সিন্দুক রহস্য,পর্ব ৪

0
312

#সিন্দুক রহস্য,পর্ব ৪
#শেলী ভট্টাচার্য

আমরা যখন ঘোষালদের পেল্লাই বাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছলাম, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে রমেন বাবু বললেন “বাড়িটা আমাদের দুভাইয়ের মধ্যে অঘোষিত ভাগ হয়ে আছে। উপরতলাটা দাদার আর নিচটা আমার। উপরের তিনটে বেডরুমের একটাতে দাদা, বৌদি; আর আরেকটাতে বাবা ছিল। আরেকটা ফাঁকা থাকে। দাদার মেয়ে চাকরি করে পুণেতে। সে আসলে থাকে। নিচের দুটো বেডরুমের একটাতে আমি, একটাতে সঞ্জীব আর আমার ছেলে শুভ্র থাকে। আমার মেয়ে তার জ্যেঠির সঙ্গে উপরেই থাকে। নিচের তলাতেও একটা বেডরুম ফাঁকা আছে।”

“আর মিলু?” ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

“মিলু এতোদিন নিচতলার বেডরুমটাতেই থাকত। এই ক’মাস হল বাবা অসুস্থ থাকায়, উপরের বৈঠকখানার ঘরের মাঝে বিছানা পেতে শুতো।”

গেট ঠেলে উপরে উঠতেই আমাদের চোখ গেল দোতলার লম্বা বারান্দার দিকে। দেখলাম একজন মহিলা কর্মব্যস্ত ভঙ্গিতে শুকনো জামাকাপড় তুলছেন। আমাদের দেখে কতকটা স্থির হল ওর দৃষ্টি। রমেন বাবু ফিসফিসিয়ে বললেন “আমার বৌদি।”

আমাদেরকে শুরুতেই দোতলায় নিয়ে গেলেন না রমেন বাবু। নিচতলার একটা ঘর খুলে দিলেন। ঘরটা পরিচ্ছন্নই ছিল। একটা ছোটো খাট, আর একটা চেয়ার ছিল ঘরে। আমার মনে হল, এই সেই ঘর যেটা খালি থাকে। রমেন বাবু ‘সঞ্জীব’ বলে হাঁক দিয়ে তাকে চেয়ার আনতে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা বছর ত্রিশের ছেলে একটা কাঠের চেয়ার চেগিয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকল। রমেন বাবু আমাদের পরিচয় দিয়ে আলাপ করিয়ে দিলেন নিজের ভাগিনার সঙ্গে। ছেলেটির মুখের আদল অদ্ভুতভাবে রমেন বাবুর মতো। হয়তো মায়ের চেহেরা পেয়েছে। তাই এ বাড়ির ছাঁচ রয়েছে। মৃদু হেসে নমস্কার জানাল ছেলেটি। রমেন বাবু আরো একটা চেয়ার আনার ইশারা দিলেন। আর আমাদের বললেন “বসুন। বাকিদের জানিয়ে আসি। আপনি সবার সঙ্গেই কথা বলবেন তো?”

“যদি বাড়িতে থেকে থাকেন, তাহলে তো অবশ্যই বলব। আর সম্ভব হলে আপনার বাবার ঘরেও একটু যাব আজ।” ফেলুদা বিনয়ের সুরে বলল।

“সেতো নিশ্চয়ই যাবেন। বেশ, আপনি বসুন। আমি আসছি। সঞ্জীব তুই এখানেই থাক।”
বলে ভাগিনাকে আমাদের সঙ্গ দিতে ইশারা দিয়ে রমেন বাবু বেরিয়ে গেলেন।

“বোসো। তুমিই বললাম” সঞ্জীবকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে বলল ফেলুদা।

সঞ্জীব ফেলুদার মুখোমুখি চেয়ারটাতে বসতে বসতে বলল “আরে ঠিক আছে”। বেশ সাবলীল ওর গলার স্বর।

“তুমি কি করো?” ফেলুদা ওর চোখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল।

“ছোটোখাটো একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করি। তেমন কিছু নয়। টাকার দরকার। কতদিনই বা এভাবে মামার বাড়িতে দিন কাটাব? তাই পাশাপাশি সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি। প্রস্তুতিও নিচ্ছি।”

“এ বাড়িতে ক’বছর আছো?”

“মা বাবা তো …”

সঞ্জীবকে থামিয়ে দিয়ে ফেলুদা নিচু গলায় বলল “শুনেছি।”

“ওই তারপর থেকেই। আমি এই মামাবাড়িতে।”

“তোমার দাদু যেদিন মারা গিয়েছিলেন, তুমি প্রথম কখন জানতে পেরেছিলে?”

“সকালে আমি মোটামুটি সাড়ে ছ’টার দিকেই উঠে যাই। তারপর চা বিস্কুট খেয়ে স্নানের জন্য রেডি হই। তো সেদিন মিলু চা না নিয়ে আসায় পৌনে সাতটার দিকে ওকে ডাক দেই। আমাদের রান্নাঘর দোতলাতেই। তখন হঠাৎ বড় মামীর চিৎকার শুনতে পাই। তড়িঘড়ি করে উপরে গিয়ে দেখি দাদুর ঘরে বড় মামা আর মামী দাঁড়িয়ে আছে। মিলু দাদুর বিছানা ধরে বসে কাঁদছে। দাদুর কোনও সাড় নেই।”

“আর আপনার ছোটো মামা?”

“সেতো আগের রাতে বাড়িতেই ছিল না। রান্নার মেয়ে বিন্নি যখন সাতটার দিকে আসে, তার পরেপরেই ঢোকে ছোটো মামা।”

“তুমি নাকি আগের দিন রাতে বড় মামাকে দাদুর ঘরে যেতে দেখেছিলে?”

“হুম। আমি এমনিতে রাত সাড়ে বারোটা অবধি রোজই জেগে পড়ি। সেদিন একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়েছিলাম। আর ঘুমটা ভেঙ্গে গিয়েছিল দুটো আড়াইটের দিকে। জানলা দিয়ে বাইরে চেয়ে দেখি, একটা আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে উঁকি মেরে দেখি, দাদুর ঘরে আলো জ্বলছে। কিছু খুটখাট আওয়াজও পাই।”

“সেটা কি কিছু খোলার বা বন্ধ করার আওয়াজ বলে মনে হয়েছিল?”

“হতে পারে। রাতের নিস্তব্ধতায় বেশ তীব্র শোনাচ্ছিল শব্দটা।
আমি তখন ভাবলাম, দাদু অসুস্থ। কিছু হল কিনা কে জানে। তাই জানতে তখন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাই আমি। কিন্তু উপরে ওঠার দু সিঁড়ি আগেই দেখি মামা মামী দাদুর ঘরের লাইট অফ করে বেরিয়ে নিজেদের ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে। তাতে আমিও আবার নিচে নেমে আসি।”

“মিলুকে দেখেননি তখন?”

“না”

“আপনার কী মনে হয়, আপনার বড় মামা মামী দাদুর অসুস্থতার জন্যই সেদিন ঢুকেছিল?”

“সকালে তো তাই বলছিল। কিন্তু …” বলে থেমে যায় সঞ্জীব।

“কিন্তু কী?”

“বড় মামার বহুদিন ধরেই দাদুর সিন্দুকের উপর নজর ছিল। তাই সঠিক বলাটা কঠিন আমার পক্ষে।”

“তুমি কী মনে করো, প্রসূন বাবুর সিন্দুকে সত্যিই মূল্যবান কিছু আছে বা ছিল?”

“সেতো বটেই। নইলে দাদু ওরকম চারটে অ্যালফাবেটের কম্বিনেশনে বন্ধ করে রাখবে কেন?”

“চারটে অ্যালফাবেট! তুমি কীকরে জানলে …” ফেলুদা প্রশ্ন করতেই রমেন বাবু ঘরে ঢুকলেন। পেছনে একজন মহিলা। যাকে আমরা বাড়িতে ঢুকতে উপরের বারান্দায় দেখেছিলাম। রমেন বাবু আমাদের সঙ্গে ওর বৌদির পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভদ্রমহিলা হাত জোড় করে নমস্কার জানালেন। রমেন বাবুকে দেখলাম সঞ্জীবের দিকে ইশারা দিয়ে ডাকলেন। সঞ্জীব উঠে যেতেই বললেন “শুভ্র কোথায়?”
“পড়তে গেছে।” উত্তর দিল সঞ্জীব।

ফেলুদা ভদ্রমহিলার দিকে চেয়ে বিনয়ের সঙ্গে বললেন “বসুন”।

ভদ্রমহিলা বেশ আড়ষ্টভাবে এসে বসলেন।

“আপনার শ্বশুর কতদিন ধরে ভুগছিলেন?” প্রশ্ন করল ফেলুদা।

“গত দেড় বছর ধরেই শ্বাসকষ্টটা শুরু হয়েছিল। তবে বিগত চার পাঁচ মাস সেটা বাড়াবাড়ি হয়েছিল। শেষের দেড় মাস ইনহেলার সবসময়ের সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল।”

“ইনহেলারটি নাকি পাওয়া যায়নি?”

ভদ্রমহিলা চুপ করে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর চাপা ভেজা গলায় বলেন “বিশ্বাস করুন, বাবার মতো মানুষের ক্ষতির কথা আমরা ভাবতেই পারি না।”

ফেলুদা তারপর রমেন বাবুর দিকে চেয়ে বলল “তাহলে একবার আপনার বাবার ঘরে যাওয়া যাক।”

“হুম। চলুন।”

ফেলুদা ওই ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরের পাস দিয়ে যেতে যেতে বললেন “এটা সঞ্জীবের ঘর নাকি?”

সঞ্জীব পেছন থেকে “এটা ছোটো মামার। পরেরটি আমার” বলে এগিয়ে এসে বলল “আসুন না”।

ফেলুদাকে দেখলাম মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে পড়তে। তারপর সঞ্জীবের পেছন পেছন আমি আর ফেলুদা ওই ঘরে ঢুকলাম। রমেন বাবুর বৌদি সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন। রমেন বাবু আমাদের সঙ্গেই রইলেন।

মাঝারি সাইজের ঘরে ফেলুদা চোখ বোলাচ্ছিল। আমি দেখলাম একটা সেতার রাখা আছে টেবিলের উপর।

” গান বাজনার সখ আছে নাকি?” ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

“আমার নেই। ওটা মায়ের ছিল। মায়ের মিউজিকের উপর বেশ জ্ঞান ছিল। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট, সিঙ্গিং কালচার এসব নিয়ে স্টাডি করেছিল। কতকটা দাদুর গবেষণার ধাঁচ পেয়েছিল আর কী!”

“হুম, তাই মিউজিকের কিছু রেয়ার কালেকশনের বই দেখতে পাচ্ছি।” ফেলুদার চোখ তখন বইয়ের তাকের দিকে তাক করে আছে। এরপর ফেলুদার চোখ যেখানে আটকালো, সেদিকে আমিও চাইলাম। ফেলুদা দেওয়াল ঘেঁষে রাখা টেবিলের দিকে আরও কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার দরজার দিকে ফিরে এল। আর রমেন বাবুকে চোখের ইশারা দিয়ে বলল “চলুন, এবার উপরে যাওয়া যাক।”

“চলুন” বলে রমেন বাবু আমাদের সামনে পথ দেখিয়ে আগে আগে চলতে লাগলেন।

দোতলায় উঠে এক এক করে ঘরগুলোর পরিচিতি দিচ্ছিলেন রমেন বাবু। শুরুতেই বৈঠকখানার ঘর, তারপরেরটির দরজা ভেজানো রয়েছে। মনে হল, এটি সুমন বাবুর মেয়ের জন্য বরাদ্দ ফাঁকা ঘর। তারপর দাদা বৌদির ঘর, আর তারপর সবশেষে প্রসূন বাবুর ঘর। ঘরের দরজায় একটা তালা লাগানো ছিল। রমেন বাবু পকেট থেকে চাবি বের করে খুললেন তা। ঘরটাতে ঢুকতেই আমার আর ফেলুদার নজর গেল দরজা সোজাসুজি উল্টোদিকের দেওয়াল ঘেঁষা তাকের দিকে। সেখানে একটা ছোটো বাক্স আকারের লোহার বক্স রাখা আছে। যার সামনের দিকের হাতলের পাশে একটি গোল চাকতির মতো অংশ রয়েছে। ঘরের লাইট অন করাতে সেই চাকতির উপর লেখা অ্যালফাবেটগুলো দেখা গেল।

ফেলুদা এক দৃষ্টে চেয়ে রইল সেই দিকে। রমেন বাবু বললেন “এই হল গিয়ে সেই সিন্দুক।”

“সিন্দুকটার কত ওজন হতে পারে, কোনো আন্দাজ আছে?” বলে ফেলুদা এগিয়ে গিয়ে মাথাটা একটু নিচু করল চাকতিটির দিকে।

“এক্স্যাক্ট বলতে পারব না। তবে পুরোটাই ভারী লোহার। দু তিনজনে চাগিয়ে নিয়ে এসেছিল।”

এরপর ফেলুদা সিন্দুকটার চাকতিটার উপর একটু হাত বোলাল।
আমি ঘরের মধ্যে চোখ বুলিয়ে দেখলাম একটা সিঙ্গেল বেড, একটা আলনা আর একটা পুরানো দিনের কাঠের আলমারি আছে। ঘরের দেওয়ালে দুটো ক্যালেন্ডার টাঙানো আছে। একটাতে মা কালি আর একটাতে তারামায়ের ছবি।

ফেলুদা জিজ্ঞেস করল “আপনার বাবা শক্তি পুজোয় বিশ্বাসী ছিলেন নাকি?”

“আগে সেটা বুঝিনি। তবে বিগত কয়েক বছরে কালী পূজোর দিন বাবাকে বেশ তৎপর হয়ে আমাদের পাড়ার পুজোয় সারারাত বসে থাকতে দেখেছি।”

এমন সময়, রমেন বাবুর একটা ফোন আসায় প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করেই “আমি একটু আসছি” বলে বারান্দায় বেরিয়ে গেলেন। ফেলুদাকে দেখলাম কয়েক পা এগিয়ে দরজার দিকে যেতে। তারপর কিছুক্ষণ উৎকর্ণ হয়ে থেকে মেঝের উপর থেকে একটা চিরকুটের মতো কাগজ কুড়িয়ে নিল ফেলুদা। আমি খেয়াল করেছিলাম কাগজটা রমেন বাবুর পকেট থেকে ফোন বের করার সময় পড়ে গিয়েছিল। সেটা খুলতে যাওয়ার আগেই রমেন বাবুর বৌদি দরজার কাছে এসে বললেন “আপনারা বৈঠকখানার ঘরে আসুন।”

আমি দেখলাম ফেলুদা চটজলদি কাগজের টুকরোটাকে পকেটে চালান করে দিল। ততক্ষণে রমেন বাবু এসে গিয়েছিলেন। ফেলুদা ওর দিকে চাইলে বললেন “চলুন, তাহলে বৈঠকখানাতে গিয়ে বসি একটু।”

সেই ঘরে ঢুকতেই একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল। একটি অল্প বয়সী ছেলেকে সেখানে প্রসূন বাবুর ছবির সামনে ধূপ জ্বালতে জ্বালতে অদ্ভুত সুরেলা শিষ দিতে শুনলাম। ফেলুদার তাতে কপালে বেশ কটা ভাঁজ পড়ে গেল। স্বাভাবিক ব্যাপার, বাড়ির এ পরিস্থিতিটা অন্তত শিষ দেওয়ার মতো নয়। এমন সময় রমেন বাবু এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বললেন “মিলু, এদিকে আয়।”

বলাতেই শিষ দেওয়া বন্ধ করে ছেলেটি আমাদের দিকে ফিরল। ওর চোখমুখ দেখেই বুঝলাম, এই সেই তুরকি দেশের ছেলে। কিন্তু আমাদের মনে তখনও শিষ দেওয়ার ব্যাপারটা খচখচ করছিল। রমেন বাবু বললেন “বাবার মৃত্যুর পর থেকে বোধ হয় এই ছেলেটিই সবচেয়ে বেশি কেঁদেছে।”

তাকিয়ে দেখলাম, ছেলেটির চোখমুখ ফুলে আছে।

রমেন বাবু বলে চললেন “আপনাকে বলেছিলাম না, বাবা একটি অনাথ তুরকি ছেলেকে নিয়ে এসেছিল। এই সেই মিলু। এখনও আবেগে ও ওর মাতৃভাষায় কথা বলে ফেলে, গান গায়। যেমন কিছুক্ষণ আগে সম্ভবত কোনও দুঃখের গান গাইছিল।”

ফেলুদা বিস্ময়ে বলে “ব্যাপারটা ঠিক পরিষ্কার হল না।”

“এইমাত্র ও ঠোঁটে যে আওয়াজ করছিল, সেটা তুরকির একটি অঞ্চলের ভাষা।”

“বলেন কী মশাই!” ফেলুদার বিস্ময়কর মন্তব্য।

“বাবাতো এই ভাষা নিয়েই রিসার্চ করেছিল। তারপর ওকে নিয়ে বিভিন্ন দেশে ঘুরে শেষে তিব্বতে বেশ কয়েক মাস থেকে বাড়ি ফিরেছিল।”

বৈঠকখানার সোফায় বসতে বসতে ফেলুদা তারিফের সুরে বলল “এই জন্যই বলে চন্দন গাছের কাছে থাকলে, তার গন্ধ গায়ে লাগে। এই দেখুন না, আপনার বাবা এমন গুনী মানুষ ছিলেন বলে, এ বাড়িতে এসে আমিও এতো অদ্ভুত একটা ব্যাপারটাকে জানতে পারলাম।”

দু ঘন্টা আগেই চা খেয়ে আসায় হাফ কাপ চা খেলাম দুজনে।

“আপনার দাদা বোধ হয় বাড়িতে নেই!” ফেলুদার এই প্রশ্নের উত্তর রমেন বাবু কিছু বলার আগে ওর বৌদিই বললেন “না, ও ফিরতে বেশ রাত হয়।”

আমরা বেশিক্ষণ না বসে উঠে পড়লাম। ফেলুদা বলল “আজ উঠি। এক জায়গায় যেতে হবে।”
আমার মনে পড়ল, ফেরার পথে লালমোহন বাবুর বাড়ি যাবে বলেছিল ফেলুদা।

“বেশ। কবে আসবেন আবার?” রমেন বাবুর প্রশ্নের উত্তরে ফেলুদা বলল “আপনার দাদা থাকবে যেদিন, সেদিন সময় করে ডাকুন। ওর সঙ্গে একটু কথা বলে যাব।”

বলে আমরা বৈঠকখানার ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলাম। তারপর রমেন বাবুর সাথে টুকটাক কথা হতেই, দেখলাম সঞ্জীবের সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে গেট খুলে ঢুকছে।

রমেন বাবু একগাল হেসে বলল “কিরে নাচের স্কুল হয়ে গেল?”

বাচ্চা মেয়েটি উত্তর না দিয়ে আমাদের দেখে একভাবে চেয়ে ছিল। ফেলুদা এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির সামনে একটু ঝুঁকে গিয়ে বলল “কী নাম তোমার?”

“ববি” মিষ্টি করে উত্তর দিল মেয়েটি।

(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here