#সুখের_নেশায়,৩৮,৩৯
#লেখিকাঃ আসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩৮
সুফিয়া বেগম পিছন ফিরে চৈত্রিকাকে দেখলেন। কোনো প্রকার রিয়েক্ট করলেন না তিনি। উনার চোখে মুখে বিস্ময় দেখতে পেল না চৈত্রিকা। মুখভঙ্গি একদম সরল,স্বাভাবিক। চেহারায় ভয়ের কিংবা হকচকানোর লেশ মাত্র নেই। চৈত্রিকা বুঝতে পারছে না উনার এতো স্বাভাবিক থাকার কারণ। কেননা উনি কিছুক্ষণ পূর্বেই তাকে নিয়ে কার সাথে কি যেন বলা বলি করছিলেন। সাফারাতকে কন্ট্রোল করার কথা আওড়াচ্ছিলেন। কার সাথে বলছিলেন এসব?খটকা লাগছে চৈত্রিকার। দ্বিধান্বিত চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,
‘ দাদি আসব?’
সুফিয়া বেগম থমথমে মুখে অনুমতি দিলেন,
‘ আসো। ‘
ধীর স্থির গতিতে রুমে ঢুকল চৈত্রিকা। সুফিয়া বেগম বিছানায় বসতেই সে মলিন মুখে বলে উঠল,
‘ দাদি আপনি কি রাগ করে আছেন আমার সাথে?আমি সকালের জন্য দুঃখিত দাদি। ফুপুর সাথে আমি তর্ক করি নি। উনিই ইচ্ছে করে আমার সাথে লেগেছেন। তবুও আমি নিজেকে দোষী মানি। ‘
সুফিয়া বেগম হাঁটু গেড়ে সম্মুখে বসে থাকা মেয়েটার দিকে
তাকালেন এক পলক। রুষ্ট স্বরে বললেন,
‘ তোমার কারণেই আমার মেয়েকে এভাবে অপমানিত হয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। আমি তো মা। নিজের মেয়ের অপমান কি করে সহ্য করি বলো?’
চৈত্রিকার চোখে বিষন্নতা ভর করল। আনতস্বরে বললো,
‘ আমি বুঝতে পারি নি সাফারাত এমন করবেন। আমায় ক্ষমা করে দিন। আমি ফুপিকে ফিরিয়ে আনব। ‘
‘ তার প্রয়োজন নেই। আমি মা হয়েছি বলে অন্যায় সহ্য করব না। ‘
চৈত্রিকা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো। সুফিয়া বেগমের কথার আগামাথা বুঝতে অক্ষম ও। মাথা নেড়ে বলে উঠল,
‘ বুঝি নি দাদি। ‘
তৎক্ষনাৎ ঠোঁট এলিয়ে হাসলেন সুফিয়া বেগম। চৈত্রিকার মাথায় ভালোবেসে হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ মৌসুমি তোমার সাথে অন্যায় করেছে। প্রথমে আমার কষ্ট হলেও তোমার দিক টা ভেবে দেখলাম। তোমাকে একটা কথা বলি চৈত্রিকা। মনোযোগ দিয়ে শুনবে। ‘
চৈত্রিকা কন্ঠে নম্রতা এঁটে বললো,
‘ বলুন দাদি। ‘
সুফিয়া বেগম এবার শক্ত হলেন। বললেন,
‘ এই পরিবারে তোমার চলাচল ও সাফারাতের জীবনে স্বাভাবিক ভাবে থাকা অসম্ভব। আমি নিজেই বরাবরই ব্যর্থ সাফারাতকে কন্ট্রোল করতে। হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের মন থেকে হিংসা,বিদ্বেষ সরিয়ে ভালোবাসা জাগাতে। স্ট্রং থেকো। অনেক কিছু সয়ে যেতে হবে। সামলে নাও নিজের জীবন। ‘
চৈত্রিকা উঠে দাঁড়াল। সুফিয়া বেগমের কথা এখনও ঠাহর করতে পারল না সে। কোনগুলো সত্য?দরজার অভিমুখে দাঁড়িয়ে যেগুলো শুনল? নাকি এখন যেই পরামর্শ গুলো দিল?সুফিয়া বেগম ঠিক কেমন মনের মানুষ? ভালো নাকি খারাপ?কোন রূপ টা সত্য?চৈত্রিকার মাথায় এই বাড়িতে ঘটে যাওয়া শুরু থেকে সবকিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর স্বস্তি মিলবে না যতক্ষণ না সবকিছুর জট খুলে। তার জন্য সবার আগে সাফারাত এর মায়ের মৃ’ত্যু,বাবাকে ঘৃণা করার কারণ, পরিবারের সবার সাথে দূরত্বের কারণ জানতে হবে ওকে। কার কাছ থেকে জানবে?চট করে মনে পড়ে গেল মিনার কথা। হ্যাঁ! মিনা তো একদিন আবছা আবছা বলেছিল সাফারাতের বাবা মা’র ব্যাপারে। পা বাড়িয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে সুফিয়া বেগম ডেকে উঠলেন। থমকে গেল চৈত্রিকা ডাক কর্নপাত হওয়া মাত্র। পা দু’টো আটকা পড়ল মেঝেতে। সুফিয়া বেগম দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। এগিয়ে এসে ওর হাত দু’টো কাঁপা কাঁপা হাতে মুঠোয় পুড়ে বললেন,
‘ কারো কাছে ভালো,কারো কাছে খারাপ সাজতে হয় আমার এই পরিবার টা’কে এক করার জন্য। কিন্তু আজও পারলাম না। ম’রে যাওয়ার আগেও দেখা হবে না আমার সুন্দর একটা পরিবার। নিজের পেটে ধরা ছেলেটার সাথে দু’দন্ড কথা বলার সুযোগ নেই। সাফারাত দেখতে পারে না ওকে। ঘৃণা করে সে নিজের জন্মদাতা কে। আমার কথা শুনে না। ছেলেটার সুখ,শান্তি তোমার মাঝে চৈত্রিকা। আমি জানি ও ম’রে গেলেও তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না। তুমিই পারবে সব অশান্তি দূর করে বাপ ছেলেকে এক করতে। আমার পরিবার টাকে এক করতে। ‘
চৈত্রিকা ঘাবড়ে গেল। থমকালো ও। বুঝতে পারল আত্মীয়তা রক্ষার্থে সুফিয়া বেগম ভালো /খারাপ দু’টো রূপ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনটা আসল?বৃদ্ধার চোখে ভর্তি টলমল করা জল?
এটাই আসল,সত্যি। কন্ঠে সুন্দর পরিবার দেখার কাতরতা,চক্ষে জল মিথ্যে হতে পারে না। চৈত্রিকা নিজেও সুন্দর একটা পরিবার দেখতে চায়। ও নিজে কখনও বাবার আদর পায় নি। তাই চায় সাফারাত বঞ্চিত না হোক। তার বাবা তো এখনও জীবিত আছে। আর ভালোবাসার মানুষটার সুখের জন্য একটুখানি লড়াই করতে কষ্ট কিসের!মিহি স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘ বাবা দেশে আসেন দাদি?’
‘ আসবে কয়েকদিন পর। ওর এই বাড়িতে ঢুকার পারমিশন নেই তাই আসলেও হোটেলে থাকে নয়ত আমার বাপের বাড়িতে। ‘
চৈত্রিকার কন্ঠে অবাকতা,বিস্ময়।
‘ আপনার বাপের বাড়িতে? ‘
সুফিয়া প্রতিউত্তর করলেন। কন্ঠস্বর নিষ্প্রভ, মলিন।
‘ ওটা ওর শশুর বাড়িও। সাফারাতের মায়ের মৃত্যুর পর আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করে সে। ‘
চৈত্রিকা ঠোঁট গোল করে বললো,
‘ ওহ্। ‘
সুফিয়া বেগমের রুম থেকে বেরিয়ে নিজেদের রুমে এলো চৈত্রিকা। চারদিকে চোখ বুলিয়ে কোথাও সাফারাতের দেখা মিলল না। ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল। মস্তিষ্ক টা অচল ঠেকছে ওর নিকট। সাফারাতের বয়স ঠিক কত বছর ছিল ওর মায়ের মৃত্যুর সময়?ওকে কোনো প্রশ্নই করতে পারবে না চৈত্রিকা। এতে সাফারাত কষ্ট পাবে। রেগে যাবে। সিলেটে থাকতে বলে দিয়েছিল তার বাবা মায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করা বারণ। ভয়ংকর রক্তিম ছিল সেদিন, সেই মুহুর্তে চক্ষুদ্বয়। চৈত্রিকা মানুষটা কে কষ্ট দিতে চায় না বরং সুখ বিলীন করে দিতে চায়।
ওয়াশরুমের দরজা মেলার শব্দে ধ্যান, ভাবনা ভঙ্গ হয়ে যায় চৈত্রিকার। বাঁক ফিরে তাকালো ও। সাফারাত তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেল। ফিরেও তাকালো না একটা বার। এই লোকের এটিটিউড দেখলে চৈত্রিকার ম’রি ম’রি অবস্থা। নিজের বউকে দেখতেও হয়ত হিসেব করে দেখে গম্ভীর স্বভাবের এই মানুষ। কাবার্ড থেকে একটা শার্ট বের করে বোতাম ছাড়িয়ে পড়ে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বোতাম লাগাতে গিয়েও লাগালো না। গুটিয়ে ফেলল দু’হাত। মাথা কিঞ্চিৎ এলিয়ে দিতেই চৈত্রিকা ভড়কে গেল। কারণ আয়নার মাধ্যমে স্পষ্ট অবলোকন করে যাচ্ছিল ও সাফারাতকে নিষ্পলক,স্থির। থতমত খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলতেই শোনা গেল সাফারাতের ভরাট,গম্ভীর কন্ঠস্বর।
‘ এদিকে আসুন। ‘
চৈত্রিকা হকচকানো স্বরে প্রশ্ন করে,
‘ আমি?’
‘ রুমে অন্য কেউ আছে?আমার বউ একটাই। উঠে আসুন। ‘
চৈত্রিকা উঠে কাছে এগিয়ে গেল। পিছন থেকে হাত টেনে সামনে এনে দাঁড় করাল সাফারাত তাকে। কোমরে শক্তপোক্ত হাত রেখে চেপে নিয়ে আসল বুকের কাছাকাছি, অতি নিকটস্থে। আচানক কান্ডে চৈত্রিকা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। শরীর খানাতে ছুঁয়ে যাচ্ছে মৃদুমন্দ সমীরণ। সাফারাত ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা ললাট ছুঁয়ে দিল। আদেশের সুরে বললো,
‘ শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে দিন। আজ থেকে এটা আপনার দায়িত্ব। শার্টের বোতাম খোলার অধিকার আপনার হলে লাগানোর অধিকারও আপনার মিসেস চৈত্র মাস। ‘
চৈত্রিকা বোতাম লাগাতে সবেমাত্র হাত রেখেছিল শার্টের উপর। সাফারাতের শেষোক্ত উচ্চারিত বাক্য শুনে দু’হাত কেঁপে উঠল। সহসা ধরাস করে উঠল বুক,হৃদপিণ্ড। সরে যেতে নিলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সাফারাত। চোখ রাঙিয়ে বলে উঠল,
‘ ডু ইট ফাস্ট। একটা কিছু বললেই লজ্জা আপনার। কই আমার লজ্জা হয় না কেন?’
চৈত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে গলা ফাটিয়ে বলে ইচ্ছে করল – ‘ আপনি তো বেহায়া। বেহায়াদের আবার কিসের লজ্জা?’
কিন্তু হায় বেচারি মুখ দিয়ে এই কথা বের করতে পারল না। এই বাক্য কন্ঠনালি গলিয়ে বেরিয়ে আসা মানে আজ আর রেহাই নেই। চুপচাপ বোতাম গুলো লাগিয়েও চৈত্রিকা সরে এলো না সাফারাতের নিকট হতে। সে বাঁধা পড়েছে পুরুষালি শরীরের ঘ্রাণে। সেই চেনা পরিচিত ঘ্রাণ। নিশ্চয়ই আজও সেই পারফিউম টা লাগিয়েছে সাফারাত। নেশা লেগে আসছে চৈত্রিকার। ইচ্ছে করছে সাফারাতের বুকে মুখ গুঁজে দিতে। মনটা বাঁধ মানছে না। সীমা অতিক্রম করতে চাইছে। অধরযুগল স্পর্শ করতে চাইছে প্রশস্ত বুক খানা। অতিশয়,অত্যাধিক আঁকুপাঁকু করছে হৃদয়স্থল,মন। সাফারাত একদৃষ্টে, তুখোড় দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলে,
‘ নড়বেন না?আজ স্থির থাকবেন?পা ব্যাথা করবে তো। নাকি উম্মাদ করে তুলতে চাইছেন আমাকে এই মুহুর্তে। মাত্র ফ্রেশ হয়ে এলাম চৈত্র। শশুড় বাড়ি যেতে হবে। শালী সাহেবা ওয়েট করছেন। ইট ইজ নট রাইট টাইম। ‘
চৈত্রিকা দ্রুত গতিতে সরে গেল। লালের আস্তরণ, প্রলেপ পড়েছে দুই গালে। ও তো শুধু ঘ্রাণ নিচ্ছিল আর সাফারাত কি থেকে কি ভাবল?কিঞ্চিৎ দূরত্ব হলেও নাসারন্ধ্রে হুড়হুড় করে প্রবেশ করছে নেশা ধরানো সেই ঘ্রাণ। চৈত্রিকার ইচ্ছে জাগল একবার হলেও সেই পারফিউম টা ইউস করার। কিছু একটা মনে পড়তেই শঙ্কাভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ বাসায় কেন?মা,মিমু ঠিক আছে? ওদের কিছু হয় নি তো?’
ইতিমধ্যে বড় বড় শ্বাস ফেলা শুরু করেছে মেয়েটা অজানা ভয়ে। সাফারাতের হ্যাঁচকা টানে বুকে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল ও। পেশিবহুল হাত জোড়া দিয়ে চৈত্রিকাকে নিজের বুকে শক্ত, কঠিনভাবে জড়িয়ে ধরল সাফারাত। হাসল ম্লান। লহু স্বরে বলে উঠল,
‘ রিলেক্স। আমি থাকতে কারো কিছু হবে না। আমার চৈত্র মাসের সকল অশান্তি, দুঃখ, সুখ, আপনজন সবকিছুই আমার। একান্তই আমার। আজ থেকে আপনি শুধু মিষ্টি করে মৃদু মৃদু হাসবেন চৈত্র। ঠিক আট বছর আগের সেই কলেজ জীবনের কিশোরী মেয়েটার মতো করে। ‘
চৈত্রিকা নিরবে,নিস্তব্ধ হয়ে মুখ গুঁজে রাখল সাফারাতের বুকে। হৃদস্পন্দন বিনা বাঁধায় শ্রবণগ্রন্থিতে পৌঁছে যাচ্ছে। ভালোবাসার তীর হয়ে বর্শার ফলার ন্যায় বিঁধছে হৃদয়ের গহীনে।
______________
বাসায় এসে চৈত্রিকা স্তব্ধ হয়ে গেল সবকিছু শোনার পর। বোন যে এভাবে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল চৈত্রিকা তা মোটেও আন্দাজ করতে পারে নি। দিহানের মা, ফাহমিদা, সাফারাত, দিহান বসে আছে সোফায়। টুকটাক কথা বার্তা বলছেন সবাই। খাবারের টেবিলের উপর উঁচু করে মিষ্টির প্যাকেট সাজানো। সাথে রসমালাই’ও। মিম অস্থির হয়ে পুরো ঘরময় পায়চারি করছে। পড়নে ওর কালো একটা রাউন্ড ড্রেস। চৈত্রিকা কোমরে এক হাত রেখে বললো,
‘ বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেছে। এতো অস্থির হবার কারণ? ‘
‘ উফ!আপু নার্ভাস হবো না?জীবনে প্রথমবার বিয়ে বলে কথা। ‘
মিমের কথা শুনে চৈত্রিকা বিস্তর হাসল। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ে মিম। বিয়ে একবারই হয়। আর সে কি-না অস্থির হয়ে কি বলে ফেলল। চৈত্রিকার মুখ দু’হাতে চেপে ধরে বলে,
‘ আপু হাসবে না একদম। ছোট বোনের সাথে জু/লুম করলে খারাপ হবে কিন্তু। বাই দ্যা ওয়ে আন্টি কথা বলেছে তোমার সাথে?’
‘ না। আমায় দেখে উনি হয়ত অনুশোচনায় ভুগবেন। ‘
‘ আমি কিন্তু উনার কাছে ভালো হতে পারব না আপু যতক্ষণ না উনি আমার বোনের কাছে সেদিনের জন্য মাফ চাইবেন। উনি কষ্ট দিয়েছেন তোমাকে। কথার আ’ঘা’ত যে হৃদয়ে ঠিক কতটুকু রক্তক্ষরণ করে আমি জানি আপু। ‘
‘ মিম বাদ দে। দিহান অনেকবার এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তাছাড়া উনি তোর হবু শাশুড়ি। এই ব্যাপারে মনে ক্ষোভ রাখিস না প্লিজ। মা’র কাছে বলেছেন আন্টি অনুতপ্ত নিজের সেদিনকার ব্যবহারে। প্লিজ তুই,, ‘
চৈত্রিকার গলায় কথা আঁটকে গেল মোবাইলের মেসেজ টিউন কর্ণে আসতেই। সাফারাত মেসেজ পাঠিয়েছে। এখান থেকে এখানে মেসেজ পাঠানোর ব্যাপারটা অদ্ভুত ও চিন্তিত ঠেকল চৈত্রিকার নিকট। ‘ ড্রইং রুমে আসুন চৈত্র। তাড়াতাড়ি আসবেন। ‘
মেসেজ টা পড়েই ইতস্ততভাবে ছুটে এল চৈত্রিকা। সাফারাত মোবাইল থেকে মুখ উঠিয়ে চৈত্রিকার দিকে তাকালো। সাথে তাকালো বাকি সকলে। দিহানের মা’কে সালাম দেয় চৈত্রিকা। সাফারাত সাথে সাথে দুর্বোধ্য হেসে দিহানের মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
‘ আন্টি মিট মাই ছাব্বিশ বছর বয়সী বউ চৈত্রিকা। ‘
চৈত্রিকা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চোখ বড় বড় করে তাকালো সাফারাতের দিকে। দিহানের মায়ের মুখ কালো আঁধারে ছেয়ে গেল নিমেষে। তবুও আলতো করে হাসলেন তিনি। ফাহমিদা হা করে তাকিয়ে রইলেন কেবল। সাফারাত এক বাক্যে সেদিনের কথাগুলোর চৈত্রিকাকে অপমানের জবাব দিয়ে দিল যেন। দিহান নত মস্তকে বিড়বিড় করে,
‘ শা’লা আমার মা’কেও ছাড় দিলি না। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩৯
আকাশে ঘনঘটা অন্ধকার। তারাদের উপস্থিতি নেই। মাঝে মাঝে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ডেকে চলেছে অন্তরিক্ষ। মেঘেরা গলে বৃষ্টিরূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ার তোরজোর চালাচ্ছে। চৈত্রিকা শাড়ি সামলে দ্রুত বেরিয়ে এলো। মায়ের বুকে পড়ে বধূবেশে সজ্জিত লাল টুকটুকে বেনারসি পড়া মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে ওর চক্ষু কোল ভিজে উঠল। শূণ্যতায় খা খা করে উঠে মন। কত দ্রুত হয়ে গেল সবকিছু। পিচ্চি বোন টা আজ অন্য কারো বউ হয়ে বিদায় নিচ্ছে। খুশিতে অশ্রু ভিড় জমিয়েছে চৈত্রিকার নেত্রযুগলে। সবকিছু এত সুন্দর হচ্ছে কেন?বুঝ হওয়ার পর থেকে একটু একটু করে ভিতরে ভিতরে প্রতিনিয়ত দুঃখ নিয়ে বাড়ন্ত মেয়েটার আজ মনে হচ্ছে জীবনটা সুন্দর। সুন্দর!জীবনে এক ফালি সুখ নিয়ে আগমন করা ব্যক্তি টা। সামান্য দূরে দৃষ্টি স্থির করল চৈত্রিকা। সাফারাত পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। নিমিষেই তার অপলক চাহনিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ধূসর রঙা দু’টো চোখ। ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকালো মানুষ টা। চৈত্রিকা হতভম্ব হয়ে পড়ল। লজ্জায় অল্প সল্প আড়ষ্ট হয়ে চোখ দুটো সরিয়ে ফেলল তৎক্ষনাৎ। তড়িৎ বেগে হেঁটে এলো গাড়িগুলোর কাছে। ফাহমিদার বুক থেকে মাথা তুলে মিম ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালো পিছনে দাঁড়ানো বোনের দিকে। মায়ের কাছ থেকে সরে হামলে পড়ল সে বোনের বুকে। শাড়ি আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে উঠল। কেঁপে উঠল শরীর খানা। চৈত্রিকা মিম কে জড়িয়ে ধরল। মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে মৃদু হাসল। বললো,
‘ কেঁদে মুখের অবস্থা খারাপ করে ফেলছিস মিমু। দিহান কিন্তু অনেক মজা করবে পরে তোকে নিয়ে। কান্না থামা। কাল যাব তো তোকে দেখতে। আর মা তোর কাছেই থাকবে এখন থেকে। ‘
মিম তবুও ছাড়ছে না চৈত্রিকাকে। কেউ বুঝিয়েও ওকে গাড়িতে তুলতে পারছে না। দিহানের ইচ্ছে করছে নিজের কপালে ঠুকতে দেয়ালে। এই মেয়ে যে এত ছিঁচকাদুনে সে ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। পাশে দাঁড়ানো সাফারাতের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। মিনমিন করে বললো,
‘ ভাই পুরো রাত এখানেই পেরিয়ে যাবে। একটা কিছু কর। বউ কিভাবে নিয়ে যাব?বেচারির কান্নাই আমার সহ্য হচ্ছে না। আমারও কান্না পাচ্ছে। একটা মাত্র বউ আমার। কেঁদে কে’টে দুর্বল হয়ে পড়ছে। যদি বেঁহুশ হয়ে যায়?’
সাফারাত মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করতে গিয়েও করল না। বিরক্ত হয়ে একটা চাপড় মাড়ল দিহানের মাথায়। মাথা ঝিমঝিম করে উঠে দিহানের। সাফারাত রাগী গলায় বলে উঠল,
‘ হারা’মি লজ্জা শরম কর। আমার শালী সাহেবা তোর বউ। উল্টা পাল্টা বললেই মা’ইর খাবি। যা বউ কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসা। নয়ত এই রাত পার হয়ে যাবে বউ বিহীন। ‘
চৈত্রিকা মিম কে বুক থেকে সরিয়ে দিল। দিহান ইতস্তত হয়ে একবার তাকালো সাফারাতের দিক। ফলস্বরূপ চোখ রাঙানো দেখে ঝটপট কোলে তুলে নিল মিম কে। গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসে পড়ল। লজ্জায়, শরমে মাথা কা’টা যাচ্ছে ওর। সাহস তো করল কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে। মিম এক নাগাড়ে,অবিরত কেঁদেই যাচ্ছে। চলা শুরু হতেই আরো ডুকরে কেঁদে উঠল মেয়েটা। সহ্য করতে না পেরে দিহান টেনে বুকে নিয়ে এলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ব্যগ্র, উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল,
‘ এই মিম-ডিম কাঁদবে না একদম। কষ্ট লাগে তো ভাই। কেঁদো না। কাল অথবা পরশু মা’কে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব। কেঁদো না প্লিজ। ‘
বুক থেকে মুখ তুলে চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মিম। আক্রোশে ফেটে পড়ে দিহানের দিকে চেয়ে।
‘ আমি আপনার ভাই লাগি?’
থতমত খেয়ে গেল দিহান। মিমের কপালে অকস্মাৎ চুমু খেয়ে মৃদু হেসে প্রতুত্তর করল,
‘ বউ লাগো। দিহানের একটা মাত্র, একমাত্র বউ। ‘
জবাবে হাসি পেল মিমের। হাসল ও স্মিত। বুকে মাথা এলিয়ে রেখে বিড়বিড় করল,
‘ সুখের মুহুর্ত গুলো দীর্ঘ হোক আমাদের সবার জীবনে। কষ্ট আমি ভীষণ ভয় পাই। আপুর মতো শক্ত হয়ে সামলে নেবার সামর্থ্য আমার নেই। ‘
”
”
ফাহমিদা জ্ঞান হারিয়েছেন মিমের বিদায় লগ্নে। এক সপ্তাহের মাঝে প্রাণপ্রিয় দুটো মেয়ের বিদায়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি। চৈত্রিকা মলিন মুখে পানি ঢালল মায়ের মাথায়। তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে গালে হাত ছুঁয়ে ডাকতে লাগল,
‘ আম্মু,,এই আম্মু। চোখ খুলো। ভালো লাগছে না। খারাপ লাগছে আম্মু। আজ আমাদের জীবনে সুখের দিন। আমাদের মিমু কে ভালো একটা মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। বাবা থাকলে হয়ত খুশিতে কেঁদে দিত। আমিও অনেক সুখী। তুমি তো আমার সুখের সংসার দেখতে চেয়েছিলে। আমি অনেক বেশিই সুখী। তোমার দোয়ায় আল্লাহ আমাকে এমন একজন জীবনসঙ্গী দিয়েছেন যার সান্নিধ্যে কোনো দুঃখ আমায় স্পর্শ করতে পারবে না। ‘
ফাহমিদার জ্ঞান ফিরতেই চৈত্রিকার গালে,কপালে এলোপাতাড়ি চুমু খেলেন তিনি। অতঃপর বসে রইলেন শান্ত হয়ে,নিরবে। মা’য়ের কাছে কিছুক্ষণ বসে দরজা ভিড়িয়ে চৈত্রিকা বেরিয়ে এলো। ড্রইং রুমে বসে ছিল সাফারাত। চৈত্রিকা কে বেরিয়ে আসতে দেখেই রুমে গেল বড় বড় পা ফেলে। পিছু পিছু ঢুকল চৈত্রিকা। বাড়িতে মেহমান নেই। আত্মীয় স্বজন না থাকায় বিল্ডিংয়ের সবাই উপস্থিত ছিল বিয়েতে। খুব বেশি আন্তরিক ছিল সকলে। মনে হচ্ছিল পুরো একটা পরিবার। বাড়িওয়ালা সাফারাত কে দেখে চৈত্রিকার মাথায় হাত রেখে বললেন তুমি খুব ভাগ্যবতী মা। তোমার হাসবেন্ড অনেক ভালো। বাড়িওয়ালার মুখে এমন কথা শুনে কিয়ৎক্ষণ ঘোরে ডুবে ছিল চৈত্রিকা। সাফারাতের কোনোদিন উনার সাথে সাক্ষাৎ হয় নি। বিয়েতে দেখলেও কথা হয় নি। তাহলে উনি এত প্রশংসা কেন করলেন?মিছে মিছে তো করেন নি। সাফারাতের অগোচরে চৈত্রিকা বাড়িওয়ালাকে চেপে ধরে। অনুরোধ করে বলার জন্য দু’মাসের ভাড়া তিনি কেন নিলেন না। কারণ ওর মনে খটকা লাগছিল। বাড়িওয়ালা যখন উত্তর দিল তখন সবটা ক্লিয়ার হয়ে যায়। ভাড়া না নেওয়ার কারণসহ। সাফারাত পিছে পিছে ঢাল হয়ে সব সামলেছে। এমনকি বাসা ভাড়া পর্যন্ত দিয়েছে। এই মানুষটা কে ধন্যবাদ জানানোর ভাষার অভাব চৈত্রিকার কাছে। দেওয়ার মতো কিছু নেই শুধুমাত্র ভালোবাসা ছাড়া। চৈত্রিকা মনে মনে পণ করে নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজার করে দিবে সে। সাফারাত এর মতো করে ভালোবাসতে পারবে না তবে তাকে কখনও দুঃখ পেতে দিবে না। সুন্দর একটা পরিবার উপহার দিবে ও সাফারাতকে।
বাহিরে ঝড় বইছে। বাতাসে গাছের পাতা লড়ছে। মনে হচ্ছে গাছগুলো ভেঙে পড়বে বাতাসের দাপটে। চৈত্রিকা দৌড়ে জানালা বন্ধ করতে গেল। লাগাতে গিয়েও থেমে গেল। বৃষ্টির পানির ছটায় ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেছে ফর্সা মুখশ্রী। শরীর টা কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রাণপুরুষের তপ্ত নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই শীতল স্রোত নেমে যায় শিরদাঁড়া বেয়ে। বুকের উঠানামা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ল। সাফারাত হ্যাঁচকা টানে সামনে দাঁড় করালো চৈত্রিকা কে। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ চেয়ে মুখ গুঁজল গলার এক পাশে। ঠকঠক করে কম্পায়মান চৈত্রিকার এক হাত মুঠোয় পুরে দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে নিল সাফারাত। চৈত্রিকার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। নিস্তব্ধ রুমে শীতল বাতাসের আনাগোনা। প্রিয় মানুষটার দু চক্ষে ভয়ংকর মাদকতা। প্রতিটি উষ্ণ ছোঁয়া গাঢ়,প্রখর,গভীর।
”
”
আজ বৃষ্টি বুঝি সকল দুঃখ ধুয়ে নিচ্ছে। নতুন করে প্রকৃতিতে আগমন ঘটাবে সুখের। মিমের নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করছে ফুলের সুবাস। সুবাস টুকু মোহনীয়। তার চেয়েও মোহনীয় দিহানের নিষ্পলক দৃষ্টি। প্রায় মিনিট দশেক হবে এক নাগাড়ে চেয়ে আছে সে মিমের দিকে। মিম আজ রাগল না। লজ্জাও লাগছে। বরঞ্চ হাসি পাচ্ছে ওর দিহানের চাহনিতে। দিহান হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিল। পাঁজা কোলা করে বারান্দায় নিয়ে এল। উন্মুক্ত বারান্দা। ছাদ নেই। বৃষ্টিতে ভিজে দু’জনের জুবুথুবু অবস্থা। তবুও তাতে হেলদোল নেই কারোই। দু’জন ডুবে আছে দু’জনের মাঝে। মিমের সামনের চুল গুলো থেকে কপাল,নাক, ঠোঁট ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। দিহান চেয়ে থাকতে থাকতে শুকনো ঢোক গিলে। নিষিদ্ধ চাওয়াগুলো সজাগ হয়ে গেল। নিষিদ্ধ কেন হবে?সম্মুখে, বক্ষস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত মেয়েটা তার অর্ধাঙ্গিনী, বউ। ওষ্ঠাধর এগিয়ে নিতে মিম চোখ বুঁজে ফেলে। মুখ সরিয়ে নেয়। দিহান চমকে যায়। মাথা তুলতে প্রস্তুত হওয়া মাত্র মিম পাঞ্জাবি খামচে ধরে। এতেই যেন প্রকাশ পেয়ে গেল মেয়েটার সম্মতি। অনতিবিলম্বে আঁকড়ে ধরল দিহান তুলতুলে দু’টো অধর। শুষে নেয় জল। বৃষ্টির মাঝে রচনা করে নতুন এক প্রেমময় মুহুর্ত,ভালোবাসায় সিক্ত অনুভূতি।
____________________
সুখের মুহুর্ত গুলো দীর্ঘ হয় না, লম্বা হয় দুঃখের সময়গুলো। সুখের ছন্দে কেটে গেছে তিনটে মাস। শশুড় বাড়ির মানুষগুলোর মাঝে মনের দূরত্ব বিশাল বিশাল হলেও এই তিনটে মাসে চৈত্রিকা কে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় নি। তবে সে চায় সুখ টা ধরে রাখতে। নতুন করে নতুন ছন্দে সুখ রচনা করতে। সাফারাত অফিসের জন্য বেরিয়ে যেতেই ফটাফট রেডি হয়ে নিল চৈত্রিকা। সুফিয়া বেগমের রুমে আসতেই তিনি ঠোঁট ছাড়িয়ে হাসলেন। বললেন,
‘ চিনবে তো?’
‘ চিনব দাদি। দোয়া করবেন। ‘
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে শপিং মলের সামনে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল চৈত্রিকা। নিজেদের গাড়ি আনে নি। কারণ ড্রাইভার বলে দিবে সাফারাতকে। ওই বাড়িতে যাওয়ার আগে কিছু নিয়ে গেলে ভালো হবে ভেবে শপিংমলে ঢুকল। ঢুকতে না ঢুকতেই যাকে দেখল তাতে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল চৈত্রিকা। মোবাইলের গ্যালারিতে সেভ করা ছবিটা ভালোভাবে দেখে লোকটার সাথে মিলিয়ে নিল। হ্যাঁ ইনিই সেই ব্যক্তি। উনার কাছেই তো যাচ্ছিল ও। এখানেই পেয়ে গেল। উল্কার গতিতে ছুটতে শুরু করে চৈত্রিকা দু’তলায় অবস্থান করা লোকটার দিকে। কিন্তু তার পূর্বেই মাঝ পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কেউ। বাঁধা প্রদানকারীকে দেখে ঘৃণায় রি রি করে উঠল সমস্ত দেহ,কায়া। কন্ঠে তেজ ঢেলে বলে উঠল,
‘ আপনি আমার সামনে কেন দাঁড়িয়েছেন তাহাফ ভাই? ‘
তাহাফ হাসল। প্রশ্ন করল,
‘ কেমন আছো?’
‘ আপনার না জানলেও চলবে। পথ ছাড়ুন। নইলে?’
‘ নইলে?’
‘ আপনি কি শপিংমলে সিন ক্রিয়েট করতে চাইছেন?’
‘ যদি বলি হ্যাঁ? ‘
কথাটা বলেই বাঁকা হেসে চৈত্রিকার এক হাত চেপে ধরল তাহাফ। হিসহিসিয়ে বলে উঠল,
‘ সেদিন তোর প্রেমিক আমার সাথে যা করেছে তা আজ ভরা শপিংমলে করব আমি। নিজের মান সম্মানের পরোয়া করব না। সবার সামনে বদনাম করে দিব তোকে। তোর হাসবেন্ডের জন্য আমার জব চলে গিয়েছে। নারীদের হেন/স্তা করি কেস দিয়েছে। ‘
চৈত্রিকা জোর করে টেনে হাত ছাড়িয়ে নিল। সপাটে চ’ড় বসালো তাহাফের গালে। আঙ্গুল তুলে বললো,
‘ ভুলেও দ্বিতীয় বার সাহস করবি না। সাফারাতের কানে পৌঁছালে এবার আর শ্বাস টাও ফেলতে পারবি না। কিন্তু আমি উনার কানে পৌঁছানোর আগেই তোর শরীরের সব র’ক্ত ঝরিয়ে ফেলব। স্টে অ্যা ওয়ে ফ্রম মি। ‘
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া তাহাফ কে পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে এলো চৈত্রিকা। এত বাজে একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে জানলে আজ কখনোই বের হতো না। উপরের সবগুলো দোকানে লোকটা কে তন্ন তন্ন করে খুঁজল। গেল কোথায়?ট্রায়াল রুমে যায় নি তো?চৈত্রিকা একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগল। হঠাৎই অন্ধকার হয়ে আসতে শুরু করে সবকিছু। নেত্র যুগল নিমীলিত হয়ে আসে। দেহের ভার ছেড়ে লুটিয়ে পড়ল শপিং মলের মেঝেতে।
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ঈদ মোবারক।?)