সুখের_নেশায়,১৪,১৫

0
849

#সুখের_নেশায়,১৪,১৫
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___১৪

‘ কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন চৈত্র? এদিকে আসুন। ‘

পুরুষালী ভরাট,গমগমে কন্ঠে থতমত খেয়ে গেল চৈত্রিকা। নজরে পড়ে গেল মিহিতার। অবাক চোখে চেয়ে আছে মিহিতা চৈত্রিকার পানে। সে যেন কোনো স্বপ্ন দেখছে গোধূলি এই লগ্নে চক্ষুদ্বয় মেলে। বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে উচ্চ আওয়াজে প্রশ্ন করে বসল,
‘ চৈত্র তুই এখানে?’

চৈত্রিকা অপ্রতিভ হয়ে পড়ল নিমেষে। গলা শুকিয়ে এলো। ধীরভঙ্গিতে হেঁটে এসে চায়ের ট্রে টা টেবিলে রেখে সোফার এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইল স্থির। মনে মনে গোছাতে শুরু করে ঠিক কি জবাব দিলে সমীচীন হবে। সাফারাত ফাইল টা চেক করে মিহিতার দিকে বাড়িয়ে বললো,
‘ এভরিথিং ইজ রাইট মিস.মিহিতা। আগামীকাল থেকে আমি অফিসে যাবো।’
‘ বাট স্যার, আপনি তো সিক।’
সাফারাত আঁড়চোখে চৈত্রিকার দিকে তাকাল। সোজাসাপ্টা বললো,
‘ সুস্থ হয়ে গিয়েছি। রোগ কে গুরুত্ব দিলেই তা শরীরে বাসা বাঁধতে সময় নেই না। মানসিক দুর্বলতা রোগের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মানসিক ব্যাথা সেড়ে গেছে। মন থেকে ভীষণ স্ট্রং ফিল করছি আজ। ‘

মিহিতা সৌজন্যমূলক হাসি হাসল। আবারও তীর রেখা নজরে চাইল চৈত্রিকার উপর। সাফারাত বড় সোফাটায় বসে ছিল। এটাতে অনায়সে আরো দু’জন বসতে পারবে। অনেকখানি সরে গেল সাফারাত। চৈত্রিকার মায়ায় ভরপুর চেহারায় স্থিরচিত্তে চেয়ে বললো,
‘ এখানে বসুন চৈত্র। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

হতভম্ব, নির্বাক চৈত্রিকা। তার যে মিহিতা কে ভয় লাগছে এমন কিছুই না। তবে সেদিন রাগ দেখিয়ে বলেছিল জীবনেও এই বাড়িতে রান্নার জব টা করবে না সে। মিহিতা অনেক বুঝিয়েছিল তবুও শুনে নি সে। উল্টো সেদিন মিহিতা অনেকগুলো ফোন দিলেও ধরে নি। আহমেদ সাহেবের এক্সিডেন্টের পর কোনো কিছুরই খবর ছিল না। এখন যখন চৈত্রিকা কে মিহিতা এই বাড়িতে অবেলায় দেখতে পেল নিশ্চয় মনে মনে ফুঁসছে। অত্যাধিক লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেল চৈত্রিকা। ইতস্তত বোধ করে কোনো রকমে বসল। মিহিতা সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সঙ্গে সঙ্গে। চৈত্রিকার প্রতি সাফারাতের আচরণ দেখে তাজ্জব বনে গেল। ঠোঁট নাড়িয়ে পুনরায় প্রশ্ন করল,
‘ তুই এখানে কখন এলি চৈত্র?’
চৈত্রিকা মুখ ফোটে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাফারাত বলে উঠল,
‘ আপনি আসার কিছু সময় পূর্বে।’
সাফারাতের দায়সারা জবাবে চমকালো মিহিতা। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বললো,
‘ আপনি কি আগে থেকে চৈত্র কে চিনেন স্যার?’
‘ অনেক আগে থেকে চিনি। তখন হয়ত আপনিও উনাকে চিনতেন না।’
মিহিতার চক্ষুজোড়া বৃহদাকার ধারণ করল। চৈত্রিকার এই মুহুর্তে নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এই মেয়ে যা! এখন থেকে বেরোলেই ঝাপটে ধরবে তাকে। সবকিছু না জেনে একদম ছাড়বে না। সাফারাত এক কাপ চা বাড়িয়ে দিল মিহিতার দিকে। বিনা সংকোচে মিহিতা চায়ের কাপ নিয়ে নিল। আরেক কাপ চৈত্রিকার দিকে বাড়িয়ে দিতেই চৈত্রিকা ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আমি খাবো না। আমার একদম ইচ্ছে নেই এখন চা খাওয়ার। ‘
চৈত্রিকার মুখ দেখে সত্যিই মনে হচ্ছে তার চা খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। তাই সাফারাত আর সাধল না।

চৈত্রিকা হাত ঘড়িটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হওয়ার অভিপ্রায়। এখন বাড়ি ফিরতে হবে তার। নয়ত ফাহমিদা চিন্তিত হয়ে পড়বেন। সাফারাতের দিকে বিচলিত নেত্রে চেয়ে বললো,
‘ আমার যেতে হবে।’
সাফারাত তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো। তৎপরে মোবাইলের স্ক্রিনে নজর রেখে নিরলস ভঙ্গিতে বললো,
‘ ঠিক আছে। ‘
মিহিতা সাথে সাথে বলে উঠল,
‘ আমিও চৈত্রর সাথে যাই স্যার। ‘

চৈত্রিকা ও মিহিতা দু’জনে উঠে দাঁড়াল। কয়েক পা এগিয়ে যেতেই সাফারাতের গাম্ভীর্যের স্বর শোনা গেল। সেই কন্ঠের ডাকে এলোমেলো হয়ে গেল চৈত্রিকার অভ্যন্তর। থমকে যায় দুই পা।
‘ চৈত্র! ‘
চৈত্রিকা পিছনে তাকিয়ে সাড়া দেয়,
‘ বলুন।’
সাফারাত সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মিহিতার দিকে সুস্থির দৃষ্টি ফেলল। তৎক্ষনাৎ মিহিতা ছোট্ট করে আওড়ালো,
‘ বাহিরে অপেক্ষা করছি চৈত্র। ‘
চৈত্রিকা রিনঝিনে কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে সাফারাতের দিক,
‘ কিছু বলবেন? ‘
‘ আমি প্রতিদিন সুখ সুখ অনুভূতি পেতে চাই। ‘
চমৎকৃত, স্থবির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল চৈত্রিকা। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ আপনার হাতের চা দিয়ে প্রত্যেক টা সন্ধ্যার লালচে-কমলা রূপ উপভোগ করতে চাই। আপনি কি আমার জন্য প্রতি সন্ধ্যে বেলায় এক কাপ চা বানানোর দায়িত্ব নিতে পারবেন? ‘
চৈত্রিকার মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায় তরঙ্গিত হতে লাগল সাফারাতের কন্ঠনালি হতে বেরিয়ে আসা প্রত্যেক টা শব্দ। সাফারাতের অনিমেষ মাদকতাময় নেত্র হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে যাচ্ছে। কি নিঃসংকোচ আবেদন!অনুরোধ। চৈত্রিকা ফিরিয়ে দিতে পারল না এতো সুন্দর আবেদন টুকু। অনুভূতির কাছে হেরে গিয়ে স্মিত হেসে সম্মতি দিয়ে দিল।
‘ আমি প্রতিদিন আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করি। নতুন টিউশন টার জন্য এদিক দিয়ে যেতে হয়। আপনার প্রতিটা সন্ধ্যে রাঙিয়ে তুলতে পারব কি-না জানিনা। তবে আপনাকে আমার হাতের এক কাপ চা খাওয়া থেকে বঞ্চিত করব না। ‘
সাফারাত কড়া সুরে বললো,
‘ উপহাস করা হচ্ছে? ‘
চৈত্রিকা বিন্দু মাত্র ভয় অনুভব করল না তীক্ষ্ণ কন্ঠে। বরং আলতো হেসে প্রতুত্তর করে,
‘ একদমই না। আসি এখন। আরেকটা কথা?’
সাফারাত প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। চৈত্রিকা ঠোঁট প্রসারিত করল। বললো,
‘ আপনার রুমে দেখেছিলাম আমার একটা ছবি আছে। মানুষের অজান্তে তার উল্টা পাল্টা ছবি রাখা ঠিক নয়। আপনি তো সুন্দর করে দাঁড়িয়ে ছিলেন অথচ আমি মাথা চুলকাচ্ছিলাম। মানুষ তো ভাববে আমি পেত্নী। উকুন টোকাচ্ছিলাম মাথায়।’

চৈত্রিকার কথায় না চাইতেও সাফারাত মুচকি হেসে উঠল। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে মগ্ন হয়ে তাকিয়ে রইল চৈত্রিকা সেই হাসিতে। হৃদয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে তার। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভালো লাগার,সুখের শিহরণ। শিরায় শিরায় বাহিত রক্ত পর্যন্ত হিম হয়ে আসছে। ছবিটা ওদের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল দু’জনে। কে তুলেছে,কখন তুলেছে চৈত্রিকা জানে না। কিন্তু সে যখন সাফারাতের রুমে ছবিটা দেখেছিল খুশিতে চোখের কোলে জল জমে গিয়েছে।

দেরি হয়ে যাচ্ছে বিধায় চৈত্রিকা সাফারাত কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলো। সাফারাতও এলো পিছু পিছু। ড্রাইভার কে বললো চৈত্রিকাদের পৌঁছে দিতে। অনেকবার নিষেধ করার দরুনও শুনে নি সাফারাত। মিহিতা নাকচ করে নি দেখে চৈত্রিকা রাজি হয়ে যায়। সাফারাত একপাশের ডোর খুলে চৈত্রিকা কে বশতে ইশারা করল।

চৈত্রিকা নিঃসংশয়ে বসে পড়ে। মিহিতার ফোন আসায় সে দু’টো মিনিট অপেক্ষা করতে বললো। মিহিতার ফিয়ান্সে কল দিয়েছে। সাফারাত তখনও গাড়ির দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি অন্যদিকে। মিহিতাকে আসতে দেখে দরজা লাগাতে গিয়ে দেখে চৈত্রিকার ওড়না টা নিচে পরে আছে অর্ধেকাংশ। সেটা তুলে দিয়ে কোলে রাখতেই চৈত্রিকা ভড়কে গেল। অজানা কারণে বুঁজে এলো চোখ দুটো। আখিঁপল্লব কাঁপছে ক্ষীণ। সাফারাতের নিঃশ্বাস তার চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায়। আকস্মিক গালে উষ্ণ পরশে এক নিদারুণ কম্পন ছড়িয়ে পড়ে সারা অঙ্গ -প্রত্যঙ্গে। চৈত্রিকার অনুভূতিরা তখন উম্মাদ প্রায়। ধপ করে চক্ষু মেলে তাকালো।
কেউ নেই! সবে মাত্র মিহিতা এসে পাশে বসেছে। সাফারাত ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে। তাহলে এটা কি তার ভ্রম ছিল!চৈত্রিকার মনে হলো স্পর্শ টা এখনও তার গালে লেগে আছে। অস্বস্তি লাগছে তার। পুরো দেহ জমে যাচ্ছে বরফের মতো কঠিন রুপে। সাফারাত এতো কাছে হওয়ায় হঠাৎ হয়ত ভ্রম জেঁকে ধরেছিল। এটাই ধরে নিল চৈত্রিকা।
সাফারাত ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল কতক্ষণ। অতঃপর ভিতরে চলে গেল। চৈত্রিকা আখিঁ যুগল নির্মলিত করে ভাবতে শুরু করে। মাথায় বারংবার হানা দিচ্ছে মিনার বলা কথাগুলো। চৈত্রিকার মনে হচ্ছে সাফারাত ভালো নেই। একদমই ভালো নেই। অতীব পরিমাণে বিষাক্ত যন্ত্রণা জমিয়ে রেখেছে হৃদয়পটে,বক্ষপিঞ্জিরায়। হয়ত তার জীবনের থেকেও সাফারাতের জীবনে সুখের প্রচন্ড অভাব। হতে পারে সাফারাত কাতরাচ্ছে, তাপড়াচ্ছে তারই মতো করে প্রতিনিয়ত সুখের নেশায়!
_______________

মিহিতা এতক্ষণে মোক্ষম সুযোগ পেল। গাড়ি সাফারাতদের বাড়ির গেইট দিয়ে বের হতে না হতেই চৈত্রিকা কে ঝাপটে ধরল সে। চৈত্রিকা ক্ষিপ্রদৃষ্টিতে তাকালো। তাতে বিশেষ কোনো লাভ হলো না। মিহিতা একদমই দমে যাবার মেয়ে নয়। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
‘ ভালো ভালোই কথার ঝুলি খুলবি নাকি আমাকে কোনো স্টেপ নিতে হবে?স্যারের সাথে তোর কি সম্পর্ক? ‘
চৈত্রিকার সাদামাটা উত্তর,
‘ বেস্ট ফ্রেন্ড। ‘
মিহিতা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। চৈত্রিকা টেনে ঠিক করে বসালো তাকে। সামনে ড্রাইভার। তিনি শুনে ফেললে শেষ। চৈত্রিকা সতর্ক দৃষ্টিতে সাবধান করল। মিহিতা কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিচেল স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ স্যারই কি তোর সেই মানুষ টা?যার জন্য তুই অসংখ্য ছেলের প্রপোজাল প্রত্যাখ্যান করেছিস সুন্দরী?আমার এখনও মনে আছে এক সিনিয়র ভাই তো তোর জন্য অনেক পাগল ছিল চৈত্র। তুই দ্বিতীয় বর্ষে উঠে যখন ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিলি উনি হন্য হয়ে খুঁজেছেন তোকে। আমার কাছে কতক বার তোর নাম্বার চাইল। কিন্তু তোর কড়া নিষেধ হওয়ায় আমি দেই নি। এড্রেসও দেই নি। বেচারা তোরে সত্যিই ভালোবাসত চৈত্র। আর তুই কি-না আমার অফিসের স্যার কেই এতো বছর ধরে ভালোবাসিস?সুদর্শন পুরুষ সাফারাত এহমাদ কে?’
চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘ হুম।’
‘ চৈত্র তুই সবসময় বলেছিস তুই তোর কাছের এক বন্ধুকে ভালোবাসিস। কিন্তু কখনও বলিস নি তোদের অতীত সম্পর্কে। আর তোরা এতো ভালো বন্ধু অথচ এতো বছর দূরে ছিলি কেন একে অপরের থেকে। স্যার তোকে ভালোবাসে চৈত্র? ‘

মিহিতার ব্যাকুলতা দেখে চৈত্রিকার হাঁপিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কন্ঠস্বর মলিন,নিষ্প্রভ।
‘ না। আর আমি তোকে সব বলব। কিন্তু গাড়িতে না। ‘
‘ তাহলে এখন সোজা আমার বাসায় গিয়ে বলবি।’
‘ কিন্তু! ‘
‘ আমি আন্টি কে ম্যানেজ করে নিব। তোকে আজ ছাড়ছি না আমি। যতক্ষণ না তোর কাছ থেকে সব না শুনব আমার ঘুম আসবে না।৷ আর আমি আমার ঘুম হারাম করতে একদম রাজি না।’
এতটুকু বলে সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল মিহিতা। তারপর সুর টেনে গাইতে লাগল,
‘ আমি ঘুম ভালোবাসি রে,,,! ঘুম ভালোবাসি রে,,।’
‘ স্টপ মিহিতা। ডিজগাস্টিং সুর তোর।’
মিহিতা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার মাঝেই গাড়ি থেমে গেল। চৈত্রিকা চিন্তিত স্বরে ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ সামনে জেরিন ম্যাম। ‘
চৈত্রিকা হতবিহ্বল কন্ঠে বলে উঠল,
‘ জেরিন কে?’
সাথে সাথে একটা মেয়েলি কর্কশ কন্ঠ শুনতে পেল।
‘ এই মেয়ে বেরিয়ে আসো।’
মিহিতা ও চৈত্রিকার দু’জনের দৃষ্টি মেয়েটার মুখশ্রীতে। চৈত্রিকা তুখোড় দৃষ্টিতে তাকালো। মেয়েটাকে চিনতে একটুও সময় লাগে নি তার। অনতিবিলম্বে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। জেরিনের চোখ থেকে যেন অগ্নি ঝরছে। তখন যাওয়ার সময় চৈত্রিকাকে ভালো করে খেয়াল না করলেও পরক্ষনে টনক নড়ে তার। গাড়ি ঘুরিয়ে ব্যাক করে আসে। গেইটের কাছে অপেক্ষা করে চৈত্রিকার বের হওয়ার। যখন দেখল ওরা সাফারাতের গাড়ি করে যাচ্ছে তখন দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে আটকায় ওদের। চৈত্রিকা গলার স্বর নরম রেখে বললো,
‘ কিছু বলবেন?’
জেরিন ক্রুদ্ধ স্বরে চেঁচালো,
‘ তোমার লজ্জা নেই?নির্লজ্জ, অ/স/ভ্য মেয়ে। স্লা/ট একটা। সাহস কি করে হয় আবারও ওই বাড়িতে পা রাখার?নাকি এক থাপ্পড় খেয়ে শিক্ষা হয় নি তোমার। বস্তির মেয়ে কোথাকার! ‘
কথাটা বলেই হাত উঠিয়ে চপেটা/ঘাত করতে উদ্যত হয় জেরিন। চৈত্রিকা হাত টা চেপে ধরে শক্ত করে। চোখ বুঁজে ফেলল। স্লাট?তাকে স্লা*ট বলে সম্বোধন করল এই মেয়ে?রাগে,ক্ষোভে কাঁপতে লাগে চৈত্রিকার সম্পূর্ণ দেহ। সেই চাইলে এখন এই মেয়ের জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারে তাকে মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার কারণে। নিজেকে সামলে প্রতিবাদ করে বলে উঠল,

‘ আমার গাল সরকারি না। যখন মন চাইবে আঘাত করবে,থাপ্পড় মারবে। আরেকটা কথা আমি বস্তির মেয়ে বা স্লা*ট নই। তোমার চিন্তা ভাবনা,ব্যবহার বস্তির মানুষের চেয়েও,পতিতাপল্লির পতিতাদের চেয়েও নিকৃষ্ট। জেনে রাখো– আমি নিজ থেকে ওই বাড়িতে পা রাখি নি। সাফারাতের আহ্বানেই রেখেছি। অনুমতি পেয়েছি বলেই রেখেছি। তুৃমি তো আকুতি মিনতি করে অনুমতি পেতে ব্যর্থ। ‘

কথাটা বলে ঝারি মেরে জেরিনের হাত টা সরিয়ে দিল চৈত্রিকা। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেরিন। চোখ মুখ তীব্র লাল হয়ে আছে। চৈত্রিকা কে ভস্ম করে দিতে পারলে যেন আনন্দ পাবে সে। দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
‘ সাফারাতের সাথে আমার ভবিষ্যৎ জুড়ে আছে। তোমাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছি আমার নানু সাফারাত আর আমার বিয়ের কথা দিয়েছে। খুব শীগ্রই হবে। সাফারাত কখনও ফেলতে পারে না নানুর কথা। তাই ভুলেও ওর দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করবে না। করার আগে নিজের যোগ্যতা দেখে নিবে। ‘

মুহুর্তেই চৈত্রিকার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যেতে শুরু করে। মিহিতাও করুন চোখে তাকায়। চৈত্রিকার গলায় কথাগুলো আঁটকে আসছে। জেরিনের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,
‘ সাফারাত আমার কাছের মানুষ। কাছের মানুষ মানে প্রেমিক নয়। বন্ধু। শুধুই বন্ধু। তার ঊর্ধ্বে কিছুই না। বাকি রইল যোগ্যতা?আমার যোগ্যতা তোমার থেকেও বেশি। কারণ আমি সুন্দর আচরণ করতে শিখেছি। যার অভাব আছে তোমার মধ্যে। সুন্দর আচরণ বিহীন কেউই পারফেক্ট হয় না। ‘

কথাগুলো বলে তড়িৎ গতিতে গাড়িতে গিয়ে বসল চৈত্রিকা। উপস্থিত মানুষের দৃষ্টির অগোচরে এক ফোঁটা নোনতা জল গাল ভিজিয়ে দিল। মনে মনে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় -‘ জীবন কঠিন। কঠিন জীবনে সকল কিছু মেনে নিয়ে বাঁচাতেই শান্তি। কিন্তু সেই শান্তিতে সুখ নেই। দশজনের মুখে হাসি ফোটাতে যদি একজনের সুখ বিসর্জনের তালিকায় উঠে যায় তবুও কষ্ট নেই। এইটা তো গর্বের বিষয়। সেই একজন তুই চৈত্র। তোর নিজেকে নিয়ে গর্ব করা উচিত। মা,মিম,বাবা শান্তিতে থাকুক এতেই তোর শান্তি। ‘

জেরিন রাগে আক্রোশে ফেটে পড়ল। গাড়িতে উঠে মোবাইল বের করে কল দেই সাফারাতের দাদি কে। রিসিভ হতেই অশ্রুসিক্ত কন্ঠে,মেকি কান্নার ভান করে বলে উঠল,
‘ নানু মণি এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সাফারাতের বউ হতে চাই। ‘

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___১৫

‘ স্লা/ট বুঝিস তুই? বুঝিস?বুঝবি না কেন?তুই নিজেই তো এই কাতারের। কয়বার গিয়েছিলি বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুমডেটে?চার বার হবে না?’
রাগে থরথর করে কাঁপছে সাফারাতের কন্ঠনালি। চোয়াল শক্ত। চোখ দুটো রক্তাক্ত লাল। ফর্সা মুখ ছেয়ে আছে রক্তিম আভা। জেরিন গালে হাত দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে ফুঁপিয়ে। রেস্টুরেন্টের সবাই ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে আছে যেন কোনো সার্কাস চলছে। ফ্রি তে লুফে নিচ্ছে মজা, আনন্দ। পাশে দাঁড়িয়ে আছে জেরিনের বয়ফ্রেন্ড। চিকন রোগা ছেলেটা সুঠাম, বলিষ্ঠ সাফারাতের ক্রোধ দেখে ভয়ে সেঁটে আছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। পালিয়ে যাবারও জো নেই।

চৈত্রিকা কে অপমান করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে রেষ্টুরেন্টে দেখা করতে আসে জেরিন। ড্রাইভার চৈত্রিকাদের মিহিতার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে সাফারাত কে কল দেয়। জেরিনের করা সমস্ত কর্মকাণ্ড খুলে বলে সাফারাত কে। সব শুনে নিঃশব্দে কল কেটে দেয় সাফারাত। দিহান কে কল করে জানায় জেরিন ঢাকা শহরের যে প্রান্তেই থাকুক তাকে যেন লোকেশন সেন্ড করা হয়। সাফারাতের ঠান্ডা স্বর হজম করতে পারে নি দিহান। উৎকন্ঠা হয়ে অনেকবার জিজ্ঞেস করেও সাফারাতের কাছ থেকে কিছুই জানতে পারে নি। ব্যর্থ হয়ে জেরিনের নাম্বার ট্র্যাক করে লোকেশন পাঠিয়ে দেয় সাফারাতকে। সাফারাত ততক্ষণে বনানী পৌঁছে গেছে। রেষ্টুরেন্টে ঢুকেই টেনে চেয়ার থেকে তুলে জেরিন কে। মেয়েটা কিছু বুঝে উঠার আগেই সাফারাতের বলিষ্ঠ হাতের থাবা পড়ে যায় গালে। ব্যাথায় কুঁকড়ে যায় জেরিন। মুখের আদল বদলে যায় সম্পূর্ণরূপে। গালে লাল আস্তরণ। সেই বিষাক্ত যন্ত্রণায় এখনো টনটনিয়ে উঠছে গালটা।তীব্র রাগ হচ্ছে তার। কিন্তু তা সাফারাতের রাগের কাছে একদম ফিকে। নিতান্তই নগন্য।

সাফারাত চেয়ার টেনে বসল। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি উঠিয়ে খেয়ে নিল গটগট করে। মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে রাগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় লেগে গেল। কিছু সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই বুঝতে পারে এই রাগ কমার নয়। তীব্র এই রোষানল যে বক্ষস্থলের যন্ত্রণার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত। হ্যাঁ! তার যন্ত্রণা হচ্ছে। প্রবল যন্ত্রণায় ছটফট করছে প্রশস্ত বুকখানি। ঠেলে চেয়ার টা সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। রাগে লাথি দিয়ে ফেলে দিল তা। রেস্টুরেন্টের মালিক ভয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। তাছাড়া প্রথমবার যখন আটকাতে এসেছে সাফারাত সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে–‘ আপনাদের রেষ্টুরেন্টের রেপুটেশন নষ্ট হবে না। যতটা লস হবে তার চেয়ে দ্বিগুণ পেমেন্ট করে যাবো আমি। কিন্তু বাঁধা দেওয়া পছন্দ করব না একদম।’

সাফারাত ক্ষীণ এগিয়ে এলো। জেরিনের সামনে দাঁড়াল। হিসহিসিয়ে বলে উঠল,
‘ কি ভেবেছিস বাহিরে রঙ লিলায় মেতে থাকবি আর রাতের গভীরে আমার বউ সেজে আমাকে বিনোদন দিবি?’

জেরিনের মাথা নত হয়ে গেল। ঝা ঝা করে উঠল কান দুটো। সে ভাবতেই পারে নি সাফারাত কখনও এতো জঘন্য কথা বলে বসবে। নত মস্তক দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল সাফারাত। ক্রুদ্ধ গলায় পুনর্বার বললো,
‘ তোরা মা মেয়ে মিলে ভেবেছিলি আমায় বিয়ে করে আমার টাকায় আরাম আয়েশ করবি। বাহিরে বয়ফ্রেন্ড পুষবি আবার সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবি তোর সুদর্শন হাসবেন্ড আছে। এটাই তো?’

চকিতে মাথা তুলে তাকাল জেরিন। অত্যাধিক ভয় এসে হানা দিল আঁখিদ্বয়ে। সাফারাত কি করে জানল এসব?এসব তো নিজেদের বাড়ি ব্যতীত অন্য কোথাও আলোচনা করে নি সে ও তার মা। জেরিনের মা মৌসুমি বেগম জেরিনকে বুঝিয়েছে সাফারাত কে বশে আনতে যেন সাফারাতের সমস্ত সম্পদের মালিক হতে পারে। তাছাড়া সাফারাতের সুঠাম দেহ, লুক সবকিছুর প্রতি প্রবল আকর্ষণ জেরিনের। এমন সুদর্শন একটা স্বামী কে-ই বা না চায়!জেরিনও চায়। কিন্তু শত চেষ্টা করেও অক্ষম সে সাফারাতকে ভাগে আনতে। আর আজ তো সকল চেষ্টায় শেগুড়ে বালি। কিন্তু একটা বিষয় কোনোমতেই মস্তিষ্কে ঢুকছে না সাফারাত এসব জানল কি করে!জেরিন সাফারাতের অধর কার্নিশে দুর্বোধ্য হাসি দেখতে পেল। এই মুহুর্তে সাফারাত কে ভয়ংকর এক মানব মনে হচ্ছে তার। দুর্দান্ত এক ছেলে। যে কি-না কিশোর বয়সে অনেক কিছুই সহ্য করে আজ অব্ধি এসেছে। সাফারাত হিম শীতল কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠল,
‘ স্লা/ট চৈত্র না। স্লা*ট তো তুই। চৈত্র পবিত্র। ওর গায়ে কলংক ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে তোর দেহের খন্ডাংশ খোঁজে পেতে অনেক বেগ পোহাতে হবে তোর পরিবারের। আমি একদমই ভালো না। সামলে থাকিস।’

জেরিন ফাঁকা ঢোক গিলল। যেই মেয়েকে প্রথম দিন সবার সামনে চিনে না বলে প্রত্যাখ্যান করে তার জন্য এতো টান সাফারাতের! তার উপর চৈত্রিকা বললো ওরা দু’জন ফ্রেন্ড। সামথিং ইজ ফিশি। জেরিনের কাছে অন্যরকম ঠেকছে সবকিছু। ছোট নয় যে কিছু বুঝবে না। কয়েক দিন আগেই অনার্সের পার্ট চুকিয়েছে সে। বয়েসে সাফারাতের দুয়েক ছোট। সামান্য একটা মেয়ের জন্য মেরে ফেলার হুমকি!জেরিনের চোখ থেকে ঘৃণায় জল গড়াচ্ছে। সাফারাতের হুমকিতে দমে গেলেও চৈত্রিকা কে ধ্বংস করে দেবার ইচ্ছে নিঃশেষ হয় নি। সাফারাত রোষপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো,
‘ তোর মতো হাজারটা সুন্দর রূপে কলঙ্কিনী মরে গেলেও আমার কিছু যায় আসবে না। কিন্তু চৈত্র!চৈত্র তোর দ্বারা আ*ঘাত পেলে খুন করতে দ্বিধাবোধ করব না। লাস্ট ওয়ার্নিং। ‘
‘ ওই মেয়ের জন্য তোমার এতো টান কেন?’
জেরিনের গলা কাঁপছে। তবুও চৈত্রিকার প্রতি রাগ চেপে রাখতে পারল না। সাফারাত চলে যেতে নিয়েও ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো।
‘ মাইন্ড ইয়োর ওন বিজনেস। ‘ _____________________

মিহিতা পড়নের কাপড় পাল্টে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। জানালার ধারে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে বুক টা আর্তনাদ করে উঠল তার। মেয়েটা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কাছের মানুষের সান্নিধ্য হারিয়ে গুমরে গুমরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রতি মুহুর্তে। হয়ত সময়ও গুণে কবে মুক্ত হবে সকল দায়বদ্ধতা, সকল কষ্ট হতে। অস্ফুটস্বরে ডাকল মিহিতা,
‘ চৈত্র! ‘
চৈত্রিকা ফিরে তাকালো না। দৃষ্টি দূরের অন্ধকারে নিবদ্ধ। ভেজা কন্ঠে বললো,
‘ বল।’
‘ তুই কি কাঁদছিস চৈত্র? এমন শোনাচ্ছে কেন কন্ঠস্বর?’
চৈত্রিকা নিজেকে ধাতস্থ করে নিল। মুখে শুকনো হাসি ফুটিয়ে বললো,
‘ কাঁদছি না। বাসায় যাবো।’
চৈত্রিকা যে মিথ্যে বলছে তা স্পষ্ট। পা বাড়িয়ে কাছে যেতে নিবে বিছানার উপর পড়ে থাকা ছোট্ট ফোন টা বেজে উঠল সশব্দে। চৈত্রিকা ঝটপট ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। মিহিতা কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে স্ক্রিনে। চৈত্রিকা দ্রুত গতিতে হেঁটে আসল।

‘ মা কল দিয়েছে বোধহয়। যেতে হবে। অলরেডি অনেক লেট হয়ে গিয়েছে মিহি।’
‘ আন্টির কল না চৈত্র। স্যারের কল। ‘

কর্ণকুহরে মিহিতার স্বর হুড়মুড় করে প্রবেশ করতেই চৈত্রিকার হৃদস্পন্দন যেন থমকে গেল। মিহিতার দিকে না তাকিয়েই মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়। স্ক্রিণে সাফারাতের নাম জ্বলজ্বল করছে। রিসিভ করে কানে দিতেই শুনতে পেল চেনা পরিচিত সেই গম্ভীর স্বর। চোখের পলকে থমকে যাওয়া স্পন্দন স্পন্দিত হতে লাগল দ্বিগুণ হারে।
‘ নিচে আসুন। ‘
‘ আমি মিহিতাদের বাসায়।’
‘ ওদের বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি আমি। জলদি আসুন।’

এক প্রকার আদেশ দিয়েই কলটা কেটে দিল সাফারাত। চৈত্রিকাকে একটা শব্দ উচ্চারণের সুযোগ টুকুও দেয় নি। মিহিতা প্রশ্নসূচক দৃষ্টি মেলে ধরতেই চৈত্রিকা ব্যাগ টা হাতে তুলে নিল। পা বাড়াতে বাড়াতে তাড়াহুড়োয় বললো,
‘ নিচে সাফারাত অপেক্ষা করছেন। আমার যেতে হবে মিহি।’
‘ তুই স্যারের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিস না। তাই না চৈত্র? ‘
চৈত্রিকা থামল। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে বলে,
‘ একদমই থাকতে পারি না। আসি এখন।’
‘ তুই কি জানিস তুই পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছিস স্যার কে?তোর এই কান্নার কারণ ওই মেয়ের অপমান নয় বরং স্যার কে আবারো হারিয়ে ফেলার ভয়ে কাঁদছিস তুই। ‘

মিহিতার শেষের কথাগুলো শুনল না চৈত্র। সে তো বেরিয়ে গেছে, ছুটে গেছে সাফারাত নামক মানুষটার ভালোবাসার টানে।
_____________

গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাফারাত। চৈত্রিকা তড়িৎ বেগে ছুটে এসে উপস্থিত হলো তার সামনে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। চোখ দুটো ফুলেফেঁপে একাকার। কান্নার ফলে এমন অবস্থা হয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই। চেহারায় বিধস্ত ভাব। সাফারাতের বক্ষস্থলে কিছু একটা বিঁধছে প্রখরভাবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু টা দূরত্বে অবস্থিত চৈত্রিকার দু-হাত আঁকড়ে ধরে শক্ত করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই টেনে নিয়ে এলো একদম কাছে,অতি নিকটে। মাঝে কোনো দূরত্ব নেই। কিঞ্চিৎ ফাঁক নেই। চৈত্রিকা হকচকিয়ে উঠল। ঘাবড়ে গেল। সাফারাতের বাহুতে আবদ্ধ তার নরম দেহখানি।

আকস্মিকতায় শিরশির করছে সমস্ত শরীর। দূরে থাকলে যন্ত্রণা, কাছে থাকলে ভিতরের এলোমেলো অনুভূতি ভীষণ পীড়া দেয় তাকে। তবুও দূরত্বের যন্ত্রণার চেয়ে সাফারাতের উষ্ণতায় যেন অঢেল শান্তি খুঁজে পায় চৈত্রিকা। ছাব্বিশ বছরের চৈত্রিকা তখন আবেগে ভেসে যায়। খুব বেশি করে চায় সাফারাত কে। মিশে যাওয়ার বাসনা,স্পৃহা জাগে শক্তপোক্ত প্রশস্ত এই বুকে। সাফারাত পিঠে আলতো করে হাত রেখে মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ কাঁদলেন কেন আপনি চৈত্র? আমি এই ক’দিনে যতটুকু জানলাম আপনি খুব স্ট্রং। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আপনি বাচ্চা। বাচ্চাদের মতো কাঁদেন খারাপ মানুষদের খারাপ কটুক্তিতে।’

কথাটা যেন চৈত্রিকার আত্মসম্মানে বিঁধল। কটাক্ষ করে বললো,
‘ আমি তো কারো কটুক্তি তে কান্না করি নি। কারো কটুক্তিতে কাঁদার মতো মন মানসিকতা এখন আর নেই। সহ্য করতে করতে এসব সয়ে গেছে। আমি তো আপনার,

টনক নড়ে উঠল চৈত্রিকার। আবেগে,ক্ষোভের তাড়নায় কি বলতে যাচ্ছিল সে?সাফারাত কি বলবে তাকে?আর এভাবে বেহায়ার মতো কেন পড়ে আছে সে সাফারাতের বুকে?তখন টানে তাল সামলাতে না পেরে বুকে আছড়ে পড়েছে। সাথে সাথে সরে আসা তো যেত!চৈত্রিকা সরে আসার চেষ্টা করল। কিন্তু সাফারাত বাঁধন শক্ত করে ফেলে। দৃষ্টি তার অনিমেষ, অটল। সামান্য ঝুঁকে কপালে কপাল ঠেকিয়ে অসম্পূর্ণ বাক্য টা সম্পূর্ণ করে দেয়,
‘ আপনি আমার বিয়ের কথা শুনে কাঁদছিলেন তাই তো?আর আপনি যে অন্য কারো বাগদত্তা হয়ে গেলেন?’

#চলবে,,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here