#সুখের খোঁজ,পর্ব -২১,২২
#মৌমিতা হোসেন
২১
রাহেলার কথা শুনে তৌসিফ আর নিতু কিছুক্ষণ চুপ করে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।কি বলবে বুঝতে পারেনা। নিতুর খেয়াল হয় গতো দুমাস ধরে ওর পিরিয়ড বন্ধ।আগেও মাঝে মাঝে নিতুর পিরিয়ড অনিয়মিত হতো।বিশেষ করে যখন কোন বিষয়ে বেশি টেনশন করতো বা ঝামেলায় থাকতো তখন।তাই বিয়ের পরে এটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায়নি। কিন্তু বিয়ের পর বরং ওর খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।যাই হোক তৌসিফ রাহেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”আন্দাজি বেশি কথা বলো না তো। বেশি কথা বলা আমার পছন্দ না।যাও গিয়ে নিতুর জন্য খাওয়ার কিছু নিয়ে আসো।”
রাহেলা একটু মন খারাপ করে। ওনার বয়স অনুযায়ী যেই অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা থেকেই তো বলেছে বৌ মনিকে।বলে,”আইচ্ছা যাইতাছি আমি।”মন খারাপ করে নিতুর জন্য নাস্তা আনতে চলে যায়।
নিতু কি বলবে খুঁজে পায়না। খুব চিন্তায় পরে যায়।বিশেষ করে তৌসিফ বিষয়টা কীভাবে নেবে সেই চিন্তায় থাকে।এর মাঝে তৌসিফ বলে,”সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো ডাক্তার এর কাছে যাবো।”
“আরে বাদ দিন তো।তেমন কিছু না। এমনি হয়তো বমি পেয়েছ।ডাক্তার দেখাতে হবে না। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করলেই দেখবেন ভালো হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।”
তৌসিফ একটু বিরক্ত হয়।বলে,”চুপ করো তো।যেটা বলেছি সেটা শোনো। রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।আজ বেশি লাফালাফি করলে পা বেঁধে রাখবো বলে রাখলাম।”তৌসিফ এর মেজাজ দেখে নিতু চুপ হয়ে যায় মিটমিট করে হাসে।
রাহেলা নাস্তা আনলে নিতু একটু খায়। খেতে নিলেই বমি পায় তাই বেশি খেতে পারেনা।এরপর রুমে গিয়ে রেস্ট নেয়। সারাদিনে তৌসিফ আর নিতু কে ঘরের বাইরে যেতে দেয়নি। খুব টেনশনে ছিলো ও।কারন সত্যি যদি নিতু প্রেগনেন্ট হয়!!এর মানে তো তৌসিফ ও বাবা হবে।এখনি এতো বড় দায়িত্ব ও কীভাবে নেবে? আবার কেমন এক ভালো লাগার অনুভূতি ও সৃষ্টি হয়। বিকেলে নিতু কে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যায়। কিছু টেস্ট দেয় সেগুলো করায়।বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে যায়।
আকবর আলি ওদের দেখে বললো,”এখন কি অবস্থা বৌ মায়ের?ডাক্তার কি বলেছে?”
“কিছু টেস্ট দিয়েছে। করিয়ে এসেছি।কাল সকালে রিপোর্ট পাবো তারপর বোঝা যাবে।”
“আচ্ছা। তাহলে তো সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।তেমন কিছু হয়তো হয়নি। মেয়েটা সারাদিন এতো পরিশ্রম করে। নিজের যত্ন নেয়না। দুর্বলতা থেকেও হতে পারে।যাক সকালে দেখি রিপোর্ট এ কি আসে। বৌমাকে কোন কাজ করতে দিসনা।রেস্ট নিতে বল। আমিও শুয়ে পরি।”চিন্তিত চেহারা নিয়ে আকবর আলি রুমে চলে যায়।
এদিকে নিতু কে রাতেও আজ তৌসিফ কোন কাজ করতে দেয়নি। খুব যত্ন নেয় নিতুর। তবে সকাল থেকে কথা কম বলছে তৌসিফ। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে। রুমে এসে দু’জনই চুপচাপ শুয়ে পরে।কারো চোখেই ঘুম নেই আবার কোনো কথাও নেই। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর নিতু বলে,”একটা কথা বলি?”
“হুম বলো।”
“আমার না খুব ভয় লাগছে, চিন্তা লাগছে। মানে কেমন জানি লাগছে ঠিক বোঝাতে পারবো না।আর আপনাকেও দেখে মনে হচ্ছে আপনি খুব চিন্তিত। তাই সব মিলিয়ে কেমন জানি….”
তৌসিফ নিতুর মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।আর বলে,”এতো রাতে তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি একটু চিন্তিত এটা ঠিক। আমার একমাত্র গুলমুলু বউটা অসুস্থ এই কারনে।অন্য কিছু না।”
“যদি খালা যেটা বলেছে সেটা হয়?তাহলেও কি আপনি খুশি হবেন? নাকি রাগ করবেন?”
“কেনো রাগ করবো?বোকার মতো কথা বলছো কেনো? এটা ঠিক একটু চিন্তিত।কারন এখনি এতো তাড়াতাড়ি এই দায়িত্ব আমি ঠিকভাবে পালন করতে পারবো কিনা জানিনা।তাই বলে রাগ করবো সেটা হবে কেনো। পাগলী একটা। যাক আল্লাহ ভরসা। এখন ঘুমাও তো।”-তৌসিফ নিতু কে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো করে চুমু খায়।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিতু ও আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
খুব ভোরে ঐ দিন দু’জনেরই ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিতুর শরীর এখন একটু ভালো লাগছে। তবুও ওঠার সাথে সাথেই তৌসিফ বলে,”কোথায় যাচ্ছো?”
“ওমা! উঠতে হবে না?নাস্তা খাবেন না?খালা চলে আসবে এখন ।কাজ আছে তো।”
“না কোনো কাজ নেই।আজ তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না।উঠেছো ভালো কথা কিন্তু রান্না ঘরে যেতে হবে না। রাহেলা খালা যা বানাবে আজ তাই খাবো।আজ খালাকে বলে আসো সব একা করতে।”
নিতু খুব খুশি হয় ওর প্রতি তৌসিফ এর এতো চিন্তা দেখে। আবার খালা একা সব কীভাবে করবে সেটা নিয়ে একটু চিন্তায় পরে যায়। নিতু বলে,”ঠিক আছে কিছু করবো না। কিন্তু কি বানাবে সেটা বলতে তো যেতে হবে নাকি?আর আপনি আজ এতো ভোরে উঠেছেন কেনো?কি হয়েছে?”
“না এমনি।আজ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।কেমন অস্থির লাগছে।দশটায় তোমার রিপোর্ট আনতে যাবো।কি আসবে রিপোর্ট এ আল্লাহ জানে।”
“বুঝতে পেরেছিলাম যে এজন্য আপনার চোখে আজ ঘুম নেই। বেশি চিন্তা করবেন না প্লিজ। আপনার চিন্তা দেখে আমার ও চিন্তা লাগছে।”
নিতু কে চিন্তিত দেখে তৌসিফ কথা ঘুরায়।বলে,”আরে আমিতো এমনি বলেছি।এতো চিন্তার কিছু নেই। তুমি যাও বলে আসো নাস্তা বানাতে।”নিতু উঠে যেতে নিলে তৌসিফ আবার নিতুর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে কপালে আদর দিয়ে মৃদু হেসে বলে,”এবার যাও।”
নিতুর মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।মনে মনে ভাবে,”এই কি সেই কটকট করা মানুষটা?এখন ওকে কতোই না ভালোবাসে।”এই সুখ যেনো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকে সেটাই কামনা করে। নিতু ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যেয়ে খালাকে কাজের নির্দেশনা দেয়।
রাহেলা হেঁসে বলে,”বৌ মনি আফনে চুপচাপ বহেন। আমি সব করতাছি। চিন্তা কইরেন না।আর আমি শিউর যে আফনের পেডে বাচ্চা।আফনে মা ওইবেন।”
নিতুর কেমন যেনো লাগতে থাকে ওনার কথা শুনে। রাহেলা আবার বলে,”বাচ্চা পেডে আইলে যেসব সমস্যা হয় সেই সবডিতো আফনের মধ্যে দেখতাছি।হেরপরেও আফনেগো ডাক্তার দেহান লাগবে? আমাগো আবার এইসব ডাক্তার দেহানের ঝামেলা ছিলো না।”
নিতুর আজ আর ভালো লাগে না রাহেলা খালার এতো এতো কথা শুনতে।আবার বমি পায়।তাই দ্রুত রান্নাঘর থেকে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে তৌসিফ না ঘুমিয়ে ঘড়ি দেখছে আর পায়চারি করছে। নিতু একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে,”বসুন তো।কি শুরু করেছেন?”
“যেতে হবে তো।তাই রেডি হলাম।”
“আসুন একটু কথা বলি। দশটা বাজলে যাবেন”নিতু তৌসিফ কে ডেকে শুয়ে পরে।
“আচ্ছা” বলে তৌসিফ নিতুর পাশে গিয়ে বসে ।বলে,”কী ব্যাপার নিতু খারাপ লাগছে?”
নিতু মাথা নাড়ে। কথা বলতে ডাকলেও ভালো লাগছিলো না। তাই তৌসিফ এর হাত ধরে চুপচাপ শুয়ে থাকে। কিছু সময় পর সবাই নাস্তা করে।আকবর আলি দোকানে চলে যায়। তৌসিফ রিপোর্ট আনতে যায়। রিপোর্ট এ দেখে পজিটিভ এসেছে।দেখে তৌসিফ এর কেমন যেনো লাগতে থাকে।ও কি করবে বুঝতে পারছিলো না।তাই বাসায় না গিয়ে সোজা বাবার দোকানে চলে যায়।আকবর আলি এ সময়ে ছেলেকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ছেলের কাছে এসে বলে,”কি হয়েছে বাবা?তুই এ সময়ে এখানে কেনো?কোনো সমস্যা? বৌমার রিপোর্ট এনেছিস?কি হয়েছে বল।”
তৌসিফ চুপচাপ বাবার হাতে রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়। আকবর আলি তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেখে।দেখে খুশিতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।বলে,” আরে আমি দাদা হবো?এমন খুশির খবরে তুই এমন চেহারা করে রেখেছিস কেনো?বাবা হওয়া জীবনে কতো আনন্দের সেটা কি তুই বুঝতে পারছিস?”
কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই একজন মিষ্টির দোকানে যা মিষ্টি নিয়ে আয়। আমি দাদা হবো। আমার সংসারে আমার খেলার সঙ্গী আসবে।কতো আনন্দের দিন আজ।”টাকা বের করে দিয়ে ছেলের কাছে আসে।
তৌসিফ বাবাকে বলে,”বাবা আমার যেনো কেমন লাগছে। তোমার আজ দোকানে বসতে হবে না । তুমি আমার সাথে বাসায় চলো।”
“ঠিক আছে চল বাবা।”আকবর আলি ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারে। দুজন মিলে দোকান থেকে মিষ্টি কিনে বাসায় যায়।ওপরে গিয়ে দেখে নিতুর পাশে জুঁই, বিথি, সাদিয়া,চাচিরা সবাই বসে আছে। সকালে রাহেলা আন্দাজের ওপর ভিত্তি করেই সবাইকে নিতুর খবর জানায়।আর সেই খবর পেয়েই সবাই আনন্দে ওদের বাসায় এসে নিতু কে ঘিরে বসে থাকে।আকবর আলি সবাইকে আবারও কনফার্ম করে।চাচিরা খুশি হয় দাদি হবে,বিথিরা তো কতো পরিকল্পনা শুরু করে। ফুপি হবে যেই সেই ব্যাপার!!চাচিরা কতো উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে নিতু কে। নিতু লজ্জায় মাথা নিচু করে সবার সব কথা শুনছে। নিতু ঠিক অনুভূতি কেমন হওয়া উচিত বুঝতে পারছেনা। সবাই মিষ্টি মুখ করে।
এতোটা সময় তৌসিফ ও চুপচাপ সব দেখতে থাকে,শুনতে থাকে।কি বলবে,কি বলা উচিত বুঝতে পারেনা।নিতুর শরীর হঠাৎ খারাপ লাগতে থাকায় চাচিরা সবাইকে যার যার কাজে যেতে বলে। নিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়।যাওয়ার আগে তৌসিফ কে বলে,”বাবা এখন কিন্তু অনেক দায়িত্ব।বাবা হওয়া এতোটাও সহজ নয়।তাই এখন অন্তত আস্তে আস্তে সংসার এর দায়িত্ব নে।তোর বাবাকে বিশ্রাম করতে দে। অনেক তো হলো। কখনো তোকে কিছু বলিনি। এবার নিতুর জন্য, নতুন অতিথির জন্য নিজেকে পাল্টে ফেল। নিতুর খেয়াল রাখিস। গেলাম আমরা।”
নিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,”বৌমা যখন যা দরকার নিশ্চিন্তে বলো কিন্তু।”চাচিরা চলে যায়। বাড়িতে আজ যেনো উৎসব চলছে।আকবর আলি সবাইকে আজ ওনাদের বাসায় খেতে বলেন।ফোন দিয়ে নিতুর মা’কে সুখবরটা জানায়।আর দাওয়াত দেয়। কিন্তু সেতু, সাজিদ এর পরীক্ষা থাকায় ওরা আসতে পারবে না জানায়। সালেহা বেগম খবর শুনে খুশিতে কেঁদে দেয়।
সবাই চলে গেলে তৌসিফ ধীরপায়ে হেঁটে নিতুর পাশে গিয়ে বসে। নিতুর হাতটা ধরে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নিতু খানিক লজ্জা পায়, অস্বস্তি হয় ওর। নিচের দিকে তাকিয়েই জানতে চায়,”এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?কি হয়েছে?”
তৌসিফ আদরমাখা কন্ঠে বলে,”কিছু হয়নি তো। আমি একটু আমার গুলুমুলু বৌ টাকে দেখছি।এ সময় তো মেয়েরা অনেক মোটা হয়ে যায়।স্বাস্থ্য ভালো হয়। মানে গুলুমুলু হয়। তুমিও কি এতো গুলুমুলু হয়ে যাবে?”
নিতুর রাগ হয়। এখনি তৌসিফ এই বিষয়ে চিন্তা করছে?এর মানে মোটা হয়ে গেলে তৌসিফ আর নিতু কে ভালোবাসবে না?এসব চিন্তা করতে করতে বলেই ফেলে,”এর মানে কি? আপনি কি তখন আমায় আর ভালোবাসবেন না ?”
“আরে ধুর ভালোবাসবো না কেনো? আমিতো এমনি বললাম। তুমি খুশি হয়েছো তো নিতু রানি?”
“আপনি খুশি হলে আমিও খুশি । তবে অনেক ভয় লাগছে, অস্থির লাগছে।”
তৌসিফ মনে মনে বেশ টেনশন করলেও নিতু কে সেটা বুঝতে দেয়না। মুখে হাসি এনে নিতু কে জড়িয়ে ধরে বলে,”কোন দুশ্চিন্তা করোনা। আমি আছিতো তোমার পাশে। দেখবে সব ঠিক হবে। সন্ধ্যায় রিপোর্ট নিয়ে কিন্তু ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে। তাই সময়মতো রেডি থেকো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”বলে নিতু চুপচাপ বসে রইল।
সারাদিনে নিতু কে আর রান্না ঘরে ঢুকতে দেয়না কেউ।আজ চাচিরাই সব রান্না করলো। সবাই মিলে বেশ আনন্দ করলো। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেলো।নিতু ও ক্লান্ত থাকায় রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে। সন্ধ্যায় তৌসিফ নিতু কে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যায়।ডাক্তার বলে,” সব ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই। তবে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা না নিলে ভালো হতো।”যাই হোক ডাক্তার কিছু নিয়ম কানুন বলে দেয় আর সাবধানে থাকতে বলে। পুরোটা সময় তৌসিফ খুব মনোযোগ দিয়ে ডাক্তার এর সব কথা শোনে।আর কীভাবে নিতুর সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা যায় সেসব হিসেব কষতে থাকে।
বাসায় ফিরেই শুরু হয়ে যায় তৌসিফ এর কর্মকান্ড। কীভাবে কী করলে নিতুর ভালো হবে,ও সুস্থ থাকবে সেসব নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকো তৌসিফ।
চলবে…..
#সুখের খোঁজে…… (পর্ব -২২)
#মৌমিতা হোসেন
বাসায় এসে তৌসিফ ফ্রেশ হয়ে নিতু কে ফ্রেশ হতে বলে। নিতুর শরীর খারাপ লাগায় কোন কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।বের হয়ে দেখে রুমে তৌসিফ নেই।তোয়ালে নেড়ে খাবার দিতে রান্নাঘরে যেতে নিলেই দেখে তৌসিফ টেবিলে খাবার দিচ্ছে, বাবাকে খেতে ডাকছে । নিতু কে দেখেই ডেকে চেয়ার টেনে দিলো বসার জন্য। নিতু কিছু বলতে যাবে অমনি মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।বলে,”আজ থেকে তোমার রান্নাঘরে ঘোরাঘুরি করা বারন।”
নিতু অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,”মানে কি? ঘরের এতো কাজ কে করবে?পাগল হয়েছেন?”
“হুম পাগল হয়েছি।ডাক্তার বলেছে শোনোনি?পুরো রেস্ট নিতে হবে।ভারী কাজ করা নিষেধ। তাহলে সমস্যা হবে।”
“আরে, এসব তো ডাক্তার বলবেই।তাই বলে ওদের কথা শুনে শুধু বসে শুয়ে থাকলে কি হবে?”
এর মাঝে আকবর আলি এসে বলেন,”কি হয়েছে?কি নিয়ে তোদের এতো কথা চলছে শুনি।আর ডাক্তার কি বলেছে।”
“সেটাই তো বলছি নিতু কে।ডাক্তার বলেছে বেশি কাজ করা যাবেনা। বেশি বেশি রেস্ট নিতে হবে। কিন্তু ও শুনছেই না।”
“বৌ মা ডাক্তার যদি বলে তাহলে তো মানতেই হবে।”
“সেটাই বাবা। তুমি একটু বলে দাও নিতুকে।”
নিতু তখন বেশ বিরক্ত হয় তৌসিফ এর ওপর।আর বলে,”বাবা ওনাকে বলুন বেশি বাড়াবাড়ি না করতে।ডাক্তার যেভাবে বলেছে আমি সেভাবেই চলবো।ডাক্তার আমাকে কাজ করতে মানা করেনি।বলেছে সাবধানে চলতে ,ধীরে বিশ্রাম নিয়ে কাজ করতে। আমি সেভাবেই করবো।আর আমার কাজে যেনো উনি বাধা না দেয়।যদি পারে তাহলে যেনো দোকানে যাওয়া শুরু করে। এতে আপনার উপকার হবে বাবা।কারন আপনার শরীর ভালো না।আর কেউ খেয়াল না করলেও আমার চোখে এটা ঠিকই ধরা পড়েছে।”হঠাৎ করে অনেক সাহস করে কথাগুলো বলে চোখ তুলে তাকাতেই দেখে শ্বশুর এবং তৌসিফ দু’জনই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ওর কথা শুনছে। তৌসিফ এর চাহনি দেখে মনে হচ্ছে আজ ওর খবর আছে।কি করবে ভেবে পায়না।
সাথে সাথে আবার মাথা নিচু করে বলে, “দুঃখিত । আমি কি খুব বেশি কিছু বলেছি?কোন ভুল কিছু বললে মাফ করে দেবেন।”
এতোক্ষণ ধরে নিতুর কথা শুনে আকবর আলি বলেন,”না বৌমা একটুও ভুল বলিস নি।সব ঠিক বলেছিস। আমাকে নিয়ে যে আমার মেয়ে এতো ভাবে সেটা দেখে খুব ভালো লাগলো আমার। তৌসিফ দোকানে যাবে কিনা সেটা আমার জানা নেই তবে তুই যে বলেছিস এতেই আনন্দে আমার বুকটা ভরে গেছে।আর একটা কথা সংসার টা তোর।তাই কীভাবে কী করলে ভালো হবে সেটা তুই ভালো বুঝবি। তবে হ্যা শরীর খারাপ করে কোন কাজ করা যাবেনা বৌমা। দরকার হলে রাহেলার কাজ বাড়িয়ে দে।বেতন বাড়িয়ে দে।মোটকথা আমার বৌমাকে সুস্থ থাকতে হবে।”
নিতু বাবার কথা শুনে বেশ খুশী হয়। হাসিমুখে বলে ধন্যবাদ বাবা।এর মধ্যে তৌসিফ এর দিকে তাকিয়ে দেখে রাগি চোখে ওকে দেখছে। নিতু চুপচাপ আর কোন কথা না বলে খেতে বসে।খাওয়ার সময় আর কেউ কারো দিকে একবার এর জন্য তাকায়নি। নিতু মনে মনে ভাবছে আজতো ওর খবর আছে। তৌসিফ খেয়ে রুমে চলে যায়। নিতু কে কাজের ব্যাপারে আর কিছু বলেনা। নিতুর একটু মনটা খারাপ হয়।সব গুছিয়ে নিতু রুমে গেলে দেখে তৌসিফ রুমে নেই আর বারান্দায় দরজা চাপানো। নিতু বারান্দার দরজা খুলতে নিলেই তৌসিফ বলে ওঠে,”দরজা খুলোনা নিতু। আমি সিগারেট খাচ্ছি। তোমাদের ক্ষতি হবে তাই দরজা চাপানো। আমি আসছি একটু পরে।”
নিতু শুনে আবার অবাক হয়। সাথে তৌসিফ এর চিন্তা দেখে খুশিও হয়।ও ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরে।এরই মধ্যে তৌসিফ ও ফ্রেশ হয়ে এসে নিতুর পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। নিতু বলে,”আপনি কি আমার ওপর রাগ করেছেন?”
তৌসিফ নিতুর কপালে চুমু খেয়ে বলে ,”করেছি তবে অল্প। আমার নিতু দেখলাম আজ বেশ সাহসী হয়ে গেছে। আমার মুখের ওপর কতো গুলো কথা বললো।বাচ্চার খবর পাওয়ার সাথে সাথে এতো পাওয়ার আর বাচ্চা যখন চলে আসবে তখন কি অবস্থা হবে সেটা ভাবছি।”
খানিক লজ্জা পায় নিতু।বলে,”সাহস কোথায় দেখালাম?দেখুন সারাদিন আমরা এই তিনজন মাত্র মানুষ।খালা বেশির ভাগ কাজ করে দেবে। বাকিটুকু যদি না করি তাহলে কীভাবে হবে।আর মা বলেছে,এ সময় সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে নাকি ক্ষতি হয়। একটু কাজকর্ম করতে হয়।আর আমি নিশ্চই এমন কোন কাজ করবো না যেটায় আমার বা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হতে পারে।”
এতোক্ষণ চুপচাপ শুনে তৌসিফ বললো,”বুঝলাম। তবে সাবধানে করবে কিন্তু।যদি দেখি তুমি অসুস্থ হয়েছো তাহলে কিন্তু সব কাজ বন্ধ করে রুমে আটকে রাখবো মনে থাকে যেনো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে মনে থাকবে। আমি এমন কিছু করবো না যাতে অসুস্থ হতে পারি।হলো?”
“হলো।নিতু?”
“হুম বলুন।”
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমার বাবার দিকে এতো খেয়াল রাখার জন্য।”
নিতু মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে বললো,”আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে লাভ কি। বাবার দিকে খেয়াল রাখা আপনার ও দায়িত্ব।আর এখনতো নতুন অতিথি আসছে। তাই বলছিলাম যে, আমার একটা কথা রাখবেন?”
“হুম অবশ্যই রাখবো যদি রাখার মতো হয়।বলো।”
“প্লিজ কাল থেকে আপনি বাবার সাথে দোকানে যান।কাজ বুঝে নেন।দোকানের দায়িত্ব বুঝে নেন। বাবাকে এখন একটু বিশ্রাম দেন।বয়স হয়েছে বাবার। একটু বোঝার চেষ্টা করুন।”
তৌসিফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”ঠিক আছে। কাল থেকে আমি দোকানে যাবো হলো তো?”
নিতু বুঝতে পারেনি যে তৌসিফ এতো সহজে ওর কথা মেনে নেবে। খুব অবাক হয় তৌসিফ এর কথা শুনে। খুশিতে জড়িয়ে ধরে ওকে।বলে,”অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।আর অনেক ভালোবাসি। অনেক।”
“আমিও অনেক ভালোবাসি তোমাকে।আর তোমার কথা মেনে নেয়ার জন্য আমাকে কিন্তু তোমার কোন উপহার দেয়া উচিত।”
“আমি? আমি আপনাকে কি দেবো বলুন। আমার কাছে তো আপনাকে দেয়ার মতো কিছুই নেই।”
তৌসিফ দুষ্টু হাসি দিয়ে নিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,”কে বলেছে তোমার কাছে আমাকে দেয়ার মতো কিছুই নেই। তোমার কাছে যা আছে তা অন্য কারো কাছে নেই।”
নিতু তৌসিফ এর কথা বুঝতে পেরে লজ্জায় ওর বুকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তৌসিফ বলে,”কদিন পর আমার বাচ্চার মা হবে অথচ এখনো এতো লজ্জা? তাহলে কীভাবে কি করবো?”
নিতু তৌসিফ এর লাগাম ছাড়া কথা বন্ধ করার জন্য ওর মুখের ওপর হাত দেয়। তৌসিফ নিতুর হাতে পরম আবেশে আদর দিয়ে জড়িয়ে ধরে। চলতে থাকে দুজনের লাগাম ছাড়া ভালোবাসা।
পরদিন সকালে তৌসিফ রেডি হয়ে এসে বাবার সাথে বসে নাস্তা শেষ করে।অন্য সময় নিতু পরে নাস্তা খেলেও আজ ওর সাথেই বসায়।কারন নিতু যাতে ঠিকমতো খায়। নাস্তা শেষে আকবর চলে যেতে নিলে তৌসিফ বলে,”বাবা দাঁড়াও। আমিও যাবো তোমার সাথে।”
আকবর আলি, নিতু দুজনই অবাক হয়। তৌসিফ এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,”কেনো কিছু বলবি?”
“হুম। আমিও বের হবো তোমার সাথে। মানে আজ থেকে আমিও তোমার সাথে গিয়ে দোকানে বসবো। কিছু দিন কাজগুলো আমাকে শিখিয়ে দিও।তারপর আমি কাজ শিখে ফেললে তোমাকে আর যেতে হবে না।আজ থেকে দোকানের দায়িত্ব নিতে চাই বাবা। দেবে না বুঝিয়ে?”
আকবর আলি একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছেলের কথা শুনছে। বিশ্বাস হচ্ছে না। কেঁদে ফেলে তিনি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।বলে,”সত্যি তুই যাবি?আজ থেকে তাহলে আমি চিন্তা মুক্ত হলাম? তোকে নিয়ে আমার আর কোন চিন্তা নেই।আর কোন চিন্তা নেই।”
তৌসিফ ও বাবাকে জড়িয়ে ধরে। নিতুও খুশি হয়ে বাবার -ছেলের মধ্যকার ভালোবাসা দেখতে থাকে। তৌসিফ রাজি হলেও নিতু ভেবেছিলো আরো কিছু দিন পরে হয়তো যাবে দোকানে। কিন্তু সত্যি আজকেই এমন পরিবর্তন দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।
আকবর আলি নিতুর কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।বলে,”আজকে এসব সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র তোর জন্য। তোকে ছেলের বৌ করে এনে আমি জিতে গেছিরে।এই জীবনে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমার সব চিন্তা শেষ। তোরা দুজনে সুখে থাকবি এটাই দোয়া করি। ভালো থাকিস মা।”
নিতুর শ্বশুর এর দোয়ায় আর মমতা মাখানো ভালোবাসায় ওর বাবার কথা মনে পড়ে।আজ মনে হচ্ছে ওর মতো সুখি আর কেউ নেই।
তৌসিফ বলে,”বাবা মেয়ের ভালোবাসা শেষ হলে এখন চলো বাবা আমরা যাই।
“হুম চল। দেরি হয়ে গেলো।”
বের হবার আগে নিতু যাতে অতিরিক্ত কোন কাজ না করে সেই ব্যাপারে সাবধান করে দেয়।আর রাহেলা কে বলে যায় নিতুর দিকে খেয়াল রাখতে।দুজন বেরিয়ে পড়লে নিতু রাহেলা কে নিয়ে ঘরের রান্না সহ সব কাজ শেষ করে। রাহেলা অবশ্য নিতু কে তেমন কোন কাজ করতে দেয়না। নিজেই বেশির ভাগ কাজ করে। দুপুরে শ্বশুর আর তৌসিফ দুজন খেতে আসে। বিকেলে আবার যায়। বাসায় ফিরতে রাত এগারোটা বেজে যায়। আজ তৌসিফ কে দেখে প্রচন্ড ক্লান্ত মনে হয়। তৌসিফ আজ বুঝতে পারে দোকানে সারাদিন ওর বাবা কতোটা কষ্ট করে।মনে মনে ঠিক করে বাবাকে আর এতো কষ্ট করতে দেবেনা।সব বুঝে নেয়ার পর থেকে বাবাকে বলবে বাসায় বসে বিশ্রাম নিতে।
কেটে যায় সাত মাস। নিতুর প্রেগনেন্সির নয় মাস শেষ।ওজন অনেকটাই বেড়ে গেছে এই কয় মাসে।আর বেশি দিন বাকি নেই ডেলিভারির। সামনের মাসেই ডেট দিয়েছে। শরীরটা কয়েকদিন থেকেই খারাপ লাগছে।এখন উঠতে, বসতে, খেতে সব কিছুতেই কষ্ট হয় নিতুর।শুলেই মন হয় যেনো শ্বাস নিতে পারছেনা। আয়নায় নিজেকে দেখতে বিশ্রি লাগে।বিশাল বড় পেট।গতো কয়মাস থেকেই আর শাড়ি পড়তে পারেনা।ঢোলা জামা, পেটিকোট পড়তে হচ্ছে।সাজলেও নিজেকে বিরক্ত লাগে দেখতে। বাবুটা হঠাৎ হঠাৎ পেটে লাথি মারে,নড়াচড়া করে তখন কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি আসে।ওর ভেতরে একটা প্রান একটু একটু করে বড় হচ্ছে।ওর নিজের সন্তান।ভাবা যায়!!
গতো এই কয় মাস তৌসিফ এর অতিরিক্ত ভালোবাসায় নিতুর অবস্থা খারাপ।এখন নিয়ম করেই রোজ দোকানে যায়।আকবর আলি এখন আর দোকানে যায়না।সব বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করে তৌসিফ এর মনোযোগ এখন শুধু পরিবার আর দোকানের দিকে। সকালে দোকানে যাওয়ার আগে একসাথে নাস্তা খাওয়া, দোকানে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় তৌসিফ এর ফোন।ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে আর নিতুর সব কাজ পর্যবেক্ষণ করে। নিতু মাঝে মাঝে একটু বিরক্ত হলেও আবার তৌসিফ এর ভালোবাসা দেখে খুশিতে মন ভরে যায়।নিয়ম করে রোজ দুপুরে বাসায় আসার সময় নিতুর জন্য ফুলের মালা নিয়ে আসে , খোঁপায় পড়িয়ে দেয়।রাতে নিয়ম করে পেটের ওপর কান পেতে নতুন সদস্যের সাথে কথা বলবে , পেটে চুমু খাবে, আহ্লাদ করবে।
আজকেও রাতে ঘুমোতে এসে নিতু কে জড়িয়ে ধরে বলছে, “আমার কিন্তু একটা মা চাই বলে দিলাম। মাকে আমি ছোটবেলায় হারিয়েছি তাই আমি চাই আমাদের প্রথম বাচ্চাটা মেয়ে হোক।”
নিতু বলে,”আল্লাহ যা দেয় তাতেই খুশি হবেন। দোয়া করুন যেনো আল্লাহ একটা সুস্থ বাচ্চা দেন। আমারতো এটুকুই চাওয়া।”
“ঠিক আছে তাও তোমার কথাই মেনে নিলাম। তবে মেয়ে হলে আমি বেশি খুশি।”বলে আবার পেটে চুমু খেয়ে নিতু কে জড়িয় ধরে শুয়ে পরে।এসব দেখে নিতু প্রায়ই আবেগে কেঁদে দেয়।ভাবে এতো সুখ ওর কপালে সইবে তো।
আকবর আলি এখন বাসাতেই থাকে। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া, হাঁটাহাঁটি করা, খাওয়া,ঘুম এই হলো ওনার কাজ। নিতু কে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।
জুঁই, বিথি, সাদিয়া প্রতিদিন একবার করে বিকেলে এসে নিতু কে দেখে যায়।চাচিরাও ভালো মন্দ রান্না হলে নিতু কে দিয়ে যায়। নিতুর বেশ সুন্দর সময় কাটে। তবে শরীরটা আজকাল ভালো লাগে না।
তপুর একটা চাকরি হয়েছে। নিতু শুনে বেশ খুশী হয়। তৌসিফ পছন্দ না করায় সহজে তপুর সামনে যায়না নিতু। তবে মনে মনে ঠিক করে বাবুটা পৃথিবীতে এলে দুভাই এর মধ্যে যাতে সম্পর্ক ভালো হয় সেই ব্যবস্থা করবে।
আজ সকাল থেকেই নিতুর শরীরটা ভালো লাগছে না।কেমন যেনো অস্থির লাগছে।গতো সপ্তাহে ডাক্তার দেখানোর পর বলেছিলো যে পানি কমে গেছে।বাচ্চার নড়াচড়া যেনো খেয়াল রাখে।আজ সকাল থেকে মনে হচ্ছে বাবুটা কম নড়ছে।তাই কেমন যেনো অস্থির লাগছে নিতুর।
চলবে…….