সিন্দুক রহস্য,পর্ব ৭ শেষ

0
703

#সিন্দুক রহস্য,পর্ব ৭ শেষ
#শেলী ভট্টাচার্য

ফেরার পথে গাড়িতে ফেলুদা একরকম চুপ করেই রইল। লালমোহন বাবু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন “আপনি দেখছি একেবারে চুপ করে গেলেন মশাই। ওই সিন্দুকটাতে কী এমন আছে, যে এমন জটিল প্যাঁচ লাগিয়ে গিয়েছেন ভদ্রলোক।”

ফেলুদা তখনও চুপ। লালমোহন বাবু বলেই চললেন “ভদ্রমহিলার ওই কথার ইঙ্গিত ঠিক বুঝলাম না। ওই যে বললেন না, ওনার স্বামীকে শুধরাতে চেয়ে ওনার শ্বশুর মশাই নিজের ঘরে ডেকে পাঠাতেন। কেমন যেন রহস্যময় লাগছিল ব্যাপারটা। তাই নয় কি?” বলে একবার আমার মুখের দিকে আর একবার ফেলুদার মুখের দিকে চাইলেন।

এরপরও কারও সাড়া না পেয়ে “এ যেন একেবারে ভাবনায় ভরা ভুবন মনে হচ্ছে” বলে ফাইনালি থেমে গেলেন। আমি আন্দাজ করছিলাম, ফেলুদার মাথায় তখন একের পর এক জট খুলছে বা পাকাচ্ছে। আমার মাথাতে সেই মুহূর্তে প্রসূন বাবুর শেষ কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল।

ফেলুদা হঠাৎ ধীরে ধীরে বলে উঠল “ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন একটু জিরো”

লালমোহন বাবু কিছু বলতে যাবেন, আমি হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলাম। ফেলুদা আবার বলল “ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন একটু জিরো।” তারপর পেছন ফিরে আমায় বলল পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে তুই বলছিলি না প্রথমেই মনে পড়ে এটিপি পিনের কথা।”

“হুম।” আমি বললাম।

“এবার মনে করে দেখ, ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়নের কেসে আমি কথাটার মানে না খুঁজে ওর প্রোনাউন্সিয়েশনে গিয়েছিলাম। এখানে প্রসূন বাবুর মৃত্যুর আগে বলা শেষ কথাগুলোর প্রনাউন্সিয়েশনকেও সেইভাবে ভাব এবার …” বলে থেমে গেল ফেলুদা।

লালমোহন বাবু বললেন “কেউ আরও আছে … এতে কী আছে মশাই?”

“এতেই আছে সিন্দুকের পাসওয়ার্ড। কিরে তোপসে বুঝলি কিছু?”

আমি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ কথাটাকে বারবার মাথায় পাক খাওয়াতে লাগলাম। তারপর উত্তেজিত হয়ে বলে ফেললাম “কে ইউ আর ও …”

লালমোহন বাবু বললেন “লাও .. তাইতো।”

“আমিও তো বলছি তাইতো। সাবাস তোপসে। সিন্দুকের পাসওয়ার্ডের চারটে অ্যালফাবেট হল ইংলিশ অ্যালফাবেট KURO ”

“তাহলে তো সলভ হয়েই গেল” আমি বলে ফেললাম।

“দাঁড়া, এখনও সব হিসাবনিকাশ বাকি।”

“তোমার কী মনে হয়, সিন্দুক খালি?”

“না, মন তো বলছে না। আর মনে হচ্ছে রমেন বাবুর ধারণাটাও ভুল।” বলেই ফোনে একটা নাম্বার খুঁজে ডায়াল করল ফেলুদা।

“সন্ধ্যের দিকে সবাই বাড়ি থাকবেন কখন?”

“সাতটার দিকে দাদাকে একটু থাকতে বলুন না আজ। আমি মিঃ বাগচীকে ডেকে নেব। আমরা তিনজন আসছি তখন।”

“মনে তো হচ্ছে সমাধান করতে পেরেছি।” বলে ফোন রাখল ফেলুদা।

“রমেন বাবুকে জানালে?” আমি বললাম।

“হুম। গাড়িটা একবার থানার দিকে ঘোরাও তো” হরিপদকে বলল ফেলুদা।

লালমোহন বাবু বললেন “পাজল সলভ হল তো বুঝলাম। কিন্তু মার্ডারার? সেও ধরে ফেললেন নাকি মশাই?”

ফেলুদা মৃদু হেসে বলল “এতো সহজ। আপনার ভাষায় বলতে গেলে, এ হল হাইলি সাসপিসিয়াস কেস!”

কথা মতো সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমরা তিনজনে হাজির হলাম ঘোষাল বাড়িতে। রমেন বাবুর সঙ্গে দোতলার বৈঠকখানার ঘরে পৌঁছে দেখলাম, মিঃ বাগচী সোফায় বসে আছেন। পাশে সুমন বাবু। ফেলুদা বলল “আজ আর বসব না। বরং প্রসূন বাবুর ঘরে ঢুকব। সবাই আছেন তো?”

রমেন বাবু বললেন “সবাই আছে। আমার মেয়ে পড়তে গেছে শুধু।”

“বেশ, তাহলে চলুন সিন্দুকের সামনে।” বলে ফেলুদা তাকালেন রমেন বাবুর দিকে। আমি আর লালমোহন বাবু পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে দেখলাম সঞ্জীব আর শুভ্র উঠে এসেছে। সুমন বাবুর স্ত্রী আর মিলু ওদের পেছনেই ছিল।

রমেন বাবু বারান্দার লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে প্রসূন বাবুর ঘরের দিকে হেঁটে চললেন। বাকিরা সবাই ওর পিছু নিলাম। প্রসূন বাবুর ঘরের দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে ঘরের আলো জ্বালালেন রমেন বাবু। তার পেছন পেছন আগে ঢুকল ফেলুদা। তারপর এক এক করে সবাই ঢুকল ঘরে। সুমন বাবুর স্ত্রী, মিলু আর রমেন বাবুর ছেলে স্থানের অভাবে ঘরের মধ্যে গ্যাঞ্জাম হবে বলে দরজার কাছেই দাঁড়াল।
রমেন বাবু ফেলুদাকে উদ্দেশ্য করে বললেন “বলুন কী বলবেন?”

“আগে বলব না। কিছু করার চেষ্টা করব।” বলে ফেলুদা সিন্দুকটার দিকে এগিয়ে গেল। আর সিন্দুকের সামনে গিয়ে ডান হাতটাকে চাকতিটার উপর রেখে ঘোরাতে লাগল কয়েকটা অ্যালফাবেটের ঘাটে ঘাটে থমকে। আগেকার দিনে ডায়ালড ল্যান্ডলাইন যেমন ছিল, কতকটা সেরকম করে। আর তাতেই সিন্দুকের দরজাটা খুলে গেল।

তখন রমেন বাবুর সাথে সুমন বাবুও বলে উঠলেন “এটা কীকরে হল?”

ফেলুদা আবার একইভাবে সিন্দুকটা বন্ধ করল। এবার এক একটা অ্যালফাবেট বলতে বলতে সিন্দুকের চাকতিটাকে ঘোরাতে লাগল।
“প্রথমে K , তারপর U , তারপর R , আর শেষে হল O । এই হল আপনাদের বাবার শেষ ক’দিনে বলা ইঙ্গিত কেউ আরও আছে। উনি বলতে চেয়েছিলেন পাসওয়ার্ডটা। হয়তো বুঝতে পারছিলেন, আর বেশি দিন নেই উনি।”

“আমি জানতাম, আপনার মাথাই পারবে এই কম্বিনেশনটা উদ্ধার করতে।” ফেলুদাকে প্রসংশাসূচক সাবাসি দিলেন মিঃ বাগচী।

“এবার আপনারাই দেখুন সিন্দুকের মধ্যে কী কী আছে?” ফেলুদা বলল।

সুমন বাবু বললেন “আপনি যখন খুলতে পারলেন, তখন আপনিই বের করুন ভেতরের জিনিসগুলোকে।”

রমেন বাবুও দাদার কথার সমর্থন করে বললেন “এখানে আমরা সবাই তো আছি। আপনিই বের করুন সব সবার সামনে।”

ফেলুদা হাঁটু গেড়ে নিচু হয়ে বসে সিন্দুকের ভেতরে হাত দিয়ে প্রথমে একটা রোল করা কাগজের তাড়া পেল। সেটাকে বের করে বাইরে রাখল। সেটা বের করতে গিয়ে কিছু পয়সার মতো আওয়াজ হল। ফেলুদা আবার ভেতরে হাতড়ে বেশ কিছু বিবিধ আকারের কয়েন পেল। বোঝা গেল সেগুলো বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। আর বিশেষ কিছুই পাওয়া গেল না সিন্দুকে।

রমেন বাবু এবার নিচু হয়ে গিয়ে বললেন “এগুলো বিদেশী মুদ্রা?”

কয়েকটা মুদ্রা হাতে তুলে নিয়ে নাড়াচাড়া করে ফেলুদা বলল “হুম। তবে পুরানো আমলের। অদ্ভুত কালেকশন। আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ মূল্য আছে এগুলোর। তবে আপনাদের কাছে এগুলো অমূল্য সম্পদ। বাবার সংগ্রহ।”

“আর এটা কী?” কাগজের তাড়াটা হাতে তুলে নিয়ে বললেন রমেন বাবু।

“ফেলুদা কাগজের রোলটা খুলে পড়তে পড়তে কয়েক পাতা উলটে লালমোহন বাবুর দিকে চেয়ে বলল ” এটা আপনার কাজে লাগতে পারে।”

কথাটা শুনে শুধু লালমোহন বাবু নয়, বাকি সবাই অবাক হল। ফেলুদা এবার সুমন বাবুর দিকে চেয়ে বলল “আপনার বাবা এক মাস ধরে প্রত্যেক শণিবার করে আপনাকে যখন ডাকতেন, এই কাগজ বের করে আপনার সামনে দেখাতেন কি?”

সুমন বাবু বললেন “নাতো। বাবা আমায় কিছু রিচুয়ালস করতে বলতেন। শুরুর দিকে আমার অবাক লাগত, বিরক্তিও লাগত। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমি সেগুলো করতাম।”

“আপনার বাবা সেগুলো আপনার ভালোর জন্যই করতেন বলে বিশ্বাস করতেন। এই কাগজগুলোকে ওপর ওপর দিয়ে দেখে যা বুঝলাম, আপনার বাবা পঞ্চ ম’কার সাধনা করতেন। এই সাধনা উনি তিব্বত থেকে শিখে এসেছিলেন। এটি আসলে আগম তন্ত্রের একটি সাধন মার্গ। তন্ত্র বলতেই আমরা বুঝি কারও ক্ষতি করা। কিন্তু এই পঞ্চ ম’কার সাধনা অর্থাৎ মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন নিয়ে যে সাধনা হয়, তা দিয়ে কারওর অশুচিকে কাটিয়ে তার আত্মাকে শুচিতে আনা যায়। আমার মনে হয় প্রসূন বাবু এই সাধনা তিব্বতে থাকাকালীন অভ্যাস করেছিলেন। সেই পুরানো অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে নিজের বড় ছেলেকে বদলাতে চেয়েছিলেন। আর আমার মনে হয়, এর জন্য দরকারী সামগ্রী প্রসূন বাবুকে এই বাড়ির কেউ জোগান দিতেন। যে নিজেও বিশ্বাস করতেন, এতে সুমন বাবুর মঙ্গল হবে।” বলে ফেলুদা সুমন বাবুর স্ত্রীয়ের দিকে একবার তাকালেন। আমি দেখলাম, উনি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।

মিঃ বাগচী বললেন “তাহলে সিন্দুকের জিনিস চুরি হয়নি। তাইতো প্রদোষ বাবু?”

ফেলুদা কনফিডেন্টলি বলল “না।”

“আর খুন?” বাগচীর পরবর্তী প্রশ্ন।

“ইনহেলারটা সরাল কে?” রমেন বাবু বললেন।

ফেলুদা বলল “এবার যা বলব, তার জন্য হয়তো এ বাড়ির একজনকে অস্বস্তিতে পড়তে হবে।”

“আপনি বলুন” রমেন বাবু বললেন।

“বলছি। তার আগে সবাইকে এক এক করে আমি প্রশ্ন করব। প্রথমেই সুমনবাবুকে জিজ্ঞেস করছি, প্রসূন বাবুর মৃত্যুর দিন সকালে আপনি কটায় উঠেছিলেন?”

“মাঝরাতে একবার ওঠায়, দেরি হয়েছিল। প্রায় সাতটার দিকে।”

“আপনি?” সুমন বাবুর স্ত্রীয়ের দিকে চেয়ে বলল ফেলুদা।

“আমার পায়ে ব্যথার জন্য দেরি হয়েছিল। প্রায় পৌনে সাতটায়।”

“তখন মিলু কোথায় ছিল?”

“একতলায় রান্না ঘরে। স্নান সেরে চা চাপাচ্ছিল।”

“ও কটায় ওঠে?”

“সাড়ে পাঁচটায়।”

“সেদিনও কি সেই সময়েই উঠেছিল?”

সুমন বাবুর স্ত্রী এবার চাইলেন মিলুর দিকে। মিলু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাল।

“সঞ্জীব কটায় উঠেছিলে?”

“সাড়ে ছটায়।”

“আরেকবার মনে করে বলো।” বলল ফেলুদা।

সঞ্জীব আবার বলল “সাড়ে ছটাতেই উঠেছিলাম।”

ফেলুদা এবার গম্ভীর স্বরে বলল “তোমার প্রথম মিথ্যে ধরেছিলাম আমি প্রথম দিনে। তুমি বলছিলে তোমার ঘরের জানলা দিয়ে প্রসূন বাবুর ঘর থেকে আসা আলো কে বাইরে দেখে তুমি বেরিয়ে আসো। আর তারপর কিছু আওয়াজ পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে এসে দেখো বড় মামা মামী এ ঘর থেকে বেরোচ্ছেন।”

“এতে মিথ্যে কোথায়?”

“এই ঘর দোতলার এক কোণায়। আর তোমার ঘর সিঁড়ির পাশে, একতলায় অন্যদিকে। আলোর সরল গতি অনুযায়ী এই ঘরের আলো পড়বে একতলার ফাঁকা ঘরের সামনেটাতে। বৈঠকখানা ঘরের আলো জ্বালা থাকলেই একমাত্র তোমার ঘরের সামনে আলোর রেখা পড়বে। তবে হ্যাঁ, সুমন বাবুর ঘর বৈঠকখানার ঘরের পাশে বলে, সেই ঘরে আলো জ্বললেও হাল্কা আলোর রেশ তোমার জানলা দিয়ে দেখা যেতেই পারে। আর সেটাই হয়েছিল। তুমি বড় মামার ঘরে আলো দেখেই কৌতূহলে ধীর পায়ে উপরে উঠে এসেছিলে। আর শুধুমাত্র বড় মামাকেই দেখে নেমে গিয়েছিলে। মামীর কথাটা মিথ্যে বলেছিলে। মনে মনে ভেবেছিলে, বড় মামা এতো রাতে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যেই এ ঘরে এসেছিল। আর সে উদ্দেশ্য একটাই … সিন্দুকের সম্পদ। তারপরের দিন সকালে তুমি উঠলে সাড়ে পাঁচটায়। তুমি মাথায় যে তেল দাও তা তিন ঘন্টা রাখো … একথাটা সেদিন শুভ্র আমায় বলেছিল। আর হিসাব বলছে আমি যেদিন এসেছিলাম, তার অল্টারনেট ডেয়ের হিসাবে সেদিনটা পড়ে। তাই সেদিনও তুমি মাথায় আয়ুর্বেদিক তেলটা দেবে বলে সাড়ে পাঁচটায় উঠেছিলে। এরপর যখন মিলুর শিষ দেওয়া গান বাথরুমে শুনতে পেলে, তখন ভাবলে এখন একটু উপরে যাই। তুমি জানতে সোয়া ছ’টার আগে উপরে বাকিরা ওঠেন না। তখন তুমি উপরে এসে প্রসূন বাবুর ঘরে ঢুকলে। আর সিন্দুকের চাকতি নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখলে যে, ওটি খোলা কিনা?”

“মিথ্যে কথা!” বেশ জোরের সঙ্গে সঞ্জীব বলে ওঠে।

“আমি তিন দিন পর এ ঘরে এসে এই সিন্দুকের চাকতিতে হাত রেখে তেলের উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম সঞ্জীব। আর সঙ্গে সেই বিটকেল গন্ধটা।
যাইহো, সেদিন ততক্ষণে প্রসূন বাবু মারা গিয়েছিলেন। সেটা তুমিই প্রথম দেখেছিলে। আর বড় মামাকে ফাঁসানোর জন্য তখন ইনহেলারটাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে। তুমি জানতে না যে মিলু ক’দিন ধরে এই ঘরে শুচ্ছিল। তাই রাতে কে এসেছিল, কী করেছিল মিলু জানত।
তুমি ভেবেছিলে, এই সুযোগে বড় মামা মামীকে ছোটো মামার সামনে অপরাধী করে তুলবে। কী ঠিক বললাম তো সঞ্জীব? আর তোমার বড় মামা যেন কোন ব্যাপারে তোমায় বারণ করেছিল? কমোডিটি ট্রেড নাকি? কী রমেন বাবু আপনিও তো করেন এই ট্রেড!”

সঞ্জীবের মুখে আর কোনও কথা নেই। রমেন বাবুও চুপ। ফেলুদা হাতের কাগজটা গুটিয়ে সবার সামনে তুলে বললেন “এগুলো লাগবে নাকি আপনাদের?”

“না, আপনার লাগলে নিন।” সুমন বাবু বললেন।

“বেশ, আমার বিশেষ বন্ধুর কাছেই থাক তাহলে এটা” বলে জটায়ুর হাতে ফেলুদা তুলে দিল কাগজের তাড়াটা। জটায়ুর মুখে তখন বিস্ময় কেটে আনন্দের ছটা ঝিলিক দিচ্ছে।

“এবার এগুলো তুলে রাখুন” বলে ফেলুদা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। মিঃ বাগচী বললেন “তাহলে দাঁড়াল গিয়ে খুনও হয়নি, চুরিও হয়নি। আমার আর কী কাজ আছে তাহলে এখানে! চলুন আমিও বিদায়নি।”

সুমন বাবু পেছন থেকে বললেন “প্রদোষ বাবু, আপনার পারিশ্রমিক?”

“আপনার বাবার ইচ্ছাপূরণ হলে ভালো লাগবে। তবে ওই মুদ্রাগুলোর মধ্যে একটি মিশরীয় মুদ্রা দেখলাম যদি সম্ভব হয় তো!”

“নিশ্চয়ই।” বলে হাসিমুখে সবকটি মুদ্রাকে ফেলুদার সামনে তুলে ধরলেন সুমন বাবু। “আপনিই বেছে নিন। বাকি জিনিস কাল ব্যাঙ্কের লকারে গিয়ে তুলে রাখব। এগুলো আমাদের গর্ব। বাবার কালেকশন।” বললেন ঘোষাল বাড়ির বড় ছেলে।

রমেন বাবুকে দেখলাম মাথা নিচু করে দাদার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।

ফেরার পথে আমি জিজ্ঞেস করলাম ফেলুদাকে “তাহলে চিরকুটের CU ZN কি ছিল?”

“কমোডিটি ট্রেডের কপার আর জিঙ্ককে সংক্ষেপে এভাবেই লেখে।” ফেলুদা বলল।
আমি বললাম “কমোডিটি ট্রেড মানে, শেয়ারের সেই বেস মেটালের নাম?”
ফেলুদা মাথা নাড়িয় ইতিবাচক ইঙ্গিত দিল।
লালমোহন বাবু কাগজের তাড়াটা নাড়াচাড়া করে বললেন “এতো দারুণ তথ্য মশাই।”

“সযত্নে রেখে দিন। কলিকালে From evil comes good বিষয়কে ভিত্তি করে গল্প বা উপন্যাস লিখতে প্রচুর কাজে লাগবে।” ফেলুদা একপেশে হাসি দিয়ে বলল।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here