#সুখ_নীড়
#পর্ব-১১,১২
১১
জাফরের মা এত বছর পরে পল্লবকে এ বাড়িতে দেখে খুশিতে যেনো আত্মহারা। তাড়াতাড়ি করে পল্লবের হাত থেকে তার ব্যাগটা টেনে নিলো। পল্লবও জাফরের মায়ের পিছুপিছু দোতলার দিকে চলতে লাগল। কুয়াশার কারণে ফেরীঘাটে খুব জ্যাম থাকায় তাদের পৌঁছাতে রাত এগারোটা বেজে গেছে প্রায়।
এ বাড়িতে কখনো এসে কেউ থাকবে না এটা জানার পরেও খালেক সাহেব তার ছেলেদের জন্য আলাদাভাবে রুম সাজিয়ে রেখেছেন। বড় ছেলে কল্লোল মাত্র একবার এসেছিল এ বাড়িতে। পল্লব সেই তুলনায় বেশিই এসেছে। পল্লব জানে তার রুম কোথায়! খালেক সাহেব তার বাড়িতে যতই মেহমান আসুক না কেনো তাদের রুম কাউকে দেন না। জাফরের মা প্রতিদিন নিজ হাতে রুমটা সাফ করেন। মাঝে মাঝে খুব আফসোস করেন এ নিয়ে। বাবা তার ছেলেদের জন্য কত ব্যবস্থা করে রেখেছে অথচ ছেলেরা মনের ভুলেও এ মুখো হওয়ার কথা ভাবে না। ভাববেই বা কেনো! তাদের মায়ের অট্টালিকা ছেড়ে এই মফস্বলে কারই বা থাকতে মন চাইবে!
ক্লান্ত পল্লব কিছুই খেলো না আর রাতে। আসার পথে ফেরীতে হালকা পাতলা খেয়েছিল। তাই তেমন ক্ষুধাও নেই। এতটা সময় বাসে বসে থাকতে থাকতে তার কোমর ধরে গেছে। সে জাফরের মায়ের থেকে ব্যাগটা নিয়েই ঠাস করে রুমের দরজা লক করে দিলো। কোনোমতে গায়ের গেঞ্জিটা খুলেই বিছানায় শুয়ে পড়ল। বিছানায় শুয়ে পড়তেই তার অনুভব হলো আরো কেউ একজন আছে এ বিছানায়।
আসলে সে ক্লান্তিতে কোনোদিকে ঠিকঠাক না দেখেই হাতের ব্যাগটা ফেলেই তড়িঘড়ি করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বিছানাতে কম্বলের নিচে জয়ীতা আছে এটা সে টেরই পায়নি। ভেবেছে হয়ত কম্বল দলা পাকানো অবস্থায় আছে। কম্বল টেনে নিজের শরীরে নিতে যেয়েই টের পায় কম্বলের তলায় আরো কেউ আছে। সে কিছুটা অবাক হলো।
জয়ীতা মাত্র কিছুক্ষণ আগেই খালেক সাহেবের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে না খেয়েই কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে। এরমধ্যে পল্লব এসেছে। সেও কিছু টের পায়নি।
হঠাৎ কেউ তার পাশে শুয়ে কম্বল ধরে টান দিতেই ঘুমের ঘোরে সে ভাবে হয়তো চোর এসেছে। সে ভয়ে চিৎকার করে উঠে। পল্লব মেয়ে মানুষের চিৎকার শুনে ঘাবড়ে যায়। কী করবে কিছু বুঝে শুনে উঠতে না পেরে দ্রুত বাম হাতে জয়ীতার চুলের মুঠি খামচে ধরে ডান হাতে তার মুখটা চেপে ধরল।
জয়ীতা নিজেকে মুক্ত করার জন্য কোনো উপায় না পেয়ে পল্লবের হাতের তালুতে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দিলো। পল্লবও ব্যাথায় ককিয়ে উঠে উহ করে উঠে। দ্রুত জয়ীকে ছেড়ে দিয়ে পাশের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলো।
পল্লবের হাতে এমনভাবে কামড় দিয়েছে একদম দাঁতের দাগ দেবে বসে গিয়েছে। সে হাতটা চেপে ধরে অগ্নি বিস্ফোরিত নয়নে পেছনে ফিরে তাকাল। তাকিয়ে সে যেনো গোলকধাঁধায় পড়ে যায় । কাকে দেখছে সে!
ল্যাম্পের আবছা আলোয় পল্লবকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে জয়ীতা!.
– জয়ীতা দ্রুত রুমের লাইট অন করল। পল্লবকে দেখে তার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। সাথে সাথে সে বুঝে যায় এই কাজ তাহলে খালেক সাহেবের। তিনিই পল্লবকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন।
পল্লব এগিয়ে এসে জয়ীকে দু’হাতে চেপে ধরে বলল, তুমি এখানে?
পল্লবের চোখের দিকে চোখ রেখে কিছু বলবে কিন্তু জয়ীতা পারল না। সে খুব ঘাবড়ে গেল।
জয়িতা কোনো কথা বলছে না দেখে সে দুই হাতে তাকে ঝাঁকাতে শুরু করল, তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? কোথায় না খুঁজেছি তোমায় পাগলের মতো! হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছি আর তুমি এখানে এসে! আমিও কত বড় গাধা একবারের জন্যও কেন ভাবলাম না তুমি বাবার কাছে আসতে পারো!
কথাগুলো বলতে বলতে পল্লবের দু’চোখ ভিজে উঠল। পল্লবের আদ্র চোখদুটি দেখে জয়িতা খানিকটা অবাক হয়ে বলল , তুমি তো চেয়েছিলে তোমার জীবন থেকে আমি সরে যাই। ভয় নেই এখানেও আমি থাকছি না! কাকতালীয়ভাবে আমার নিয়তি এখানে আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে। আমি যদি জানতাম তুমি এখানে আসবে তাহলে তুমি আসার আগেই আমি চলে যেতাম।
জয়ীর কন্ঠের দৃঢ়তা দেখে পল্লব তাকে ছেড়ে দিলো।
জয়ীতা কিছুটা পিছু সরে যেয়ে বলল, কেন খুঁজেছ আমাকে? আমিতো তোমাকে খুঁজতে বলিনি। তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে আমি চলে এসেছি। তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন। কত কিছুই তো করেছো আমাকে পিছু ছাড়ানোর জন্য। আর কষ্ট করতে হবে না।
পল্লব একদৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কী বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। জয়ীর বলা কোনো কথাই তার কানে যাচ্ছে না।
জয়ী কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল করলো পল্লবের হাত বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। তার মনে পড়ল মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগেই সে কি করেছে পল্লবের সাথে। নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই থাপড়াতে মন চাচ্ছে তার। সে আর কোনো কথা না বলে দ্রুত ফার্স্ট এইড বক্স আনতে দৌড় দিলো।
পল্লবের হাত থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে তখনও বেশ রক্ত ঝরছে। পল্লবের এতক্ষনে হাতের ব্যাথার কথা মনে হলো।
জয়ীতা পল্লবের হাতটা নিজের কোলের উপরে নিয়ে ক্ষতস্থানে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে বেঁধে দিলো। নিজের এমন বোকামির জন্য সে পল্লবের কাছে বারবার স্যরি বলছে।
পল্লব কপট রাগ দেখিয়ে বলল, মাফ করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে । এরপর থেকে কখনো আমাকে ছেড়ে যাবার কথা স্বপ্নেও ভাববে না তুমি। জয়ীতা কেঁপে উঠে বলল, কিন্তু তুমিই..
জয়ীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পল্লব তাকে বুকের মাঝে টেনে নিলো। জয়ীতা পল্লবের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে। পল্লবের চোখও সিক্ত। আসলে সে নিজের ভুল বুঝতে পারছে। হারালেই বোঝা যায় প্রিয় মানুষের মূল্য। সে নিজের নিয়তির উপর রাগ করে জয়ীকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আর না। যত যা কিছুই হোক জয়ীকে সে কিছুতেই ছাড়তে পারবে না। জয়ীকে সে যে করেই হোক আগলে রাখবে এমন করেই বুকের মাঝে।
হঠাৎ করে তার বাবার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা আরো কয়েক শত গুণ বেড়ে গেল। এখন বুঝতে পারছে কেনো তাকে এভাবে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে। এই মানুষটা এত অদ্ভুত একটা মায়ার জালে তাকে দিনদিন বেঁধে ফেলছে যে সে চাইলেও কোনোদিনই এখান থেকে বের হতে পারবে না।
জয়ীতা ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। পল্লবের বুকে এভাবে কোনোদিন আর মাথা রেখে কাঁদতে পারবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি। সে শুধু ভাবছে তার শ্বশুর কী এমন জাদুর আছর করলো যে পল্লব এত বদলে গেল!
সকালে জয়ী নিজ হাতে নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। খালেক সাহেব মর্নিং ওয়াক করে এসে জয়ীকে কিচেনে ব্যস্ত দেখে দু’চোখ ভরে সেই দৃশ্য উপভোগ করছেন। এমন দৃশ্য দেখাই কত দিনের স্বপ্ন তার!
নাস্তার টেবিলে কেউ মুখ খুলতেই পারছে না। জয়ীতা লাজুক ভঙ্গিতে শ্বশুরকে খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন। পল্লবও চুপচাপ। তার হাতে ব্যথা হওয়ায় সে ঠিকঠাক খেতে পারছে না। জয়ীতা পরোটার পিস টুকরো করে দিয়েছে। সে কোনোমতে ধরেই মুখে দিচ্ছে। আজ জাফরের মা আসেনি। সেই রান্নাবান্না দেখেন এ বাড়িতে। জয়ীতাই ফোন করে নিষেধ করেছে তাকে।
খালেক সাহেব যে ব্যাপারটা জানেন না তা নয়।তিনিও ব্যাপারটা জানেন। জাফরের মা তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে যে জয়ী তাকে ছুটি দিয়েছে , এখন সে কী করবে। পরে খালেক সাহেব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাসিমুখে তাকে বলেন, আচ্ছা কয়েকদিন তুমি এসো না। আমার মা’ই তার ঘর সংসার সামলাক।
কেউ কোনো কথা বলছে না.। খালেক সাহেবপল্লবের হাতের ব্যাণ্ডেজ় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, কী ব্যাপার! হাতে কী হলো আবার?
পল্লব আস্তে বলল, ওই বেশি কিছু না।পিনে ফুটো হয়ে গিয়েছে। শীতকাল তো তাই ব্যাথাটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে।
– ওষুধ খাওনি? তাড়াতাড়ি খাও। টিটেনাস দিতে হবে কিনা কে জানে?
– নাহ, খাব। না না। টিটেনাসের দরকার নেই। খুবই সামান্য একটা প্রব্লেম।
তাদের কথাপোকথন শুনে মনে হচ্ছে কিছুই ঘটেনি। সব কিছু স্বাভাবিক। তারা এভাবেই প্রতিদিন নাস্তায় বসে একসাথে। আসলে জয়ী আর পল্লব কী বলবে বুঝতে পারছে না। এমন একটা সারপ্রাইজে তারা সত্যিই শকড।
খালেক সাহেব বললেন, তা আমার সারপ্রাইজ কেমন লাগল তোমাদের?
পল্লব নড়েচড়ে বসল। বলল, বাবা, তুমি পারোও। আমাকে জানালে কী হতো?
– আগে জানালে এই সারপ্রাইজটা দিতাম কী করে?
– তাই বলে এতদিন ধরে এভাবে আমার কাছে লুকাবে? ফোনেও তো বলতে পারতে!
– তুমিও জানতেই বা চেয়েছ কই? কখনই তো বলোনি জয়ী নিখোঁজ। তুমি তো বললে জয়ী নাকি তার মায়ের কাছে!
পল্লব বুঝল ভুল তো তারই।
– তা আমার মা এভাবে ঘর ছেড়ে কেনো এসেছে সেটা কি জানতে পারি?
– পল্লব এবার কী উত্তর দিবে বুঝতে পারে না। কোনোমতে আমতা আমতা করে বলল, না, মানে…. একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
– এমন কী কথা কাটাকাটি যে ওভাবে একটা অসুস্থ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল? আল্লাহ মেহেরবান ছিলেন বলেই আমার হাতে সেদিন অসুস্থ অবস্থায় ও পড়েছিল। না হলে কী হতে পারত ভেবেছ! মেয়েদের জন্য একা চলাফেরা করা আমাদের সমাজ কতটা ভয়ংকর তা তো জানোই।
– পল্লব নিশ্চুপ!
খাওয়া শেষে জয়ী তার শ্বশুরের জন্য চা নিয়ে তার রুমে যায়। চা হাতে দিতেই খালেক সাহেব তাকে বসতে বললেন।
– কিছু মনে হয় বলবি?
– না, মানে! বাবা, আপনি পল্লবকে এভাবে নিয়ে এলেন! আর কী এমন হলো যে হঠাৎ আমার প্রতি সে এত সদয় হলো? নিজের ভুল বুঝতে পারল?
– আমি কিছুই করিনি রে, মা! সে নিজেই তোকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। আমি ওর সাথে কথা বলেই বুঝেছি ও তোকে খুব মিস করছে। ও অনুতপ্ত। এজন্যই কায়দা করে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি দেখতে চেয়েছি ও আসলেই তোকে ভালোবাসে কি না! আমার ধারণাই সত্যি। ও আসলে ওর মায়ের প্রেসারেই হয়ত তোকে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
কথা শেষ করার আগেই দেখল পল্লবও এসেছে এ রুমে। সে আসলে পেছনে দাঁড়িয়ে সবই শুনছিল। সে তার বাবাকে বলল, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি জয়ী তোমার কাছে। আল্লাহর দরবারে অনেক ধন্যবাদ। তুমি সত্যি বলেছ, বাবা। আমি জয়ীকে হারিয়েই বুঝেছি আমি কী হারিয়েছিলাম। আমি আমার কৃতকর্মের জন্য অনেক অনেক স্যরি , বাবা।
খালেক সাহেব ছেলেকে কাছে বসিয়ে বললেন, পাগল ছেলে। যা করেছ তো করেছ। এখন সেসব বাদ দিয়ে আগামী দিনগুলো ভালোভাবে কাটানোর প্লান করো। আর স্যরি আমাকে না, আমার মাকে বলো। অনেক কষ্ট দিয়েছ তাকে। এমন ভুল আর কখনো করো না।
স্বপ্নের মতো কেটে গেল আরো দু’টি দিন। জয়ীতা পল্লবের সাথে এ বাড়িতে কেটে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত খুব উপভোগ করছে। এক একটি ক্ষণ এত স্বাধীন আর এতটা ভালো লাগায় ভরপুর যেনো এখানেই কাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছে জীবনের বাকী সময়টুকুও।
সে পল্লবের ঘাড়ে মাথা রেখে বলল, আমার যে আর ঢাকাতে ফিরতে মন চাচ্ছে না।
– আমারও না। কিন্তু ফিরতে তো হবেই। আর তোমাকেও ফিরতে হবে। না হলে আমি থাকতে পারব না যে!
– কিন্তু পল্লব! আর কিছু বলতে পারে না সে!
পল্লব বুঝতে পারে এই কিন্তুর অর্থ। সেও কিছুই বলতে পারে না সে। সে জানে ঢাকাতে তাকে ফিরতে হবে! সে এই দু’দিন ধরে ফোনে কোনো রিপ্লাই দিচ্ছে না। কতটা তোলপাড় যে চলছে সেটা সে এখানে বসেই টের পাচ্ছে। এ সব কিছুর জন্য জয়ীকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বরাবরের মতোই।
কিন্তু না, তাকে এসব রুখতে হবে। কিন্তু কীভাবে? তার মায়ের নানান কারসাজির কাছে সে এখনো বাচ্চা। তার মা কতটা নির্দয় এটা তার অজানা নয়৷
জয়ীতাকে আর তাকে কাল কতবার তার বাবা রিকোয়েস্ট করেছে এখানেই থেকে যেতে। কিন্তু সে একবারের জন্যও হ্যা বলতে পারেনি। সে কোন অধিকারে এ বাড়িতে থাকবে এটাই সে বুঝতে পারে না। এই মানুষটাকে কতটা অন্ধকারে রাখবে আর। মন চায় সব বলে দিবে কিন্তু সাহস হয় না। এই অমূল্য ভালোবাসাটুকু সে কী করে হারাবে? আর সারাজীবন ধরে ঠকে আসা মানুষটি যদি এই মিথ্যে আশ্বাসটুকু নিয়ে বাঁচে সেটাও তার জন্য অনেক। কী দরকার মানুষটিকে আবারো আঘাতে জর্জরিত করার।
আসলে পল্লব জানেই না যে তার বাবা তার জন্ম পরিচয় সম্পর্কে সবই জানে। সব জেনে-বুঝেই তাকে বুকে টেনে নিয়েছে।
পল্লব জয়ীতাকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বলে, আর কোনো কিন্তু না! আমাদের আর কেউ কিছুতেই আলাদা করতে পারবে না। তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখো! আমি যতদিন বেঁচে থাকব তোমার হাত শক্ত করে ধরে রাখব। কথা দিলাম।
জয়ীতা এক অগাধ বিশ্বাসে বুকের সাথে লেপ্টে যায় পল্লবের। এক সুখের উল্লাসে কেঁপে উঠে তার বুক। কিন্তু সে জানে না কতোটা কঠিন ভবিষ্যৎ তাকে ইশারা করে ডাকছে প্রতিনিয়ত। নিয়তির বিধান খণ্ডানোর ক্ষমতা তিনি ছাড়া যে আর কারোরই নেই।
চলবে……..
#সুখ_নীড়
#পর্ব-১২
বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হতে বুক চিড়ে যাচ্ছে পল্লব আর জয়ীতার। এই একটা সপ্তাহ কখন পার হয়ে গেল তারা টেরই পেল না। খালেক সাহেব ওদের বিদায় বেলায় কিছুই বলতে পারছেন না। তার মনে হচ্ছে মুখ খুলতেই তার ভিতরের কষ্টগুলি দলা পাকিয়ে একসাথে নদীর ঢেউয়ের মতো দুর্নিবার গতিতে বেরিয়ে আসবে। নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না ওদের সামনে ।
নীরবে পল্লবকে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরেছেন ছাড়তে মন চাচ্ছে না একদমই। এ ক’দিন তার এই ভূতুড়ে বাড়িটা যেনো আলোয় আলোয় ঝলমলিয়ে উঠেছিল। স্বপ্নের মতো কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত ।
জাফরের মাও অঝোরে কাঁদছেন। জয়ীতাও তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। মায়ের মতো এই মানুষটা তাকে এ ক’দিন আগলে রেখেছেন। এই মানুষটার কারণেই সেদিন সে এ বাড়িতে এসেছিল। তাই তার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই জয়ীর।
খালেক সাহেবের সামনে জয়ীতাও মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। সে খালেক সাহেবকে উপর থেকে দেখেই টের পাচ্ছে কেমন লাগছে তার। সে খুব সাহস করে কাছে যেয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, “আসি, বাবা। নিজের খেয়াল রাখবেন। ” আরো কিছু বলতে যাবে অমনি কান্নারা ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বেরিয়ে আসতে লাগল।
খালেক সাহেব, জয়ীতাকে সামলাতে কোনোমতে বলল, আরে পাগলী!
আমার জন্য ভাবিস না তো! আমার জীবন তো এমনই। ঠিকই দেখবি ক’দিন যেতেই আমি তোদের কথা ভুলে গেছি। একদম চিন্তা করিস না। ফোন দিস মাঝেমধ্যে এই বুড়ো বাপকে। আর আমাকে নিয়ে না ভেবে নিজেরা একদম ঠিকঠাক চলবি। আর কোনো পাগলামি যেনো শুনি না।
খালেক সাহেব আর কথা বলতে পারলেন না। খেই হারিয়ে ফেললেন।
বাবাকে কাঁদতে দেখে পল্লব আর জয়ীতাও খুব বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়ল এবার। তাদের মন চাইছে তার বাবাকেও সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু কই নিয়ে যাবে?
বাস চলছে দ্রুতগতিতে। পল্লব জয়ীতা কারো মুখেই কথা নেই। দু’জনেরই মনের অবস্থা একই। জয়ীতা বিষন্ন মনে বাইরের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। পল্লব তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, বাবাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসব। একদম ভেব না।
জয়ীতা চমকে উঠে বলল, এটা সম্ভব, পল্লব?
– আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
– কিন্তু আম্মি কি মেনে নিবেন?
– আম্মির বাড়িতে জায়গা না হলে না আমি অন্য ব্যবস্থা করব।
জয়ীতার চোখ দু’টি চকচক করে উঠল। সে খুশিতে পল্লবের হাতটা চেপে ধরে তার ঘাড়ে মাথা রেখে বলল, অনেক অনেক খুশি হলাম, পল্লব। আর কিছুই চাওয়ার নেই তোমার কাছে আমার।
জয়ীতা সত্যিই খুব খুশী হয়েছে। সে ভাবছে সে হয়ত ভুল ছিল। পল্লব হয়ত আসলে কিছুই জানেই না তার জন্ম পরিচয় নিয়ে । শুধু শুধুই সে ভয় পাচ্ছিল। মনে মনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাল জয়ী।
খালেক সাহেবের আজ বুকের মাঝে খুব ভারী ভারী লাগছে। মনে হচ্ছে পাজর ভেঙে কান্না আসছে। দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ভেতরে। এ ক’টা দিন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে প্রতিক্ষীত এক অধ্যায়। তার শুধু মনে হচ্ছে তার জীবনটা কেনো এমন এলোমেলো হলো। সেও চেয়েছিল আর সবার মতো একটি সুস্থ, স্বাভাবিক সংসার। তার জানামতে কখনো কোনোদিন কাউকে ঠকায়নি। এতবড় পোস্টে সে চাকরি করেছে অথচ কতবার সুযোগ পাবার পরেও কোনোদিন কারও থেকে দু’পয়সা ঘুষ খায়নি। এত সততার সাথে সারা জীবন কাটিয়ে কী প্রতিদান মিলেছে তার?
কত বার ভেবেছে সে তার বাচ্চাদেরকে তার কাছে নিয়ে আসবে। প্রয়োজনে সে যুদ্ধ করবে সাজেদার সাথে কিন্তু সাহসে কুলোয়নি। তাছাড়া কল্লোল তার নিজের সন্তান হলেও পল্লব তার কেউ না। তার উপর কোনো অধিকার নেই। তার উপর কল্লোল কখনোই তার সাথে আসতে রাজী হতো না। সে তার মায়ের কাছে থাকতেই অভ্যস্ত।
আর মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেড়ে নেয়ার মতো পাষাণ হৃদয়ের মানুষও তিনি নন। নিজেই কষ্ট করেছেন সারাজীবন তাও কাউকে বিরক্ত করেননি। সাজেদাকে ডিভোর্সও দেননি। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন সবার মাঝ থেকে।
তার বড় বোন সেতারা বেগম কতবার তাকে আবার বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে খুঁজেছেন কিন্তু খালেক সাহেব রাজী হননি কিছুতেই। সময় কালেই সংসার জুটলো না সেখানে অসময়ে আর কিইবা হবে?
এ ক’টা দিন খুব আনন্দের মাঝে স্বপ্নের মতো কাটাতে ঠিক যতটা ভালো লেগেছিল এখন তার থেকে কয়েক শত গুণ খারাপ লাগা ভর করেছে তার উপর। যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকেই অনুভব করছে জয়ী আর পল্লবকে। তিনি টের পেলেন তার মাঝে যেনো হ্যালুসিনেশান হচ্ছে। মাঝেমাঝেই জয়ী আর পল্লবকে দেখতে পাচ্ছেন ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করছে। নিজের মাঝে এমন সমস্যা হচ্ছে টের পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গেলেন। এই বয়সে এমন সমস্যা একবার ভর করলে নামানো কঠিন হয়ে পড়বে।
জাফরের মা তার খারাপ লাগার ব্যাপার বুঝতে পেরে বারবার এসে তার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে। খালেক সাহেব কার উপর রাগ ঝাড়বেন বুঝতে না পেরে জাফরের মাকেই এমন অযথা বিরক্ত করার জন্য জোরেশোরে ধমক লাগিয়ে সেদিনের মতো ছুটি দিয়ে দিলেন। জাফরের মা খুব কষ্ট পেলেন তার এমন ব্যবহারে।
খালেক সাহেব রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আলমারি খুলে সেই জীবনের শুরুর দিনগুলোর তোলা ছবির এলবাম বের করলেন। ছোট কল্লোলকে নিয়েই বেশিরভাগ ছবি৷ পল্লবের সাথে খুব বেশি ছবি নেই। কারণ তখন তিনি বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থাকতেন।
তার আর সাজেদার কয়েকটা ছবিকে দু’হাতে স্পর্শ করছেন আর চোখের পানিতে চশমার গ্লাস ঝাপসা হয়ে আসছে। নিয়তি তার সাথে এমন করে কেনো খেলছে মেলাতে পারছেন না কিছুতেই।
তার মনে হচ্ছে ওদের সাথে দেখা না হলেই ভালো হতো! ওরা এখানে কেনো এলো? ভালোই তো কাটছিল তার নিঃস্ব জীবন। এসব ভাবতে ভাবতে ভাউ ভাউ করে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলেন।
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। চোখের পানি মুছে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলেন তার বোন অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন করেছে। একবার ভাবল কথা বলবে না পরক্ষণেই আবার ভাবনা বদলাল। এই একটা মানুষই তার জীবনে আছে যে তাকে নিঃস্বার্থভাবে সেই দূর থেকে ভালবেসে যাচ্ছে যার পরম মমতায় তাঁর সকাল হয়, সন্ধ্যা গড়ায় । এই মানুষটার ঋণ সে জীবনে কখনো শোধ করতে পারবে কিনা সে জানে না। সেই সুযোগও কোনদিন হয়তো হবে না । দুই হাতে চোখের পানি মুছে ফোনটা রিসিভ করলেন।
তার গলার ভারি শব্দের হ্যালো শুনেই সেতারা বেগম বুঝতে পারলেন কিছু তো একটা হয়েছে। খালেক সাহেবের কাছে মন খারাপের কথা অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরে আসল সত্যটা জানলেন। তিনি নিজেও ভাইয়ের কষ্টে খুব ব্যথিত হলেন। ভাইয়ের এমন কষ্টের সময় তার পাশে না থাকার কষ্টটা যেন আরও বেশি কষ্ট দিতে শুরু করলো তাকে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাইকে স্বান্তনা দিতে এটা সেটা বলার পরে হঠাৎ করে খুব শক্ত হলেন তিনি।
-তোর কাছে কোনোদিন তো কিছু চাইনি আজ চাইব দিবি?
-তোমার জন্য আমার জীবন পর্যন্ত দিতে পারি, বুবু। একবার চেয়েই দেখো।
-তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিস তুই আমাকে দিবি! তুই তোর কথা ঘুরাতে পারবি না একদম ।
চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না খালেক সাহেব তিনি খুব কষ্টে বুকের কষ্ট চেপে রেখে আস্তে করে বললেন, কথা দিলাম। বলো কী চাই?
– আমি তোকে অস্ট্রেলিয়াতে দেখতে চাই। আমারও বয়স হয়েছে। হয়তো বেশি দিন আর বাঁচব না। তোর শরীরটাও বেশি ভালো না। কে আগে কে পরে কখন চলে যাই জানিনা। এমনিতেই তোর দুলাভাই যাওয়ার পর থেকে আমার প্রতিটা মুহূর্ত খুব আতঙ্কে কাটে। এমন মনে হয় কখন যেনো চলে যাচ্ছি। বয়সতো আর কম হলো না। তাছাড়া আমার আর এখন এত শক্তিও নেই যে আমি বাংলাদেশে আগের মতো হুটহাট চলে আসতে পারব। আর আমি আসতে চাইলেও ওরা আমাকে যেতে দিবে না। আমি চাই জীবনের শেষ দিনগুলো দু’ভাই বোন একসাথে কাটাই। হয়তো আমি আগে যাব নয়তো তুই! আমি যদি আগে চলে যাই আমি তোকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমার ছেলেমেয়েরা তোকে কখনোই অনাদর করবে না।
ওপাশ থেকে খালেক সাহেবের কোন জবাব নেই দেখে তিনি আবার বললেন, তারপরেও যদি মনে হয় যে না তোর এখানে ভালো লাগছে না তাহলে তুই বাংলাদেশে চলে যাস। আমার এই কথাটুকু রাখ, ভাই। এই ছোট্ট জীবনে আর কত কষ্ট পাবি! এখানে এলে আমি হয়তো তোর কষ্টটুকু ভোলাতে পারব না কিন্তু চেষ্টা করব তোকে আনন্দে রাখার! সারাক্ষণ আমরা আমাদের সেই ছোট্ট গ্রামের গল্প করব! আমাদের বেড়ে ওঠা, বনে বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, নদী থেকে মাছ ধরা, একসাথে স্কুলে যাওয়া, আব্বার হাতে মার খাওয়া কত স্মৃতি আমাদের তাই না! এখানে খুব সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে হাঁটার। আমরা দু’ভাইবোন হেঁটে হেঁটে সেই গল্প করব।
কথা বলতে বলতে সেতারা বেগম নিজেও কাঁদতে শুরু করেছেন ফোনের ওপাশে। ভাই কে সান্তনা দিতে নিজেই অশান্ত হয়ে গিয়েছেন।
এবার খালেক সাহেব বোনের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন, ঠিক আছে। তোমার কথাই রইল। দেখি এদিকে একটু গোছগাছ করেই খুব তাড়াতাড়ি চলে আসব।
সেতারা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
-ঠিক আছে! যা করবি খুব তাড়াতাড়ি কর। আমি তোর ভিসার ব্যবস্থা করতে বলছি। ওদেরকে এখনই জানাচ্ছি।ওরা তো সেই কবে থেকেই বলে মামাকে নিয়ে আসো, মামাকে নিয়ে আসো। ওরা খুব খুশি হবে তুই আসবি শুনলে।
খালেক সাহেব অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে গেলেন ভিনদেশে যেয়ে তার জীবনের বাকি সময়টুকু কাটানোর জন্য। দেশটা ভিন্ন হলেও সেখানে তার আপন মানুষ আছে। এই দেশ এই মাটি আঁকড়ে পড়ে থেকে কি লাভ!
এদিকে এক বুক আশা আর দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে জয়ীতা পল্লবের হাত ধরে তাদের বাসায় এসেছে। বাসায় ঢুকে মনে হলো পরিবেশ একদম শান্ত। চারদিকে চুপচাপ। বাসায় কয়েকজন সার্ভেন্ট এর আনাগোনা ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়লো না তাদের।
রুমে ঢুকে ফ্রেশ হচ্ছিল জয়ীতা। বেশ কয়েকবার রুমে নক করার শব্দে জয়ীতা এগিয়ে যেয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে তার বড় জা, চৈতী। চৈতী মাত্র তার মেয়েকে নিয়ে কোচিং ক্লাস থেকে ফিরেছে।
জয়ীতাকে দেখে চৈতী ভূত দেখার মত চমকে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল, “আম্মি তাহলে ঠিকই বলেছিলেন। এই ডাইনীটার কারণেই এত কিছু ঘটে গেল। ”
সে জয়ীতাকে আর কিছু না বলে তাকপ পাশ কাটিয়ে তাদের রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ল। পল্লব তখন বিছানায় আধাশোয়া হয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করতে ব্যস্ত
পল্লবের দিকে অগ্নি বিস্ফোরক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধমকের সুরে চৈতী বলল, এই বাড়িটা কোনো সরাইখানা না যে যখন খুশি আসবে আর যখন খুশি যাবে। কারো কাছে কোনো কিছু বলার প্রয়োজন মনে করো না। আমাদের না হয় না মানো অন্ততপক্ষে আম্মির কথা তো ভাববে।
পল্লব ভীষণ অবাক হয়ে গেল। এই প্রথম তার সাথে এমন টোনে কথা বলেছে তার ভাবী। চৈতী তার বড় ভাবী হলেও সে তাকে কখনোই সেভাবে মানে না। বড় ভাই কল্লোলকেই পাত্তা দেয় না আর তো সেখানে চৈতী।
সে বিছানা ছেড়ে উঠে চৈতীকে উল্টো ধমক দিয়ে বলল, এমন করে কথা বলার সাহস কোত্থেকে পাও তুমি? বাড়িটা নিশ্চয়ই তোমার বাবার না? নাকি এটা বড় ভাইকে তোমার বাপ যৌতুক দিয়েছিল? নইলে আমার মায়ের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রশ্ন করার দুঃসাহস দেখাও! গেট লস্ট ফ্রম মাই রুম! নেক্সট টাইম আমার রুমে আসার আগে আমার পারমিশন নিয়ে আসবে।
পল্লব যে কিছুটা বেয়াদব কিসিমের এটা চৈতীর অজানা নয়। তাই সে অবাক হলো না। কিন্তু জয়ীর সামনে পল্লবের কাছে এভাবে ছোট হয়ে ভীষণ অপমানিত বোধ করতে থাকে সে! সে রাগে অপমানে গজ গজ করতে করতে বলল, কার বাড়ি আর কী সবই টের পাবে। শুধু আম্মিকে একটু আসতে দাও। আমি এক্ষুনি আম্মিকে ইনফর্ম করছি। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি! যাবার আগে অগ্নিমূর্তির মতো হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল জয়ীতার চোখের পানে।
জয়ীতা যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস দেখতে পাচ্ছে। কালো মেঘে চারিপাশে ছেয়ে যাচ্ছে তার। নিজের থেকে খুব বেশিবভয় হচ্ছে পল্লবকে নিয়ে। পল্লব রেগে গেলে কাউকে তোয়াক্কা করে না। কাকে কী বলে সেই হুশও থাকে না। তাকে দেখলে তার শাশুড়ি যে কী রিয়্যাক্ট করবে সেটা সে এখনই টের পাচ্ছে। এবার তার বেশি ভয় হচ্ছে পল্লবকে নিয়ে কারণ অন্যসময় তার শাশুড়ি তাকে যাই বলুক পল্লব হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে নয়তো মায়ের সঙ্গ দিয়েছে। কোনো এক অজানা কারণে পল্লবও তার মায়ের মতোই কিছুতেই চাইত না জয়ীতা তার সাথে থাকুক। যেহেতু বউকে সাপোর্ট দিত না তাই তার আম্মির সাথে তাকে নিয়ে তেমন বড় কোনো ঝামেলাও হতো না কিন্তু এখন চিত্র পুরোই ভিন্ন। জয়ীতাকে পল্লব কথা দিয়েছে সে যে কোনো মূল্যে তাকে অসম্মান হতে দিবে না। সে জয়ীকে বুক দিয়ে আগলে রাখবে আজীবন।
চলবে……