#সুখের_নেশায়,২৪,২৫
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___২৪
ব্যাগে কত টাকা আছে চেক করে নিল মিম। সাফারাত গতকাল তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছে। কোনোমতেই নিতে চায় নি ও। সাফারাত যখন বললো ভাই হিসেবে ছোট বোনকে দিচ্ছে তখন আর ফিরিয়ে দিতে পারে নি। মানুষ তো বোনের বিয়েতে গেইট ধরে,জুতা চুরি করে,দুলাভাইয়ের হাত ধুয়ে দেয়। কিন্তু চৈত্রিকার হঠাৎ বিয়ে হবার কারণে এসব থেকে বঞ্চিত হলো মিম। দুপুরে লাঞ্চ করার সময় সাফারাত নিজ থেকেই তাকে বলে ভাইয়ার থেকে টাকা আদায় করার কথা ভুলে গেলে। ইশ!এতো ভালো কেউ হয়?মিম নিমিষেই উৎফুল্ল হয়ে উঠে। তার বোন সত্যিই খুব লাকি সাফারাতের মতো একটা মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। এবার বোধ হয় চৈত্রিকার জীবনের সকল কষ্টের সমাপ্ত হবে। ব্যাগে একশ টাকা আছে। বাকিটা মায়ের কাছে রেখে এসেছিল মিম। মেয়েটা একদমই অযথা টাকা খরচ করে না। বোনের ত্যাগ তাকেও কঠোর হতে শিখিয়ে দিচ্ছে দিনকে দিন। কলেজ গেইট থেকে কিছুদূরে আইসক্রিম বিক্রি করছে। ভ্যাপসা গরমে আইসক্রিম খাওয়ার তীব্র ইচ্ছে জাগে মিমের। রাস্তা পেরিয়ে অপর পাশে চলে আসে। চকলেট ফ্লেভারের একটা আইসক্রিম কিনে পিছন ঘুরতেই নেত্রদ্বয় ভয়ার্ত হয়ে উঠল। বুক ধরফড় করতে লাগল প্রচন্ড ভয়ে। একটা ছেলে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। আরেকটু হলেই প্রায় ছেলেটার বুকের সাথে ধাক্কা লাগত। ছেলেটা হাত বাড়িয়ে আইসক্রিম টা ছিনিয়ে নিল। কামড় বসাতে গিয়ে হালকা হলদে বিশ্রী দাঁতগুলো দেখিয়ে বিদঘুটে হেসে বলে উঠল,
‘ তুই আগে কামড় দে তো। তোর ঠোঁটের স্পর্শ লাগলে আইসক্রিম টা মজা লাগব। আহ!কি সুন্দর গোলাপি তোর ঠোঁট দুইটা। তুই নাহয় থাপ্প/ড় দিছস, আমি তোরে আদর দিমু ওই ঠোঁটে। ‘
শ্রবণগ্রন্থিতে তীব্র শব্দ করে পৌঁছাল প্রত্যেক টা শব্দ। অকস্মাৎ ভোঁতা হয়ে এলো কান দুটো। ঘৃণায় বমি করে দিতে ইচ্ছে করছে। এসব কুপ্রস্তাব মেনে নিতে পারে না মিম। প্রথম যেদিন বাউন্ডুলে,অস/ভ্য রানা নামের এই ছেলেটা রাস্তায় একা পেয়ে প্রেম নয় শয্যাসঙ্গী হওয়ার কুপ্রস্তাব দিয়েছিল সেদিন রাগে নিজেকে সংযত করতে পারে নি মিম। সপাটে এক চড় বসিয়ে দিয়েছিল গালে। এটা প্রায় এক মাস আগেরকার ঘটনা। তারপর আর দেখে নি ছেলেটাকে। এলাকার ছোটখাটো গুন্ডা বলে সম্বোধন করা হয় একে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এদের প্রতিনিয়ত অভ্যাস। থাপ্পড় মারার পর থেকে ভীষণ ভয়ে ভয়ে থাকত মিম। বাবা অথবা চৈত্রিকা কাউকে বলার সাহস করতে পারে নি। অবশেষে কলেজে এসে মেয়েদের কানাঘুঁষাতে যখন শুনে রানা কে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে রেপ কেসে মিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু আজ!সম্পূর্ণ সাহস,স্বস্তি সব কিছুর যেন মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেল।
‘ কিরে আইসক্রিম গলে যাইতাছে তো। ‘
মিম ভয়ার্ত দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকালো। কেউ কেউ ওদের দিকে চেয়ে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। আইসক্রিম বিক্রেতার দিকে অসহায় চোখে তাকালো। বুড়ো লোক। উনার নিজেরও মিমের সমান একটা মেয়ে আছে। আজ যদি রানার বিরুদ্ধে গলা উঠায় তাহলে উনার মেয়েটা হয়ত আর নিরাপদে থাকবে না। তবুও ভয়ে ভয়ে বললেন,
‘ মেয়েডারে যাইতে দেন স্যার। ভয় পাইতাছে। ‘
রানার দৃষ্টি দেখে আইসক্রিমওয়ালা আর এক মুহুর্তও দাঁড়াল না। গাড়ি ঠেলে চলে যাচ্ছেন দ্রুত। মিম কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো,
‘ আমাকে যেতে দিন। ‘
‘ না দিলে?’
মিম কি বলবে বুঝতে পারছে না। পিছনের ছেলেগুলো দাঁত কেলিয়ে হাসছে। দৌড় দিলে বাঁচতে পারবে তো?আর এতগুলো মানুষ কেউ তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে না। মিমের ইচ্ছে করল সবার মুখে থুতু দিতে। আজকাল কারো বিপদে কেউ এগিয়ে আসে না। উল্টো রং তামাশা করে। মিম দৌড় দেবার জন্য প্রস্তুত হতেই রানা খপ করে হাত ধরে ফেলল। দাঁতে দাঁত কেটে বললো,
‘ শা*লী রে গাড়িতে তোল। চড়ের শোধ টা বিছানায় লইমু। ‘
হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে মিমের। রীতিমতো কাঁপছে ও। রানার পিছনের একটা ছেলে আরেক হাত ধরতেই মিম চিৎকার দিতে চাইল। কিন্তু প্রচন্ড ভয়ের চোটে গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না।
দিহান মিম কে দেখার জন্য অফিসের একটা মিটিং শেষ করে ছুটে এসেছে। এসে এমন কিছু দেখবে ঘুণাক্ষরেও ভাবে নি সে। মস্তিষ্ক ধপ করে জ্বলে উঠল। গাড়ি থেকে বের হয়ে দৌড়ে এসে দাঁড়াল মিমের পাশে। চোখের পলকে রানা ও পাশের ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মিমকে নিজের কাছে টেনে নিল। ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া মিম পরিচিত কারো সান্নিধ্য পেয়ে ঝাপটে ধরল। দিহানের শার্ট আঁকড়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। পিঠের উপর আলতো করে হাত রেখে দিহান আশ্বাস দেয়। রানা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ শা*লা তোর সাহস হইল কেমনে আমারে ধাক্কা দেওয়ার। আবার আমার জিনিস কাইড়া নিয়া বুকে জড়াও।
দিহান রাগল না। বরং স্মিত হাসল। মিম কে নিজের থেকে আলাদা করতে চাইলে আরো জড়োসড়ো হয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল মিম। এটা যেন ওর ভরসার স্থান। দিহানও আর চেষ্টা না করে ধরে রেখে বললো,
‘ ও কোনো জিনিস না। আমার ভবিষ্যৎ ও। আরেকবার স্পর্শ করে দেখাস তোকে জেলে পচিয়ে মারব আমি। তোর মতো ছোটোখাটো গুন্ডা কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় তা দিহান চৌধুরী বেশ ভালো করে জানে। ‘
রানার পিছনের ছেলেটা ছুরি বের করতেই হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়।বুঝতে পারে দিহান খুব পাওয়ারফুল লোক। তাই এই মুহুর্তে কোনো রিস্ক না নিয়ে কেটে পড়ল। মিম কে এক হাতে আঁকড়ে ধরে আশেপাশের এক লোক থেকে রানার সব ডিটেইলস জেনে নেয়। ছোট্ট একটা মেসেজ করে সাফারাতকে। মিম কে গাড়িতে বসাতে গিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি। কিছুতেই ছাড়ছে না দিহানকে। যেই মেয়ে অন্য সময় দিহানের ছায়াটা সহ্য করতে পারত না, এখন ভয়ে ছাড়ছেই না। দিহান হাল ছেড়ে বললো,
‘ তুমি কি চাও তোমাকে কোলে নিয়ে ড্রাইভ করি?তাহলে কিন্তু তা তোমার জন্য মঙ্গলকর হবে না। আমিও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ব। তুমিও। ‘
দিহানের কথার মানে বুঝতে সময় লাগল না মিমের। শার্ট ছেড়ে সিটে বসল। চক্ষুকোটর হতে অবাধে গড়িয়ে যাচ্ছে জল। দিহান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। অতঃপর নিঃশব্দে টেনে মিম কে আঁকড়ে ধরে এক হাতে৷ মিম টু শব্দ টুকু করে নি। বাড়ির গেইটের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ যেতে পারবে?’
‘ হুম। ‘
দরজা খুলে নামতে নিলে দিহান হাতের উপর হাত রাখে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে ধরে মিম।
‘ শুনো, এখন থেকে রেগুলার আমি তোমাকে দিয়ে আসব। আসার সময় আমি নিয়ে আসব। ‘
মিম আমতা আমতা করে প্রশ্ন করে,
‘ কেন?’
‘ কেন এর উত্তর টা আজ তোলা থাকুক। একদিন তুমি নিজেই উত্তর খুঁজে পাবে। সাবধানে যেও। আমি অলওয়েজ থাকব তোমার আনাচে-কানাচে মিম ডিম। ‘
মিম ডিম ডাকে কপট রাগ হলেও তা প্রকাশ করে নি মিম। অজানা কারণেই আজ দিহান কে ভালো লাগছে তার। ভীষণ ভালো লাগছে। হতে পারে দিহান তার সম্মান রক্ষা করেছে বলে নয়ত জীবনে প্রথমবার কোনো পুরুষের খুব কাছাকাছি গিয়েছে বিধায়। ভরসা খুঁজে পেয়েছে বলে। গাড়ি থেমে নেমে টলমল পায়ে অনেকখানি এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে দিহানের এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। দৌড়ে গাড়ির কাছে এলো মিম। জানালার দিকে ঝুঁকে মিহি স্বরে বললো,
‘ ধন্যবাদ। ‘
_______________
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে সমস্ত প্রকৃতি জুড়ে। প্রতিদিন বৃষ্টি ভালো লাগে না চৈত্রিকার। মিমের গায়ে কাঁথা মেলে দিয়ে বিছানা ছাড়ল। রাতে জ্বর এসেছে মিমের। জ্বরটা যে ভয়ের তাড়নায় দিহান ফোন করে না জানালে কখনও জানতেই পারত না চৈত্রিকা। সবটা ওর অগোচরেই থেকে যেত। দিহান সবকিছু খুলে বলে ও মিমকে রেগুলার নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসার অনুমতি চায়। চৈত্রিকা উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারছিল না। তবে সাফারাত সায় দিল। তাই আর না করতে পারে নি। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই ফোন বেজে উঠে। ঝটপট রিসিভ করতেই সাফারাত ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
‘ শালী সাহেবার জ্বর কমেছে? ‘
‘ হু। ‘
‘ অফিস যাবেন তো আজ?’
গতরাতে জবের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে এটার মেসেজ এসেছিল। চৈত্রিকা ছোট্ট করে জানালো,
‘ যাবো। আপনি?’
‘ আজ অফিস যাওয়াটা অনেক জরুরি। বিয়ে করেও বউকে যখন কাছে পাচ্ছি না। মুখদর্শনের জন্য হলেও অফিসে যেতে হবে চৈত্র মাস। ‘
হাত ফসকে মোবাইলটা ফ্লোরে ছিটকে পড়ল। বুকটা প্রচন্ড গতিতে ধুকপুক করছে চৈত্রিকার। ‘ চৈত্র মাস?’ ঠিক শুনেছে তো?শিরদাঁড়া বরাবর শীতল স্রোত বয়ে গেল। মোবাইলটা পড়ে আছে অবহেলায় মেঝেতে খন্ড খন্ড হয়ে।
পুরোনো ছাতাটা মেলে চৈত্রিকা গেইট অব্দি এলো। পড়নের কালো সুতির ড্রেস টা হালকা ভিজে গেছে বৃষ্টির ছিটায়। বৃষ্টি হবার কারণে গাড়ি,রিকশার চলাচল নেই তত একটা। চৈত্রিকা চিন্তায় পড়ে গেল কিভাবে যাবে। তাৎক্ষণিক তার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে সাদা একটা গাড়ি হাজির হয়। প্রথমত চৈত্রিকা হকচকিয়ে যায়। পরক্ষণেই গাড়ির দরজা মেলে সাফারাতের গাড়ির ড্রাইভার কে দেখে ধাতস্থ হয়।
‘ আসসালামু আলাইকুম ম্যাম। স্যার আপনাকে অফিসে নিয়ে যেতে বললো। ‘
কথাটা বলেই ড্রাইভার নিজের হাতের মোবাইলটা এগিয়ে দেয়। হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কানে ধরে ফোন টা চৈত্রিকা। অপরপাশ হতে ভেসে আসে হৃদয় নিংড়ে দেওয়া ক্রুদ্ধ কন্ঠস্বর।
‘ মোবাইল কোথায় আপনার?’
‘ হাত থেকে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘
‘ আচ্ছা আসুন। ‘
চৈত্রিকা মোবাইলটা ড্রাইভারের হাতে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। বৃষ্টি বেড়েছে। ইচ্ছে করেই জানালা টা লাগাল না। বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে মুখ। চোখ বুঁজে বৃষ্টির আলিঙ্গন উপভোগ করছে চৈত্রিকা। চারপাশে বইছে সুখময় হাওয়া,অনিল।
মোনা মুগ্ধ চোখে অবলোকন করে যাচ্ছে সাফারাতকে এক নাগাড়ে। আজ সাদা শার্টের উপর হালকা নীল একটা ব্লেজার পড়েছে সাফারাত। ফর্সা মুখে চাপদাড়ি তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। চোখ দিয়ে এক প্রকার গিলে খাচ্ছে মোনা সুদর্শন এই পুরুষকে। সাফারাত মোবাইলের দিকে নজর রেখেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
‘ চোখের দৃষ্টি সংযত করুন মিস মোনা। নয়ত গিয়ে আপনার রিজাইন লেটার তৈরি করুন। ‘
মোনার ফর্সা চেহারায় কালো আঁধার ছেয়ে গেল মুহুর্তেই। সে ভাবতেই পারে নি সাফারাত বুঝে ফেলবে। থমথমে মুখে বললো,
‘ স্যরি স্যার। ‘
‘ লিভ। ‘
‘ ইয়েস স্যার। ‘
মলিন মুখে বেরিয়ে যায় মোনা। সেদিকে চেয়ে সাফারাত চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। মুখের সামনে মোবাইলটা ধরে চোখ দুটো স্থবির রাখল স্ক্রিনে। চৈত্রিকা দাঁড়িয়ে ভাবনায় মগ্ন। একপাশ হতে ওর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি দৃশ্যমান। ছবিটা প্রায় অনেকদিন আগের তোলা। সাফারাত ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। মুগ্ধ কন্ঠে উচ্চারণ করে,
‘ আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে চৈত্র। অনেক বড় সারপ্রাইজ,চমক,ধাক্কা। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___২৫
চৈত্রিকা অফিসে ঢুকেই সম্মুখীন হলো মোনার। মোনা অন্যান্য নতুন কর্মচারীদের দের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে। চৈত্রিকা চারপাশে চেয়ে দেখে যে যার কাজে নিমগ্ন। মোনা অন্যদের সাথে হেসে খেলে কথা বললেও তার সাথে বলছে না। বাধ্য হয়ে নিজেই এগিয়ে গেল। সালাম দিয়ে নম্র স্বরে প্রশ্ন করে চৈত্রিকা,
‘ কেমন আছেন ম্যাম?একচুয়ালি আমি কি কাজ করব বুঝতে পারছি না। যদি বলে দিতেন। ‘
মোনা বিরক্ত চোখে তাকায়। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,
‘ নিজের পজিশন জানো তো?’
‘ ইয়েস ম্যাম। ‘
‘ যাও স্যারের কফি দিয়ে আসো। আর আমার ডেস্কের উপর একটা ফাইল আছে সাইন করিয়ে আনবে।
মোনার সহকারী এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চৈত্রিকাকে। মোনার আন্ডারে তার সকল কাজ। ইন্টার পাস মেয়ের ক্ষেত্রে এই কাজটা একটু বেশিই উঁচুমানের। মোনার সাহস হচ্ছে না সাফারাতের সেই ওয়ার্নিং এর পর দ্বিতীয় বার তাকে ফেস করার। তবে তার এটিটিউডে চরম ফিদা হয়ে গিয়েছে মোনা। আপাতত চৈত্রিকাকে দিয়ে কাজ চালানো যাক। তাকে এড়িয়ে গেছে তার মানে চৈত্রিকাকেও লাই দিবে না।
চৈত্রিকা মৌন মুখে প্রস্থান করে। কানাঘুঁষায় শুনেছে আজ মিটিং আছে। এসেছে প্রায় বিশ মিনিট হবে কিন্তু সাফারাতের দেখা মিলে নি। সরাসরি ওর কক্ষেও যেতে পারছে না, কে কি বলে বসে চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দেয় বলা তো যায় না৷ কেউ তো জানে না চৈত্রিকা সাফারাতের বউ। সবাই উল্টো টায় ভেবে বসবে। চরিত্রহীনার তকমা লাগিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। ক্যান্টিনে কফি নেবার সময় একটা ছেলে পাশে এসে দাঁড়াল। নিজের জন্য কফি হাতে তুলে নিয়ে কন্ঠে অবাকতা নিয়ে ডেকে উঠল,
‘ চৈত্রিকা!’
নিমেষে চৈত্রিকা পাশ ফিরে তাকালো। নিস্তব্ধ, নির্বাক সে। হৃদস্পন্দন বেগতিক। ঠোঁট দুটো নড়ে উঠল ক্ষীণ।
‘ আপনি?’
মাথায় ঝাঁকড়া চুল। মুখে হাসি নিয়ে শ্যামলা বর্ণের একটা ছেলে চৈত্রিকার দিকে চেয়ে আছে নিষ্পলক। ছেলেটা কি চৈত্রিকার অস্ফুটস্বরে করা প্রশ্ন টা শুনতে পেয়েছে? হয়ত পায় নি। গলায় জোর বাড়িয়ে বললো,
‘ আপনি এখানে কি করছেন?’
‘ জব করছি। কয়েকদিন আগে এখানে জব হয়েছে আমার। এতো বছর কোথায় লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলে তুমি?দ্বিতীয় বর্ষে উঠে পড়া কেন ছেড়ে দিলে?ডু ইউ নো?আমি অনেক খুঁজেছি তোমাকে। মিহিতার কাছে অনেক রিকুয়েষ্ট করেছি তোমার এড্রেস টুকু দেওয়ার। মেয়েটা এতো ঘাড়ত্যাড়া দিলোই না আমাকে। বরঞ্চ অফিসেও আমার থেকে পালিয়ে বেড়াই। ‘
একটানা এতো প্রশ্নের ভিড়ে হারিয়ে যাবার জোগাড় চৈত্রিকার। শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। যার থেকে ভার্সিটিতে পালিয়ে বেড়িয়েছে সর্বদা, বছরখানেক ঘুরতেই মুখোমুখি সে। এই সেই সিনিয়র ভাই যার কথা মিহিতা কয়েকদিন আগও বলেছিল। চৈত্রিকার মনে আছে ছেলেটা ফার্স্ট ইয়ারের শুরু থেকেই পিছু ঘুরত তার। প্রেমের প্রস্তাব টা বার বার প্রত্যাখ্যান করেও শান্তি মেলে নি। ছেলেটার নাম তনয়। চৈত্রিকার নোটস তৈরি করে দিত বারংবার না করা সত্ত্বেও। ফুচকাওয়ালা কে টাকা দিতে দিত না৷ রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিত মাঝে মাঝে আগ বাড়িয়ে, জোর করে। ভার্সিটির গেইটে দাঁড়িয়ে থাকত চৈত্রিকার মুখদর্শন করার জন্য সকাল হতে। তার এতো চেষ্টা প্রতিবার পরাস্ত হয়েছে। মন গলে নি চৈত্রিকার। নরম হবেই বা কেমন করে?যার মনে একজনের বসবাস সবটা জুড়ে সেই মনে কি আর অন্যের নিমিত্তে জায়গা মিলে?
তুড়ি বাজানোর শব্দ কর্ণগোচর হতেই সম্বিৎ ফিরে পেল চৈত্রিকা। হকচকিয়ে গেল আচমকা এহেন কান্ডে। তনয় স্মিত হেসে বললো,
‘ তুমি আজও আগের মতো চুপচাপ। আজ নতুন জয়েন করেছ এখানে?’
‘হুম। এখন যেতে হবে আমার। ‘
চৈত্রিকা তাড়া দিয়ে বলে উঠল। কন্ঠে অতীব উত্তেজনা । অফিসে একটা ছেলের সাথে এভাবে খোলামেলা কথা বললে অন্য কেউ খারাপ না ভাবলেও, সাফারাতের চক্ষুগোচর হতে সময় লাগবে না।
‘ ঠিক আছে যাও। পরে কথা হবে কিন্তু। আমার জবাবগুলো পাই নি। ‘
ঝটপট হাতে কফির মগ তুলে নেয় চৈত্রিকা। তনয়ের কথার প্রতিউত্তর না করে দ্রুত পায়ে চলে এলো। এক হাতে কফি, অন্য হাতে ফাইল নিয়ে উপস্থিত হলো সাফারাতের কেবিনের সামনে।
বুঝে পায় না ও সব ভেজাল কেন তার ঘাড়েই এসে চাপে!এই বিতৃষ্ণার জীবনে আর কত যে তিক্ততার বাকি আছে। হাতের উল্টো পিঠে বার কয়েক দরজায় করাঘাত করে। তৎপরে অপর পাশ হতে পুরুষালী ভরাট, গম্ভীর স্বর শোনা গেল।
‘ কাম ইন মিসেস চৈত্র। ‘
ঠোঁট দুটো আলগা হয়ে এল চৈত্রিকার। মগের হাতলে আবদ্ধ হাতটা হালকা ঢিলে হয়ে গেল। মাটিতে পড়ার আগেই কোনোমতে পুনরায় শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। সাফারাত না দেখে কি করে জানল ও এসেছে। টলমলে পায়ে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল। চোখে বিঁধে এক সুদর্শন, তাগড়া পুরুষকে। যার নজর নিবদ্ধ একটা ফাইলে। চৈত্রিকার বুক টা ধক ধক শব্দ করছে। মনে ঝড়ো হাওয়া বইছে। উথাল পাতাল অভ্যন্তর। এতো সুন্দর কেন সাফারাত? চৈত্রিকাও তার মতোন সৌন্দর্যে ভরপুর কিন্তু তা যেন ফিকে পড়ে যায় এই ছেলের সামনে।
‘ আপনি ওইখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?কাছে আসুন। ‘
অকস্মাৎ বাক্যে চৈত্রিকা আবারো হকচকালো, থমকালো। তন্মধ্যে সাফারাত মাথা তুলে তুখোড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। মুখে গম্ভীরতার ছাপ। ধূসর রঙা চোখ দুটো নিঃসন্দেহে এই মুহুর্তে যেকোনো মানুষকে ভস্ম করার ক্ষমতা রাখে। এতো রাগ কেন?ধীরস্থ, মন্থর গতিতে হেঁটে এসে টেবিলে ফাইলটা রেখে কফির মগ টা এগিয়ে দেয় চৈত্রিকা। অনতিবিলম্বে সাফারাত মগটা হাতে নেয়। চুৃমুক দিতে গিয়ে মুখের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনে। চৈত্রিকার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে অত্যন্ত শান্ত স্বরে বললো,
‘ আপনি প্রথমে চুমুক দিন। ‘
রুদ্ধদার অবস্থা চৈত্রিকার। ভিতরটা হাস ফাঁস করছে। অফিসের বসের কফি এঁটো করবে ও?কন্ঠনালিতে কথা জড়িয়ে এলো। বললো,
‘ কিন্তু স্যার,,!’
‘ আ’ম নট ইউর বস। আ’ম ইউর হাসবেন্ড। অফিস হোক কিংবা রাস্তাঘাট আমি আপনার হাসবেন্ড। সম্পর্ক, অধিকার, পরিচয় নিশ্চয়ই বদলে যাবে না। হাসবেন্ড কে হাসবেন্ড হিসেবে দেখতে শিখুন। ‘
গম্ভীরতার অতলে বুঝি ডুবে গেল চৈত্রিকা। বিনা বাক্যে মগে নরম,কোমল ওষ্ঠযুগল ডুবিয়ে দিল। এক চুমুকের বদলে দুই,তিন চুমুক খেয়ে ফেলল। হতে পারে ভয়ের তাড়নায়। আরেক চুমুক দিতে যাবে তার আগেই সাফারাত হাত থেকে মগ টা টেনে নেয়। কফিতে চুমুক বসিয়ে বলে উঠল,
‘ প্রতিদিন আমাকে কফি দেওয়ার পূর্বে আপনি খাবেন অর্ধেক টা। আবার আজকের মতো তিনভাগের দুইভাগ খেয়ে আমাকে একভাগ দিতে যাবেন না। ‘
চৈত্রিকা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল। সাফারাত কেন তার এঁটো কফি খাচ্ছে? প্রতিদিনই বা কেন খাবে?এই মানুষটার মতিগতি বুঝার সাধ্য আজো কি চৈত্রিকার হবে?মিহি স্বরে বললো,
‘ ক্যান্টিনে কফি আছে। আমি নিয়ে আসি আরেক কাপ আপনার জন্য। ‘
‘ ক্যান্টিনের সব কফিতে কি আপনার অধরযুগলের স্বাদ আছে চৈত্র মাস?’
চৈত্রিকার সমস্ত দেহ জুড়ে শিহরণ খেলে গেল। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মৃদু কেঁপে উঠল বোধহয়। সাফারাতের কথার মানে চট করে বুঝে নিল ও। দাঁড়িয়ে রইল ঠাঁই। সাফারাত কাছাকাছি এলো। হাত টেনে চেয়ারে বসিয়ে তীক্ষ্ন কন্ঠে বলে উঠল,
‘ অযথা পা গুলোকে ব্যাথা দিচ্ছেন। ‘
একটুখানি ঝুঁকে চৈত্রিকার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ তনয়ের সাথে কি কথা বলছিলেন আপনি এতক্ষণ যাবত?আপনারা কি পূর্বপরিচিত?’
মুহুর্তেই চৈত্রিকার নেত্রযুগল বৃহৎ হয়ে এলো। কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সাফারাত কি করে জানল?শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমেও মৃদু মৃদু ঘামছে সে। চৈত্রিকা কেন ভয় পাচ্ছে?সে তো এতো ভীতু নয়। সাফারাতকে পুনরায় হারানোর ভয় কি তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে ক্রমে ক্রমে?ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকে। এখানে ভুল কেন বুঝবে? স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দেয়,
‘ভার্সিটির সিনিয়র ভাই হয়। ‘
‘ আপনার ধারে কাছে আমি ব্যতীত অন্য কেউ আসার সাহস যেন না পায় চৈত্র। ফলাফল খারাপ এবং খুবই জঘন্য হবে। ‘
সাফারাত কি থ্রেট দিল?চৈত্রিকা বুঝতে পারছে না। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই সাফারাত একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিল। আদেশের সুরে বললো,
‘ সন্ধ্যায় রেডি থাকবেন। এক জায়গায় যাবো আমরা। ‘
_________________
লাল টুকটকে একটা জর্জেট শাড়ি পরিধান করে রেখেছে চৈত্রিকা। শাড়িটা মিশে আছে তার চিকন শরীরে। উন্মুক্ত চুলগুলো কোমর ছাড়িয়েছে। গাড়ির সিটে পড়ে আছে এলোমেলো হয়ে। ফর্সা চেহারায় লাল লিপস্টিক চৈত্রিকার অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে। রেড চেরির ন্যায় লাগছে তাকে। এটা অবশ্যই মিমের জোরাজোরিতে দিয়েছে। সাজগোজ করার ইচ্ছে তো মাটিচাপা দিয়ে ফেলেছে সে। দূর থেকে হু হু করে বাতাস প্রবেশ করছে গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে। সন্ধ্যার রূপ চৈত্রিকার মন ছুঁতে পারছে না। সে তো ভাবনায় মগ্ন। একটাবারও সাফারাত ফিরে তাকালো না ওর দিকে। একবার চোখ পড়েছে কিন্তু তাতে মুগ্ধতা ছিল কি-না তা বুঝার আগেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। বিকেল অব্দি তো ঠিক ছিল।
গাড়ি এসে থামে একটা চিলেকোঠার সামনে। চৈত্রিকা চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে ঢাকা থেকে দূরে কোথাও এটা। গ্রামীণ পরিবেশ মনে হচ্ছে। নদীর ধারে ছোট ছোট চিলেকোঠার ঘর। খাবারের আয়োজনও আছে। মানুষের উপস্থিতি নেই তেমন একটা। ছোট্ট গেইট দিয়ে হাত ধরে সাফারাত ভিতরে নিয়ে এলো। মানুষের সংখ্যা ভিতরেও কম। আরেকটু ভিতরে যেতেই পিছন থেকে চোখে ফিতা বেঁধে দিল সাফারাত। চৈত্রিকা উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠল,
‘ কি করছেন?’
সাফারাত জবাব দিল না। চৈত্রিকাকে ধরে আরেকটু সামনে নিয়ে এলো। অতঃপর পিছনে দাঁড়িয়ে ফিতা খুলে দিয়ে বললো,
‘ চোখ খুলুন। ‘
আঁখিপল্লব ঝাঁকিয়ে চোখ মেলল চৈত্রিকা। সামনে না তাকিয়ে উল্টো ঘুরে সাফারাতের দিকে তাকালো। কেন যে মনটা কু ডাকছে তার। তীব্র ভয় হচ্ছে। সাফারাতের জ্যাকেট টা আঁকড়ে ধরল দুর্বল হাতে। কাতর দৃষ্টিতে তাকালো।
‘ কি হলো?সামনে তাকান চৈত্র। ‘
মাথা নাড়িয়ে না করল চৈত্রিকা। মলিন স্বরে বললো,
‘ আমার সারপ্রাইজ ভয় লাগে সাফারাত। ‘
‘ আমি থাকতে কিসের ভয়? আর কিছু কিছু সত্যের মুখোমুখি হতেই হয়। যেটা আপনার প্রাপ্য সেটা আপনি পাবেন। পরিবারের জন্য কঠোর হওয়া মেয়েটার চোখে ভয় মানায় না। ঘুরে তাকান। ‘
চৈত্রিকা ঘুরে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীর প্রবলভাবে কেঁপে উঠল ওর। পড়ে যেতে নিলে সাপোর্ট হিসেবে পায় সাফারাতের প্রশস্ত বুক,বলিষ্ঠ হাত দু’টো। নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না তার সামনে অতীতের পরিচিত একটা মানুষ দাঁড়িয়ে। ও তো ভুলেই গিয়েছিল এই মেয়েটাকে। মানুষটাকে দেখে ধাক্কা লাগে নি ওর। লেগেছে পুরোনো কিছু কথা মনে পড়ে। মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে,
‘ সিনথিয়া?’
হাসিমুখে দাঁড়ানো মেয়েটা এগিয়ে এলো। চৈত্রিকার হাত টা আলতো করে ধরে বলে উঠল,
‘ অনেক বছর। অনেক বছর পর আমাদের দেখা হলো চৈত্র। অবশ্য প্ল্যান করেই হলো। সারপ্রাইজ হয়েছিস নিশ্চয়ই? ‘
সারপ্রাইজ? চৈত্রিকা রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে। সিনথিয়া ও সাফারাতের বিষয়টা কি করে ভুলে গেল ও এতবছরে? কেন একটা বারও মাথায় রইল না এতো বড় বিষয়টা? কলেজ লাইফে নিজেই তো উঠে পড়ে লেগেছিল সাফারাতকে রাজি করাতে সিনথিয়ার জন্য। আচ্ছা সেদিন বদ্ধ রুমে সাফারাত কি রাজি হয়েছিল?আবেগি বয়সে কত বড় ভুল করে বসল চৈত্রিকা!যদি সাফারাতের জন্য মনে জন্ম নেওয়া অনুভূতিগুলো আগে উপলব্ধি করতে পারত তবে কখনও সিনথিয়াকে ও সাফারাতকে কাছাকাছি আনত না।কখনও না। ভালোবাসার মানে তো আগে বুঝে নি ও। বুঝেছে সাফারাতকে হারিয়ে। সেদিন বদ্ধ রুমে কি হয়েছিল?তারপর থেকেই তো সিনথিয়া ও সাফারাত দু’জনের দেখা পায় নি আর চৈত্রিকা। মাথাটা ঘুরছে ওর। এই বুঝি বেহুঁশ হয়ে যাবে। জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,
‘ এতো,, এতো বছর দু’জনের যোগাযোগ ছিল?সেদিন,, সেদিন কি হয়েছিল?’
সাফারাত তাচ্ছিল্য হাসল। সিনথিয়ার হাসি উবে গিয়ে চেহারায় কাঠিন্য ভাব প্রতীয়মান হয়।
‘ সেদিন কি হয়েছিল? সেদিন আপনার জন্য সিলেট শহর ছাড়তে হয়েছে আমার চৈত্র। কলেজ ছাড়তে হয়েছে। আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতাম। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই তো ওইদিন আপনি আমার অগোচরে ছুরি গেঁথেছিলেন আমার হৃদয়ে। নষ্ট করেছেন আমাদের বন্ধুত্ব। আমার কষ্টের কারণ হয়েছিলেন। আমার জীবনের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট মানুষ আমার মা’কে অপমানিত হতে হয়েছে আপনার কারণে। ‘
ক্রুদ্ধ কন্ঠে কথাগুলো বলে চৈত্রিকাকে নিজের থেকে সরিয়ে দেয় সাফারাত। বুকে হাজারো ছুরি গাঁথলে হয়ত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এ কেমন যন্ত্রণা অনুভব করছে চৈত্রিকা, যার কোনো ঘা নেই। শুধু দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে ঝাপসা হয়ে ভাসছে সবকিছু। হাতড়ে সাফারাতকে পুনর্বার ধরতে চাইল। খুব একটা বেগ পোহাতে হয় নি। সাফারাত নিজেই টেনে কাছে নিয়ে এলো উম্মাদের ন্যায়। রোষপূর্ণ স্বরে বললো,
‘ আপনার সাথে তীব্র অভিমান আমাকে জার্মান পাড়ি জমাতে বাধ্য করেছে। ভেবেছিলাম প্রতিশোধ নিব। আপনার দুঃখের জীবনটাকে আরো দুর্বিষহ করে তুলব আমি। তখন মাথায় এলো সরাসরি আক্রমণের চেয়ে ধীরে ধীরে ভালোবাসায় মারা ভালো। কাউকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য প্রেম নামক অস্ত্র হতে বড় অস্ত্র আর হয় না চৈত্র। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধীরে ধীরে রহস্য উন্মোচন হবে। আজকের পর্বের শেষের অংশটা কিছুটস ঘোলাটে যা জড়িত সাফারাত, সিনথিয়া,চৈত্রিকার অতীতের সাথে। কিশোর জীবনের সাথে।)