সুখহীন নিশিদিন পর্ব 5

0
275

সুখহীন নিশিদিন
পর্ব 5

ভয়ে সবার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে I এইরকম বিচ্ছিরি ভাবে ধরা পড়ে যাবে কেউ ভাবতেও পারেনি I সব ওই রানা গাধাটার জন্য I দীপা এগিয়ে এসে বলল

আঙ্কেল স্লামালিকুম এখানে কি জামিল ভাই আর তন্বী আপুর বিয়ে হচ্ছে ? আমরা জামিল ভাই এর ছোট ভাই তামিমের বন্ধু I
না I এখানে তো সিমলার বিয়ে হচ্ছে I আমি সিমলার বড় চাচা
সরি আঙ্কেল I আমাদের কে বলেছিল 7 বাই A I আমরা মনে হয় ঠিকানা ভুল করেছি I আমরা আসি স্লামালেকুম I
সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখন ভদ্রলোক হঠাৎ বললেন
তুমি আফসার আঙ্কেলের নাতি নিষণ না ?
নিষণ একটু অবাক হল I তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
জ্বী আঙ্কেল
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? ভেতরে এসো I আমি নিজে গিয়ে আফসার আঙ্কেলকে দাওয়াত করে এসেছি I উনি অবশ্য বলেছিলেন যে নিজে আসতে পারবেন না তবে কাউকে পাঠিয়ে দেবেন I তোমাকে নিশ্চয়ই পাঠিয়েছে I
না আঙ্কেল I আমি নানা ভাই এর পক্ষ থেকে আসিনি I আমি ওদের সঙ্গে এসেছি I
ও তাই নাকি ? তাতে কি হয়েছে I এসেই যখন পড়েছ এখান থেকে খাওয়া-দাওয়া করে যাও I
দিপার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ লাগছে I একেতো রানা এরকম ভজঘট পাকিয়ে দিল তার উপর আবার এখন নিষণ এর রেফারেন্স দিয়ে খেতে হচ্ছে I ও এগিয়ে এসে বলল
আঙ্কেল আমাদের অন্য জায়গায় দাওয়াত আছে I আমরা যাচ্ছি I
নিষণ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভদ্রলোক বললেন
দাওয়াত আছে তো কি হয়েছে ? এখান থেকে খেয়ে ওখানে দেখা করে চলে যাবে I এসো এসো
এরপর আর কিছু বলার থাকল না ভদ্রলোক নিশানের কাঁধে হাত রেখে আগে আগে হাঁটতে লাগলেন I পেছন থেকে শোনা গেল উনি বলছেন
– আফসার আঙ্কেল আমার জন্য যা করেছেন সেই ঋণ এই জীবনে শোধ করতে পারবো না বুঝলে I
রানা এগিয়ে এসে দীপার কানে কানে বলল
এই আফসার আঙ্কেল টা কে ?
দীপা বিরক্ত মুখে তাকালো I তারপর বলল
আমি কি করে জানব I তোর রুমমেট তুই জিজ্ঞেস কর I আর তোকে এত মাতব্বরি করতে কে বলেছিল ? ছেলের ছোট ভাইয়ের ফ্রেন্ড I যত্তসব
ভদ্রলোক সবাইকে নিয়ে খুব যত্ন করে খাওয়ালেন I বেরোনোর সময় নিষণকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন
আঙ্কেলকে বল আমি খুব খুশি হয়েছি তুমি এখানে আসায় I
সেন্টার থেকে বের হতে হতে বিকাল হয়ে গেল I বেরিয়ে রানা বলল
বস আপনার জন্য বাইচা গেছি I
তুই কি বললি এটা ? ওর জন্য বেঁচে গেছিস I আমি মিথ্যা কথাটা না বললে পিটিয়ে তোকে এরা ঘাড় ধরে বের করে দিত I তোর বসের জন্য খাবারটা পেলি I
দীপা কথা শুনে নিষণের কেন জানি রাগ হলো না I বরং লক্ষ্য করলো বেশ ফুরফুরে লাগছে I ঘটনাটা কারও সঙ্গে শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে I মোবাইল বের করে দেখল সপ্তর্ষি অফলাইনে I মোবাইল পকেটে রেখে দিয়ে বলল
চল আমি আইসক্রিম খাওয়াচ্ছি
এটা কি আমার জন্মদিনের গিফট ?
না তোর জন্য স্পেশাল গিফট আছে I বাসায় গিয়ে দেবো
পাশ থেকে টুম্পা বলল
কেন ভাইয়া আমাদের সামনে দেওয়া যাবে না ?
অবশ্যই যাবে I কিন্তু যে গিফটটা দেবে সে এখন অফলাইনে
কার কথা বলছেন ?
রানার প্রিয় সিঙ্গার সপ্তর্ষি I আজকে ওকে একটা লাইভ গান শোনাবে

দলটার মধ্যে হঠাৎ একটা হৈ চৈ পড়ে গেল I ওদেরকে ঠান্ডা করে আইসক্রিম খাইয়ে বিদায় করতে নিষনের অনেকটা সময় চলে গেল I রানা ওর সঙ্গে বাসায় ফেরেনি I বন্ধুদের সঙ্গে কিছু প্ল্যান আছে I বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল I সাধারণত এই সময়টা ওর খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে যায় I সন্ধ্যা গুলো কেন যে এত মন খারাপ করা হয় I নিষণ মাগরিবের নামাজ পড়ে কফি নিয়ে বারান্দায় বসল I দিনের মধ্যে এই একটা নামাজই নিয়মিত পড়া হয় I হঠাৎই টুং করে মোবাইলে মেসেজের শব্দ হল
নিষণ মেসেজ সিন করে রিপ্লাই করল না বরং কল করলো

কেমন হলো জন্মদিন ? সপ্তর্ষি জানতে চাইল
খুব ভালো I নয়টার পর কিন্তু আমি ফোন করবো তোমাকে গান শোনাতে হবে I
আচ্ছা শোনাবো I আর কি কি হলো ?
অনেকক্ষণ ধরে গল্পটা সপ্তর্ষি কে বলল নিষণ I হঠাৎ ই ওর মনের বিষন্নতাটা কেমন কেটে গেল I গল্প শুনে সপ্তর্ষি খুব হাসল I তারপর বললো
আচ্ছা, আজকে যারা এসেছিল তাদের মধ্যে কাউকে তোমার ভালো লেগেছে ?
আরে ধুর
তোমার কখনো কাউকে ভাল লাগেনি ?
না সেটা না I একবার একজনকে ভালো লেগেছিল
কাকে কাকে বল না
তোমার এত আগ্রহ কেন ?
আমার জানতে ইচ্ছে করছে I তোমার মতন আয়রনম্যানের কাউকে পছন্দ হয়েছে কিনা
আমি আয়রন ম্যান ?
আগে গল্পটা বল I মেয়েটা কে ?
আমি তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি I ক্যাম্পাসে নতুন ফাস্ট ইয়াররা এল I ছেলেদের মধ্যে সেকি উত্তেজনা I দলবেঁধে সবাই গেল নতুন মেয়েদের দেখতে I আমি ওদের সঙ্গে যাইনি I তবে কদিন পর হঠাৎই আর্কিটেকচারের একটা মেয়েকে আমার খুব ভালো লাগলো I ওর নাম তুলি I নামের মতই দেখতে ও I একেবারে তুলতুলে ছোট বিড়ালের মতন I খুব মায়াবী I আমার হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে পড়ে গেল I আমার মনে হল মেয়েটাও মনে হয় ওই রকমই I মায়াবী , খুব নরম প্রকৃতির , কেয়ারিং I
তারপর ? প্রপোজ করলে কখন ?
শোনো ই না শেষ পর্যন্ত
কদিন ধরেই ভাবছিলাম একদিন কথা বলব ওর সঙ্গে I জানতে ইচ্ছা করছিল ও আসলে কেমন I একদিন ক্যান্টিনে ওর পাশের টেবিলে গিয়ে বসলাম I ও খাচ্ছিল আরো কয়েকটা মেয়ের সঙ্গে I আমি বসে থেকে ওদের গল্প শুনলাম I ও বান্ধবীদের বলছিল , বাংলাদেশর মানুষদের ওর একেবারেই ভাল লাগেনা I এখানকার মানুষেরা সব বেগার I রাস্তায় দরিদ্র মানুষজন দেখলে ওর ঘেন্না লাগে I ভিক্ষুকদের দেখলে লাথি মারতে ইচ্ছা করে I আমি ওর কথা শুনে চমকে গেলাম I একজন মানুষ এতটা নরম বাইরে থেকে দেখতে অথচ তার ভেতরটা এত নিষ্ঠুরতায় ভরা I এটা কি করে সম্ভব ? খুব মন খারাপ হয়েছিল সেদিন I প্রথমে মনে হচ্ছিল হয়তো আমারই বোঝার ভুল I তারপর কিছুদিন পর যখন আস্তে আস্তে ওর সম্পর্কে জানলাম তখন বুঝলাম ও একটা অহংকারী, নিষ্ঠুর প্রকৃতির মেয়ে I যার মধ্যে কোনো আন্তরিকতা নেই I কোন মায়া দয়া নেই I এইরকম একজনকে ভালোলাগা আমার পক্ষে সম্ভব না I তা সে যত সুন্দরই হোক না কেন I
সপ্তর্ষি অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো I তারপর বলল
যাক একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল
কি ?
যে তুমি গে না I
সপ্ত ? তুমি আবার শুরু করলে ?
সপ্তর্ষি আর কিছু না বলে হাসতে লাগলো I নিষণ কিছুক্ষণ চুপ করে ওর হাসিটা শুনল তারপর বলল
তোমার হাসিটা খুব সুন্দর
ও হাসতে হাসতে বলল
আমার বাবাও তাই বলে
আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই সপ্ত
সপ্তর্ষি হঠাৎ সচকিত হয়ে উঠল I বলল
কেন ?
কেন মানে কি ? আমি তোমাকে দেখতে চাই I তুমি চাও না ?
না
সত্যি চাও না ? তোমার আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে না ?
আমি তোমাকে দেখেছি
কবে ? আর দেখে থাকলে কাছে আসলে না কেন ?
আমার ভয় করে
কিসের ভয় ?
আমার মনে হয় তুমি আমাকে দেখলে আমাদের বন্ধুত্বটা আর থাকবে না
কি সব অদ্ভুত কথা বল
তুমি সত্যি আমাকে দেখতে চাও ?
হ্যাঁ চাই I কবে দেখা করবে বলো ?
তুমি বল
নেক্সট উইকে I কালকে আমি কক্সবাজার যাচ্ছি আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটা প্রোগ্রাম আছে I বৃহস্পতিবার ফিরবো শনিবার দেখা করি ?
আচ্ছা
ঠিক আছে রাখছি
নিষণ
কি বলো ?
না ঠিক আছে I দেখা হবে বলবো

***************

কি করো ?
মেসেজটা পেয়ে নিষণ এর মনে হল এই মুহূর্তে হয়তো এই জিনিসটাই ওর সবচাইতে বেশি দরকার ছিল I নিষণ কোনমতে লিখল
ক্যান আই কল ইউ ?
না I আমি একটা পার্টিতে আছি I এখানে অনেক কোলাহল I টেক্সট করেই কথা বলি ?
না থাক I তুমি পার্টি এনজয় করো I বাই I
সাথে সাথেই ফোনটা এলো
এত রেগে যাও কেন ?
রাগ করিনি তো
তোমার কি হয়েছে ?
কিছু নাতো I বলতে বলতে নিষনের গলা ধরে এল

ডিপার্টমেন্ট এর পক্ষ থেকে এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজার এসেছে ওরা I আজ রাতে নিউ গ্রাজুয়েটদের অনারে একটা পার্টি হচ্ছে I একটু আগে সেখানে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল নিষণ I অনুষ্ঠানের কিছু কাজের দায়িত্ব পরেছিল ওর উপর I নিষণ কখনই এক্সিভলি কোনো অনুষ্ঠানে পারটিসিপেট করে না I তবে নেপথ্যে থেকে অনেক দায়িত্ব পালন করে I আজকের প্রোগ্রামের স্ক্রিপ্ট লেখা , এনিমেশন তৈরি করা সহ আরো অনেক কাজের ভার ছিল ওর উপর I সব টা শেষ করে , বুঝিয়ে দিয়ে ,উঠতে উঠতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল I ততক্ষণে সবাই রেডি হয়ে চলে গেছেI আজকের প্রোগ্রামের ড্রেসকোড আছে I ব্ল্যাক প্যান্ট এন্ড হোয়াইট শার্ট , সঙ্গে ব্ল্যাক কোট I নিষণ ট্রাভেল ব্যাগটা খুলে কোট বের করতে যেতেই হঠাৎ করে একটা ছবি মাটিতে পরল ভেতর থেকে I হয়তো কখনো রেখেছিলে কোটের ভাজে I ছবিটা হাতে নিতেই থমকে গেল নিষণ I হুড়মুড় করে ছোটবেলার কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো I ছবিটা ওদের তিনজনের I মায়ের পাশে 10 বছরের ছোট্ট নিষণ আর কোলে ফুটফুটে তুষাণ I মায়ের মুখে কি মিষ্টি একটা হাসি I কিন্তু সেই হাসি ছাপিয়ে নিষনের চোখের সামনে ভেসে উঠলো মায়ের রক্তাক্ত থেতলে যাওয়া মুখটা I নিষণ হাতের কোটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইল I তখনই মেসেজটা এল I

নিষনের বিষন্ন ভারী কন্ঠস্বর শুনে সপ্তর্ষি চমকে উঠলো I কোলাহল থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল
তুমি এখন কোথায় ?
কক্সবাজারে
এখন কোথায় ? তোমার তো সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম ছিল
হু I যায়নি এখনো
কথা বলতে বলতে নিষণ আস্তে আস্তে হোটেল থেকে বেরিয়ে বিচের দিকে চলে গেল I চারপাশটা বেশ অন্ধকার I আকাশে কেমন ঘোলাটে মরা একটা চাঁদ I চারিদিকে বিষণ্ণতাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে I ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে I হয়তো বৃষ্টি নামবে I নিষণ বলল
তুমি কি আমার সঙ্গে একটু কথা বলবে ?
অবশ্যই বলব I তোমার কি মন খারাপ ?
হু
কি হয়েছে ? আমাকে বলা যায় ?
নিষণ জবাব দিল না I শুধু বলল
অন্য কোনদিন বলব
আচ্ছা বলতে হবে না I একটা গান শুনবে ?
শোনাও
দাড়াও আমি একটু বাইরে বের হচ্ছি I এখানে অনেক শব্দ
ঠিক আছে
সপ্তর্ষি গান শুরু করল আর নিষণ আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো I

তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
নিবিড়, নিভৃত, পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম

মম জীবন যৌবন
মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে
নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবে
হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি
তব অঞ্চল ছায়া মোরে রহিবে ঢাকি
মম দুঃখবেদন
মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে
নিশীথিনী সম
সপ্তর্ষি হঠাৎই গান থামিয়ে বলল
– নিষণ আর সামনে যেও না I আমার খুব ভয় করছে
নিষণ চমকে এদিক ওদিক তাকালো I এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করল যে ও অনেকখানি জলের মধ্যে চলে গেছে I ভ্রুক্ষেপ না করে ই ও বলল
তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছ ?
প্লিজ নিষণ উঠে এসো I প্লিজ
তুমি কি এখানে আছো ?
তুমি রুমে যাও I আমার কথা শুনতে পাচ্ছ ?
মিশন জবাব দিল না I ইচ্ছা করেই আরো অনেকটা জলের মধ্যে নেমে গেল I হঠাৎ করে কেউ একজন এসে ওকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলো I নিষণ অবাক হল না I কেমন একটা প্রশান্তি বোধ করল I যে ও কে ধরে আছে সে ওর পিঠের মধ্যে গাল ছুঁয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে I হয়তো অনেকটা দৌড়ে এসেছে তাই I নিষণ ওর বুকের মধ্যে ধরে থাকা হাত দুটোকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল
– সপ্ত ?
কোন জবাব এলো না Iনিশান আচমকা সামনে ফিরল I চারিদিকে আবছা অন্ধকার I সামনের মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে মুখ নিচু করে I তার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না I নিষণ দুই হাতে ওর মুখটা তুলে ধরে চমকে উঠলো I তারপর দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বিস্মিত হয়ে বলল
– তুমি ?
চলবে……..
লেখনীতে
অনিমা হাসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here