সুখের খোঁজ,পর্ব -৩১,৩২

0
567

#সুখের খোঁজ,পর্ব -৩১,৩২
#মৌমিতা হোসেন
৩১

রিপোর্ট হাতে পেতে এখনো তিনদিন বাকি। তৌসিফের শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে।জ্বর যায় আবার আসে।সমস্ত শরীর ব্যাথা।ভোর রাতে একবার বমির সাথে রক্ত গেছে। এটা দেখে তৌসিফ বেশি ভয় পেয়েছে।ভাগ্য ভালো তখন নিতু ঘুমে বিভোর ছিলো।তাই টের পায়নি। নাহলে আরো অস্থির হয়ে যেতো। তৌসিফ আস্তে করে এসে আবার শুয়ে পরে। তবে চোখে আর ঘুমেরা ধরা দেয়না।খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিতে থাকে মন।

এদিকে নিতুও তৌসিফ এর শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তায় পরে যায়। তপু কে বললে ও রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে।তপুও বুঝতে পারে খুব খারাপ কিছু হয়তো সামনে ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু কার সাথে এসব আলাপ করবে , কীভাবে কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

বাসার সবাই তৌসিফের শরীরের এই অবস্থা দেখে মন খারাপ করে আর খুব চিন্তায় পড়ে যায়।আজ জুঁই, সাদিয়া, বিথি সবাই এসেছে। তৌসিফের শরীর খারাপ শুনে সবাই পরিকল্পনা করে একসাথে আসে। তবে এসে ভাইকে এমন অবস্থায় দেখে সবাই আৎকে ওঠে।দুমাস আগেও তৌসিফ দেখতে যেমন ছিলো এখন কেউ দেখলে চিনবেই না। ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে ওদের কারোরই ভালো লাগে না। নিতু কে দেখেও ওরা খুব মন খারাপ করে।কেমন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে ওকে।গতো কিছুদিন ধরে তৌসিফের সেবা করে আর তৌসিফের চিন্তায় চিন্তায় নিতু নিজের শরীরের দিকে নজর দেয়ার কথা ভুলেই গিয়েছে।

আজ অবশ্য সবাইকে একসাথে দেখে তৌসিফ আর নিতু খুব খুশি হয়। তৌসিফের শরীর খারাপ থাকলেও সবাই সারাটা দিন একসাথে হাসি আনন্দে কাটায়।আনমনেই তৌসিফ বলে,”হতে পারে এটাই সবার সাথে একসাথে হাসি আনন্দে কাটানো আমার শেষ দিন।”

বিথি কথাটা শুনে বলে,”এমন খারাপ কথা বলছো কেনো ভাই? দেখবে রিপোর্ট নরমাল আসবে।ঔষধ খেলেই ভালো হয়ে যাবে।”

“তাই যেনো হয়রে। তোদের ছোটবেলায় অনেক বকেছি কেউ রাগ করিস না যেনো আমার ওপর। সবাই মাফ করে দিস।”

তৌসিফের এই কথা শুনে সবার খুব মন খারাপ হয়। ভাবে হয়তো জ্বর এর জন্য আবোলতাবোল বকছে। বিথি উঠে তৌসিফের কাছে গিয়ে বলে,” বড় ভাই হিসেবে তুমি আমাদের কোন অন্যায় দেখলে বকতেই পারো।এতে আবার মাফ কিসের ভাই? তোমার বকা আমরা সবাই ভালোবাসি। তোমার কাছে আমরা আজীবন ছোটই থাকব।তাই এমন কথা আর কোনদিন বলো না।”

বিথির কথায় জুঁই আর সাদিয়াও একমত পোষন করে।সবাই তৌসিফের কথায় মন খারাপ করে।আর এদিকে নিতুর ভেতরে তোলপাড় চলতে থাকে।এর মধ্যে তৌসিফের আবার জ্বর এলে নিতু জোর করে রুমে নিয়ে শুইয়ে দেয়।জ্বরের ঘোরে সারারাত অনেক কিছুই বলে তৌসিফ।তার পুরোটা জুড়েই ছিলো নিতু। রাতে আবারো রক্তবমি হয়।এটা দেখে নিতুর টেনশন বেড়ে যায়। সারারাত নিতু চোখের পাতা এক করেনি।মাথায় পানি দেয়,জলপট্টি দেয়। এদিকে সালেহা তৌসিফ আর নিতুর এই অবস্থা দেখে নিজেও চোখের পানি ফেলে।কেনো জানি সালেহার ভেতরেও অস্থিরতা কাজ করছে। ভালো লাগে না কিছু।নাতিদের সামলায় তিনি।

ভোরের দিকেও জ্বর কমে না তৌসিফের। অতিরিক্ত জ্বর এ তৌসিফ জ্ঞান হারায়। নিতু ভয় পেয়ে তপু কে ফোন করে জানালে তপু তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স এনে তৌসিফ কে নিয়ে এলাকার ঐ হাসপাতালে ভর্তি করায়।ডাক্তার বলে, অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য তৌসিফ সেন্সলেস হয়েছে। সারাদিন তৌসিফের সাথেই থাকে নিতু আর তপু। বিকেলে জ্ঞান ফেরে তৌসিফের।জ্বর কিছুটা কমে। তৌসিফের জ্ঞান ফিরতেই নিতুর মুখে হাসি ফোঁটে।নিতু তৌসিফের হাত ধরে বলে,”এখন কে..কেমন লাগছে আপনার?”

তৌসিফ মৃদু হাসার চেষ্টা করে অস্ফুট স্বরে বলে,”এইতো ভালো। একটু ভালো লাগছে।”তৌসিফ হাত উঠিয়ে নিতুর গালে দিতে গিয়ে মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে।সমস্ত শরীর ব্যাথায় আর হাতে ক্যানুলা লাগানো থাকায় তৌসিফের হাত নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। তৌসিফের কষ্ট দেখে নিতু কেঁদে দেয়।নিজেই এগিয়ে এসে তৌসিফের কপালে আলতো চুমু খায়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে ,”ভালোবাসি । আপনাকে অনেক ভালোবাসি।”

তৌসিফ নিজেও আস্তে করে বলে,”আমিও ভালোবাসি তোমাকে।এই টুকু জ্বর হয়েছে আমার এতেই তুমি নিজের কি হাল করেছো?এমন পাগলামী করলে হয় বলো? এজন্যই তো খারাপ লাগলেও তোমাকে বলতাম না আমি।কান্না বন্ধ করো। পাগলী বৌ ।”

নিতু অনেক কষ্টে কান্না থামায়। কিন্তু বুকের ভেতর অসহ্য ব্যাথা অনুভব করে। তীব্র ব্যাথা। শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা এক বিন্দু।অনেক চেয়েও নিতু তৌসিফ কে ওর কান্নার কারন বলতে পারেনা।আসোলে হাসপাতালে আনার পরেই ডিউটি ডাক্তার তৌসিফের অবস্থা দেখে ওর বিষয়ে ডিটেইলস জানতে চায়। নিতু সব বলার পর ডাক্তার গতো সপ্তাহের রিপোর্ট দেখে তৌসিফের কি হয়েছে সেটা বলে। সব শুনে অনেকটা সময় নিতু বাকরুদ্ধ হয়ে বসে ছিলো।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না।

আর এই পুরো বিষয়টি তপুর সামনে এতো দ্রুত ঘটেছে যে, চাইলেও বিষয়টা আর লুকিয়ে রাখতে পারে না তপু। তাছাড়া তিনদিন পর রিপোর্ট দিলে তো সবটা আরো ভালো ভাবে জানতেই পারতো। তপু মনে প্রানে দোয়া করছিলো যে আগের রিপোর্ট যেনো ভুল হয়।ভেবেছিলো শিওর হয়ে তারপর নাহয় সবাইকে জানাবে বিষয়টা। কিন্তু সেটা আর হলো না। তপু নিতুর অবস্থা দেখে ওকে গিয়ে বলে,”ধৈর্য ধরো বোন।এখনো কনফার্ম না। রিপোর্ট অনেক সময় ভুল আসে। আমি মনে প্রাণে দোয়া করছি যেনো রিপোর্ট ভুল হয়।”

নিতু আস্তে করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমাকে বলেননি কেনো ভাইয়া? আমাকে আপনার বলা উচিত ছিলো।”

“এমন খবর আমি কীভাবে বলবো তোমাকে বোন?আর আমি এখনো বিশ্বাস করি রিপোর্টে ভুল এসেছে।এই টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করিনা যে আমার ভাইয়ের এতো কঠিন অসুখ হয়েছে। আমার ভাইটার কিছু হতে পারেনা। আমি হতে দেবো না।”তপু কাঁপা স্বরে কথাগুলো বলে কেঁদে দেয়।কারন তৌসিফের অবস্থা দেখে ও নিজেও বুঝতে পারছে যে রিপোর্টে যা এসেছে তা ঠিক হবার সম্ভাবনা বেশি।

নিতু সেই থেকে আর তপুর সাথে কোন কথা না বলে তৌসিফের এর পাশে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকে।কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় নিতুর খেয়াল নেই। তপু এসে কয়েকবার ডাকলেও ফিরে তাকায় না। তৌসিফের জ্ঞান ফেরার পর এতোটা সময় বাদে কথা বলে নিতু।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

তপু তৌসিফ আর নিতুর কথা শুনে একটু শান্ত হয়। এতোটা সময় তপু নিতু কে নিয়েও চিন্তায় ছিলো আর খুব অধীর আগ্ৰহে ভাইয়ের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় ছিলো।বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এলে তপু ডাক্তার এর সাথে তৌসিফ এর কাছে যায়।ডাক্তার সব চেক করে পরবর্তী রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে চলে যেতে নিলে তৌসিফ বলে,”আমি বাসায় যাবো কখন? মানে আমি হাসপাতালে আর থাকতে চাচ্ছিনা।”

ডাক্তার কিছু বলতে নিলেই নিতুর ইশারায় বুঝতে পেরে বলে,”এইতো আরো কয়েকটা দিন থাকতে হবে।
তারপর যাবেন।”

তপুর দিকে তাকিয়ে বলে,”পেশেন্ট এর দিকে খেয়াল রাখবেন।আর বাকিটা রিপোর্ট আসার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

ডাক্তার চলে গেলে তৌসিফ এর কাছে এসে তপু বলে,”কিরে একেবারে ভয় পাইয়ে দিয়েছিস।এখন কি অবস্থা? একটু ভালো লাগছে?”

“নারে ভালো লাগছে না।ব্যাথা হচ্ছে।সব জায়গায় ব্যাথা। সত্যি করে বলতো আমার কি হয়েছে? এমনটা আগে কখনো লাগেনি তো।”

নিতু সাথে সাথে বলে,”কি হবে? কিছু হয়নি। কিছু হয়নি আপনার।ডাক্তার বলে গেলো তো যে কিছু হয়নি । এমনি অনিয়মের জন্য শরীর খারাপ লাগছে আপনার।আর …আর কিছু না।”

তবুও নিতুর সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”সেটাই তেমন কিছু হয়নি তোর। চিন্তা করিস না। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে।”

তৌসিফ ওদের কথা শুনে কিছু বলেনা। তবে সমস্যা যে গুরুতর সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। নিতুর হাত ধরেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। সন্ধ্যায় সালেহা বেগম তৌসিফ কে দেখতে সাজিদের সাথে হাসপাতালে আসে। সাথে নাতিদের নিয়ে আসে। সারাদিন মা’কে না দেখে ওরাও অস্থির হয়ে যায়। হাসপাতালে এসেই তিনজন নিতুর কোলে দৌড়ে আসে।তুলি তৌসিফের কাছে এসে দেখে ঘুমাচ্ছে। বাবার এই অবস্থা দেখে খুব মন খারাপ করে। বাবার হাতে চুমু খায়।ধীর পায়ে হেঁটে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,”মা বাবার কি হয়েছে?বাবা কথা বলছেনা কেনো?”

“বাবার জ্বর আম্মু।তাই ঔষধ খেয়ে তোমার বাবা ঘুমাচ্ছে।”

“বাবা কবে বাসায় যাবে? এখানে বাবার থাকার দরকার নেই। বাবাকে বাসায় নিয়ে চলো। আমি বাবার দেখাশোনা করবো।তাহলেই বাবা সুস্থ হয়ে যাবে।”

নিতু চুপচাপ তুলির কথা শোনে।কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না।কি বলবে?কবে সুস্থ হবে?

তুলি আর নিতুর কথা শুনে তপু এসে তুলিকে কোলে তুলে নেয়।আদর দিয়ে বলে,”এইতো মা আর ক’দিন পরেই তোমার বাবা বাসায় যাবে। একটু সুস্থ হোক।”

ওদের কথাবার্তায় তৌসিফ এর ঘুম ভেঙে যায়।চোখ খুলে বাচ্চাদের দেখে খুশিতে বাচ্চাদের নাম ধরে কাছে ডাকে।তুলি আর নাহিন বাবার কন্ঠ শুনেই দৌড়ে যায় বাবার কাছে।ক্যানুলা লাগানো হাত দিয়ে ওদের আদর করতে গেলেই ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে । অমনি নিতু দৌড়ে তৌসিফের কাছে গিয়ে বলে,”আপনার কোথায় কষ্ট হচ্ছে ?কেনো হাত নাড়াতে গেলেন?চুপ করে শুয়ে থাকুন।”

তৌসিফ কে বলেই তুলির দিকে তাকিয়ে বলে,”কেনো বিরক্ত করছো বাবাকে?”

তুলি মায়ের কথায় কেঁদে দেয়। তৌসিফ তুলিকে কাছে ডাকে। নিতু কে বলে,”আমার মায়ের সাথে কখনো এভাবে রেগে কথা বলো না নিতু। এটা আমার পছন্দ না।”

নিতু অনুভব করে বাবা-মেয়ের ভালোবাসা।তাই চুপ হয়ে যায়। তৌসিফ তুলিকে আদর করে দেয়।নাহিন,নিরব কে আদর করে।নিরব বাবার কোলে উঠতে চায় কিন্তু তৌসিফ কোলে নিতে পারেনা। খেতে না পারায় তৌসিফের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।তাই ভোরে আসার পর থেকেই স্যালাইন চলছে। নিজের দুর্বলতা দেখে আজ তৌসিফের নিজেকে কেমন যেনো অসহায় মনে হয়।এই অল্প কদিনেই যে এতো দুর্বল হয়ে পরেছে সেটা তৌসিফ নিজেও খেয়াল করেনি।এতো শক্ত সবল একজন মানুষ সে কিনা আজ তার এই ছোট্ট কলিজার টুকরোদের কোলেও নিতে পারছে না। এতো টুকু শক্তি পাচ্ছেনা তৌসিফ। নিজের অবস্থা দেখে খুব অবাক হয়। কষ্টে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে।

তুলি , নাহিন তৌসিফের কাছে এসে বলে,”বাবা আমাদের কোলে নিতে হবে না। আমরা তো এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। তুমি আমাদের সাথে একটু গল্প করোনা বাবা। অনেক দিন গল্প বলোনা।নানুমনি আমাদের আবার নিয়ে যাবে বাসায়।তাই ততোক্ষণ তুমি আমাদের গল্প শোনাও। ”

তুলি ছোট হাত দিয়ে বাবার চোখ মুছে দেয়। তৌসিফ তখন কষ্ট হলেও হেসে বলে,”এখানে দুজন চুপ করে বসো আম্মু। আমি ভেবে দেখি কি গল্প বলা যায়।”

বাবার কথা শুনে দুই ভাই বোন চুপ করে তৌসিফের পাশে বসে।আর বাবার বলা গল্পের অপেক্ষায় থাকে।

এদিকে সালেহা নিতু কে নিয়ে বাইরে এসে বলে,”কি ব্যাপার মা নিতু তোকে এমন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে কেনো?ডাক্তার কি বলেছে?”

নিতু মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলে,” কিছু ঠিক নেই মা। কিছু ঠিক নেই। তোমার জামাই অনেক অসুস্থ।”

“অসুস্থ বুঝলাম। কিন্তু এতো ভেঙে পড়ছিস কেনো? ঠিকমতো ঔষধ খেলে দেখবি ভালো হয়ে যাবে। রিপোর্টে কি এসেছে?”

নিতু মায়ের কাছে সব খুলে বললে সালেহা বেগম কি বলবে বুঝতে পারেনা। বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।একি শুনছে সে? কতোই বা বয়স হয়েছে তৌসিফের। কীভাবে কি করবে বুঝতে পারেনা। নিতু কে বলে,”আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। বেশি করে নামাজ পড়।দান,সদকা কর। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ চাইলে দেখবি তৌসিফ ঠিক একদিন সুস্থ হয়ে যাবে।”

নিতু মনোযোগ দিয়ে শোনে মায়ের কথা।আর মনে প্রানে আল্লাহকে ডাকে যেন আল্লাহ তৌসিফ কে সুস্থ করে দেয়।”

চলবে…..

#সুখের খোঁজে….(পর্ব -৩২)
#মৌমিতা হোসেন

রাত নয়টার দিকে সালেহা বেগম নাতিদের নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।যাওয়ার আগে তৌসিফ বাচ্চাদের প্রান ভরে আদর করে। জড়িয়ে ধরে কপালে, গালে আদর দেয়। নিতুর কাছে অনুরোধ করে বলে,”আজ ওদের হাসপাতালে আমার সাথে রেখে দাওনা। আমার কাছে থাকুক।নিরব কতো ছোট।ও আমাদের ছাড়া থাকতে পারবে না নিতু। রাতে তোমাকে না পেলে কাঁদবে।”

“কী বলছেন এসব। এখানে থাকার জায়গা কোথায়? হাসপাতাল কতৃপক্ষ এটা মানবে না।আর ওদের রাখলে আমি আপনার যত্ন নেবো কীভাবে?তাই এমন আবদার করবেন না প্লিজ।”

“একটু চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?”কথাটা বলেই তৌসিফ তপুর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,”একটু দেখ না ভাই।ওদের আজ রাতটা এখানে থাকতে দেয়া যায়না?”

“ভাইরে শরীর খারাপ এর সাথে সাথে তোর মাথাও খারাপ হয়ে গেছে। নাহলে এই ছোট বাবাদের হাসপাতালে থাকতে দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করতে বলতিনা । চারিদিকে রোগ বালাই এর অভাব নেই।এর মধ্যে ওদের এখানে থাকাটা অনেক রিস্কি হয়ে যায় ভাই।আর এখানে রাতে একজনের বেশি থাকতেও দেয়না। দরকার হলে কাল দিনে আবার নিয়ে আসবো ওদের হলো?”

তপুর কথা শুনে তৌসিফ ভাবলো ঠিক কথাই তো বলছে তপু।এসব ব্যাপারে তৌসিফ এতো সচেতন হয়েও কীভাবে এমন ‍অসচেতন এর মতো কথা বললো?এসব ভেবে নিজেই দ্ধন্দে ভুগতে থাকে । তুলি যাওয়ার সময় খুব মন খারাপ করে।ওর কথা মনে আসতেই তৌসিফের মনটা খারাপ হয়ে যায়। মেয়েটা বাবা বলতে অজ্ঞান। সেখানে বেশ কিছুদিন যাবৎ মেয়েকে ঠিকমতো আদরটাও করতে পারছে না। মনে মনে দ্রুত যেনো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকে।

তপুও সারাদিন ছিলো। অনেক কষ্ট করেছে।তাই থাকতে চাইলেও নিতুর অনুরোধে সালেহা বেগমের সাথে তপুও চলে যায়। তবে যাওয়ার আগে কিছু দরকার পড়লেই নিতু যেনো সাথে সাথে তপু কে ফোন দিয়ে জানায় এই কথা বারবার বলে যায়। বাচ্চাদের ফেলে রাতে এই প্রথম নিতু বাইরে থাকবে।তাই ওর মনটা খুব উশখুশ করতে থাকে। যাওয়ার আগে বারবার ওদের আদর করে দেয়।নিরব যাওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়ে তাই ওকে নিতে তেমন সমস্যা হয়নি।নিতু সবাইকে বিদায় দিয়ে তৌসিফের কাছে এসে বলে,”কি হয়েছে?মন খারাপ করে বসে আছেন কেনো?”

তৌসিফ মুখ ভার করে বলে,”আমি কেমন স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি তাই না নিতু?আমার জন্য আজ তোমার কষ্ট হবে। ওদের ফেলে তুমি যে থাকতে পারো না সেটাতো আমি জানি। তবুও নিজের কথা ভেবে আমি তোমাকে একবারও ওদের সাথে যেতে বললাম না।”

“না আপনি মোটেই স্বার্থপর না। আমি না থাকলে আপনার কাছে এখানে কে থাকবে বলুন? ওদের সাথে বাসায় ওদের নানু,মামা,চাচা, চাচি সবাই আছে। সবাই ওদের খুব ভালো ভাবে খেয়াল রাখবে। কিন্তু আপনার খেয়াল রাখতে এখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাছাড়া আপনাকে আপনার সবচেয়ে অপ্রিয় জায়গায় একা রেখে আমিও বাসায় যেয়ে শান্তি পেতাম না।তাই নিজেকে দোষ দেয়া বন্ধ করুন।”কথাগুলো বলে নিতু তৌসিফের হাত ধরে পাশে বসে।

তৌসিফ অন্য হাত দিয়ে নিতুর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”হয়তো তুমি ঠিক বলছো। আমার খেয়াল রাখার জন্যতো শুধু তুমি আছো। অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার তাইনা নিতু? খুব বেশি বিরক্ত করছি তোমায়।”

নিতু তৌসিফ এর হাতে চুমু খায়। আলতো করে ক্যানুলার জায়গায় হাত বুলিয়ে বলে,”একটুও কষ্ট হচ্ছেনা।আর একটুও বিরক্ত করেছেন না। আপনার জন্য এটুকু করতে না পারলে আপনার অর্ধাঙ্গিনী হলাম কেনো? আমার জন্য এই ভবঘুরে আপনি সারাদিন কতোই না কষ্ট করেন।আর আমি আপনার অসুস্থতায় সামান্য আপনার সেবা করতে পারবো না? এটা কি করে হয়?”

তৌসিফ তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,”তোমার জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি নিতু। তুমি আমার জীবনে না এলে আমি জানতেই পারতাম না যে জীবনটা এতো সুন্দর। কখনো বুঝতে পারতাম না যে প্রেম, ভালোবাসার অনুভূতি এতো স্নিগ্ধ, এতো মধুর!! জানো?তোমার জন্য অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয় আমার।ইচ্ছে হয় পৃথিবীর সকল সুখ এনে তোমার জীবনটা আনন্দে ভরিয়ে দেই।যেখানে থাকবে না কোন দুঃখ,কষ্ট।আচ্ছা নিতু তোমাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা কি তুমি বুঝতে পারো?আমি না তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আর তাই হয়তো প্রতিনিয়ত তোমাকে হারানোর ভয়ে আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে তোমার থেকে আমি অনেক দুরে চলে যাচ্ছি। আগে তো কখনো এমন মনে হয়নি। তাহলে এবারের অসুখে কেনো আমার এমন মনে হচ্ছে?”কথা বলতে বলতে তৌসিফের চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরে।

নিতু কেঁদে দেয়। খুব চেষ্টা করেও কান্না আটকে রাখতে পারেনা। তৌসিফ নিতুর চোখের পানি মুছে দিতেই নিতু উঠে তৌসিফকে জড়িয়ে ধরে। তৌসিফ নিতুর বুকে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে থাকে।চোখ থেকে দু’জন এর পানি অবিরত ঝরছে। দুজনের মাঝে বেশ কিছু সময় চলে পিনপতন নিরবতা। তৌসিফ খেয়াল করলো ও শতো চেষ্টা করেও নিতুর পিঠে হাত রেখে ওকে সামলাতে পারছে না। নিতু নিজেকে সামলে বলে ,”আপনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনার কিছু হবে না।আমি হতেই দেবো না।আর আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন। আমাকেও এটা সেটা বলে কষ্ট দিচ্ছেন। তাই এসব বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলবেন না।এখন আমরা আনন্দের গল্প করবো, শুধু ভালোবাসার কথা বলবো।ঠিক আছে?”

তৌসিফ মাথা নেড়ে সায় দেয়। মুখে কিছু বলতে নেবে তখনই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। বমি হয়।আর বমির সাথে রক্ত যায়।যেটা দেখে দু’জনি ভয় পায়। শরীরে আবার প্রচন্ড ব্যাথা হয় সাথে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তৌসিফ ব্যাথায় চিৎকার করে জ্ঞান হারায়। নিতু তৌসিফের অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডেকে আনে।ডাক্তার ব্যাথার ইনজেকশনসহ আরো কতো গুলো ইনজেকশন দিয়ে বলে,”পেশেন্ট এর অতিরিক্ত ব্যাথার জন্য জ্বর এসে জ্ঞান হারিয়েছে ।ঔষধ দিয়েছি আস্তে আস্তে কমবে।আর বাকি রিপোর্ট আসার আগে পুরোপুরি ট্রিটমেন্ট শুরু করা যাচ্ছেনা।তাই অপেক্ষা করতে হবে।আর..”

নিতু উদ্বেগ নিয়ে বলে,”আর কি ডাক্তার সাহেব?”

“আর ওনার অবস্থা আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছেনা। যেসব লক্ষণ দেখছি সেগুলো …যাক আগেই কিছু বলা উচিত হবে না। রিপোর্ট আসুক অপেক্ষা করি। খেয়াল রাখবেন ব্যাথা হলেই ব্যাথার ইনজেকশন দিতে হবে।”কথাগুলো বলেই ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।

নিতু চুপচাপ তৌসিফের পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করে। মায়ের বলা কথা মনে পরতেই তাড়াতাড়ি ওজু করে নামায পড়তে বসে। দুহাত তুলে খুব কাঁদে। তৌসিফের আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করে।মন প্রান দিয়ে দোয়া করে যেনো রিপোর্ট ভালো আসে। সারারাত নির্ঘুম কাটে নিতুর। তৌসিফ কে নিয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়। রাতে আর কিছু খাওয়া হয়না নিতুর। তৌসিফ এর পাশে চেয়ারে বসে কখন যে ঝিমুনি আসে টের পায়না।

ভোরের দিকে মাথায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙে নিতুর। তাকিয়ে দেখে তৌসিফ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিতু তাকাতেই মৃদু হেসে বললো,”এভাবে ঘুমোচ্ছো কেনো নিতু? আমার জন্য শেষমেষ তোমার শরীর খারাপ হবে দেখো।”

নিতু তৌসিফের হাত ধরে ওর কথার জবাব না দিয়ে বললো,”এখন কেমন লাগছে আপনার?ব্যাথা কমেছে? কিছু খাবেন?”

“এখন অনেক ভালো লাগছে। কিছু খাবো না নিতু। খেতে নিলেই বমি হবে।খেতে পারছিনা বলেই তো স্যালাইন দিচ্ছে তাই না?”

“হুম, তবুও বললাম যদি কিছু খেতে ইচ্ছে করে তাই।”বলে তৌসিফের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খায়।

“তোমাকে আরো কিছু কথা জিজ্ঞেস করেছি উত্তর কোথায়?”

“কোন কথা?ওও আচ্ছা আমি এখানে কেনো? আসোলে আপনার সাথে গল্প করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এসেছে টের পাইনি।আর আমার শরীর ঠিক আছে।সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ।”

তৌসিফ খুব আস্তে করে বললো,”সে তো দেখতেই পাচ্ছি। অনেক সুস্থ আছো তুমি।এই কদিনে চেহারার কি অবস্থা বানিয়েছো? খুব বিদ্ধস্ত লাগছে তোমাকে। রাতে নিশ্চই খাওনি তুমি তাইনা?”

নিতু মিথ্যা বলতে পারেনা।তাই মাথা নিচু করে বসে থাকে তৌসিফের পাশে‌। তৌসিফ নিতুর গালে হাত রেখে বলে,”এমন করোনা নিতু। নিজের খেয়াল রাখো।এতোটা হৃদয়হীন হবেনা দয়া করে। তোমার এমন চেহারা দেখলে আমার কতোটা কষ্ট হয় সেটা নিশ্চই আর নতুন করে বলতে হবে না।তাই দয়া করে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো।এখন আমার পাশে আমি তোমাকে চাইনা। আগে কি খাবার আছে দেখো। কিছু খেয়ে তারপর আমার কাছে আসবে।তার আগে নয়। ”

নিতু তৌসিফের রাগ সম্পর্কে অবগতো।তাই ওর কথা ফেলতে পারেনা। সত্যি কয়েকদিনের অনিয়মে নিতুর বেশ কাহিল লাগছে। অসুস্থ হলে তৌসিফের দেখাশোনা কীভাবে করবে।তাই টেবিলের ওপর রাখা ভাত খেতে নিয়ে দেখে সেগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।সেই গতো সন্ধ্যায় আনা খাবার এতোটা সময় ভালো থাকার কথাও না।তাই সেগুলো সব ফেলে দিয়ে টেবিলে রাখা কেক,বিস্কিট খেয়ে পানি খায়। শরীরে জ্বর জ্বর অনুভব করায় তৌসিফের অগোচরে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নেয়।

তৌসিফ শুয়ে শুয়ে নিতুর সব কাজকর্মই দেখতে থাকে। নিতু তৌসিফের কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা।না এই মুহূর্তে নেই। তৌসিফ বলে,”নিতু চলো না আজ বাসায় চলে যাই। এখানে থাকতে একটুও ভালো লাগছে না। হাসপাতালের কেমন যেনো একটা গন্ধ আছে।ঐ গন্ধে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমার অস্থির লাগছে।”

“দয়া করে এমন করবেন না। আপনাকে এখন বাসায় নেয়া যাবেনা।আর ডাক্তার আপনাকে এখন ছাড়বেইনা।পড়শু রিপোর্ট আসবে। আগে দেখি রিপোর্টে কি আসে তারপর নাহয় দেখা যাবে।তাই আগামী দুই দিন চুপচাপ থাকুন।”

“কিন্তু আমি যে এখানে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবো। বোঝার চেষ্টা করো।”

নিতু তৌসিফের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে,”এ প্রসঙ্গে আর কোন কথা নয়।এই কদিন আমি যা বলবো তাই শুনবেন।”তৌসিফ আর কিছু বলেনা। নিতুর হাত ধরে শুয়ে থাকে।

দুপুরের দিকে তপু আসে। বিকেলে তৌসিফ কে দেখতে চাচারা সবাই, সাদিয়া, জুঁই,বিথি আসে ।তৌসিফের এই অবস্থা দেখে সবাই খুব মন খারাপ করে। সবাই দোয়া করে তৌসিফ যেনো দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। নিতু আর এই দুই দিনে একটু সময়ের জন্যও বাসায় যায়না।বাসায় বাচ্চাদের সাথে ফোনে কথা বলে।

পরদিন সকালেই সালেহা বেগম নাতিদের নিয়ে হাসপাতালে হাজির হয়।বিশেষ করে নিরব নিতু কে ছাড়া অনেক কান্না করছিলো।তাই বাধ্য হয়েই সকালে হাসপাতালে আসে। তৌসিফ কিছু খেতে পারেনা তাই স্যালাইন চলতে থাকে।আর যখনি বেশি ব্যাথা হয় তখনি ব্যাথা আর ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়।আজ আর বাচ্চাদের সাথে কথা বলার এনার্জিও ছিলো না তৌসিফের । তাই তুলি, নাহিন খুব মন খারাপ করে। বিকেলে সালেহা বেগম নিতু কে সান্তনা দিয়ে নাতিদের নিয়ে বাসায় চলে যায়।

তৌসিফের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে। তপু সন্ধ্যায় হাসপাতালে আসে।আজ রাতে তৌসিফের রিপোর্ট দেয়ার কথা।তাই অফিস শেষে বাসায় না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে আসে।বেশ কদিন ধরে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে তপু ক্লান্ত হয়ে গেছে। রিপোর্ট নিয়ে তপু কেবিনে এলে নিতু জানতে চায় যে সব ঠিক আছে কিনা। তপু বলে,”এসব তো আমি বুঝবো না বোন। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এলে উনি দেখে বুঝতে পারবেন।তাই অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।”

তৌসিফ আজ বেশ অসুস্থ।জ্বর আজ আর কমছেই না।ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।তৌসিফের অবস্থা দেখে নিতু, তপু দু’জনই খুব চিন্তিত। ভালো লাগছে না কিছুই।কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা। নিতুর চোখ থেকে পানি ঝরছেই।কি করবে বুঝতে পারছে না। অবশেষে রাতে ডাক্তার এসে সব দেখে বলে,”রোগীর অভিভাবক কে?”

তপু বলে,”হ্যা বলুন। আমি ওর ভাই।আর এই হলো নিতু।ও হলো তৌসিফের ওয়াইফ।”

“আচ্ছা ।যা বলবো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। আস্তে আস্তে মনকে শক্ত করেন।এই তিনদিন ওনার সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে যা অনুমান করেছিলাম তাই হয়েছে।রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। একেবারেই লাস্ট স্টেজে আছে। লিভার সিরোসিস এর ক্ষেত্রে প্রথম দিকে ধরা পড়লেও দেখা গেছে রোগী যতোদিন বেঁচে থাকে ততোদিন তাকে ট্রিটমেন্ট এর ওপরেই থাকতে হয়।হ্যা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়। তবে সেটাও খুব ব্যায়বহুল।আর অনেক ঝামেলার। তবুও চেষ্টা করা যেতো যদি সমস্যা টা প্রথম দিকে ধরা পরতো।এখন যেই অবস্থায় আছে তাতে আমাদের হাতে আর কোন কিছু করার নেই।এখন আল্লাহ যে কদিন হায়াত রেখেছে সেই কদিন আর কি।”ডাক্তার কথাগুলো বলার সাথে সাথে নিতু ধপ করে করে চেয়ারে বসে পরে। বুকের ভেতর তীব্র ব্যাথা অনুভব করে, বাকশক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে নিমিষেই।

ডাক্তার বলেন,”নিজেকে সামলে নিন।যেকোন পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। ওনাকে এখন এই অবস্থায় বাসায় নেয়া যাবেনা। একেবারেই না।যেই কদিন আল্লাহ হায়াত দিয়েছেন সেই কদিন ট্রিটমেন্টের ওপরেই থাকতে হবে।”

তপু আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা।কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তার এর কাছে এসে বলে,”এভাবে বলবেন না প্লিজ।কি করা যায় একটু দেখুন । টাকা-পয়সা যা লাগুক সমস্যা নেই। আমার শুধু ভাইটাকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই।আর কিছু না।”

“সব সময় সব ক্ষেত্রে যদি টাকা-পয়সা থাকলেই সমস্যার সমাধান হতো তাহলে তো কাজই হতো। এখন আল্লাহ কে ডাকা ছাড়া কোন উপায় নেই।”ডাক্তার কথাগুলো বলে নার্স কে ঔষধ বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here