#সুখের_নেশায়,৫৬,৫৭
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৫৬
‘ আমি পারতাম সেদিন আলো আপাকে বলে দিতে যে ফারুকের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে। ফারুক আমাকে ভালোবাসে,আলো আপাকে না। কিন্তু চেয়েও আমি বলতে পারি নি। মন,মস্তিষ্ক কেমন অচল হয়ে পড়েছিল। কি করব,কি বলবো তা কিছুই মাথায় আসছিল না। সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কারণ একটাই আমি যেমন আলো আপাকে অনেক ভালোবাসি,তেমন ফারুক কেও। তবুও সিদ্ধান্ত নিলাম ফারুক কে বলবো আলো আপার কথা। আমার ভীষণ ভালোবাসার চেয়ে ওই মেয়ের অতিরিক্ত ভালোবাসার প্রখরত্ব অধিক। ফারুকের সাথে আমার সম্পর্ক আছে এটা আলো আপাকে আমি কখনও মুখে বলতে পারবো না,তার চেয়ে বরং ফারুককে আপার কথা জানায়। সিদ্ধান্ত মতে,আমি ফারুক কে বলি আলো আপার মনের সমস্ত কথা। এক মুহুর্তে আমি ত্যাগী নারী হয়ে উঠেছিলাম। ফারুকের পা জড়িয়ে বলেছিলাম আপাকে যেন বিয়ে করে। কিন্তু ফারুক রাজি হয় নি। কর্ণপাত করে নি আমার আকুতি-মিনতি। বরঞ্চ সে আমায় বুকে আগলে ধরে বলেছিল–‘ দেখো সিয়া,আমি আলোকে ভালোবাসি না,তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে। ‘ প্রেম’ নামক সম্পর্ক। যদিও আমি তোমার কথা মেনে আলো কে বিয়ে করি কখনও ওকে মেনে নিতে পারবো না। আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে আপন করার সাহস জোগাতে পারব না। এতে আমি নিজেও কষ্ট পাবো,আলোও পাবে। একতরফা ভালোবাসায় কভু নাহি সুখ মিলে,অনুরাগ তো দু’তরফা হতে হয় যেন সন্ধিক্ষণ দীর্ঘ না হয়। ভালোবাসা বিহীন সংসার হবে কিন্তু আলো সুখী হবে না,আমিও, তুমিও না। বোনের জন্য ভাবতে গিয়ে তুমি বোনকে আরও ধ্বংস করে দিবে সাথে আমাকেও। নিজেও ভেঙে পড়বে। তুমি কি চাও তিন তিনটা জীবনে দুঃখের কৃষ্ণতা লেপে যাক নাকি লম্বা সময়ের অসুখের চেয়ে ক্ষীণ সময়ের অসুখ ভালো?আজ আলো কষ্ট পাবে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওর সকল ক্ষত শুকিয়ে যাবে,নতুন করে সাজবে জীবন। কিন্তু আমার আর ওর বিয়ে হলে কখনও জীবনে রঙ পাবে না। কখনো না। এখন তুমি ওর,আমার,নিজের জীবন বরবাদ করতে চাও?’
সেদিন ফারুকের সেই কথাগুলোর প্রেক্ষিতে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে প্রায় শূন্য। কারণ ওর বলা প্রত্যেক টা বাক্য সত্য এবং সঠিক ছিল। কি করে আমি আপার জীবনে দুঃখ ডেকে আনতে পারি?সেদিন পুরো মধ্যাহ্ন পুরো রাত অনেক ভাবি। তখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে আমি যখন মলিন মুখে বারান্দায় পায়চারি করছি তন্মধ্যে আগমন ঘটে বাবার। হুট করেই বাবা আমার জীবনের অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয় যা শুনে আমি কয়েক পলকের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়ি। আমার ও ফারুকের সম্পর্কে অবগত ছিল বাবা। সেটার রেশ ধরেই জানালেন ছোটখাটো করে ঘরোয়াভাবে আকদ করিয়ে ফেলতে চান আগামীকাল। সেই সময়টা তে জীবনের এমন এক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি যেখান হতে পরিত্রাণের উপায় পাচ্ছিলাম না। কারণ বাবা আমার কাছ থেকে কথা নেয় আমি যেন ফারুকের সাথে বিয়েতে আপত্তি না করি। আর ফারুকও আমাকে চাই। নিজের ভালোবাসা, ফারুকের ভালোবাসা,বাবার ইচ্ছে সব মিলিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সবার খুশি,সুখ,ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি এক কঠোর সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। যেই আমি দিন রাত এক করে সমীকরণ মিলাতে গিয়ে মূর্খতার ট্যাগ নিজের গায়ে জড়াচ্ছিলাম বারংবার সেই আমি মাত্র কয়েক ঘন্টায় বাবাকে জানায় আমি ওনার কথায় রাজি। আকদের জন্য তৈরি হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আলো আপাকে ফোন করে সবকিছু বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু আমার ভিতরকার সত্তা আমায় বাধা দেয়। ভাবায়,এতে আপুর কষ্টের পরিমাণ পাহাড়সম হবে। হয়ত হঠাৎ করে শুনলে এক সেকেন্ড কিংবা অতিশয় দীর্ঘ এক সময়ের জন্য ভুল বুঝবে আমাকে তবুও যে নিরুপায় আমি। কি করে বুঝাবো ওই মেয়েটাকে ফারুকের সাথে তোমার মঙ্গল নয়,বরং ক্ষতির এবং ক্ষতের পরিমাণ টা-ই অধিক হবে। কেননা,ভালোবাসার মানুষকে পেয়েও ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা অত্যাধিক ও অতি করুন যা এখন আমি হারে হারে টের পাই।
ভালোবাসার মানুষ পেলেও সত্যিকারের ভালোবাসা আমার কপালে জুটে নি। এখন নিজের প্রতি অনেক গর্ব হয়। কোনো এক কালে আপাকে ভবিষ্যতে ভালোবাসা না পাওয়ার মতোন মৃ*ত্যু যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়েছিলাম। আজ বুঝতে পারলাম আপাকে শুধু কষ্ট না স্বামীর অত্যা*চার,নির্যা’তন,পর নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের,অন্তরঙ্গ হওয়ার দৃশ্যখানা দেখা হতেও বাঁচিয়ে দিলাম। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় আপা তুমি ভাগ্যবতী, বেঁচে গেলে তুমি। শুরুতে মানুষটা যেমনই ছিল দিনশেষে তো তোমাকে চোখে হারায়। তোমার আধবয়স্ক, বৃদ্ধবয়সের বিশস্ত সঙ্গী দুলাভাই। অথচ আমি যাকে সর্বস্ব উজার করে ভালোবাসলাম,সূচনায় যেই ব্যক্তি মধুরতায় মাখিয়ে নিল আমায়, দিনশেষে সে এক নর*পিশাচ। তুমি জিতে গেছো আপু,আমি তোমাকে এক দান’বের হাত থেকে বাঁচিয়েছি। জানি কখনও এটা বলা হবে না আমার,শুধু অব্যক্ত অনুভূতি হিসেবে অক্ষরে অক্ষরে সজ্জিত থাকবে চিরকাল আমার ডায়েরির পাতায় পাতায়। তবে আপুকে আমি আমার সুখ দিয়ে দিয়েছি। সাফারাত নামক সুখ। মন বলছে এত অত্যা/চারের ভিড়ে বোধ-হয় আমার আর নিঃশ্বাস নেওয়াটা হবে না,তাই ছেলেটাকে একজন বিশস্ত মানুষের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। এদিক থেকে আমি ভাবলেই বড্ড শান্তি পাই। আপুর মতো করে কেউ আগলে রাখতে পারবে না আমার গম্ভীর মুখো,চাপা স্বভাবের সাফারাতকে। মা ও মিনার মা’য়ের চেয়েও আমার সব থেকে ভরসাযোগ্য মানুষ টা তুমি আপু। ভালো রেখো আমার সাফারাতকে। আমি জানি কখনও এটা আমার মুখে বলতে হবে না, আমার ছেলে এমনিতেই ভালো থাকবে। তাই সকল কিছু চিরতরে চাপা পড়ে থাকুক ডায়েরির ভাঁজে।
ডায়েরি টা হাত ফসকে মেঝেতে পড়ল। এলোমেলো হয়ে গেল পৃষ্ঠাগুলো। অকস্মাৎ অনুশোচনার দুয়ারে দাঁড়িয়ে গেলেন আলো বেগম। কাঁদলেন না,অশ্রু বিসর্জন দিলে নেহাৎ লজ্জা বলে বিবেচিত হবে। কেন একটা বারও মনে জাগে নি সিয়া তো একদিক দিয়ে ভালোই করেছিল তার জন্য। আজ হয়ত সিয়ার জায়গায় তিনি থাকতেন,বৃদ্ধ বয়সে এসে স্বামীর পরকীয়া সহ্য করতে হতো আঁচলে মুখ চেপে। হয়ত কোনোদিনও বিন্দুমাত্র সুখী হতেন না,সারাক্ষণ ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করে মা’রা যেতেন। এতো এতো বিশস্ত মানুষ হিসেবে ছিলেন একটা মেয়ের কাছে যে নির্দ্ধিধায় তার সুখ ওনার কোলে ঢেলে দিলেন তাকেই কি-না সারাটাজীবন হিংসা করে গেল। রাগে-হিংসায় মে’রে ফেলার মতো ডিসিশন টা নিতেও কুণ্ঠাবোধ করলেন না। হায়রে রাগ!আসলেই, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আজ সব হারিয়ে ফেলেছেন আলো বেগম।
এত সময় অব্দি নিরবে দাঁড়িয়ে ছিল সাফারাত, চৈত্রিকা উভয়েই। ফ্লোরে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা ডায়েরির দিকে চৈত্রিকা দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। কি আছে এতে!আলো বেগমের মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এমন কিছু আছে যা উনাকে অনুতাপের আগুনে দাউদাউ করে পুড়িয়ে মারা’র জন্য যথেষ্ট। সাফারাত বড় বড় পা ফেলে দরজা টা মেলে দাঁড়িয়ে পড়ল। রোষপূর্ণ কন্ঠে বলে উঠল,
‘ অতিরিক্ত ভালো চাইতে গিয়ে আগুনে জ্বলসে ছাই হয়েছে আম্মু। আমি জ্বলবো না,কারো ভালোও করতে যাবো না। করার আগে মানুষের আসল রূপ টেনে হিঁচড়ে বের করে সিদ্ধান্ত নিব। আপনি এখনই আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। গেট লস্ট। ‘
আলো বেগম চোখ তুলে তাকালেন। কি নিরীহ সেই চাহনি!কালো মেঘে পুরো মুখশ্রী ঢাকা পড়েছে ওনার। ক্রোধ, হিংসা মানুষকে কেবল ধ্বংস-ই করে এবং তা চিরন্তন সত্য। আলো বেগম দুই পা এগিয়ে গিয়ে চৈত্রিকা দু’হাত ধরতে নিলে তৎক্ষনাৎ সরিয়ে আনে ও। মুহুর্তেই সাফারাতের ন্যায় পাষণ্ড রূপ ধারণ করলো। কাঠ কাঠ গলায় বললো,
‘ আপনি আমাকে ছুঁবেন না। ‘
আলো বেগম অসহায় দৃষ্টিতে চাইলেন। চক্ষু কোটর ভিজে উঠেছে। অবজ্ঞা,কঠোর,তীক্ষ্ণ শব্দ কলিজা ভেদ করে ওনার সমগ্র অভ্যন্তর রক্তাক্ত করে দিল নিমেষে। ধীরস্থির গতিতে হেঁটে দরজা পর্যন্ত এসে সাফারাতের দিকে চাইলে সে বিরক্তভরা কন্ঠে বললো,
‘ এতো ছলনাময়ী রূপ দেখার সময় অবশিষ্ট নেই আমার কাছে। বেরিয়ে যান। ফারদার আসবেন না। ‘
কিছু কিছু মুহুর্ত মৌন মুখে পার করতে হয়। আলো বেগমও করলেন। বেরিয়ে গেলেন তিনি। দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে রুমে চলে গেল সাফারাত। চৈত্রিকা চেষ্টা করেও তার চেহারার অভিব্যক্তি দেখতে সক্ষম হলো না।
উপুড় হয়ে ডায়েরি টা তুলতে চেষ্টা করলে একটা চিকন মেয়েলি হাত ডায়েরি টা তুলে ওর হাতে ধরিয়ে দিল। নিঃশব্দে কাঁদছে প্রিয়ন্তী। সব শুনেছে ও এতক্ষণ নিভৃতে। চৈত্রিকাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠল মেয়েটা। ক্রন্দনরত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ তুমি ও ভাইয়া ছাড়া আমাদের আশেপাশে আর ভালো মানুষ কে ভাবী?’
চৈত্রিকার বুকটা কেঁপে উঠল। প্রশ্ন টা তো কঠিন নয় তবুও কেন হৃদয়স্থলে কম্পন ছড়িয়ে পড়ল?কেন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না?শুধু বলতে মন চাইল– ‘ ভালো মানুষ চিনতে হলে তোমাকে বছরের পর বছর মানুষটার সঙ্গে চলতে হবে, এতে হয়ত তুমি ঠকে যাবে, প্রতা’রিত হবে আবার সুখীও হবে। সবটায় অজানা ও সময়ের খেল।’
____________
দিবাকর অন্তরীক্ষে জায়গা করলো সবে। বার্লিনের পিচ ঢালা রাস্তা ধরে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে এক চেনাজানা হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ক্ষণে ক্ষণে গাড়ির গতি বেড়ে চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে চৈত্রিকার জল গড়িয়ে পড়ার পরিমাণ। ওষ্ঠদ্বয় এক করে শব্দহীন কাঁদছে ও। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। ব্যাথায় অসার সমস্ত গা। সাফারাত পিছনের দিক ঘাড় বাঁকিয়ে দেখছে না। প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত সে। প্রিয়ন্তী চৈত্রিকার শরীর টা বার বার চাদর দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে। দু’পাশের জানালার কাচ তুলে দিয়েছে সাফারাত। আজকাল জার্মানির সকল শহর,অলিগলিতে শীতের রাজত্ব। সেই রাজত্বে চৈত্রিকার অবস্থা নাজেহাল।
হসপিটালের সামনে গাড়ি থামাতেই সিনথিয়া,ফাইয়াদ,আয়ান এগিয়ে আসল। চক্ষুদ্বয় বেশ ফোলা ফোলা। সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে তার ছাপ সুস্পষ্ট। নিজেদের দেহ খানি বড় বড় জ্যাকেটে আবৃত করে রেখেছে। সাফারাত হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে নামল। দরজা খুলে কোলে তুলে নিল চৈত্রিকাকে। অন্তঃসত্তা চৈত্রিকার দেহের ওজন বেশ। তবুও সাফারাত কি নির্বিকার ওকে আগলে রেখে পা বাড়াচ্ছে। হসপিটালে ঢোকার মুহুর্তে নিভু নিভু চোখে দেখল চৈত্রিকা আয়মানকে। আঁখিপল্লব ঝাঁকিয়ে করুণ দৃষ্টি মেলে রেখেছে ছেলেটা। পেইন ওঠার পর থেকে সাফারাত নিশ্চুপ। চৈত্রিকাকে যখন ওটিতে ঢোকানো হবে সাফারাত ওর হাত টা আঁকড়ে ধরলো। সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠল,
‘ ফিরে আসবেন কিন্তু। ‘
একদম পরিস্ফুটভাবে অনুভব করে চৈত্রিকা সাফারাতের অশ্রুমাখা,গম্ভীর স্বর। কে বলবে উপর দিয়ে কঠিন ভাব ধারণকৃত লোকটার অভ্যন্তর কাঁদছে। ঝড়ের বেগে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে সে।
#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৫৭
দু’জন নার্স কোলে দু’টো বাচ্চা নিয়ে ওটি থেকে বেরিয়ে আসল। ভারী তোয়ালে দ্বারা আবৃত বাচ্চা দুটোর নগ্ন দেহ। সাফারাত নতমস্তকে বসে আছে। থেকে থেকে দুশ্চিন্তায় মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম। কোনো ক্রমেই মনটা শান্ত হচ্ছে না। বুক টা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কখন চৈত্রিকাকে বুকে আগলে ধরবে সেই প্রতীক্ষায় মাথা ব্যাথা বেড়েই চলেছে। তর সইছে না। বক্ষস্থলে বেসামাল তোলপাড় হচ্ছে। দু’টো নার্স কে হাতে দু’টো বাচ্চা নিয়ে আসতে দেখে প্রচন্ড হতবাক সকলে। তখনও সাফারাত মাথা তুলে নি। নিষ্পলক দৃষ্টি তার মেঝেতে নিবদ্ধ। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। সিনথিয়া,ফাইয়াদ বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল। নার্সের দিকে এক পলক চেয়ে অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে তাকালো বাচ্চাগুলোর দিক। হতভম্ব,নির্বাক সিনথিয়া। তোয়ালের মধ্যে পুতুলের ন্যায় শুয়ে আছে দু’জন। চোখ বুঁজে রেখেছে। একজনের থুতুনি টা একদম চৈত্রিকার মতোন কাটা। হাত বাড়িয়ে সেই বাচ্চা টাকে সিনথিয়া কোলে তুলে নিল। খুশিতে গদগদ হয়ে ইংরেজি বাক্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ এটা মেয়ে বাবু তাই না?’
নার্স টা হাসল না। সাবলীল কন্ঠে চিকন সুরে প্রতুত্তরে জানালো,
‘ ইয়েস ম্যাম। মিসেস চট্টর টুইনস বেবি হয়েছে। একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। ‘
ফাইয়াদ উচ্চস্বরে হেসে উঠল। নার্স টা ইংরেজিতে সবটা ঠিকঠাক বললো কিন্তু চৈত্রিকার নামটা বিগড়ে দিল। আহারে!বড় কষ্টজনক ব্যাপার ঠেকল তা ফাইয়াদের নিকট। পাক্কা জার্মানি হয়েও সে তো চৈত্রিকার নামটা ঠিক উচ্চারণ করে। আর এই নার্স!গাধী একটা। মনে মনে গাধী সম্বোধন করেই ফেলল ফাইয়াদ। ওর হাসির শব্দ শুনে প্রিয়ন্তী ও নার্স দু’জনেই ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো। কপালে ভাজ পড়ল। প্রিয়ন্তী হাত বাড়িয়ে দিল ছেলে বাবু টা নেওয়ার জন্য। হাত দুটো অসম্ভব কাঁপছে ওর। নার্স দিতে চাইল না। সিনথিয়ার আদেশে দিতে হলো। বুকের সাথে মিশিয়ে নিল প্রিয়ন্তী নরম,কোমল দেহটা কে। কন্ঠনালি ভেদ করে একটা প্রশ্ন বেরিয়ে আসে সিনথিয়ার লক্ষ্যে,
‘ ভাবী জানত ওনার টুইনস বেবি হবে?’
‘ এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই প্রিয়ন্তী। ‘
কোলের বাচ্চা টা নিয়ে সিনথিয়া সাফারাতের কাছে আসল। এখনও মানুষটা মাথা নত করে রেখেছে। হয়ত বাবা হওয়া কতটা কঠিন তা উপলব্ধি করতে পারছে সে। স্ত্রী ভিতরে ছটফট করছে তাকে বাবা হওয়ার মতোন খুশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে অথচ চেয়েও সে চৈত্র মাসের যন্ত্রণা কমাতে পারছে না। নিজেকে প্রচন্ড অসহায় মনে হচ্ছে ওর। সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে মন চাইছে। কেন সুখ পেতে হলে দুঃখের সাথে লড়াই করতে হবে?দুঃখ না থাকলে সুখের মর্মার্থ নেই বলে?নেত্রদ্বয় জ্বালা করছে। সামনে কারো উপস্থিতির আভাস মিলতেই সাফারাত মাথা তুলে তাকালো। চক্ষে বিঁধল সিনথিয়ার কোলে ভারী তোয়ালে পেঁচানো একটা বাচ্চা। তৎক্ষনাৎ সমগ্র শরীর ঝক্কি দিয়ে উঠল তার। তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সিনথিয়ার দিক। হাসিমুখে সিনথিয়া বেবি টাকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ চৈত্র সুস্থ আছে। মা হয়ে গিয়েছেন তিনি। তোমার ও চৈত্রর বেবি। ‘
সাফারাত মেয়েকে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলল। এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে গেল বুক টা। এখন শুধু অপেক্ষা চৈত্রিকাকে এই বুকে মিশিয়ে নেওয়ার। সিনথিয়া ভালোভাবে চেয়ে দেখল সাফারাতের চোখ দুটো লাল। ঠোঁটের কোণে সুপ্ত হাসি। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে চক্ষুদ্বয় বুঁজে নিঃশ্বাস ফেলছে সে। স্বস্তির নিঃশ্বাস! এত সুন্দর মুহুর্ত কখনও দেখে নি সিনথিয়া। আয়ানের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে দ্রুত বেগে একটা ছবি তুলে নিল। স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ করে নিল ভালোবাসাময় এই সময়,মুহুর্ত।
ফাইয়াদ বারংবার চেষ্টা করছে প্রিয়ন্তীর কোল থেকে ছেলে বেবি টা নেওয়ার। হাস্যকর হলেও সত্য সে আজ অবধি কোনো বাচ্চা কোলে নেয় নি। এখন মনটা বেশ আকুপাকু করছে বাচ্চা কোলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রিয়ন্তী নাছোড়বান্দা। কোনোমতেই দিতে রাজি নই। শেষমেশ উপায়ন্তর না পেয়ে প্রিয়ন্তীকে চাপা স্বরে ধমকে উঠল সে। প্রিয়ন্তীর যখন ভ্রুঁ যুগল কিঞ্চিৎ ললাট ছুঁয়েছে ফাইয়াদ দুষ্ট হেসে বললো,
‘ বেবিকে আমার কোলে না দিলে আমি টুমাকে কিস করবো। লিপ কিসসসস। টুমার হ্যান্ডস গুলো টো কালি নেই কিভাবে আমাকে আটকাবে?’
প্রশ্নটা করে ভ্রুঁ নাচালো ফাইয়াদ। প্রিয়ন্তীর দুই অধর কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে এলো। গর্জে উঠল ও– ‘ জার্মানির বাচ্চা। অস”ভ্য, বেহা/য়া। ‘
সুযোগ টা লুফে নিয়ে বেবি টাকে কোলে নিয়ে প্রগাঢ়পার ফাইয়াদ। প্রিয়ন্তীর গালিগালাজ একটাও ঠাহর হয়নি তার। বাংলা টা কোনোরকমে আধো আধো হজম করলেও এসব গালিগালাজ শিখে নি। প্রথমবার এতো ছোট বাচ্চা কোলে নেওয়ায় অতীব বেগ পোহাতে হচ্ছে ওকে। হিমশিম খাচ্ছে। তড়িৎ গতিতে সিনথিয়ার কাছে এসে ওর কোলে দিয়ে দিল। ছেলে বেবিটার কপালে আলতো করে চুমু খায় সিনথিয়া। হাসিমুখে বললো সম্মুখে দাঁড়ানো মানুষ টার নিমিত্তে,
‘ একজনকে বুকে জড়িয়ে রেখে সুখের রাজ্যে পাড়ি দিলে হবে?আরেকজন অপেক্ষা করছে কিন্তু বুকে জায়গা পাওয়ার জন্য। ‘
কথাটা কর্ণধার হতেই চোখ মেলে তাকালো সাফারাত। সিনথিয়ার কোল জুড়ে আরও একটা বাচ্চার অবস্থান দেখে পুরো জাহান যেন থমকে যায় তার। অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ এই বেবি টা?’
‘ এটাও তোমার ও চৈত্রর। ছেলে বেবি। তুমি জানতে না তোমাদের টুইনস হবে?’
সাফারাত প্রিয়ন্তীর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নিল। মায়াময় কন্ঠস্বর তার,
‘ না। চৈত্রিকা কখনও আলট্রাসনো করে নি ভয়ে। ওর ভয় হতো যদি জানতে পারে ছেলে হবে তাহলে নিশ্চয়ই আয়মানের মন ভেঙে যাবে যা ও সইতে পারবে না। প্রথম প্রথম করালেও আর করে নি। ডাক্তার বলাও সত্ত্বেও না। শুধু এটাই বলত আল্লাহ এবার আমাদের ভালো রাখবেন। ‘
আয়মান এতক্ষণ দিব্যি ঘুমাচ্ছিল আয়ানের কাঁধে মাথা রেখে। মৃদু মৃদু কথার আওয়াজ ওর শ্রবণগ্রন্থিতে পৌঁছানো মাত্রই আঁখিদ্বয় মেলে তাকালো। সাফারাত ও প্রিয়ন্তীর কোলে বাচ্চা দেখে নড়েচড়ে উঠল সে। দৌড়ে এসে মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরল। বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ মাম্মা বেবি?মামি মণি?’
সিনথিয়া প্রিয়ন্তীর কোল থেকে মেয়ে বাবু টা নিয়ে নিচু হয়ে বসল। চোখ দিয়ে ইশারা করলো বাচ্চা টার দিকে তাকাতে। মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো আয়মান। ওর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
‘ মাম্মা,আমার সুখ?’
‘ ইয়েস মাই বয়। ‘
ছোট ছোট হাতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিল আয়মান। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ ক্যান আই কিস হার?’
সিনথিয়া ঘাড় কাত করে সম্মতি জানায়। গম্ভীরমুখো ছেলের এই অকস্মাৎ আচরণের পরিবর্তনে ওর হৃদযন্ত্র হিম হয়ে গেল৷ বরফে জমে গেল যেন। আয়মান ঝুঁকে চুমু খেল সুখের কপালে। অনিমেষনেত্রে তাকিয়ে রইল থুতুনির দিকটায়।
.
.
চৈত্রিকাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। মোটামুটি সুস্থ ও। তবে এখনও জ্ঞান ফিরে নি। কিন্তু তত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা সম্ভব না সাফারাতের পক্ষে। মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে কেবিনে বসে রইল। ওদের দোলনায় শুইয়ে টুল টেনে বসল সাফারাত। অপলক,নির্নিমেষ চাউনি নিবদ্ধ করে রাখল চৈত্রিকার জ্ঞানশূণ্য চেহারা খানাতে। অধিক মলিনতায় ছেয়ে আছে মেয়েটার পুরো বদন। সাফারাত হাত বাড়িয়ে ওর সমস্ত মুখ স্পর্শ করলো। কপালে চুমু এঁকে স্মিত হেসে আওড়ালো,
‘ আমার চৈত্র মাস। ‘
_______________
সিনথিয়ার মোবাইলটা এক নাগাড়ে বেজে যাচ্ছে। ফোনটা তুলবে কি তুলবে না তা নিয়ে ঢেড় দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে সে। সাফারাত ও চৈত্রিকার জীবনের যেকোনো কথা,মুহুর্ত, সুন্দর সময় সবকিছু একজন মানুষকে জানানো নিষিদ্ধ। কোনোভাবেই জানানো যাবে না। সাফারাতের কড়া নিষেধ কেউ যেন সেই মানুষটাকে ওর সংসার,জীবন সম্পর্কিত কিছুই না বলে। আর কোনো দুঃখ চায় না সে জীবনে। এত কিছুর পরও সাফারাতকে এত স্ট্রং দেখে বার বার বিস্মিত হয় সিনথিয়া। একটা মানুষ জীবনে আপনজনদের কাছে এত করুণভাবে ঠকে কতটা স্বাভাবিক! আলো বেগমের কল থেমে নেই। একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিরুপায় হয়ে সিনথিয়া চুপিচুপি কল রিসিভ করলো। আনতস্বরে বললো,
‘ বলুন। ‘
‘ সাফারাতের ছেলে হয়েছে না-কি মেয়ে?’
‘ আপনি জেনে কি করবেন?’
‘ বল না সিনথিয়া। তুইও সবার মতো করে আমাকে ঘৃ’ণা করছিস?’
‘ ঘৃ’ণা করবো কেন?আপনি তো ঘৃ’ণারও যোগ্য না। আপনি নিজেই নিজেকে সহ্য করতে পারেন না তাই তো তিন বার সুই*সাইডের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তবুও ম’রেন নি। আজ বুঝতে পারছেন তো? অন্যের খু*নি হওয়া সোজা কিন্তু নিজেকে মে’রে ফেলা বড্ড কঠিন। ‘
আলো বেগম বলার মতোন কিছু খুঁজে পেলেন না। ফোন টা কেঁটে গেল। সিনথিয়া ফুঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে পিছন ফিরে দেখল আয়ান দাঁড়িয়ে। এই মানুষ টার দিকে তাকালে দু চক্ষে কেবল কষ্ট দেখতে পায় সিনথিয়া। কথায় আছে না,সত্য কোনোদিন গোপন থাকে না। সেদিন সাফারাতের বাসা থেকে আসার পর আলো সারাক্ষণ কেমন গুমরে থাকতেন। হুট করে সাফারাতের এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া,আলো বেগমের সাথে দূরত্ব সবকিছু অদ্ভুত লাগছিল সিনথিয়ার। সন্দেহ হচ্ছিল বেশ। মাঝে মাঝে নিজের মোবাইল ফেলে বাড়ির ল্যান্ড লাইন,ওর মোবাইল, আয়ানের, ক্যাথরিন সকলের মোবাইল থেকে বারবার সাফারাতকে ফোন করত। ওনার কন্ঠ শুনলেই কল কেটে দিত সাফারাত । এমনকি চৈত্রিকা পর্যন্ত ওনার সাথে কথা বলে না৷ এতেই সন্দেহ আরো গভীর হয় সিনথিয়ার। এছাড়া আলো বেগমের কারণে ওরা ফ্ল্যাট পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলে। এড্রেস যেন ওনি না জানেন তাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাফারাত। এতে দু মাসে ডিপ্রেসড হয়ে গলায় ফাঁস লাগায় আলো বেগম বৃদ্ধ বয়সে এসে। ভাগ্যক্রমে ক্যাথরিন দেখতে পায় সেদিন। হসপিটালাইজড করার পর ডাক্তার জানান ওনি মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন। সাইক্রিয়াটিস্টের শরণাপন্ন হোন ওনি সিনথিয়ার জন্য বাধ্য হয়ে। ওনি ওনার মানসিক অশান্তির কারণ বারংবার চেপে যেতে চাইলে সিনথিয়ার অনুমতিতে সাইক্রিয়াটিস্ট হিপনোটাইজের উপায় বেছে নেন। সমস্ত সত্য খোলাসা হয় তাৎক্ষণিক। সিনথিয়া বিমূঢ়তায় বাক হারা হয়ে সেদিন আলো বেগমকে ক্লিনিকে রেখেই বেরিয়ে আসে। এতো বড় প্রতা*রক!এত নিকৃষ্ট মানুষ! যাকে কি-না মা ভেবে সম্মান করে আসল এতকাল তিনি কি-না খু*নি!
আয়ানের বুকে পড়ে কেঁদেছিল মেয়েটা অনবরত। ফুপিয়ে ফুপিয়ে ক্রন্দনরত কন্ঠে বলেছিল আয়ানকে সবকিছু। ছেলেদের চক্ষে নাকি মেঘ জমে না?অথচ আয়ান সিনথিয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে নিঃশব্দে। সে একজন এতিম তাতে কষ্ট পায় নি,পেয়েছে আপন হতে না পেরে। পরিবারের সকলের অবজ্ঞা, অবহেলায় আলো বেগম নিজের রুম টাকে আপন করে নিয়েছেন। এমন মানুষকে কি কখনও ক্ষমা করা যায়?আর করলেও সহানুভূতি কিংবা ভালোবাসা দেখানো যায় না। কখনও না। সিনথিয়া, আয়ান,খালু কেউই পারে নি,সাফারাত ও চৈত্রিকা কি করে পারবে?ওদের জীবনটা এলোমেলো করার জন্য এই মহিলাই দায়ী। ম’রে যাক এই মহিলা। মাঝে মাঝে অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু আবার দমে যায় সিনথিয়া। মনে মনে আলো বেগমের জন্য একটা কথা-ই আওড়ায়–‘ কিছু মানুষের জন্য অন্য কোনো শ’ত্রু’র প্রয়োজন হয় না,সময়ের স্রোতে নিজের মন,আত্মা-ই নিজের শ*ত্রু হয়ে যায়। ‘
________________
ঘন্টার পর ঘন্টা অতিবাহিত হলো। একটা সময় চোখ মেলল চৈত্রিকা। প্রথম যার মুখটা নয়নের মণিতে ভাসল লোকটা ওর প্রাণপুরুষ,ভালোবাসা। ওর ফ্যাকাসে মুখটার পানে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে থাকা সাফারাতের দিকে চেয়ে নিম্ন গলায় বলে উঠল,
‘ সুখ?’
সাফারাত এক ভ্রুঁ উঁচিয়ে চাইল। ঈষৎ হাসিতে আচ্ছাদিত তার দু’অধর। বুকটা ধ্বক করে উঠে চৈত্রিকার সেই চাহনিতে,হাসিতে। শুনতে পায় প্রিয় কন্ঠের ফিচেল স্বর,
‘ একটা সুখ-ই চান?’
সাফারাতের দৈবাৎ রহস্যমাখানো প্রশ্নে চৈত্রিকার অস্থিরতা বেড়ে গেল। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে ম্লান হেসে বললো,
‘ এমন সুখ চাই যার সমাপ্তি নেই। ‘
‘ আমাদের জীবনে দু’ দুটো সুখ এসেছে চৈত্র। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)