সিনেমাটিক #পর্ব-১৮,১৯

0
360

#সিনেমাটিক
#পর্ব-১৮,১৯
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
১৮

আমি জায়ান কে সাথে নিয়ে পানিতে পা রেখে হাঁটছি।হাটার সময় কিছু টা দূরে নারিকেল গাছের কাছে আমার নজর গেল, কয়েক জন লোক দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে একজন দূরবিন তাক করে রেখেছে আমাদের দিকে,,,,,,

জায়ান:-এই ম্যাম এখানে তাকান,,,

জায়ান আমার ছবি তোলার জন্য ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাই ঐ লোক গুলোর ভাবনা বাদ দিয়ে জায়ানের দিকে তাকালাম,আর ও ফটাফট ছবি তোলেই যাচ্ছেন।তাই বললাম কি করছেন এগুলো? এরকম অগোছালো ছবি তোলছেন।

জায়ান:-অগোছালো ছবি বেশি সুন্দর হয়, তুমি সেটা জানো না।

“এই খোলা আকাশের সাথে,দ্বিপের পানির রঙের সাথে তুমি পুরো মিশে গিয়েছ”। তুমি কি সেটা জানো মাই কারেজ??

আমি:-আপনি সেই জন্য‌ই আমাকে আকাশি কালারের শাড়ি পড়তে বলেছেন তাই না??

তারপর জায়ান আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে ঠিক তাই।আর নিজের সাথে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলেন।

আমি:-কাউকে বলি আমাদের সুন্দর করে ছবি তুলে দেওয়ার জন্য??

জায়ান:-আচ্ছা আমি দেখছি ক্যামেরা ম্যান কোথায় আছে। তুমি পানি থেকে এখন চলে আসো। বেশিক্ষণ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

আমি:-পানি থেকে উপরে এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম জায়ানের জন্য।আর এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিবেশ অবলোপন করছি। দেখতে দেখতে খেয়াল করলাম,ঐ সময়ের লোক গুলো এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমিও তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম, দেখছি লোক গুলো পরিচিত কিনা।
লোক গুলো প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে তখন_

জায়ান:-ক্যামেরা ম্যান হাজির।

ফাবু:-আমরাও এসে গেছি।

ওদের কথা শুনে, লোক গুলোর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওদের দিকে তাকালাম আমি। তখন জায়ান বললো এই যে আপনি কি দ্যানে মগ্ন হয়ে ছিলেন?

আমি:-ক‌ই কিছু না। চলো তাহলে ছবি তুলি?
তারপর সবাই মিলে অনেক ছবি তুললাম সাথে মাসুম সাহেব এবং রুহি ও আছে।গ্রুপ ফটো তোলার পর সবাই সিঙ্গেল সিঙ্গেল ছবি তুললাম তারপর জায়ানের সাথে অনেক গুলো কাঁপল পিক নিলাম।

ছবি তোলার মাঝে ঐ লোক গুলো কে দেখতে তাকালাম, অদ্ভুত লোক গুলো আবার সেই নারিকেল গাছের কাছে ফিরে যাচ্ছে। ব্যাপার টা আমাকে খুব ভাবালো। মানে তারা তো এখানেই আসতেছিল তাহলে আবার ফিরে যাচ্ছে কেন??

যাই হোক এগুলো বাদ দিয়ে সবাই খুব হৈই হুল্লোড় করে খুব মজা করছি।

একটু পর জায়ান বললো চলো গাইস সবাই যোহরের নামাজ আদায় করে নিবো।আর মুসাফিরের নামাজ কিন্তু অবশ্যই পড়বে।

জায়ানের কথায় অবাক হয়ে আমরা কয়েকজন এক সাথে জিজ্ঞাসা করলাম মুসাফিরের নামাজ মানে? এটা কি নামাজ? কেন পড়ে এই নামাজ?

জায়ান:-তোমরা জানো না?আচ্ছা তোমাদের বলছি এই নামাজ কেন পড়া হয়।

“সফর ও #কসর নামাজের বিধিবিধান”।

#কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থলথেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে
বের হয়ে তার এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়- (জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ১/৪৩৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৫)।

#সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ এলাকা পেরুলে সফরের বিধান শুরু হয়। শহরের ক্ষেত্রে ওই শহরের করপোরেশনের নির্ধারিত সীমানা
থেকে সফরের সীমা নির্ধারিত হবে। অনুরূপ সফর থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের সঙ্গেই তার সফরের বিধান শেষ হয়ে যাবে- (রদ্দুল মুহতার ২/১২৮)।

#আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগে সফরের দূরত্বের পরিমাপে হবে, অর্থাৎ
স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে- (রদ্দুল
মুহতার ১/৭৩৫)।

#অনুরূপ পার্বত্য এলাকায় সফরের ক্ষেত্রেও সমতলে চলার হিসেবেই হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নীচু ঢালুসহ দূরত্বের হিসাব হবে- (ফাতহুল
ক্বাদীর ২/৩১, আল বাহরুর রায়েক ২/২২৯)।

#মুসাফিরের বিধান__
সফরকারীর জন্য শরিয়তের বিধি-বিধানে কিছু শিথিলতা রয়েছে,যথা চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ
নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে।
মুসাফির ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত সফর অবস্থায় চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গুনাহ হবে। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি
ভুলক্রমে চার রাকাত পূর্ণ করে নেয়,তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না,আবারও পড়তে হবে।
আর ফজর ও মাগরীবের নামাজ পুরাটাই পড়তে হবে।(বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)।

#সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ মুকিম অবস্থায় কাজা করলে ‘কসর’ই আদায় করবে, আর মুকিম অবস্থার ছুটে যাওয়া নামাজ সফরে কাজা করলে তা পূর্ণ আদায় করবে- (হেদায়া১/৮১)

#স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাসের বিধান স্থায়ী আবাসস্থল পরিবর্তন করে অন্যস্থানে মূল আবাস গড়লে স্থায়ী বসবাসের জন্য সেখানে না যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আগের অবস্থানস্থল
মৌলিক আবাসন হিসেবে গণ্য হবে না, এমনকি সেখানে তার মালিকানা জায়গা-জমিন থাকলেও নয়, বরং সেখানেও সফরের সীমানা
অতিক্রম করে গেলে মুসাফিরই থাকবে-
(আল মাবসূত, সারাখসী১/২৫২)

#কোনো জায়গায় ১৫ দিন বা ততধিক অবস্থানের নিয়ত করলে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানা-পত্রসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে
এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে-
(বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪)।

#মহিলারা বিবাহের আগ পর্যন্ত তার বাবার বাড়িতে স্থায়ী আবাস হিসেবে মুকিম থাকবে।
তবে বিবাহের পর যদি স্বামীর বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে মাঝে মাঝে,তাহলে স্বামীর বাড়ি তার
মৌলিক আবাসন হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং বাবার বাড়িতে মুসাফির থাকবে, তাই সেখানে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর পড়বে।আর যদি বাবার বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে, তাহলে তাতার মূল অবস্থানস্থল হিসেবেই
বাকি থাকবে-(আল বাহরুর রায়েক
২/১২৮, রদ্দুল মুহতার ২/১৩১)

#মুসাফিরের সুন্নত পড়ার বিধান মুসাফির ব্যক্তির জন্য তার চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদা
পড়তে হবে-
(এ’লাউস্ সুনান ৭/১৯১,রদ্দুল মুহতার১/৭৪২)।
লেখক : ফতোয়া সংকলন
(সংগৃহীত)

এবার সবাই বুঝলে তো?

ফাবু: বুঝলাম কিন্তু ভাইয়া,,,,
ফাবু এটুকু বলে চুপ করে রইলো,তাই আমি ফিসফিস করে বললাম কিরে কি বলবি?বল।
তারপর ফাবু ও ফিসফিস করে বললো নাজু এই নামাজ কি করে পড়তে হয় তা তো জানি না। তুই একটু ভাইয়া কে জিজ্ঞাসা কর না? আমি বললাম আচ্ছা দাঁড়া আমি জিজ্ঞাসা করছি।

তারপর আমি একটু লজ্জা নিয়ে বললাম, জায়ান তুমি যদি একটু বলে দিতে এই নামাজ কি করে পড়তে হয়। আসলে আমরা না এই নামাজ সম্পর্কে জানতাম ই না।তাই যদি তুমি,,
আমার কথা শেষ না হতেই,,,

জায়ান:-অবশ্য‌ই বলবো, কেন নয়।এর জন্য লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আমরা কেউ ই সব কিছু সম্পর্কে জানি না, এভাবেই একটু একটু করে শিখে নিতে হয়। আচ্ছা মন দিয়ে শোন কিভাবে পড়বে,,,,,,

কসর নামাজের নিয়ম:-

কসর নামাজের নিয়ম হলো কেবল চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ যেমন জোহর, আসর ও এশার নামাজ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত পড়া। তবে মাগরিবের নামায ও বিতির নামায তিন রাকাত পূর্ণই পড়তে হবে। আর মুসাফির অবস্থায় যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায় আর তা বাড়ি ফিরে পড়েন, তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন, তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে। মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম। তবে দুই রাকাত, তিন রাকাত ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।

নিয়তঃ যুহর/আসর/এশারের দুই রাকাত কসর পড়ছি। শুধু তাকবির দিয়ে শুরু করবেন।
কপি,,,

কারো কোন প্রশ্ন আছে??
সবাই বললো জ্বি না,
জায়ান:-আচ্ছা তাহলে চলো জাহাজে গিয়ে যার যার কেবিনে নামাজ পড়ে নিবো।
তারপর জায়ানের কথায় আমরা সবাই জাহাজের দিকে চললাম। যেতে যেতে রুহি বললো আপু আমি না কসর নামাজের নিয়ত টা ভুলে গেছি, তুমি একটু বলে দিবে? তারপর রুহি কে নিয়ত টা বলে দিলাম। বলে যার যার কেবিনে চলে এলাম। এসে ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষে জায়ান বললো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আমি জিজ্ঞেস করাতে বলো এটা বলা যাবে না,পরে দেখতে পাবে।

তারপর সবার নামাজ পড়া শেষ হলে,
পেকিং করে আনা বিরিয়ানি খেয়ে নিলাম সবাই।
খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আবার ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম।

এবং সবাই যার যার মতো আলাদা হয়ে গেলাম, তবে সময় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, এতো সময়ের মধ্যে সবাই যেন জাহাজে থাকে।

আমি আর জায়ান হেটে চলেছি, আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আছে জায়ান। আমার এতো ভালো লাগছে কি বলবো,প্রিয় মানুষের সাথে প্রিয় স্থানে ঘুরার মজাই আলাদা।

আমি পানিতে পা রেখে হাঁটতে চেয়েছিলাম কিন্তু জায়ান আর দিল না।, হাঁটতে হাঁটতে একসময় জায়ানের ফোনে কল আসল।তাই জায়ান বললো তুমি একটু দাঁড়াও আমি কথা বলে আসছি।
আমি বললাম আচ্ছা যাও। তারপর জায়ান একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আর আমি চারিদিকের পরিবেশ দেখছি। দেখতে দেখতে হঠাৎ নজরে পড়ল কিছু টা দূরে নারিকেল গাছের কাছে মনে হচ্ছে আগুন লেগে গেছে।জায়ান কে একবার ডাকলাম কিন্তু জায়ান বললো কথা টা শেষ করে আসছি।

তাই আমি আর থাকতে পারলাম না এগিয়ে গেলাম ঐ খানে। কাছাকাছি যেতেই কয়েক জন লোক ওখান থেকে বেরিয়ে আসলো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই তারা আমার মুখ চেপে ধরে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু আমি আপ্রান চেষ্টা করছি না যাওয়ার। শেষে না পেরে যে লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে আছে সেই লোকটার হাতে কামড় দিলাম।কামড় দিতেই লোক টা আর্তনাদ করে হাত ছেড়ে দিলো, অন্য লোক গুলো ও বরকে গেল। এই সুযোগে আমি দৌড় দিলাম আর জায়ান বলে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু শাড়ির জন্য দৌড়ে বেশি দূর যেতে পারলাম না তার আগেই লোক গুলো আমাকে ধরে মাথায় পেটে যে যেখানে পারলো ইচ্ছে মত কিছু একটা দিয়ে আঘাত করতে থাকলো। আমি আঘাত গুলো একদম সহ্য করতে পারছি না আর্তনাদ করছি কিন্তু আমার আর্তনাদ কেউ শুনছে নাকি তা আমার জানা নেই।

এর অনেকক্ষণ পর আমি কানে শুনছি নাজিফা চোখ খুলো, তোমার কিছু হবে না, আমি হতে দিব না। কথা গুলো শুনতে পাচ্ছি কিন্তু চেষ্টা করেও চোখ গুলো খুলতে পারছি না,,,,,,,

#চলবে……

#সিনেমাটিক
#পর্ব–১৯
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

কথা গুলো শুনতে পাচ্ছি কিন্তু চেষ্টা করেও চোখ গুলো খুলতে পারছি না,,,,,,,

চার/পাঁচ ঘণ্টার জায়গায়,
খুব কম সময়ে নাজিফা কে কক্সবাজার নিয়ে আসে জায়ান। তারপর হসপিটালে ভর্তি করায়।

ভাগ্যের কি পরিহাস,নাজিফা কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য যে স্প্রিড বোর্ড ভাড়া করা হয়, সেই স্প্রিড বোর্ড দিয়ে নাজিফার নিথর দেহ টা ভয়ে আনতে হয়েছে। অথচ নাজিফা সুস্থ থাকলে কি খুশি টাই না হতো।

জায়ান জানতে পারে নাজিফার খুব ইচ্ছে ছিল, তার প্রিয় মানুষের সাথে স্প্রিড বোর্ড দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর। সেই ইচ্ছে পূরণের জন্যই জায়ান স্প্রিড বোর্ড ভাড়া করে এবং স্প্রিড বোর্ড টাকে খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে ছিল।যে ফুল গুলো নাজিফার খুব প্রিয়।

নাজিফা কে ওটিতে নেওয়া হয়েছে,আর জায়ান ওটির সামনে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। রাগে এবং কষ্টে চোখ গুলো অসম্ভব পরিমানে লাল হয়ে আছে।
পাশে বসে ফাবিহা চোখের পানি ফেলে চলেছে।

নাজিফার বাসার সবাই কে ফাবিহা কল করে জানিয়েছে তারা সবাই আসছে।

ফ্ল্যাসব্যাক:-
নাজিফার প্রথম চিৎকার জায়ান শুনতে পেয়ে চারিদিকে খুঁজে নাজিফা কে। তারপর যখন দেখতে পায় নাজিফার সাথে কি হচ্ছে, তখনি দৌড়ে যায়। সেই মূহূর্তে মাসুম সাহেব রুহি এবং নাজিফার সব ফ্রেন্ড রা ও আসে।

সবাই কে দেখে ঘাতক লোক গুলো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু এতো গুলো মানুষের সাথে পেরে উঠেনা।চার জনের মধ্যে দুই জন ঘাতক কে ধরে সবাই মিলে খুব মারে।

আর জায়ান সময় নষ্ট না করে, নাজিফা কে নিয়ে বেড়িয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।যাওয়ার আগে বলে যায়, ঘাতক লোক গুলো যেন পালাতে না পারে। এগুলোর ব্যবস্হা জায়ান পরে করবে। তারপর জায়ান নাজিফা কে কোলে করে স্প্রিড বোর্ডে তুলে, সাথে ফাবিহা ও আসে। যেতে যেতে জায়ান নাজিফা কে অনেক ডাকে কিন্তু নাজিফার কোন সাড়া শব্দ পায় না।

আর এদিকে মাসুম সাহেব এবং নাজিফার ফ্রেন্ড রা ঘাতক লোক গুলো কে বেঁধে জাহাজে করে র‌ওনা হয় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।

বর্তমান,,,
নাজিফার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয় হসপিটালে। নাজিফার আম্মু খুব কান্নাকাটি করছে,আর নাজিফার আব্বু খুব ভেঙে পরেছেন। পরিবারের ছোট মেয়েদের প্রতি সবার অন্য রকম টান,মায়া থাকে ঠিক তেমনি নাজিফা সবার খুব আদরের।ওর কিছু হলে সবাই খুব ভেঙে পরে।

একটু পর নামেরা কাঁদতে কাঁদতে এসে জায়ানের সার্টের কলার চেপে ধরে বলে,, আপনি থাকতে আমার বোনের এই অবস্থা কি করে হলো বলুন?? এই আপনি ওর দায়িত্ব নিয়েছেন। যেখানে আমার বোন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। কোথায় ছিলেন আপনি?

জায়ান মাথা নিচু করে বসে থাকে কারণ কি বলবে? কিছুই যে বলার নেই তার।

নাজিফার আম্মু আর ফাবিহা মিলে জায়ানের সার্টের কলার ছাড়িয়ে নামেরা কে নিয়ে যায়। তখন নামেরা তার আম্মু কে জড়িয়ে অনেক কান্নাকাটি শুরু করে।

অবশেষে,প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওটি থেকে ডক্টর বেড়িয়ে আসেন।ডক্টর বের হয়ে আসতেই জায়ান দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে ডক্টর আমার স্ত্রী ঠিক আছে তো?

ডক্টর বলেন,সরি মি.জায়ান আমরা আপনার বেবি কে বাঁচাতে পারলাম না। আপনার স্ত্রীর পেটে এমন ভাবে আঘাত করা হয়েছে যার ফলে বেবির আঘাত লাগে এবং তা সহ্য করতে না পেরে বেবি

জায়ান:-ডক্টর আপনি কি বলছেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বেবি কে বাঁচাতে পারেন নি মানে?

ডক্টর:-জ্বি।মি.জায়ান আপনার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আর এরকম আঘাতের ফলে বেবির মৃত্যু ঘটে। আর আপনার স্ত্রী এখন বিপদ মুক্ত তবে সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে ‌।

ডক্টরের কথা গুলো জায়ান আর সহ্য করতে পারলো না। এতোক্ষণের জমানো চোখের পানি গুলো জড়ে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লুরে বসে পড়লো। তখন তাঁবু এসে বলে আব্বু তাদোনা না আব্বু,,,,(কাঁদো না)

তাঁবু কে কাছে পেয়ে জায়ান আর নিরব থাকতে পারলো না, তাঁবু জরিয়ে এবার শব্দ করে কেঁদে দিল।

জায়ানের এরকম করুন অবস্থা দেখে নাজিফার আম্মু আব্বু আপু ফাবিহা সবাই কেঁদে দেয়।

তারপর নাজিফা কে ওটি থেকে কেবিনে সিফ্ট করা হয়।

সবাই নাজিফার কেবিনে যেতে চাইলে ডক্টর সাবধান করে দেন কেউ যেন কান্নাকাটি করে শব্দ না করে। তারপর ডক্টরের কথা মতো সবাই নাজিফার কেবিনে যায়, নিঃশব্দে কাঁদলেও শব্দ করে না। কিন্তু সাহারা বেগম মেয়ের এরকম করুন অবস্থা দেখে আর সহ্য করতে পারলেন না উনি ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলেন,তাই উনাকে নিয়ে নাজমুল শেখ মানে নাজিফার আব্বু বাহিরে নিয়ে যান।

তারপর আস্তে আস্তে সবাই কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। শুধু জায়ান থেকে যায়।জায়ান নাজিফার পাশে টুল টেনে বসে, আলতো হাতে নাজিফার হাতটা ধরে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। কিছুক্ষণ পর নাজিফার পেটের দিকে নজর যায় জায়ানের আর ভাবে তিন টা মাস তার অংশ এখানে একটু একটু করে বড় হতে চলেছিল। শুধুমাত্র তার ভুলের কারণে আজকে তাদের অংশ তাদের ছেড়ে বহু দূর চলে গেছে,যেখান থেকে আর কখনোই সে আসবে না।

এর জন্য জায়ান নিজেকেই দায়ী মনে করছে, কারণ জায়ান নাজিফা কে যদি চোখের আড়াল না করতো তাহলে এরকম কখনোই হতো না। কেন সে তার কারেজ কে চোখের আড়াল হতে দিল, না দিলে তো এমন হতোই না। এই অনুতাপে জায়ানের ভিতর টা যেন পুরে যাচ্ছে।

তখন জায়ানের ফোন ভাইবারেট করে উঠলো, জায়ান দেখে কল আসছে।তাই কেবিন থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করলো,অপরপাশের কথা শুনে জায়ান বললো তোমরা ওদের চকরিয়া উপজেলায় নিয়ে যাও আমি আসছি।

তারপর কল কেটে জায়ান কেবিনে ঢুকে নাজিফার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাহিরে চলে আসে।

বাহিরে এসে নামেরা কে বললো, আপু আপনি নাজিফার কাছে থাকবেন প্লিজ। আমি ঐ জানোয়ার গুলার ব্যবস্হা করে আসছি।

এই বলে জায়ান হসপিটাল থেকে চকরিয়া উপজেলার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।

জায়ান চলে যেতেই নামেরা,নাজিফার কেবিনে যায়। বোনের এই অবস্থা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না নামেরা। মাথায় ব্যান্ডেজ করা, হাতের অনেক অংশ রক্ত জমাট বেঁধে আছে এবং গলায় ও কিছু কিছু অংশ লালবর্ন হয়ে আছে। কি করে পারলো ঐ মানুষ রুপি পশু গুলো এরকম করতে? কি এমন শত্রুতা তার বোনের সাথে?অথচ তার বোন জেনে শুনে কখনো কারো ক্ষতি করেনি।

এগুলো মনে মনে আওরাতে থাকে নামেরা। তখন নামেরার বর আসে, এসে বলে কি করে হলো এসব?জায়ান কোথায় ছিল?

নামেরা হাতে ইশারা করে তার বর কে শব্দ করতে বারণ করে, তারপর হাত ধরে কেবিনের বাহিরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তামিম হাসান কে সব কিছু খুলে বলে।সব কিছু শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করে তামিম হাসান।

তারপর জানতে চায় তার একমাত্র শালিকা এখন কেমন আছে?
নামেরা:-ডক্টর বলেছেন এখন বিপদ মুক্ত তবে সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।আর সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো নাজিফা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল,আর আঘাতের ফলে বেবি মিসকারেজ হয়ে যায়।

তামিম হাসান:-কি বলো? তাহলে নাজিফা এই অবস্থায় এতো দূর কেন গেল?ওর একদম যাওয়া ঠিক হয়নি।আর গিয়েছে যখন তখন ওর খুব সাবধান অবলম্বন করা উচিৎ ছিল।

নামেরা:-আরে তুমি সব টা না শুনেই নিজের মতো করে মন্তব্য করে চলেছো, আগে তো সবটা শুন।

তামিম হাসান:-আচ্ছা সরি। এবার বলো, কি ব্যাপার?

নামেরা:-নাজিফা এবং জায়ান সাহেব কেউ ই জানতো না, নাজিফা যে কনসিভ করেছে। জানলে কি আর এতো দূর যেত নাকি।

তামিম হাসান:-আচ্ছা নামেরা তোমার বোন কি এখনো বেবি আছে? কিছু দিন পর গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেলবে,আর ও কিনা এতো বড় ভুল কিভাবে করতে পারলো?

নামেরা:-জানো‌ই তো ওর এতো দিন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। হয়তো পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় খেয়াল করেনি। আমার না আর এসব কথা একদম ভালো লাগছে না। তুমি তাঁবু কে নিয়ে বাসায় যাও।ও এখানে থেকে অনেক বিরক্ত করছে।

তামিম হাসান:-কোথায় তাঁবু? আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।

নামেরা:-ফাবিহা তাঁবু কে নিয়ে গেছে। কাছেই কোথাও হবে, তুমি নাজিফার কাছে বসো আমি তাঁবু কে নিয়ে আসছি।

এদিকে জায়ান চকরিয়া উপজেলায় এসে ঘাতক লোক গুলোর বিরুদ্ধে কেইস করে এবং কেইস টা নিজে সল্ভ করবে বলে পারমিশন নেয়।

তারপর লোক গুলো কে জেলে ঢুকিয়ে প্রথমে ইচ্ছে মতো নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।পিটাতে খুব খারাপ অবস্থা করে ফেলে লোক গুলোর তবুও থামে না জায়ান,নাদিফার সব কষ্ট গুলো যেন সুদে আসলে ওশুল করে নিচ্ছে। এবং সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করছে কে ওদের পাঠিয়েছে? কিন্তু এতো মাইর খাওয়ার পর ও লোক গুলো মুখ খুলছে না যার ফলে জায়ানের রাগ গুলো যেন দ্বিগুন, তিনগুণ, চারগুণ করে বেড়েই চলেছে।

জায়ানের এরকম অবস্থা দেখে অন্যান্য পুলিশ কনস্টেবল রা গিয়ে জায়ান কে আটকায়।

কনস্টেবল:-স্যার করছেন কি?মরে যাবে তো।
জায়ান:-এরা মুখ না খুললে আমি মেরেই ফেলবো। আমাকে আটকাবে না।

জায়ান ওদের কথা শুনছে না বলে, লোক গুলো থেকে একটু দূরে জায়ান কে নিয়ে এসে একজন বললেন স্যার ব্যাপার টা শান্ত হয়ে ম্যানেজ করতে হবে। এরা মরে গেলে আপনি আসল স্ক্রাইম কে ধরতে পারবেন না উল্টো আরো ভুগান্তিতে পরতে হবে।তাই বলছি মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করুন। এদের কে রিমান্ডে দিয়ে দিন তাহলেই দেখবেন সুর সুর করে সব কিছু বলে দিবে।
জায়ান কথা গুলো ভেবে দেখলো কনস্টেবল আকাশ ঠিক ই বলেছে।তাই লোক গুলো কে বললো তোদের মাইরে কাজ না হলে রিমান্ডে দিব, দেখবো এবার কি করে তোরা মুখে তালা ঝুলিয়ে রাখিস।

তারপর ঘাতক লোক গুলো কে জেলে বন্দী করে রেখে জায়ান আবার হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে, তবে যাওয়ার আগে বলে যায় এগুলা কে যেন এক ফোঁটা পানি ও দেওয়া না হয়,যতক্ষন না পর্যন্ত এরা মুখ খুলছে।

এদিকে নাজিফার সব ফ্রেন্ড রা এবং মাসুম সাহেব এবং রুহি সবাই সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ফিরে এসে,নাজিফা কে হসপিটালে এসে দেখে যায়।তখনো নাজিফার সেন্স ফিরেনি।

জায়ান হসপিটালে এসে,নাজিফার পরিবারের সদস্যদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়, তবে তারা যাওয়ার আগে সবাই কে বলে দেয় নাজিফা কে যেন বেবির কথা জানানো না হয়,,,,,,

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here