সিনেমাটিক #পর্ব-১৬,১৭

0
305

#সিনেমাটিক
#পর্ব-১৬,১৭
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
১৬

সব কিছু শুনে আব্বু তাজ্জব বনে গেল। আব্বুর মনে হচ্ছে যেন সব কিছু মিরাক্কেল ঘটলো…..

আমি সব কিছু শুনে কি করবো বুঝতে পারছি না, জায়ান আমাকে এতো টা ভালোবাসে??কেউ কাউকে এতো টা ভালো না ভাসলে তার পরিবারের জন্য কখনোই এতো কিছু করে না। আমি যদি আমার ভুল গুলো বুঝতে না পারতাম তাহলে সত্যিই অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলতাম।
আমার ভাবনার মাঝে আম্মু বলে উঠল,,

আম্মু:-দেখলে তো?যাকে তুমি অবহেলা করলে এবং যার চাকরির পদ ছোট বলে তুমি মেনে নাওনি। অথচ আজকের এই বিপদে সেই ছেলেটিই তোমার পাশে দাঁড়িয়েছে।তাই মানুষ কে কখনো টাকা-পয়সা যশ,খ্যাতি দিয়ে বিচার করা উচিৎ নয়।
অনেক সময় রাজপ্রাসাদে যে সুখ পাওয়া যায় না সেই সুখ মাটির ঘরে থেকেও পাওয়া যায়।

তাছাড়া ও তো অনেক ধনী পরিবারের ছেলে। তুমি চাকরির ছোট পদ বলে বিয়েটা ক্যানসেল করে দিয়েছিলে।

আব্বু:-আমাকে এগুলো বলে আর লজ্জা দিও না সাহারা। আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি।
তারপর আব্বু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো নাজিফা জামাই আসবে না এখানে?

আব্বু উনিই আমাকে নিয়ে এসেছেন এখানে, ছুটি নেই বলে একদিন থেকে চলে গেলেন। আমাকে আবার নিতে আসবেন বলেছেন।

আব্বু:-জামাই কে বলিস অনেক দিনের ছুটি নিয়ে যেন আসেন।আর বলিস উনার শ্বশুর কে যেন জামাই আপ্যায়নের একটা সুযোগ দেন।

আব্বু তুমি এভাবে বলো না প্লিজ, উনাকে বললে উনি এমনিতেই আসবেন। তুমি এখন আর কোন কিছু নিয়ে একদম দুশ্চিন্তা করবে না। এখন শুধু সবাই কে নিয়ে আনন্দে থাকবে ঠিক আছে।

আব্বু:-হ্যা রে মা আমার তো এখন আনন্দের দিন, মেয়ে জামাই নাতনি সবাই কে নিয়ে আনন্দে দিন কাটাবো।

আম্মু:-এটা মনে থাকলেই হ‌ইছে, তুমি তো একটু তেই দুশ্চিন্তা করা শুরু করে দাও। তোমাকে নিয়ে আমি আর পারি না।

আব্বু:-আমি কি আর এমনি এমনি দুশ্চিন্তা করি? আমার জায়গায় তুমি থাকলে বুঝতে।

আম্মু:-আচ্ছা এবার হয়েছে। চলো সবাই দুপুরের খাবার খেতে।

তারপর সবাই খাবার খেয়ে নিলাম।
খাবার খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে জায়ান কে কল করলাম।কল দিতে না দিতেই রিসিভ করে নিল।

আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন? আর বাসার সবাই কেমন আছেন?

আপর পাশে জায়ান:- ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ বাসার সবাই ভালো আছেন কিন্তু আমি একদম ভালো নেই গো।

জায়ানের কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে বললাম কি হয়েছে? ভালো নেই কেন?

জায়ান:-আমার ব‌উ কে ছাড়া ভালো থাকি কি করে বলো? আজকে কতো দিন,,,, হয়ে গেল তোমাকে ছাড়া থাকছি। চলে আসো না প্লীজ।

আচ্ছা এই ব্যাপার, আমি কি না কি ভেবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আজকে মাত্র ছয় দিন হলো আর আপনি বলছেন কতো দিন হয়ে গেছে?

জায়ান:-তুমি তো আমায় একটু ও ভালোবাসো না তাই তোমার কাছে মাত্র ছয় দিন। কিন্তু আমি একেকটা দিন কিভাবে পার করছি শুধু আমিই জানি।

আচ্ছা এতোই যদি আমাকে মিস করছেন তো চলে আসছেন না কেন? ছুটি নিয়ে চলে আসুন।আর একটা কথা আমার অনার্স থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সামের তারিখ দিয়ে দিয়েছে। আমি কি এক্সাম দিব?আর দিলেও আমি তো নির্ঘাত ফেল করবো।

জায়ান:-অবশ্য‌ই এক্সাম দিবে, আর যেমন পারবে তেমন ই দিবে। আমি কল রাখার পর থেকে পড়াশোনা করা শুরু করবে।

আমি জানি আমি ঠিক ফেল করবো,তাই শুধু শুধু ফেলের খাতায় নাম লিখানোর দরকার নেই।

জায়ান:-তুমি চাইলে এখনো ও পারবে, অন্তত পাস মার্ক উঠালেও হবে।তা না হলে তোমার এক বছর গ্যাপ যাবে,তাই বলছি কিছু দিন একটু কষ্ট করো, ইনশা আল্লাহ আল্লাহ ভালো কিছু দিবেন।

আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো, দু’আ রাইখেন আমার জন্য।আর হ্যা আপনি এতো গুলো টাকা খরচ করলেন আমাদের জন্য, আপনাকে কিছু বলার ভাষা নেই আমার।

জায়ান:-আমাকে কিছু বলতে হবে না তোমায়। তুমি শুধু সারাজীবন আমার পাশে থেকো, এটাই আমার চাওয়া পাওয়া।আব্বুর ছেলে থাকলে তো আমার মতোই আব্বুর পাশে দাড়াতো। আমি তো আব্বুর ছেলের মতোই তাই না।আর হ্যা এগুলো নিয়ে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।

আচ্ছা আর বলবো না। দুপুরে খেয়েছেন?

জায়ান:- আলহামদুলিল্লাহ খেয়েছি। তুমি খেয়েছো?

আলহামদুলিল্লাহ আমিও খেয়েছি। আচ্ছা এখন রাখি “আল্লাহ হাফেজ”।

জায়ান:-এখনি কিন্তু পড়তে বসবে।
আচ্ছা, “আল্লাহ হাফেজ”।

জায়ান ফোন রাখার পর ব‌ই গুলো একটু নেড়ে দেখলাম কিন্তু এখন একটুও পড়তে ইচ্ছে করছে না।

আজকে সকালে ফাবু কল করে বললো এক্সামের কথা।আর বললো আমাকে কিছু নোটস দিবে,নোটস গুলো পড়লে নাকি আমি অনেক টা কভার করতে পারবো। তখন আমি বলেছি ফাবু কে ও যেন আমাদের বাসায় নিয়ে আসে নোটস গুলো।ফাবু বলেছেন বিকালের দিকে নিয়ে আসবে।

তাই আপাদত আমি একটু ঘুমিয়ে নেই,ফাবু নোটস গুলো দিলে পড়লেই হবে।

আসরের আযান শুনে ঘুম ভাঙ্গল। তারপর ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম।
ফাবু কোথায় আছে তা জানার জন্য ফোন হাতে নিতেই ফাবু পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে। হটাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে চিৎকার করে উঠলাম আমি।

এদিকে ফাবু আমাকে ভয় দেখাতে এসে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আমার চিৎকারে। তারপর দু’জনেই হেসে ফেলি।

ফাবু:-দোস্ত কত্তোদিন পর তোকে দেখছি। কেমন আছিস বল?

আমি:- আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। তুই?

ফাবু:- আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো।জানিস সেদিনের ঘটনা টা আমি আজও ভুলতে পারিনা। আমার জন্য, শুধুমাত্র আমার জন্য তোর জীবন টা নষ্ট হয়ে গেল রে নাজু। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।

আমি:-আরে পাগলি আমার কথা আগে শুন তারপর যা বলার বলিস।
তারপর ফাবু কে সমস্ত কিছু খুলে বললাম।সব কিছু শুনে ফাবু তাজ্জব বনে গেল। তবে খুব খুশি হলো,আর খুশীতে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

ফাবু:-ফয়িন্নি, তুই আমাকে এতো দিন এগুলো বলিস নি কেন?জানিস প্রতি মূহুর্তে আমি কষ্ট পেতাম এই ভেবে যে আমার জন্য তোর জীবন টা নষ্ট হয়ে গেল। এখন সব কিছু শুনে কি ভালো লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
আর জানিস তোদের বিয়ের কিছুদিন পর তোর এস আই আমাকে কল করেছিলেন সরি বলার জন্য। আমি উনার কোন কথা না শুনে উল্টো অনেক কিছু বলে কল কেটে দিয়েছিলাম।

আমার এস আই দুলাভাই নিশ্চ‌ই আমাকে পাগল ভাবছেন,,, তুই কেন যে আমাকে এগুলো আগে বললি না।

আমি:-আরে আমি ই তো কয়েক দিন আগে জানতে পারলাম,ঐ ঘসেটি বেগম যে বানিয়ে বানিয়ে এগুলো আমাকে বলেছে।

ফাবু:-ঘসেটি বেগম??অহহ আচ্ছা ঐ মহিলা। ঠিক বলেছিস ঐ মহিলা আসলেই একটা ঘসেটি বেগম। আমার তো ইচ্ছে করছে ঐ মহিলা কে জুতা পিটা করি। কি সাংঘাতিক মহিলা হলে বানিয়ে বানিয়ে এরকম কথা বলতে পারে।

আমি:-হুম তাই তো।
আচ্ছা এসব এখন বাদ দে। এখন বল তোর খবর কি? বিয়ে করবি না?

ফাবু:-ভাবছি দোস্ত করবো কি করবো না।

আমি:-খুব উৎসুক হয়ে বললাম,কিরে কেউ এসেছে নাকি?ফাবিহা সুলতানা কে পক্ষিরাজ ঘোড়ায় করে নিয়ে যেতে?

ফাবু:-আমার খালামনি দের বাসায় কিছুদিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তো খালামনির
ভাসুরের ছেলে আমাকে দেখে পছন্দ করেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি প্রথমে মানা করে দেই কারণ আমি জানি আমার কথা গুলো শুনলে কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেন না। কিন্তু পরে আমার ব্যাপারে সব কিছু জেনে ও উনি বলেন আমাকেই বিয়ে করবেন।

আমি উনাকে অনেক বুঝাই কিন্তু উনি আমার কোন কথা শুনেন না। উল্টো আমাকে বুঝান যে উনার বোনের সাথে যদি এরকম কিছু হতো তাহলে কি উনার বোন কে কেউ বিয়ে করতো না?আরো কতো কিছু যে বললেন। আমার কোন কথাই শুনলেন না।

আমি:-ভালো মানুষ গুলো এরকম ই বুঝলি।আর তোর উনি কি করেন? এখন বল বিয়ের ইনভাইট কবে পাচ্ছি?

ফাবু:-একটা প্রাইভেট ব্যাংক এ জব করেন।
আর আমি না কিছু দিন সময় নিয়েছি ভেবে দেখার বিয়ে করবো কি করবো না।

আমি:-আচ্ছা সব কিছু ভেবে ঠিক করিস, মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করিস না।তোর যদি ছেলে টাকে পছন্দ হয় বিশেষ করে ভালো একজন মানুষ বলে মনে হয় তাহলে বিয়ে করে নিস।

ফাবু:দো’আ করিস নাজু।

আমি:-আমার দো’আ সবসময় তোর জন্য বরাদ্দ বুঝলি। আচ্ছা এবার আমাকে বুঝিয়ে দে তো নোটস গুলো। আমার খুব ভয় হচ্ছে রে দোস্ত আমি পাস করবো কিনা তাই জানি না।

ফাবু:-চিন্তা করিস না ইনশা আল্লাহ ঠিক পাস করবি এই কয়েকটি দিন একটু মন দিয়ে পড়াশোনা কর তাহলেই হবে।আর তুই তো খারাপ ছাত্রী না।দেক আমি তোকে কিছু টা ধারনা দিয়ে দিচ্ছি সব গুলো তো আর পারবো না।

তারপর ফাবু মেইন মেইন পয়েন্ট গুলো আমাকে বুঝিয়ে দিল।
আর এখনি চলে যাবে বললো, আমি অনেক বার বললাম আমাদের বাসায় আজকে থাকার জন্য কিন্তু বললো থাকতে পারবে না। আন্টি মানে ফাবুর আম্মু নাকি বাসায় একা আছেন তাই থাকতে পারবে না। কি আর করা অবশেষে যেতে দিলাম, আন্টি বাসায় একা না হলে, কোন ভাবেই ফাবুকে যেতে দিতাম না।

_________

অতঃপর রাত দিন এক করে অনেক পড়াশুনা করে তারপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। আশা রাখছি ফেল করবো না। কারণ পরীক্ষা গুলো আমার ততো খারাপ হচ্ছে না।তাই আশা করি ইনশা আল্লাহ আমি পাশ করবো। পড়াশোনার ব্যাপারে জায়ান আমাকে অনেক সাপোর্ট করে চলেছে। মূলত জায়ানের সাপোর্টে আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।জায়ানের মতো স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

“আল্লাহ তা’আলার দরবারে লক্ষ,কুটি শুকরিয়া আদায় করলেও হয়তো কম হয়ে যাবে”।

যাই হোক আজকে শেষ পরীক্ষা।
খুব শান্তি শান্তি ফিল হচ্ছে, এতো দিন পর আমি শান্তি তে একটু ঘুমাতে পারবো। এই পরীক্ষা যে কোন ফাজিল ব্যাটা আবিষ্কার করছে।ঐ ব্যাটা কে যদি একবার হাতের কাছে পেতাম কি যে অবস্থা করতাম আমি নিজেও জানি না। অবশ্য ঐ ব্যাটা হয়তো মরে এখন ভুত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমাদের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের এরকম প্যারাময় জীবন দিয়ে গিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে পরীক্ষার হলে পৌছে গেছি।

_________

পরীক্ষা শেষ করে,
আমি ফাবু আর ফারিয়া কথা বলতে বলতে শিড়িঁ দিয়ে নেমে মাঠে যেই আসলাম,, সামনের মানুষ টাকে দেখে আমার পা থেমে গেল। আমার মতো ফাবু ও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।আর ফারিয়া বলে দোস্ত ছেলে টা তো যাস্ট ওয়াও, আমি ভাবছি কোন ভাবে পটাতে পারলেই কেল্লা ফতে,,,,,

#চলবে……

#সিনেমাটিক
#পর্ব–১৭
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

ফারিয়া বলে দোস্ত ছেলে টা তো যাস্ট ওয়াও, আমি ভাবছি কোন ভাবে পটাতে পারলেই কেল্লা ফতে,,,,,

ব্ল্যাক জিন্স, হোয়াইট সার্ট তার উপর ইন করা।হাতা গুলো ফুল্ড করা,ব্ল্যাক সান গ্লাস,ব্রান্ডের ব্ল্যাক ঘড়ি সব মিলিয়ে জায়ান কে পুরাই অস্থির লাগছে।

ফর্সা মানুষ কে ব্ল্যাক কালার টা খুব সুন্দর মানায় এখন জায়ান কে যেমন টা লাগছে। আমিই আমার বর কে দেখে ক্রাস খেয়ে বসে আছি আর অন্য মেয়েদের কথা কি বলবো।

আমার ভাবনার মাঝে আমার আরো চারটা ফ্রেন্ড আসে তাদের মধ্যে রিতু আর বন্যা বলে দোস্ত ছেলে টাকে দেখ কি অস্তির! আমি তো দেখেই ক্রাস খেয়ে বসে আছি। তারপর তাদের মধ্যে দুইটা ছেলে ফ্রেন্ড বলে,,, এই তোদের কি পেট টা একটু ও ফুলে না?? তোরা দিনে অন্তত একশো বার ক্রাস খাস তাও দেখি সারাদিন খাই খাই করস। কেমনে তোরা এমন হ‌ইলি আল্লাহ জানেন।

ছেলে ফ্রেন্ড দুইটার কথা শুনে,
ফারিয়া,রিতু আর বন্যা পরীক্ষার জিনিস পত্র রাখার ফাইল নিয়ে দৌড়ে যায় মাইর দেওয়ার জন্য।

আর আমি আর ফাবু জায়ানের কাছে এগিয়ে যাই। গিয়ে প্রথমে এক মিনিট দাড়াই তারপর জায়ানের সান গ্লাস টা খুলে হাতে নেই। এদিকে জায়ান আমাকে দেখে উনার ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি জায়ানের ইন করা সার্ট টা,এক টানে ইন করা থেকে খুলে ফেললাম।

ব্যাপার টা আকস্মিক ঘটায় জায়ান কিছুই বুঝতে পারলো না। কিন্তু আমি আমার কাজ করেই যাচ্ছি।

ইন খুলে,জায়ানের চুল গুলো নেড়েচেড়ে অগোছালো করে দিলাম,যার ফলস্বরূপ জায়ানের চুল গুলো কপাল ছুঁয়ে চোখের কাছে চলে এলো।

তারপর ভালো করে লক্ষ করে বললাম এবার পারফেক্ট আছে। জায়ানের হাতের ভিতর হাত ঢুকিয়ে বললাম চলুন?ফাবু আয়।

এই বলে হাঁটতে যাবো কিন্তু জায়ান না হেঁটে বললো এটা কি হলো??

আমি:-যা হ‌ওয়ার তাই হলো।
চোখের পাতা গুলো নেড়ে নেড়ে বললাম, খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি?মেয়েরা এখন আর আপনাকে দেখে ক্রাস খাবে না বলবে না ছেলে টা অস্তির!তাই কষ্ট হচ্ছে??

শেষের কথাটা একটু জোরে বললাম।

জায়ান:-হা হা হা,,,, আমার কারেজ জেলাস ফিল করছে??

আমি:-হ্যা আমি জেলাস ফিল করছি। কিন্তু নেক্সট টাইম যদি আপনি বাহিরে এভাবে বের হয়েছেন তো আপনার বাহিরে বের হ‌ওয়া আমি গোচাবো। কথাটা মাথায় রাখবেন।

এই বলে রাগ করে চলে যাচ্ছিলাম তখন হাতে টান পরে, তাকিয়ে দেখি জায়ান।

জায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার ফ্রেন্ডস গ্যাং হাজির।

আমার হাত জায়ান ধরে আছে দেখে বন্যা আর রিতু মন খারাপ করে নিলো।আর ফারিয়া বলে দোস্ত ছেলে টাকে তুই চিনিস?

ফাবু:-উনি নাজুর বর।আর আমাদের দুলাভাই।

ফাবুর কথা শুনে ওদের তিনজনের ফেইস দেখার মত অবস্থা হয়, আমার খুব ভালো লাগে ওদের এই অবস্থা দেখে , আমার তো এখন কি মজা হচ্ছে। বুঝুক এবার অন্যের বরের দিকে নজর দেওয়ার মজা।

আর আমার বাকি দুই ছেলে ফ্রেন্ড জায়ানের সাথে হ্যান্ড সেক করে পরিচিত হয়।

জায়ান:- গাইস আমি আজকে খুব খুশি, তো সেই খুশিতে আগামীকাল তোমাদের ট্রিস হিসেবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরতে নিয়ে যাবো। যাবে তো?

জায়ানের প্রস্তাবে সবাই খুব খুশি হয়ে বলে এই না হলে আমাদের দুলাভাই,আর আমি চোখ গুলো ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কিসের জন্য আজকে খুব খুশি??

জায়ান:-ঐ টা সিক্রেট।

এই বলে আমার হাত জড়িয়ে হাটা শুরু করে দিলেন। তারপর ক্যাম্পাসের বাহিরে এসে, সবাই কে হালকা কিছু খাওয়ালো।

কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন দ্বীপ যেতে হলে জাহাজে যেতে হবে।তাই জায়ান কাউকে কল করে জাহাজের সিট বুকিং করতে বলে,আর এটাও বলে বিআইপি সিট যেন বুকিং করে। তারপর সবাই কে সকাল ছয়টায় একটা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হতে বলেন,যেন আমরা সাতটায় জাহাজে উঠতে পারি।

অতঃপর সবাই চলে গেলে, আমি আর জায়ান বাসায় আসি। এসে আব্বু আম্মু কে জায়ান সালাম দেয়। সালামের জবাব দিয়ে আব্বু জায়ান কে বুকে জড়িয়ে নেয়। তারপর আব্বুকে জায়ান এতো সাহায্য করেছে এগুলো বলতেই জায়ান বলে,,,প্লিজ আব্বু আপনি এগুলো বলবেন না, আপনার ছেলে থাকলে নিশ্চয়ই আমার মতো আপনার পাশে দাড়াতো তাই না? তাই আমি এগুলো আর শুনতে চাই না।

জায়ানের কথা শুনে বাসার সবাই খুব খুশি হলো। তারপর ভাইয়ার সাথে জায়ানের পরিচয় করিয়ে দিলাম। তাদের মধ্যে এক দিনেই খুব ভাব হয়ে যায়।

এরপরের দিন,,,,
জায়ানের কথায় আকাশি কালারের শাড়ি পরি আমি আর সাথে মেচিং হিজাব।জায়ান ও আকাশি কালারের সার্ট পড়েছেন। ফর্সা মানুষ কে সব কালারেই সুন্দর লাগে,তাই জায়ান কে কেমন লাগছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, আর দুষ্টুমি করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে আমার না এখন একদম যেতে ইচ্ছে করছে না, ইচ্ছে করছে তোমাকে বসিয়ে রেখে অপলক তাকিয়ে থাকি।

আমি:-দুষ্টুমি বাদ দিয়ে চলুন,লেইট হয়ে যাবে।

তারপর সকাল সাতটায় আমরা বেড়িয়ে পড়লাম সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে। সবাই সবার কেবিন বের করে নিয়ে নেয়, কিন্তু আমার এখন আবদ্ধ স্থানে একদম থাকতে ইচ্ছে করছে না তাই জায়ান কে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম।

চারিদিকে বাতাস বইছে এই পরিবেশ টা বেশ ভালো লাগছে।

জায়ান:-আমার কারেজের ভালো লাগছে তো? আমি কিন্তু তোমার জন্য‌ই যাচ্ছি ওখানে। কারণ ওখানে আমি ভার্সিটি লাইফে গিয়েছি আর এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো যাচ্ছি।

আমি:-আপনি গিয়েছেন ওখানে তাহলে অন্য কোথাও নিয়ে যেতেন? আপনার আরো নতুন কিছু দেখা হতো।

জায়ান:-অন্য কোথাও যেতে পারতাম কিন্তু এটা যে আমার কারেজের ইচ্ছে সেই স্কুল লাইফ থেকে।

আমি:-তারমানে আপু এটাও বলে দিয়েছে?যে আমাকে আম্মু স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে সেন্টমার্টিন দ্বীপ যেতে দেয় নি।এই আপু ও না একটা,,,,

জায়ান:-খুব‌ই ভালো আপু। তবে আপু আমাকে কেন সব যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ব্লক করলো সেটাই তো বুঝতে পারলাম না।

আমি:-আসলে আমি বলেছিলাম আপু কে আপু যেন আপনাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে দেয়। আপনার কলিগ মিস নীলিমা নিলা আমাকে ঐসব কথা বলায় আমার খুব রাগ হয় তাই বলেছিলাম।

জায়ান:-বুঝলাম।
তা ম্যাম আমাকে আপনি কবে থেকে এতোটা ভালোবাসতে শুরু করলেন?

আমি:-বলবো না।
তবে বলতে পারি যদি আপনি বলেন গতকাল আপনার খুশির কারণ কি ছিল?

জায়ান:-ব্ল্যাকমেইল করছো?

আমি:-যদি তাই মনে করেন তো তাই।

জায়ান:-আচ্ছা বলছি।
গতকাল আমি উপলব্ধি করতে পারলাম, আমার কারেজ আমাকে কতোটা ভালবাসে।আর ভালোবাসে বলেই অন্য কোন মেয়ে আমার দিকে তাকানো, আমাকে নিয়ে কিছু বলা নিয়ে জেলাস ফিল করছে। এবং আমি যেমন চাই আমি শুধু আমার কারেজ এর সুন্দর্যো দেখবো, ঠিক সেও চায় সে শুধু আমার সুন্দর্যো দেখবে।
এবার বুঝলে???

আমি:-হুম।
তারপর জায়ান আমার দু-গালে চুমু এঁকে দিলেন।

আমি:-কি করছেন? আশেপাশে লোকজন আছে।

জায়ান:-তাতে কি? আমি আমার ব‌উকে আদর করছি।

এই বলে আমাকে নিজের সাথে আরও জড়িয়ে ধরে বসলেন।আমরা ছাদের এক পাশে বসে আছি।আর অন্যান্য পাশে, মাঝে কিছু লোক এবং আমাদের মতো জুটি আছে।

জায়ান:-এবার বলো কবে থেকে আমাকে ভালবাসো?

আমি:-আপনাকে যেদিন ছবিতে প্রথম বার দেখেছিলাম তখন থেকেই ভালো লাগে তবে বিয়ের পর বুঝতে পারলাম আপনাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু ঐ মহিলার জন্য,,,,

জায়ান:-আচ্ছা আনন্দের মুহূর্তে খারাপ কিছু মনে করে মন খারাপ করো না।
আচ্ছা তুমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে জানো?

আমি:-না কখনো জানা হয়নি।

জায়ান:-আচ্ছা আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে তোমাকে কিছু কথা বলছি__

“একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তুমি হয়তো দারুচিনি দ্বীপ নামক সিনেমাটির নাম শুনে থাকবে,যেটি ২০০৭ সালে প্রকাশ করা হয়। সিনেমাটি তৈরি করা হয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ কে কেন্দ্র করে। আসলে এই সিনেমাটি তৈরি করা হয় হুমায়ূন আহমেদ স্যারের দারুচিনি দ্বীপ নামক উপন্যাস অবলম্বনে। পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ। মূলত তখন থেকে এই দ্বিপটি সকলের নজরে আসে।

এই বিশাল সাগরের মাঝে, এই দ্বীপ টি কী করে জেগে উঠলো এই বিষয়ে বেশ কিছুদিন গবেষণা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন স্যার এবং অধ্যাপক মুস্তফা উদ্দিন স্যার। সেই গবেষণা থেকে উঠে আসে দ্বিপ টি প্রায় পাঁচ হাজার বছর দ্বিপ টি টেক নামের মূল ভূমির অংশ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়।এর পরে প্রায় চারশত পঞ্চাশ বছর পরে, বর্তমান প্রায় দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এরপর একশো বছরে জেগে উঠে উওর পাড়া এবং পরবর্তী একশো বছরে বাকি অংশ জেগে উঠে।

জানা যায় দুইশত পঞ্চাশ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এই দ্বিপটি দক্ষিণ-পূর্বে এসে আরব বণিকরা বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এই দ্বিপের নামকরণ করে যাজিকা।পরে অবশ্য পরিবর্তিত হয়ে নারিকেল যিন্জিরা হয়ে যায়। একটু খেয়াল করলে দেখবে এই দ্বিপে বেশ কিছু নারিকেল গাছ রয়েছে। তবে এই দ্বিপের নামকরণ দিয়ে বেশ কিছু মতবিরোধ রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ওয়েব সাইট থেকে জানা যায় ক্রিষ্টেন সাধু মার্টিনের নাম অনুসারে এই দ্বিপের নামকরণ করা হয়।আর ১৮৯০ সালে কিছু মৎস্যজীবী এই দ্বিপে বসতি স্থাপন করে।এর মধ্যে কিছু বাঙালি আর কিছু রাখাইন সম্প্রদায়।পরে অবশ্য ধীরে ধীরে এটি বাঙালি এলাকা হয়ে উঠে”।

এই ছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে কিছু কথা।

আমি:-আচ্ছা এ তো বিশাল স্টরি। তোমার তো বেশ ধারনা হয়ে গিয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে।

জায়ান:-হুম, কিছু টা আর কি।বাই দা ওয়ে তুমি আমাকে তুমি করে বললে?

আমি:-স্লিপ অফ টাং

জায়ান:-যাই হোক, আজকে থেকে ইনফেক্ট এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমাকে তুমি করে সম্বদন করবে।

আমি:-এ তো মহা বিপদে পরে গেলাম।
জায়ান:-হা হা হা হা,,,

___________

অবশেষে চার/পাঁচ ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছালাম সেন্টমার্টিন দ্বীপে এসে। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবো। সেই স্কুল লাইফের স্বপ্ন আমার সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসার। হয়তো জায়ান কে আল্লাহ তা’আলা উছিলা করে পাঠিয়েছেন, আমার স্বপ্ন পূরনের জন্য।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছে সবাই সবার মতো করে ঘুরছে আর আমি আর জায়ান একসাথে।
কিছুদূর যেতেই একটা মেয়ে কে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে তাই জায়ান কে রেখেই আমি দ্রুত এগিয়ে গেলাম। যাকে সন্দেহ করেছিলাম কাছে গিয়ে দেখলাম সেই।

আমি:-তুমি রুহি না? মাসুম সাহেবের খালাতো বোন।

রুহি:-জ্বি। আপনাকে তো চিনতে পারছি না??

আমি:-ভুলে গেলে? আমি নাজিফা শেখ। মনে পড়েছে?

রুহি:-ওহহ আচ্ছা।
এবার মনে পড়েছে আপু। ভালো আছেন আপনি?

আমাদের কথার মাঝে জায়ান আসলো। তারপর রুহি জায়ান কে দেখে বললো আপু উনি কি আপনার হাসবেন্ড??

আমি:-হুম।
রুহি তোমার সাথে কি কেউ এসেছে?

রুহি:-জ্বি আপু। আমার হাসবেন্ড এর সাথে এসেছি।

আমি:-ওহহ আচ্ছা। কোথায় উনি।

রুহি:-ঐ যে কলে কথা বলছে। ধারাও আমি ডাকছি। এই যে শুনছেন?

রুহির ডাকে ওর হাসবেন্ড ঘুরে তাকালো, আমি তো ওর হাসবেন্ড কে দেখে অবাক। কারণ ঐ মানুষ টা আর কেউ নয়, ইন্জিনিয়ার মাসুম সাহেব। উনি এগিয়ে আসলেন আমাদের কাছে। উনাকেও দেখে বুঝা গেল উনিও আমাদের দেখে খুব অবাক হয়েছেন।

উনার আগে আমি কথা বললাম,
আপনি রুহি?? ব্যাপারটা কি ছিল বলেন তো?

মাসুম সাহেব:-আমার কোন ব্যাপার ছিল না, তবে রুহির ছিল। আপনি বিয়ে করে নেওয়ার পর জানতে পারি রুহি আমাকে খুব পছন্দ করে তাই আর অন্য কাউকে খুঁজলাম না। বিয়ে করে নিলাম রুহি কেই।

আমি:-আচ্ছা এই ব্যাপার।
তারপর জায়ান আর মাসুম সাহেব একে অপরের সাথে পরিচয় হয়।আর আমরা চারজন মিলে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি দ্বিপ টি।
কিছুক্ষণ ঘুরার পর আমার ফ্রেন্ড বাহিনী ও যোগ হয়ে বিভিন্ন রকম স্ট্যাইল করে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আর আমি জায়ান কে সাথে নিয়ে পানিতে পা রেখে হাঁটি।হাটার সময় কিছু টা দূরে নারিকেল গাছের কাছে আমার নজর গেল, কয়েক জন লোক দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে একজন দূরবিন তাক করে রেখেছে আমাদের দিকে,,,,,,

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here