#সুখের_নেশায়,২০,২১
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___২০
চুপচাপ,গুমরে মুখো হয়ে সোফায় বসে আছে চৈত্রিকা। মাথা নত তার। চোখে মুখে ভয় ভয় ভাব স্পষ্ট। সাফারাত নিরবতা ভেঙে কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বলে উঠল,
‘ তাহলে আপনি বিয়ে করবেন না বলছেন?’
চৈত্রিকা মাথা নাড়ালো। নিজের সিদ্ধান্তে অটল,অনঢ় মেয়েটা। সাফারাতের হাত মুঠো হয়ে এলো সঙ্গে সঙ্গে। রাগ উঠলে এই এক অভ্যেস তার। নয়ত রাগ কন্ট্রোল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আর একবার রাগ কে প্রশ্রয় দিলে সামনে কে আছে, কাকে আঘাত করছে তার কোনো পরোয়া করবে না সাফারাত। ফাহমিদা কিড়মিড়িয়ে বলে উঠলেন,
‘ কি সমস্যা তোর চৈত্র? সারাজীবন একা থাকবি?লাগবে না তোর আমাদের দেখার। নিজের কথা ভাব। মা হয়ে আর তোদের কষ্ট সহ্য করতে পারব না আমি। এবার আমায় একটু তোদের সুখ দেখে শান্তিতে ম*রতে দে। ‘
মায়ের কথায় চৈত্রিকার চক্ষু ছলছল করে উঠল। অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া নিক্ষেপ করল ফাহমিদার মুখের দিকে। বাহিরে ঝড় বইছে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে ধরণীর মাটি,মৃত্তিকা। বাতাসের ঝাপটায় বা দিকের খোলা জানালাটা সজোরে বন্ধ হয়ে গেল। মৃদু চমকে উঠে চৈত্রিকা, মিম, ফাহমিদা। মিম উঠে গিয়ে জানালাটা লাগিয়ে এলো। সাফারাত বদ্ধ সেই জানালার দিক হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে ফাহমিদার উদ্দশ্যে অতিশয় নম্র কন্ঠে শুধালো,
‘ আমি একটু একা কথা বলতে চাই চৈত্রর সঙ্গে। যদি আপনি অনুমতি দেন! ‘
ফাহমিদা কিছুক্ষণ ভাবলেন। প্রতুত্তরে জানালেন,
‘ ঠিক আছে। ‘
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে উদভ্রান্তের ন্যায় প্রায় আধা ঘণ্টা আগে চৈত্রিকাদের বাসায় পৌঁছায় সাফারাত। আচমকা তাকে দেখে ফাহমিদা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। কিন্তু সেই রেশ বেশিক্ষণ টিকতে দেয় নি সাফারাত। ফাহমিদা কে সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ছেলেটার অমায়িক সৌন্দর্যে ভরপুর চেহারা,মাদকতাময় কন্ঠ শুনে ফাহমিদার সকল অবাকতা,বিস্ময় যেন নিমিষে দূর হয়ে গেল। সাফারাত কে উনার অসম্ভব ভালো লাগে। এই কয়েকটা দিনে,কয়েক মুহুর্তে উনার মনের অনেকখানি জায়গা কেঁড়ে নিয়েছে সাফারাত। যেকোনো মা -বাবা নিজের মেয়ের জন্য কেয়ারিং ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসেবে চান। সাফারাত যেন চৈত্রিকার জীবনে সেই ব্যক্তি। তবে!তাহাফের পরিবারের তাড়াহুড়ায় উনার সাফারাতকে মেয়ের জামাই হিসেবে কল্পনা করা থেমে যায়। চৈত্রিকার বিয়ের কথা তো তাহাফের সাথে পাকা হয়ে আছে। তাছাড়া উনি ভেবেছিলেন সাফারাত ও চৈত্রিকার মাঝে কিছু আছে। বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি। কিন্তু চৈত্রিকা যখন আজ বিয়ের কথা শুনে কোনো প্রকার রিয়েক্ট অথবা নাকচ করেন নি তখন সাফারাতের ব্যাপারে সকল চিন্তা ভাবনা ভেঙে যায় তাসের ঘরের ন্যায়।
চৈত্রিকা ও মিম দু’জনেই রুমে ছিল। ফাহমিদার ডাকে বেরিয়ে আসে। চোখের সামনে সাফারাতের ভেজা চুল, উশখুশ ,অস্থিরতা,রক্তবর্ণ চক্ষুদ্বয় দেখে চৈত্রিকার অভ্যন্তর বেসামাল হয়ে পড়ে। হার্টবিট বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। মিমের দিকে ক্ষিপ্রদৃষ্টিতে তাকায় চৈত্রিকা। মিম কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সাফারাতকে দেখেই দিব্যি বুঝা যাচ্ছে উম্মাদের মতোন ছুটে এসেছে এখানে ঝড়,বৃষ্টি অবজ্ঞা করে। চৈত্রিকা উল্টো ঘুরে রুমে চলে এলো শব্দহীন। হাতে তোয়ালে তুলে নিয়ে পুনরায় বেরিয়ে আসে। লাজলজ্জা জলাঞ্জলি দিয়ে সাফারাতের দিকে তোয়ালেটা বাড়িয়ে দেয়। বলিষ্ঠ হাতে তোয়ালে টা আঁকড়ে ধরে নিয়ে মাথা মুছে সাফারাত। তৎপরে ফাহমিদার সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘ আপনি বোধহয় অবাক হচ্ছেন আন্টি এই বৃষ্টিময় অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনে আমি কেন আপনাদের বাসায় এভাবে ছুটে এলাম? ‘
ফাহমিদা অবাক হলেও মুখে হাসি এনে বললেন,
‘ কিছুটা হয়েছি বটে। ‘
সাফারাত ফাহমিদার হাসিতে যেন তৃপ্তি খুঁজে পেল। কতকাল মায়ের হাসিটা দেখা হয় না। সেই সুন্দর নারীর মুগ্ধ হাসির দেখা মিলে না বছরের পর বছর। বহুকাল। সাবলীল কন্ঠে বললো,
‘ আমি চৈত্রকে বিয়ে করতে চাই আন্টি এবং তা এখুনি। ‘
নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল পুরো কক্ষ। বাহিরে ঝড়ের তান্ডব চলছে। বিস্তর নীল গগণ বুঝি চৈত্রিকার মাথায় ভেঙে পড়ল। হাসি ফুটে উঠল কেবল মিমের অধর কোণে। বিস্ময়ের চেয়ে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে চৈত্রিকা। বিনা সংকোচে কাঠ কাঠ কথা বলা সাফারাতের চরিত্রের সাথে, ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই হলেও চৈত্রিকার যে লজ্জা অনুভূত হয়। তীব্র লজ্জা। মেয়ের দিকে তাকিয়ে এবং সাফারাতের নির্লজ্জ, নির্লিপ্তভাবে চৈত্রিকার হাত চাওয়া প্রমাণ করে দেয় ওদের মাঝের গভীরতা, ভালোবাসা। তবে সাফারাতকে একটু বেশরম, রগচটা, গম্ভীর মনে হয়েছে ফাহমিদার। বিয়ের প্রস্তাব দিল না-কি আদেশ করল তা বুঝা মুশকিল।
‘ কিন্তু একটু পরেই তো তাহাফের সাথে চৈত্রর আকদ। ‘
‘ ক্যান্সেল করে দিন। ‘
থতমত খেয়ে গেলেন ফাহমিদা। সাফারাতের কি নিরলস ভঙ্গিমা!বললেই কি ক্যান্সেল করা যায়?এই ছেলের কি একটু লজ্জা,জড়তাও নেই? ফাহমিদা আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন চৈত্রিকার যদি সাফারাতকে পছন্দ হয় তাহলে তিনি মেয়ের সুখটাই দেখবেন। মুখে বললেন,
‘ একটু পরেই উনারা চলে আসবেন। আমি কি বলব সাফারাত? ‘
সাফারাত চৈত্রিকার দিকে এক পলক চাইল। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিল চৈত্রিকা। সাফারাত সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠল,
‘ বলবেন আপনার মেয়ের জামাই আমি। আমার বউ জোর করে কেঁড়ে নেওয়ার সাধ্য কি কারো আছে? ‘
চৈত্রিকার মাথা ঘুরছে রীতিমতো। মিম মুখে হাত চেপে হাসছে মিটিমিটি। সাফারাতের মতো দুলাভাই তো চেয়েছিল ও। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে। চৈত্রিকা আজ সাফারাত কে নতুন করে আবিষ্কার করল। চিনল। রহস্যময়, গম্ভীর মানুষের ঠোঁট কাটা স্বভাবও আছে!এই নব্য রূপ বিস্ময়ের পাহাড় গড়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু চৈত্রিকা যে মনে মনে অন্য এক সিদ্ধান্ত স্থির করে নিয়েছে। লাজ উচ্ছনে দিয়ে শক্ত গলায় বললো,
‘ আমি এখন বিয়ের বিষয়ে ভাবতে চাই না। তাহাফকেও বিয়ে করতে চাই না আম্মু। আমি তোমাদের এভাবে ফেলে কোথাও যেতে পারব না। ‘
দায়িত্ব!হ্যাঁ এই দায়িত্ব নামক শব্দটাই চৈত্রিকার মনের মানুষের সাথে এক হওয়ার পথে বাঁধা, অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাইলেও চৈত্রিকা এড়িয়ে যেতে পারবে না। পারবে না কয়েকদিন আগে স্বামী হারানো ফাহিমদা,পিতৃহারা মিমকে ফেলে অন্যের ঘর আলোকিত করতে। সংসার নামক বেড়াজালে বন্দী হতে। তাহাফের পরিবারকেও ফিরিয়ে দিত আজ। যেমন করে ফিরিয়ে দিচ্ছে সাফারাতকে। তবে আজীবনের জন্য না। কিছু টা সময়ের প্রয়োজন দু’জন সদস্যের পরিবারটা সামলাতে, বাবার দায়িত্ব টা পালন করার নিমিত্তে। সাফারাতকে প্রাণপণে চায়। কিন্তু এখন না। কথাগুলো মনে না রেখে সকলের সম্মুখে ব্যক্ত করে চৈত্রিকা। ফাহমিদা মেয়ের কথা শুনে অন্তরে শীতল স্রোত অনুভব করলেন। মুহুর্তেই শৈশব হতে প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে বড় হওয়া চৈত্রিকার সুখের কথা ভেবে কঠোর হলেন তিনি। সাফারাত একবারও দৃষ্টি মেলে নি চৈত্রিকার পানে। উল্টো ঘুরে সোফায় গিয়ে বসে।
____________
চৈত্রিকার সারা রুমে চোখ বুলিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল সাফারাত। টব থেকে শুকনো জারবেরার পাপড়ি হাতে নিয়ে মুঠো পুড়ে নিল। চৈত্রিকা আশ্চর্যান্বিত হলো ব্যাপক। মাথায় ধরে না সবাই তার রুমে এসে কেন এই ফুলগুলোর দিকেই নজর ফেলে!সাফারাত প্রগাঢ় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে চৈত্রিকার দিকে। চেয়ার ছেড়ে দূরত্বে জানালার ধার ঘেঁষে থাকা চৈত্রিকার কাছাকাছি এলো। চৈত্রিকা ভড়কালো। এক পা এক পা করে মিশে গেল দেয়ালের সাথে। সাফারাত সবটুকু দূরত্ব নিঃশেষ করে খুব কাছাকাছি এলো। অতিশয় নিকট। অল্প অল্প কম্পনরত গোলাপি ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে চোখ রেখে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠল,
‘ বিয়ে আপনাকে বসতেই হবে চৈত্র। আজকেই। ‘
‘ আপনি তো অবুঝ না। আমার পরিবারকে বিপদে রেখে, এই পরিস্থিতিতে ফেলে আমি নিজের চিন্তা করতে পারব না। ‘
চৈত্রিকার কন্ঠনালি কাঁপছে। সাফারাত দেয়ালের একপাশে হাত রেখে সামান্য ঝুঁকে পড়ল। তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে চৈত্রিকার সারা মুখশ্রীতে। চৈত্রিকার ইচ্ছে করছে সাফারাতের জ্যাকেট আঁকড়ে ধরে আরো কাছে টেনে নিতে। কি এক অসভ্য,বেহায়া ইচ্ছে জাগল!বাঁধ ভাঙা লাগামহীন স্পৃহা।
‘ তো আপনি কবে বিয়ের কথা ভাবছেন?আমি বুড়ো হয়ে যাবার পর?’
সাফারাত কি ঠেস মেরে কথা বললো?মাথা দু’দিকে নাড়াল চৈত্রিকা। মুখে আওড়ালো,
‘ আমার একটা জব হোক তারপর,,’
কথাটা কটাক্ষ করে সাফারাত বিরক্ত গলায় বলে উঠল,
‘ আপনি কাল সকালেই আমার অফিসে যাবেন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। আপনার ফ্যামিলি মানে আমার আপনজন। আমি তাদের দায়িত্ব নিতে পারি অনায়াসে। আপনি হয়ত এটা পছন্দ করছেন না। নো প্রবলেম। আপনি জব করবেন। তবে বিয়েটা আজই হবে। ‘
‘ আপনি কি আমার উপর করুণা করতে চাইছেন?’
দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল সাফারাতের ভেতর। এক টানে চৈত্রিকার কোমর জরিয়ে কাছে টেনে নিল। রোষপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লহু স্বরে বললো,
‘ ফারদার এমন কথা মুখ দিয়েও আনবেন না চৈত্র। আপনার যোগ্যতা ছাড়া কোনো জব দেওয়া হবে না। ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হলেই জব পাবেন। এক মাস সময় দিলাম আমি আপনাকে। জবের চেষ্টা করবেন,পরিবারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবেন। আর এই এক মাসের মাঝে যদি কোনোভাবেই দু’জন কাছাকাছি চলে আসি তাহলে আই সোয়ের একদম উঠিয়ে নিয়ে যাব আপনাকে। ‘
চৈত্রিকা মৃদু কেঁপে উঠল। আঁখিপল্লব নেড়ে চক্ষু মেলে তাকালো সাফারাতের রাগান্বিত চেহারায়। আর একটা শব্দও উচ্চারণের সাহস জোগাতে ব্যর্থ হলো। সাফারাত মুখ এগিয়ে নরম,কোমল কপোলে গাল ঘষে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে নেয়। কোমরের বাঁধন ঢিলে করে আদেশের সুরে বলে,
‘ ঘোমটা টেনে বাহিরে আসুন। দিহান কাজী নিয়ে আসছে। ‘
#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___২১
সাধাসিধে আটপৌরে কাপড়ে বিয়ে নামক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে চৈত্রিকা। ফাহমিদা মেয়ের ঘোমটা টা ভালো করে টেনে দিলেন। ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে না ভেবে মেয়ের বর্তমান নিয়ে আনন্দিত তিনি। শুধু কষ্ট এতটুকু মেয়ের সুখের জীবনে পদার্পণ টুকু আহমেদ সাহেব দেখে যেতে পারলেন না৷ আচ্ছা তিনি থাকলে কি আজ খুশি হতেন?মেনে নিতেন সাফারাতকে?মেয়ের জীবনের এই খুশির মুহুর্তে একটুখানির জন্য হলেও হয়ত উনার কঠিন মনটা গলে যেত। হয়ত বা না। বাহিরে বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে শীতলতা। মৃদু ঠান্ডা। এই ঠান্ডার মাঝেও মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে শব্দ সৃষ্ট করে। মিমের গা কাটা দিয়ে উঠছে। ওড়নার নিচে ঢুকিয়ে নিল হাত দু’টো। তার বরাবরই বসে আছে দিহান। একবার শুধু এই ছেলের দিকে তাকিয়েছিল মিম। দিহানের মুখে হাসির ছটা দেখে সেই যে মুখ নামিয়েছে আর ভুলেও তার দিকে ফিরে তাকায় নি। এই ছেলেকে দেখলে গা পিত্তি জ্বলে জ্বলে উঠে। সাফারাত গম্ভীর মুখে বসে আছে। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে কাজী সাহেব এসেছেন। কাবিনের কাগজ রেডি করছেন। কিন্তু এতো দেরি ভালো লাগছে না সাফারাতের। বিরক্তিতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
‘ একটু জলদি করুন। ‘
কাজী সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন। দাঁত কেলিয়ে বললেন,
‘ শেষ। আর এক মিনিট বাবা। ‘
‘ এক মিনিটের বেশি যেন না হয়।’
লজ্জায় মরি মরি অবস্থা চৈত্রিকার। মিম,দিহান হাসছে। ফাহমিদা অন্যদিকে চেয়ে রইলেন। এই ছেলের কি একটুও তর সইছে না?বিয়ে তো তার কাছেই দেওয়া হবে। সাফারাত যে এতো বিয়ে পাগল তা আগে জানত না চৈত্রিকা। শেষমেশ এতগুলো মানুষের সামনে লজ্জায় ডুবতে হলো!সাফারাতের তাতেও কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। বিরক্ত ভঙ্গিতে অপেক্ষা করে চলেছে। ফাহমিদা চৈত্রিকার কাছ থেকে একটু আকটু জেনেছে সাফারাতের পরিবার সম্পর্কে। বাবা আছে এটা শুনেছে। এতো বড় বাড়িতে মেয়ের বিয়ের চিন্তা উনার কল্পনায় আসত না৷ ঘুণাক্ষরেও ভাবেন নি মেয়ের কপালটা এতো ভালো হবে!মনের তৃপ্তির জন্য উনি একটা প্রশ্ন করেই বসলেন,
‘ সাফারাত তোমার পরিবার থেকে কেউ উপস্থিত থাকলে ভালো হতো। তোমার বাবা অথবা চাচা-চাচী। ‘
নিমিষেই সাফারাতের মুখের ভাব সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। ফর্সা মুখে গম্ভীরতার ছাপ। গলার স্বর ধারালো,তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। মাথা নত করে নিজেকে সংযত করে বললো,
‘ চাচা-চাচী নিজেদের কাজে ব্যস্ত। দাদি অসুস্থ। আম্মু মারা গিয়েছে অনেক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আর কেউ নেই আমার। যাকে মানুষ আমার বাবা বলে আখ্যায়িত করেন তিনি আমেরিকা থাকেন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। আপাতত আপন বলতে এখানে উপস্থিত আছে দিহান। ‘
চৈত্রিকা চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো। মেয়ের করুন চাহনি দেখে ফাহমিদার মনে হলো এই মুহুর্তে সাফারাতের বাবার নামটা না নিলে বেশ ভালো হত। চৈত্রিকা বিস্মিত হয়ে পড়ে সাফারাতের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আছে শুনে। তাই বলেই কি সাফারাত বাবাকে ঘৃণা করে নাকি অন্য কোনো কারণ? কাজী সাহেব কাগজ এগিয়ে দিতেই বিনা সময় ব্যায় করে ঝটপট সাইন করে দেয় সাফারাত। চৈত্রিকা সাইন করে অনেকটা সময় নিয়ে। ডান হাতটা ভীষণ কাঁপছিল তার। বাবার অভাব টা অনুভব করছিল খুব করে। খুব করে চাইছিল বাবার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠুক চোখের সামনে। কিন্তু তা যে অসম্ভব। কবুল বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছে। শব্দগুলো দলাপাকিয়ে আঁটকে যাচ্ছে কন্ঠনালিতে। পুরো শরীর জুড়ে তীব্র কম্পন। বিয়ে হয়ে গেল! সাফারাতের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেল!সব কেন এতো দ্রুত হলো?এমন অপ্রত্যাশিত সুখময় মুহুর্ত জীবনে বার বার আসবে? চৈত্রিকার বিশ্বাস হচ্ছে না যেই মানুষটাকে এতো বছর খুঁজেছে,যার দেখা মিলে নি কতকাল, আজ সেই মানুষটা অকস্মাৎ নিজের আগমন ঘটিয়ে বিবাহ নামক বন্ধনে কত সহজে বেঁধে দিল তাকে।
চৈত্রিকার পানির পিপাসা পাচ্ছে খুব। কিন্তু এখান থেকে উঠার শক্তি পাচ্ছে না। পা দু’টো অসাড় হয়ে পড়েছে। ফাহমিদা কিচেনে গেল মিষ্টি আনতে। দিহান আসার সময় নিয়ে এসেছিল। মিম মনে মনে খুশিতে ডানা মেলে উড়ছে। বোনের দুঃখ বুঝি দূর হলো এবার। চৈত্রিকার কাছ ঘেঁষে ফিসফিস করে বললো,
‘ একটু হাসো না আপু। তুমি হাসো না একদম। এখন তো ভালোবাসার মানুষকে চিরতরে আঁচলে বেঁধে ফেললে। এবার তো হাসো বিজয়ী হাসি। ‘
চৈত্রিকা চোখ রাঙিয়ে চাইতেই মিম নিভে গেল মৃদু হাওয়ায় নিভু নিভু অনলের ন্যায়। মুখ বাঁকিয়ে পুনর্বার বললো,
‘ হাসবা কেন?ভাইয়ার যা অ্যাটিটিউড দেখলাম আজ। যেই মেয়ে দেখবে নিঃসন্দেহে ফিদা হয়ে যাবে। ফিদা। তখন তো কষ্টে জর্জরিত হয়ে কপাল চাপড়াবে। ‘
চৈত্রিকা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। হুট করে মনে পড়ল জেরিনের কথা। জেরিন তো বললো সাফারাতের সাথে ওর বিয়ে ঠিক। সাফারাত হয়ত পরিবারের কাউকে ওদের বিয়ের কথা জানাই নি। দাদি মানবে তো চৈত্রিকাকে?
সাফারাত মোবাইলে অফিসের কাজে ব্যস্ত। মিমের ফোন পেয়ে অর্ধেক মিটিং ফেলে চলে এসেছে। চৈত্রিকার ইচ্ছে করল মোবাইল টা টেনে এনে জানালা দিয়ে ফেলে দিতে। সদ্য বিয়ে হয়েছে এই ছেলের অথচ লজ্জার শ্রী মাত্র নেই। ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি। কাজী সাহেব মিষ্টি খেয়ে উঠে পড়লেন। দিহান গেল উনাকে এগিয়ে দিতে। ফাহমিদা একটা মিষ্টি সাফারাতকে সাধতেই সে সাফ সাফ জানিয়ে দেয়,
‘ আমি মিষ্টি খাই না মা। ‘
সাফারাত মিষ্টি খেতে নিষেধ করায় তিনি একটুও কষ্ট পান নি বরঞ্চ আবেগে আপ্লুত,সিক্ত হয়ে পড়লেন ‘ মা ‘ ডাক শ্রবণ হতেই। সঙ্গে সঙ্গে মন বললো মেয়ের জন্য সঠিক মানুষটাই এসেছে জীবনে। চৈত্রিকা বলেছে আপাতত বিয়ে হবে। একমাস পর শশুরবাড়ি চলে যাবে ও। তা মনে পড়তেই ফাহমিদা উত্তেজিত সুরে বলে উঠলেন,
‘ তুমি কিন্তু আজ যাবে না সাফারাত। আজকে থেকে যেতে হবে। ‘
মায়ের কথা কর্ণধারে পৌঁছাতেই চৈত্রিকার ভ্রুঁ জোড়া কপালে উঠে গেল। সাফারাতের নম্র কন্ঠস্বর।
‘ থাকব মা। ‘
হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল চৈত্রিকার। থাকাটা কি জরুরি?অন্তস্থল কাঁপছে ক্ষণে ক্ষণে। ভয়ে না-কি লজ্জায় চৈত্রিকা বুঝতে পারছে না। সাফারাত এখন তার স্বামী। থাকলে তো নিশ্চয়ই তার রুমে থাকবে একসাথে। তাছাড়া সাফারাত বলেছে যদি দু’জন কাছাকাছি আসে তাহলে একদম উঠিয়ে নিয়ে যাবে। নিজের ভালোবাসার মানুষের সামনে,স্বামীর সামনে বদ্ধ রুমে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে না তো!কিশোরী মেয়েদের মতোন চৈত্রিকার লজ্জায় আরক্তিম অবস্থা।
________________
দিহান বসে আছে সোফায় হেলান দিয়ে। সে যেন এই জগতে নেই। হাত পা ছড়িয়েই বসে আছে। মিম রান্নাঘর থেকে টেবিলে এনে খাবার সাজাচ্ছে। দিহান চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ফাহমিদা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন লাঞ্চ করা ব্যতীত এক পাও নড়তে পারবে না। এর ফাঁকে মায়ের চৈত্রিকাকে কথার মাধ্যমে আঘাত করার জন্য অনেকবার ক্ষমা চাইল দিহান। ফাহমিদা আলতো হেসে বলেছেন,
‘ আমার মনে কোনো কষ্ট নেই। তুমিও ভুলে যাও। ‘
চৈত্রিকার মায়ের অমায়িক, মমতাময়ী ব্যবহারে দিহান হতাশাজনক নিঃশ্বাস ফেলে। তার মা এমন হলেই পারত। তার মা খারাপ এমনটা না। তবে মানুষকে কথার মাধ্যমে আঘাত,কষ্ট দিয়ে ফেলে অহরহ। সাফারাতের ফোন পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে ছুটে এসেছে। দিনটাই যেন আজ ছোটাছুটির। ক্লান্ত মস্তিষ্ক টা সোফায় এলিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে চাইতেই নজর ঠেকল মিমের মুখের দিকে। মিম ভড়কে গেল। কারণ ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিও নিবদ্ধ ছিল দিহানের দিক। মিমের ভ্যাবাচেকা খাওয়া চেহারা দেখে ঢের মজা পেলো দিহান। হাসলো ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে। কৌতুকপূর্ণ কন্ঠে ডেকে উঠল,
‘ মিম-ডিম এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও তো। ‘
রাগে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মিম। সাফারাত আঁড়চোখে তাকালো দিহান ও মিমের দিক। মিম পানি তো দিল না বরং উল্টো ঘুরে চলে যেতে শুরু করে। মাঝপথে থেমে যায় সাফারাতের ডাকে। বিনয়ী স্বরে বলে,
‘ জ্বি ভাইয়া। ‘
‘ চৈত্র কোথায়?উনি কি খাবেন না?’
‘ আমি আসতে বলছি ভাইয়া। ‘
‘ যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও। ‘
মিম পানি এনে টেবিলে রাখল সাফারাতের সামনে। নিচু স্বরে সূক্ষ্ম হাসি নিয়ে বললো,
‘ আপুকে ডেকে আনছি। ‘
দিহান ঢকঢক করে পুরো এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রসাত্মক কন্ঠে বলে উঠল,
‘ তোর শালী দেখি তোর ভক্ত রে ভাই। ‘
সাফারাত শক্ত গলায় বললো,
‘ ওকে বিরক্ত করলে তোর অবস্থা খারাপ হবে। ‘
‘ আমি তো করি না। করে তোর ধানিলংকা শালী সাহেবা। কেমন চোখ দিয়ে ভস্ম করে আমাকে। উফ!’
চৈত্রিকা ভেজা চুল বেঁধে বেড়িয়ে এলো। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। কলিং বেল বেজে উঠতেই অন্তর আত্মা শুকিয়ে যাবার উপক্রম, অভিপ্রায়। তাহাফের কথা প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল মাথা থেকে বিয়ের টেনশনে। দরজা খুলছে না বিধায় দেয়ালের ওপারের মানুষটা বোধহয় ব্যাপক বিরক্ত,রাগান্বিত। অনবরত কলিং বেল চাপছে। সাফারাত ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
‘ খুলছেন না কেন?’
চৈত্রিকা জবাবে কোনো সুদুত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। আকস্মিক শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। মিম কতটুকু বলেছে সাফারাতকে?সেদিন ছাদের ব্যাপারটা বলে দেয় নি তো?মিমের কাছে কথাটা শেয়ার করেছিল চৈত্রিকা। আর তাহাফের রিয়েক্ট কেমন হবে?মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। নেত্রদ্বয় ঝাপসা হয়ে আসছে অতিরিক্ত ঘাবড়ানোর দরুন। দিহান উঠে এসে বললো,
‘ ঠিক আছো চৈত্রিকা?দরজা মেলছো না কেন?’
‘ তাহাফ ভাইয়ার ফ্যামিলি এসেছে হয়ত। ‘
দিহান, সাফারাত, মিম এতক্ষণে কারণ টা বুঝতে পারল। দিহান গিয়ে দরজা মেলে দেয়। এক পলকেই চট করে দিহান কে চিনে নেয় তাহাফ। ক্রুদ্ধ চোখে চেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ফাহমিদা এসে তাহাফের বাবা-মা’র সাথে কুশল বিনিময় করে বসতে বলেন। তাহাফ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাফারাত ও দিহান কে দেখে। পরিস্থিতি বিগড়ে যাক তার পূর্বেই ফাহমিদা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
‘ দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো। ‘
তাহাফ না বসে তীর্যক কন্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ ওরা কি আকদ উপলক্ষে এসেছে এখানে?’
মুহুর্তেই একটা ভরাট,গম্ভীর স্বর শোনা গেল।
‘ না তো। বিয়ে করতে এসেছি। করা শেষ। মাথায় ঘোমটা টেনে রাখা মেয়েটা বর্তমানে আমার বউ। ‘
হতভম্ব, বিস্মিত, চমক,অবাকতা সবগুলো শব্দের দেখা মিলল উপস্থিত সকলের মুখশ্রীতে। কেবল বাদ পড়ল সাফারাত। তার অভিব্যক্তি নির্বিকার,নির্লিপ্ত। চৈত্রিকা,দিহান কারো ভাবনায় আসে নি এভাবে ফট করে সত্যটা প্রকাশ করবে সাফারাত। তাহাফ চৈত্রিকার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে,
‘ কি বলছে এসব?’
চৈত্রিকা নিরুত্তর। ফাহমিদা বুঝানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলেন,
‘ সাফারাত ও চৈত্রিকা একে অপরকে পছন্দ করে। একটু আগেই ওদের বিয়ে হয়েছে। আমি মেয়ের সাথে তো জোর করতে পারি না। সবকিছু বলতাম আপনাদের। মোবাইলে বলার চেয়ে সরাসরি কথা বলাটা উচিত মনে হয়েছে আমার। তাই,,’
তাহাফের বাবা তেতে উঠলেন। ফাহমিদার কথাটা অসমাপ্ত রেখে বললেন,
‘ আপনার একদম উচিত হয় নি আমাদের সাথে মেয়ের বিয়ের পাকা কথা দিয়ে অন্যের সাথে বিয়ে দেওয়ার। ‘
‘ আমি মানছি। কিন্তু আপনারা একটা দিক ভেবে দেখুন চৈত্রিকা আপনার ছেলের বউ হয়েও অন্য কাউকে মনে ধরে রাখত সেটা কি ভালো হতো?সংসারে অশান্তি বৈ কিছুই হত না। তাছাড়া ওদের জীবনটা নষ্ট হত। ‘
তাহাফের বাবা-মা কিয়ৎপরিমাণ ভাবলেন। ফাহমিদার কথাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া চৈত্রিকার অমতে জোর করে বিয়ে তো সম্ভব ছিল না। আহমেদ সাহেবের খুব ভালো বন্ধু তাহাফের বাবা। তিনি নিজের ছেলের দিক টা না ভেবে বন্ধুর মেয়ের দিকটাও ভাবলেন। ছোট্ট করে বললেন,
‘ ঠিক বলছেন ভাবী। ‘
বাবার উত্তর টা বিন্দু মাত্র পছন্দ হলো না তাহাফের। হিংস্র বাঘের মতো গর্জে উঠল সে। চৈত্রিকাকে না পাওয়ার হার মানতে পারবে না,মানবেও না।
‘ মিথ্যে বলছে এরা। এই মেয়ে আমার কাছে বিয়ে না বসার জন্য যত মিথ্যে, বানোয়াট অভিনয় করছে। বানিয়ে বলছে সবাই। চৈত্র কে ছাড়া আমি যাব না এখান থেকে। ‘
চৈত্রিকা মৌনতা ভেঙে বললো,
‘ মিথ্যে অভিনয় কেন করবো?আপনার কুকীর্তি জেনে ফেলেছি বলে?’
কথাটা সহ্য হলো না তাহাফের। এক প্রকার হুলস্থুল বেঁধে গেল। দিকবিদিক ভুলে চৈত্রিকার দিকে তেড়ে যেতেই সাফারাতের বলিষ্ঠ হাতের আঘা*তে ছিটকে পড়ল মেঝেতে তার শক্তপোক্ত দেহটা। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক সবাই। তাহাফের ঠোঁটের কার্ণিশ হতে তরল রক্তবিন্দু গড়িয়ে যাচ্ছে। সাফারাতের রক্তাক্ত,লাল আভায় সিক্ত চক্ষু তাহাফের উপর। রাগের প্রদাহে কপালের শিরা-উপশিরা ফুলেফেঁপে উঠেছে। চৈত্রিকার হাত মুঠোয় পুড়ে ঝাঁঝালো গলায় চিৎকার করে বলে উঠল,
‘ চৈত্র আমার বউ। আমার সুখ। ‘
কথাটা বলেই থেমে থাকল না। হাতের বাঁধন শিথিল করে লাথি বসিয়ে দিল তাহাফের পুরুষা*ঙ্গে।
‘ শা*লা। চৈত্রকে পাওয়ার অনেক শখ না তোর। আজ সব শখ মিটিয়ে দিব আমি। ‘
তাহাফ উল্টো আ/ঘাত করল সাফারাতের বুকে। তবুও থেমে নেই সাফারাত। চৈত্রিকার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। দিহান সাফারাতকে থামাতে পারছে না। ফাহমিদা বুঝতে পারলেন আগের কোনো রেশ ধরে সাফারাত তাহাফকে আক্র/মণ করছে। তাহাফের বাবা-মা সবাই মিলে চেষ্টা করছে থামানোর। পরিস্থিতি এতো ঘোলাটে হয়ে যাবে চৈত্রিকা ভাবে নি। জল বেশিদূর গড়িয়ে যাওয়ার আগে উচ্চ আওয়াজে বললো,
‘ প্লিজ ছেড়ে দিন সাফারাত। ছাড়ুন উনাকে। ‘
কর্ণে চৈত্রিকার কথাটা পৌঁছালেও তোয়াক্কা করল না সাফারাত। ইচ্ছে করেই শুনছে না। চৈত্রিকা হাত টা ধরে আকুতি -মিনতি করতে শুরু করে। সে চায় না তার কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠুল। বুকে একটা লাথি দিয়ে সাফারাত সরে এলো। রোষপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টেনে রুমে নিয়ে এলো চৈত্রিকাকে।
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তাহাফের জন্য কষ্ট অনুভব করবেন না কেউ।?)