সুখের কষ্ট,Part_2
Writer_Tahsina Islam Orsha
আমি দরজার দিকে দৌড়ে যেতে নিলেই উনি আমার পায়ে ধরে টান মেরে আমাকে ফেলে দেই ফ্লোরে। পড়ে গিয়ে মাথায় অনেক জোরে আঘাত লাগে আমার। উনি আমায় টেনে হেঁচড়ে উনার নিচে নিয়ে যায়। আর কিছু মনে নেই আমার।
????
সকালে জ্ঞান ফিরতেই অল্প অল্প রোদের ঝিলিক আমার চোখে এসে পড়ছে। চোখ ছাড়া আর কিছুই নড়াতে পারছি না আমি। সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে । মাথাটা তুলতে গিয়ে আবার ফ্লোরে ফেলে দিলাম। হঠাৎ উপরে ভারী বস্তু অনুভব হলো আমার। মাথাটা একটু উপরে তুলে দেখলাম উনি আমার বুকের উপর মুখ গুজে শক্ত করে ধরে শুয়ে আছে। আমি ব্যাথায় নড়তে পারছি না তবু ও উনাকে সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে আমায়। কাল রাতের কথা মনে পরতেই উনাকে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে উপর থেকে ফ্লোরে ফেলে দিলাম। উনি নিচে পরে গিয়ে জেগে যায়। আমি ভয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশে বসে পরি।
ভীষণ ভয় হচ্ছে আমার এখন এই পাগলটা আমায় মেরে না ফেলে। হে আল্লাহ কেনো আমার সাথে এমন করছো। আমার কপালে কি একটু ও সুখ লিখো নি। আমাকে এতো অভাগী করে কেন পাঠালে। এর থেকে আমার মায়ের সাথে আমাকে ও নিয়ে যেতে।
উনি আমার দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে। ভয়ে আমার ভিতরে সব শুকিয়ে গেছে। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। কিন্ত উনার ব্যবহারে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। উনি উল্টো আমাকে দেখে মনে হয় ভয় পাচ্ছে। এক সাইডে গিয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। উনার ব্যবহারে আমি থমকে গেলাম স্থির চোখে উনার দিকে তাকিয়ে তাকালাম।
আমার তাকিয়ে থাকা দেখে উনি বললো
–‘ আপনি আমার বউ তাই না? ( ভয়ে ভয়ে) আমার সাথে কানামাছি, গাড়ি দিয়ে খেলবেন? আমার অনেক গাড়ি আছে। ( একটু অন্য রকম ভাবে বললো বাচ্চাদের মতো)
উনার কথায় আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। উনিই কি সেই মানুষ যে কাল রাতে আমার সাথে এমন করেছে। আমার উপর এতো অত্যাচার করেছে। এমন আক্রমনাত্মক ভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিলো আমার উপর।
আমি ভয়ে চুপ হয়ে আছি কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না। দরজায় নক করছে কে জানি, আমি নড়াচড়ার শক্তি না পেলে ও নক পরতেই আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেই। দরজা খুলে দেখি আমার শাশুড়ী মা আর দেবর। মা আমায় দেখে কতক্ষণ চুপ করে দাড়িঁয়ে আছে। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই।
–‘ আমি জানি মা কাল রাতে তোমার উপর দিয়ে কি গিয়েছে। ছেলেটা যে এমন হয়ে যাবে কখনো ভাবিনি আমি। তোমাকে একটু সহ্য করতে হবে মা। ও অনেক ভালো শুধু একটু মিশতে হবে।
–‘ জ্বি মা। ( মাথা নুইয়ে)
–‘ তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। অয়ন স্বাধীনকে নিয়ে যাক। অয়ন যা স্বাধীনকে ফ্রেশ করিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে আয়। যাও মা তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।
আমি উপরনিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালাম। অয়ন ভিতরে এসে উনাকে নিয়ে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে ফ্লোরেই বসে পরলাম দরজায় হেলান দিয়ে। জীবনটা কেমন জানি হয়ে গেছে মুহুর্তের মধ্যেই। একটু ও শক্তি পাচ্ছি না শরীরে। চোখ দিয়ে এখন আর পানি ও বের হয় না।
তবু ও উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম রাতে তেমন ভালো করে দেখা হয়নি। আমি চুল মুছতে মুছতে কতো গুলো ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম
সব গুলো ছবিই স্বাধীনের। উনি এতো সুন্দর ছিলো এখন দেখলে বুঝাই যায় না। সব গুলো ছবিতেই উনাকে অনেক স্মার্ট লাগছে। বাহিরের দেশের সব গুলো ছবি।তাহলে কি উনি আগে দেশের বাহিরে থাকতো?? আগে কি উনি সম্পুর্ন সুস্থ ছিলো?? হ্যা সুস্থ না হলে তো এতো সুন্দর করে ছবি তুলতে পারতো না। তাহলে কি কারনে উনি মানসিক রোগী হয়ে গেলেন? মাথা কেমন জানি হ্যাং করছে কিছুই মাথায় ডুকছে না।
আবার দরজায় নক পরতেই আমার ধ্যান ভাঙে।
–‘ ভাবি আমি তুয়া সবাই বসে আছে তোমার জন্য তারাতাড়ি আসো।
–‘ হ্যা আসছি।
সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। স্বাধীন কতো গুলো চামচ দিয়ে ছোট মানুষের মতো খেলছে। আমার অবাক লাগছে অনেক এই সব দেখে। উনি এমন কেনো হয়ে গেলো। উনি কি সত্যিই এমন হয়ে গেছে নাকি অভিনয় করছে!??
আমার শশুর আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
–‘ মা বসো সবার সাথে নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে তো একটু সময় লাগবেই।
–‘ না বাবা আপনারা খান আমি পরে খেয়ে নিবো।
–‘ না তুমি আমার সাথেই বসে খাবে,, বসো।
বাবার কথা আমি আর ফেলতে পারলাম না আমি ও বসে পরলাম সবার সাথে কিন্ত শাপলা আমার দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে যার ফলে আমার কেমন জানি একটা লাগছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে আমি রুমে আসতেই আমার পিছনে স্বাধীন ও আসে। আমি উনাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় উনি আবার আমাকে কিছু করবে না তো। কিন্তু না উনি আমার কাছে এসে আমাকে খাটে বসিয়ে আমার কোলে শুয়ে পরে। আমি উনার ব্যবহারে অবাক না হয়ে থাকতে পারছি না।
–‘ আমাকে কি ভয় লাগে আপনার?
–‘ ন না না তো ( আমতা আমতা করে)
–‘ আমাকে সবাই ভয় পায় কেন? আমি কি খুব খারাপ? আপনার শরীরের গন্ধটা আমার খুব ভালো লাগে। আচ্ছা আপনি আমার সাথে খেলবেন?
আমি এতো গুলো প্রশ্নের কি জবাব দিবো কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু বললাম
–‘ হুম।
আমি হুম বলাতে উনি লাফ দিয়ে আমার কোল থেকে উঠে পরলো। আচ্ছা তাহলে আপনি বসুন আমি গাড়ি গুলো বের করি।
কথা গুলো বলে উনি অনেক গুলো খেলনা গাড়ি বের করে নিয়ে আসলো। আর আমাকে উনার কাছে যেতে বললো। আমি উনার থেকে একটু দূরে বসলাম উনি গাড়ি গুলো আমাকে দিচ্ছে আবার আমাকে উনার কাছে দিতে বলছে। উনি খুব খুশি হচ্ছে। হাতে তালি ও দিচ্ছে।
–‘ এই লাল গাড়িতে করে আমি আর আমার বউ হানিমুনে যাবো হা হা হা।
উনি যে এমন ছেলেমানুষি করবে আমি ভাবিনি। উনার এই বাচ্চা স্বভাবে আমি মুগ্ধ হচ্ছি।
হঠাৎ উনি বললো পানি খাবে তাই পানি আনতে নিচে গেলাম কিন্তু অয়নের রুম থেকে কথার শব্দ আসছে শুনে আমি একটু দাঁড়ালাম। আশা কথা বলছে বুঝা যাচ্ছে।
–‘ অয়ন বাবার ওই মেয়েটার সাথে এতো আধিখ্যেতা দেখানোর কি আছে?
–‘ আশা তুমি যা বুঝো না তা নিয়ে কথা বলবে না।
আশা কার কথা বলছে এই সব!!
কারো পায়ের শব্দ শুনে নিচে চলে যায় তারাতাড়ি সন্ধ্যা। পানি নিয়ে আসার সময় রাফিজা বেগম সন্ধ্যাকে ডাক দেই।
–‘ জ্বি মা বলুন।
–‘ মা তুমি আমার ছেলেকে সামলাতে পারবে তো?
আমি একটু চুপ থেকে
–‘ হুম মা পারবো।
–‘ আমার ছেলেকে তুমি দেখে রেখো।
–‘ কিন্তু মা উনি কি আগে সুস্থ ছিলে………
–‘শাপলা একটু দেখে যা তো
— জ্বি খালাম্মা আসতেছি
শাশুড়ী মা চলে গেলেন, উনি কি বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলতে চেয়েছিলাম? আমাকে কি ইগনোর করলেন? কিন্তু কি এমন হয়েছিলো উনার। সবাই কেমন জানি একটা ব্যববার করছে আমার সাথে।
স্বাধীনকে পানি দিয়ে বসে আছি। আমার মাথায় কিছু ডুকছে না। উনি এমন বাচ্চা স্বভাবের হয়ে গেলো কি ভাবে?
????
সারাদিন আমি স্বাধীনের সাথে বাচ্চাদের অনেক খেলা খেললাম কিন্ত সন্ধ্যা থেকে আমি উনাকে আর দেখতে পাচ্ছি না। তাই খুজঁতে থাকলাম উনি কোথায় দেখার জন্য। হঠাৎ কেউ একজন আমাকে টান দিয়ে একটা রুমে নিয়ে যায়।
–‘ শাপলা তুমি?? আমাকে ভয় দেখিয়ে ফেলেছো।
–‘ ভাবি আপনি স্বাধীন ভাইয়াকে বাচাঁন।
–‘ মানে!! কি হয়েছে উনার?
–‘ হয়নি হচ্ছে। উনাকে এই বাড়িরই একটা রুমে নিয়ে প্রতিদিন কি জানি করে পরে ভাইয়া পাগলের মতো হয়ে যায়। আর দিনে বাচ্চাদের মতো আচরণ করে। আগে উনি অনেক ভালো ছিলো। আমি আপনাকে সব পরে বলছি কিন্তু আপনি আগে ভাইয়াকে বাচাঁন।
আমি দৌড়ে গেলাম ওই রুমে কিন্তু কেউ নেই? তাহলে কি শাপলা মিথ্যা বলেছে?
হঠাৎ আমি অয়ন ভাইয়ার রুম থেকে স্বাধীনের চিকিৎকার শুনতে পেলাম। মা বাবা ও বাসায় নেই। আমি দৌড়ে রুমের কাছে গেলাম রুমে কে কে আছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।
স্বাধীন চিৎকার করছে
–‘ না না আমাকে ছেড়ে দাও
–‘ ভাইয়া এটা না দিলে তুই ভালো হবি না।
–‘ না না আমি দিবো না।
হঠাৎ স্বাধীনের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। আমি ভয় পেয়ে যায়। কি হলো উনার?
ওরা বের হচ্ছে বুঝতে পেরে সন্ধ্যা রুমের সাইডে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পরে। কে কে বের হলো সন্ধ্যা দেখতে পাই নি। সন্ধ্যা উকি দিয়ে দেখতে পারলো স্বাধীন রুম থেকে বের হয়ে ওদের রুমের দিকে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ও বের হয়ে তারাতাড়ি স্বাধীনের পিছনে গেলো।
সন্ধ্যা রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে স্বাধীন রুমের ভিতরে গিয়ে দেয়ালে নখ দিয়ে খামচাচ্ছে। আর নখ ভেঙে রক্ত পড়ছে। আর চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। স্বাধীনের এই অবস্থা দেখে সন্ধ্যার ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠে। সন্ধ্যা দৌড়ে গিয়ে স্বাধীনকে জড়িয়ে ধরে। এক হাত দিয়ে স্বাধীনের পিঠ আর এক হাত দিয়ে স্বাধীনের চুল আকরে ধরে সন্ধ্যা।
স্বাধীন আবার সন্ধ্যার পেটে আর কোমড়ে তার আধভাঙ্গা নখ ছুরির মতো বিধিয়ে দেই। সন্ধ্যা ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেলে কিন্তু সন্ধ্যা স্বাধীনকে আকরে ধরেই আছে ছাড়ছে না………
.
.
.
চলবে…….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।