোথাকার,,, তোকে একবার কাছে পাই তারপর দেখাবো মজা।

আচ্ছা আচ্ছা দেখা যাবে। তাঁবু কি করে আপু?

আপু:-উনি আর কি করবে? সারদিন দুষ্টুমির তালেই থাকে।আর বলে আত্তা আম্মু দাবো (আরেকটা আম্মুর কাছে যাবো)

ওলে বাবা রে,,,মামুনি কে কতোদিন দেখি না। আপু ঢাকায় আমাদের বাসায় বেড়াতে আসো। তাহলে তাঁবু কে আমি দেখতে পারবো।

আপু:-উহু,তোরা চলে আয়। বিয়ের পর তো কোথাও যাওয়া হয়নি তাই তোরা চলে আয়।

আচ্ছা জায়ান কে বলে দেখি, এখন রাখছি আপু আবার কথা হবে “আল্লাহ হাফেজ”।

আপু:-আচ্ছা, “আল্লাহ হাফেজ”।

আপুর সাথে কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে গেলাম। তখন মা আমাকে দেখতে পেয়ে উনার রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন।

শ্বাশুড়ি মা:-ছোট ব‌উ মা এখানে এসে আমার পাশে বসো।

মায়ের কথায় মায়ের পাশে গিয়ে বিছানায় বসলাম। বসার পর মা বললেন, কালকে তোমাদের মধ্যে যে ঝামেলার কথা শুনলাম।তা কিন্তু একদম ঠিক নয়।

জ্বি মা আমি জানি। তবে এতো দিন আপনার ছেলে কে ভুল বুঝে ছিলাম।

শাশুড়ি মা:-আচ্ছা, তাহলে এখন সবকিছু ঠিক করে নিয়েছো তো?

মায়ের প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে বললাম,জ্বী মা, দোয়া করবেন আমাদের জন্য।

শ্বাশুড়ি মা:- আলহামদুলিল্লাহ।
আমার দোয়া সব সময় তোমাদের জন্য আছে মা।

জায়ান:-মা আসবো?
শ্বাশুড়ি মা:-তোর কবে থেকে আবার আমার রুমে আসতে পারমিশন লাগে ছোট খোকা?

জায়ান এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
আসলে তোমারা শ্বাশুড়ি ব‌উ কথা বলছো তো তাই আমি আসলে ডিস্টার্ব হবে কিনা তাই আর কি।

শ্বাশুড়ি মা:-মারবো এক চর, ফাজিল ছেলে।

জায়ান:-হা হা হা হা,,,,

শ্বাশুড়ি মা:-খেয়েছিস তোরা?

না মা খাইনি এখনো। আপনি খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়েছেন তো?

শ্বাশুড়ি মা:-হুম, আমি নিয়েছি।
যাও তোমরা খেয়ে নাও। ছোট খোকা তো আবার অফিসে যাবে।

তারপর মায়ের ঘর থেকে এসে সবাই মিলে খাবার খেয়ে নিলাম।

জায়ান রেডি হয়ে এসে আমার কপালে চুমু এঁকে দেয়। তারপর বলে এবার আমাকে গুড বায় আদর দাও,,,,

উনার এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ।আর বললাম, আপনি তো একটা বজ্জাতের হাড্ডি।
জায়ান:-শুধ তোমারি জন্য, এবার দাও তারাতাড়ি,আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে।

উহু পারতাম না।

জায়ান:-তাহলে আমি ও যাবো না।

আর কি করা উনাকে গুড বায় আদর দিতে হলো। তারপর জায়ান অফিসে চলে যান।

_________

এভাবেই আমাদের মাঝে আনন্দ গুলো ধরা দিল।আর পার হয়ে গেল আরো তিন টা মাস।

জায়ান:-নাজিফা তুমি এখানে?আর আমি সারা বাড়ি খুঁজে চলেছি তোমাকে। এখানে একা একা কি করছো?

জায়ান আসতেই আমি জায়ান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, জায়ান আ,,আব্বু…..

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here