সিনেমাটিক #পর্ব-২২,২৩

0
322

#সিনেমাটিক
#পর্ব-২২,২৩
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
২২

আরিফ চাচা:-মনিমা তুমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলে, ঘাতকদের আঘাতের ফলে বেবি টা মারা যায়…..

আরিফ চাচার কথা শুনে আমার হাত থেকে ছবির এলবাম টা পরে গেল। তারপর নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে চাচা কে বললাম, চাচা আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো? আমাকে তো এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলেনি এবং জায়ান ও না।

আরিফ চাচা:-মনিমা তুমি কষ্ট পাবে বলেই কেউ তোমাকে কিছু বলেনি। আমার মনে হলো ব্যাপারটা তোমাকে জানানো উচিৎ কারণ সন্তান যে তোমার ছিল, এতো বড় সত্যিটা না জানানো টা উচিৎ নয় তোমাকে। আচ্ছা মনিমা আমি এখন যাই, তুমি কিন্তু আমার কথা কাউকে বলো না।

চাচা চলে যেতেই আমার বুক ফেটে কান্না আসতে শুরু করলো। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না আমার বেবি,,, আমার বেবি যে কিনা আমার আর জায়ানের অংশ,ও আসতে চলেছিল আমাদের মাঝে। ঠিক তাঁবুর মতো আদৌ আদৌ সূরে আমাকে আম্মু আর জায়ান কে আব্বু বলে ডাকতো। আমি আর নিজের আঘাত গুলো সহ্য করতে পারলেও এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না। আমার বেবি আর নেই যে কিনা ছোট ছোট পা দিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতো, ছোট ছোট হাত গুলো দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতো। তাঁবুর মতো আমার সারা মুখে পাপ্পি দিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিত। আমি কি করে মানবো আমার বেবি আর নেই??

ফ্লুরে বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম এবং ছবির এলবাম টা খুলে দেখতে লাগলাম কারণ এই ছবি গুলো যখন তুলা হয়েছে তখন তো আমার বেবি আমার গর্বে ছিল। আমার কান্না শুনে সবাই দৌড়ে আসলো আমার রুমে এবং মা আর ভাবিরা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো কি হয়েছে আমার? আমি কেন কান্না করছি। কিন্তু আমি কারো কথার উত্তর দিচ্ছি না,শুধ আমার বেবি, আমার বেবি বলে কেঁদেই চলেছি। অনেকক্ষন যাবত সবাই মিলে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করলো শেষে না পেরে জায়ান কে খবর দিল বড় ভাবি।

ঘন্টা খানেক পর জায়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো অফিস থেকে।জায়ান আসলে ওর ইউনিফর্ম এর কলার চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম আমার বেবি কোথাও?বলো আমার বেবি? কোথায় ফেলে এসেছো ওরে?বলো।
আমার কথা শুনে জায়ান বললো কে বলেছে তোমাকে এসব কথা?বলো কে বলেছে? আমি বলেছিলাম না তোমাকে এ ব্যাপারে যেন জানানো না হয় তাহলে কে বললো এসব??

আমার আর জায়ানের কথা শুনে বাসার সবাই কিছুই বুঝতে পারলো না। কারণ তাদের ও জানানো হয় নি।

আর আমি জায়ানের কথার উত্তর না দিয়ে কেঁদেই চলেছি।তাই জায়ান ওর বুকে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে নিল। তখন মা বললেন জায়ান আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, ছোট ব‌উ মা কার বেবির কথা বলছে? তারপর ভাবিরা ও জানতে চাইলো। সবার প্রশ্নে জায়ান আর চুপ করে থাকতে পারলো না,তাই সবাই কে সবটা খুলে বললো।

জায়ানের কথা শুনে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল কিন্তু মা খুব কষ্ট পেল কারণ তার বংশধর আসতে চলেছিল কিন্তু সে আর নেই, কথাটা মা মানতে পারলেন না। মায়ের চোখের কোণে পানি চলে আসলো তাই মা এখানে আর না থেকে চলে গেলেন নিজের রুমে।

তারপর মেজ ভাবী বললেন নাজিফা তুমি কি করে পারলে, এই সময়ে দেই দেই করে এতো দূর চলে যেতে? তখন বড় ভাবি বললেন মেজ শুনলি তো ছোট বুঝতে পারেনি ও যে কনসিভ করেছিল।মেজ ভাবী বললেন ভাবি নাজিফা কি ছোট নাকি যে বুঝতে পারেনি?

মেজ ভাবির কথা শুনে জায়ান খুব রেগে যায়, রেগে বলে তোমরা চুপ করবে প্লিজ।এ জন্যই আমি তোমাদের কিছু জানাতে চাইনি। দেখতে পাচ্ছো মেয়েটার অবস্থা তার পরেও কি করে পারছো এসব বলতে?
জায়ানের কথায় মেজ ভাবী বললেন এখন আর কেঁদে কেটে নেকামো করলে কি হবে?যা হ‌ওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। এই বলে মুখ বাকা করে চলে গেলেন।

মেজ ভাবী চলে যাওয়ার পর বড় ভাবি বললেন জায়ান জানোই তো মেজ টা এরকমই।ওর কথা বাদ দিয়ে তুমি বরং নাজিফা কে সামলাও।

তারপর ভাবি চলে যাওয়ার পর জায়ান আমাকে জড়িয়ে রেখেই বুঝাতে লাগলো কিন্তু আমি কেঁদেই চলেছি। তখন আবার জায়ান বললো এই বোকা মেয়ে আল্লাহ তা’আলার জিনিস আল্লাহ তা’আলা নিয়ে গিয়েছেন তার জন্য যদি তুমি এভাবে কান্নাকাটি করো তাহলে তো আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হবেন তাই না? তখন আমি কেঁদে কেঁদেই বললাম জায়ান ও আমাকে তাঁবুর মতো আম্মু বলে ডাকতো আর তোমাকে আব্বু। আমি কি করে ভুলবো এগুলো?

জায়ান:-আল্লাহ চায় তো আমরা আবার বাবা মা হবো। তুমি কেঁদো না প্লিজ।
তারপর আমার পেটে হাত বুলিয়ে জায়ান বললো আবার আমার কারেজের এখানে আরেকজন ছোট কারেজ আসবে। তখন তোমার কষ্ট গুলো ছোট কারেজ সব ভুলিয়ে দেবে।

জায়ানের কথা শুনে উঠে বসলাম আমি, তার পর জায়ান কে বললাম তুমি সত্যি বলছো? ছোট কারেজ আসবে?

জায়ান:-ইনশা আল্লাহ আসবে,যদি তুমি কান্নাকাটি না করে আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করে আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করো তাহলে ছোট কারেজ আসবে।আর যদি এভাবে কান্নাকাটি করতে থাক তাহলে আসবে,,,,

জায়ান কথাটা শেষ করার আগেই আমি ওর মুখে হাত দিয়ে আটকে দিয়ে বললাম এরকম কথা বলো না প্লিজ?

জায়ান:-তাহলে কান্না বন্ধ করো।

আমি:-এই দেখ আমি আর কাঁদছি না।

তারপর জায়ান গুড গার্ল বলে আমার গালে লেগে থাকা পানি গুলো মুছে দিলো, এবং আমার কপালে গালে অজস্র চুমু দিয়ে বললো এবার আমার গুলো দাও, না করলে কিন্তু শুনবো না। কি করা আমাকে ও দিতে হলো।
পরে আমাকে ফ্লুর থেকে উঠিয়ে অনেক সময় নিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো নিজের সাথে। আমি ও চুপটি করে ওর বুকে জড়িয়ে র‌ইলাম, আমার কাছে মনে হয় এ যেন পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির স্থান। এখানে থাকলে আমি সব কিছু ভুলে যাই। কতোটা শান্তি অনুভব হয় বলে বুঝাতে পারবো না।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই জরিয়ে র‌ইলাম, তার পর জায়ান বললো কি ম্যাম এভাবেই থাকবেন নাকি সারাদিন? তখন আমি আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললাম হুম।জায়ান হেসে বললো তাহলে আপনার চাকরি করবে কখন? আমি বললাম জানি না।

জায়ান:-তাই? তাহলে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসে তোমাকে সারা দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা জড়িয়ে ধরে বসে থাকি?
আমি এবার ও বললাম জানি না।
জায়ান:-আমাকে না সত্যি সত্যি অফিসে যেতে, আমাকে এখন যেতে দাও প্লিজ।
কিন্তু না আমি এখন জায়ান কে কিছুতেই যেতে দিব না তাই বললাম উহু, এখন কোথাও যাবে না।
জায়ান:-তাহলে কি করবো?

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জায়ান বললো, আচ্ছা আমার কারেজের কি এখন অন্য কিছু চাই?অন্য কিছু টা কি দেব?

আমি এবার ও বললাম জানি না।
জায়ান:-তার মানে আমার কারেজের সেই অন্য কিছু টা এখন চাই। তাইতো বলছে জানি না।

আমি এবার জায়ানের কথায় লজ্জায় পরে গেলাম,আর তাই ওকে ছেড়ে দিয়ে দু’হাতে মুখ ডেকে নিলাম।আর জায়ান রুমের দরজা বন্ধ করে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।১৬৭

তারপর আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল।

তারপর,,,,
তারপর কি হয়েছে বলতে হবে?????
না বাবা আমি বলতে পারবো না। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি ?
বাকি টা তোমরা বুঝে নাও……

___________

চলে গেল আরো কয়েকটি মাস।মা আমার উপর আর রেগে নেই, সেদিনের পর আমাকে অনেক বুঝিয়েছেন উনি। বলেছেন এখানে তো তোমার কোন দোষ নেই,অতিত চলে গেছে এখন বর্তমান নিয়ে ভাবো এবং ভবিষ্যত কিভাবে সুন্দর করা যায় তার পরিকল্পনা করো।
সেদিন মায়ের ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছিলাম, মা আমাকে কি ইঙ্গিত করেছেন।

তাই আজ খুব সতর্কতা অবলম্বন করে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে চলেছি,,,,,,

#চলবে…..

#সিনেমাটিক
#পর্ব–২৩
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

তাই আজ খুব সতর্কতা অবলম্বন করে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে চলেছি,,,,,,

একদিন একদিন করে ক্ল্যান্ডারের তারিখ দাগ কেটে রাখছি আর অপেক্ষার দিন গুলো গুনছি। আজকে সকালে বড় ভাবি কে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম,ডক্টর প্রেগন্যান্সির টেস্ট করান। আলহামদুলিল্লাহ টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।আর এখন রিপোর্ট হাতে নিয়েই বসে আছি রুমের মধ্যে। বাসার সবাই খুব খুশি,বড় ভাবি তো ডক্টরের চ্যাম্বার থেকে আসার পথেই মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। বাসায় এসে মাকে খবর টা দিতেই মা খুশি হয়ে তার গলা থেকে একটা সোনার চেইন খুলে আমাকে পরিয়ে দিলেন। মেজ ভাবি খবর টা শুনে খুশি হলেও মা আমাকে উপহার দেওয়া টা পছন্দ করলেন না, উনার মুখ দেখেই তা বুঝতে পারলাম।

যাই হোক, এখন জায়ানের অফিস থেকে ফেরার পালা।জায়ান কে এ ব্যাপারে কিছু বলিনি শুধু বলেছি আজকে যেন তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে।জায়ান বলেছে চেষ্টা করবে,যত দ্রুত সম্ভব আসার। খবর টা শুনে জায়ান কিরকম রিয়েক্ট করে সেটা দেখার আশায় বসে আছি।

আহত হয়ে হসপিটাল থেকে আসার পর থেকে জায়ান আমাকে কোথাও যেতে দেয় নি। আজকে ভাবি কে নিয়ে বের হয়েছি তাও জায়ান কে না জানিয়ে। তবে মাকে বলে গিয়েছিলাম যে ডক্টরের কাছে যাচ্ছি।তাই মা নিষেধ করে নি, তবে ভাবি কে সাথে নিয়ে যেতে বলেছিলেন।

জায়ান বলেছে কোথাও যেতে হলে জায়ান নিজে নিয়ে যাবে।তাই আমিও কোথাও যেতে জোর করিনি।
এখন যাই শাওয়ার নিয়ে এসে নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেতে হবে তা না হলে জায়ান কল করে যদি শুনে আমি খাইনি, তার জন্য আবার বকবে।

যেই ভাবা সেই কাজ, চলে গেলাম শাওয়ার নিতে। খুব তাড়াহুড়ো করে এক ঘন্টার জায়গায় ত্রিশ মিনিটে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম কারণ এখন বেশি সময় পানি ইউজ করা ঠিক হবে না। তারপর নামাজ পড়ে উঠতেই মেজ ভাবি ডেকে নিয়ে গেলেন খাবার খেতে। খাবার খেতে একদম ইচ্ছে করছে না তাও জোর করে কিছুটা খেয়ে রুমে চলে এলাম। আজকে কয়েক দিন যাবত ই এরকম টা হচ্ছে, খাবার মুখে দিলেই কেমন গা গুলিয়ে ওঠে। আমার পছন্দের খাবার গুলো ও খেতে পারি না এবং মাথা ঘোরায়। প্রেগনেন্সির আর কিছু লক্ষণ দেখা দেওয়ায় আজকে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তারপর তো আমার সন্দেহ টাই ঠিক হয় আলহামদুলিল্লাহ।

রুমে এসে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি জায়ান দু’বার কল করেছিল,নিশ্চই আমি দুপুরে খেয়েছি কিনা তা জানতে কল করেছে।তাই কল ব্যাক করলাম। রিং হ‌ওয়ার সাথে সাথেই কল রিসিভ হলো মনে হচ্ছে ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিল।

আসসালামু আলাইকুম।
জায়ান:- ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কেমন আছো? কি করো?

(জায়ানের একটা অভ্যাস অফিসে থাকা কালীন যত বার কল করবে ততোবার ই জিজ্ঞাসা করবে কেমন আছো? প্রথম প্রথম আমার কাছে কেমন জানি লাগতো কিন্তু এখন শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখন আমি ও জিজ্ঞাসা করি জায়ানের মতো।)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?

জায়ান:- আলহামদুলিল্লাহ আমার কারেজ ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকি। দুপুরে খাবার খেয়েছো?

আমি:-আলহামদুলিল্লাহ খেয়েছি। তুমি খেয়েছো?

জায়ান:-কাজের চাপে এখনো খেতে পারিনি তবে খাবো একটু পর।

আমি:-কি বলো? তিনটার উপরে বাজে এখনো খাওনি। এখন ফোন রেখে খেয়ে নাও।আর হ্যা তাড়াতাড়ি কিন্তু বাসায় আসবে। আল্লাহ হাফেজ।

জায়ান:-ইনশা আল্লাহ চেষ্টা করবো। আল্লাহ হাফেজ।

জায়ানের সাথে কথা বলে চোখে ঘুম ঘুম অনুভব করলাম তাই দেরি না ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর ঘুম থেকে উঠে আসর নামাজ পড়ে ড্রয়িং রুমে গেলাম। যেখানে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি ও তাদের সাথে যোগ দিলাম, তখন তরি দৌড়ে এসে আমাকে বললো কাকিমা আমাদের বাসায় নাকি ছোট বেবি আসবে। আম্মু আমাকে বলেছে, কাকিমা আমি ওর সাথে সারাদিন দিন খেলবো।তরির কথা শুনে জুবায়ের এসে বললো আমি খেলবো ছোট বেবির সাথে। আপুর সাথে খেলতে দিব না আমি, ছোট বেবি শুধু আমার সাথে খেলা করবে।

ব্যাস লেগে গেল দুজনের মধ্যে ঝগড়া, একজন বলে ছোট বেবি আমার সাথে খেলা করবে তো আরেক জন বলে না ছোট বেবি আমার সাথে খেলা করবে। দুজনের ঝগড়া থামাতে আমি ওদের কাছে এনে আমার দুপাশে দুজন কে বসিয়ে বললাম, ছোট বেবি তো একজনের সাথে খেলা করবে না। আমার কথা শুনে দুজনেই চিন্তায় পরে গেল। এবং দুজনেই বললো তাহলে কাকিমা ছোট বেবি কার সাথে খেলা করবে? তখন আমি বললাম, ছোট বেবি তার আপু এবং ভাইয়া দুজনের সাথেই খেলা করবে। কারণ ছোট বেবি তার আপু এবং ভাইয়া দুজন কেই ভালোবাসে, এখন দুজন কেই যেহেতু ভালোবাসে সেহেতু এক জনের সাথে তো আর খেলা করতে পারবে না, না হয় অন্য জন মন খারাপ করবে তাই ছোট বেবি তোমাদের দুজনের সাথেই খেলা করবে। ঠিক আছে?

এবার আমার কথা শুনে দুজনেই বললো ঠিক আছে তো ছোট বেবি আমাদের দুজনের সাথেই খেলা করবে।
তারপর আরিফ চাচা আমাদের জন্য গরম গরম পাকোড়া বেজে আনলেন। পাকোড়া গুলো সস দিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগছে।

তারপর বড় ভাবি আর মেজ ভাবি কিছু টিপস দিলেন এ সময় কিভাবে চলাফেরা করবো, কি করবো আর কি করবো না।

পরে মাগরিবের আজান হতে সবাই সবার রুমে চলে আসলাম, নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ পড়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইলাম, আমার ভালো লাগার স্থানের মধ্যে একটা হলো বেলকনিত। যেখানে রাতের বেলা ও আকাশ দেখতে পাওয়া যায় এবং আকাশের তারা গুলো গুলোর মিটি মিটি আলো অবলোকন করা যায়।

এদিকে জায়ান বাসায় আসতেই,জায়ানের ভাবিরা জায়ানের মুখে মিষ্টি ডুকিয়ে দিল।আর বললো,দেবরজি আমরা তো নিজেরাই মিষ্টি এনে খেয়ে নিলাম এখন আপনি আমাদের ট্রিট দিন।জায়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো কিসের মিষ্টি?আর ট্রিট দেওয়ার কারণ তো আগে বলো। তখন ভাবিরা বললো দেবরজি আপনি বাবা হতে চলেছেন, এখন এই খুশিতে আমাদের ট্রিট হিসেবে বসুন্ধরা সিটিতে শপিং এ নিয়ে যেতে হবে।জায়ান এরকম একটা খুশির খবর শুনে, তার ভাবিদের বলে দিল ঠিক আছে তাই হবে। এই বলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।

জায়ান রাজি হয়ে যাওয়ায় ভাবিরা তো সেই খুশি,আর মেজ ভাবি তো তার রুমে এসে লিস্ট করা শুরু করে দিলো কি কি শপিং করবে।

আর জায়ান রুমে এসে নাজিফা কে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখে নাজিফা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তখন জায়ান পিছন থেকে নাজিফা কে জড়িয়ে ধরলো। নাজিফা না দেখেই বুঝতে পারলো মানুষ টা কে, এতো দিনে তার ছোঁয়া এবং শরীরের গ্রান সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছে নাজিফা তাই কিছু না বলে স্বামীর পবিত্র ছোঁয়া অনুভব করছে। আর জায়ান বললো, আমার ছোট কারেজ কি সত্যি আসছে?

তখন আমি ছোট করে বললাম হুম। আমার উওর শুনে জায়ান আমাকে ছেড়ে,নিচূ হয়ে আমার পেটে অসংখ্য চুমু এঁকে দিলেন। তখন আমি বললাম আপনি খুশি তো? আমার কথা শুনে জায়ান বললো এটা কোন প্রশ্ন হলো? জানো নিজেকে আজকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।

আর এই সুখ টা আমি তোমার পেয়েছি মাই কারেজ।জায়ানের খুশি দেখে আমার খুশি গুলো ও যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল।

জায়ান এখনো ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় আছে,ব্যাপার টা খেয়াল হতেই ওকে বললাম আগে ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে আসো। কিন্তু ও বলে এখন তোমাকে ছেড়ে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না।তাই জোর করে ঠেলে,টি-সার্ট আর ট্রাউজার হাতে ধড়িয়ে দিয়ে বাথরুমে পাঠালাম। এরপর কিচেনে গিয়ে আরিফ চাচা কে বলে জায়ানের জন্য কিছু নাস্তা নিয়ে আসলাম। এসে দেখি জায়ান ফ্রেস হয়ে চলে এসেছে। অন্যান্য দিন খুব সময় নিয়ে ফ্রেশ হয় আর আজকে এতো তাড়াতাড়ি আসাতে বললাম ব্যাপার কি আজকে এতো তাড়াতাড়ি?

জায়ান:-অন্যান্য দিন থেকে আজকে সব কিছুই অন্য রকম তাই আমার সময় টা ও অন্য রকম।

জায়ানের এরকম কথায় না হেসে পারলাম না। হাসতে হাসতে জায়ানের ইউনিফর্ম গুলো বেলকনিতে নিয়ে ছড়িয়ে দিলাম। তারপর রুমে আসতেই জায়ান আমাকে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে আমার গলায় একটা খুব সুন্দর লকেট সহ একটা সোনার চেইন পড়িয়ে দিল।আর মায়ের দেওয়া চেইন টা খুলে রেখে দিল। শুধু তাই নয় একে একে হাতে চুড়ি,কানে দুল এবং নাকের ফুল সব পরিয়ে দিল।যদিও মায়ের দেওয়া সব গুলোই পরে ছিলাম আমি। তাই জায়ান কে বললাম এগুলো আনার কি দরকার ছিল মা তো অনেক গহনা দিয়েছে।
তখন জায়ান হাতে রিং পরাতে পরাতে বললো, মা দিয়েছে আমি তো তোমাকে আজ আব্দি কিছু দেইনি। আসলে আমি না এতো একদম ভুলে গিয়েছিলাম তার জন্য সরি।

আমি বললাম আরে পাগল এর জন্য সরি বলার কিছু নেই। তুমি জানো এসব গয়না ঘাঁটি নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।

জায়ান:-তবে ড্রেস আর জুতা নিয়ে আছে, তাই তো?

জায়ানের কথা শুনে হেসে বললাম হুম তাই।

জায়ান:-আমি জানি এই জন্যই গহনার সাথে এগুলো ও আনতে ভুলিনি।

তাকিয়ে দেখলাম বেশ কিছু শপিং ব্যাগ,তাই জিজ্ঞাসা করলাম কি এগুলো? তখন জায়ান বললো খুলেই দেখো। তারপর ব্যাগ গুলো খুলে দেখলাম, অনেক গুলো ড্রেস।গুনে দেখি পাঁচ সেট ড্রেস এবং পাচ সেট জুতা। এগুলো দেখে প্রথমে খুশি হলেও পরে আমার খুশি উরে গেল।জায়ান আমার অবস্থা দেখে বললো কি হয়েছে তোমার? এগুলো কি পছন্দ হয়নি?…….

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here