সুখের কষ্ট,Part_4
Writer_Tahsina Islam Orsha
সন্ধ্যা লোকটাকে দেখে ফেলতেই উনি দৌড়ে
পালিয়ে যায় সন্ধ্যা শাপলাকে ডাকছে কিন্তু ওর কোন সারা শব্দ নেই। তাহলে কি শাপলা এখনো বাসায় আসেনি??? আর উনিই বা কে আমাকে দেখে এমন ভাবে পালালো। অদ্ভুত লাগলো বিষয়টা সন্ধ্যার কাছে।
কিন্তু শাপলা তো এতক্ষণে বাসায় চলে আসার কথা। ও আবার কোথায় গেলো?
–‘ কি ভাবছেন আপনি? আমাকে চকলেট কখন দিবেন?
স্বাধীনের কথায় সন্ধ্যার ধ্যান ভাঙে
–‘ হুম দিবো এত্তো গুলো দিবো।
–‘ জানেন আমার না সন্ধ্যা অনেক ভালো লাগে। খুব ইচ্ছে করে সন্ধ্যায় হাটতে বের হতে। কিন্ত সন্ধ্যায় অয়ন আমাকে কি ইঞ্জেকশন দেই আর হাটতে বের হতে পারি না। আমার একটু ও ভালো লাগে না তখন। সন্ধ্যার আকাশ খুব ভালো লাগে। একটা জিনিস খেয়াল করেছেন আবার আপনার নাম ও সন্ধ্যা, কি মিল তাই না? এই জন্য আপনাকে ও আমার খুব ভালো লাগে।
সন্ধ্যা অবাক হয়ে স্বাধীনের কথা শুনছে। স্বাধীনের কথা শুনে মনে হচ্ছে না স্বাধীন অসুস্থ। তারপর সন্ধ্যা ও স্বাধীনকে বললো
–‘ আমার ও স্বাধীন অনেক ভালো লাগে, স্বাধীন পাখির মতো আকাশে উড়ে বেরাতে ইচ্ছে করে। কি অবাক ব্যাপার তাই না? আপনার নাম ও স্বাধীন।
–‘ হা হা হা হুম।
–‘ এখন চলুন আপনাকে গোসল করিয়ে দেই। তারপর আমি গোসল করবো। সিহা মনে হয় চল আসছে।
সন্ধ্যা স্বাধীনকে শ্যাম্পু করে দিচ্ছে আর স্বাধীন সন্ধ্যাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে।
–‘ করছেন টা কি!! আমি ভিজে যাচ্ছি তো।
–‘ আপনি তো গোসলই করবেন। একটু ভিজলে কি হবে?
–‘ আমি আপনাকে গোসল করিয়ে গোসল করবো।
–‘ কেনো? আমার সাথে করলে কি হবে। আমরা এক সাথে গোসল করবো। আচ্ছা আমাকে একটা চুমু দিবেন?
–‘ মানেহহ!!আপনি দেখি অনেক পাকা।
–‘ আগে যখন আম্মু আমাকে গোসল করিয়ে দিতো তখন আমাকে চুমু দিতো কপালে। জানেন আপনি না আমার মায়ের মতো করে সব করেন। তাই বলেছি একটা চুমু দিবেন? ( ছোট বাচ্চাদের মতো)
সন্ধ্যার চোখে পানি চলে আসে স্বাধীনের কথা শুনে। এমন অদ্ভুত মায়া কেন লাগছে সন্ধ্যার ।চোখ বন্ধ করে সন্ধ্যা স্বাধীনের গালে ধরে কপালে আর দু গালে চুমু দেই।
–‘ খুশি এই বার?
–‘ হুম অনেক খুশি।
এই বার তারাতাড়ি গোসল করুন। সিহা মনে হয় আপনার জন্য চকলেট নিয়ে চলে এসেছে। ওর সামনে কোন দুষ্টমি করবেন না একদম গুড বয় হয়ে থাকবেন।
সন্ধ্যা স্বাধীনকে গোসল করিয়ে নিজে ও গোসল করে নেয়। স্বাধীনের জন্য আলমারিতে ভালো কাপড় খুজছে সন্ধ্যা কিন্তু পাচ্ছে না। একটা ভালো কাপড় ও নেই উনার। তারপর নিচে দেখলো একটা সুটকেস রাখা ওইটা খুলতেই দেখে অনেক নতুন নতুন কাপড় রাখা, কাপড়ের গায়ে সিলে নাম দেখে বুঝলো সব গুলো বাহিরের কাপড়। হয়তো উনি নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু এমন হয়ে যাওয়ায় আর পড়া হয়নি। সন্ধ্যা কালো কালারের একটা শার্ট আর একটা জিন্স দিলো স্বাধীনকে পরার জন্য।
স্বাধীনকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না সন্ধ্যার যে এটা স্বাধীন। ফর্সা গায়ে কালো খুব মানিয়েছে। সন্ধ্যা হা হয়ে তাকিয়েই আছে স্বাধীনের দিকে।
সিহা দরজায় নক দিয়ে
–‘ কি ব্যাপার আসতে পারবো তো নাকি?
সিহার কথায় সন্ধ্যার হুশ আসে।
–‘ সিহা চলে এসেছিস। ভিতরে আয়।
সিহা ভিতরে আসতে আসতে
–‘ কেমন আছেন ভাইয়া?
স্বাধীন কথা না বলে সন্ধ্যার পিছনে গিয়ে লুকায়।
–‘ সিহা আপনার বোন হয়, ও ই আপানার জন্য এত্তো এত্তো চকলেট এনেছে।
–‘ হুম এই যে দেখুন ভাইয়া এই সব গুলো চকলেট আপনার।
স্বাধীন খুশি হয়ে সিহার হাত থেকে চকলেট গুলো নিয়ে নেই।
আর বেডে বসে খেতে শুরু করে দেই।
–‘ কি ব্যাপার চকলেট পেয়ে বউকে ভুলে গেছেন?? বউকে চকলেট দিবেন না??
–‘ হুম আপনাকে দিবো আপনি তো আমার বউ, আর ওকে দিবো ও তো আমার জন্য চকলেট এনেছে তাই।
স্বাধীনের কথা শুনে সন্ধ্যা আর সিহা দুজনেই হেসে দেই। তারপর সন্ধ্যা বলে
–‘ থাক কাউকে দিতে হবে না আপনি ই খান।
সিহা সন্ধ্যার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে
–‘ আপু তুই ভালো আছিস তো?
সন্ধ্যা চুপ থেকে
–‘ হুম ভালো আছি। আমার ভাগ্যে যা ছিলো আমি তা মেনে নিয়েছি। জানিস উনি খুব ভালো।
–‘ আপু তোকে একটা কথা বলতে চাই।
?????
সন্ধ্যা স্বাধীনকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যেতে চাই বললো নাফিজা বেগমকে। নাফিজা বেগম গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
–‘ মা তুমি স্বাধীনকে সামলাতে পারবে তো বাহিরে নিয়ে??
–‘ আমি পারবো মা। আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন আমার উপর। তাছাড়া সিহা তো আছেই আমার সাথে।
–‘ কিন্তু অয়নকে নিয়ে গেলে ভালো হতো না?
–‘ মা অয়ন ব্যাস্ত ওকে ডিস্টার্ব করতে হবে না। আমি স্বাধীনকে সামলাতে পারবো। শুধু আপনার পারমিশন দরকার।
–‘ আচ্ছা নিয়ে যাও। তারাতাড়ি চলে এসো।আর ড্রাইভার কে সাথে সাথে রেখো যদি কোন দরকার পড়ে।
–‘ জ্বি মা, ধন্যবাদ।
স্বাধীন অনেক দিন পর বাহিরে এসে খুব খুশি তা বুঝতে পারছে সন্ধ্যা। স্বাধীনকে এমন খুশি দেখে সন্ধ্যার ও ভীষণ ভালো লাগছে। স্বাধীনের জন্য অনেক গুলো শপিং করে বাসায় চলে আসবে তখনই সিহা বললো
–‘ আপু এই খানেই একটা পার্ক আছে চল যায়। ভাইয়ার ও অনেক ভালো লাগবে।
সন্ধ্যা স্বাধীনের কথা চিন্তা করে আর না করলো না। আবার কবে না কবে বের হয়।
–‘ ঠিক আছে চল।
স্বাধীন পার্কের মাঝে ছোট বাচ্চাদের মতো খেলা করছে। সন্ধ্যা আর সিহা বসে বসে ওর এই সব পাগলামো দেখছে আর হাসছে। সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন নিচে পরে গেলে ফোন তুলে সামনে তাকাতেই ভুত দেখার মতো চমকে যায় সন্ধ্যা।
–‘ রিহান তুমি!! তুমি এই খানে কি করছো?
–‘ কেমন আছো সন্ধ্যা?
–‘ সিহা আমাকে সব বলে দিয়েছে। তুমি এমন করবে আমি কখনো ভাবিনি রিহান। একটু খানি ভালো থাকার আশ্বাসে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। আর তুমি!! ছিহ তোমাকে আমি কখনোই মাফ করবো না। তোমার জন্য আজকে আমি এই খানে। আমার বিয়ের জন্য পাত্র মানে স্বাধীনকে তুমি বের করে দিয়েছিলে মামিকে তাই না? ছিহ তুমি কয়েকটা টাকার লোভে যে অন্ধ হয়ে যাবে আমি কখনো ভাবিনি। অবশ্য ভালোই হয়েছে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি। এমন একটা জঘন্য মানুষের হাত থেকে আমি বেচেঁ গেলাম।
–‘ কি বলছো এই সব?
–‘ নাটক করো না রিহান তুমি জানো না, তোমার আর মামির সব কথা সিহা শুনে ফেলেছে। কিন্তু ও বিয়ের আগে সেটা আমায় বলেনি। আর ভেবো না আমি খুব ভালো আছি।যতটা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশিই ভালো আছি।
–‘ একটা পাগলের সাথে তুমি ভালো আছো?
–‘ খবরদার রিহান উনাকে পাগল বলবে না। উনি তোমাদের মতো মুখোশ পরা মানুষ থেকে অনেক ভালো। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি উনাকে ভালোবাসি।
–‘ সত্যিই ই নাকি আমায় শোনানোর জন্য বলছো?
–‘ তুমি মিথ্যা বলার মতো ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না আমার লাইফে। আর একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসবে তাই ই স্বাভাবিক নয় কি? কবুল বলার সাথে সাথে আল্লাহ এই স্বামী স্ত্রী নামক সম্পর্কে এক অদৃশ্য মায়া আর টান জন্মিয়ে দেই। আমি উনাকে ভালোবাসি।
–‘ আমি ভুল করেছি সন্ধ্যা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে ফেরত পেতে চাই।
–‘ চুপ করো রিহান, এই সব বলতে তোমার লজ্জা করে না!?? ভালোবাসার মানুষকে টাকার বিনিময়ে একজনের হাতে তুলে দিয়ে এখন এসেছো আবার ফেরত চাইতে!! সিহা চল এই খান থেকে
সন্ধ্যা আর সিহা স্বাধীনকে নিয়ে চলে যাচ্ছে পিছন থেকে রিহান বলছে
–‘ আমি তোমাকে আমার করেই নিবো সন্ধ্যা কথা দিলাম তোমায়। আমার ভুল আমি শুধরে নিবো।
সন্ধ্যা আর একমিনিট ও দাড়াঁলো না তারাতাড়ি সেখান থেকে চলে গেলো স্বাধীনকে নিয়ে।
??????
–‘ মা শাপলা এখনো আসেনি?
সন্ধ্যার কথা শুনে আশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
–‘ ভাবি আপনি শাপলাকে দিয়ে কি করবেন? শুধু শাপলা শাপলা করেন কেনো??
–‘ শাপলাকে দিয়ে কি করবো সেটা তোমার না জানলে ও চলবে। মা আপনি কি কিছু জানেন? ও সারা দিন ধরে বাসায় আসে নি, কোথায় গিয়েছে ও?
নাফিজা বেগম একটু চুপ থেকে
–‘ শাপলা তো বলে গেলো ওর এক খালার বাসায় যাবে বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবে। এতক্ষণে তো চলে আসার কথা এখনো আসছে না কেনো বুঝতেছি না তো।
.
.
.
সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে গেছে। সন্ধ্যা এক মগ কফি নিয়ে বেল্কুনিতে গিয়ে বসলো। ভালো লাগছে না কিছু মামার কথা আর মায়ের কথা খুব মনে পরছে আজকে। স্বাধীন রুমে বসেই গেমস খেলছে ফোনে।
আজকে স্বাধীনকে কোথাও যেতে দিবে না সন্ধ্যা। সন্ধ্যা স্বাধীনকে যেই ভাবেই হোক ভালো করে তুলবে। এই সব সাত পাচঁ ভাবতে ভাবতে বাহিরে তাকিয়েই দেখে আবারো সেই চাদর দিয়ে মোড়ানো লোকটা। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায় উনাকে দেখে। কিন্তু উনি এমন করছে কেনো?? কি দেখছে এই খানে এই ভাবে দাঁড়িয়ে? সন্ধ্যার কাছে কেমন জানি একটা খটাকা লাগছে। তাই সন্ধ্যা আর কিছু না ভেবে কফির মগটা রেখে বের হয়ে যায় লোকটাকে ধরতে।
সন্ধ্যা পিছন থেকে লোকটার কাছে গিয়ে দেখে এখনো স্বাধীনের রুমের বেল্কুনির দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছে। কিন্তু এই খানে একজন না দুজন লোক।
–‘ আপনারা কারা?? এই খানে কি করছেন??
সন্ধ্যার গলার আওয়াজ শুনেতেই দুজনেই সন্ধ্যার দিকে ঘুরে তাকায়। সন্ধ্যা অবাক হয়ে যায়
–‘ শাপলা তুমি এই খানে!!!?? আর তোমার সাথে উনি কে???………..
.
.
.
চলবে……..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।